ব্রেইনের কার্যক্ষমতা এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে যে খাবার!
ব্রেইন মানব দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।হৃৎস্পন্দন থেকে শুরু করে ফুসফুসের শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া সহ পুরো দেহের নিয়ন্ত্রণ করে ব্রেইন।ব্রেইন ভালো তো আমরা ভালো থাকি।
ব্রেইনের কার্যক্রম ঠিক রাখার জন্য প্রয়োজন সুষম খাদ্যগ্রহন।তবে বিশেষ কিছু খাবার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা (মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তি) বৃদ্ধি এবং সচল রাখতে সহায়তা করে।তেমনই ১১টি খাদ্য নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা।
১.ফ্যাটি ফিশ: ব্রেইনের ৬০% ফ্যাট দিয়ে তৈরি।আবার এই ফ্যাটের অর্ধেক হচ্ছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড।
ব্রেইন নার্ভ সেল গঠনেও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ব্যবহার করে এবং এটা শিখন ও স্মৃতির জন্য ভালো।এর আরও কিছু উপকারিতা রয়েছে যেমন: বয়োঃবৃদ্ধি জনিত মানসিক ক্ষতি এবং অ্যালঝেইমার ডিজিজ রোধ, স্মৃতিশক্তি প্রখর করা এবং মুড ভালো রাখা।
গবেষকরা আরও বলেন,যারা নিয়মিত মাছ খায় তাদের ব্রেইনে গ্রে ম্যাটার তুলনামূলক বেশি থাকে।গ্রে ম্যাটার এ থাকা নার্ভ সেল সিদ্ধান্ত গ্রহণ, স্মৃতি এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে।
সুতরাং ফ্যাটি ফিশ বিশেষ করে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার ব্রেইনের জন্য খুব উপকারী।
বিদেশি স্যালমন,ট্রাউট,আলবাকোর টুনা,হেরিং,সার্ডিন এবং দেশি কাতলা,পাঙ্গাস,রুই,কার্প,ইলিশ ইত্যাদি মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ।
২.কফি: কফিতে থাকা দুটো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ক্যাফেইন এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট দুটোই ব্রেইনের জন্য উপকারী।
▪ক্যাফেইনের উপকারিতা:ব্রেইনকে সতর্ক রাখে(অ্যাডিনোসিন ব্লক করে),মুড ভালো করে,মনোযোগ বৃদ্ধি করে।
কফি আলঝেইমার এবং পারকিনসন্স রোগের ঝুঁকি কমায়।
৩.নীল জাম: ব্লুবেরিস বা নীল জাম ব্রেইন এবং আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।ব্লুবেরি সহ অন্যান্য গাঢ় রং বিশিষ্ট জামে প্রচুর অ্যানি-অক্সিড্যান্ট থাকে যা ব্রেইন এজিং রোধ করে, মেমোরি এবং ব্রেইন সেলসমূহের কমিনিউকেশন ইম্প্রুভ করে।
৪.হলুদ: কারকিউমিন (Curcumin) হলুদের একটি সক্রিয় উপাদান যা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং প্রদাহ-বিরোধী হিসেবে কাজ করে।
হলুদে বিদ্যমান এই উপাদানের আরও বেশ কিছু উপকারিতা আছে যেমন: মস্তিষ্কে সরাসরি প্রবেশ করে ব্লাড-ব্রেইন বেরিয়ার হিসেবে কাজ করে,স্মৃতি সহায়ক,ডিপ্রেশন কমায়,নতুন ব্রেইন সেল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
বলে রাখি,গবেষণায় ব্যবহৃত হলুদে উচ্চমাত্রায় কারকিউমিন ছিল যা সবসময় হলুদে উচ্চমাত্রায় না ও থাকতে পারে।তাই ভালো ফলাফল পেতে হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এক্সট্রা কারকিউমিন সাপ্লিমেন্টারী নেওয়া যেতে পারে।
৫.ব্রকলি: উচ্চমাত্রার ভিটামিন-কে সমৃদ্ধ খাবার।
এতে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টও বিদ্যমান।
তবে ভিটামিন-কে sphingolipids নামক ফ্যাট গঠন করতে সাহায্য করে।এই ফ্যাটটি ব্রেইন সেলে প্রচুর পরিমাণে থাকে।
তাছাড়াও ভিটামিন-কে তুলনামূলক ভালো স্মৃতি এবং বুদ্ধিবৃত্তির সাথে সম্পর্কিত।ব্রেইন ড্যামেজ প্রতিরোধেও ভিটামিন-কে এর কিছুটা ভূমিকা আছে।
ব্রকলি এভেইলেবল না হলে ফুলকপি খেতে পারেন।পুষ্টিগুণ প্রায় সেম।
৬.কুমড়োর বীজ: কুমড়োর বীজে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে magnesium, iron, zinc, and copper থাকে।প্রতিটিই ব্রেইনের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।যথা:
জিংক: জিংক ব্রেইন সিগন্যালিং এর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।জিংকের অভাবে আলঝেইমার ডিজিস এবং পারকিনসন্স হতে পারে।
ম্যাগনেসিয়াম: এটি স্মৃতি এবং শিক্ষণের জন্য সহায়ক।এর অভাবে মাইগ্রেন,এপিলেপ্সি এবং ডিপ্রেশন দেখা দিতে পার।
কপার: আমাদের ব্রেইন নার্ভ সিগনাল নিয়ন্ত্রণ করতে কপারের সাহায্য নেয়।এবং কপারের অভাব দেখা দিলে নিউরোলজিকাল ডিজিজ দেখা দিতে পারে যেমন: আলঝেইমার।
আয়রন: এর অভাবে ব্রেইন ফগ( ব্রেইনের কার্যক্রম ধীর হয়ে যাওয়া) এবং মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধীতা দেখা দিতে পারে।
৭.ডার্ক চকোলেট:এতে ফ্ল্যাভোনয়েডস, ক্যাফেইন এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট বিদ্যমান।
Flavonoids একটি অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট গ্রুপ যা ব্রেইনের শিখন এবং স্মৃতি অংশে জমা হয়।গবেষকরা মনে করেন এই উপাদানগুলো বয়োঃবৃদ্ধি জনিত মানসিক ক্ষয় রোধ করতে পারে।
৯০০ লোকের উপরে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায় যারা নিয়মিত ডার্ক চকোলেট খায় তাদের মানসিক দক্ষতা যারা খায় না বা কম খায় তাদের থেকে তুলনামূলক বেশি।
ডার্ক চকোলেট মুড বুস্টার হিসেবেও কাজ করে।
৮.বাদাম: বয়স্কদের ক্ষেত্রে নিয়মিত বাদাম ভক্ষণ কগনিটিভ ডিক্লাইন রোধ করে।
২০১৪ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, যেসব মহিলারা নিয়মিত বেশ কয়েক বছর ধরে বাদাম খেয়েছেন থাকেন তাদের স্মৃতি যারা বাদাম খান না তাদের তুলনায় প্রখর।
বাদাম ফ্রি-র্যাডিকেল জনিত মানসিক ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে।
বাদামের মধ্যে আখরোট ব্রেইনের জন্য সবচেয়ে ভালো।
৯.কমলালেবু: কমলালেবুতে আপনার প্রয়োজনীয় সকল ভিটামিন-সি থাকে।
ভিটামিন-সি মানসিক ক্ষয় রোধে প্রধান ভূমিকা পালন করে।রক্তে ভিটামিন-সি এর লেভেল হাই থাকলে ফোকাস,মনোযোগ, মেমোরি ইম্প্রুভ হয়এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ দ্রুত হয়।
তাছাড়া ভিটামিন-সি ব্রেইনকে ফ্রি র্যাডিকেল হতে মুক্ত রাখে।সিজোফ্রেনিয়া,মানসিক উদ্বেগ, আলঝেইমার প্রতিরোধ করতে ব্রেইনকে সাহায্য করে।
১০.ডিম: ডিমে ভালো পরিমাণে ভিটামিন-বি, কোলিন(Choline) এবং ফোলেট (Folate) থাকে যা মুড নিয়ন্ত্রণ করে,ব্রেইনের প্রোপার ফাংশন ডেভেলপমেন্ট করে।
লেখা বড় হয়ে যাচ্ছে বলে ডিমের আলোচনা সংক্ষিপ্ত করলাম।
১১.গ্রিন টি: এর দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান Caffeine এবং L-theanine।ক্যাফেইনের আলোচনা পূর্বে করা হয়েছে।
L-theanine: এটি anxiety কমাতে সাহায্য করে, ব্রেইনে আলফা ওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সী বৃদ্ধি করে।
তাছাড়া গ্রিন টি আলঝেইমার ও পারকিনসন্স এর ঝুঁকি কমায় এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।
এগুলো ছাড়াও আরো ব্রেইন ফুডস রয়েছে।গুগলে 'ব্রেইন ফুডস' লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন।
Source:
"11 Best Foods to Boost Your Brain and Memory" https://www.healthline.com/nutrition/11-brain-foods