পরিচিতি: চিরতা বীরু জাতীয় গাছ। এর স্বাদ তেতো। নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধে চিরতা কার্যকর। চিরতা বর্ষজীবি উদ্ভিদ। গাছটির গড় উচ্চতা প্রায় দেড় মিটার। প্রাচীনকাল থেকে চিরতা ভারতবর্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চিরকালের তিতা গাছ বলে হয়তো বাংলায় এর নাম দেয়া হয়েছে চিরতা। ডায়রিয়া ও লিভারের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে চিরতার পানি ব্যবহৃত হয়।আজকাল অনেকেই লিভারের সমস্যায় ভোগেন এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে চিরতার জল উপকারি।চিরতা রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। চিরতার জল লিভারকে পরিষ্কার রাখে। এছাড়া লিভারের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ফ্যাটি লিভার ও আরও অন্যান্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে।
চিরতার উপকারিতাঃ
➢ ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে ৫ থেকে ১০ গ্রাম চিরতা চার কাপ পানিতে সিদ্ধ করে দুই কাপ করুন। এরপর ওই পানি ছেঁকে সকালে অর্ধেক এবং বিকেলে অর্ধেক করে খেলে জ্বর ভালো হয়ে যাবে।
➢ অ্যালার্জিতে শরীর ফুলে যায়, চোখ ফুলে যায় ও আরও সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে চিরতার পানি খেলে উপকার পাবেন। রাতে পাঁচ গ্রাম চিরতা ২৫০ মিলিলিটার গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে ওই পানি দু-তিনবার খেলে অ্যালার্জি কমবে।
➢ গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে বমিভাব হলে এক গ্রাম চিরতা গুঁড়া করে চিনির পানিতে মিশিয়ে খেলে বমি বন্ধ হয়ে যাবে। এ ছাড়া ঘন ঘন বা জ্বরের কারণে বারবার বমি হয়ে পেটে কিছুই থাকে না। সেক্ষেত্রে দুই কাপ গরম পানিতে পাঁচ গ্রাম চিরতা একটু থেঁতো করে ভিজিয়ে রাখুন। দু-তিন ঘণ্টা পর ছেঁকে পানিটা অল্প অল্প করে খেলে সমস্যা থাকবে না।
➢ হাঁপানির প্রকোপ বেশি হলে আধা গ্রাম চিরতা গুঁড়া তিন ঘণ্টা পর পর মধু মিশিয়ে দুই থেকে তিনবার অল্প অল্প করে খেলে হাঁপানির প্রকোপ কমবে।
➢ ত্বকের অন্যান্য সমস্যাও নিয়ন্ত্রণ করে চিরতার জল।
➢ হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: চিরতার মধ্যে শক্তিশালী এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা বার্ধক্যকে বিলম্বিত করে দিতে পারে। এমনকি নিয়মিত চিরতা সেবনে ক্যানসার ও হৃদরোগে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।
➢ কৃমির উপদ্রব হলে ৫০০ মিলিগ্রাম চিরতা অল্প মধু মিশিয়ে খান কৃমি কমবে। এ ছাড়া কৃমির কারণে যদি পেটে ব্যথা হয়, তাও সেরে যাবে।
➢ যেকোনো ধরনের চুলকানিতে 3০ গ্রাম চিরতা অল্প পানি দিয়ে গরম করে ছেঁকে অল্প অল্প করে নিয়ে চুলকানিতে ঘষে ঘষে লাগালে তিন দিনের মধ্যে চুলকানি কমে যাবে।
➢ চুল পড়ে যাওয়ায় তিন গ্রাম চিরতা এক কাপ গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সেই পানি ছেঁকে মাথা ধুয়ে ফেলুন। চুল পড়ে যাওয়া কমবে। তবে পরপর চার দিন চুল ধুতে হবে। এ ছাড়া ২৫ গ্রাম চিরতা ফুল ২০০ গ্রাম নারিকেল তেলে ভেজে ওই তেল মাথায় ব্যবহার করুন। খুশকি বা স্কাল্পে যেকোনো সমস্যা থাকলে সেরে যাবে।
➢ চিরতা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারি কারণ চিরতা রক্তে চিনির পরিমাণ কমায়। ব্লাডে সুগার লেবেলকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়াও চিরতার জল রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম করে।
➢ জ্বরে - জ্বরের ক্ষেত্রেও চিরতা খুব উপকারি। জ্বরের ফলে শরীরে এনার্জি না লাগা, জ্বর ভাব এগুলি দূর করতে চিরতা খুবই উপকারি।
➢ তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে - রক্তকে পরিষ্কার করে। রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। ফলে তারুণ্য ধরে রাখে।
➢ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
➢ পচা ঘা সারে - এক্ষেত্রে আগের দিন রাতে এক কাপ গরম পানিতে ৫ গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রেখে পরদিন সেই জল ছেঁকে পচা ঘা ধুয়ে দিলে ২-৪ দিনের মধ্যে ঘায়ের পচানি চলে যাবে ও দ্রুত শুকাবে।