তেলাকুচার ঔষধি গুন



পরিচিতি:   তেলাকুচা একপ্রকারের ভেষজ উদ্ভিদ। বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে একে ‘কুচিলা’, তেলা, তেলাকচু, তেলাহচি, তেলাচোরা কেলাকচু, তেলাকুচা বিম্বী ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। অনেক অঞ্চলে এটি সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। গাছটির ভেষজ ব্যবহারের জন্য এর পাতা, লতা, মূল ও ফল ব্যবহৃত হয়। এটি লতানো উদ্ভিদ। তেলাকুচা, বসতবাড়ির আশেপাশে, রাস্তার পাশে, বন-জঙ্গলে জন্মায় এবং বংশবিস্তার করে। সাধারণত বাংলা চৈত্র-বৈশাখ মাসে তেলাকুচা রোপন করতে হয়। পুরাতন মূল শুকিয়ে যায় না বলে গ্রীস্মকালে মৌসুমী বৃষ্টি হলে নতুন করে পাতা গজায় এবং কয়েক বছর ধরে পুরানো মূল থেকে গাছ হয়ে থাকে। এটি গাঢ় সবুজ রঙের নরম পাতা ও কাণ্ডবিশিষ্ট একটি লতাজাতীয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। লতার কাণ্ড থেকে আকশীর সাহায্যে অন্য গাছকে জড়িয়ে উপরে উঠে। পঞ্চভূজ আকারের পাতা গজায়, পাতা ও লতার রং সবুজ। এর ফল ও কচি ডগা খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তেলাকুচায় প্রচুর বিটা-ক্যারোটিন আছে। 


 তেলাকুচার উপকারিতাঃ

 ➢ তেলাকুচা ফলে আছে ‘মাস্ট সেল স্টেবিলাইজিং’, ‘এনাফাইলেকটিক-রোধী’ এবং ‘এন্টিহিস্টামিন’ জাতীয় উপাদান। কবিরাজী চিকিৎসায় তেলাকুচা বেশ কিছু রোগে ব্যবহৃত হয়, যেমন- কুষ্ঠ, জ্বর, ডায়াবেটিস, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস ও জন্ডিস। 

 ➢ ডায়াবেটিস : ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে তেলাকুচা কার্যকর ভূমিকা নেয়। ডায়াবেটিস হলে তেলাকুচার কান্ড সমেত পাতা ছেঁচে রস তৈরি করে আধাকাপ পরিমাণ প্রতিদিন সকাল ও বিকালে খেতে হবে। তেলাকুচার পাতা রান্না করে খেলেও ডায়াবেটিস রোগে উপকার হয়। তেলাকুঁচো প্রাকৃতিক ইনসুলিন হিসেবে কাজ করে। 

 ➢ বুকে সর্দি বা কাশি বসে যাওয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট (হাপানি রোগ নয়) হলে তেলাকুচার মূল ও পাতার রস হালকা গরম করে ৩-৪ চা চামচ পরিমাণ তিন থেকে সাত দিন প্রতিদিন সকালে ও বিকালে খেতে হবে। সর্দিতে মুখে অরুচি হলে তেলাকুচার পাতা একটু সিদ্ধ করে পানিটা ফেলে দিয়ে ঘি দিয়ে শাকের মত রান্না করতে হবে। খেতে বসে প্রথমেই সেই শাক খেলে খাওয়াতে রুচি আসবে।

 ➢ আমাশয় : প্রায়ই আমাশয় হতে থাকলে তেলাকুচার মূল ও পাতার রস ৩-৪ চা চামচ ৩ থেকে ৭ দিন প্রতিদিন সকালে ও বিকালে খেতে হবে। 

 ➢ পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখে : তেলাকুঁচো ফল এবং পাতার রস খেলে পরিপাকতন্ত্র ভালো থাকে, মল বাড়ে এবং সফট হয়। ফলে গ্যাস্ট্রিক এবং আলসারজনিত সমস্যা কাটে। 

 ➢ শরীরের অবসন্নতা কাটে : ১০০ গ্রাম তেলাকুঁচোয় ১.৪ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। আয়রন শরীরের অবষন্নতা দূর করতে সাহায্য করে। 

 ➢ পা ফোলা রোগে : গাড়িতে ভ্রমণের সময় বা অনেকক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসলে পা ফুলে যায় একে শোথ রোগ বলা হয়। তেলাকুচার মূল ও পাতা ছেঁচে এর রস ৩-৪ চা চামচ প্রতিদিন সকালে ও বিকালে খেলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

 ➢ স্তনে দুধ স্বল্পতা : সন্তান প্রসবের পর অনেকের স্তনে দুধ আসে না বা শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যায়। এ অবস্থা দেখা দিলে ১টা করে তেলাকুচা ফলের রস হালকা গরম করে মধুর সাথে মিশিয়ে তেলাকচুর পাতা একটু তিতে হওয়ায় পরিমাণমত সকাল-বিকাল ১ সপ্তাহ খেতে হবে। 

 ➢ এই শাক খেলে পেটের গোলমাল কমে। পেটে সমস্যা এবং বদহজমের জন্য এই শাক খাওয়ার রেওয়াজ আছে। 

 ➢ জন্ডিস : জন্ডিস হলে তেলাকুচার মূল ছেঁচে রস তৈরি করে প্রতিদিন সকালে আধাকাপ পরিমাণ খেতে হবে। 

 ➢ ফোড়া বা ব্রণ হলে তেলাকুচা পাতার রস বা পাতা ছেঁচে ফোঁড়া ও ব্রণে প্রতিদিন সকাল-বিকাল ব্যবহার করতে হবে। 

 ➢ বৃক্ক বা মূত্রথলিতে (কিডনিতে) পাথর জমতে দেয় না: বৃক্কের পাথর মূলত ক্যালশিয়াম এবং আরো কিছু খনিজ পদার্থের মিশ্রণ যা প্রস্রাবের সাথে নিয়মিত বের না হওয়ায় ধীরে ধীরে পাথর আকারে জমা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে কৃত্রিম ক্যালশিয়ামের পাশাপাশি প্রাকৃতির উৎস হতে প্রাপ্ত ক্যালশিয়াসমও পাথর হিসেবে জমতে পারে। দেখা গেছে, তেলাকুঁচোয় যে ক্যালশিয়াম থাকে তা পাথর হিসেবে জমে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম