পরিচিতি: রোজ সকালে উঠে খালি পেটে মধুর সঙ্গে কাঁচা হলুদ খেলে রোজ অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। শরীর স্বাস্থ্য তো ভাল হয়ই, স্কিনও ভাল হয়। আমরা রান্নায় যে হলুদের গুঁড়া ব্যবহার করি তা সেদ্ধ হলুদ শুকিয়ে শিকড়কে চূর্ণ করে গাঢ় হলুদ বর্ণের গুঁড়া পাওয়া যায়। তবে যুগ যুগ ধরে হলুদ ব্যবহার হয়ে আসছে নানা রোগের ঔষধ হিসেবে। হলুদ এ্যান্টিসেপটিক হিসাবে কাজ করে।
জেনে নিন কাঁচা হলুদের ঔষধি ব্যবহারঃ
➢ ক্ষত সারাতে: সাধারণ কাটাছেঁড়ায় হলুদ এন্টিসেপটিক হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন। ক্ষত দ্রুত সারাতে বাটা হলুদে উষ্ণ পানি মিশিয়ে ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিন। দ্রুত সেরে উঠবে।
➢ সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে: হলুদে কারকিউমিনের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট উপাদান থাকে, যা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে খাদ্যনালিকে রক্ষা করে (Benefits Of Turmeric)। আমরা রোজ যে খাবার খাই, তার মধ্যে অনেক সময়ই নানা জীবাণু থেকে যেতে পারে। খাবারে কাঁচা হলুদ বা হলুদ গুঁড়ো ব্যবহার করলে তা খাদ্যনালিকে ক্ষতিকারক জীবাণুর সংক্রমণ থেকে বাঁচায় ও খাদ্যনালির প্রদাহের সম্ভাবনা কমায়।
➢ দাগ দূর করতে: রোদে পোড়া দাগ, বয়সের বলিরেখা, ত্বকের ছোপ ছোপ কালো দাগ দূর করতে কাঁচা হলুদের সাথে সামান্য পরিমান শসার রস মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগিয়ে রাখুন পনেরো-বিশ মিনিট। কিছুদিনের মাঝেই দাগ দূর হবে। ত্বকের উজ্জ্বলতাও বাড়বে।
হলুদের উপকারিতাঃ
➢ সর্দি-কাশিতে: সর্দি-কাশিতে হলুদ খুব উপকারী। এক গ্লাস গরম দুধের মধ্যে বাটা হলুদ, সামান্য মাখন এবং গোলমরিচ গুঁড়া মিশিয়ে পান করলে উপকার পাবেন। কাশিতো দূর হবেই, গলা ব্যথা থাকলেও সেরে যাবে।
➢ হাড়ের জন্য উপকারী: বহু প্রাচীন কাল থেকেই কাঁচা হলুদকে হাড়ের নানা রকম রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। বাড়িতে কারও হাত বা পা মচকে গেলে চুন-হলুদ লাগানো হয়। কাঁচা হলুদ বেটে ভাঙাহাড়ের জায়গায় লাগালে সেটাও উপকার দেয়। হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ ব্যথা, প্রদাহকে কমায়। কাঁচা হলুদে থাকা কারকিউমিন হাড়ের ক্ষয় রোধ করে মজবুত রাখে।
➢ অন্ত্রের রোগ সারাতে হলুদ মহৌষধ। অন্ত্রের রোগ থেকে মুক্তি পেতে এক চামচ পরিমাণ কাঁচা হলুদের রস পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন খান। অন্ত্রের রোগ সেরে যাবে।
➢ ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণ করে: হলুদে থাকা কারকিউমিন অ্যান্টি-ডায়াবেটিক এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া কাঁচা হলুদ ইনসুলিন হরমোনের ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে অগ্ন্যাশয়কে সুস্থ রাখে।
➢ ক্যান্সার প্রতিহত করে: কাঁচা হলুদে থাকা কারকিউমিন মারণ রোগ ক্যান্সার দূর করতে সাহায্য করে। কারকিউমিন ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি বন্ধ করে তাদের মৃত্যু ঘটায়। ফলে ক্যান্সারের সম্ভাবনা হ্রাস পায়। বিভিন্ন স্টাডি থেকে জানা গিয়েছে যে, নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেলে প্রায় ৫৬ রকম ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমে।
➢ স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমায়: হলুদের উপকারিতা জানতে নিয়ম করে কাঁচা হলুদ খেলে স্ট্রোকের সম্ভাবনাও এক ধাক্কায় অনেকটা কমে যেতে পারে। এ ছাড়া কাঁচা হলুদের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ স্ট্রোকের পরবর্তী চিকিৎসাতেও অনেক উপকার দেয়। কাঁচা হলুদ হার্টকেও বিভিন্ন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে (Kacha Holud Benefits)। এ ছাড়া অপারেশনের পরে যে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকে, তা-ও কাঁচা হলুদ কমাতে সাহায্য করে।
➢ দাঁতের যত্নে কাজে লাগে: কাঁচা হলুদ দাঁতের উপরে থাকা এনামেলের আস্তরণকে রক্ষা করে ও ক্ষয় থেকে দাঁতকে বাঁচায়। হলুদে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণাবলি থাকায় তা জীবাণুর থেকেও দাঁত ও মুখমণ্ডলকে রক্ষা করে। তাই টুথপেস্টে হলুদকে আবশ্যকীয় উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া মাড়ি থেকে রক্ত পড়া কমাতে ও মুখের ভেতরে ক্ষত সারাতে কাঁচা হলুদ নিয়ম করে খাওয়া যেতে পারে।
➢ সর্দি-কাশি দূর করে: হলুদে থাকা কারকিউমিন ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি-কাশি কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও কাঁচা হলুদ আমাদের শরীরের ইমিউনিটি বাড়ায় আর সর্দি-কাশি থেকে আরাম দেয়। কাঁচা হলুদে (Kacha Holud Benefits) থাকা ভিটামিন সি-ও সর্দি-কাশি কমাতে সাহায্য করে।
➢ অ্যানিমিয়া রুখে: কাঁচা হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট গুণ অ্যানিমিয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। মেয়েদের সাধারণত অ্যানিমিয়া হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, তাই মেয়েদের পক্ষে কাঁচা হলুদ নিয়ম করে খাওয়া খুবই উপকারী। এ ছাড়া, হলুদে থাকা কারকিউমিন লোহিত রক্তকণিকাকে রক্ষা করে। হলুদে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় তা রক্তে আয়রনের ঘাটতিকেও মেটাতে সাহায্য করে।
➢ হাঁপানি নিরাময়ে: হলুদে থাকা কারকিউমিন শ্বাসনালীর পথে থাকা বাধাকে দূর করে ও শ্বাস নেবার ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে হাঁপানি থাকলে নিয়ম করে কাঁচা হলুদ খেয়ে দেখুন, সহজে উপকার পাবেন।
➢ হেপাটাইটিস থেকে রক্ষা করে: কাঁচা হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-ভাইরাল গুণ হেপাটাইটিসের সময় যকৃতের প্রদাহ থেকে রক্ষা করে। এ ছাড়া হেপাটাইটিস ভাইরাসের থেকেও হলুদ রক্ষা করে। কাঁচা হলুদ নিয়ম করে খেলে তা যকৃতকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে ও যকৃতের স্বাভাবিক কাজকে বজায় রাখতে সাহায্য করেও দেহকে সুস্থ রাখে ।
➢ মাথা ব্যথা কমাতে: সাইনাস বা যে কোনও রকম মাথা ব্যথায় কষ্ট পেলেই এ বার থেকে এক গ্লাস হলদি দুধ খেয়ে নেবেন। দেখবেন, নিমেষে মাথা যন্ত্রণা উধাও কারণ হলুদের মধ্যে থাকা কারকিউমিন এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান শরীরের ভিতরের প্রদাহ কমায় । ফলে মাথা যন্ত্রণা কমতে সময় লাগে না।
➢ রক্ত পরিষ্কার করতে: হলুদ দেহের রক্ত পরিষ্কার করে বিশ্বাস করে আর্য়ুবেদ শাস্ত্র। রক্তের ঘাটতি বা রক্ত শুন্যতা দেখা দিলে হলুদ বাটা খেলে উপকার পাওয়া যাবে। হলুদ রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। সকালে এক চামচ কাঁচা হলুদের রস ও সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে নিয়মিত খেলে রক্তশূন্যতা দূর হবে।
➢ হলুদ গাছ ফাইটো-ইস্ট্রোজেন হরমোনের উৎস। কাঁচা হলুদের ব্যথা কমানোর ক্ষমতা, গুণ ডিপ্রেশন কাটানোর ক্ষমতা মেনোপজের সময় সাহায্য করে।
➢ থাইরয়েডের সম্ভাবনা কমায়: নিয়ম করে কাঁচা হলুদ খাওয়া আমাদের গলগণ্ডের সম্ভাবনা কমায়। এ ছাড়া থাইরয়েডের প্রদাহ থেকে বাঁচতে হলুদে থাকা কারকিউমিন সাহায্য করে।
➢ হাড়ের জন্য উপকারী: কাঁচা হলুদকে হাড়ের নানা রকম রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। বাড়িতে কারও হাত বা পা মচকে গেলে চটজলদি ঘরোয়া টোটকা হিসেবে চুন-হলুদ লাগানো হচ্ছে। এ ছাড়া কাঁচা হলুদ বেটে ভাঙাহাড়ের জায়গায় লাগালে সেটাও উপকার দেয়। হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ ব্যথা, প্রদাহকে কমায় এবং হাড়ের টিস্যুগুলিকে রক্ষা করে ও ভাঙা হাড় জোড়া লাগতে সাহায্য করে। এ দিকে, কাঁচা হলুদে থাকা কারকিউমিন হাড়ের ক্ষয় ও হাড়কে সুস্থ আর মজবুত রাখে। মেনোপজের সময় মহিলাদের যে হাড়ের ক্ষয় হয়, তা থেকেও কাঁচা হলুদ বাঁচায়।
➢ সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে: হলুদে কারকিউমিনের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট উপাদান থাকে, যা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে খাদ্যনালিকে রক্ষা করে । আমরা রোজ যে খাবার খাই, তার মধ্যে অনেক সময়ই নানা জীবাণু থেকে যেতে পারে। খাবারে কাঁচা হলুদ বা হলুদ গুঁড়ো ব্যবহার করলে তা খাদ্যনালিকে ক্ষতিকারক জীবাণুর সংক্রমণ থেকে বাঁচায় ।
ত্বকের যত্নে :
➢ কাঁচা হলুদ ও শুকনো কমলার খোসা একসঙ্গে বেটে সেই মিশ্রণ স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের জেল্লা ফেরাতে পারে এই স্ক্রাবার।
➢ সূর্যের তাপে ত্বকে ট্যান হয়েছে। এক কাজ করুন, কাঁচা হলুদ বাটার মধ্যে দই মিশিয়ে লাগান। পোড়া ভাব দূর হয়ে যাবে।
➢ উজ্জ্বল ত্বক পেতে হলুদ গুঁড়োর সঙ্গে অল্প লেবুর রস মিশিয়েও লাগাতে পারেন।
➢ ত্বকের ভিতরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে ও স্বাভাবিক ভাবে ত্বককে উজ্জ্বল করতে হলুদ আর মধুর মিশ্রণ মুখে লাগান। ভাল ফল পাবেন।
➢ যাঁরা ব্রণর সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের কাছে কাঁচা হলুদ দারুণ উপকারী একটি জিনিস। কাঁচা হলুদ বাটা, আঙুরের রস ও গোলাপ জল মিশিয়ে ব্রণর উপরে লাগান। একটু পরে ধুয়ে ফেলুন, ব্রণ মিলিয়ে যাবে ।
➢ কাঁচা হলুদের সঙ্গে দুধের সর মিশিয়ে, সেই মিশ্রণ মুখে মেখে রাখুন ফেস প্যাক হিসেবে। নিয়মিত লাগালে বলিরেখা দূর হয়।
হলুদের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া -
তবে বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেললে কিন্তু মুশকিল। সে ক্ষেত্রে পেট খারাপ, ডায়েরিয়া, বমি-বমি ভাব হতে পারে। তাই এ সব সমস্যা আগে থেকে থাকলে হলুদ খেলেও কম খাবেন।
গর্ভবতী মহিলা বা যাঁরা ব্রেস্ট ফিড করেন, তাঁরাও হলুদ খাওয়া এড়িয়ে যান। আর খেলেও খুবই কম পরিমাণে।
হলুদ অতিরিক্ত খেলে অ্যালার্জি হতে পারে।
অতিরিক্ত পরিমাণে হলুদ খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।