পরিচিতি: জাম আমাদের একটি সুপরিচিত ফল। দেখতে কালো, তবে খেতে খুবই সুস্বাদু। খাদ্যমানেও ভরপুর। গ্রীষ্মের ফল-ফলারীর মধ্যে জাম একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ঔষধি ফল। কালা জামুন‚ নাভাল‚ জামালি‚ জাভা প্লাম ইত্যাদি নামে এটি পরিচিত। জামে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। আর আয়রন থাকার ফলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বেড়ে যায়। ফলে রক্ত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন তাদের জন্য জাম খুবই ভালো। সামান্য পাকা অথবা পুরো পাকা না হলেও অম্ল, মধুর এবং কষায় রস বলে অনুভব হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম জামে পুষ্টি মান - শক্তি ৬০ কিলোক্যালরী, শর্করা ১৫.৫৬ গ্রাম, স্নেহ পদার্থ ০.২৩ গ্রাম, প্রোটিন ০.৭২ গ্রাম, ভিটামিন এ ৩.০ আন্তর্জাতিক একক, থায়ামিন বি১ ০.০০৬ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন বি২ ০.০১২ মিলিগ্রাম, ন্যায়েসেন বি৪ ০.২৬০ মিলিগ্রাম, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড বি৫ ০.১৬০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬ ০.০৩৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ১৪.৩ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম, লোহা ০.১৯ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১৭ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৭৯ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ১৪ মিলিগ্রাম, পানি ৮৩.১৩ গ্রাম
জামের উপকারিতাঃ
➢ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়: ঐতিহ্যগতভাবেই জাম ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। জামের গ্লিসামিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি ডায়াবেটিসের জন্য খুব ভালো। একটি গবেষণা পর্যালোচনায় জানা যায় যে, জামের ডায়াবেটিক বিরোধী গুণ আছে। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে জামের বীচি রক্তের সুগার লেভেল ৩০% পর্যন্ত কমাতে সাহায্য করে।
➢ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: জামে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান যেমন- ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন সি থাকে। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে জাম অতুলনীয়ভাবে কাজ করে। এছাড়াও শরীরের হাড়কে শক্তিশালী করতেও সাহায্য করে জাম।
➢ হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। কোলেস্টেরল ও হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণ করে। ক্যান্সার প্রতিরোধেও সাহায্য করে। জামে এলাজিক এসিড বা এলাজিটেনিন্স, এন্থোসায়ানিন এবং এন্থোসায়ানিডিন্স থাকে যা প্রদাহরোধী হিসেবে কাজ করে। এই উপাদানগুলো শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে বলে কোলেস্টেরলের জারণ রোধ করে এবং হৃদরোগ সৃষ্টিকারী প্লাক গঠনে বাধা দেয়। এছাড়াও হাইপারটেনশন প্রতিরোধেও সাহায্য করে জাম। কারণ এতে প্রচুর পটাসিয়াম থাকে। ১০০ গ্রাম জামে ৫৫ গ্রাম পটাসিয়াম থাকে।
➢ ইনফেকশন ভালো করে: ঐতিহ্যগতভাবেই জাম গাছের বাকল, পাতা ও বীজ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়ে আসছে। ম্যালিক এসিড, গ্যালিক এসিড, অক্সালিক এসিড এবং ট্যানিন থাকে জাম উদ্ভিদে। একারণেই জাম উদ্ভিদ ও এর ফল ম্যালেরিয়া রোধী, ব্যাকটেরিয়ারোধী এবং গ্যাস্ট্রোপ্রোটেক্টিভ হিসেবে কাজ করে।
➢ ক্যান্সার প্রতিরোধেও সাহায্য করে: জাম ক্যানসারের জীবাণু ধ্বংস, মুখের ক্যানসার প্রতিরোধ, স্মৃতিশক্তির প্রখরতা, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে। জাম ফলের নির্যাসে রেডিওপ্রোটেক্টিভ উপাদান আছে। এতে আরো বলা হয় জামের নির্যাস ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি র্যাডিকেলের কাজে এবং বিকিরণে বাধা দেয়।
➢ জামে প্রচুর পরিমাণে পানি ও ফাইবার থাকে বলে হাইড্রেটেড থাকতে ও ত্বককে স্বাস্থ্যবান করতে সাহায্য করে। ডিটক্সিফায়ার হিসেবেও কাজ করে জাম।
➢ মানসিকভাবে সতেজ রাখে: জামে গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ ও ফ্রুকটোজ রয়েছে, যা মানুষকে জোগায় কাজ করার শক্তি। বয়স যত বাড়তে থাকে, মানুষ ততই হারাতে থাকে স্মৃতিশক্তি। জাম স্মৃতিশক্তি প্রখর রাখতে সাহায্য করে।
➢ সাদা বা রক্ত আমাশয়: জামের কচি পাতার রস ২-৩ চা-চামচ একটু গরম করে ছেঁকে নিয়ে খেলে ২-৩ দিনের মধ্যে সেরে যায় সাদা বা রক্ত আমাশয়।
➢ ওজন নিয়ন্ত্রণ করে: জামে কম পরিমাণে ক্যালোরি থাকে, যা ক্ষতিকর তো নয়ই বরং স্বাস্থ্যসম্মত। তাই যারা ওজন নিয়ে চিন্তায় আছেন এবং নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন, তারা খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন জাম।
➢ ভিটামিন সি-এর অভাব দূর করে: জামে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। এই ফল ভিটামিন সি-এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ করে। এ ছাড়া মুখের দুর্গন্ধ রোধ, দাঁত মজবুত, মাঢ়ি শক্ত এবং মাঢ়ির ক্ষয়রোধেও জামের জুড়ি নেই । এতে বিদ্যমান পানি, লবণ ও পটাসিয়ামের মতো উপাদান গরমে শরীর ঠাণ্ডা এবং শারীরিক দুর্বলতাকে দূর করতে সক্ষম। জামে রেয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন, যা রক্তস্বল্পতা দূর করে।
➢ ত্বক ভাল রাখে, ত্বকের ব্রণ ও কালো ছোপ দূর হয়। দীর্ঘদিন তারুণ্য ধরে রাখে।
➢ জামের ভিটামিন A দৃষ্টিশক্তি শক্তিশালী করে। জামের ইলাজিক অ্যাসিড ক্ষতিকর ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস প্রতিরোধক। এ ছাড়া জরায়ু, ডিম্বাশয়, মলদ্বার ও মুখের ক্যানসারের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
➢ জামের কচিপাতা পেটের পীড়া নিরাময়ে সাহায্য করে। জামের বীজ থেকে প্রাপ্ত পাউডার বহুমূত্র রোগের ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।
➢ যাদের অর্শরোগ আছে তারাও জাম খেলে উপকার পাবেন।
➢ হজমশক্তি বাড়ায়, ঠাণ্ডা এবং অ্যালার্জির সমস্যা দূর হয়।