হলিউডের মুভি আমরা কম-বেশি সবাই পছন্দ করি। আর মুভি যদি অ্যাকশন বা যুদ্ধের হয় তাহলে তো কথাই নেই।কিছু কিছু মুভিতে দেখা যায় রাতের কোনো যুদ্ধে একটা বিশেষ চশমা পরে যা দিয়ে অন্ধকারেও দেখতে পারে। অবশ্য বাংলা সিনেমায় কিন্তু এসব পাওয়া যাবে না। আমাদের নায়কদের চোখ মারাত্মক।তারা এসব পরে লজ্জা পেতে চান না। যাই হোক, চলুন পড়ে আসি নাইট ভিশনের ইতিবৃত্ত।
নাইট ভিশন চশমা কী?
নাইট ভিশন চশমা নাম শুনলেই জিনিসটা কি তা বোঝা যায়।অর্থাৎ যে চশমা দিয়ে অন্ধকারেও দেখা সম্ভব সেটাই নাইট ভিশন।কিছু কিছু প্রাণি কিভাবে অন্ধকারে দেখতে পায়, আমরা কেন পাই না ?
নাইট ভিশন নিয়ে জানতে গেলে আগে চোখ নিয়ে কিছু কথা বলতে হয়। আমরা সবাই জানি আমাদের মানে মানুষের চোখে রড ও কোন কোষ নামে দুই ধরনের আলোক সংবেদী কোষ রয়েছে। এর মধ্যে রড কোষগুলো অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং খুব অল্প আলোয় কাজ করতে পারে কিন্তু রং শনাক্ত করতে পারে না।মূলত এই রড কোষগুলো আবছা আলোয় দেখতে সাহায্য করে ঠিকই কিন্তু একদম ঘুটঘুটে অন্ধকারে আমরা দেখতে পাই না।তবে নিশাচর প্রাণিরা কিন্তু ঠিকই রাতে দেখতে পায়। এর কারণ নিশাচর প্রাণিদের চোখে ট্যাপেটাম লুসিডাম(Tapetum Lucidum)থাকে। এটি অনেকটা আয়নার মতো কাজ করে।এই ট্যাপেটাম কোনো আলোকে প্রতিফলিত করে আবার চোখেই পাঠিয়ে দেয়।ফলে তাদের রেটিনায় সাধারণের চেয়ে দ্বিগুণ আলো পৌছায়।শুধু তাই নয়, অন্যান্য প্রাণিদের তুলনায় এদের চোখে রড কোষের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এজন্য খুব কম আলো বা অন্ধকারে এরা ভালোই দেখতে পায়।
নাইট ভিশনের ইতিহাস:
১৯২৯ সালে হাঙ্গেরিয়ান পদার্থবিদ ক্যালমান টিহানি যুক্তরাজ্যের অ্যান্টি এয়ারক্রাফট ডিফেন্সের জন্য একটি ইনফ্রারেড সেনসিটিভ টেলিভিশন ক্যামেরা উদ্ভাবন করেন। নাইট ভিশন প্রযুক্তি সর্বপ্রথম ব্যবহৃত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে।১৯৩৯ সালে জার্মান সেনাবাহিনী এ ধরনের ডিভাইসের সাথে পরিচিত হয়।১৯৪৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে তারা প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে একটি ইনফ্রারেড নাইট ভিশন ডিভাইস ব্যবহার করে।পরবর্তীতে ভ্লাদিমির কে. জোওরিকিনস এবং রেডিও করপোরেশন অব আমেরিকার হাতে এটি উন্নতি লাভ করে।১৯৭০ সালের দিকে নাইট ভিশনে থার্মাল ইমেজিং সিস্টেম যুক্ত হয়।এভাবে আস্তে আস্তে এ প্রযুক্তি বিকশিত হয়েছে।বর্তমান সময়ের নাইট ভিশন পূর্বের তুলনায় ৫০০০০গুণ বেশি আলো ক্যাপচার করতে পারে।কিভাবে কাজ করে?
আমরা যাকে ঘুটঘুটে অন্ধকার বলি সেখানেও কিন্তু আলো থাকে।মানুষ ৪০০-৭০০ ন্যানোমিটারের মধ্যের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো দেখতে পায়।আমরা যেটাকে অন্ধকার বলি সেখানেও কিন্তু ইনফ্রারেড বা আল্ট্রা ভায়োলেট লাইট থাকতে পারে।এগুলো খালি চোখে দেখা যায় না। তাই যদি আমরা অন্ধকারে দেখতে চাই তবে এ ই আলোক রশ্মিকে ক্যাপচার করতে হবে তারপরে সেই আলোক রশ্মির শক্তি আরো বাড়িয়ে বা বুস্ট করে চশমার সামনে ফেলতে হবে, যাতে চোখ তা দেখতে পায়। এখন প্রশ্ন হলো বুস্ট কিভাবে করব ?আমরা বুস্ট করব ইলেক্ট্রিসিটি ব্যবহার করে ।যদি আমরা আলোকে ইলেক্ট্রিসিটিতে পরিবর্তিত করে, ইলেক্ট্রিসিটিকে বুস্ট করিয়ে, আবার বুস্ট করা ইলেক্ট্রিসিটিকে আলোতে পরিণত করি তবে অনেক সহজেই আগের চেয়ে উজ্জ্বল আলো পাওয়া সম্ভব, এতে রাতের ক্ষীণ আলোকে উজ্জ্বল করিয়ে, অন্ধকারেও দেখা সম্ভব হবে।
নাইট ভিশন দুটি প্রযুক্তিতে কাজ করে।
১. ইমেজ ইনহ্যানসমেন্ট প্রযুক্তি২. থার্মাল ইমেজিং প্রযুক্তি
১. ইমেজ ইনহ্যানসমেন্ট প্রযুক্তি
নাইট ভিশন চশমা ইমেজ ইনহ্যান্সমেন্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্ধকারে অদৃশ্যমান আলো গুলোকে সংগৃহীত করে, এবং সেই আলোকে বুস্ট করে আলো উজ্জ্বল করে তোলে, ফলে অন্ধকারে দেখা যায়। তবে অনেক সময় যথেষ্ট আলো না থাকায় এই প্রযুক্তি কাজ নাও করতে পারে।
২. থার্মাল ইমেজিং প্রযুক্তি
থার্মাল ইমেজিং, ইমেজ ইনহ্যানসমেন্ট থেকে অনেক বেশি কার্যকারী। এই প্রযুক্তি তাপের সাথে জড়িত। প্রত্যেকটি গরম বস্তু, সাথে মানুষের শরীর থেকে কিছু উত্তাপ ইনফ্রারেড লাইট আকারে নির্গত হয়। এখন থার্মাল ইমেজিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে চলা নাইট ভিশন চশমা সেই গরম বস্তু হতে নির্গত হওয়া ইনফ্রারেড লাইট ক্যাপচার এবং একটি দৃষ্টিক্ষেত্র তৈরি করে। থার্মাল ইমেজিং প্রযুক্তি তখন ব্যবহার করা হয় যখন অন্ধকারে কোন মানুষকে খোঁজা হয়। যদিও বেশিরভাগ নাইট ভিশন ডিভাইস ইমেজ ইনহ্যান্সমেন্ট প্রযুক্তির উপর কাজ করে।
নাইট ভিশনে সবুজ কেন দেখি ?
আসলে মানুষের চোখ সবুজ আলো পছন্দ করে।আগেই বলেছি মানুষের চোখ ৪০০-৭০০ ন্যানোমিটার এর মধ্যের তরঙ্গদৈর্ঘে্যর আলো দেখতে পায়।অন্যদিকে আমরালাল, নীল ও সবুজ – এই তিনটি প্রাথমিক রং উপলব্ধি করতে পারি।এই তিনটি রঙের মধ্যে নীলের তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম(৪০০nm) এবং লালের সবচেয়ে বেশি (৭০০nm)। আর সবুজের জন্য এই মান ৫৫৫nm এর মধ্যে যা আমাদের দেখার রেঞ্জের মাঝামাঝি দিকে- বেশিও না কমও না।তাই আমাদের চোখ অন্যান্য আলোর চেয়ে সবুজ আলোর দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে।
এ কারণেই নাইট ভিশন চশমা বা ক্যামেরা থেকে আসা ছবিকে গ্রিন স্ক্রিন করা হয়।
কতদূর দেখা যায়?
একটি ভালো মানের নাইট ভিশন গগলস দিয়ে একদম মেঘবিহীন জোছনাবিহীন অন্ধকার রাতে ২০০ গজ পর্যন্ত দেখা সম্ভব।তো এই হল আমাদের নাইট ভিশন চশমা।
1.https://en.wikipedia.org/wiki/Night_vision
2.https://edition.cnn.com/2017/06/05/health/colorscope-green-environment-calm/index.html#:~:text=We%20see%20green%20with%20ease,waves%20of%20light%20into%20color.&text=The%20retina%20in%20a%20human,known%20as%20the%20visible%20spectrum.
3.https://northernwoodlands.org/outside_story/article/night-vision-how-animals-see#:~:text=Many%20nocturnal%20animals%20have%20a,second%20chance%20to%20sense%20it.
4.https://www.smithsonianmag.com/innovation/seeing-dark-history-night-vision-180963357/
Writer: Soumik Mondal