পরিচিতি: আমলকির ভেষজ গুণ রয়েছে প্রচুর। আমলকিতে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’থাকে। আমলকিতে যা ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে ৩ গুণ ও ১০ গুণ বেশি। আমলকিতে কমলার থেকে 15 গুণ, আপেল এর চেয়ে 100 গুণ, আমের চেয়ে 20 গুণ এবং কলার চেয়ে 50 গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। একজন বয়স্ক লোকের প্রতিদিন ৩০ ml ভিটামিন ‘সি’দরকার। দিনে দুটো আমলকি খেলে এ পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’পাওয়া যায়। আমলকি খেলে মুখে রুচি বাড়ে। স্কার্ভি বা দন্তরোগ সারাতে টাটকা আমলকি ফলের জুড়ি নেই। এছাড়া পেটের পীড়া, সর্দি, কাশি ও রক্তহীনতার জন্যও খুবই উপকারী। লিভার ও জন্ডিস রোগে উপকারী বলে আমলকি ফলটি বিবেচিত। আমলকি, হরিতকী ও বহেড়াকে একত্রে ত্রিফলা বলা হয়। এ তিনটি শুকনো ফল একত্রে রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা ছেঁকে খালি পেটে শরবত হিসেবে খেলে পেটের অসুখ ভালো হয়।
কাঁচা বা শুকনো আমলকি বেটে একটু মাখন মিশিয়ে মাথায় লাগালে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম আসে। কাঁচা আমলকি বেটে রস প্রতিদিন চুলে লাগিয়ে দুতিন ঘন্টা রেখে দিতে হবে। এভাবে একমাস মাখলে চুলের গোড়া শক্ত, চুল উঠা এবং তাড়াতড়ি চুল পাকা বন্ধ হবে। প্রতিদিন আমলা খেলে যে কোনও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করার ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায় শরীরে।
কার্বোহাইড্রেট মেটাবলিজমকে রেগুলেট করতে সাহায্য করে ক্রোমিয়াম নামের একটি মিনারেল। এটি আমলার মধ্যে প্রচুর রয়েছে। যা দেহের ইনসুলিন ক্ষরণে সাহায্য করে। যে সব কোষ দেহে ইনসুলিন তৈরি করে তার ক্ষতিও আটকায় আমলা।
আমলকির ভেষজ গুণগুলি হলোঃ
➢ আমলকি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে।
➢ বমি বন্ধে কাজ করে।
➢ দীর্ঘমেয়াদি কাশি সর্দি হতে উপকার পাওয়ার জন্য আমলকীর নির্যাস উপকারী।
➢ কাঁচা আমলা খেতে পারেন। আমলা পাউডার জলে গুলে খেতে পারেন। আবার হালকা গরম জলে মধুর সঙ্গে মিশিয়েও খেতে পারেন। ফ্যাট কমবেই। ওবেসিটির সমস্যা থেকে দূরে থাকবেন। ওজন কমতে সাহায্য করবে।
➢ এটি হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধক। ভিটামিন ‘সি’সমৃদ্ধ আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। বিভিন্ন অসুখ সারানো ছাড়াও রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা গড়ে তুলতেও আমলকী দারুণ সাহায্য করে। আমলকীর গুণাগুণের জন্য আয়ুর্বেদিক ওষুধেও এখন আমলকীর নির্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে।
➢ আমলকী হজমে সাহায্য করে ও স্টমাক এ্যাসিডে ব্যালেন্স বজার রাখে।
➢ আমলকী ত্বক, চুল ও চোখ ভাল রাখার জন্য উপকারী। এতে রয়েছে ফাইটো-কেমিক্যাল যা চোখের সঙ্গে জড়িও ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
➢ আমলকী লিভার ভাল রাখে, ব্রেনের কার্যকলাপে সাহায্য করে ।
➢ আমলকীর জুস দৃষ্টি শক্তি ভাল রাখার জন্য উপকারী। ছানি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ব্রণ ও ত্বকের অন্যান্য সমস্যায় উপকারী।
➢ আমলকী ব্লাডসুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরল লেভেলকেও কম রাখাতে যথেষ্ট সাহায্য করে।
➢ হার্ট সুস্থ রাখে, ফুসফুসকে শক্তিশালী করে তোলে।
➢ চুলের বৃদ্ধি : ভিটামিন সি এবং মিনারেল সমৃদ্ধ আমলা স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে। এতে চুল পড়বে কম। লম্বাতেও যেমন বাড়বে, তেমন ঘনও হবে চুল।
➢ শরীর ঠান্ডা রাখে, শরীরের কার্যৰমতা বাড়িয়ে তোলে, মাসল টোন মজবুত করে।
➢ লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে তুলে দাঁত ও নখ ভাল রাখে।
➢ খুশকির সমাধান : সাধারণত ত্বক শুষ্ক হলে খুশকির সমস্যা বেশি হয়। আমলার মধ্যে থাকা ভিটামিন সি ত্বককে আর্দ্র করবে। পাশাপাশি খুশকির সমস্যায় ব্যাকটেরিয়ার প্রতিষেধক হিসেবেও কাজ করে আমলা।
➢ এক গ্লাস দুধ বা পানির মধ্যে আমলকী গুঁড়ো ও সামান্য চিনি মিশিয়ে দিনে দু’বার খেতে পারেন। এ্যাসিডেটের সমস্যা কম রাখতে সাহায্য করবে।
➢ আমলকীতে সামান্য লবণ, লেবুর রস মাখিয়ে রোদে রাখুন। শুকিয়ে যাওয়ার পর খেতে পারেন।
➢ পেটের জ্বালাভাব কম রাখে। লিভারের কার্যকলাপে সাহায্য করে, পাইলস সমস্যা কমায়।
➢ ব্রঙ্কাইটেস ও এ্যাজমার জন্য আমলকীর জুস উপকারী।
➢ আমলকী গুঁড়োর সঙ্গে সামান্য মধু ও মাখন মিশিয়ে খাওয়ার আগে খেলে খিদে বাড়াতে সাহায্য করে।
➢ খাবারের সঙ্গে আমলকীর আচার খেতে পারেন। হজমে সাহায্য করবে।
➢ আমলা জুস প্রত্যেকদিন খেলে আপনার ত্বক থাকবে সজীব। সহজে বয়স বোঝা যাবে না।
➢ চুল সাদা হওয়া রোধ করবে : আমলা দেহের তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। শরীর ঠাণ্ডা করে। চুলে পাক ধরতে শুরু করলে এখন থেকেই আমলা ট্রাই করুন। উপকার পাবেন।
➢ আমলকী মাঝারি আকারে টুকরো করে নিয়ে ফুটনত্ম পানির মধ্যে দিন। আমলকী নরম হয়ে গেলে নামিয়ে ঝরিয়ে লবণ, আদা কুঁচি, লেবুর রস মাখিয়ে রোদে রেখে ভালো করে শুকিয়ে খেতে পারেন।
➢ ব্রণ বা যে কোনও রকম দাগের সমস্যা দূর করতে আমলার ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন। আমলা পাউডার জলের সঙ্গে গুলে ফেসপ্যাক তৈরি করুন। ২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখার পর শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন। যে কোনও রকম ত্বকের ক্ষেত্রেই এটা ব্যবহার করতে পারেন।