আমরা অনেকেই অনেক সময় চোখের নানা উপসর্গে ডাক্তারবাবুর দেয়া নানা ধরনের চোখের ড্রপ বা অপথ্যালমিক ড্রপ ব্যবহার করি! আমরা অনেকেই ড্রপ নেবার একটু পরে গলাতে ঐ ওষুধের একটা তেতো স্বাদের অনুভূতি পাই ! কারণ বেশীর ভাগ ওষুধের মূল স্বাদ তেতো!
আবার যখন আমরা গভীর দুঃখ শোক বা আনন্দ উচ্ছেদের কেঁদে ফেলি তখন আমাদের চোখের জলের সাথে সমানে নাকের থেকেও জল পড়ে! অর্থাৎ চলিত প্রবাদে বর্ণিত "চোখের জল ও নাকের জলের" অবস্থা হয়! কেন এমনটা হয়?
নাক ও চোখের মাঝে যোগাযোগ:--
কারণটা হয়ত আমরা কেউ কেউ জানি আবার অনেকেই জানিনা!
অনেকেই ভাবি আমাদের শরীরে চোখ একটা একেবারে আলাদা অঙ্গ তার সাথে অন্য কারও যোগাযোগ নেই ! আসলে তা কিন্তু নয়! চোখের সাথে মস্তিষ্কের তো সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, এমনটাই ঘনিষ্ঠ যে আমাদের চোখ দুটোকে মস্তিষ্কের বহিরাগত অঙ্গ বললেও ভুল হবে না !
এছাড়াও চোখের সাথে আমাদের নাকেরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বা যোগাযোগ আছে ! যদিও দুটি অঙ্গের কাজ সম্পূর্ণ আলাদা! একজন দেখে অর্থাৎ আলোক সুবেদী, আর একজন ঘ্রাণের উদ্দীপনা গ্রহন করে !
তবে এই দুটি অঙ্গের মধ্য এনাটোমিক্যাল যোগাযোগের রয়েছে! সেই যোগাযোগ ব্যবস্থার নাম – "ন্যাসো-ল্যাক্রিম্যাল ড্রেনেজ সিস্টেম!" অর্থাত চোখ নাকের অন্তর্ভুক্ত একটি ড্রেনেজ সিস্টেম!
পেঁয়াজ ছাড়ালে কি চোখ ভাল থাকে?
না এই রকম বিশ্বাসের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই! অনেকে বলেন পেঁয়াজ কাটার বা ছড়ানোর সময় চোখে বেশী জল কাটলে নাকি চোখ ধুয়ে পরিস্কার হয়ে যায় ! এটাও হাস্যকর ! আসলে আমাদের চোখ বা কান নিজেকে নিজেই পরিস্কার রাখে যদি না চোখের কোনো রোগ হয় !
শরীর বিজ্ঞান বলে আমাদের চোখের পাতার ভিতরে ওপরের দিকে একটু কোন ঘেঁষে আছে অশ্রু গ্রন্থি বা ল্যাক্রিম্যাল গ্ল্যান্ড! চোখজুড়ে ছড়ানো অসংখ্য স্নায়ু জালিকার মাধ্যমে যখন কোনো আঘাত জনিত বা রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি জনিত উদ্দীপনা অথবা মস্তিষ্কের ভিতরে উৎপন্ন আবেগজনিত উদ্দীপনা চোখের পাতার ভিতরের দিকে পৌঁছায় তখন এই "ল্যাক্রিম্যাল গ্ল্যান্ড" অশ্রু নিঃসরণ করে যাতে চোখের পাতায় পৌঁছানো অবাঞ্ছিত তরল বা ক্ষুদ্র কঠিন পদার্থ জলের সাথে বার হয়ে যেতে পারে ! মাংস রান্না করতে গিয়ে পেঁয়াজ কুচানের সময় আমরা অনেকেই "চোখের জলে নাকের জলের" অবস্থা হয় না কি? তখন আমাদের চোখ পেঁয়াজ নিংসৃত উদ্দীপক রাসায়নিক পদার্থ চোখের জলের সাথে বার করে দেবার চেষ্টা করে !
ন্যাসো ল্যাক্রিম্যাল ডাক্ট:---
আমরা জানি চোখের জল বা অশ্রু আমাদের চোখের পর্দাকে পিচ্ছিল করে রাখে যাতে চোখের পর্দার অতি দ্রুত খোলা বন্ধ হবার কারণে চোখে যন্ত্রণায় অনুভূতি না আসে ! আবার এই অশ্রুধারার ভিতরে মিশ্রিত থাকা নানা লবন ও এন্টিব্যাকটিরিয়াল উপাদান চোখের তারার চারদিকে বাইরের অংশ বা কংজাঙ্কটিভার উপরে থেকে চোখকে সুরক্ষা দেয়!
তবে কোনো কারণে অশ্রু পরিমান বেশী হলে সেই জলটা ড্রেনেজ করার দুটি ব্যবস্থাও আছে! প্রথমত চোখের পাতা উপছে জল চোখের কোনা বেয়ে বাইরে আসে, দ্বিতীয়ত আর একটা অংশ ঐ "ন্যাসো- ল্যাক্রিম্যাল ড্রেনেজ" ব্যবস্থার নালিক বেয়ে নাকের মধ্য দিয়ে গলায় পৌঁছে যায়! এই ব্যবস্থায় আমাদের চোখ ও নাকের উপরিভাগের সংযোগস্থলের নিকটে প্রতিটি চোখের কোনে দুটি করে নালিকা দুটি ছিদ্রের রুপে খোলা থাকে! এই ভাবে দুটি চোখের চারটি নালিকা নাকের তরুনাস্থির রন্ধ্র দিয়ে নাকের উপরের দিকে থাকা "ন্যাসো ল্যাক্রিম্যাল ডাক্টে " উন্মুক্ত হয় !
সুতরাং যখন আমরা চোখের কোনো তরল ড্রপ আকারে দিই এবং চোখ বন্ধ রাখি তখন বন্ধ চোখের পাতার চাপে ঐ ওষুধের কিছু অংশ ঐ "ন্যাসো ফ্যারিন্জিয়াল" ডাক্টে পৌঁছে যায় এবং সেখান থেকে সহজেই গলায় পৌঁছে যায় কারণ নাসিকা নালী গলার ভিতরে শ্বাস নালির পর্যন্ত বিস্তৃত! গলার কাছেই জিহ্বার উপরিতলে বিছানা অসংখ্য "টেস্টবাড" বা স্বাদ অনুভূতির রিসেপটর তখন ঐ ওষুধের বা পদার্থের মূলত তিক্ত স্বাদ অনুভব করে !
"বিদ্যা দদাতি বিনয়ং!"
সত্যিই প্রকৃতি আমাদের বেঁচে থাকার জন্য ও জীবনটাকে উপভোগ করানোর জন্য যে সব কলাকৌশল অবলম্বন করেছেন সে সব জানতে পারলে, বুঝতে পারলে মনের মধ্যে অহংকার নয় এক বিনয় ভাবের অনুভূতি আপনা আপনিই চলে আসে! মনে পড়ে আমাদের দেশে সংস্কৃত প্রবাদ "বিদ্যা দদাতি বিনয়ং!" বা ইংরেজী প্রবাদ— "রিয়েল এডুকেশন ইমপার্টস মডেস্টি!"
(চিত্র ও তথ্যাংশ নেটের সৌজন্যে!)
সমীর ব্যানার্জী