পরিচিতি: লবঙ্গ খুবই ঝাঝালো, উপাদেয়, ঘ্রাণময় একটি মসলা। লবঙ্গের বৈজ্ঞানিক নাম Syzygium aromaticum যুগ যুগ ধরে আর্য়ুবেদিক শাস্ত্রে লবঙ্গের বহুল ব্যবহার রয়েছে, মূলত ইন্দোনেশিয়ায় এর জন্ম। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ঘুরে বিশ্বের সর্বত্র এই মসলা বিখ্যাত । ইন্দোনেশিয়ায় এর আদিবাস হলেও ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলংকায় সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়। সাধারণত রান্নার সময় এই মসলাটি ফোড়ন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শুধু মসলা নয় ওষধি গুনেও লবঙ্গের বেশ গুরুত্ব। গরম মশলার সাথেও লবঙ্গ থাকে তা রান্নার স্বাদ বাড়ায়। এর আরেক নাম লং। তাই এই লবঙ্গ চায়ের নানা গুণের কথাও আমাদের অজানা। মার্চ থেকে জুন মাসের ভেতরে ফুল থেকে ফল হয়। পাকার আগেই বৃতিসহ ফুলের কুঁড়ি সংগ্রহ করা হয়। আর তা রোদে শুকিয়ে আমাদের পরিচিত লবঙ্গ তৈরি হয়। লবঙ্গ গাছ ৩০ থেকে ৪০ ফুট উঁচু হতে পারে। চিরসবুজ, বহুসংখ্যক নরম ও নিম্নগামী ডাল চারদিক ছড়িয়েপড়ে। ছাল ধূসর বর্ণ ও মসৃণ। পাতা সরল ও বিপরীত। উপবৃত্তাকার, পাঁচ ইঞ্চির মতো লম্বা। কচি পাতা লালচে রঙের হয়। ফল মাংসল, প্রায় এক ইঞ্চি লম্বা হয়।
ম্যাঙ্গানিজ, লোহা, সেলেনিয়াম, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজ পদার্থও রয়েছে এতে যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। লবঙ্গ পরিপাকনালীর জন্য বিশেষভাবে উপকারী। বদহজম, বায়ু, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটফাঁপা দূর করতে কার্যকরী লবঙ্গ। এছাড়াও দাঁতের মাড়ি, দাঁত জীবাণুমুক্ত রাখে লবঙ্গ। লবঙ্গ দিয়ে দাঁতের ব্যথা দূর করার তেল তৈরি হয়। এছাড়া লবঙ্গর মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ পলিফেনলস। মানবশরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘাটতি পূরণ করে এই পলিফেনলস।
লবঙ্গের গুণাগুন বর্ণনা করা হলঃ
➢ তুলসি, পুদিনা, এলাচ ও লবঙ্গ মেশানো জলের শরবত মানসিক চাপ দূর করতে সহায়তা করে। লবঙ্গ ব্রণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ব্রণের দাগ দূর করতেও লবঙ্গের পেস্ট খুব কার্যকর।
➢ শরীর ও মনের ক্লান্তি ঝরিয়ে দেয়। যৌনরোগেও এর বহুল ব্যবহার আর্য়ুবেদিক শাস্ত্রে রয়েছে।
➢ পেট ফাঁপা রোগ নিরাময়ে লবঙ্গ জলে ফুটিয়ে পান করলে পেট ফাঁপা থেকে উপসম পাওয়া যায়।
➢ এটি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করতে খুবই কার্যকর। সর্দি-কাশি খুব কমন একটা ব্যাপার। সর্দিকাশির মহৌষধ হিসেবে লবঙ্গ বহুবছর ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
➢ খিদে বাড়ায়, রুচীর পরিবর্তণ আনে।
➢ কৃমি জাতীয় রোগ প্রতিরোধ করে।
➢ এটা পচনরোধক - সাইনোসাইটিস রোগে লবঙ্গ খুব উপকারি। সাইনোসাইটিসের রোগীদের চিকিৎসায় লবঙ্গ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
➢ এটা শরীরে উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে।
➢ গলার সংক্রমণরোধক হিসেবে কাজ করে।
➢ যৌন রোগে আক্রান্ত মানুষের জন্য খুবই উপকারি।
➢ দাতের ব্যাথায় দারুণ কার্যকর।
➢ লবঙ্গ বমিবমি ভাব দূর করে।
➢ পায়োরিয়ার ক্ষেত্রে উপকারী।
➢ ক্রিয়েটিভিটি এবং সেন্টাল ফোকাস বাড়ায়।
➢ লবঙ্গের ঔষধিগুণ প্রচুর। হজম এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যায় শত-শত বছর ধরে লবঙ্গ একটি কার্যকর ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন A, C, K এবং B কমপ্লেক্স। এসবের পাশাপাশি ব্লাড সুগারের রোগীদের জন্যও দারুণ উপকারী লবঙ্গ। ২০০৬-এর একটি গবেষণায় প্রমাণ হয়েছিল, ডায়াবেটিস রোগীরা যদি রোজ ১ থেকে ৩ গ্রাম লবঙ্গ খান, তবে তাঁদের সুগারের পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়।
➢ লবঙ্গ তেলে রয়েছে ব্যকটেরিয়া নামক জিবানু ধ্বংসের ক্ষমতা।
➢ লবঙ্গ দাঁতের ব্যথা দূর করে, মাড়ির ক্ষয় নিরাময় করে