পরিচিতি: সবজি বাজারে প্রায় সারাবছরই পুঁইশাকের দেখা পাওয়া যায়। পুঁই এক প্রকার লতা জাতীয় উদ্ভিদ। পুঁইশাকে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ‘বি`, ‘সি` ও ‘এ` পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং আয়রণ আছে। পুঁই গাছের পাতা ও ডাঁটি শাক হিসেবে খাওয়া হয় বলে লোকে সচরাচর একে পুঁই শাক হিসাবে চিনে থাকে। পুঁই Basellaceae গোত্রভুক্ত বহুবর্ষজীবি উষ্ণমন্ডলীয় উদ্ভিদ। বাংলাদেশে, পশ্চিমবঙ্গে, আসামে এবং ত্রিপুরায় সর্বত্র এর চাষ হয়ে থাকে। এর ভাজি এ সব এলাকার মানুষের প্রিয় সহযোগী খাদ্য। এটি নরম বহুশাখা যুক্ত উদ্ভিদ। নানা ধরনের ভিটামিন সমৃদ্ধ এই শাকটি একদিকে যেমন বহুবিধ রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে, অন্যদিকে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর পাতা গুলো মসৃণ এবং খানিকটা পিচ্ছিল। পুঁই-এর একটি গোত্র লাল-পুঁই এর পুর্ণবয়স্ক কাণ্ড লালচে বেগুনী রঙের যা লাল পুঁই ডাঁটা হিসাবে পরিচিত। পুঁইয়ের ফুল সাদা অথবা লাল এবং ফল মটর দানার মতো হয়ে থাকে। পাকা ফল বেগুনি রঙের। চৈনিক ও বাঙালি রান্নায় এটি বহুল ব্যবহৃত। বাংলাদেশ, পশ্চিম বঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায় পুঁই শাকের ভাজি দুপুরের প্রিয় খাদ্য। এছাড়াও মাছ রাঁধতে পুঁই শাক ব্যবহার করা হয়।
পুঁইশাকের ভেষজ গুনাগুণঃ
অন্যান্য অনেক শাকের মত এর মধ্যে অনেক ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, লোহা, ও ক্যালসিয়াম আছে। এছাড়া ক্যালরির ঘনত্ব কম। তদুপরি ক্যালরি-প্রতি আমিষের পরিমাণও বেশী। পাতাসহ সমগ্র গাছ ভেষজ গুণাবলী সম্পন্ন।
➢ পাতা মূত্রকারক। গনোরিয়া রোগে এটি উপকারী। অশ্ব রোগে অতিরিক্ত স্রাব, অতিসার প্রভৃতিতে অন্যান্য উপদানের সঙ্গে পুঁই শাকের ব্যবহার আছে। পুঁই শাকের পাতার রস ছোটদের সর্দি, কোষ্ঠবদ্ধতা প্রভৃতিতে উপকার দেয়।
➢ ডায়াবেটিস কমায়: পুঁই শাকে এক ধরণের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে, যার নাম লিপোইক অ্যাসিড। দেখা গেছে এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রক্তে শর্করার মাত্রা কমায় আর ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখে, এটি ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি আর অটোনমিক নিউরোপ্যাথি কমায়। অর্থাৎ বলাই যায় যে এই শাক ডায়াবেটিসের দিক থেকে আপনাকে নিশ্চিন্ত রাখতেই পারে।
➢ ক্যানসার প্রতিরোধ করে: আর সব সবুজ সবজির মতো পুঁই শাকে রয়েছে ক্লোরোফিল। গবেষণায় দেখে গিয়েছে,পুঁইশাকে প্রচুর পরিমাণ আঁশ থাকে যা পাকস্থলী ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করে। এই ক্লোরোফিল কিন্তু কার্সিনোজেনিক প্রভাব আটকাতে খুব ভালো কাজ দেয়। আর এই কার্সিনোজেনিক প্রভাব হয় খুব বেশি মাত্রায় কিছু গ্রিল করলে। আর এতে থাকা ফাইবার পাকস্থলী আর কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করে। তবে পুঁই শাক কিন্তু ক্যানসার দূর করতে বেশ সক্ষম।
➢ অ্যাজমা আটকায়: একটি গবেষণা করা হয়েছিল ৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী ৪৩৩ জনের মধ্যে যাদের অ্যাজমা আছে। আর তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল ৫৩০ জন শিশুদের মধ্যে কারোর নেই। দেখা গেছে, যাদের অ্যাজমা নেই তারা কোনও না কোনও ভাবে পুঁই শাক বেশি খান। আসলে পুঁই শাকে আছে বিটা ক্যারোটিন আর এই বিটা ক্যারোটিনই অ্যাজমা হতে দেয় না সহজে।
➢ ব্লাড প্রেসার কমায়: পুঁই শাক কিন্তু পটাসিয়ামের একটি ভালো উৎস। আমরা জানি পটাশিয়াম ব্লাড প্রেসার কম করায়। পটাশিয়াম শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা ঠিক রাখে। তাই পুঁই শাক কম খাওয়া মানে শরীরে পটাশিয়াম কম আসা আর তার ফলে ব্লাড প্রেসারকে সঙ্গী করা।
➢ হাড় শক্ত করে: আমাদের হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে ভিটামিন কে। তাই ভিটামিন কে শরীরে কম প্রবেশ করা মানে হাড়ের মজবুতি কমে যাওয়া। পুঁই শাক ভিটামিন কে’র একটি খুব ভালো উৎস। ভিটামিন কে হাড়ের মেট্রিক্স প্রোটিন উন্নত করে। ক্যালসিয়াম ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়। পাশাপাশি, ইউরিনে ক্যালসিয়ামের মাত্রাও কম করে। হাড়ের শক্তি বাড়ানোর জন্য তাই পুঁই শাক খান।
➢ ভালো চুল আর ত্বকের জন্য: পুঁই শাকে আছে ভিটামিন এ, যা আমাদের ত্বকের আর স্ক্যাল্পের তেল নিঃসরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। ময়েশ্চার ধরে রাখে। অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ হলে ব্রণ হয়। পুঁই শাক যেহেতু এই নিঃসরণ কমায় তাই ব্রণ হয় না। ত্বকের কোষ কোলাজিনের জন্য যে ভিটামিন সি এতো দরকারি, সেই ভিটামিন সি’র উৎস এই পুঁই শাক।
➢ হজমের ক্ষমতা বাড়ায়: আমাদের বাঙালিদের মধ্যে গ্যাস বা অম্বলের মতো সমস্যা তো লেগেই থাকে। কিন্তু পুঁই শাক এই সমস্যা থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে। এটি হজম ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে আর যেহেতু পুঁই শাকে ফাইবার থাকে তাই কোষ্ঠকাঠিন্য হতে দেয় না। শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়। আর যেহেতু খাবার ভালো করে হজম হয় তাই বদহজমের সমস্যা হয় না।
➢ শিশুদের বৃদ্ধিতে: বাড়ন্ত শিশুদের যদি নিয়মিত পুঁই শাক খাওয়ানো যায় তাহলে বৃদ্ধি ভালো হয়। শিশুরা তাদের বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন সবই পুঁই শাক থেকে পেতে পারে। তাই বাচ্চাদের ছোট থেকেই পুঁই শাক খাওয়ানো অভ্যেস করাতে হবে।
➢ চোখ ভালো রাখে: চোখ আমাদের শরীরের অত্যন্ত সুক্ষ্ম একটি অঙ্গ। এর আলাদা করে যত্ন নেওয়া খুবই দরকার। পুঁই শাক কিন্তু চোখ ভালো রাখতেও বেশ কার্যকরী এবং চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়ায় । পুঁই শাকে আছে বিটা ক্যারোটিন, লুটেইন আর এই সব উপাদান চোখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে খুবই দরকারী। লুটেইন থাকে ম্যাকুলায় যেটি রেটিনার একটি অংশ আর এটি অতিরিক্ত আলোর প্রভাব থেকে চোখকে ভালো রাখে।
➢ এনার্জি বাড়ায়: আজকের দিনে অনেক কাজ করতে হবে আর তার জন্য দরকার এনার্জি। পুঁই শাক কিন্তু ভালো ভাবে এনার্জি বাড়ায় যা সারাদিন আমাদের এনার্জেটিক ধরে রাখে।। পুঁই শাকে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এই এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করে। পুঁই শাক ফোলেটের একটি ভালো উৎস যা খাবারকে এনার্জিতে রূপান্তরিত করে।
➢ চর্মরোগ: পুঁইশাকে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক কোঁচকানো বা বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে। এটা ত্বকের উপরে বিষাক্ত উপাদান জমতে দেয় না এবং ত্বকের টিস্যুগুলোকে মজবুত করে তোলে। এই কারণে সুন্দর ও উজ্জ্বল ত্বকের জন্য ডাক্তাররা প্রতিদিন পুঁইশাকের রস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
➢ শুক্রানুর সক্রিয়তা বৃদ্ধিতে: পুঁইশাক খাওয়ার ফলে শুক্রানুর সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। সবুজ শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড, আয়রন, জিঙ্ক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা শুক্রানুকে সুস্থ-সবল করে তোলে ।