আমি সাধারণত মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত দৈনন্দিন সমস্যাগুলো নিয়ে লিখছি। এসব সমস্যা হয়তো অনেকের কাছেই খুবই অপরিচিত বা অদ্ভুত শোনায় আবার কেউ কেউ হয়তো জেনে বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় "টার্ম" জানার পর ভাবেন এ তো আমারো হয়!
আচ্ছা এবার আসল কথায় আসি। টাইটেল দেখেই বুঝেছেন আমি আজ প্যানিক এটাক (Panic attack) সম্পর্কে কিছু লিখতে চেষ্টা করবো।
প্যানিক এটাক হলো এমন এক মানসিক অবস্থা যাতে হঠাৎ করেই কোনো একটা মুহুর্তে হঠাৎ করে কেউ ভয় পেতে শুরু করে। এই এপিসোড বা মুহুর্তটা ব্যক্তিভেদে কিছুক্ষণ স্থায়ী হয় এবং "অজানা ভয়" লাগার সাথে সাথে তার কিছু শারীরিক অবস্থা ও পরিবর্তন হয়ে থাকে। কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা বা মুহুর্ত শরীরে এই অবস্থাকে "trigger" করতে পারে।
সাধারণত অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, বিষন্নতা অনেকদিন ধরে থেকে গেলে এরকম হতে পারে। এছাড়াও কোনো কোনো সময়ে হৃদযন্ত্রের দূর্বলতাও একটি কারণ হতে পারে।
স্বাভাবিকভাবে মানুষ তার জীবনকালে একটি বা দুইটি প্যানিক এটাকের অভিজ্ঞতা পেতে পারে। তবে এর বেশি সমস্যা হলে অবশ্যই পেশাদার বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। একমাত্র পেশাদার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারই সঠিক কারণ নির্ভূলভাবে কম সময়ে চিহ্নিত করতে সক্ষম।
প্যানিক এটাক হওয়ার ক্ষেত্রে শারীরিক কিছু উপসর্গ সাধারণত দেখা যায়:
*আসন্ন বিপদ আপদ, নিজের ক্ষতি/ধ্বংস বা মৃত্যু নিয়ে অমূলক ভয় পেতে শুরু করা।
*নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার অথবা মৃত্যু ভয়
*খুব দ্রুত এবং ধুপধাপ(pounding) হার্টবিট হওয়া
*ঘেমে যাওয়া
*হাত পা কাঁপা অথবা ভেতর থেকে পুরা শরীরে কম্পন অনুভব করা
*নিঃশ্বাস নিতে সামান্য কষ্ট হওয়া কিংবা গলায় কিছু আটকে আছে এমন অনুভব করা
*শরীরে ঠান্ডা লাগা বা অনুভব করা
*গরম ভাপ লাগা, কান গরম হয়ে যাওয়া
*মাথা ঘোরা
*তলপেটে ক্র্যাম্প বা ব্যথা
*বুকে ব্যথা
*মাথা ব্যথা
*মাথা বন বন করে ঘোরা (Dizziness), মাথায় হালকা অনুভব হওয়া বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
*অসার অনুভব বা শরীর শির শির করা
*অবাস্তব কিছু অনুভূতি বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকা
এক্ষেত্রে খেয়াল রাখা প্রয়োজন প্যানিক এটাকে সাধারণত হার্ট এটাক হচ্ছে বলেও মনে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে একটা সুক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে।
হার্ট এটাকে সাধারণত বুকে ব্যথা শুরু হয়ে আস্তে আস্তে বামদিকে স্থানান্তর হতে থাকে এবং পর্যায়ক্রমে তার বাম হাত এবং বাম পাশে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু প্যানিক এটাকে বুকের ব্যথা শুধু বুকের মাঝখানে "আটকে" থাকে। আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস নিলে এবং ছাড়তে পারলে এটা উপশম হয়ে যায়।
যদি সাথে কেউ থাকে তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বলে এই ধীরে ধীরে নিঃশ্বাসের অনুশীলন করানো যেতে পারে। কোনোভাবেই তাড়াহুড়া করে নিঃশ্বাস নেওয়া যাবে না। আর একা থাকলেও আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করা যায়।
সাধারণত প্যানিক এটাকে একা থাকলে এই প্রচন্ড আতংক বা মৃত্যুভয় বা অস্বাভাবিক কোনো ক্ষতি হওয়ার আশংকাটাই ব্যাপকভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাঁধার সৃষ্টি করে। সাধারণত অনেকেই এরকম কোনো মুহুর্তে বা কাজের সময়ে প্যানিক এটাকে আক্রান্ত হলে সেসব সামাজিক পরিবেশ বা স্থানটি বর্জন করে চলতে চান যাতে এই সম্মুখিন না হন।
প্রকৃতপক্ষে এটি কোনো সমাধান নয়। এক্ষেত্রে প্যানিক এটাকের সময় নিজেকে বা আশেপাশের ব্যক্তিদের যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে।
মূলত প্যানিক এটাক হয়ে অভ্যস্ত ব্যক্তি নিজেও জানেন তার প্যানিক এটাক হচ্ছে এবং তিনি কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হবেন। যদি না বোঝেন তবে সেভাবে তাকে প্রস্তুতি নিতে হবে, যে এই সময় পার হবে।
আর আশেপাশের ব্যক্তিদের ও যথেষ্ট ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়ে বলতে হবে, "তুমি নিরাপদ আছ। কিছুক্ষণ পর সবকিছু ঠিক হবে।" তাকে ইতিবাচকভাবে আসস্ত করা তার প্যানিক এটাকের সময়কে কমিয়ে আনতে সহায়তা করবে।
অনেকেই আছেন ওই ব্যক্তির অমূলক ভয়কে গুরুত্ব দেন না। ধুর তোর কি হইছে, হুদাই ভয় পাস। এরকম কথা কখনোই প্যানিক এটাক হচ্ছে এরকম ব্যক্তির সাথে বলা যাবে না। এতে হিতে বিপরীত হয়।
আমার এই লেখার মাধ্যমে একটা অনুরোধ, মানুষের শরীরের মতো মনেও অসুস্থতা থাকে। মস্তিস্কে নিয়মিত বিভিন্ন চাপ পড়ার কারণে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। সব মানুষের মানসিক শক্তি বা মানতে পারার ক্ষমতা এক হবে না, এটুকু বুঝতে হবে।
তাই আশেপাশে সকল প্রাণের জন্য সহমর্মিতা চর্চা করি, তাদের বলি-"Hold on a little more, fighter. Keep fighting... "
তথ্যসূত্র:
(1) https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/panic-attacks/symptoms-causes/syc-20376021#:~:text=A%20panic%20attack%20is%20a,heart%20attack%20or%20even%20dying.
(2) https://www.webmd.com/
Writer: Tasnim Binta Saif