পড়ালেখা ও ফেসবুক

আমাদের সবার ই ফেসবুক নামটা শুনলেই একটা নেগেটিভ ধারণা চলে আসে। ফেসবুক মানেই আড্ডা, চ্যাটিং সময় নষ্ট। এজন্য সবার প্রথম সাজেশন থাকে পড়ালেখার সময় ফেসবুক বাদ দেওয়া। কিন্ত অনেকেই থাকে ফেসবুক এডিক্টেড। এক ঘন্টা ফেসবুক অফ্লাইন থাকতে পারেনা। ফলে ফেবু পড়ালেখায় বড় একটা নেগেটিভ ইফেক্ট ফেলে।
হ্যা, অবশ্যই সময় নষ্ট। কিন্ত আমরা জানি প্রতিটি ক্রিয়ার ই বিপরীত দিক আছে। ফেসবুকের একটি দিক পেলাম সময় নষ্ট করে। তাইলে বিপরীত দিকটা কি!! আজকে আমি এই বিপরীত দিকটা ই দেখাব। ফেসবুকের এই নেগেটিভ ইফেক্ট যেন না আসে সেই দিকটিই তুলে ধরলাম।
ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষার প্রিপারেশন নেওয়া প্রতিটি স্টুডেন্ট এর জন্য এই সময়টা জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়ের প্রতিটি মুহূর্তের মূল্য আছে। এই সসময় সারাক্ষণ ফেসবুক নিয়ে বসে থাকলে সময়ত নষ্ট হবেই। কিন্ত সঠিক সময়ে সঠিক উপায়ে যদি আমরা ফেসবুক ইউজ করি তাইলে সময় নষ্ট না বরং একাডেমীক পড়ালেখায় ফেসবুক আমাদের যথেষ্ট হেল্পফুল মাধ্যম হবে।

এজন্য করণীয়:

১। যখন তখন ফেসবুকে আসা বন্ধ করতে হবে। একটা নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে নিতে পারো যখন ফেবুতে আসবে। আবার একটানা অনেক্ষণ পড়ার পর একটু রিলাক্স নেওয়ার সময় ফেবুতে আসতে পারো।

২। ফেসবুকের চ্যাটলিস্ট অফ করে রাখো, অযথা চ্যাটলিস্টে যাওয়ার কোন দরকার নেই। বন্ধুদের নিয়ে চ্যাট গ্রুপ খুলে নিতে পারো। অযথা মেসেজ না দিয়ে শুধু দরকারি মেসেজ দেও। একজন একটা টপিক পড়তেছো তখন প্রশ্ন করার কিউরিসিটি জাগতে পারে, সেটা গ্রুপে করো। ফলে অন্যদেরও শিখা হয়ে যাবে।

৩। এই সময় পড়ালেখার অত্যাধিক চাপ থাকে। অনেক পড়ার পরেও ভাল ফলাফল পাওয়া যায়না, পড়া মনে থাকেনা এরকম নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। ফলে পড়ালেখার আর ইচ্ছা জাগেনা। ডিপ্রেশন ঘিরে ফেলে, পড়ালেখার আগ্রহ চলে যায়। তখন একটু মোটিভেশন আগ্রহ সবার থাকে। একটু মোটিভেশন পড়ালেখার গতি বাড়াতে বড় একটা ভূমিকা পালন করে। ঠিক এই সময় ফেবুতে এসে এই গ্রুপের মোটিভেশনাল পোস্টগুলো পড়ো। যেই ঢাবির স্বপ্নে বিভোর হয়ে এত পরিশ্রম করতেছো সেই ঢাবির সৌন্দর্য নিজ চোখে না দেখলে পুরোপুরি অনুভব করতে পারবেনা। তাই একবার হলেও ঘুরে যাওয়া বেটার। আর সেটা না পারলেও ঢাবির অপরূপ সৌন্দর্যের বিভিন্ন স্থানের চিত্র দেখো, স্বপ্নের জায়গাটির চিত্র মোবাইলের ওয়ালপেপারে সেভ করে রাখো। তখন দেখবে আপনা আপনি ভিতরে একটা শক্তি চলে আসবে যেকোন মূল্যেই হোক আমার পড়তেই হবে, ঢাবিকে পেতেই হবে, লক্ষ্য অর্জন করতেই হবে এমন প্রতিজ্ঞা চলে আসবে। ফলে পড়ালেখার আগ্রহ আরো বেড়ে যাবে।

৪। বর্তমান আমরা সবকিছুতেই তথ্যপ্রযুক্তির আলোকে পাচ্ছি। আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে প্রচলন না হলেও উন্নত দেশে ঠিকই ই-লার্নিং এর মাধ্যমে লেখাপড়া হচ্ছে। আর ফেসবুকে আমাদের এই গ্রুপট ই-লার্নং এর একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটাই দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম স্টাডি রিলেটেড গ্রুপ যা একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর এক ঝাক মেধাবী স্টুডেন্ট দ্বারা পরিচালিত। এখানে প্রতিটি সাবজেক্ট এর গুরুত্বপূর্ণ অনেক টিপস দেওয়া হয়, নিয়মিত ইক্সাম নেওয়া হয়। পড়ার ফাকে অবসর সময়ে ফেসবুকে এসে যথোপযুক্তভাবে পোস্টগুলো পড়ে নিলেই হয়। অনেক সময় অনেক টেকনিক নিয়ে পোস্ট থাকে যা অন্য কোথাও পাবেনা।

৫। একটি স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে তার উপযুক্ত দিকনির্দেশনা ছাড়া বাস্তবায়ন সম্ভব হয়না। হাজারো মেধাবী সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে ঝড়ে যায়। কারণ একাডেমিক লেভেলের ১২ বছরের পড়া আর এই সময়ের পড়া সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই এখানে সফল হতে হলে একটা পরিপূর্ণ গাইডলাইন দরকার। আর এই গ্রুপটি নিস:ন্দেহে যেকোন কোচিং থেকে সেরা গাইডলাইন টি দিয়ে যাচ্ছে। কারণ এখানেই আছে ঢাবির সেরা মেধাবীদের একটি ইউনিট। একেকজনের নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। ফলে খুব সহজেই হাজারো শিক্ষার্থী তাদের গাইডলাইন খুজে পায়, অনুপ্রেরণা পায়।

৬। এছাড়াও আমাদের অনেক অজানা প্রশ্ন কমেন্টে করা মাত্রই উত্তর পেয়ে যাচ্ছি এখানে। মুহূর্তেই সকল ভার্সিটি এর তথ্য জানতে পারছি। আমরা কোচিং এর ক্লাসে সংকোচ বোধ এর কারণে প্রশ্ন করতে পারিনা। কিন্ত এখানে ঠিকই যেকোন সমস্যা তুলে ধরতে পারছি। শুধু এই গ্রুপ না, এরকম অনেক স্টাডি রিলেটেড গ্রুপ আছে যার মাধ্যমে তুমি তোমার একাডেমীক পড়ালেখার বড় একটা মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক ইউজ করতে পারো।
উপরিউক্ত দিক ফলো করে ফেসবুক ইউজ করলে কখনোই ফেসবুক আমাদের জন্য নেগেটিভ ফলাফল আনবেনা। ফেবুর যেমন নেগেটিভ সাইড আছে তার চেয়ে বেশি পজিটিভ সাইড আছে। এর সঠিক ব্যবহার নির্ভর করে আমাদের নিজেদের উপর। আমরা এটাকে নেগেটিভ দিকগুলো থেকে বিরত রেখে নিজের উপকারে ব্যবহার করি তাইলেই ফেসবুক সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা সম্পূর্নভাবে দূর হয়ে যাবে। আমাদের সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
আমার নিজের অভিজ্ঞতা বলি। ফেবু আইডি খুলার পর থেকেই ফেবু এডিক্টেড। সারাক্ষণ ডাটা অন থাকত ই। সবাই ভাবত সারাদিন অনলাইন এ দেখা যায় আবার পড়ালেখায় এত ভাল কিভাবে। সাবার ই কমন প্রশ্ন পড়ি কখন। ভার্সিটি পরীক্ষার আগেও আমার মোবাইলে সারাক্ষণ ডাটা অন থাকত। তাতে কি হয়ছে!! পরীক্ষার আগে প্রায় দেড় মাসের মত চ্যাট অফ ছিল। যেমন সময় নষ্ট হত তেমনি ইডোকেটিভ অনেক কিছুই নিতাম ফেবু থেকে যা অন্য কোথাও পাওয়া যেত না।
তাই এই সময়টা একটু কেয়ারফুলি যথাযথ ব্যবহার করলে আমাদের জন্য ফেবু শুধুমাত্র নেগেটিভ ইফেক্ট ই পড়বেনা বরং তার চেয়ে বেশি পজিটিভ ইফেক্ট ফেলবে। আমি নি:শন্দেহে বলতে পারি যারা পড়ার উদ্দেশ্যে ফেবু বন্ধ রাখে, আর এই গ্রুপের পোস্টগুলো যারা সঠিকভাবে ফলো করে নিশ্চিতভাবে এই গ্রুপের স্টুডেন্টরা এগিয়ে থাকবে। কারণ তারা এখানে এক্সট্রা অনেক কিছুই পাচ্ছে, জানতে পারছে, যা অন্যদের অজানা ই থাকবে।
শুভ কামনায়,

Md Mahiuddin
Department of Law
University of Dhaka.

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form