পরিচিতি: এর অন্যান্য নাম হচ্ছে এলাচি, Cardamom, Malabar cardamom, Ceylon cardamom। এটি মসলা হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি সুগন্ধি গাছ।এলাচ এমন একটি মশলা যা মোটামুটি সকলের রান্নাঘরেই উপস্থিত থাকে এবং নানারকমের খাদ্যে তীব্র সুগন্ধযুক্ত অনন্য স্বাদ এর জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর মূল কারণ হল এই যে এলাচ শুধুমাত্র খাদ্যে বিশেষ সুগন্ধ ও স্বাদই বাড়ায় না, তার সাথে এলাচের উপকারিতা রয়েছে নানারকমের যা স্বাস্থ্যের জন্যে বেশ প্রয়োজনীয়। ভারতবর্ষে এই সবুজ এলাচের চাষ হয়ে থাকে ও মালেশিয়ার মত দেশে এই এলাচ ভারত থেকে পাঠানো হয়। তীব্র সুগন্ধযুক্ত অনন্য স্বাদ রয়েছে। সবুজ এলাচ আপনি নানারকমের মিষ্টি অথবা নোনতা স্বাদের খাদ্যে ব্যবহার করতে পারেন। এর অসাধারণ সুগন্ধের জন্যে একে তরকারি অথবা বিভিন্ন দুগ্ধ জাতীয় খাদ্যেও ব্যবহার করা হয়। এলাচ সুগন্ধিযুক্ত একটি মসলা। এলাচকে মসলার রানী বলা হয় । খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয় এলাচ। রান্নার স্বাদ বাড়ানো ছাড়াও এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা।
এলাচের উপকারিতা হলো
➢ কালো এলাচের স্পষ্টভাবে আরও ধূমপায়ী স্বাদ রয়েছে, যদিও তেতো নয় তাহলে কালো এলাচ মুখে নিয়ে চাবাতে পারেন। কেননা এলাচের তেল মুখের সমস্যা দূর করতে কার্যকর একটি ওষুধ।
➢ রক্তনালীতে রক্ত জমে যাওয়ার সমস্যায় ভুগে থাকেন অনেকেই। এলাচ রক্ত পাতলা করার এই সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে। প্রতিদিন এলাচ খেলে রক্তের ঘনত্ব সঠিক থাকে।
➢ এলাচ এবং আদা সমগোত্রীয়। পেটের নানা সমস্যা এবং হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে এলাচ অনেক কার্যকরী। বুক জ্বালাপোড়া, বমি ভাব, পেট ফাঁপা, অ্যাসিডিটির হাত থেকে মুক্তি পেতে এলাচ খুব উপকারী।
➢ গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত এলাচ খাওয়ার অভ্যাস ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
➢ শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যা হুপিংকাশি, ফুসফুস সংক্রমণ ও অ্যাজমার মতো সমস্যায় ভুগে থাকেন তাদের জন্য এলাচ খুবই উপকারী।
➢ মাথাব্যথা থেকে তাৎক্ষণিক মুক্তি পেতে এলাচ তেলের ব্যবহার করলে সুফল পাওয়া যায়।
➢ এটি অনুভূতি নাশক ও অস্থিরতাকে প্রশমিত করে।
➢ ঠোঁটের জন্যে ভালো: এলাচ দিয়ে ঠোঁটের নানারকমের বাম, গ্লস বা তেল তৈরী হয় যা ঠোঁটের কোমলভাব ফুটিয়ে তুলে তার গোলাপিভাব বজায় রাখতে সাহায্য করে। আপনি ঘরেও প্যাক তৈরী করে সারারাত ঠোঁটে লাগিয়ে সকালে ধুয়ে ফলাফল পেতে পারেন। এই প্যাক তৈরী করতে লাগে এলাচের গুঁড়ো, অলিভ অথবা আমন্ড অয়েল এবং একটুখানি এলোভেরা জেল। প্রতিদিন এটি ঠোঁটে লাগিয়ে রেখে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
➢ কালো এলাচ হার্ট সুস্থ রাখে, রক্তচাপ ও ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রক্তসঞ্চালন বাড়ায়।
➢ কালো এলাচ হৃদরোগ প্রতিরোধ করে, হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এ ছাড়া এলাচ রক্তসঞ্চালনে সহায়ক।
➢ এতে থাকে ভিটামিন সি,যা রক্তসঞ্চালন ও ত্বকের সমস্যা দূর করে। এলাচে রয়েছে ভিটামিন সি যা এন্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর। এর ফলে ত্বকে রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয় ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
➢ রূপচর্চায় এর জুড়ি নেই, রূপচর্চা ও চেহারার কালো দাগ দূর করতে এলাচের জুড়ি নেই।
➢ হার্টের জন্য ভালো: এলাচের মধ্যে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদানগুলি হার্টের জন্যে বেশ স্বাস্থ্যকর। এতে রয়েছে ফাইবার যা কোলেস্টরল কম করতে সাহায্য করে। এছাড়া যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে এলাচ হল দারুণ একটি ওষুধ। তবে হার্টের জন্যে সবুজের থেকে কালো এলাচ বেশি উপকারী। বেশিরভাগ হার্টের চিকিৎসকেরা আজকাল রাতের খাদ্য তালিকায় এলাচ যোগ করার পরামর্শ দিচ্ছেন।
➢ দাঁত ও মুখের জন্যে ভাল: এলাচে এন্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান থাকার ফলে মুখের ভেতরের অংশের অর্থাৎ মাড়ি ও দাঁতের খুব উপকার হয়। এলাচের ঝাঁঝালো স্বাধ নিশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করে ও তরতাজা করে তোলে । দাঁতের সুরক্ষা ও তরতাজা নিশ্বাসের জন্যে একটু জিরে, এলাচ ও মৌরি মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরী করে দাঁত মাজুন। খুব শীঘ্রই ফল পাবেন
➢ যৌন স্বাস্থ্য: এলাচে সিনেওলের পরিমান উচ্চ থাকে, ফলে এটি স্নায়ুকে শান্ত করে ও যৌন ইচ্ছাকে বাড়িয়ে তোলে। এই কারণে এলাচকে আফ্রোদিসিয়াক বলা হয়। এছাড়া, বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি পেতেও এলাচ সাহায্য করে।
➢ ক্যান্সারের চিকিৎসা: প্রাকৃতিক ভাবে ক্যান্সারের চিকিৎসা করতে এলাচের কোনো জুটি নেই। এলাচের দ্বারা ক্যান্সারের টিউমার বা কোষগুলি বাড়তে পারেনা। কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এলাচ এর গুনাগুন বিশেষ ভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এলাচ ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। এ জন্য ক্যান্সার প্রতিরোধে নিয়মিত এলাচ খাওয়া উচিত।
➢ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় যারা ভোগেন, তাদের জন্যে এলাচ খুব উপকারী একটি ওষুধের কাজ করে। স্যুপ বা স্টু-এর মধ্যে এলাচ মিশিয়ে খেলে খুব সহজেই কিছুদিনের মধ্যে রক্তচাপ নিচে নামতে শুরু করে
➢ চা বা কফি বানানোর সময় এলাচ মেশালে তাতে দারুন সুগন্ধ ফুটে ওঠে। এতে মেজাজও বেশ ফুরফুরে থাকে।
➢ রোজ খাবার পর যদি একটা করে এলাচ খান তা পেটের নানা সমস্যা এবং হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে এলাচ গ্যাসের সম্ভাবনাকে কমায় ও হজমশক্তি বাড়ায়। রোজ এক কাপ হালকা গরম জলে একটি এলাচ থেঁতো করে ফেলে নিয়ম করে খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
➢ গরম জলে এলাচ গুড়ো ও মধু দিয়ে ফুটিয়ে চা বানিয়ে খেলে মনের বিষণ্ণতা দূর হয়।
➢ মাথা ব্যাথা দূর করে: যাঁরা মাথাব্যথার সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের জন্য এলাচিযুক্ত সবুজ চা দারুণ কাজে লাগতে পারে। গরম পানিতে এলাচ গুড়ো ও মধু দিয়ে ফুটিয়ে তৈরি করে নিন এলাচ চা। মাথা ব্যথায় ভুগে থাকলে এক কাপ গরম এলাচ চা খেয়ে দেখুন। দেখবেন মাথা ব্যাথা নিমেষেই দূর হয়ে গিয়েছে।
➢ কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় এলাচ খুব কাজের। এলাচ, বেল ও দুধ পানির সঙ্গে মিশিয়ে ভালো করে গরম করুন। দুধ যখন ঘন হয়ে আসবে তখন তা একটু ঠাণ্ডা করে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও জ্বর কমে যাবে।
➢ এলাচের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকে বয়সের ছাপ, রিংকেল, ফ্রি র্যাহডিকেল ইত্যাদি পড়তে বাঁধা প্রদান করে। এলাচ ত্বকের ক্ষতি পূরণেও বেশ সহায়ক।
➢ দেহের ক্ষতিকর টক্সিন দূর করে দিতে এলাচের জুড়ি নেই। এলাচের ডিউরেটিক উপাদান দেহের ক্ষতিকর টক্সিন পরিষ্কারে সহায়তা করে।