চাষার দুক্ষু-রোকেয়া সাখাওয়ার হোসেন


🔴লেখক পরিচিতিঃ
নাম- রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন
উপাধি- নারী জাগরণের অগ্রদূত
জীবনকাল- (৯ই ডিসেম্বর ১৮৮০- ৯ই ডিসেম্বর ১৯৩২)
পিতা- জহিরউদ্দীন আবু আলী হায়দার সাবের
মাতা- রাহাতুন্নেসা চৈধুরী
স্বামী- সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, উর্দুভাষী ও বিপত্নীক ( যার স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেছে)। রোকেয়া ও তার বিয়ে হয় ১৮৯৮ সালে।
সাহিত্যজীবনঃ
গদ্যগ্রন্থ- মতিচূর ও অবরোধবাসিনী
উপন্যাস- সুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ

🔴গুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রশ্নঃ
কত বছর পূর্বে ভারতবাসী অসভ্য ছিল?– দেড় শত বৎসর
অসুস্থ হলে কয় জন ডাক্তার নাড়ী টেপে?– আট দশ জন।
একজন জুট মিলের কর্মচারীর মাসিক বেতন– ৫০০- ৭০০ টাকা।
ইউরোপীয় মহাযুদ্ধ কয় বছরের ঘটনা?– সাত বছরের।
লেখক বাল্যকালে শুনতেন, ১টাকায় ৮ সের সরিষার তৈল এবং ৪সের ঘৃত(ঘি) পাওয়া যেত।
জমিরনের মাথায় আধ পোয়াটাক তেল লাগতো এবং যেদিন জমিরন মাথা ঘষিত (চুল ধুতো) সেদিন জমিরনের মা তাকে রাজবাড়ী নিয়ে যেত তেলের জন্য। তখন দুই গন্ডা পয়সায় এক সের তৈল পাওয়া যেত।
৩০/৩৫ বছর পূর্বে বিহার অঞ্চলে দুই সের খেসারির বিনিময়ে কৃষক পত্নী কন্যা বিক্রয় করতো।
পঁচিশ বছর পূর্বে উড়িষ্যার অন্তর্গত কণিকা রাজ্যে কৃষক পাখাল (পান্তা) ভাতের সাথে লবণ ছাড়া অন্য কিছু সংগ্রহ করতে পারতো না। শুঁটকি মাছ ছিল পরম উপাদেয় ব্যঞ্জন। তখন সেখানে এক টাকায় ২৫/২৬ সের চাল পাওয়া যেত।
সাত ভায়া নামক সমুদ্র- তীরবর্তী গ্রামের লোকেরা পান্তার সাথে লবণও যোগাতে পারতো না। তারা সমুদ্র জলে চাল ধুয়ে খেত।
রংপুরে মানুষ চাল কিনতে না পারায় লাউ, কুমড়া সহ প্রভৃতি তরকারি ও পাট শাক, লাউ শাক সিদ্ধ করে খেত। তখন লোকেরা তাদের স্ত্রী দের জন্য ৮/৯ হাত কাপড় সংগ্রহ করে নিজেরা কৌপিন ধারণ করতো।
তখন রংপুর ধান্য ও পাটের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল
আসাম ও রংপুর জেলায় এক প্রকার রেশম হতো যার নাম এন্ডি।
একটি এন্ডি কাপড় অবাধে ৪০ বছর টেকে। ৪/৫ টা এন্ডি চাদর থাকলে লেপ, কম্বল, কাঁথা– কিছুই লাগতো না।
আগে মহিলারা কাপড় কাচার জন্য ক্ষার প্রস্তুত করতো। আর এখন ব্যবহার করে সোডা।
শিবিকাবাহকগণ পাল্কি লইয়া ট্রামে যাতায়াত করিলেই সভ্যতার চূড়ান্ত হইবে।
এন্ডি ইউরোপীয় সমাজে কি নামে পরিচিতি লাভ করে?– আসাম সিল্ক।
'হোয়াইট এ্যাওয়ে লেডল' এর দোকানে এখন আর 'আসাম সিল্ক' পাওয়া যায় না।
গভর্নর লর্ড কারমাইকেল ছাড়িবার পাত্র নন তাই তিনি দেশি রেশমি রুমালের জন্মস্থান বের করেন এবং জানতে পারেন সেটা আগে মুর্শিদাবাদের কোন গ্রামে প্রস্তুত হতো কিন্তু এখন হয় না।
দেশবন্ধু বলতে চিত্তরঞ্জন দাশ কে বুঝানো হয়েছে।

🔴গুরুত্বপূর্ণ অনুধাবনমূলক লাইনঃ
"চাষাই সমাজের মেরুদণ্ড"– সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলার কৃষিনির্ভর অর্থনীতিকে বোঝানো হয়েছে।
"ধান্য তার বসুন্ধরা যার"– গ্রামের জমিদার ও মহাজন সম্প্রদায়ের ফসলের উপর একক প্রতিপত্তির ফলে কৃষকের অন্নকষ্টকে বোঝানো হয়েছে।
"এ কঠোর মহীতে চাষা এসেছে শুধু সহিতে; আর মরমের ব্যাথা লুকায়ে মরমে জঠর- অনলে দহিতে"– বাংলার কৃষক সম্প্রদায়ের শোচনীয় অবস্থা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
" শিরে দিয়ে বাঁকা তাজ, ঢেকে রাখে টাক"– প্রয়োজনীয়তা ও সুফল না জেনেই সভ্যতার অন্ধ অনুকরণে জড়িয়ে পড়ার কথা বোঝানো হয়েছে।
"নিজ অন্ন পর কর পণ্যে দিলে, পরিবর্ত ধনে দুরভিক্ষ নিলে"– সভ্যতার অন্ধ অনুকরণে অপচয় ও বিলাসিতার দরুণ চরম সংকটের পরিস্থিতিতে পড়া।
"সর্ব অঙ্গেই ব্যাথা, ঔষধ দিব কোথা? আর— এ বহ্নির শত শিখা কে করিবে গণনা"– কৃষকের শিরায় শিরায় অন্ধ অনুকরণ ও বিলাসিতার ঘা য়ে জর্জরিত।

🔴শব্দার্থঃ
ছেইলা- ছেলে। সন্তানসন্ততি অর্থে।
পৈছা- স্ত্রীলোকদের মণিবন্ধনের প্রাচীন অলংকার।
অভ্রভেদী- আকাশচুম্বী।
ট্রামওয়ে- ট্রাম চলাচলের রাস্তা।
বায়োস্কোপ- চলচ্চিত্র।
কৌপিন- ল্যাঙ্গট।
এন্ডি- মোটা রেশমি কাপড়।
মহীতে- পৃথিবীতে।
টেকো- সুতা পাকাবার যন্ত্র।
বেলোয়ারের চুরি- উৎকৃষ্ট স্বচ্ছ কাচে প্রস্তুত চুড়ি।

🔴সংকলনঃ
বাংলা একাডেমি প্রকাশিত " রোকেয়া রচনাবলি" থেকে 'চাষার দুক্ষু' শীর্ষক রচনাটি চয়ন করা হয়েছে।

🔴মুলভাবঃ
সভ্যতা ও অগ্রগতির নামে অন্ধ অনুকরণ এবং বিলাসিতার দরুণ কৃষকের মর্মন্তুদ অবস্থা বর্ণনাই মূলত এই রচনার মূল প্রাতিপাদ্য বিষয়। ক্রমে ক্রমে কুটির ও হস্তশিল্পের বিলোপ এবং চরমক বিলাসিতা কৃষক সমাজকে চরম সংকটের মুখে ফেলেছে। পরিশেষে, নারী শিক্ষা ও নারী শিল্পের প্রসারের মাধ্যমে কৃষকের দারিদ্র্য দূর করার পরামর্শ দেন লেখক।
.
সফলতা একদিনে আসে না আর সফলতার প্রস্তুতিও একদিনে হয় না। তাই প্রতিদিনের পড়াগুলো প্রতিদিন শেষ করে একটু একটু করে এগোতে হবে তাহলেই সফলতা অর্জন সম্ভব।

সবার জন্য শুভকামনা 🖤

মোহাম্মদ আতিকুর রহমান

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম