পরিচিতি: মেথি এক ধরনের ঔষধি গাছ। এটি বহু পরিচিত। হজমের সমস্যা যেমন ক্ষুধাহীনতা, পেটে গন্ডগোল, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটের ব্যাথা, ডায়বেটিস, মাসিকের ব্যাথা, পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম, বাত, থাইরয়েডের কার্যক্রম কম হওয়া এবং স্থূলতার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য যেমন ধমনী শক্ত হয়ে যাওয়া (অ্যাথেরোসক্লেরোসিস), কোলেস্টেরল এর জন্য মেথি ব্যবহার করা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Trigonella foenum graecum. আসলে আমরা ফলের বীজকে মেথি বলি। মশলা হিসেবে এটি প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। পাঁচ ফোঁড়নের অন্যতম উপাদান হিসেবে বিবেচিত। ইউনানী, কবিরাজি ও লোকজ চিকিৎসায় মেথি ব্যবহৃত হয়।
মেথির অজানা গুনঃ
➢ ডায়বেটিস: কিছু গবেষণায় দেখা যায় খাবারের সময় মেথির বিঁচি খেলে খাওয়ার পরে টাইপ 2 ডায়বেটিসের রোগিদের চিনির পরিমান কমে। যাহোক, দিনে এক থেকে দুইবার ৫-৫০ গ্রাম মেথির বিঁচি খেলে তা ডায়বেটিসের জন্য কার্যকরী হয়, ২.৫ গ্রামের চেয়ে কম মাত্রায় গ্রহন করলে তা কাজ করে না। খাবারে মেথির উপস্থিতি ডায়বেটিস ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। টাইপ 1 ডায়বেটিসের জন্য দৈনিক ৫০ গ্রাম মেথি দুই বার গ্রহন করলে তা প্রস্রাবে চিনির পরিমান কমায়।
➢ রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সকালে খালি পেটে মেথি খান।
➢ চিবিয়ে অথবা মেথি ভেজানো পানি খেতে পারেন।
➢ গ্যাস্ট্রিক ও বদহজমের মহৌষধ হিসেবে মেথি কাজ করে।
➢ হার্টের স্বাস্থ্য: হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষায় মেথির উপকারিতা অপরিসীম। মেথি শরীর থেকে অ্যাসিডের পরিমাণ খুব দ্রুত কমাতে পারে। মেথির বীজ সারারাত্রি জলে ভিজিয়ে রেখে দিয়ে পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে খেয়ে নিলে হার্টের ব্যাথা বা বুক জ্বালার মতন সমস্যা গুলো ওষুধ না খেয়েই ঘরোয়া পদ্ধতিতে সেরে যাবে।
➢ মাসিকের ব্যথায় কাঁচা মেথি চিবিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
➢ মেথি ভেজা নারকেল তেল নিয়মিত ব্যবহারে চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত হয়।
➢ টক দইয়ের সাথে মেথি গুঁড়ো মিশিয়ে চুলে লাগালে চুল কোমল ও ঝরঝরে হয়।
➢ চুল পড়া রোধে মেথি ভিজিয়ে বেটে মেহেদি ও ডিমের সাথে মিশিয়ে মেথি বেঁটে চুলে লাগালে চুল পড়া কমায়, চুল ঘন হয়। খুসকি কমায়, চুল হয় আরও উজ্জ্বল।
➢ মেথি ত্বকে ঘা, ফোড়া, ইরিটেশন ইত্যাদি দূর করে।
➢ মেছতায় মেথি বাটা নিয়মিত ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে কমে যায়।
➢ বুকের দুধ তৈরিতে: মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধির জন্য কালিজিরার মতো মেথি পিষে খেলে উপকার হয়। বাচ্চা জন্ম দেয়ার কিছু পরে মেথির ক্যাপসুল বা মেথির চা খেলে স্তনপান করানো নারীদের দুধের উৎপাদন বাড়ে।
➢ ডিম্বাশয়ের সিস্ট: কিছু প্রাথমিক গবেষণায় দেখা যায় প্রতিদিন নির্দিষ্ট ধরনের মেথির বিঁচির নির্যাস ১০০০ মিলিগ্রাম করে গ্রহন করলে ডিম্বাশয়ের সিস্টের আকার কমতে পারে আর এর ফলে মাসিকের দিনগুলো নির্দিষ্ট হয়।
➢ হজম: মেথির বীজে প্রচুর ফাইবার এবং অন্যান্য উপাদান থাকে যা কিনা হজমের ক্ষমতা এবং শরীরের কার্বোহাইড্রেট আর সুগার শোষণ করে নেওয়ার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। মেথিদানা ভিজানো জল প্রোটিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে খেলে হজমের ক্ষমতা বাড়ে ।
➢ নিয়মিত মেথি খেলে পেটে কৃমি হয় না। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।
➢ ক্যান্সার: মেথির ব্যবহার করবার ফলে ক্যান্সার হবার আশঙ্কা কমেছে। কর্কটরোগ থেকে রক্ষা পেতে ডাক্তারেরা রান্নায় মেথির ব্যবহার করতেও বলছেন। বিশেষ করে মহিলাদের জন্য মেথি রান্নায় অবশ্যই মেশানো উচিৎ কেননা মেথিতে উপস্থিত ট্রাইগ্লিসেরাইড এস্ট্রোজেন ব্রেস্ট ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষগুলোকে উদ্দীপিত করতে করতে একসময়ে ধ্বংস করে দেয়।
➢ উঁচু মাত্রার কোলেস্টেরল: প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে মেথির বিঁচি সর্বমোট এবং কম-ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন বা খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। কিন্তু বেশি-ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন বা ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়।
➢ চর্বি কমায়/রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে বা রক্তে চর্বির পরিমাণ কমাতে দারুণভাবে কার্যকর বলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
➢ জ্বর: লেবুর রস ও মধুর সঙ্গে মেথি খেলে ঘাম দিয়ে জ্বর সেরে যায়, গলার খুসখুসে ভাব কমে যায়।
➢ ত্বকের সমস্যায়: প্রতিদিনের ফেসপ্যাকে মেথিগাছের নির্যাস ব্যবহার করলে মুখের ব্রণ, কালো দাগ ও ফুসকুড়ি নিরাময় হয়। গরমজনিত ত্বকের অসুখে অত্যন্ত উপকারী। বিশেষ করে ত্বকে ঘা, ফোঁড়া, ইরিটেশন দূরীকরণ, বয়সের ছাপ পড়া থেকে রক্ষা ইত্যাদিতে মেথির জুড়ি নেই।