বৃক্ষ ও তার বিশালতা


(১)

পরীক্ষায় প্রশ্ন এসেছিল "বৃক্ক কী?" কেউ একজন লিখে রেখেছিল বৃক্ষের কথা। ভাববাদী দিক থেকে বিচার করলে খুব যে ভুল কিছু বলেছে তাও না। যাহোক, ভাববাদী কথা দূরে রেখে আসল কথায় আসি। বিশাল বিশাল বৃক্ষ, বছরের পর বছর ধরে নিজেদের মাথার পাতা পায়ে ফেলে অক্লান্ত ভাবে একস্থানে দাঁড়িয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে, অক্সিজেন দিয়ে আসছে। দিচ্ছে ফল, অন্যান্য পশুপাখির বাস যোগ্য স্থান। রক্ষা করে যাচ্ছে সেই স্থান টিকে। এই বিশাল গাছের মহানতা মাপা সম্ভব নয়। কিন্তু কখনো কি প্রশ্ন এসেছে এই বিশাল বিশাল বৃক্ষের বিশালতা আসে কোথা থেকে। অর্থাৎ বৃক্ষের ভর এর উৎস কী?


গাছ যেহেতু তার শেকড় মাটিতে গেড়ে ওঠে তাই ভাবাই যায় এর ভর আসে মাটি থেকে। কিন্তু আসলেই কি তাই? বিষয়টা ভেবেছিলেন, ১৭শ শতকের এক বেলজিয়ান বিজ্ঞানি। (Johan Baptista)

তিনি একটা পরীক্ষা চালান, তিনি ৫ বছরের জন্য একটা পটে একটা চারা গাছ রোপণ করেন। সেখানে মাটির মোট ভর ছিল ৯০ কেজি। এবং এই পাঁচ বছরে তিনি সেই গাছের রক্ষণাবেক্ষণ করেন, কোনো মাটি দেয়া বা সরানো ছাড়া। শুধু পানি দিয়ে। ৫ বছর পর তিনি গাছের এবং পাত্রে থাকা মাটির ভর পরিমাপ করে দেখেন। পাত্রে মাটির শুধু ৫৭ গ্রাম ভর কম থাকে। এবং গাছের ভর হয় ৭৫ কেজি। তখনও সালোকসংশ্লেষ এর ধারণা আবিষ্কার হয় নি, তাই তিনি ভেবে নেন এই ভর এসেছে পানি থেকে।

তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, আসলেই কি তাই? তাহলে এই বিশাল ভর এলো কোথা থেকে। সূর্যালোক থেকে নয়তো? সালোকসংশ্লেষণ এ সূর্যালোক এর প্রয়োজন হয় ঠিক ই কিন্তু এই বিশাল পরিমান ভর তা থেকে আসা সম্ভব নয়।

যাহোক, আসল কথা হচ্ছে এই বিশাল গাছ গুলো নিজের মধ্যে ধারণ করে কার্বন। যা থেকেই বৃক্ষের বেশিরভাগ ভর আসে। কার্বন যদি, মাটি, পানি কিম্বা সূর্যালোক থেকে না আসে তবে? কোথা থেকে আসে। আশা করি ধারণা করতে পারছেন। হ্যাঁ, কার্বন ডা অক্সাইড৷

আমি যেখান থেকে এই তথ্য গুলো সংগ্রহ করে লিখছি, সেখানে শেষে একটা কথা ছিল।

"we humans lose mass by exhaling carbon dioxide, yet trees gain mass by breathing in the exact same substance"

তাহলে বলা যায় আমরা ধীরে ধীরে বৃক্ষে পরিণত হচ্ছি। এই কথাটাও শুনেছিলাম একটা ভিডিও থেকে। যাহোক পরবর্তী পর্বে জানব, কীভাবে ও কী পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করতে পারে বৃক্ষ।


(২)

বৃক্ষের বিশালতা কোথা থেকে আসে তা জেনেছিলাম পূর্ববর্তী পর্বে। বৃক্ষ বায়ুমন্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে ও কার্বন নিজের মধ্যে ধারণ করে। কার্বোহাইড্রেট গ্লুকোজ রূপে। যা তার গ্রোথে সহায়তা করে। আজকের পর্বে জানব বৃক্ষ কীভাবে বায়ুমন্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে ও তার পরিমাণ কেমন হতে পারে।

কার্বন: (C) পর্যায় সারণীর ৬ষ্ঠ মৌল যার পারমানবিক সংখ্যা ৬ ও পারমানবিক ভর ১২.০০১। কার্বন এর মধ্যে অক্সিজেন (O) কে আকর্ষণ করে গ্যাসিয় যৌগ যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2), কার্বন মোনো অক্সাইড (CO) গঠনের প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়। যা বায়ুদূষণ এর অন্যতম কারণ।


তবে বৃক্ষ এই কার্বন ডাই অক্সাইড বায়ুমন্ডল থেকে শোষণ করে থাকে সালোকসংশ্লেষণ এর মাধ্যমে। উদ্ভিদ এই প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে কার্বন পৃথক করে কার্বোহাইড্রেট গ্লুকোজে রূপান্তর করে নিজের মধ্যে সংরক্ষণ করে। যা তার দেহ কাঠামো গঠণে সহায়তা করে। এবং অক্সিজেন বায়ুমন্ডলে ছাড়ে যা অন্যান্য পশুপাখি গ্রহণ করে শ্বাসক্রিয়া চালায়৷


সালোকসংশ্লেষণ এর রাসায়নিক রূপ

6CO2 + 12H2O + Photons → C6H12O6 + 6O2 + 6H2O


ছয় অনু কার্বন ডাই অক্সাইড ও বার অনু পানি সূর্যালোক এর সাথে বিক্রিয়া করে গঠন করে গ্লুকোজ, ছয় অনু পানি ও ছয় অনু অক্সিজেন। উদ্ভিত পানি ও অক্সিজেন বায়ুমন্ডলে ত্যাগ করে। বেশির ভাগ পানিই সালোকসংশ্লেষণ এর মাধ্যমে বাষ্পীভূত হয়ে যায়।


উদ্ভিদের কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ এর পরিমাণ:-


উদ্ভিদের দেহের মোট ভরের ৬৫% শতাংশ শুষ ভর। যার ৫০% ই হলো কার্বন। উদ্ভিদের দেহের অনেকটা অংশ মাটির নিচে থাকে। প্রদত্ত ভরের ১২০% তার মোট ভর। এর সাথে ৩.৬৭ গুণিত হবে। তাহলে পাওয়া যাবে একটি বৃক্ষ তার জীবনকালে কী পরিমান কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করতে পারে।

তাহলে বলা যায় সূত্র,

Mass×120%×65%×50%×3.67 = CO2 এর পরিমাণ।

একটা উদাহরণ দেখে আসা যাক,

ধরি একটি বৃক্ষের উচ্চতা (নিম্নে একটি ছবিতে দিয়ে দেব কীভাবে উচ্চতা ও ব্যাস পরিমাপ করে ভর নির্ণয় করা যাবে) ও ব্যাস পরিমাপ করে এর ভর পেলাম ৬০০ কেজি। বৃক্ষের বয়স হয়েছে বার বছর। তাহলে এই মোট সময়ে সে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে,


(600×120%×65%×50%×3.67)= 860 kg ( approximately)


তাহলে প্রতিবছর (৮৬০/১২) গড়ে ৭২ কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করতে সক্ষম।


বৃক্ষ আমাদের অবিচ্ছেদ্য বন্ধু। কানাডায় দাবদাহ থেকে শুরু করে গ্লাসিয়ারের বরফ গলন সব কিছুর জন্যই দায়ি বৈষিক উষ্ণায়ন। বনজ এলাকা উজাড় করায় যা পরিস্থিতিটিকে আরো জটিল করে দিচ্ছে। বৃক্ষরোপণ যেখানে একটা বড়ো ভুমিকা পালন করতে পারে এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের। বৃক্ষের বিশালতা আসলেই পরিমাপ যোগ্য নয়।

বৃক্ষ ও তার বিশালতা এখানেই শেষ হলো।

Minhaz R. Luis

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম