রসুনের ঔষধি গুন



পরিচিতি:   রসুন প্রায় প্রত্যেকের রান্নাঘরেই এক আবশ্যকীয় উপকরণ। প্রতিদিন ২ কোয়া রসুন খাওয়ার অনেক উপকারিতা। রসুন খাওয়ার প্রচলন আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে ভারত ও মিশরে আরম্ভ হয় তা ধীরে ধীরে এটি সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। কাঁচা রসুন অনেকেই একেবারে খাওয়া পছন্দ করেন না। মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার ভয়ে অনেকেই কাঁচা রসুনের কাছ থেকে দূরেই থাকেন। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় কাঁচা রসুনের স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক বেশি। রসুনের মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যার ফলে এটি একটি ওষধীয় গুণ সমৃদ্ধ গাছ বললেও একেবারেই ভুল হবেনা। রসুনে রয়েছে এলিসিন, সালফার, জিঙ্ক ও ক্যালসিয়াম যা স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য্য দুটির জন্যেই অনবদ্য। এছাড়া রসুনে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ সেলেনিয়াম যা ভিটামিন ই- এর সাথে মিলিত হয়ে এন্টি অক্সিডেন্ট বাড়িয়ে তোলে। এর ফলে শরীর ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা অর্জন করে। রসুন শরীরে স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালন করতে সাহায্য করে। রসুন খাওয়ার উপকারিতা পেতে হলে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তত ২ থেকে ৩ কোয়া রসুন অবশ্যই যোগ করা উচিত। নানা ধরণের শারীরিক সমস্যায় কাঁচা রসুনের জুড়ি নেই। ইউনিভার্সিটি অফ হেলথ অ্যান্ড মেডিক্যাল সাইন্সের গবেষণায় রসুনের এইসকল গুণাবলী প্রকাশ পায়। 


জেনে নিন প্রতিদিন মাত্র ২ কোয়া রসুন খাওয়ার উপকারিতাঃ

 ➢ হৃদপিণ্ডের সুস্থতায় কাজ করে। কোলেস্টেরল কমায়। এতে করে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে। - 

বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে রসুনের সাহায্যে প্রায় সব রকমের হার্টের সমস্যার মোকাবিলা করা যায়। রসুন হার্টের কোলেস্টরল, লিপিড ও সিরাম ট্রাইগ্লিসারাইড কমিয়ে প্রচুর পরিমাণ এন্টি অক্সিডেন্ট বাড়িয়ে তোলে। এর ফলে প্লেটলেট সংখ্যাও সঠিক থাকে।

 ➢ শিরা উপশিরায় প্লাক জমতে বাঁধা প্রদান করে। রক্ষা করে শিরা উপশিরায় মেদ জমার মারাত্মক রোগ অথেরোস্ক্লেরোসিসের হাত থেকে।

 ➢ উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যা দূর করে। 

 ➢ কিডনির ইনফেকশনের জন্যে দারুণ কার্যকরী। যেসব প্যাথোজিনের জন্যে ইউ.টি.আই হয়ে থাকে সেগুলি রসুনের দ্বারা রোধ করা যায়। এছাড়া ই- কোলাই ইনফেকশনও এই রসুনের সাহায্যে রোধ করা যায় 

 ➢ গেঁটে বাতের সমস্যা থেকে রক্ষা করে। 

 ➢ গ্যাসের সমস্যা একটি খুব সাধারণ অথচ ব্যথাদায়ক সমস্যা যা রোজকার জীবনকে উলটপালট করে দিতে পারে। এই ধরণের গ্যাসের সমস্যা হলে রসুন খুব কার্যকরী। রসুন ব্যাকটিরিয়া দূর করে ইন্টেস্টাইনের সমস্যা রোধ করে। এছাড়া রসুন পাইলোরি ইনফেকশনের বিরুদ্ধেও কাজ করে। 

 ➢ ফ্লু এবং শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। 

 ➢ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান দেহে খারাপ ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ, জন্ম এবং বংশবিস্তারে বাঁধা প্রদান করে। 

 ➢ যক্ষ্মা রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। 

 ➢ দেহের বিভিন্ন অংশের পুঁজ ও ব্যথাযুক্ত ফোঁড়ার যন্ত্রণা কমায়। 

 ➢ যৌনমিলনের অসাবধানতা বশত রোগ ট্রিকোমোনিয়াসিসের হাত থেকে রক্ষা করে।

 ➢ হজমশক্তি বাড়ায় ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।

 ➢ কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। 

 ➢ গলব্লাডার ক্যান্সার মুক্ত রাখে। 

 ➢ স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। 

 ➢ রেক্টাল ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা করে। 

 ➢ প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। 

 ➢ পরিপাকতন্ত্রের নানা সমস্যা দূর করে।

 ➢ ইষ্ট ইনফেকশন দূর করে। 

 ➢ কানে ব্যথা হওয়ার মূল কারণ হল ইনফেকশন। রসুনে রয়েছে এন্টি মাইক্রোবিয়াল ও এন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা কানের ইনফেকশনের বিরদ্ধে কাজ করে কানের ইনফেকশন সারিয়ে তোলে। ফলে কানে ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

 ➢ শিরা উপশিরায় জমাট বাঁধা রক্ত ছাড়াতে সহায়তা করে।

 ➢ ক্ষুধামন্দা ভাব দূর করে। 

 ➢ দেহের অভ্যন্তরীণ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং কৃমি ধ্বংস করে। 

 ➢ চোখে ছানি পড়ার হাত থেকে রক্ষা করে। 

 ➢ হাতে পায়ে জয়েন্টের ব্যথা দূর করে এবং বাতের ব্যথা সারায়।

 ➢ রসুন ডায়বেটিস কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। এটি শরীরে গ্লুকোসের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ার ফলে কয়েক দিনের মধ্যেই ডায়বেটিস কমতে শুরু করে। 

 ➢ স্টাফিলোকোক্কাস ইনফেকশন দূর করে। 

 ➢ সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা ও শ্বাস কষ্টের জন্যে রসুন দারুন উপকারি। রসুন ফুসফুসের জমাটভাব দূর করে বুকে বসে যাওয়া কফ নিমেষে তরল করে বের করে দেয়। এমনকি, যাদের শ্বাস কষ্ট বা এসাথেমার সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও রসুন বিশেষভাবে সাহায্য করে 

 ➢ দাঁতের ব্যথা সারাতে সহায়তা করে। 

 ➢ ব্রণ সমস্যা দূরে রাখে। 

 ➢ আঁচিলের সমস্যা সমাধান করে।

 ➢ দাদ, খোস-পাঁচড়া ধরণের চর্মরোগের হাত থেকে রক্ষা করে।

 ➢ চামড়ায় ফোসকা পড়ার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয়। 

 ➢ রসুনের ফাইটোনসাইড অ্যাজমা সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

 ➢ দীর্ঘমেয়াদী হুপিং কাশি ও ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। 

 ➢ ঘুম না হওয়া, অনিদ্রা রোগ মুক্ত রাখে। 

 ➢ অনেক সময় নখে ইনফেকশন হয়। কালো দাগ হয়। সেক্ষেত্রে টানা তিনদিন রসুন খেলে এই সমস্যার সমাধান হয়। দেহ থেকে অতিরিক্ত টক্সিকও বেরিয়ে যায়। 

 ➢ ত্বককে গুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। মুখে রসুন মাখলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। স্কিনের যে কোনও সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে।

 ➢ পোকামাকড়ে কামড়ানো কিংবা বোলতা, মৌমাছিতে হুল ফোটালে ব্যথা নিরাময়েও রসুনের কোয়া খুব উপকারী। 

 ➢ ওজন কমানোর জন্যে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ কোয়া রসুন খাওয়ার অভ্যেস করুন। 

 ➢ লিভারে প্রচুর পরিমানে ফ্যাট জমে গেলে তা অত্যন্ত ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে। রসুন লিভারের এই ফ্যাট সংক্রান্ত সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় কারণ এটি এলকোহল মুক্ত। এছাড়া এতে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট যা ফ্যাটি লিভার হওয়া রোধ করে 

 ➢ দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। - রসুনে রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট যা এন্টি অক্সিডেন্ট উৎপন্ন করতে সাহায্য করে। এর ফলে শরীরের সমস্ত বিষাক্ত পদার্থগুলি অনায়াসে বেরিয়ে আসে ও ডি এন এ সফলভাবে তৈরি হয়। সেই কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়ে ওঠে

রসুনের ব্যবহারে কিছু সতর্কতাঃ 

 ➢ ১) দিনে ২ কোয়ার বেশি কাঁচা রসুন খাওয়া যাবে না। রান্নায় রসুন ব্যবহার হলেও দিনে মাত্র ২ কোয়া রসুন খাওয়া যায়। 

 ➢ ২) রসুনে অ্যালার্জি কিংবা কোনো বিশেষ কারণে রসুন খাওয়া বন্ধ থাকলে তাদের রসুন না খাওয়াই ভালো।

 ➢ ৩) অতিরিক্ত রসুন খেলে নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ, বমিভাব হতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম