চারমাস যাবত পিরিয়ড হচ্ছে না আতিকার। এটা নিয়ে তার চিন্তার শেষ নেই। তার কোন রোগ হল কিনা জানার দরকার। কিন্তু কাকে বলবে? মা'কে বলবে? কি না কি ভাববে ভেবে বলতে পারে নি। বাসায় বড় আপু আছেন। সাথে দুলাভাই ও। একবার ভেবেছিলো আপুকে সমস্যার কথা বলবে। কিন্তু দুলাভাইয়ের সাথে আপুর দিনকাল খুব একটা ভালো যাচ্ছে না, অল্পতেই ঝগড়া ঝামেলা হয়ে যায়, এজন্য আপুর মন খারাপ থাকে, তার উপর আপুকে বাসার কেউ দেখতে পারে না। সব মিলিয়ে আতিকার নিজের সমস্যার কথা বলা হয় নি। আপুকে কেউ দেখতে পারে না এর পিছনে আছে লম্বা ইতিহাস।
আতিকা তখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে। তখন রমজান মাস ছিলো। ১৩ বা ১৪ রমজান সেদিন। সবাই সেহেরি খেতে উঠেছে। মা গেলো বড় বোন সামিয়াকে ডাকতে। ঘরের দরজা খুলাই ছিলো। মা অন্ধকারেই দু চারবার ডেকে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে চলে আসেন। কিছুক্ষণ পর আতিকাকে পাঠানো হয় বোনকে ডাকার জন্য। লাইট জ্বালানোর পর আতিকা রীতিমতো শক খায়। বিছানায় আপু নেই সেজন্য না। এমন ও তো হতে পারে আপু উঠে ওয়াশরুমে গেছে। খাটের ওপর রাখা স্যুটকেস টা নেই, টেবিলের ওপর ল্যাপটপ নেই, বিছানাটা ছড়ানো ছিটানো, ড্রেসিং টেবিলটা পুরো খালি, কোন জামা কাপড় নেই। আতিকা কিছুক্ষণ বোনকে ডাকলো, তারপর ওয়াশরুমে উঁকি দিয়ে দেখলো সেখানেও বোন নেই। তাড়াতাড়ি মা'র কাছে আসলো। সামিয়াকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফোন দেওয়া হলো। নাম্বার বন্ধ। সবার বুঝতে বাকি রইলো না কাহিনী কি ঘটতে চলেছে। আতিকা অবশ্য জানতো সাবিত নামের এক ছেলের সাথে আপুর সম্পর্ক ছিলো। সে মোটামুটি নিশ্চিত ছিলো আপু এই ছেলের সাথেই পালিয়েছে। অবশ্য মা-বাবা জিজ্ঞেস করতে সে সরাসরি না করে দিয়েছে সে এই ব্যাপারে কিছু জানে না।
পরদিন ই থানায় জিডি করা হল। সামিয়ার সব বান্ধবীর সাথে যোগাযোগ করা হলো। কেউ ই কিছু জানে না। কাছের, দূরের সব আত্নীয়ের বাসায় খোঁজ নেওয়া হলো। কেউ কিছুই বলতে পারে নি। উল্টো মেয়ে খারাপ, দুশ্চরিত্রা এসব বলে দিয়েছে। বাবা জাফর হাসান প্রচন্ড রাগী মানুষ। উনার ভয়ে বাসায় কেউ উচ্চস্বরে কথা বলতে পারে না। জাফর সাহেব রেগেমেগে আগুন। ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন, একবার মেয়েকে পেলে নিজ হাতে জবাই করবেন।
ওদিকে দশ বারো দিন বাইরে থাকার পর সাবিতের টাকা শেষ হয়ে যায়। বন্ধুদের থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছিলো। তাও শেষের পথে। উপয়ান্তর না পেয়ে বাসায় ফোন দিয়ে মা'কে জানায় সে। ভেবেছিলো আর সবাই তাড়িয়ে দিলেও মা তাকে তাড়িয়ে দিবে না। কিন্তু সে আশায় ও গুঁড়েবালি। তার মুখ কখনো দেখতে চায় না তার মা। বংশের মান সম্মান নষ্ট করে দিয়েছে সে। অনেক কষ্টে বড় ভাইকে ম্যানেজ করে স্ত্রী সামিয়াকে নিয়ে বাসায় যায়। কিন্তু সাবিতের পরিবার তাদের জায়গা দেয়নি। আর কোন রাস্তা না পেয়ে সামিয়া সাবিতকে নিয়ে নিজের বাসায় আসে। বাবা অনেক বকবে এটা সে জানে। চিন্তা করেই এসেছে, বাবা কিছু বলার আগেই বাবার পায়ে পড়ে যাবে। তখন হয়তো দয়া করে মাফ করেও দিতে পারেন। যেই ভাবা সেই কাজ। সাবিতকে নিয়ে বাবার বাসায় আসে। মা তাদের মেনে নেয়। কিন্তু বাবা কোনমতেই মানবে না। সেইদিন থেকে শুরু করে এখন অব্দি একটা কথাও বলেন নি মেয়ের সাথে। সেদিন থেকেই সাবিত এই বাসায় থাকে। ছোটখাটো একটা চাকরি করে। তার ইচ্ছা বাবা মা মেনে নিলে নিজের বউকে নিয়ে সেখানে চলে যাবে। আর যাই হোক, ঘরজামাই হয়ে থাকাটা আত্নসম্মানে লাগে।
একদিন দুদিন যায়। আতিকার পিরিয়ড হয় না। দোকান থেকে কি যেন একটা ট্যাবলেট ও কিনে নিয়ে আসে। তবুও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। মা-বাবা কাউকে লজ্জায় বলতেও পারছে না।
আরও কিছুদিন চলে গেলো। আতিকার পেট ফুলে যাচ্ছে। দেখে মনে হয় সে প্র্যাগ্নেন্ট। সেদিন সকালে বমিও হয়েছে। এটা নিয়ে তার দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। কোন সমাধান ও পাচ্ছে না সে। নিজের কাছেও মনে হচ্ছে সে প্র্যাগ্নেন্ট। সেদিন রাতে তো বাচ্চার নড়াচড়াও টের পেয়েছে সে। মনে হচ্ছে কাউকে জানানো উচিত। না হলে কি থেকে কি হয়ে যায় আল্লাহ জানে! তার তো কোন প্রেমিক নেই। কারো সাথে শারীরিক সম্পর্ক হয়নি। তাহলে সে প্র্যাগ্নেন্ট হবে কি করে? এটা কি বিশ্বাসের কথা? দিন যাচ্ছে আর তার এই বিশ্বাস গাঢ় হচ্ছে। প্র্যাগ্নেন্ট মহিলার মতো তারও ব্রেস্টের চেঞ্জ আসছে। দুঃখে আত্নহত্যা করতে ইচ্ছে করছে। বাবা মা কে বললে কিভাবে নিবেন ব্যাপারটা?
একদিন রাতে সবাই খাচ্ছিলো। আতিকার শরীর খারাপ। তাই নিজ রুমে শুয়ে ছিলো। ইদানিং কিছু খেতেও ইচ্ছে করে না। কেমন যেন একটা মা মা ফিলিংস আসছে। তার বাচ্চাকাচ্চা খুব ভালো লাগে। আদর করতে ভালো লাগে, খাওয়াতে ভালো লাগে, বাচ্চাদের সাথে খেলতে ভালো লাগে। আর এখন নিজের বাচ্চা আসছে এটা তো আরও আনন্দের। ভাবলো, বাবা মা কে আজ ই জানাবে। তাই বিছানা থেকে উঠে ডাইনিং রুমে গেলো সে। কিছুক্ষন বাবা মায়ের পাশে ঘুরঘুর করে চলে আসতে নিচ্ছিলো। বলার সাহস হচ্ছিলো না। পিছন থেকে মায়ের ডাকে আবার যায় সে।
--কিরে! কিছু বলবি?
--না মা। কিছু বলব না।
--কোন সমস্যা তোর? ইদানিং কেমন মন খারাপ করে পড়ে থাকিস। দেখে মনে হচ্ছে তুই অসুস্থ।
--না মা কিছুনা। কিছু হয়নি আমার। রান্নাটা অনেক মজা হইছে না? আজ আমি একাই রান্না করেছি বাবা।
--তুই রান্না করলে খাবার মজাদার না হয়ে যায় কই? (বাবা)
--পেট ভরে খাও বাবা।
--তোর কি হইছে বল। কিছু একটা লুকাচ্ছিস মনে হয়।
--আসলে বাবা,,,,,
--কি?
--বাবা, আমার পিরিয়ড হচ্ছেনা কয়েক মাস যাবত।
--বলস নাই কেন এতদিন? আর কোন সমস্যা?
--না।
--কোন ওষুধ খেয়েছিস?
--বাবা ফার্মেসী থেকে ওষুধ এনে খেয়েছিলাম।
--এখন কি অবস্থা?
--কিন্তু বাবা একটা সমস্যা হয়ে গেছে। লজ্জায় এতদিন বলতেও পারছিলাম না। কিন্তু এখন না বললে মনে হয় ঝামেলা হতে পারে।
--কি সমস্যা?
--ফার্মেসী থেকে ওষুধ এনে খাওয়ার পর থেকে আমার পেট ফুলতে থাকে। সকালে বমিও হয়। আমার মনে হয় আমি প্র্যাগ্নেন্ট। বাচ্চার নড়াচড়াও টের পাই। কিন্তু বিশ্বাস কর বাবা আমার এই ধরনের কোন সম্পর্ক নেই।
এটুকু বলেই কাঁদতে শুরু করে আতিকা। বাবা প্রচন্ড রেগে যায়। এটা কি খামখেয়ালি করার জিনিস? নিশ্চয়ই কোন আকাম করেছে।
মা আরও জোরে কাঁদতে থাকে। "কোন পাপের শাস্তি দিচ্ছো আল্লাহ"!!!
এসব দেখে দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় আতিকা। বাবা রেগেমেগে সামিয়াকে ডাকে।
--তুই করেছিস এসব? নিজে একটা আকাম করছোস। এখন আমার ছোট মেয়েটাকেও ভুলিয়ে, ফুসলিয়ে এমন বানাইছিস। বল আসল কাহিনী কি? আতিকা প্র্যাগ্নেন্ট হলো কি করে?
--বাবা, আমি কিছুই জানিনা। বিশ্বাস কর, আমাকে ও কিছুই বলে নি। ওর কারো সাথে সম্পর্ক থাকলে নিশ্চয়ই আমাকে বলতো।
--হইছে আর সাধু সাজতে হবে না। তোরাই থাক এই বাসায়। মান সম্মান আর থাকলো না আমার। অফিসে মুখ দেখাব কি করে? একটা বিয়ের আগে ভাইগা গেছে, আরেকটা বিয়ের আগে প্র্যাগ্নেন্ট!! কি জোশ ব্যাপার সেপার। তোদের গলা টিপে হত্যা করা উচিত। নির্লজ্জ,বেহায়া কোথাকার।
রাতেই বাসা থেকে বের হয়ে যায় জাফর সাহেব। পিছন পিছন স্ত্রী রাবেয়া গিয়েছিলেন অবশ্য। কিন্তু ফেরানো সম্ভব হয়নি। উনিও আর আটকানোর চেষ্টা করেন নি। রাগ কমে গেলেই বাসায় ফিরবেন এটাই উনার বিশ্বাস।
মা ফ্লোরে বসে আছেন। নিজের কপাল চাপড়াচ্ছেন। অনেক অনুনয় বিনুনয় করে আতিকার রুমে ঢুকে কথা বলে আসলেন। আতিকা কোনভাবেই স্বীকার করছে না কারো সাথে তার শারীরিক সম্পর্কের কথা।
মা চিন্তা করছেন তাহলে কে হতে পারে? আতিকার কোন ছেলে বন্ধু না থাকলে কে করতে পারে এই কাজ? বাপের বাড়ি গিয়েছিলাম কিছুদিনের জন্য। সেই সুযোগেই কি সাবিত করেছে এই কাজ?? ছিহ! ছিহ! কি লজ্জার ব্যাপার!! এসব দেখার আগে মরে যাওয়াই ভালো ছিলো!!!!!
সে রাতে আর বাসায় ফিরেন নি জাফর সাহেব। স্ত্রী রাবেয়া ভেবেছিলেন বাহিরে কিছুক্ষন থেকে মন হালকা হলে চলে আসবেন। বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছেন তিনি। প্রথমে ফোন ঢুকলেও রিসিভ করেন নি জাফর সাহেব। রাগে ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। আর কিছু ভেবে না পেয়ে বাসার নিচে গেলেন। দাড়োয়ান ঘুমাচ্ছে। কিছুক্ষন তার দরজায় নক করলেন। কোন সাড়াশব্দ নেই। প্রায় দশ মিনিটের মতো একটানা ডাকলেন। যেকোন ঘুমন্ত মানুষের এতক্ষনে ঘুম ভাঙার কথা! সে কি আসলেই ঘুমাচ্ছে নাকি ঘুমের ভান করে শুয়ে আছে কে জানে। একজন অন্ধ মানুষকেও পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব কিন্তু তাকে নিয়ে আগানো সম্ভব নয় যে চোখ থাকতেও অন্ধের ভান করে থাকে, একজন বিবেকবান মানুষের ভুল ধরিয়ে তাকে সংশোধনের পথে আনা সম্ভব, কিন্তু তাকে আনা সম্ভব নয় যার বিবেক নেই, নিজের ভুল যে কখনো স্বীকার করে না। ঠিক তেমনি একজন ঘুমন্ত মানুষকে ঘুম থেকে তোলা সম্ভব,কিন্তু ইচ্ছে করে চোখ বন্ধ করে রাখা মানুষকে জাগানো সম্ভব নয়। হয়ত বেচারা সবেমাত্র শুয়েছে, এই বুঝি ঘুম আসবে আসবে করছে তাই হয়তো আরামের বিছানা ছাড়তে রাজি হচ্ছে না। রাবেয়া বেগম মন খারাপ করে উপরে চলে গেলেন।
নিজের রুমে যাওয়ার আগে ভাবলেন আতিকাকে একবার দেখে যাওয়া যাক। রুমের দরজাটা খোলাই আছে। উঁকি দিতেই দেখলেন আতিকা বিছানার এক কোণে জড়োসড়ো হয়ে বসে কান্না করছে। নিঃশব্দে মেয়ের কাছে গেলেন। মাথায় হাত রাখলেন। মা'কে দেখেই কান্না শুরু করে দিলো সে। মা তাকে আরও কাছে টানলেন। সন্তান যেমন ই হোক মায়ের কাছে নিজের সন্তান সবসময় সেরা। মায়ের মমতার কোন কমতি নেই। সেদিন দেখলাম ছেলেটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে গেছে। মা তাকে একটা শিকলে বেঁধে কাজে যান। আবার কাজ শেষে শিকল খুলে বাসায় নিয়ে যান। এইযে ভালোবাসা এটা কি আর কারো কাছে পাওয়া সম্ভব? আতিকার কান্না থামলো কিছুক্ষণ পর।
--দেখ, আমি তোর মা। আমার কাছে কিছু লুকাইস না। কি হয়েছে বল?
--সত্যি মা। আমি কিছুই জানিনা।
--তোর কারো সাথে সম্পর্ক ছিলো?
--না মা। আমার কোন ছেলে বন্ধুই নাই। আমি কখনো সম্পর্ক করিনি।
--বন্ধু তো তোর বড় আপুর ও ছিলো না। ঠিক ই তো বংশের মুখে চুনকালি মাখাইছে। তুই সত্যি করে বল কার সাথে সম্পর্ক ছিলো?
--বিশ্বাস কর মা। আমি সত্যিই বলছি। আমার কারো সাথে সম্পর্ক ছিলো না। কি করে কি হল বুঝতে পারছিনা।
--(এবার মেয়ের কানে কানে বললেন) সাবিতের সাথে কিছু হয়েছে? ও তোকে জোর করেছিলো কখনো?
দেখ,কিছু মনে করিস না। আমাকে জানতে হবেই।
--না মা। কারো সাথেই কিছু হয়নি। তুমি দুলাভাইকে খারাপ বলছো কেন? উনি অনেক ভালো মানুষ। সহজ সরল।
উনাদের কথা শেষ হতে না হতেই পাশের রুম থেকে কিছু একটা ভাঙার আওয়াজ পাওয়া গেলো। রাবেয়া বেগম দৌড়ে গেলেন সামিয়ার রুমের দিকে। শরীর, মন খারাপ বলে বিছানাতেই বসে রইলো আতিকা।
রাবেয়া বেগম সামিয়ার রুমে গিয়ে দেখেন সামিয়া ফ্লোরে পড়ে আছে। মাথা থেকে রক্ত ঝড়ছে। সাবিত মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে পাশে। রাবেয়া বেগমকে রুমে ঢুকতে দেখে রুম থেকে বের হয়ে যায় সে। রাবেয়া বেগমের বুঝতে বাকি রইলো না সাবিত মেয়েটাকে কিছু একটা দিয়ে আঘাত করেছে। ফ্লোর থেকে মেয়েকে তুলে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলেন। মাথায় কিছুক্ষণ পানি দিলেন। মাথার বাম পাশের অনেকটাই কেটে গেছে। রক্ত ঝড়ছে এখনো। এখনি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। নাহলে কি থেকে কি হয়ে যায় বলা মুশকিল। কিন্তু এতরাতে কাকে পাবেন? কে সাহায্য করবে? জাফর সাহেব তো বাসা থেকে বের হয়ে গিয়ে বাঁচলেন। উনি একা কতদিক সামলাবেন? নিজের উপর ই রাগ হচ্ছে। কি পাপের শাস্তি পাচ্ছেন কে জানে!!
বড় মেয়েটা নিজ পছন্দে বিয়ে করলো, নিজের সুখ নিজেই বেছে নিলো, অথচ সুখের বদলে শোক পাচ্ছে, ছোট মেয়েটার কি হল কিছুই বুঝা যাচ্ছে না, এসব সহ্য করতে না পারে বাসা থেকে স্বামী বের হয়ে গেলো রাগে! আল্লাহ ই জানে এর পর কি আছে?
এখন এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারে পাশের ফ্ল্যাটের আকিব। একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে সিএসই তে পড়ে। ক্লাস না থাকলে সারাদিন ঘুমায়। আর সারারাত ল্যাপটপ নিয়ে জেগে থাকে। এটাই যেন একটা ফ্যাশন!! রাবেয়া বেগমের এসব খুব বিরক্ত লাগে। পড়ালেখা তো উনিও করেছেন। কত সুন্দর রুটিন মেনে চলতেন। আর এখনকার ছেলেপেলেরা কিসব যে করে!! এসব ভাবতে ভাবতেই কলিংবেলে চাপ দিলেন। দুমিনিটের ভিতর দরজা খুলে দিলো আকিব। আকিবকে খুলে বললো পুরো ঘটনা। তাড়াতাড়ি তাকে নিয়ে সামিয়ার রুমে আসলো। সামিয়া ততক্ষনে মাথায় একটা পাতলা কাপড় দিয়ে ব্যান্ডেজ করার চেষ্টা করছিলো। আকিব সামিয়াকে নিয়ে বাসার পাশেই একটা ফার্মেসীতে নিয়ে গেলো। পাশেই একটা প্রাইভেট ক্লিনিক আছে। আর তাই এর আশেপাশের ফার্মেসীগুলো অনেক রাত পর্যন্ত খোলা থাকে যাতে রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে না হয়। মাথায় ব্যান্ডেজ করিয়ে সামিয়াকে নিজের রুম পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে বাসায় চলে যায় সে।
জাফর সাহেব বাসায় আসেন পরদিন বিকালে। সাথে উনার বৃদ্ধা মাকে নিয়ে আসেন। তার মানে উনি গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন। শ্বাশুড়িকে পেয়ে রাবেয়া বেগমের মন ভালো হয়ে গেছে। শহরে থাকে বিধায় শ্বাশুড়ির তেমন সেবা যত্ন নেওয়ার সুযোগ পান নি। অনেকবার জাফর চেয়েছিলো মাকে শহরে নিয়ে আসতে। কিন্তু তিনি মৃত স্বামীর ভিটা ছেড়ে কোথাও যেতে রাজি না। ছোট ছেলে হাবিব আর তার বউয়ের সাথে গ্রামে থাকেন। মা'কে নিয়ে আসার আরও একটা উদ্দেশ্য আছে জাফর সাহেবের। মা কয়েকজন কবিরাজকে চিনেন। আতিকাকে নিয়ে যাবেন তাদের কাছে। জাফর সাহেবের ধারণা হয়তো আতিকা কোন আকাম করছে নয়তো ভূতে ধরছে, তাই এমন হচ্ছে। তিনি নিজেও জানেন না কি করা উচিত এই মূহুর্তে।
সন্ধ্যায় মা আর স্ত্রীকে নিয়ে নিজ রুমে গল্প করছিলেন জাফর সাহেব। কোথেকে সাবিত এসে বললো সে আতিকাকে নিয়ে ফার্মেসীতে যেতে চায়। তার ধারণা আতিকার কোথাও ভুল হচ্ছে। একটা প্র্যাগ্নেসি টেস্ট করিয়ে শিওর হতে চায় সে। জাফর সাহেব কোন কথা বললেন না। উনার সন্দেহ আরও তীব্র হলো। কারো থেকে হ্যাঁ /না কোন উত্তর না পেয়ে আতিকা নিয়েই বের হয় সে। সামিয়ার জন্য ওষুধ কিনলো আর আতিকার টেস্ট করালো। টেস্টের রেজাল্ট পাওয়ার পর সাবিতও শিওর হলো আতিকার কারো সাথে সম্পর্ক ছিলো। রেজাল্ট তাই বলে। সে প্র্যাগ্নেন্ট। পুরো রাস্তায় আতিকার সাথে আর কোন কথা বলে না সে। বাসায় এসে শশুর শাশুড়ির রুমে উঁকি দিয়ে টেস্টের রেজাল্ট বলে নিজের রুমে চলে যায়।
রাতে শোবার পর রাবেয়া বেগম স্বামীকে বলেছিলেন মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে। ভালো বা খারাপ একটা কিছু তো করতে হবে। মেয়ে যদি স্বীকার করতে না চায় তাহলে তো অবিবাহিতা মেয়ের গর্ভের সন্তান রাখা যাবে না। এটা শুনে জাফর সাহেব প্রচন্ড রেগে গেলেন। দুশ্চরিত্রা মেয়ের পিছনে একটা টাকাও খরচ করবেন না উনি। মায়ের সাথে গ্রামে পাঠাবেন। যা করার মা'ই করবে।
তিন চারদিন চলে গেলো। আতিকার শরীর টা আরও খারাপ হতে লাগলো। তার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না ব্যাপারটা। এটা কি করে সম্ভব? বাবা-মা কেউই তাকে ভালো চোখে দেখছে না। বন্ধু বান্ধব, আত্নীয় স্বজন জেনে গেলে সে বাসা থেকেই বের হতে পারবে না। তার জন্য মুখ দেখাতে পারবেন না বাবা মাও। তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় সে আত্নহত্যা করবে। এর চাইতে সহজ সমাধান আপাতত নেই। রাতে কয়েকবার মায়ের রুমে যায় সে। আত্নহত্যা করবে ভেবে মায়ের জন্য খারাপ লাগছে। মায়ের আদর কখনো পাওয়া হবে না। রাত দুইটার দিকে সে মোটামুটি নিশ্চিত হলো বাসার সবাই ঘুমিয়ে গেছে। এখনই মোক্ষম সুযোগ আত্নহত্যা করার। প্রথমে ভেবেছিলো ফ্যানের সাথে ঝুলে পড়বে। কিন্তু সাহস করতে পারে নি। হাতের কাছে তেমন কোন ওষুধ ও নেই যেটা খেলে সাথে সাথে মারা যাবে। আর কিছু না পেয়ে হারপিক খায় সে। মায়ের মন নাকি দূরে থাকলেও সন্তানের ভালো /মন্দ টের পায়? রাবেয়া বেগমের কেমন যেন অস্বস্তি লাগছিলো। ঘুম ভেঙে যায়। কি মনে করে আতিকাকে দেখতে আসে। আর এসেই দেখে বিছানায় উপুড় হয়ে পড়ে আছে সে। আরও কাছাকাছি আসার পর কাহিনী বুঝতে বাকি রইলো না উনার। চিৎকার করে সবাইকে ডাকলেন। সবাই এসে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে গেলো তাকে।
ইমার্জেন্সীতে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তারদের কিছুক্ষণের প্রচেষ্টায় জ্ঞান আসে আতিকার। রাবেয়া বেগমের কাছ থেকে পুরো হিস্ট্রি শোনে একটা আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে পাঠায় ডাক্তার। রিপোর্ট আসার পর দেখা যায় সে প্র্যাগ্নেন্ট নয়, তার গর্ভে কোন সন্তান নেই। পুরো বিষয়টা বুঝিয়ে দেন ডাক্তার।
আতিকার যে রোগটা হয়েছে এটা মূলত মানসিক। নাম pseudocyesis বা phantom pregnancy /false pregnancy। মানে হলো গর্ভে সন্তান না থাকলেও রোগীর মনে হবে সে প্র্যাগ্নেন্ট। এটা অবশ্য বিবাহিতদের বেশি হয়। যাদের কোন বাচ্চা হয়না, যাদের অনেক ইচ্ছা একটা বাচ্চা নেওয়ার কিন্তু বাচ্চা হয়না তাদের এই রোগ বেশি হয়। তাদের যে শুধু নিজেদের প্র্যাগ্নেন্ট মনে হয় তাই কিন্তু নয়। একজন প্র্যাগ্নেন্ট মহিলার যেসব উপসর্গ থেকে তাদেরও সেইসব উপসর্গ থাকে। পেট ভুলে যায়, পায়ে পানি জমে, মাসিক বন্ধ হয়ে যায়, এমনও হয় তারা বাচ্চার নড়াচড়াও টের পায় যদিও তাদের পেটে বাচ্চা নেই। কিন্তু তাদের ধারণা তাদের পেটে বাচ্চা আছে। এমনও অনেক মহিলা আছে যাদের অনেক বছর ধরে বাচ্চা হয়না, তারা যখন এই রোগে ভুগেন তখন তারা বাচ্চার জন্য জামাকাপড়, বাচ্চার নাম ও ঠিক করে ফেলেন। এমনও রোগী পাওয়া গেছে যারা শুধুমাত্র ডেলিভারি করানোর সময় হাসপাতালে গেছেন, তখন ডাক্তার আল্ট্রাসনোগ্রাম করে দেখেন পেটে বাচ্চা নেই। আবার যারা অবিবাহিতরা এই রোগে ভুগেন তাদের পারিবারিক, সামাজিক অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। সমাজ দুশ্চরিত্রা বলে আখ্যা দেয়, ফ্যামিলিতে কেউ ভালো ব্যবহার করে না, অনেকে মানুষের খোঁচা শুনতে না পেরে আত্নহতাও করেন। এসব রোগীদের ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন হরমোন সিক্রেশনের পরিমাণ বেড়ে যায়। তখন প্র্যাগনেন্সির উপসর্গ দেখা যায়। আল্টাসনোগ্রাম না করে আসল প্রাগনেন্সি থেকে এদের আলাদা করা যায় না। তাই এসব রোগীদের রোগ ডায়াগনোসিস হয়ে গেলে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে বলা হয়, প্রয়োজন হলে মানসিক ডাক্তার দেখাতে হয়। অনেক সময় জরায়ুর টিউমার থাকলেও এমন মনে হতে পারে।
আতিকাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো। সবার দুশ্চিন্তা শেষ হলো। ভুল বুঝাবুঝির অবসান হলো। একজন সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো হলো। তার পরামর্শ মতো সে চিকিৎসাও নিতে থাকলো। বেশ কিছুদিন পর সে সুস্থ্য, স্বাভাবিক হলো। মানসিক শান্তি ফিরে আসলো।
জহিরুল হক জাবেদ
US-Bangla Medical College Hospital
আতিকা তখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে। তখন রমজান মাস ছিলো। ১৩ বা ১৪ রমজান সেদিন। সবাই সেহেরি খেতে উঠেছে। মা গেলো বড় বোন সামিয়াকে ডাকতে। ঘরের দরজা খুলাই ছিলো। মা অন্ধকারেই দু চারবার ডেকে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে চলে আসেন। কিছুক্ষণ পর আতিকাকে পাঠানো হয় বোনকে ডাকার জন্য। লাইট জ্বালানোর পর আতিকা রীতিমতো শক খায়। বিছানায় আপু নেই সেজন্য না। এমন ও তো হতে পারে আপু উঠে ওয়াশরুমে গেছে। খাটের ওপর রাখা স্যুটকেস টা নেই, টেবিলের ওপর ল্যাপটপ নেই, বিছানাটা ছড়ানো ছিটানো, ড্রেসিং টেবিলটা পুরো খালি, কোন জামা কাপড় নেই। আতিকা কিছুক্ষণ বোনকে ডাকলো, তারপর ওয়াশরুমে উঁকি দিয়ে দেখলো সেখানেও বোন নেই। তাড়াতাড়ি মা'র কাছে আসলো। সামিয়াকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফোন দেওয়া হলো। নাম্বার বন্ধ। সবার বুঝতে বাকি রইলো না কাহিনী কি ঘটতে চলেছে। আতিকা অবশ্য জানতো সাবিত নামের এক ছেলের সাথে আপুর সম্পর্ক ছিলো। সে মোটামুটি নিশ্চিত ছিলো আপু এই ছেলের সাথেই পালিয়েছে। অবশ্য মা-বাবা জিজ্ঞেস করতে সে সরাসরি না করে দিয়েছে সে এই ব্যাপারে কিছু জানে না।
পরদিন ই থানায় জিডি করা হল। সামিয়ার সব বান্ধবীর সাথে যোগাযোগ করা হলো। কেউ ই কিছু জানে না। কাছের, দূরের সব আত্নীয়ের বাসায় খোঁজ নেওয়া হলো। কেউ কিছুই বলতে পারে নি। উল্টো মেয়ে খারাপ, দুশ্চরিত্রা এসব বলে দিয়েছে। বাবা জাফর হাসান প্রচন্ড রাগী মানুষ। উনার ভয়ে বাসায় কেউ উচ্চস্বরে কথা বলতে পারে না। জাফর সাহেব রেগেমেগে আগুন। ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন, একবার মেয়েকে পেলে নিজ হাতে জবাই করবেন।
ওদিকে দশ বারো দিন বাইরে থাকার পর সাবিতের টাকা শেষ হয়ে যায়। বন্ধুদের থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছিলো। তাও শেষের পথে। উপয়ান্তর না পেয়ে বাসায় ফোন দিয়ে মা'কে জানায় সে। ভেবেছিলো আর সবাই তাড়িয়ে দিলেও মা তাকে তাড়িয়ে দিবে না। কিন্তু সে আশায় ও গুঁড়েবালি। তার মুখ কখনো দেখতে চায় না তার মা। বংশের মান সম্মান নষ্ট করে দিয়েছে সে। অনেক কষ্টে বড় ভাইকে ম্যানেজ করে স্ত্রী সামিয়াকে নিয়ে বাসায় যায়। কিন্তু সাবিতের পরিবার তাদের জায়গা দেয়নি। আর কোন রাস্তা না পেয়ে সামিয়া সাবিতকে নিয়ে নিজের বাসায় আসে। বাবা অনেক বকবে এটা সে জানে। চিন্তা করেই এসেছে, বাবা কিছু বলার আগেই বাবার পায়ে পড়ে যাবে। তখন হয়তো দয়া করে মাফ করেও দিতে পারেন। যেই ভাবা সেই কাজ। সাবিতকে নিয়ে বাবার বাসায় আসে। মা তাদের মেনে নেয়। কিন্তু বাবা কোনমতেই মানবে না। সেইদিন থেকে শুরু করে এখন অব্দি একটা কথাও বলেন নি মেয়ের সাথে। সেদিন থেকেই সাবিত এই বাসায় থাকে। ছোটখাটো একটা চাকরি করে। তার ইচ্ছা বাবা মা মেনে নিলে নিজের বউকে নিয়ে সেখানে চলে যাবে। আর যাই হোক, ঘরজামাই হয়ে থাকাটা আত্নসম্মানে লাগে।
একদিন দুদিন যায়। আতিকার পিরিয়ড হয় না। দোকান থেকে কি যেন একটা ট্যাবলেট ও কিনে নিয়ে আসে। তবুও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। মা-বাবা কাউকে লজ্জায় বলতেও পারছে না।
আরও কিছুদিন চলে গেলো। আতিকার পেট ফুলে যাচ্ছে। দেখে মনে হয় সে প্র্যাগ্নেন্ট। সেদিন সকালে বমিও হয়েছে। এটা নিয়ে তার দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। কোন সমাধান ও পাচ্ছে না সে। নিজের কাছেও মনে হচ্ছে সে প্র্যাগ্নেন্ট। সেদিন রাতে তো বাচ্চার নড়াচড়াও টের পেয়েছে সে। মনে হচ্ছে কাউকে জানানো উচিত। না হলে কি থেকে কি হয়ে যায় আল্লাহ জানে! তার তো কোন প্রেমিক নেই। কারো সাথে শারীরিক সম্পর্ক হয়নি। তাহলে সে প্র্যাগ্নেন্ট হবে কি করে? এটা কি বিশ্বাসের কথা? দিন যাচ্ছে আর তার এই বিশ্বাস গাঢ় হচ্ছে। প্র্যাগ্নেন্ট মহিলার মতো তারও ব্রেস্টের চেঞ্জ আসছে। দুঃখে আত্নহত্যা করতে ইচ্ছে করছে। বাবা মা কে বললে কিভাবে নিবেন ব্যাপারটা?
একদিন রাতে সবাই খাচ্ছিলো। আতিকার শরীর খারাপ। তাই নিজ রুমে শুয়ে ছিলো। ইদানিং কিছু খেতেও ইচ্ছে করে না। কেমন যেন একটা মা মা ফিলিংস আসছে। তার বাচ্চাকাচ্চা খুব ভালো লাগে। আদর করতে ভালো লাগে, খাওয়াতে ভালো লাগে, বাচ্চাদের সাথে খেলতে ভালো লাগে। আর এখন নিজের বাচ্চা আসছে এটা তো আরও আনন্দের। ভাবলো, বাবা মা কে আজ ই জানাবে। তাই বিছানা থেকে উঠে ডাইনিং রুমে গেলো সে। কিছুক্ষন বাবা মায়ের পাশে ঘুরঘুর করে চলে আসতে নিচ্ছিলো। বলার সাহস হচ্ছিলো না। পিছন থেকে মায়ের ডাকে আবার যায় সে।
--কিরে! কিছু বলবি?
--না মা। কিছু বলব না।
--কোন সমস্যা তোর? ইদানিং কেমন মন খারাপ করে পড়ে থাকিস। দেখে মনে হচ্ছে তুই অসুস্থ।
--না মা কিছুনা। কিছু হয়নি আমার। রান্নাটা অনেক মজা হইছে না? আজ আমি একাই রান্না করেছি বাবা।
--তুই রান্না করলে খাবার মজাদার না হয়ে যায় কই? (বাবা)
--পেট ভরে খাও বাবা।
--তোর কি হইছে বল। কিছু একটা লুকাচ্ছিস মনে হয়।
--আসলে বাবা,,,,,
--কি?
--বাবা, আমার পিরিয়ড হচ্ছেনা কয়েক মাস যাবত।
--বলস নাই কেন এতদিন? আর কোন সমস্যা?
--না।
--কোন ওষুধ খেয়েছিস?
--বাবা ফার্মেসী থেকে ওষুধ এনে খেয়েছিলাম।
--এখন কি অবস্থা?
--কিন্তু বাবা একটা সমস্যা হয়ে গেছে। লজ্জায় এতদিন বলতেও পারছিলাম না। কিন্তু এখন না বললে মনে হয় ঝামেলা হতে পারে।
--কি সমস্যা?
--ফার্মেসী থেকে ওষুধ এনে খাওয়ার পর থেকে আমার পেট ফুলতে থাকে। সকালে বমিও হয়। আমার মনে হয় আমি প্র্যাগ্নেন্ট। বাচ্চার নড়াচড়াও টের পাই। কিন্তু বিশ্বাস কর বাবা আমার এই ধরনের কোন সম্পর্ক নেই।
এটুকু বলেই কাঁদতে শুরু করে আতিকা। বাবা প্রচন্ড রেগে যায়। এটা কি খামখেয়ালি করার জিনিস? নিশ্চয়ই কোন আকাম করেছে।
মা আরও জোরে কাঁদতে থাকে। "কোন পাপের শাস্তি দিচ্ছো আল্লাহ"!!!
এসব দেখে দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় আতিকা। বাবা রেগেমেগে সামিয়াকে ডাকে।
--তুই করেছিস এসব? নিজে একটা আকাম করছোস। এখন আমার ছোট মেয়েটাকেও ভুলিয়ে, ফুসলিয়ে এমন বানাইছিস। বল আসল কাহিনী কি? আতিকা প্র্যাগ্নেন্ট হলো কি করে?
--বাবা, আমি কিছুই জানিনা। বিশ্বাস কর, আমাকে ও কিছুই বলে নি। ওর কারো সাথে সম্পর্ক থাকলে নিশ্চয়ই আমাকে বলতো।
--হইছে আর সাধু সাজতে হবে না। তোরাই থাক এই বাসায়। মান সম্মান আর থাকলো না আমার। অফিসে মুখ দেখাব কি করে? একটা বিয়ের আগে ভাইগা গেছে, আরেকটা বিয়ের আগে প্র্যাগ্নেন্ট!! কি জোশ ব্যাপার সেপার। তোদের গলা টিপে হত্যা করা উচিত। নির্লজ্জ,বেহায়া কোথাকার।
রাতেই বাসা থেকে বের হয়ে যায় জাফর সাহেব। পিছন পিছন স্ত্রী রাবেয়া গিয়েছিলেন অবশ্য। কিন্তু ফেরানো সম্ভব হয়নি। উনিও আর আটকানোর চেষ্টা করেন নি। রাগ কমে গেলেই বাসায় ফিরবেন এটাই উনার বিশ্বাস।
মা ফ্লোরে বসে আছেন। নিজের কপাল চাপড়াচ্ছেন। অনেক অনুনয় বিনুনয় করে আতিকার রুমে ঢুকে কথা বলে আসলেন। আতিকা কোনভাবেই স্বীকার করছে না কারো সাথে তার শারীরিক সম্পর্কের কথা।
মা চিন্তা করছেন তাহলে কে হতে পারে? আতিকার কোন ছেলে বন্ধু না থাকলে কে করতে পারে এই কাজ? বাপের বাড়ি গিয়েছিলাম কিছুদিনের জন্য। সেই সুযোগেই কি সাবিত করেছে এই কাজ?? ছিহ! ছিহ! কি লজ্জার ব্যাপার!! এসব দেখার আগে মরে যাওয়াই ভালো ছিলো!!!!!
সে রাতে আর বাসায় ফিরেন নি জাফর সাহেব। স্ত্রী রাবেয়া ভেবেছিলেন বাহিরে কিছুক্ষন থেকে মন হালকা হলে চলে আসবেন। বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছেন তিনি। প্রথমে ফোন ঢুকলেও রিসিভ করেন নি জাফর সাহেব। রাগে ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। আর কিছু ভেবে না পেয়ে বাসার নিচে গেলেন। দাড়োয়ান ঘুমাচ্ছে। কিছুক্ষন তার দরজায় নক করলেন। কোন সাড়াশব্দ নেই। প্রায় দশ মিনিটের মতো একটানা ডাকলেন। যেকোন ঘুমন্ত মানুষের এতক্ষনে ঘুম ভাঙার কথা! সে কি আসলেই ঘুমাচ্ছে নাকি ঘুমের ভান করে শুয়ে আছে কে জানে। একজন অন্ধ মানুষকেও পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব কিন্তু তাকে নিয়ে আগানো সম্ভব নয় যে চোখ থাকতেও অন্ধের ভান করে থাকে, একজন বিবেকবান মানুষের ভুল ধরিয়ে তাকে সংশোধনের পথে আনা সম্ভব, কিন্তু তাকে আনা সম্ভব নয় যার বিবেক নেই, নিজের ভুল যে কখনো স্বীকার করে না। ঠিক তেমনি একজন ঘুমন্ত মানুষকে ঘুম থেকে তোলা সম্ভব,কিন্তু ইচ্ছে করে চোখ বন্ধ করে রাখা মানুষকে জাগানো সম্ভব নয়। হয়ত বেচারা সবেমাত্র শুয়েছে, এই বুঝি ঘুম আসবে আসবে করছে তাই হয়তো আরামের বিছানা ছাড়তে রাজি হচ্ছে না। রাবেয়া বেগম মন খারাপ করে উপরে চলে গেলেন।
নিজের রুমে যাওয়ার আগে ভাবলেন আতিকাকে একবার দেখে যাওয়া যাক। রুমের দরজাটা খোলাই আছে। উঁকি দিতেই দেখলেন আতিকা বিছানার এক কোণে জড়োসড়ো হয়ে বসে কান্না করছে। নিঃশব্দে মেয়ের কাছে গেলেন। মাথায় হাত রাখলেন। মা'কে দেখেই কান্না শুরু করে দিলো সে। মা তাকে আরও কাছে টানলেন। সন্তান যেমন ই হোক মায়ের কাছে নিজের সন্তান সবসময় সেরা। মায়ের মমতার কোন কমতি নেই। সেদিন দেখলাম ছেলেটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে গেছে। মা তাকে একটা শিকলে বেঁধে কাজে যান। আবার কাজ শেষে শিকল খুলে বাসায় নিয়ে যান। এইযে ভালোবাসা এটা কি আর কারো কাছে পাওয়া সম্ভব? আতিকার কান্না থামলো কিছুক্ষণ পর।
--দেখ, আমি তোর মা। আমার কাছে কিছু লুকাইস না। কি হয়েছে বল?
--সত্যি মা। আমি কিছুই জানিনা।
--তোর কারো সাথে সম্পর্ক ছিলো?
--না মা। আমার কোন ছেলে বন্ধুই নাই। আমি কখনো সম্পর্ক করিনি।
--বন্ধু তো তোর বড় আপুর ও ছিলো না। ঠিক ই তো বংশের মুখে চুনকালি মাখাইছে। তুই সত্যি করে বল কার সাথে সম্পর্ক ছিলো?
--বিশ্বাস কর মা। আমি সত্যিই বলছি। আমার কারো সাথে সম্পর্ক ছিলো না। কি করে কি হল বুঝতে পারছিনা।
--(এবার মেয়ের কানে কানে বললেন) সাবিতের সাথে কিছু হয়েছে? ও তোকে জোর করেছিলো কখনো?
দেখ,কিছু মনে করিস না। আমাকে জানতে হবেই।
--না মা। কারো সাথেই কিছু হয়নি। তুমি দুলাভাইকে খারাপ বলছো কেন? উনি অনেক ভালো মানুষ। সহজ সরল।
উনাদের কথা শেষ হতে না হতেই পাশের রুম থেকে কিছু একটা ভাঙার আওয়াজ পাওয়া গেলো। রাবেয়া বেগম দৌড়ে গেলেন সামিয়ার রুমের দিকে। শরীর, মন খারাপ বলে বিছানাতেই বসে রইলো আতিকা।
রাবেয়া বেগম সামিয়ার রুমে গিয়ে দেখেন সামিয়া ফ্লোরে পড়ে আছে। মাথা থেকে রক্ত ঝড়ছে। সাবিত মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে পাশে। রাবেয়া বেগমকে রুমে ঢুকতে দেখে রুম থেকে বের হয়ে যায় সে। রাবেয়া বেগমের বুঝতে বাকি রইলো না সাবিত মেয়েটাকে কিছু একটা দিয়ে আঘাত করেছে। ফ্লোর থেকে মেয়েকে তুলে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলেন। মাথায় কিছুক্ষণ পানি দিলেন। মাথার বাম পাশের অনেকটাই কেটে গেছে। রক্ত ঝড়ছে এখনো। এখনি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। নাহলে কি থেকে কি হয়ে যায় বলা মুশকিল। কিন্তু এতরাতে কাকে পাবেন? কে সাহায্য করবে? জাফর সাহেব তো বাসা থেকে বের হয়ে গিয়ে বাঁচলেন। উনি একা কতদিক সামলাবেন? নিজের উপর ই রাগ হচ্ছে। কি পাপের শাস্তি পাচ্ছেন কে জানে!!
বড় মেয়েটা নিজ পছন্দে বিয়ে করলো, নিজের সুখ নিজেই বেছে নিলো, অথচ সুখের বদলে শোক পাচ্ছে, ছোট মেয়েটার কি হল কিছুই বুঝা যাচ্ছে না, এসব সহ্য করতে না পারে বাসা থেকে স্বামী বের হয়ে গেলো রাগে! আল্লাহ ই জানে এর পর কি আছে?
এখন এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারে পাশের ফ্ল্যাটের আকিব। একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে সিএসই তে পড়ে। ক্লাস না থাকলে সারাদিন ঘুমায়। আর সারারাত ল্যাপটপ নিয়ে জেগে থাকে। এটাই যেন একটা ফ্যাশন!! রাবেয়া বেগমের এসব খুব বিরক্ত লাগে। পড়ালেখা তো উনিও করেছেন। কত সুন্দর রুটিন মেনে চলতেন। আর এখনকার ছেলেপেলেরা কিসব যে করে!! এসব ভাবতে ভাবতেই কলিংবেলে চাপ দিলেন। দুমিনিটের ভিতর দরজা খুলে দিলো আকিব। আকিবকে খুলে বললো পুরো ঘটনা। তাড়াতাড়ি তাকে নিয়ে সামিয়ার রুমে আসলো। সামিয়া ততক্ষনে মাথায় একটা পাতলা কাপড় দিয়ে ব্যান্ডেজ করার চেষ্টা করছিলো। আকিব সামিয়াকে নিয়ে বাসার পাশেই একটা ফার্মেসীতে নিয়ে গেলো। পাশেই একটা প্রাইভেট ক্লিনিক আছে। আর তাই এর আশেপাশের ফার্মেসীগুলো অনেক রাত পর্যন্ত খোলা থাকে যাতে রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে না হয়। মাথায় ব্যান্ডেজ করিয়ে সামিয়াকে নিজের রুম পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে বাসায় চলে যায় সে।
জাফর সাহেব বাসায় আসেন পরদিন বিকালে। সাথে উনার বৃদ্ধা মাকে নিয়ে আসেন। তার মানে উনি গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন। শ্বাশুড়িকে পেয়ে রাবেয়া বেগমের মন ভালো হয়ে গেছে। শহরে থাকে বিধায় শ্বাশুড়ির তেমন সেবা যত্ন নেওয়ার সুযোগ পান নি। অনেকবার জাফর চেয়েছিলো মাকে শহরে নিয়ে আসতে। কিন্তু তিনি মৃত স্বামীর ভিটা ছেড়ে কোথাও যেতে রাজি না। ছোট ছেলে হাবিব আর তার বউয়ের সাথে গ্রামে থাকেন। মা'কে নিয়ে আসার আরও একটা উদ্দেশ্য আছে জাফর সাহেবের। মা কয়েকজন কবিরাজকে চিনেন। আতিকাকে নিয়ে যাবেন তাদের কাছে। জাফর সাহেবের ধারণা হয়তো আতিকা কোন আকাম করছে নয়তো ভূতে ধরছে, তাই এমন হচ্ছে। তিনি নিজেও জানেন না কি করা উচিত এই মূহুর্তে।
সন্ধ্যায় মা আর স্ত্রীকে নিয়ে নিজ রুমে গল্প করছিলেন জাফর সাহেব। কোথেকে সাবিত এসে বললো সে আতিকাকে নিয়ে ফার্মেসীতে যেতে চায়। তার ধারণা আতিকার কোথাও ভুল হচ্ছে। একটা প্র্যাগ্নেসি টেস্ট করিয়ে শিওর হতে চায় সে। জাফর সাহেব কোন কথা বললেন না। উনার সন্দেহ আরও তীব্র হলো। কারো থেকে হ্যাঁ /না কোন উত্তর না পেয়ে আতিকা নিয়েই বের হয় সে। সামিয়ার জন্য ওষুধ কিনলো আর আতিকার টেস্ট করালো। টেস্টের রেজাল্ট পাওয়ার পর সাবিতও শিওর হলো আতিকার কারো সাথে সম্পর্ক ছিলো। রেজাল্ট তাই বলে। সে প্র্যাগ্নেন্ট। পুরো রাস্তায় আতিকার সাথে আর কোন কথা বলে না সে। বাসায় এসে শশুর শাশুড়ির রুমে উঁকি দিয়ে টেস্টের রেজাল্ট বলে নিজের রুমে চলে যায়।
রাতে শোবার পর রাবেয়া বেগম স্বামীকে বলেছিলেন মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে। ভালো বা খারাপ একটা কিছু তো করতে হবে। মেয়ে যদি স্বীকার করতে না চায় তাহলে তো অবিবাহিতা মেয়ের গর্ভের সন্তান রাখা যাবে না। এটা শুনে জাফর সাহেব প্রচন্ড রেগে গেলেন। দুশ্চরিত্রা মেয়ের পিছনে একটা টাকাও খরচ করবেন না উনি। মায়ের সাথে গ্রামে পাঠাবেন। যা করার মা'ই করবে।
তিন চারদিন চলে গেলো। আতিকার শরীর টা আরও খারাপ হতে লাগলো। তার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না ব্যাপারটা। এটা কি করে সম্ভব? বাবা-মা কেউই তাকে ভালো চোখে দেখছে না। বন্ধু বান্ধব, আত্নীয় স্বজন জেনে গেলে সে বাসা থেকেই বের হতে পারবে না। তার জন্য মুখ দেখাতে পারবেন না বাবা মাও। তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় সে আত্নহত্যা করবে। এর চাইতে সহজ সমাধান আপাতত নেই। রাতে কয়েকবার মায়ের রুমে যায় সে। আত্নহত্যা করবে ভেবে মায়ের জন্য খারাপ লাগছে। মায়ের আদর কখনো পাওয়া হবে না। রাত দুইটার দিকে সে মোটামুটি নিশ্চিত হলো বাসার সবাই ঘুমিয়ে গেছে। এখনই মোক্ষম সুযোগ আত্নহত্যা করার। প্রথমে ভেবেছিলো ফ্যানের সাথে ঝুলে পড়বে। কিন্তু সাহস করতে পারে নি। হাতের কাছে তেমন কোন ওষুধ ও নেই যেটা খেলে সাথে সাথে মারা যাবে। আর কিছু না পেয়ে হারপিক খায় সে। মায়ের মন নাকি দূরে থাকলেও সন্তানের ভালো /মন্দ টের পায়? রাবেয়া বেগমের কেমন যেন অস্বস্তি লাগছিলো। ঘুম ভেঙে যায়। কি মনে করে আতিকাকে দেখতে আসে। আর এসেই দেখে বিছানায় উপুড় হয়ে পড়ে আছে সে। আরও কাছাকাছি আসার পর কাহিনী বুঝতে বাকি রইলো না উনার। চিৎকার করে সবাইকে ডাকলেন। সবাই এসে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে গেলো তাকে।
ইমার্জেন্সীতে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তারদের কিছুক্ষণের প্রচেষ্টায় জ্ঞান আসে আতিকার। রাবেয়া বেগমের কাছ থেকে পুরো হিস্ট্রি শোনে একটা আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে পাঠায় ডাক্তার। রিপোর্ট আসার পর দেখা যায় সে প্র্যাগ্নেন্ট নয়, তার গর্ভে কোন সন্তান নেই। পুরো বিষয়টা বুঝিয়ে দেন ডাক্তার।
আতিকার যে রোগটা হয়েছে এটা মূলত মানসিক। নাম pseudocyesis বা phantom pregnancy /false pregnancy। মানে হলো গর্ভে সন্তান না থাকলেও রোগীর মনে হবে সে প্র্যাগ্নেন্ট। এটা অবশ্য বিবাহিতদের বেশি হয়। যাদের কোন বাচ্চা হয়না, যাদের অনেক ইচ্ছা একটা বাচ্চা নেওয়ার কিন্তু বাচ্চা হয়না তাদের এই রোগ বেশি হয়। তাদের যে শুধু নিজেদের প্র্যাগ্নেন্ট মনে হয় তাই কিন্তু নয়। একজন প্র্যাগ্নেন্ট মহিলার যেসব উপসর্গ থেকে তাদেরও সেইসব উপসর্গ থাকে। পেট ভুলে যায়, পায়ে পানি জমে, মাসিক বন্ধ হয়ে যায়, এমনও হয় তারা বাচ্চার নড়াচড়াও টের পায় যদিও তাদের পেটে বাচ্চা নেই। কিন্তু তাদের ধারণা তাদের পেটে বাচ্চা আছে। এমনও অনেক মহিলা আছে যাদের অনেক বছর ধরে বাচ্চা হয়না, তারা যখন এই রোগে ভুগেন তখন তারা বাচ্চার জন্য জামাকাপড়, বাচ্চার নাম ও ঠিক করে ফেলেন। এমনও রোগী পাওয়া গেছে যারা শুধুমাত্র ডেলিভারি করানোর সময় হাসপাতালে গেছেন, তখন ডাক্তার আল্ট্রাসনোগ্রাম করে দেখেন পেটে বাচ্চা নেই। আবার যারা অবিবাহিতরা এই রোগে ভুগেন তাদের পারিবারিক, সামাজিক অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। সমাজ দুশ্চরিত্রা বলে আখ্যা দেয়, ফ্যামিলিতে কেউ ভালো ব্যবহার করে না, অনেকে মানুষের খোঁচা শুনতে না পেরে আত্নহতাও করেন। এসব রোগীদের ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন হরমোন সিক্রেশনের পরিমাণ বেড়ে যায়। তখন প্র্যাগনেন্সির উপসর্গ দেখা যায়। আল্টাসনোগ্রাম না করে আসল প্রাগনেন্সি থেকে এদের আলাদা করা যায় না। তাই এসব রোগীদের রোগ ডায়াগনোসিস হয়ে গেলে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে বলা হয়, প্রয়োজন হলে মানসিক ডাক্তার দেখাতে হয়। অনেক সময় জরায়ুর টিউমার থাকলেও এমন মনে হতে পারে।
আতিকাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো। সবার দুশ্চিন্তা শেষ হলো। ভুল বুঝাবুঝির অবসান হলো। একজন সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো হলো। তার পরামর্শ মতো সে চিকিৎসাও নিতে থাকলো। বেশ কিছুদিন পর সে সুস্থ্য, স্বাভাবিক হলো। মানসিক শান্তি ফিরে আসলো।
জহিরুল হক জাবেদ
US-Bangla Medical College Hospital