জাফরানের ঔষধি গুন




পরিচিতি:   জাফরান ফুলের পাপ‌ড়ি বেগুণী র‌ঙের হয়। জাফরান হল ক্রোকাস সেটিভাস ফুলের শুকনো শিস বা গর্ভমুন্ড। এটি একটি সুতোর মতো কাঠামোর হয় যা ফুলের কেন্দ্রস্থলে পরাগ ধরে থাকে। জম্মু ও কাশ্মীরেই প্রায় ৪৫০০ হেক্টর জমিতে জাফরান চাষ করা হয়। জাফরান গাছ থেকে শিস সংগ্রহ করে শুকানো হয়। ভারতে এই ফুলটি কেবল জম্মু ও কাশ্মীরেই জন্মে। এই বিদেশী মশালাকে ভারতে ব্যবহৃত ভাষাগুলিতে স্যাফরান, কেসর, কাউং, জাফরান বা কুমকুমাপুভুর মতো বিভিন্ন নামে পরিচিত বিশ্বের সবচেয়ে দামী মশলা জাফরান। স্যাফরন বা কেশর নামেও এটি পরিচিত৷ এই মশলা নামীদামী অনেক খাবারে ব্যবহৃত হয়। খাবারের স্বাদ, ঘ্রাণ, রঙ বাড়িয়ে তুলতে এর জুড়ি নেই। তবে জাফরানের কাজ শুধু এরমধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। জাফরানের মধ্যে রয়েছে অসাধারণ ঔষধিগুণ। জাফরানে রয়েছে বিস্ময়কর রোগ নিরাময় ক্ষমতা মাত্র ১ চিমটে জাফরান আপনাকে প্রায় ২০ টি শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। 


 জাফরানের উপকারিতাঃ

 ➢ জাফরানে রয়েছে পটাশিয়াম যা উচ্চ রক্ত চাপ ও হৃদপিণ্ডের সমস্যা জনিত রোগ দূর করে।

 ➢ নিয়মিত জাফরান সেবনে শ্বাস প্রশ্বাস ও ফুসফুসের নানা ধরনের সমস্যা যেমন অ্যাজমা , পারটুসিস, কাশি এবং বসে যাওয়া কফ দূর করতে সাহায্য করে। 

 ➢ হজমে সমস্যা এবং হজম সংক্রান্ত যে কোনও ধরনের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে জাফরান। 

 ➢ জাফরানের পটাশিয়াম আমাদের দেহে নতুন কোষ গঠন এবং ক্ষতিগ্রস্থ কোষ সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।

 ➢ জাফরানের নানা উপাদান আমাদের মস্তিষ্ককে রিলাক্স করতে সহায়তা করে, এতে করে মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতা জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

 ➢ মেয়েদের মাসিকের অস্বস্তিকর ব্যথা এবং মাসিক শুরুর আগের অস্বস্তি দূর করতে জাফরানের জুড়ি নেই।

 ➢ জাফরানের ক্রোসিন নামক উপাদানটি অতিরিক্ত জ্বর কমাতে সহায়তা করে। 

 ➢ ব্রণ দূর করতে প্রথমে জাফরান আর কাঁচা দুধ মিশিয়ে দুই ঘন্টা রেখে দিন। এবার মিশ্রণটি ফেইসে লাগিয়ে একটু ম্যাসাজ করে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।সপ্তাহে ১-২ ব্যবহার করলে ব্রণের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। 

 ➢ জাফরানের রয়েছে অনিদ্রা সমস্যা দূর করার জাদুকরী ক্ষমতা। ঘুমোতে যাওয়ার আগে গরম দুধে সামান্য জাফরান মিশিয়ে পান করলে অনিদ্রা সমস্যা দূর হবে । 

 ➢ সামান্য একটু জাফরান নিয়ে মাড়িতে ম্যাসেজ করলে মাড়ি,দাঁত এবং জিহ্বার নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। 

 ➢ গবেষণায় দেখা যায় জাফরান দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে এবং চোখের ছানি পড়া সমস্যা প্রতিরোধে কাজ করে।

 ➢ জাফরানের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান বাতের ব্যথা,জয়েন্টে ব্যথা,মাংসপেশির ব্যথা এবং দুর্বলতা দূর করতে অব্যর্থ ঔষুধ।

 ➢ অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে রেহাই দিতে পারে সামান্য একটু খানি জাফরান।

 ➢ জাফরানের ক্যান্সার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আছে।

 ➢ মস্তিস্কের গঠন উন্নত করতে জাফরানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তা ক্ষমতা উন্নত করতে এটি খুবই কার্যকরী। 

 ➢ জাফরান দেহের কলেস্টোরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।

 ➢ আলজাইমার এবং পার্কিনসন রোগ থেকে দূরে রেখে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে বাঁচায়। 

 ➢ কিডনি, যকৃৎ এবং মুত্রথলির রোগ থেকে মুক্তি দেয় জাফরান।

 ➢ জাফরান ভাল দৃষ্টিশক্তির জন্য খুব উপকারী হিসাবে বিবেচিত হয়। গর্ভাবস্থায় জাফরান গ্রহণ প্রায়শই দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সহায়তা করে বিশেষত ছানির ক্ষেত্রে। 

 ➢ যষ্ঠিমধু এবং দুধের সঙ্গে জাফরান মিশিয়ে মাথায় লাগালে চুল পড়া বন্ধ হয় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে৷ 

 ➢ গর্ভাবস্থায় কোনও মহিলার হার্ট বিটের হার ২৫% গতিতে বাড়ে, রক্তচাপে ওঠানামা সৃষ্টি করে। জাফরানে পটাসিয়াম এবং ক্রোসটিন রয়েছে যা আপনার রক্তচাপকে হ্রাস করতে সহায়তা করে। এই বৈশিষ্ট্যটি গর্ভাবস্থায় উপকারী হতে পারে। গর্ভাবস্থায় বেশিরভাগ মহিলা পেটের ব্যথায় ভোগেন। গর্ভাবস্থায় হজমক্ষমতা হ্রাস হয় এবং একটি গর্ভবতী মায়ের এই প্রক্রিয়াটি সহজ করার জন্য কিছু উত্তেজক এজেন্টের প্রয়োজন হতে পারে। জাফরান আপনার পাচনতন্ত্রের রক্ত প্রবাহকে বাড়িয়ে তুলতে পারবে বলে পরিচিত এবং এইভাবে আপনার বিপাককে বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে। এটি, পরিবর্তে, আরও ভাল হজমে সহায়তা করে। জাফরান পাচনতন্ত্রের প্রতিরক্ষামূলক আবরণ গঠনের কারণ ঘটায়।

 ➢ পুরুষত্বহীনতা, অকাল বীর্যপাত ও লিঙ্গ উথান সমস্যা দূর করে সুস্থ যৌনজীবন দেয় জাফরান। 

 ➢ শারীরিক দিক থেকে অনুন্নত মেয়েদের জন্য জাফরান খুবই উপকারী। প্রত্যেকদিন এক চিমটে জাফরান দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে হরমোন উদ্দীপিত হয়। নিয়মিত দুধের সঙ্গে জাফরান মিশিয়ে খেলে তার ফল আপনি নিজেই দেখতে পাবেন। 

 ➢ টিউমারের রোধ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। 

 ➢ ত্বকে ঔজ্বল্য বাড়ায় এবং বলিরেখা দূর করতে সহায়তা করে। 

 ➢ গর্ভাবস্থাকালীন, আপনি লোহা সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের পক্ষে প্রস্তাব দেওয়া হয়, কারণ আপনার দেহের সুস্থ থাকতে লোহার প্রয়োজন। জাফরানের আয়রনের পরিমাণ বেশি এবং এটি আপনার হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ও লাল রক্তকণিকা গঠনে সহায়তা করে। 

 ➢ গর্ভাবস্থায় হরমোনের ওঠানামা প্রায়শই চুল পড়া বাড়ায়। অনেক গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে চুল পড়া কমাতে দুধ, জাফরান এবং অ্যালকোহল জাতীয় পেস্ট প্রয়োগ করার প্রচলন রয়েছে। জাফরানে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টগুলি চুলকে পুষ্ট করে তোলে, চুলকে আরও দৃঢ় করে তোলে।টাক সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের জন্যজাফরান খুবই উপকারী। 

 ➢ ঠান্ডা লাগা, জ্বরের হাত থেকে বাঁচায় জাফরান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম