ড্যান ব্রাউনের বিশ্ববিখ্যাত "দ্য দা ভিঞ্চি কোড " পড়ার পর থেকেই নিজেকে আগাগোড়া একজন থ্রিলার প্রেমী হিসেবে আবিষ্কার করি। কেন জানি খুন, রহস্য, গোয়েন্দা, ধাঁধাঁ প্রচুর টানে আমায়। যখন আমি ১ম বার 'মেডিকেল থ্রিলার ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স ' এর প্রচারণা দেখি কোনো বিশেষ কারণ ছাড়াই আলাদা একটা টান কাজ করছিলো বইটি পড়ার। কেননা বাংলাদেশের কোনো লেখকের লেখা ১ম মৌলিক মেডিকেল থ্রিলার রিলেটেড একটা বই "ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স "
'মানুষ সৌন্দর্যের পূজারি' এই প্রবাদ বাক্যটি এমনি এমনি এত প্রচলিত হয়নি। বাস্তবতা ই যে এমন টা।প্রথাগত বিচারে অসুন্দরী, কুৎসিত, খর্বকায়, কালো কোনো মেয়েকে আমাদের সমাজব্যবস্থা কোনোকালেই অবজ্ঞা বৈ ভিন্ন কিছু দেয়নি কখনো। মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য দিয়েই জাজ্ করে ফেলে কে কেমন! কিন্তু এক্কেবারেই ভুলে যায় বহুল প্রচলিত "নেভার জাজ্ আ বুক বাই ইট’স কভার" কথাটি। বাস্তবে যদি আমরা প্রয়োগ করতাম তাহলে হয়তো আমাদের সমাজে আজ সোশ্যাল বুলিং, বডি শেমিং এতটা প্রকট হতো না।
কুহেলি নামের মেয়েটি কেবল সৌন্দর্যের বিচারেই অসুন্দরী ছিলো এছাড়া যাবতীয় মানবিক গুণাবলিতে সে একজন ১ম শ্রেণীর মানুষের কাতারে পরে। তবুও শুধুমাত্র দেখতে কুৎসিত হওয়ার কারণে কুহেলি কে অপদস্থ করে মজা নিতে কার্পণ্য করেনি ক্লাস ফাইভে পড়ুয়া বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্ক প্রকাশক কিংবা ধুরন্ধর সিএনজি চালক থেকে শুরু করে ভার্সিটি পড়ুয়া জুনিয়র।
খুব ছোট্টবেলাতে যখন কুহেলি কিছুই বুঝত না বডি শেমিং এর ব্যাপারে তখনই একটা ক্ষুদ্র ঘটনা ওর পরবর্তী জীবনের ক্রনিক ডিপ্রেশনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এক সুন্দরী ক্লাসমেট এর সঙ্গে টিফিন ভাগাভাগি করতে গিয়ে যখন তার কাছ থেকে " তোমার সাথে আমি টিফিন ভাগাভাগি করব না, তোমার হাতের সঙ্গে আমার টাচ্ লাগলে আমিও দেখতে তোমার মত কুৎসিত হয়ে যাব।" কথাটি শুনে তখনই নিজের মাঝে ইনফিরিওর সত্তা জেগে ওঠে। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকার সঙ্গে কেবলমাত্র অসুন্দরী হওয়ার কারণে সমাজের চোখে বারবার হেয় প্রতিপন্ন হতে হতে নিজেকে একজন "ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স " এর দাস হিসেবে আবিষ্কার করে কুহেলি৷ নিজেকে সবার কাছ থেকে গুটিয়ে রাখর প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
সাইক্রিয়াটিস্ট এর শরণাপন্ন হয়ে যখনই কুহেলি ধীরে ধীরে নিজেকে রিকভার করা শুরু করে তখনই ঘটে যায় মারাত্মক সব ঘটনা। বয়স, উচ্চতা, পেশা, ধর্ম, বর্ণ,জাতভেদে যারাই কুহেলি কে অপদস্ত করে মজা নিয়েছে এবং কুহেলির চোখের অশ্রু ঝরিয়েছে একে একে খুন হতে থাকে তারা সবাই। প্রতিটা খুনই করা হচ্ছিল নিখুঁতভাবে ফিজিক্স কেমিস্ট্রি এবং মেডিকেল সাইন্স কে ব্যবহার করে। নূন্যতম কোনো ক্লু ছিলো না ডেথ্ স্পট এ যা থেকে সিআইডি অফিসারেরা খুনিকে ট্রেস করতে পারে।তবে খুনগুলো যে একটা সিরিয়াল কিলিং এর অংশ এবং কোনো নির্দিষ্ট কারণে করা হয়েছে এটা প্রমাণ করতে প্রতিটি খুন করার পর খুনি ক্রাইম সীনে "Mother Goose Treasury" নামে নার্সারির বাচ্চাদের একটা ছড়ার বই রেখে যায়।
কে ছিলো সেই সিরিয়াল কিলার? যে কিনা কোল্ড ব্লাডেড নিখুঁত ফিনিশিং এ প্রতিটা খুন সম্পন্ন করছিলো এবং তাতে যেন ভিকটিম ব্যতীত আশেপাশের কারো বিন্দুমাত্র ক্ষতি নাহয় সেই দিকে চরম সতর্ক ছিলো??
এই চরম উত্তেজনাকর সিরিয়াল কিলিং এর রহস্য উদঘাটন করতে গোয়েন্দা টিমে যোগদান করে ফরেনসিক স্পেশালিষ্ট ডাক্তার কাম-গোয়েন্দা 'আবরার ফাহাদ'। নিজের ক্ষুরধার মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়ে সে ধীরে ধীরে বেনামী খুনির দেওয়া ট্রেডমার্ক থেকে "মা রক্ষা করে " রহস্যময় বাক্যটি আবিষ্কার করে। কিন্তু এটিই সিআইডি টিমের জন্য বুমেরাং বাণ হয়ে দাঁড়ায়। খুনি ছিলো আউটস্মার্ট সে প্রতিটি ধাপে সিআইডি অফিসারদেরকে টেস্ট করছিলো সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ক্লু দ্বারা। কিন্তু আবরার ই বা কম যায় কীসে? নিজ মেধা আর দক্ষতা কে কাজে লাগিয়ে জেনে যায় এসব সিরিয়াল কিলিং এর রহস্য কি আর এর পেছনের কারিগর ই বা কে??
সব রহস্য পরিষ্কার করতে হলে পড়তে হবে মালিহা তাবাসসুম আপুর অনবদ্য সৃষ্টি মেডিকেল থ্রিলার ঘরানার "ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স " বইটি।
🚫ব্যাক্তিগত রেটিং ৮.৮/১০
একজন সচেতন পাঠক হিসেবে সকলকে বইটি পড়ার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
রিভিউ লেখকঃ ফাহিম রেজা