বাংলাদেশের অসাধারণ জলাঞ্চলগুলোর মধ্যে টাংগুয়ার হাওর একটি। পানির স্বচ্ছতা, রং এবং মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য টাংগুয়ার বিখ্যাত। টাংগুয়ার সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় অবস্থিত।
আসা-যাওয়া মোটামুটি সহজ। ঢাকা থেকে বেশ কয়েকটি বাস সরাসরি সুনামগঞ্জ যায়। এনা পরিবহন, শ্যামলী কিংবা ইউনিক পরিবহনের বাস ভাড়া ৫৫০ টাকা। (এলার্টঃ শ্যামলীর ৬-৬.৩০ ঘন্টার রাস্তা এনা ৪.৩০-৫ ঘন্টায় যায়। সুতরাং এনা পরিবহনে যেতে চাইলে সীটে শক্ত হয়ে বাসাই ভাল)।
সুনামগঞ্জে বাস থেকে নেমে দুইভাবে যেতে পারেন টাংগুয়ার। প্রথমত, সুনামগঞ্জ থেকে লেগুনা কিংবা মোটরসাইকেলে তাহিরপুর যেতে হবে। ড্রাইভারকে বললেই একবারে নৌকা ঘাটে নামিয়ে দিবে। সেখান থেকে নৌকা রিজার্ভ করে টাংগুয়ার ঘুরতে পারেন। তারপর তাহিরপুর ঘাটে নেমে একই পথে আবার ফিরতে হবে। রাস্তাঘাট অতটা ভাল না হওয়ায় এই পথটা কিছুটা কষ্টকর এবং একই সাথে সাদামাটা।
দ্বিতীয় পথটা আমার পছন্দের। এই পথে কোন ভাঙ্গা রাস্তায় লেগুনা কিংবা মোটরসাইকেল ভ্রমন নেই। ফলে একটু আরামদায়ক। এই পথে বাস থেকে সুনামগঞ্জে নেমেই ব্যাটারীচালিত অটোরিকশা করে যেতে হবে সাহেববাড়ির ঘাটে। ১০ মিনিটের পথ। সুরমা নদীর ঘাট। সেখান থেকে ইঞ্জিনের নৌকা রিজার্ভ করতে পারেন ৩০-৩৫ ঘন্টার জন্য। ভাড়া লাগবে মোটামোটি ৭০০০ টাকা। কিছুটা কমবেশি হতে পারে। মাঝিকে আগেই বলে নিতে হবে কোথায় কোথায় যাবেন। টাংগুয়ার হাওরে ঘুরার পর একই নৌকায় করে যেতে পারেন বারিক্কার টিলা। পথে পড়বে জাদুকাটা নদী। কাচের মত স্বচ্ছ গাঢ় নীল পানি। বারিক্কার টিলা মেঘালয় সীমান্তে। টিলার উপর থেকে দেখা যাবে স্থানীয়দের কয়লা সংগ্রহ। বর্ডার কিছুটা শিথিল। আশেপাশে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য। জাদুকাটা নদীতে গোসলও করতে পারেন।
সুনামগঞ্জ থেকে টাংগুয়ার হাওর নৌকায় যেতে প্রায় ৬/৭ ঘন্টার মতো লাগে। ঘুরতে ঘুরতে খাওয়ার সময় হলে পাড়ে কোন বাজারে নৌকা ভিড়িয়ে খেয়ে নিতে পারেন। নৌকাতে রান্নার ব্যাবস্থাও করতে পারেন। সেক্ষেত্রে মাঝিকে নৌকা ভাড়া করার সময়ই বলে নিতে হবে তাহলে মাঝি রান্না-সামগ্রী নিয়ে নৌকা ছাড়বে। রাস্তায় জয় বাংলা বাজার পড়বে। সেখানে নৌকা ভিড়াতে পারেন। এলাকায় মানুষজন কম, সেই তুলনায় অনেক বড় বাজার। কয়লার আড়ত দেখতে পারবেন সারি সারি। রাতে থাকতে পারেন নৌকাতে। এটাই সবচেয়ে মজার। অথবা তাহিরপুরে কিছু হোটেল আছে। থাকা যাবে সেখানেও। এই হল মোটামোটি টাংগুয়ার ভ্রমন। যে ছোট নদী- খাল দিয়ে টাংগুয়ার যাবেন এর প্রতিটার পানিই স্বচ্ছ এবং সবুজাভ নীল। এক পাশে মেঘালয়ের পাহাড় দেখা যাবে সবসময়। সময় কখন কেটে যাবে টেরই পাবেন না। সুনামগঞ্জে ফিরে এসে যেতে পারেন হাসন রাজার বাড়ি কাম মিউজিয়ামে।
এক নজরে পুরা ট্যুরটা হতে পারে এরকমঃ
১) ঢাকা- সুনামগঞ্জ। বাসে, ভাড়াঃ ৫৫০টাকা প্রতিজন
২) সুনামগঞ্জ- সাহেববাড়ির ঘাট। অটোরিকশায়, ভাড়াঃ ৫০/৬০ টাকা, এক অটোরিকশায় ৫ জন যেতে পারবেন
৩) সাহেববাড়ির ঘাট- জয়বাংলা বাজার- টাংগুয়ার হাওর- জাদুকাটা নদী হয়ে বারিক্কার টিলা- সাহেববাড়ির ঘাট। নৌকায়, ভাড়াঃ দুই দিন+ এক রাতের জন্য ৬০০০-৮০০০টাকা, এক নৌকায় ২৫ জন যেতে পারবেন সহজেই। নৌকার আকৃতির উপর ভাড়া এবং যাত্রীক্ষমতা নির্ভর করবে।
৪) সাহেববাড়ির ঘাটের পাশেই হাসন রাজার বাড়ি কাম মিউজিয়াম। হেঁটেই যেতে পারবেন। প্রবেশমূল্যঃ প্রতিজন ১০ টাকা।
৫) আবার অটোরিকশায় সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে ঢাকার বাস।
বিদ্রঃ হাওরের পাশে যেকোন স্থানীয় বাজার থেকে খুব সস্তায় টাটকা হাওরের মাছ কিনতে পারেন। যেকোন হোটেলে রান্না করিয়ে নিতে পারবেন অথবা নিজেরাও রান্না করতে পারেন। নৌকার মাঝিকে বললেই উনি ব্যাবস্থা করে দিবেন।
হাওরে একটি ওয়াচ টাওয়ার আছে। উঠতে পারেন এর উপর। অনেক সুন্দর দৃশ্য দেখতে পাবেন।
জ্যোৎস্না রাতের কথা মাথায় রেখে যেতে পারেন। নৌকায় অনেক সুন্দর সময় কাটবে।
বিদ্র ২ঃ বিভিন্ন জিনিস সাথে নেয়ার জন্য পলিথিন ব্যাবহার করতে হতে পারে। খাবারের সাথেও পলিথিন পাবেন। অপচনশীল অনেক ফেলে দেয়ার মত দ্রব্য কিংবা আবর্জনা জমবে। দয়া করে আবর্জনাগুলা নৌকায় সাথে করে নিয়ে আসুন। সাহেববাড়ির ঘাটে ময়লা ফেলার জায়গা আছে। সেখানে ফেলবেন। হাওরে কিংবা নদীতে ফেলবেন না দয়া করে। আপনি যেমন হাওর দেখে আসবেন, আপনার পরবর্তী প্রজন্মকেও সেই একই রকম হাওর দেখার সুযোগ করে দিন।
© Nayeem Muhammed Sibgatullah
Member, Tour Helpline BD
আসা-যাওয়া মোটামুটি সহজ। ঢাকা থেকে বেশ কয়েকটি বাস সরাসরি সুনামগঞ্জ যায়। এনা পরিবহন, শ্যামলী কিংবা ইউনিক পরিবহনের বাস ভাড়া ৫৫০ টাকা। (এলার্টঃ শ্যামলীর ৬-৬.৩০ ঘন্টার রাস্তা এনা ৪.৩০-৫ ঘন্টায় যায়। সুতরাং এনা পরিবহনে যেতে চাইলে সীটে শক্ত হয়ে বাসাই ভাল)।
সুনামগঞ্জে বাস থেকে নেমে দুইভাবে যেতে পারেন টাংগুয়ার। প্রথমত, সুনামগঞ্জ থেকে লেগুনা কিংবা মোটরসাইকেলে তাহিরপুর যেতে হবে। ড্রাইভারকে বললেই একবারে নৌকা ঘাটে নামিয়ে দিবে। সেখান থেকে নৌকা রিজার্ভ করে টাংগুয়ার ঘুরতে পারেন। তারপর তাহিরপুর ঘাটে নেমে একই পথে আবার ফিরতে হবে। রাস্তাঘাট অতটা ভাল না হওয়ায় এই পথটা কিছুটা কষ্টকর এবং একই সাথে সাদামাটা।
দ্বিতীয় পথটা আমার পছন্দের। এই পথে কোন ভাঙ্গা রাস্তায় লেগুনা কিংবা মোটরসাইকেল ভ্রমন নেই। ফলে একটু আরামদায়ক। এই পথে বাস থেকে সুনামগঞ্জে নেমেই ব্যাটারীচালিত অটোরিকশা করে যেতে হবে সাহেববাড়ির ঘাটে। ১০ মিনিটের পথ। সুরমা নদীর ঘাট। সেখান থেকে ইঞ্জিনের নৌকা রিজার্ভ করতে পারেন ৩০-৩৫ ঘন্টার জন্য। ভাড়া লাগবে মোটামোটি ৭০০০ টাকা। কিছুটা কমবেশি হতে পারে। মাঝিকে আগেই বলে নিতে হবে কোথায় কোথায় যাবেন। টাংগুয়ার হাওরে ঘুরার পর একই নৌকায় করে যেতে পারেন বারিক্কার টিলা। পথে পড়বে জাদুকাটা নদী। কাচের মত স্বচ্ছ গাঢ় নীল পানি। বারিক্কার টিলা মেঘালয় সীমান্তে। টিলার উপর থেকে দেখা যাবে স্থানীয়দের কয়লা সংগ্রহ। বর্ডার কিছুটা শিথিল। আশেপাশে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য। জাদুকাটা নদীতে গোসলও করতে পারেন।
সুনামগঞ্জ থেকে টাংগুয়ার হাওর নৌকায় যেতে প্রায় ৬/৭ ঘন্টার মতো লাগে। ঘুরতে ঘুরতে খাওয়ার সময় হলে পাড়ে কোন বাজারে নৌকা ভিড়িয়ে খেয়ে নিতে পারেন। নৌকাতে রান্নার ব্যাবস্থাও করতে পারেন। সেক্ষেত্রে মাঝিকে নৌকা ভাড়া করার সময়ই বলে নিতে হবে তাহলে মাঝি রান্না-সামগ্রী নিয়ে নৌকা ছাড়বে। রাস্তায় জয় বাংলা বাজার পড়বে। সেখানে নৌকা ভিড়াতে পারেন। এলাকায় মানুষজন কম, সেই তুলনায় অনেক বড় বাজার। কয়লার আড়ত দেখতে পারবেন সারি সারি। রাতে থাকতে পারেন নৌকাতে। এটাই সবচেয়ে মজার। অথবা তাহিরপুরে কিছু হোটেল আছে। থাকা যাবে সেখানেও। এই হল মোটামোটি টাংগুয়ার ভ্রমন। যে ছোট নদী- খাল দিয়ে টাংগুয়ার যাবেন এর প্রতিটার পানিই স্বচ্ছ এবং সবুজাভ নীল। এক পাশে মেঘালয়ের পাহাড় দেখা যাবে সবসময়। সময় কখন কেটে যাবে টেরই পাবেন না। সুনামগঞ্জে ফিরে এসে যেতে পারেন হাসন রাজার বাড়ি কাম মিউজিয়ামে।
এক নজরে পুরা ট্যুরটা হতে পারে এরকমঃ
১) ঢাকা- সুনামগঞ্জ। বাসে, ভাড়াঃ ৫৫০টাকা প্রতিজন
২) সুনামগঞ্জ- সাহেববাড়ির ঘাট। অটোরিকশায়, ভাড়াঃ ৫০/৬০ টাকা, এক অটোরিকশায় ৫ জন যেতে পারবেন
৩) সাহেববাড়ির ঘাট- জয়বাংলা বাজার- টাংগুয়ার হাওর- জাদুকাটা নদী হয়ে বারিক্কার টিলা- সাহেববাড়ির ঘাট। নৌকায়, ভাড়াঃ দুই দিন+ এক রাতের জন্য ৬০০০-৮০০০টাকা, এক নৌকায় ২৫ জন যেতে পারবেন সহজেই। নৌকার আকৃতির উপর ভাড়া এবং যাত্রীক্ষমতা নির্ভর করবে।
৪) সাহেববাড়ির ঘাটের পাশেই হাসন রাজার বাড়ি কাম মিউজিয়াম। হেঁটেই যেতে পারবেন। প্রবেশমূল্যঃ প্রতিজন ১০ টাকা।
৫) আবার অটোরিকশায় সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে ঢাকার বাস।
বিদ্রঃ হাওরের পাশে যেকোন স্থানীয় বাজার থেকে খুব সস্তায় টাটকা হাওরের মাছ কিনতে পারেন। যেকোন হোটেলে রান্না করিয়ে নিতে পারবেন অথবা নিজেরাও রান্না করতে পারেন। নৌকার মাঝিকে বললেই উনি ব্যাবস্থা করে দিবেন।
হাওরে একটি ওয়াচ টাওয়ার আছে। উঠতে পারেন এর উপর। অনেক সুন্দর দৃশ্য দেখতে পাবেন।
জ্যোৎস্না রাতের কথা মাথায় রেখে যেতে পারেন। নৌকায় অনেক সুন্দর সময় কাটবে।
বিদ্র ২ঃ বিভিন্ন জিনিস সাথে নেয়ার জন্য পলিথিন ব্যাবহার করতে হতে পারে। খাবারের সাথেও পলিথিন পাবেন। অপচনশীল অনেক ফেলে দেয়ার মত দ্রব্য কিংবা আবর্জনা জমবে। দয়া করে আবর্জনাগুলা নৌকায় সাথে করে নিয়ে আসুন। সাহেববাড়ির ঘাটে ময়লা ফেলার জায়গা আছে। সেখানে ফেলবেন। হাওরে কিংবা নদীতে ফেলবেন না দয়া করে। আপনি যেমন হাওর দেখে আসবেন, আপনার পরবর্তী প্রজন্মকেও সেই একই রকম হাওর দেখার সুযোগ করে দিন।
© Nayeem Muhammed Sibgatullah
Member, Tour Helpline BD
Tags:
ভ্রমণ