পরিচিতি: শিউলি ফুল প্রত্যেক মানুষের কাছে খুব প্রিয়। শিউলি ফুল হচ্ছে নিক্টান্থেস প্রজাতির একটি ফুল। এর বৈজ্ঞানিক নাম Nyctanthes arbor-tristis । শরতের ফুল শিউলি। সন্ধ্যায় ফোটা আর সকালে ঝরা ফুলের মাঝে বিষণ্নভাবে দাঁড়িয়ে থাকাটাই এই রকম নামকরণের কারণ বলে ধারণা করা হয়। শিউলিকে কখনো কখনো দুঃখের বৃক্ষ ও বলা হয় কারণ দিনের আলোতে এই ফুল তাদের উজ্জ্বলতা হারায়। এটি সাধারণভাবে শিউলি নামেই পরিচিত। এটি দক্ষিন এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব থাইল্যান্ড থেকে পশ্চিমে বাংলাদেশ, ভারত, উত্তরে নেপাল ও পূর্বে পাকিস্তান পর্যন্ত এলাকা জুড়ে দেখতে পাওয়া যায়। শিউলি পাতার স্বাদ খুবই তিতকুটে হয়ে থাকে। এটি শেফালী নামেও পরিচিত। এই ফুল পশ্চিমবঙ্গের ও থাইল্যান্ডের কাঞ্চনাবুরি প্রদেশের রাষ্ট্রীয় ফুল। শিউলি গাছ নরম ধূসর বাকল বিশিষ্ট হয় এবং ১০ মিটারের মত লম্বা হয়। গাছের পাতা গুলো ৬-৭ সেন্টিমিটার লম্বা ও সমান্তরাল প্রান্তের বিপরীতমুখী থাকে।
এই ফুল হলুদ রঙ তৈরীতে ব্যবহার করা হয়। এই ফুলের বোঁটা গুলো শুকিয়ে গুঁড়ো করে পাউডার করে হালকা গরম পানিতে মেশালে চমৎকার রঙ হয়। এর ফল চ্যাপ্টা ও বাদামী হৃদপিণ্ডাকৃতির। ফলের ব্যাস ২ সেন্টিমিটার এবং এটি দুই ভাগে বিভক্ত। প্রতিটি ভাগে একটি করে বীজ থাকে। এই ফুল শরৎকালে ফোটে। এর ফুলগুলি রাতে ফোটে এবং সকালে ঝরে যায়। শরৎ ও হেমন্তের শিশির ভেজা সকালে ঝরে থাকা শিউলি অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য তৈরি করে।
শিউলির ভেষজ গুনাগুণঃ
➢ Immunostimulant, Hepatoprotective, antileishmanial, Antiviral, এবং Antifungal ঔষধ গুলো তৈরি করতে শিউলীর বীজ,পাতা ও ফুল ব্যবহার করা হয়। এর পাতা sciatica, arthritis, fevers, নানারকম যন্ত্রণাদায়ক সমস্যার চিকিৎসার জন্যে ঔষধ বা বড়ির মত করে আয়ুর্বেদিক ঔষধ তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়। ➢ জ্বর কমাতে সাহায্য করে শিউলি। দীর্ঘস্থায়ী জ্বর কমাতে শিউলির চা পান করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
➢ সাইটিকার ব্যথা কমাতে প্রতিদিন সকালে কয়েকটি শিউলি পাতা ও কয়েকটি তুলসী পাতা একসাথে জলে ফুটিয়ে সেই জল ছেঁকে সকাল ও সন্ধ্যায় খেতে হবে।
➢ প্রতিদিন সকালে চা এর মতো এক কাপ জলে দুটি শিউলি পাতা ও দুটি তুলসী পাতা ফুটিয়ে ও ছেঁকে খেতে হবে। এটি এক ধরনের হার্বাল টি। এর ফলে আর্থারাইটিসের ব্যথা কমবে।
➢ পরীক্ষায় দেখা গেছে, ম্যালেরিয়ার সময় শিউলি পাতার বাটা খেলে এই রোগের উপসর্গগুলি কমতে শুরু করে। ম্যালেরিয়ার প্যারাসাইটগুলি নষ্ট হয়, রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যা বাড়ে।
➢ গবেষণায় দেখা গেছে, শিউলির নির্যাস সাধারণত রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে। ফলে, রোগ প্রতিরোধ হয়।
➢ আমাদের ত্বকের ক্ষেত্রেও শিউলির উপকারিতা অনেক। এতে আছে অ্যাণ্টি-অক্সিডেণ্ট ও অ্যাণ্টি-ইনফ্ল্যামেটারি গুণ। এটি মুখের ব্রণ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
➢ শিউলির তেলের ব্যবহার মাথার চুল বাড়ায়।
➢ গলার আওয়াজ বসে যায় মাঝে মাঝে। এক্ষেত্রে, শিউলি পাতার রস ২ চামচ গরম করে দিনে দুইবার কয়েকদিন খেলে উপকার হবে।
➢ শিউলি পাতার রস অল্প গরম করে খেলে ক্রিমির বিনাশ হয়।
➢ শিউলি গাছের ছালের চূর্ণ সকালে ও বিকালে গরম জলে খেলে মেদ কমে।
➢ ঠান্ডাজনিত সমস্যায় ভুগলে খেতে পারেন শিউলি পাতার রস। নিয়মিত ২ চামচ পরিমাণ পাতার রস হালকা গরম খেলে এই সমস্যায় উপকার পাবেন।
➢ শিউলি পাতার স্বাদ খুবই তেতো। এ পাতার রস সেবনে কাশির সমস্যা কমে।
➢ যাদের বাতের ব্যথা আছে তারা প্রতিদিন সকালে এক কাপ পানিতে দুটি শিউলি পাতা ও দুটি তুলসী পাতা ফুটিয়ে ছেঁকে খেলে উপকার পাবেন।