পরিচিতি: আগর সুদীর্ঘ চিরসবুজ বৃক্ষ। আগর এক প্রকারের সুগন্ধি প্রদায়ক উদ্ভিদ। কাঠ সাদা ও নরম, বাকল ধুসর বর্ণ।এর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Aquilaria malaccensis. অন্যান্য স্থানীয় নামের মধ্যে Aloe wood, Eagle wood, Aguruh, Krsnaguruh উল্লেখযোগ্য। ভুটান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, লাওস, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে পাওয়া যায়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আর অবহেলায় সিলেটের বনাঞ্চল থেকে আগর গাছ বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায়। এটি একটি মাঝারি ধরনের চিরসবুজ বৃক্ষ। উচ্চতা সাধারণত ৬০ থেকে ৮০ ফুট হয়ে থাকে। আগরের সুগন্ধি প্রশান্তিদায়ক এবং শরীরের শক্তি বৃদ্ধিকারী বলে কেউ কেউ মনে করে থাকেন।
আগরের ভেষজ গুনাগুণঃ
➢ এছাড়া গাছের নির্যাস থেকে আগর তেল উৎপন্ন হয়। যা সুগন্ধি বা আতর হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
➢ এছাড়া মুত্রবর্ধক, কামোদ্দীপক, কোষ্ঠ্য পরিষ্কারক হিসাবে এর ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন ত্বকের রোগ, ব্রংকাইটিস, হাঁপানী ও বাত রোগে এর ব্যবহার হয়ে থাকে।
➢ আগর উড থেকে আহরিত তেল বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান সুগন্ধি। এই সুগন্ধির বিশেষ বৈশিষ্ট হলো এটি একটি এ্যলকোহলমুক্ত সুগন্ধি।
➢ অনেকেই অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত ঠাণ্ডয় হাঁপানিতে ভোগেন। এক্ষেত্রে আগর কাঠ ঘষা এক চ চামচ এক কাপ উষ্ণ পানিতে মিশিয়ে একটু একটু করে খেলে হাঁপানির তীব্রতা কমে যাবে। কিছুদিন এরকম ব্যবহার করলে রোগের উপশম হবে।
➢ যাদের শরীরে জড়তা, অলস্য, ত্বক রুক্ষ, চোখের ভেতর ও মুখের রঙ ফ্যাকাশে, সামান্যতেই নাকমুখ দিয়ে সর্দি ঝরে, তারা আগর কাঠ চন্দনের মতো বেটে এক চা চামচ নিয়ে আধা কাপ পানিতে মিশিয়ে ঠাণ্ডা করে ২ দিন একবার করে খেলে উপকার পাবেন।
➢ আগর কাঠের গুঁড়া সম্ভোগ ক্ষমতা বাড়ায় (Chopra et al, 1956)। যৌন দুর্বলতায় আগর কাঠের গুড়া ৩/৪ গ্রাম নিয়ে ৩/৪ চা চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে দিনে ২ বার কয়েকদিন খেলে পরিবর্তন উপলব্ধি করা যাবে।
➢ বাত ব্যথা হলে দিনে ২ বার করে প্রয়োজনমতো আগর তেল আক্রান্ত স্থানে মালিশ করতে হবে। এতে উপকার পাওয়া যাবে।
➢ মেদ বৃদ্ধি: অপরিমিত ভোজনের ফলে শরীরে মেদ বেড়ে গেলে আগর কাঠ চন্দন কাঠের মত ঘষে আধ চামচ বা এক চামচ দুবেলা বা এক বেলা খেলে শরীরের মেদ কমে যাবে এবং মেদজনিত হৃদ দুর্বলতাও থাকবে না।
➢ প্রমেহ: কারো প্রমেহ রোগ হলে আগর কাঠ চন্দনের মত ঘষে এক চামচ নিয়ে এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে ২ বার খেতে হবে।
➢ হিক্কা বা হেচকি: হিক্কা বা হেচকি রোগীকে মধুর সাথে কালো আগর চূর্ণ সেবন করালে হিক্কা ভাল হয়ে যাবে।
➢ কাশি: মধু সহ আগর চূর্ণ সেবন করলে কাশি ভাল হয়ে যায়।
➢ শক্তি বৃদ্ধি: আগর কাঠ চূর্ণ ১-২ গ্রাম প্রতিদিন সেবন করলে শরীরের বল বৃদ্ধি পায়।
➢ হাঁপানি রোগে: আগর কাঠ ঘষা এক চামচ এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে কয়েক বার খেলে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে থাকে।
➢ চর্মরোগ: আগর কাঠের পেস্ট বা তেল বাহ্যিক ব্যবহারে চর্ম রোগ ভাল হয়।
➢ বমন নিবারক: আগর কাঠের নির্যাস বমন নিবারক হিসেবে কাজ করে।
➢ বেদনা নাশক: আগর কাঠের তেল বা আতর বেদনা নাশক হিসেবে বাহ্যিক ব্যবহারে খুবই কার্যকর। বেদনার স্থানে দিনে ২ বার মালিশ করুন ।
➢ জন্ডিস: যে জন্ডিস রোগে শরীরে জড়তা ও অলসতা থাকে, চামড়া কর্কশ, চোখের ভেতর ও মুখের রং একেবারে সাদা। সর্বাঙ্গে ফুলোফুলো ভাব দেখা যায়। এই অবস্থায় আগরের কাঠকে চন্দনের মত ঘষে এক চা চামচ নিয়ে আধ কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে পানিটা ঠান্ডা হলে প্রতি দিন এক বার বা দুই বার সেবন করতে হবে। দুই দিনের মধ্যে উপকার পাওয়া যাবে। হলদে হওয়া জন্ডিস রোগে এর ব্যবহার চলবে না।
➢ যৌন দুর্বলতা: আগর কাঠের গুঁড়ো যৌন ক্ষমতা বাড়ায়। যৌন দুর্বলতায় আগর কাঠের গুড়া ৩-৪ গ্রাম ৩-৪ চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে দিনে ২ বার কয়েক দিন খেলে উপকার পাওয়া যাবে।