আদার ঔষধি গুন



পরিচিতি:   রান্নাঘরের সহজলভ্য একটি উপাদান আদা। যে সমস্ত কন্দ রয়েছে, তাদের মধ্যে আদা হল শ্রেষ্ঠ উপকারী কন্দ। একটু ঠাণ্ডা লেগে গেলে কিংবা খেলার মধ্যে হাঁপিয়ে উঠলে আদা খাওয়া যায়। কারণ আদা কাশি কমাতে সহায়ক করে। আদায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম। আছে যথেষ্ট পরিমাণ আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ফরফরাসের মতো খনিজ পদার্থ। আদা রান্না অথবা কাঁচা দু’ভাবেই খাওয়া যায়। গলার খুসখুসে ভাব কমাতে কাঁচা আদা খুবই উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় আদা থাকলে যে কোনো ধরনের ঠাণ্ডাসংক্রান্ত রোগবালাই, কাঁশি ও হাঁপানির তীব্রতা কমিয়ে দেয়। আর্থ্রাইটিসের মতো রোগের ক্ষেত্রেও ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে আদা। এছাড়া চুল পড়া ও বমিরোধক হিসেবেও আদা বেশ কাজে দেয়। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট, যা শরীরের রোগ-জীবাণুকে ধ্বংস করে। জ্বর জ্বর ভাব, গলা ব্যথা ও মাথাব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। তবে রান্না করার চেয়ে কাঁচা আদার পুষ্টিগুণ বেশি। ভিটামিন -ই, এ, বি ও সি এর পরিমাণও কম নয় আদার মধ্যে। রক্তের অনুচক্রিকা এবং হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম ঠিক রাখতেও আদা দারুণ কার্যকর। আমাশয়, জন্ডিস, পেট ফাঁপা রোধে আদা চিবিয়ে বা রস করে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া যারা গলার চর্চা করেন তারা অনেকেই গলা পরিষ্কার রাখার জন্য আদা আর লবণকে পছন্দ করে থাকেন। আসলে মসলা ছাড়াও আদার রয়েছে বিভিন্ন গুণ। ইউনিভার্সিটি অব মিয়ামি মেডিক্যাল স্কুলের বিজ্ঞানীদের মতে, খাদ্যের সঙ্গে নিয়মিত আদা খেলে গিঁটে ব্যথা সারে অনেকখানি। শীতে কাঁপুনি হলে এককাপ আদার চা খেয়ে নিন। বেশ আরাম বোধ করবেন। আদা সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমকে উত্তেজিত করে রক্ত পরিসঞ্চালন বৃদ্ধি করে। সেই সঙ্গে রক্তনালী প্রসারিত করে। ফলে শরীর গরম থাকে দীর্ঘক্ষণ। এছাড়া যাদের মোশন সিকনেস আছে, তারা আদার সাহায্যে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। 


আদার কিছু উপকারিতা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

 ➢ আদা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। 

 ➢ আদা আপনাকে পেটের অস্বস্তিদায়ক যন্ত্রনা থেকে বাঁচিয়ে রাখবে। গ্যাস্ট্রিক সমস্যাতেও আদা বেশ কার্যকর। 

 ➢ আদা খেলে শরীরের অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা দূর হয়।

 ➢ আদাতে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম ও জিঙ্ক যা বেদনানাশক উপাদান, সহজেই তাৎক্ষণিকভাবে পেটে ব্যথা কমায় শরীরের রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। 

 ➢ হাজার বছর ধরে আদা এশিয়া মহাদেশে ঠান্ডা এবং কফ জনিত অসুখের নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

 ➢ বিদেশে কিছু গবেষনায় দেখা গেছে আদা খেলে কোলন ক্যান্সার এবং জরায়ুর ক্যান্সারের ঝুকি কমে। 

 ➢ আদা হচ্ছে প্রাকৃতিক পেইন কিলার যা ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। পিরিয়ডের সময়কালীন ব্যথা,বাতজনীত গাটে ব্যথা,মাথাব্যথা হলে আদা বেশ কার্যকর। 

 ➢ আদা শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির শোষন ক্ষমতা বাড়ায়।

 ➢ যারা সকালে ঘুম থেকে উঠার পর অসুস্থ বোধ করেন আদা খেয়ে দেখতে পারেন, এই সমস্যা থেকে কিছুটা রেহাই পাবেন। 

 ➢ খাওয়ার আগে একটু আদা খেলে ক্ষুধামন্দা হলে তা কমে যায় এছাড়া আদা বমিভাবও কমায়। 

 ➢ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর আদা ক্যান্সার ও হার্টের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে ওভারিয়ান ক্যান্সার প্রতিরোধে আদা উপকারী। 

 ➢ আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় ভুগলে সারা দিনের খাবারে অল্প পরিমাণে আদা রাখার চেষ্টা করুন। আদা দিয়ে চা খেতে পারেন, সালাদে আদার সরু, লম্বা কুচি করে মেশাতে পারেন। ব্যথার সমস্যা ধীরে ধীরে কমবে। ঘন ঘন ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস কমিয়ে আদা খেয়ে দেখতে পারেন। 

 ➢ আদা ছিলে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে প্রতিদিন খেলে হজমে খুব ভালো কাজ করে। 

 ➢ আদা রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কার্যকরভাবে কমাতে সাহায্য করে। 

 ➢ শীতে ত্বকের কুঁচকে যাওয়া আটকায় : শীতকালে আমাদের ত্বক সবারই কম-বেশী কুঁচকে যায়। রক্ত শীতে খানিক ঘন হয়ে যায়। তাই শরীরের সব জায়গায় সমান ভাবে রক্ত পৌঁছতে পারে না। মুখেও পৌঁছতে পারে না। তাই চামড়া কুঁচকিয়ে যায়। আদা খেলে কিন্তু এই সমস্যার থেকে মুক্তি পাওয়া যায় আর স্কিন থাকে টানটান। 

 ➢ শ্বেতী রোগ : শ্বেতী রোগ নিয়ে আমাদের অনেক বাছ-বিচার আছে। এই রোগ হলে দেখতে তো খারাপ লাগেই, তা অনেকসময় সামাজিক অসম্মানের কারণও হয়ে থাকে। কিন্তু জানেন কি কাঁচা আদা খুব সুন্দরভাবে এই শ্বেতীকে কমিয়ে আনতে পারে। 

 ➢ ব্রণ দূর করতে : ব্রণ মূলত হয় ব্যাকটেরিয়া থেকে। আদায় থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। ব্রণর জ্বালাও কমাতে সাহায্য করে।

 ➢ চুলের আগা ফাটাও একটা সাধারণ সমস্যা। অতিরিক্ত গরমে আর দূষণে আমাদের চুলের আগা ফেটে যায়। আদার ব্যবহার এখানেও কামাল দেখায়। 

 ➢ স্মৃতি শক্তি সংরক্ষণ করে : আদা আপনার মস্তিষ্ককে আলঝেইমার থেকে রক্ষা করবে। এই স্নায়ুক্ষয়ী রোগটি সৃষ্টি হয় মস্তিষ্কে অপ্রয়োজনীয় অ্যামিলয়েড প্রোটিন জমা হওয়ার মাধ্যমে। পরীক্ষাগারের এক গবেষণায় দেখা গেছে, আদা এই স্নায়ুক্ষয়ী প্রোটিন থেকে আপনার মস্তিষ্কের কোষগুলোকে প্রতিরক্ষা দিতে সক্ষম। 

 ➢ পেটফাঁপা দূর করে : বায়ুনাশক ঔষধি উপাদান হিসেবে আদা পাচক রস এবং হজম প্রক্রিয়ার উদ্দীপনা বাড়ায়। কিন্তু এটাই আদার একমাত্র পাকস্থলীজাত উপকারিতা নয়। আদা আপনার হজম শক্তি বাড়াবে এবং আপনাকে কষ্টকর এবং অস্বস্তিদায়ক পেট ফাঁপা থেকে রক্ষা করবে। 

 ➢ আদা খেলে মহিলাদের মাসিকের সময় তল পেট ব্যথা ও শারীরিক অস্বস্তি দূর হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম