পরিচিতি: বাংলা ভাষায় এই ফুলটির হলো নাম নয়নতারা। এর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Catharanthus roseus । এটি একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ । সারা বছরই ফুল ফোটে। এর ফুল সাধারণত সাদা, বেগুনী, গোলাপী রঙের হয়। গাছটিকে গরু বা ছাগল খায়না। এই গাছটি অনাদরে ও অবহেলায়ও বাঁচতে পারে।
নয়নতারার ভেষজ গুনাগুণঃ
➢ গাছটির পাতা, ফুল ও ডালে বহু মূল্যবান রাসায়নিক উপাদান পাওয়া যায়। ভেজষ গাছ হিসাবে নয়নতারা বিশেষ পরিচিতি আছে। ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে নয়নতারা দারূন কার্যকর। এই গাছের নিষ্কাশিত রস হতে তৈরি ঔসধ আগে আফ্রিকাতে ডায়াবেটিকস রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হতো। এতে কিছু এলকালয়েড আছে যা বর্তমান যুগে ক্যান্সার রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
➢ ডায়াবেটিসে: গত কয়েক বছরে আমাদের দেশে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্তের সংখ্যাটা যে ক্রমশ বাড়ছে সে কথা মেনে নিয়েছেন চিকিৎসকেরাও। আমাদের দেশে কম-বেশি প্রায় ৩০ মিলিয়ান মানুষ এই রোগের শিকার। নয়নতারা ফুলের পাপড়ি থেকে তৈরি চা খাওয়া প্রয়োজন, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ, এই ফুলে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা ইনসুলির ক্ষরণ ঠিক মতো হয়। রোজ সকালে ২-৩ টি পাতা খান সুগার লেভেল অনেক কমে যাবে।
➢ নিমেষে রক্তক্ষরণ কমায়: কোথাও কেটে গেলে সেখানে নয়নতারা ফুলের রস বা ফুলটা থেঁতো করে যদি মলমের মতো লাগানো যায়, তা হলে রক্তক্ষরণ কমতে সময় লাগে না। যাঁরা পাইলসের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা যদি নিয়মিত মলদ্বারে এই ফুল থেঁতো করে লাগাতে পারেন, তাহলে উপকার মিলবে হাতে-নাতে। এক্ষেত্রে যন্ত্রণা তো কমবেই। সঙ্গে রোগের প্রকোপ কমতেও সময় লাগবে না। চার-পাঁচটা নয়নতারা গাছের পাতার সঙ্গে ২ চামচ হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে ফেলুন এবার সেই পেস্টটা দিনে বারতিনেক ক্ষতের উপরে লাগালেই হবে।
➢ ব্রেনের ক্ষমতা বাড়ে: নিয়মিত নয়নতারা ফুলের পাপড়ি থেকে তৈরি চা পানের পাশাপাশি যদি এই গাছের পাতা খাওয়া য়ায়, তাহলে দেহে Vincamine নামে একটি উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যে কারণে ব্রেনে রক্তের প্রবাহ এতটাই বেড়ে যায় যে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ে, তখন তাল মিলিয়ে বৃদ্ধি পায় স্মৃতিশক্তিও। এমনকী, মনোযোগ ক্ষমতারও উন্নতি ঘটে।
➢ ক্যান্সারের ঝুঁকি দূর করে: আমাদের দেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বহু গুন্ বৃদ্ধি পেয়েছে। হাতে সময় থাকতে থাকতে যদি সাবধান না হন, তা হলে বিপদ তাই যদি প্রতিদিন এই ফুলর পাপড়ি ভিজিয়ে তৈরি চা পান শুরু করেন দেখবেন, ফল মিলবে হাতে-নাতে। কারণ, নয়নতারা ফুলে (Nayantara Flower) রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ক্যান্সার উপাদান, যা ক্যান্সার কোষেদের মেরে ফলে। ফলে এমন রোগের শিকারে পড়ার আশঙ্কা আর থাকে না।
➢ দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায়: নয়নতারা ফুলে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান চোখের প্রদাহ কমায়। ফলে অসময়ে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার মতো সমস্যার খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনই নানা ধরনের চোখের রোগও দূরে থাকতে বাধ্য হয়।
➢ হার্টের ক্ষমতা বাড়ে: এই ফুলে উপস্থিত Reserpine নামক একটি উপাদান হার্টের যাতে কোনও ধরনের ক্ষতি না হয়। এমনকী হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক অথবা স্ট্রোকের মতো রোগের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কাও আর থাকে না।
➢ ব্লাড প্রেশার: নয়নতারা গাছের পাঁচ-দশটা পাতা নিয়ে ভাল করে বেটে নিন। তাতে যে রস পাবেন, তা নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে অথবা রাতে শুতে যাওয়ার আগে যদি খেতে পারেন, তা হলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। হার্টের ক্ষমতাও বাড়বে।
➢ হাঁপানি এবং ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসায় যেমন নয়নতারা ফুলকে কাজে লাগানো যেতে পারে, তেমনই কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ম্যালেরিয়ার মতো রোগের প্রকোপ কমাতেও এই প্রাকৃতিক উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে।
➢ কৃমি থেকে কুষ্ঠরোগ, হৃদরোগ, অরুচি, মূর্ছা, অজীর্ন, বারে বারে হাঁচি, সর্দি, পেট ফাঁপা, দাঁতের রোগ এমনকি মাথার রোগও হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে বেশিরভাগ চিকিৎসক ভিন্ন ভিন্ন রোগের কারণ ভিন্ন ভিন্ন মনে করেন এক্ষেত্রে নয়নতারা গাছের পাতা খেলে উপশম পাওয়া যায়।
➢ ক্রিমি রোগে: নয়নতারার সমগ্র গাছ সিদ্ধ করে ৫/৬ দিন সেবন করলে ক্রিমির উপদ্রবটা কমে গিয়ে অন্যান্য উপস্বর্গগুলি উল্লেখযোগ্য ভাবে কমতে থাকবে। তারপর আরও ৮/১০ দিন ঐ ভাবে খেলে এর হাত থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।
➢ রক্তপরীক্ষায় দেখা যায় রক্তে চিনির ভাগ বেশী থাকে। এই ক্ষেত্রে নয়নতারা ভেষজটির ক্বাথ খেলে রক্তে চিনির পরিমাণ দ্রুত কমতে থাকে ।
➢ আমাদের রক্ত পরিষ্কার থাকলে আমাদের ত্বক ভালো থাকে। আর নয়নতারার পাতার রস আমাদের রক্ত পরিষ্কার রাখে। আর এতেই আমাদের ত্বক অনেক ভালো থাকে এবং অকালে ত্বক বুড়িয়ে যায় না। তাই তারুণ্য ধরে রাখতে নয়নতারার পাতার রস কিন্তু অনেক কার্যকরী।
➢ নয়নতারা ফুলের চা: শুনতে অবাক লাগলেও এই চা সাহায্য করবে ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে এই ফুলের পাপড়ি দিয়ে তৈরি চা পান করলে দুশ্চিন্তা দূর হয়। কমে অ্যাংজাইটিও। এমনকী, মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির ক্ষমতা এতটা বেড়ে যায় যে, ক্যান্সারের মতো মারণ রোগও ধারেকাছে ঘেঁষতে পারে না। তাই সুস্থভাবে যদি বাঁচতে হয়, তাহলে বাড়িতে একটা নয়নতারা গাছ লাগান।