অতি কম ঘুম : নিজের আয়ু নিজেই কমাচ্ছেন না তো!



ঘুম কী?

ঘুম হচ্ছে ব্রেইনের বিশ্রাম। ব্রেইন যখন ক্লান্ত হয়ে যায় তখনই আমাদের ঘুম পায়। 

আমাদের দেহের সকল কার্যকলাপের নিয়ন্ত্রক হচ্ছে ব্রেইন। সুতরাং ব্রেইনের পর্যাপ্ত বিশ্রাম না হলে আমাদের  কাজ-কর্মে ব্যাঘাত ঘটা স্বাভাবিক।রাইট?

প্রাপ্তবয়ষ্ক ব্যাক্তির সাধারণত দৈনিক কমপক্ষে ৭-৯ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। এর কম-বেশি ঘুমিয়ে কেউ কমফোর্টেবল ফিল করলে সমস্যা নেই।(1)


কীভাবে বুঝবেন আপনার ঘুম পর্যাপ্ত হচ্ছে না?

রাতে ঘুমানোর পরেও যদি দিনে অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব থাকে, ঘন ঘন হাই উঠে, মানসিক অস্থিরতা থাকে এবং শরীর ভীষণ ক্লান্ত মনে হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার ঘুম পর্যাপ্ত হয়নি বা হচ্ছে না।

কম ঘুমালে আসলেই কি আয়ু কমে যায়?

হ্যাঁ, ২০১০ সালের একটা গবেষণা রিভিউতে দেখা যায় প্রয়োজনের তুলনায় অতি কম ঘুমালে অকালমৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়!

তাছাড়া বাকি যেই ক্ষতিগুলো হয় ওগুলোও আপনার অকালমৃত্যুর সহায়ক হতে পারে!


১. সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের ক্ষতি : দীর্ঘমেয়াদী অনিদ্রা সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের সিগন্যাল সেন্ডিং এবং প্রসেসিং এর ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। 

ব্রেইনকে exhausted রেখে স্মৃতি শক্তি কমিয়ে দিতে পারে। দৈনন্দিন কাজকর্মে মনোযোগে ব্যাঘাত এবং চিন্তাশক্তি ব্যাহত হতে পারে। 

অপর্যাপ্ত ঘুম মুড সুইং এর একটা কারণ। অতি অনিদ্রা হ্যালুসিনেশন বা বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার ঘটাতে পারে। 

কম ঘুমানোর ফলে নিজের আচরণের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা, দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ, ডিপ্রেশন, প্যারোনিয়া এবং সুইসাইডাল চিন্তাভাবনা আসাও স্বাভাবিক ব্যাপার।

দিনে মাইক্রোস্লিপ (হঠাৎ অল্প সময়ের জন্য ঘুমিয়ে পরা) মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। 


২. দেহের প্রতিরক্ষা সিস্টেমের ক্ষতি : ঘুমানোর সময় আপনার দেহের প্রতিরক্ষা সিস্টেম অ্যান্টিবডি এবং সাইটোকাইনস এর মতো কেমিক্যাল তৈরি করে যা দেহের প্রতিরক্ষা সিস্টেমের প্রধান হাতিয়ার। 

বুঝতেই পারছেন পরিমিত না ঘুমালে এসব উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং প্রতিরক্ষা সিস্টেম দুর্বল হয়ে যাবে। 


৩. শ্বসনতন্ত্রে সমস্যা : শ্বসনতন্ত্রে সমস্যার কারণে ঘুমে সমস্যা হতে পারে আবার কম ঘুমের কারণে ফুসফুসে সমস্যা দেখা দিতে পারে।


৪. শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া : ঘুম leptin এবং ghrelin নামের দুটো হরমোন (যেগুলো মূলত আমাদের ক্ষুধা লাগা এবং ক্ষুধা মোচন নিয়ন্ত্রণ করে) উৎপাদন প্রভাবিত করে। 

কম ঘুমের ফলে এই leptin উৎপাদন কম হয় এবং ghrelin উৎপাদন বেশি হয়। যা আপনার ক্ষুধা বাড়িয়ে দিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। অতিরিক্ত খাবার খাওয়া আপনার ওজন বৃদ্ধির ওস্তাদ। 

অল্প নিদ্রা দেহে ইনসুলিন উৎপাদন ব্যাহত করে এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের ঝুঁকি বাড়ায়।


৫. Effects on Cardiovascular System : ঘুম আপনার ব্লাড সুগার, ব্লাড পাওয়ার এবং ইনফ্লেমেশন লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে।

এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে,  অনিদ্রা বা অপর্যাপ্ত ঘুম হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।


৬. বাচ্চা ও কিশোরদের বৃদ্ধি ব্যাহত করা : আসলে ঘুম দেহে হরমোন উৎপাদনে নানা ভাবে প্রভাব ফেলে। 

জেনে অবাক হবেন যে, টেস্টোস্টেরন উৎপাদনের জন্য রাতে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে কমপক্ষে তিন ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন! রাতে না ঘুমিয়ে জেগে থাকলে এর উৎপাদন ব্যাহত হয়।

অপর্যাপ্ত ঘুম গ্রোথ হরমোন উৎপাদনেও বাধা দিতে পারে বিশেষ করে বাচ্চা ও কিশোর- কিশোরীদের ক্ষেত্রে। 

পর্যাপ্ত ঘুম এবং ব্যায়াম পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে গ্রোথ হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে থাকে।

সুতরাং একটা সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নাই। 

নিয়মিত ঘুমান, সুস্থ থাকুন এবং দীর্ঘজীবী হোন।

ধন্যবাদ। 


রেফারেন্স। 

1."How Many Hours of Sleep Do You Really Need?" https://www.healthline.com/nutrition/how-much-sleep-you-need


2."11 Effects of Sleep Deprivation on Your Body" https://www.healthline.com/health/sleep-deprivation/effects-on-body#Endocrine-system


ইমামুল হাসান

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form