বিড়াল-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়


🔴লেখক পরিচিতিঃ
নামঃবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
উপাধিঃ সাহিত্যসম্রাট। প্রথম সার্থক উপন্যাস রচনাকারী।
জীবনকাল- (২৬শে জুন,১৮৩৮– ৮ই এপ্রিল, ১৮৯৪)
জন্মস্থান- পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনার কাঁঠালপাড়া গ্রাম।
মৃত্যুস্থান- কলকাতা।
পেশা- ম্যাজিস্ট্রেট (খুলনায়)
পিতা- যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ( ডেপুটি কালেক্টর)
সম্পাদিত পত্রিকা- বঙ্গদর্শন (১৮৭২)
রচনাঃ মোট গ্রন্থসংখ্যা- ৩৪.
★উপন্যাস: (দুর্গেশনন্দিনী), (কপালকুণ্ডলা)ও (মৃণালিনী) কে নিয়ে (আনন্দমঠ) এর (বিষবৃক্ষ) এর নিচে বসে থাকা (রাজসিংহ) (চন্দ্রশেখর) এর কাছে (কৃষ্ণকান্তের উইল) করাতে যায়। (দেবী চৌধুরাণী) ও (সীতারাম) এর সাথে ইংরেজ (Rajmohons wife) ও সেখানে স্বাক্ষী হিসেবে উপস্থিত হয়।
★গদ্যগ্রন্থ: বঙ্কিম (সাম্য) প্রতিষ্ঠায় (কমলাকান্তের দপ্তর) এ (লোক রহস্য), (বিজ্ঞানরহস্য), (কৃষ্ণচরিত্র) ও (বিবিধ প্রবন্ধ) নিয়ে গবেষণা করেন।

🔴গুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রশ্নাবলিঃ
নেশায় বুঁদবুঁদ কমলাকান্ত নিজেকে 'নেপোলিয়ন' এবং বিড়ালকে 'ডিউক অফ অয়েলিংটন' মনে করেছিল।
চঞ্চল ছায়া প্রেতবৎ নাচিতেছে।
'বিশেষ অপরিমিত লোভ ভাল নহে' উক্তিটি– কমলাকান্তের।
দুধ রেখে গিয়েছিল (গোয়ালা)–প্রসন্ন, সেই দুধ ছিল (গাভী) –মঙ্গলার।
বিড়ালের 'মেও' ডাকে কি ছিল?–ব্যঙ্গ, মন বুঝিবার অভিপ্রায়।
বিড়ালকে তাড়াইয়া মারতে যাওয়া কিরূপ প্রথা?– চিরাগত প্রথা।
মার্জারী কমলাকান্তকে স্বজাতিমন্ডলে কি বলিয়া উপহাস করতে পারে?– কাপুরুষ।
অতএব কীসের ন্যায় আচরণ করা বিধেয়?– পুরুষের ন্যায়।
অনেক অনুসন্ধানে কি আবিষ্কার করে কমলাকান্ত মার্জারীর দিকে ধাবমান হলো?– এক ভগ্ন যষ্টি।
মার্জারী কমলাকান্তকে দেখে ভয় পেল না কেন?– কমলাকান্তক্র চিনতো বলে।
মার্জারী কি ছাড়া মানুষের জ্ঞানোন্নতির উপায়ান্তর দেখে না? – শিক্ষালাভ।
ধর্ম কি?– পরোপাকারই পরম ধর্ম।
কমলাকান্তের ধর্ম সঞ্চয়ের মূলীভূত কারণ কে?– মার্জারী।
কারা অনেক চোর অপেক্ষাও অধার্মিক?– বড় বড় সাধু।
চোরে যে চুরি করে,সে অধর্ম কার?–কৃপণ ধনীর।
চোর অপেক্ষা কৃপণ ধনী কত গুণ বেশি দোষী?– শত গুন।
তেলা মাথায় তেল দেয়া মনুষ্য জাতির–রোগ।
তাহাদের রূপের ছটা দেখিয়া, অনেক মার্জার কি হয়ে পড়ে?–কবি।
মার্জারীর- উদর কৃশ, অস্থি পরিদৃশ্যমান, লাঙ্গুল বিনত, দাঁত বাহির হইয়াছে, জিহ্বা ঝুলিয়া পড়িয়াছে, চামড়া কালো (কৃষ), মুখ শুষ্ক, ক্ষীণ সকরুণ 'মেও মেও' ডাক।
চোরের দণ্ড আছে, --------- কি দণ্ড নাই?– নির্দয়তার।
কমলাকান্ত দূরদর্শী কেন?– আফিংখোর বলে।
একজনে কত জন দরিদ্রের আহার্য সংগ্রহের অভিযোগ আনা হয়?– পাঁচ শত জনের।
মার্জারীর কথা কেমন?– সোশিয়ালিস্টিক, সমাজবিশৃঙখলার মূল।
সমাজের ধনবৃদ্ধির অর্থ– ধনীর ধনবৃদ্ধি।
কস্মিনকালেও কাকে বুঝানো যায় না?– নৈয়ায়িক বা বিচারককে।
মার্জার– সুবিচারক ও সুতার্কিক
মার্জারী কমলাকান্তকে কত দিন উপবাস করতে বলে?– তিন দিন।
মার্জারী কমলাকান্তকে কোথায় ধরা পড়ার কথা বলে?– নসীরাম বাবুর ভাণ্ডারঘরে।
'যখন বিচারে পরাস্ত হইবে,তখন গম্ভীরভাবে উপদেশ প্রদান করিবে'– বিজ্ঞ লোকের মত।
কমলাকান্ত বিড়ালকে কি অনুসারে উপদেশ দেয়?– প্রথানুসারে।
পাঠার্থে কমলাকান্ত বিড়ালকে কার গ্রন্থ দেয়?– নিউমান ও পার্করের।
আফিঙের মহিমা বোঝা যাবে– কমলাকান্তের দপ্তর পড়লে।
প্রসন্ন কাল– কিছু ছানা দিবে যা জলযোগে ভাগ করে খাওয়ার সুপারিশ করে কমলাকান্ত।
হাঁড়ি খাওয়ার কথা কি অনুসারে বিবেচনা করা যাবে?– ক্ষুধানুসারে।
বিড়াল 'মেও' ডেকেছিল– ১৩বার।

🔴অনুধাবন মূলক লাইনঃ
"কেহ মরে বিল ছেঁচে, কেহ খায় কই"– অধিকারহরণের বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
"তোমরা মনুষ্য, আমরা বিড়াল, প্রভেদ কি?"– অধিকার সচেতন মনোভাব প্রকাশের মাধ্যমে সাম্য প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় প্রকাশ।
"পরোপকারই পরম ধর্ম"– সকল ধর্মের মূল বিষয় অপরের কল্যাণ সাধন।
"তেলা মাথায় তেল দেয়া মনুষ্যজাতির রোগ"– যে খেতে চায় না তাকে জোড় করা আর ক্ষুধার্তকে খাবার থেকে বঞ্চিত করার সামাজিক অনিয়ম প্রতিফলিত।
"তাহাদের রূপের ছটা দেখিয়া, অনেক মার্জার কবি হইয়া পড়ে" – কোন গরীব যদি ধনীদের প্রয়োজনে কাজে লাগে তাহলে সেই গরীবের উন্নতি দেখে অন্য গরীবদের ঈর্ষান্বিত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছেন।
"খাইতে দাও— নহিলে চুরি করিব" – অধিকার সচেতন মনোভাব।
"সমাজের ধনবৃদ্ধির অর্থ ধনীর ধন বৃদ্ধি" – ধনী আরো ধনী আর গরীব আরো দরিদ্র আরো দরিদ্র হওয়ার সামাজিক অনিয়ম ফুটে উঠেছে।
"একটি পতিত আত্মাকে অন্ধকার হইতে আলোকে আনিয়াছি, ভাবিয়া কমলাকান্তের বড় আনন্দ হইল" – অভাবে স্বভাব নষ্ট কথার মতো বিড়াল ক্ষুধার তাড়নায় চুরিবৃত্তিকে বাছাই করছিল, কমলাকান্ত উপদেশ প্রদানের মাধ্যমে বিড়ালকে সেই চুরিবৃত্তি থেকে ফেরাতে পেরেছে ভেবে মনে মনে আনন্দিত হলো।

🔴শব্দার্থঃ
মার্জার- বিড়াল।
ষষ্টি- লাঠি।
ব্যুহ রচনা- প্রতিরোধ বেষ্টনী তৈরী করা। যুদ্ধের জন্য সৈন্য সাজানো।
ভার্যা- স্ত্রী, বউ।
লাঙ্গুল- লেজ।
সরিষাভোর- ক্ষুদ্র অর্থে (উপমা)।

🔴সংকলনঃ
বিড়াল প্রবন্ধটি বঙ্কিমচন্দ্রের ৩ অংশে বিভক্ত রচনার সংকলন 'কমলাকান্তের দপ্তর' থেকে নেয়া হয়েছে।

🔴মুলভাবঃ
'বিড়াল' প্রবন্ধে লেখক শোষক- শোষিত, ধনী- দরিদ্র, সাধু- চোরের অধিকার বিষয়ক সংগ্রামের বিষয়টি শ্লেষাত্মক, যুক্তিনিষ্ঠ ও সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। ধনীর কার্পণ্য ও প্রয়োজনাতীত ধন সংগ্রহ এবং দরিদ্রকে অধিকার বঞ্চিত করার জন্যই মূলত দরিদ্র অসৎ পথ বেছে নেয় সেটি অকপটে একটি বিড়ালের মুখে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। প্রবন্ধের প্রথম অংশ হাস্যরসাত্মক হলেও পরের অংশ গূঢ়ার্থে সন্নিহিত।


মোহাম্মদ আতিকুর রহমান

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম