ভেনাস ফ্লাই ট্র্যাপ" প্রকৃতির আর এক বিস্ময়



 আমার ফেসবুকের বন্ধুদের  বা পাঠকদের মাঝে  হয়ত অনেকেই জানেন যে   উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ভাষাতে "ডায়োনিয়া মাসিপুলা"  বা "ভেনাস ফ্লাই ট্র্যাপ"  সারা বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানী মহলে  এক বিশেষ  ধরণের আকর্ষণীয় ও আশ্চর্যজনক উদ্ভিদ হিসাবে স্বীকৃত ! 

  কারণ   পোকামাকড়ভোজী এই   উদ্ভিদের  শিকার ধরে তাকে বন্দী করা ও হজম করার  ক্রিয়াকলাপ খানিকটা রোবটের মতো এবং তা  আধুনিক মানুষের  কৌতূহলী চোখদুটিকেও  ছানাবড়া করে দিতে পারে ! 


প্রাণী না উদ্ভিদ?

উদ্ভিদটির সাধারণ নাম "ভেনাস ফ্লাই ট্রাপ"! ভেনাস তো জানি প্রেমের কাল্পনিক গ্রীক দেবী, আর মাছি বা পতঙ্গ ধরে বলে ফ্লাই ট্রাপ! 

অর্থাত  প্রেম বা ভালবাসার ছল দেখিয়ে শিকার ধরার জন্য  এমন নাম করণ!  বৈজ্ঞানিক  নাম "ডায়োনিয়া মুসিপুলা" ! ডায়োনিয়া হলেন কাল্পনিক  গ্রীক দেবী ডায়োনের  কন্যা আফ্রিদিতি ! আর ল্যাটিন "মুসিপুলা হল " ইঁদুর ধরার ফাঁদ"!  তাই দুইয়ে মিলে হল "ডায়োনিয়া মুসিপুলা"!

এই দুটি নাম করণের মধ্য অবশ্যই  লুকিয়ে আছে উদ্ভিদটির শিকার ধরার কৌশলের কাহিনী! 

সত্যিই চোখের সামনে এই গাছের  পরিবর্তিত পত্র-ফাঁদে  তার শিকার ধরার কৌশল দেখলে অনেক মানুষ  বিশ্বাসই  করতে পারবেন না যে এটা কোনো শিকারী প্রাণী  নয় এটা এক জাতের আশ্চর্য উদ্ভিদ! এদের আদি বাসস্থান  দক্ষিন পূর্ব  আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে !  পৃথিবীর  সব দেশে সব আবহাওয়ার পরিবেশে এদের দেখা যায় না ! বর্তমানে এটি বিশ্বের উদ্ভিদ  জগতে  অস্তিত্ব সংকটে ভোগা একটি প্রজাতি!!

ব্যাপারটা কি:--

প্রথমে এই  "ফ্লাই ট্রাপ"   বিশেষ ভাবে নির্মিত কবাটের আকারের দুটি পত্র কবাটটি খুলে রাখবে! এবার ফুলের গন্ধে ছোট ছোট পতঙ্গ ঐ পত্র কবাটিকার   সান্নিধ্যে আসলে কবাটের সেন্সর সেটি অনুভব করে কবাটটি বন্ধ করে তার শিকারকে  পাতা ফাঁদে গিলে নেবে! এরপর পাতা থেকে  এক বিশেষ ধরণের "হজমি জুস" বা রাসায়নিক ডাইজেসটিভ  জুস নিঃসৃত  হবে ঐ পতঙ্গটির শরীর  দ্রবিভূত করার জন্য,  এরপর ঐ দ্রবিভূত  নিঃযাস  হজম করে উদ্ভিদটি  তার পুষ্টি গ্রহন করে নেবে ! তার খাদ্য তালিকায় আছে মাকড়সা, বিভিন্ন  জাতের পিঁপড়ে, নানা ধরণের মাছি ও পতঙ্গ!

জৈব যান্ত্রিক  পদ্ধতি:--

আমরা সবাই জানি গাছ মাটি  এবং জল থেকে তার পুষ্টির উপাদান সংগ্রহ  করে ! কিন্তু না দেখলে 

অনেকেই বিশ্বাস  করতে পারবেন না  যে এক অবিশ্বাস্য  রকমের "বায়োমেকানিকস"  বা জৈব যান্ত্রিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে এই উদ্ভিদটি  জল মাটি ছাড়াও  তার বেঁচে থাকার জন্য পতঙ্গ ধরে তার দেহের থেকেও প্রয়োজনীয়  পুষ্টি ও রসদ সংগ্রহ করতে পারে! 

 ভাবলে অবাক লাগে সত্যিই  প্রকৃতির অনেক অনেক কাজ কর্ম  ও কলা কৌশল এখনও  অতি আধুনিক ও বিজ্ঞান প্রশিক্ষিত মানুষকেও  বিস্ময় হতবাক করে দেয়!  

ভেনাস ফ্লাই ট্র্যাপের শিকার কৌশল:--

যখন কোনো পতঙ্গ  ফ্লাই ট্রাপের  বায়ো ইলেকট্রিকসেন্সার বা সাধারণের চোখে  পত্রসুত্রের সংস্পর্শে  আসবে তখনই  এক সেকেন্ডের দশভাগের একভাগ সময়ে পাতার ফাঁদ বন্ধ হবে ! যদি ফাঁদে পড়া বস্তুটি খাবার যোগ্য না হয় তাহলে "ভেনাস ট্র্যাপ" আবার  খুলে যাবে, আর যদি খাবার যোগ্য জিনিস অর্থাত পতঙ্গ  হয় তবে কুড়ি সেকেন্ড পরে বন্ধ ফাঁদের ভিতর থেকে হজমি রস নির্গত হতে থাকবে ! এই কুড়ি সেকেন্ড সময়ে ফাঁদের ভিতর আর ও পাঁচটি স্তরে  থাকা বায়ো ইলেকট্রিক সেন্সরগুলি ট্রিগার  করে দেখে নেবে বস্তুটি সঠিক পরিচয়!

প্রথম পর্বে :- ভেনাস ট্র্যাপ তার পরিবর্তিত পত্র ফাঁদ সংলগ্ন  ফুল থেকে নিঃসৃত একটি সুগন্ধি সুধার গন্ধে সে পতঙ্গকে আকৃষ্ট করবে! 

 দ্বিতীয় পর্যায়  :- পতঙ্গটি  ফাঁদে লোবের কাছে আসলে লোবের সরু সরু  সুতোর মতো  বা চিড়ুনির দাঁতের মতো উপাঙ্গগুলি লোবের রিবের মধ্য থাকা সেন্সরগুলিকে  খবর পাঠাবে,

তৃতীয় পর্যায়ে স্ন্যাপিং :- এই স্ন্যাপিং

 পর্যায়ে ফাঁদের বাইরের অংশ বর্ধিত হবে আর ভিতরের অংশ সংকুচিত হবে ফলে লোব বা ফাঁদটি দ্রুত বন্ধ হবে ! ফলে শিকার ফাঁদে বন্দী হয়ে পড়বে !

চতুর্থ পর্যায়:-

এই পর্যায়ে লোবের ভিতর থেকে নিঃসৃত হজমি জুস শিকারটিকে গলিয়ে তরলে পরিনত করবে আর লোবের অভ্যন্তরে থাকা বিশেষ শোষক কোষ ঐ বিগলিত রস শুষে নেবে এবং পুষ্টি কোষকলার মাধ্যমে উদ্ভিদের দেহে ছড়িয়ে পড়বে !

এই পুষ্টি আত্মীকরণ বা সম্পূর্ণ  শুষে নিতে পাঁচ সাতদিন সময় লাগে , শোষণ শেষ হলে পত্র ফাঁদ আবার খোলে যাবে কবাটের মতো! 

টার্গিড কনট্রোল:--

এদের সম্বন্ধে আর একটা মজার বিষয় হল যে "ভেনাস ফ্লাই ট্র্যাপ" মাটি থেকে বেশী জল শুষে হাইড্রেটেড থাকবে তার পাতার কোষের  টার্গিড  প্রেসার বেশী হবে ফলে  তার ক্ষেত্রে এই ফাঁদগুলি তাড়াতাড়ি খুলবে আর শুকনো মৌসুমে  কোষে জলের টান পড়লে  টার্গেট প্রেসার কম হয়ে গেলে এই পত্র ফাঁদ খুলতে একটু বেশী সময় নেবে !

 পথ আর ও আছে বাকি:--

এটা ঠিক যে আমাদের আধুনিক ও  উন্নত জীববিজ্ঞান  এই উদ্ভিদটির এই বিশেষ প্রযুক্তিটির  বিষয়ে অনেক কিছু জেনেছে বটে তবে এটাও ঠিক  আরও অনেকটা জানা বাকি আছে  এবং সেটা নিয়ে বিশ্ব জুড়ে জীববিজ্ঞানী মহলে গবেষণা চলছে চলবে!

https://youtu.be/wUydW5tVrJI

(তথ্য ও চিত্র নেটের সৌজন্যে!)

লিখাঃ সমীর ব্যানার্জী

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম