প্রাচীন জ্যোতির্বিদ্যা
নিশিকালো,মেঘমুক্ত,তারাচিকচিকে আকাশপানে তাকিয়ে বিস্ময়ে বুক কাঁপে নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর! কতটা বিশাল ঐ অকাশ?কোথায় তার সীমানার শেষ রেখা টানা?কি আছে তার বিশাল জমিনে?
নিজের অজানতেই কতবার প্রশ্ন করে বসেছি আমাদের মনকে! আকাশ নিয়ে ভাবা মানুষের খুব পরিচিত স্বভাব। দূরাকাশের ঐ আবছা রহস্যের দ্বার খুঁলে দেয়ার চেষ্টা খুব পুরোনো। হাজার হাজার বছর আগে থেকে অন্তরিক্ষের দোষ গুণ বিচার করা শুরু হয়েছিলো।আমরা যাকে জ্যোতিবিজ্ঞান বলি,তার বীজ তখনই বোনা।
জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে জানতে হলে ধারনা থাকতে হবে এ বিজ্ঞানের সূচনা কোথায়?আমার ধারাবাহিক লেখার প্রথম পর্বে তাই আলোচনা করবো প্রচীনকালের জ্যোতির্বদ্যা নিয়ে।
নিজের অজানতেই কতবার প্রশ্ন করে বসেছি আমাদের মনকে! আকাশ নিয়ে ভাবা মানুষের খুব পরিচিত স্বভাব। দূরাকাশের ঐ আবছা রহস্যের দ্বার খুঁলে দেয়ার চেষ্টা খুব পুরোনো। হাজার হাজার বছর আগে থেকে অন্তরিক্ষের দোষ গুণ বিচার করা শুরু হয়েছিলো।আমরা যাকে জ্যোতিবিজ্ঞান বলি,তার বীজ তখনই বোনা।
জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে জানতে হলে ধারনা থাকতে হবে এ বিজ্ঞানের সূচনা কোথায়?আমার ধারাবাহিক লেখার প্রথম পর্বে তাই আলোচনা করবো প্রচীনকালের জ্যোতির্বদ্যা নিয়ে।
শুরু করতে হবে মিশরীয়দের দিয়ে। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৩০০০ বছর আগে মিশরের সভ্যতা গড়ে উঠে। মিশরের কৃষকেরা নীল নদের পানি দিয়ে কৃষিকাজ করতো। প্রতি বছর তাদের এলাকাগুলোতে বন্যা হতো এবং বন্যার পানিতে ফসল নষ্ট হবার সম্ভাবনা থাকতো। তাই বন্যা চলাকালীন তারা কোনো চাষাবাদ করতো না। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর তারা জমি চাষ শুরু করতো। তারা লক্ষ করতো সকালের পূর্ব আকাশে যখন Sirius নামক নক্ষত্রটি অনেক উজ্জ্বল হয়ে উঠে তার কিছুদিন পরেই বন্যা শুরু হয়। মিশরের এসব লোকগুলোই প্রথম আকাশের তারা নিয়ে গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ করে।
মিশরীয়রা পিরামিড বানানের জন্য বিখ্যাত এবং এসব পিরামিডগুলো ছিলো জ্যোতির্বিদ্যার নিদর্শন। পৃথিবী একটা নির্দিষ্ট অক্ষের সাপেক্ষে ঘোরে। এই অক্ষকে উত্তর দিকে বাড়ালে সেটা আকাশের তলকে স্পর্শ করে। এই বিন্দুকে সুমেরু বলে। পিরামিডের সুচালো মাথাগুলো তারা এই সুমেরু বরাবর রাখতো !
এছাড়া তারা প্রতিদিনের সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তকে লক্ষ করতো। ঝড়বৃষ্টি, চন্দ্র-সূর্য গ্রহণ লক্ষ করতো। আকাশের তারা দেখে পরীক্ষা করতো কোন তারা কোন দিকে সবসময় উঠে। তাই এসব লোকেরা আকাশের তারাকে নির্ভরতার প্রতীক বানিয়েছিলো। আকাশের গ্রহ-উপগ্রহকে স্বর্গের দেবতা বানিয়েছিলো। তাদের বিশ্বাস ছিলো আমাদের জীবন-মরণ, ভাগ্য-নিয়তি এসব নিয়ন্ত্রণ করছে এসব গ্রহ-উপগ্রহ-নক্ষত্র।
তবে দুঃখের কথা হচ্ছে মিশরীয়দের এসব জ্যোতির্বিদ্যা চর্চা আমাদের বর্তমান যুগের জ্যোতির্বিদ্যা চর্চার ক্ষেত্রে তেমন কোনো ভূমিকা রাখে নি!
জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে মিশরের পর আমাদের উপমহাদেশের নাম আসে! ভারতে
প্রাচীনযুগে চন্দ্র এবং সূর্যের গতিবিধি লক্ষ করা হতো বলে জানা যায়। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যের উত্তর এবং দক্ষিণ দিকে সরে যাওয়ার উপর ভিত্তি করে ঋতু পরিবর্তন ও বছরের হিসাব বের করা হতো। পূর্ণিমা এবং অমাবস্যা দ্বারা বছরকে মাসে ভাগ করা হতো।
হিন্দু ধর্মের প্রায় প্রতিটা রীতিনীতিতে গ্রহ-উপগ্রহ এবং নক্ষত্রের কথা জড়িয়ে আছে। এসব নিয়ে যারা চিন্তা করতো তাদের জ্যোতিষী বলে ডাকা হতো। তারা গ্রহ-নক্ষত্র ব্যবহার করে মানুষের ভবিষ্যতবাণী করতো। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে প্রাচীন ভারতেই প্রথম পৃথিবী থেকে চাঁদের দুরত্ব হিসাব করা হয় এবং মোটামুটি বাস্তব মানের কাছাকাছি মান পাওয়া যায় সেখান থেকে।
বর্তমান বিশ্বে চীন যেমন এগিয়ে, তাদের পূর্ব পুরুষরাও এমন ছিল।জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে চীন এর নাম উল্লেখ না করলেই না! চীনারাও প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ বছর থেকে জ্যোতির্বিদ্যা বা Astronomy নিয়ে গবেষণা শুরু করে। তখন আকাশের তারা গুলোর গতিবিধি লক্ষ করে লিপিবদ্ধ করে রাখা হতো। এছাড়া তারা আকাশের জন্য তাদের রেফারেন্স পয়েন্ট হিসাবে বৃত্তাকার নক্ষত্র ব্যবহার করতো। খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ বছর আগে তারা ক্যালেন্ডারের ব্যবহার শুরু করে !
তখনকার সময় চীনা জ্যোতির্বিদদের কাজ ছিলো প্রতিটা মাসের প্রথম দিন ঘোষণা করা, দিনপঞ্জির সময় তালিকা তৈরি করা। যদি তারা এসব কাজে ভুল করতো তবে তাদের শাস্তি দেয়া হতো। একটা কাহিনী প্রচলিত আছে। তখনকার সময় 'হি' এবং 'হো' নামক দুজন জ্যোতির্বিদ সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণ নির্ণয়ের তারিখ ভুল করায় তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয় একজন শাসক।
সময় বের করার জন্য তখনকার জ্যোতির্বিদরা পুরো আকাশকে ১২টা ভাগে ভাগ করেন। চন্দ্রগ্রহণের সঠিক সময় খুঁজে বের করা হয়। প্রায় ৩৫০ খ্রিস্টপূর্বে চীন দেশের এক বিজ্ঞানী সি সেন (Shi-Shen) ৮০০ টির মত নক্ষত্র নিয়ে বিশাল লিস্ট তৈরি করেন। তার তৈরি এই তালিকাটি ছিলো প্রাচীনতম বৃহৎ নক্ষত্রপঞ্জি। তিনিই বৃত্তকে ৩৬৫ টি ভাগে ভাগ করেন কারন একটা বছরে ৩৬৫ টি দিন থাকে। চীনদেশে বছরের ছোট দিনে সূর্যের অবস্থান নির্ণয় করা হয়, সূর্যগ্রহণের সঠিক সময় নির্ণয় করা হয়, খালি চোখে সূর্যের উপরিভাগের কালো দাগ বা Sun Spot কে সনাক্ত করা হয়। এছাড়া ৭০০ খ্রিস্টপূর্বে চীনে ধূমকেতু এবং উল্কা পতনের একটা তালিকা তৈরি করা হয়। চীনা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে বিখ্যাত পর্যবেক্ষণ গুলোর মধ্যে একটি ছিল ১০৫৪ খ্রিস্টাব্দে আকাশে সুপারনোভা দেখা!
বিজ্ঞান চর্চায় গ্রিকদের নাম আসবে না এ যেন হতেই পারে না! খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ থেকে ৩০০ বছর পর্যন্ত গ্রীক সভ্যতা জ্যোতির্বিদ্যায় অনেক উন্নতি করে। এই সময়টাতে জ্যোতির্বিদ ছাড়াও আরো অনেক ধরনের বিজ্ঞানীরা ছিলেন যারা বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা নিয়েও গবেষণা করেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন হচ্ছে-
i. মিলেতুসের থেলিস (Thales)
থেলিস সবার প্রথম মহাকাশের ঘটনাগুলোকে গানিতিক এবং বিজ্ঞানের রূপ দেন। আকাশের তারা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তিনি সমুদ্রে জাহাজের দুরত্ব মাপতে পারতেন।
ii. সামোসের পিথাগোরাস (Pythagoras)
পিথাগোরাস ছিলেন গণিতের অন্ধভক্ত এবং গণিতের ধর্মগুরু। তিনি বলতেন মহাকাশের গ্রহ-উপগ্রহ গুলো বৃত্তাকার পথে চলে। তবে তার একটা ধারনা ভুল ছিলো। তিনি মনে করতেন কোনো রকম পরিক্ষা কিংবা এক্সপেরিমেন্ট ছাড়াই শুধুমাত্র শান্ত মনে চিন্তা করলেই বিজ্ঞানের সব জটিল রহস্য ভেদ হয়ে যাবে।
iii. ফিলোলাউস (Philolaus)
ফিলোলাউস ছিলেন পিথাগোরাসের শিষ্য। তিনিই প্রথম বলেন পৃথিবী বা সূর্য মহাবিশ্বের কেন্দ্র না। তার ধারনা ছিলো মহাবিশ্বের কেন্দ্র হচ্ছে বিশাল একটা অগ্নিকুণ্ড। সূর্য সেই অগ্নিকুণ্ড থেকে আলো নেয় এবং আমাদেরকে সেটা দান করে।
iv. প্লেটো (Plato)
প্লেটো পিথাগোরাসের মতই মনে করতেন ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলেই বিজ্ঞানের সব রহস্য ভেদ হয়ে যাবে। তিনি পর্যবেক্ষণ নির্ভর ছিলেন না।
v. এরিস্টটল (Aristotle)
এরিস্টটলের শিক্ষক ছিলো প্লেটো। তবে এরিস্টটল প্লেটোর বিরোধী ছিলেন। এরিস্টটল বিজ্ঞানকে পরিক্ষা-নিরিক্ষা করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তিনি খেয়াল করতেন সমুদ্রে কোনো জাহাজ যদি অনেক দূরে চলে যায় তবে জাহাজের উঁচু অংশ সবার পরে অদৃশ্য হয়ে যায়। তিনি প্রথম পৃথিবীকে মহাবিশ্বের কেন্দ্র হিসেবে চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু তার এই চিন্তা এখন ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
বর্তমান সময় ইরাক দেশ যে জায়গাটায় অবস্থিত সেখানে একসময় ব্যাবিলন নামক এক সভ্যতা ছিলো। ২০০০ থেকে ৫০০ খ্রিস্টপূর্ব সময় পর্যন্ত ব্যাবিলনীয় সভ্যতা অনেক উন্নত একটা সভ্যতা ছিলো। তারা প্রথম পৃথিবীর একটা ম্যাপ তৈরি করেছিলো। সেই ম্যাপ অনুযায়ী পৃথিবী ছিলো পাহাড়ের মত উঁচু। পৃথিবীর চারপাশে ছিলো সমুদ্রের পানি। উপর দিকে ছিলো স্বর্গ আর নিচে ছিলো নরক! (ম্যাপটির ছবি যুক্ত করা হয়েছে)
ব্যাবিলনরা চন্দ্র এবং সূর্যের গতিবিধি গুলো খুব সুন্দরভাবে বুঝতে পারতো এবং সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণ নিয়ে সঠিক ভবিষ্যৎবাণী করতে পারতো। তারা জ্যামিতি এবং মাপজোকের ব্যাপারগুলো অনেক ভালো বুঝতো। তারা নিখুঁতভাবে চন্দ্রগ্রহণের আবর্তনকাল আবিষ্কার করে। তারা বের করে ১৮ বছর পর পর চন্দ্রগ্রহণ একই সময় ঘটে। এই ঘটনাকে Saros অথবা Chaldean Saros বলা হয়।
ব্যাবিলনরা ৬০ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতিতে গণনা করতো, যেমন আমরা আজকের যুগে ১০ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতিতে গণনা করি। তাদের এই ভিত্তি থেকে ৬০ মিনিটে এক ঘন্টা, ৬০ সেকেন্ডে এক মিনিট এই ধারনা গুলো আসে।
ব্যাবিলনরা তখনকার সময়ে একটা ক্যালেন্ডার তৈরি করে যেটাতে বছর ছিলো ৩৬০ দিনের এবং বছরে মাস ছিলো ১২টি। তারা কয়েক বছর পর পর একটা মাস যোগ করে ১৩ মাসের বছর বানাতো। এভাবে তারা বছরের হিসাবকে সংশোধন করতো ।
(আকাশের কিছু সমার্থক শব্দ জেনে নিন -গগন,অন্তরিক্ষ,অম্বর,ব্যোম,খ,শূন্যলোক,আসমান, দ্যুলোক,শূন্য,নভঃ,অভ্র,নীলিমা,অনন্ত,সুরপথ
,অম্বরতল,খলোক,খগোল,নক্ষত্রলোক,নভোলোক,
নভোমণ্ডল,নভস্তল,নভস্থল)।
মিশরের একটা ছোট্ট শহরের নাম আলেকজান্দ্রিয়া। ৩৩২ খ্রিস্টপূর্ব সময় সম্রাট আলেকজান্ডার মিশর দখল করে নিয়েছিলো। মিশরের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অবস্থা ভালো ছিলো না বলে মিশরবাসী তাকে নেতা হিসেবে মেনে নেয়। মিশরের শহরগুলো তখন অনেক সুন্দর ছিলো। শহরের সুন্দর রূপ দেখে আলেকজান্ডার অনেক আনন্দিত হয়ে ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণ উপকূলে একটা শহর তৈরি করেন যার নাম তিনি দিয়েছিলেন আলেকজান্দ্রিয়া।
আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর আলেকজান্দ্রিয়া শহরের শাসক হয় সেনাপতি টলেমি। টলেমির শাসনামল ছিলো প্রায় ৩০০ বছরের মত। এই সময়টায় আলেকজান্দ্রিয়া শহর ছিলো বিশ্বের অন্যতম স্বর্গীয় এবং জ্ঞানের শহর। তখনকার সময়ের বিখ্যাত লাইব্রেরি এই শহরটায় তৈরি করা হয় যেটা আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরি নামে পরিচিত। এই লাইব্রেরিতে প্রায় ১০ লাখের মত হাতে লেখা বই ছিলো।
আলেকজান্দ্রিয়া শহরে অনেক জ্যোতির্বিদদের বসবাস ছিলো। তাদের বইও এই লাইব্রেরিতে পাওয়া যেতো। এমনি কিছু বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ হচ্ছেন-
i. এরিস্টার্কাস (Aristarchus)
এরিস্টার্কাস তার লেখা বইতে লিখেছিলেন সূর্য পৃথিবী থেকে অনেক বড়। সূর্যগ্রহণের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তিনি এটা বুঝতে পারেন। তিনি বিশ্বাস করতেন সূর্যের চারপাশে পৃথিবী ঘোরে। এছাড়া তিনি বের করেন আকাশের তারা গুলো আমাদের পৃথিবী থেকে অনেক অনেক দূরে।
ii. এরাটোস্থেনিস (Eratosthenes)
এরাটোস্থেনিস ছিলেন আলেকজান্দ্রিয়ার
বিখ্যাত লাইব্রেরির গ্রন্থাগার। অবসর সময় লাইব্রেরিতে বসে তিনি বিভিন্ন ধরনের বই পড়তেন। একটা বইতে তিনি বিষ্ময়কর তথ্য পান। সেটি হলো মিশরের সিরিন নামক শহরে ঠিক দুপুর ১২ টায় সূর্যের আলোয় কোনো বস্তুর ছায়া পড়ে না, কিন্তু একই সময় আলেকজান্দ্রিয়া শহরে যেকোনো বস্তুর ছায়া পড়ে তখন। তিনি পুরো পৃথিবীর পরিধি নির্ভুলভাবে নির্ণয় করার চেষ্টা করেন, সূর্য থেকে পৃথিবীর দুরত্ব বের করার চেষ্টা করেন। এছাড়া তিনিই প্রথম দ্রাঘিমারেখা ও অক্ষরেখা বিশিষ্ট তৎকালীন বিশ্বের মানচিত্র অঙ্কন করেন। এরাটোস্থেনিস প্রথম “Geography” শব্দটি ব্যবহার করেন, তাই তাকে ভূগোল বা Geography-র জনক বলা হয়।
iii. এপোলনিয়াস (Apollonius)
তিনি সর্বপ্রথম উপবৃত্ত, পরাবৃত্ত এবং অধিবৃত্তের ধারনা দেন।
iv. হিপ্পার্কাস (Hipparchus)
হিপ্পার্কাস আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরিতে দিনরাত বৈজ্ঞানিক গবেষণা করতেন। তাকে প্রাচীন যুগের সেরা জ্যোতির্বিদ বলা হয়। আকাশের তারা গুলোকে আপাত উজ্জ্বলতার ভিত্তিতে বিভিন্ন মান দিয়েছিলেন তিনি। সূর্যগ্রহণের নির্ভরযোগ্য ভবিষ্যৎবাণী তিনিই প্রথম করেছিলেন। ইউরোপে প্রথম তারাদের লিস্ট তৈরি করেন তিনি।
হিপ্পার্কাসের সবচেয়ে বড় আবিষ্কারটি হলো তিনি পৃথিবী যে অক্ষকে কেন্দ্র করে ঘোরে সেই অক্ষের ঘোরার পথ নির্ণয় করেন। সেই অক্ষটি এই পুরো পথকে ঘুরে আসতে মোট ২৬ হাজার বছর সময় নেয়।
হিপ্পার্কাসের পরে মিশরে আর ভালো কোনো জ্যোতির্বিদ আসেনি। ৪৮ খ্রিস্টপূর্ব সময় রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার মিশরকে দখল করতে আসার সময় পুরো মিশররে আগুন লাগিয়ে দেয়। এই আগুনে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির বড় অংশ পোড়া যায়। তবে যেসব বই পোড়া যায়নি সেগুলো দিয়ে অন্য একটা ছোট লাইব্রেরি বানানো হয়েছিলো তখন।
এসব ঘটনার অনেকদিন পর খ্রিস্টের জন্মের ৯০ বছর পরে আলেকজান্দ্রিয়াতে জন্ম নেন আরেক বিজ্ঞানী টলেমি।
v. টলেমি (Ptolemy)
টলেমি ছিলেন আলেকজান্দ্রিয়ার একজন বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ। কিন্তু তার কিছু গবেষণা অত্যন্ত ভুল ছিলো যার কারনে কয়েকশ বছর বিজ্ঞান ছিলো অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগে। তিনি একটা বিখ্যাত বই লিখেছিলন, সেটার নাম ছিলো আলমাজেস্ট। বইতে তিনি এরিস্টটলের পৃথিবীকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের কথা তুলে ধরেন। অর্থাৎ পুরো মহাবিশ্বের কেন্দ্র হিসেবে পৃথিবীকে ধরেন তিনি। তখন থেকে কয়েকশ বছর পর পর্যন্ত তার এই মতবাদকে সবাই নির্বিশেষে গ্রহণ করে। তিনি চাঁদ-সূর্য-তারা এদের অতীত এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে জানার চেষ্টা করেন। তিনি এই মহাবিশ্বের বিশাল মডেল তৈরি করেন। তিনি ধারনা করেন পৃথিবী থেকে সূর্যের দুরত্ব পৃথিবীর ব্যাসের ১২১০ গুন এবং পৃথিবী থেকে অন্যান্য তারকাদের দুরত্ব পৃথিবীর ব্যাসের ২০০০০ গুন।
vi. হাইপেশিয়া (Hypatia)
হাইপেশিয়া ছিলেন বিশ্বের প্রথম নারী জ্যোতির্বিদ বা Astronomer. তিনি ৩৭০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন আলেকজান্দ্রিয়াতে। তিনি ছিলেন তখনকার সময়ের বিখ্যাত গনিতবিদ। তিনি এপোলনিয়াসের গনিত নিয়ে গবেষণার উপর বই লিখেন। টলেমির Astronomy নিয়ে করা কাজগুলোর উপর তিনি রিসার্চ করেন। তিনি তখন প্রতি সপ্তাহে বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন বক্তৃতা দিতেন। তার এসব লেকচার শোনার জন্য রোম, এথেন্স এসব শহর থেকে মানুষ আলেকজান্দ্রিয়াতে আসতো। তিনি প্রথম হাইড্রোমিটার তৈরি করেন যা দিয়ে তরল পদার্থের আপেক্ষিক গুরুপ্ত মাপা যেতো। এছাড়া তিনি আকাশে সূর্য এবং নক্ষত্রের অবস্থান জানার জন্য Astrolabe নামক যন্ত্র আবিষ্কার করেন।
হাইপেশিয়ার বিজ্ঞান চর্চাকে তখনকার সময়ের কিছু মানুষ ভালো মনে করতো না। কারন তথাকথিত কিছু খ্রিস্টান যাজক এবং শাসকেরা মনে করতো তার বিজ্ঞান চর্চা তাদের ধর্মের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। তাই তাকে আলেকজান্দ্রিয়ার বিশপের আদেশে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ৪১৫ সালের এক সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
( প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দেয়া মহাবিশ্বের মডেল নিয়ে দূরদৃষ্টি' র দ্বিতীয় পর্ব সাজানো হবে ইন শা আল্লাহ)
লিখাঃ-তাইসিরুল মুক্তাদি
Tags:
Astronomy