নক্ষত্র নিয়ে আলোচনার পূর্বে প্রথমে আমাদের জানতে হবে নক্ষত্র কি। ইংরেজিতে যেটাকে বলে স্টার।
নক্ষত্র কে সংক্ষেপে বলা যায় জ্বলন্ত গ্যাস পিণ্ড। যেটা প্রধানত হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম দিয়ে তৈরি এবং এর ভিতরে সর্বদা ফিউশন বিক্রিয়া বা স্টেলার নিউক্লিওসিন্থেসিস(নতুন নিউক্লিয়াস তৈরির প্রক্রিয়া) চলতে থাকে। নিউক্লিয়সিন্থেসিস এর ফলে সর্বোচ্চ লৌহ(২৬) পর্যন্ত এলিমেন্ট তৈরি হতে পারে। সাধারণতঃ লৌহ এর উপরের মৌলগুলো নক্ষত্রের ভেতর তৈরি হয় না। কারণ লৌহ অনেক দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে এবং সর্বাধিক স্থিতিশীল মৌল,নিউক্লিয়াস ভাংতে প্রচুর শক্তি প্রয়োজন হয়,ফিউশন হয় না,এর ফলে আর এনার্জিও বের হতে পারে না।
নক্ষত্র কে সংক্ষেপে বলা যায় জ্বলন্ত গ্যাস পিণ্ড। যেটা প্রধানত হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম দিয়ে তৈরি এবং এর ভিতরে সর্বদা ফিউশন বিক্রিয়া বা স্টেলার নিউক্লিওসিন্থেসিস(নতুন নিউক্লিয়াস তৈরির প্রক্রিয়া) চলতে থাকে। নিউক্লিয়সিন্থেসিস এর ফলে সর্বোচ্চ লৌহ(২৬) পর্যন্ত এলিমেন্ট তৈরি হতে পারে। সাধারণতঃ লৌহ এর উপরের মৌলগুলো নক্ষত্রের ভেতর তৈরি হয় না। কারণ লৌহ অনেক দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে এবং সর্বাধিক স্থিতিশীল মৌল,নিউক্লিয়াস ভাংতে প্রচুর শক্তি প্রয়োজন হয়,ফিউশন হয় না,এর ফলে আর এনার্জিও বের হতে পারে না।
নক্ষত্রের জীবনচক্র:
ফেজ ১:জায়ান্ট গ্যাস ক্লাউড-
প্রথমে আমাদের চলে যেতে হবে 13.8 বিলিয়ন অতীতে ,যখন বিগ ব্যাং ঘটেছিল। বিগ ব্যাং এর পরে চারিদিকে নিউট্রিনো, প্রোটন ,ইলেকট্রন, নিউট্রন,কনা-প্রতিকনা ছড়িয়ে পড়েছিল ।তখন কোনো এলিমেন্ট তৈরি হয়নি। ধীরে ধীরে ছুটোছুটি করা কণাগুলো আকর্ষিত হয় এবং সংঘর্ষ ঘটে এবং হালকা মৌল গুলো তৈরি হওয়া শুরু হয় যেমন হাইড্রোজেন ,হিলিয়াম। স্থানে স্থানে এই গ্যাস গুলোর ঘনত্ব এবং পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং একে অপরের সাথে সংঘর্ষিত হয়ে উত্তাপ তৈরি করে। গ্যাস সমুহ মেঘ এর ন্যায় একত্রিত হয়।
প্রথমে আমাদের চলে যেতে হবে 13.8 বিলিয়ন অতীতে ,যখন বিগ ব্যাং ঘটেছিল। বিগ ব্যাং এর পরে চারিদিকে নিউট্রিনো, প্রোটন ,ইলেকট্রন, নিউট্রন,কনা-প্রতিকনা ছড়িয়ে পড়েছিল ।তখন কোনো এলিমেন্ট তৈরি হয়নি। ধীরে ধীরে ছুটোছুটি করা কণাগুলো আকর্ষিত হয় এবং সংঘর্ষ ঘটে এবং হালকা মৌল গুলো তৈরি হওয়া শুরু হয় যেমন হাইড্রোজেন ,হিলিয়াম। স্থানে স্থানে এই গ্যাস গুলোর ঘনত্ব এবং পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং একে অপরের সাথে সংঘর্ষিত হয়ে উত্তাপ তৈরি করে। গ্যাস সমুহ মেঘ এর ন্যায় একত্রিত হয়।
ফেজ ২:প্রোটোস্টার-
ঘনত্ব বৃদ্ধির কারণে একটা গ্র্যাভিটেশনাল ফোর্স প্রাপ্ত হয় (অথবা গতিশক্তি থেকে গ্রাভিটেশনাল ফোর্স এ পরিবর্তিত হয়) এবং গ্যাসীয় কথাগুলো আকর্ষিত এবং একত্রিত হয়ে মেঘের ন্যায় তৈরি করে। এই মেঘ পুঞ্জকে তখন নেবুলা বলে। এই নেবুলার মধ্যে ঘটা টার্বুলেন্স(অনিয়মিত ছুটোছুটি) এর ফলে সংঘর্ষ হয়ে ধীরে ধীরে তাপ সৃষ্টি হয়,কনাগুলি আবদ্ধ হয়, এবং একটি বলয় তৈরি হয় এটিকে বলে প্রোটোস্টার( নক্ষত্র তৈরীর পূর্ব অবস্থা)। তবে সবসময় নেবুলার পুরোটাই নক্ষত্রে পরিনত হয় না কিছু অংশ বের হয়ে গ্রহ-উপগ্রহ ও তৈরি করে। অনেক নেবুলাতে পর্যাপ্ত ভর না থাকার কারণে নেবুলা হয়েই থেকে যায়।
(এই দশা ১-১০ লক্ষ মিলিয়ন বছর পর্যন্ত থাকে)
ফেজ ৩: টি-টওরি ফেজ-
প্রোটোস্টার এ তাপমাত্রা বাড়তেই থাকে এবং চারপাশে গ্যাস বেল্ট তৈরি হয়(প্রোটোপ্লানেটারি ডিস্ক)।ঠিক এই সময়,প্রোটোস্টার এর দুই মেরু হতে ম্যাগনেটিক ফিল্ডের কারণে ক্ষুদ্র বস্তু নিঃসৃত হয় (বাইপোলার আউটফ্লো) ।
এই ডিস্ক ধীরে ধীরে বাইরে বেরিয়ে যায় নক্ষত্র থেকে আসা প্রবাহের কারনে ।তখন পরবর্তী অবস্থা কে বলে টি-টওরি ফেইজ।
এই ফেজ এ হাইড্রোজেন ফিউশনের জন্য পর্যাপ্ত তাপমাত্রা তৈরি হয় না তাপমাত্রা কম থাকে এবং
উজ্জ্বলতা অনিয়মিতভাবে ওঠানামা করে।
(এই দশা ১০০মিলিয়ন বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়)
ফেজ ৪: মেইন সিক্যুয়েন্স-
ইউনিভার্স এ থাকা সূর্য সহ ৯০% নক্ষত্র বর্তমানে এ পর্যায়ে রয়েছে।
এপর্যায়ে তাপমাত্রা বাড়তেই থাকে। যাহোক তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে যখন 10 মিলিয়ন কেলভিন এ পৌঁছায় তখন হাইড্রোজেনের ফিউশন হওয়া শুরু হয়(১০-১৪ মিলিয়ন কেলভিন তাপমাত্রায় হাইড্রোজেন এর ফিউশন ঘটে) এবং হিলিয়াম তৈরি হয়। নক্ষত্রের কেন্দ্র বা কোর এ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ও ঘনত্ব থাকে।অতঃপর ফিউশন হয়ে সকল হাইড্রোজেন ধীরে ধীরে হিলিয়াম এ রূপান্তরিত হতে থাকবে এবং একটা সময় হাইড্রোজেনের পরিমাণ খুবই কমে যাবে। নক্ষত্র পর্যাপ্ত জ্বালানি পাবেনা।
যেসব নক্ষত্রের ভর কম, 0.8 সৌরভর এর নিচে, তাদের কেন্দ্রে ফিউশন বিক্রিয়া শুরু হতে পারে না। তারা 'ব্রাউন ডোয়ার্ফ' এ রূপান্তরিত হয়।এতে কোনো এনার্জি সোর্স নেই,শুধুমাত্র অনুজ্জ্বল গ্যাসপিন্ড।
(সর্বাধিক দীর্ঘ দশা,স্থায়ীত্বকাল ১মিলিয়ন থেকে ৫০০ বিলিয়ন বছর।সূর্যের মেইন সিকুয়েন্স দশা থাকবে ১০বিলিয়ন বছর)
ফেজ ৫: রেড জায়ান্ট-
এক পর্যায়ে হাইড্রোজেন জ্বালানি শেষ হয়ে যাবে এবং নিউক্লিয়ার ফিউশন কমে যাবে ও তাপ উৎপন্ন হবে না ,ফলে নক্ষত্রের কেন্দ্র অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়বে এবং সংকুচিত হতে থাকবে । তবে নক্ষত্রের পৃষ্ঠ প্রসারিত হতে শুরু করে(কারন পৃষ্ঠে তখনও অনেক হাইড্রোজেন থাকে যা ফিউশন বিক্রিয়া ঘটিয়ে চলে, যেখানে কেন্দ্রের হাইড্রোজেন নিঃশেষ হয়ে যায়) । তাই পৃষ্ঠ প্রসারিত ও কেন্দ্র সংকুচিত হয়ে আকারে বড় হবে এবং লাল বর্ণ ধারণ করবে।কেন্দ্রে এখন শুধু হিলিয়াম।রেড জায়ান্ট এর কেন্দ্রে উত্তাপ বেশি,কেন্দ্রের হিলিয়াম গুলোর ফিউশন ঘটে এবং কার্বন তৈরি হয়।ভর কম হোক বা বেশি হোক সকল নক্ষত্র এই পর্যায় পর্যন্ত একই প্রক্রিয়ায় আসে ।এরপর ভরের উপর নির্ভর করে এক এক প্রকার রূপ ধারণ করে।
(স্থায়ীত্বকাল ১হাজার বছর থেকে ১বিলিয়ন বছর)
ফেজ ৬: ফিউশন অফ এলিমেন্টস
ক). কম ভরের রেড জায়ান্ট:(হোয়াইট ডোয়ার্ফ' এর উৎপত্তি)
কম ভোরের রেট জয়েন্ট গুলোর কেন্দ্রে কার্বন তৈরি হওয়ার সময় ধীরে ধীরে কেন্দ্র সংকুচিত হতে থাকে এবং বাইরের আবরণ ছিন্ন হয়ে প্লানেটারি নেবুলা তৈরি করে। কেন্দ্রটি তখন হোয়াইট ডয়ার্ফ এ পরিনত হয়।হোয়াইট ডর্ফ অতি সামান্য আলো ও হিট নিঃসরন করে।হোয়াইট ডয়ার্ফ এ অবস্থিত মৌলগুলো নিজেদের মধ্যে অত্যাধিক আকর্ষণে থাকে,,ইলেকট্রন এর কক্ষপথ ছোট হয়ে আসে এবং নিউক্লিয়াস এর খুব নিকটে চলে আসে,ফলে অনুর আকার ক্ষুদ্র হয়ে যায় এবং ঘনত্ব অত্যাধিক পরিমানে বৃদ্ধি পায়।
(বি.দ্র: ইলেকট্রন যখন নিউক্লিয়াস এ ঢুকে পড়ে,তখন নিউট্রন তৈরি হয় এবং নিউট্রিনো নিঃসরন হয় । এ দশা মুলত নিউট্রন স্টার তৈরির সময় ঘটে।এটাকে ইলেকট্রন ক্যাপচার বলে)
এরপর হোয়াইট ডয়ার্ফ ধীরে ধীরে শীতল হতে থাকে এবং ব্ল্যাক ডর্ফ পরিণত হয়।ব্লাক ডয়ার্ফ মুলত থিওরিটিকাল,এর কোনো অস্তিত্ব এখনও পাওয়া যায় নি।এখানেই মৃত্যু।
খ) বেশি ভরের রেড জায়ান্ট:(সুপারনোভা)
রেড জায়ান্ট এর ভর বেশি হলে গ্রাভিটেশনাল আকর্ষণ ও খুব বেশি হয়।এবং তাপের ফলে যে চাপ তৈরি হয় এটা বাইরের দিকে ক্রিয়া করে। ফলে একটা কেন্দ্রমুখী-কেন্দ্রবিমুখী (কেন্দ্রের দিক আকর্ষণ-বাহিরের মুখি চাপ) সমতা থাকে উভয় দিকে।নিউক্লিয়ার ফুয়েল কমে গেলে তাপও কমে যায়।ফলে চাপ কমে যায়।মাধ্যাকর্ষণ প্রভাব বিস্তার করে (মাধ্যাকর্ষণ>চাপ)। ফলে অতিদ্রুত কয়েক সেকেন্ড এ কেন্দ্র সংকুচিত হয়।সাথেই বাইরের পৃষ্ঠে শক্তিশালী চাপ ক্রিয়া করে,যেটা এর পৃষ্ঠকে দ্রুত বাইরের দিক ছডিয়ে দেয়।এটাই হল সুপারনোভা।
ফেজ ৭: সুপারনোভা এন্ড নেবুলা-
সুপারনোভা এর পর কেন্দ্র এর ভর এর উপর নির্ভর করে দুটি অবস্থা ঘটতে পারে:
ক) কেন্দ্র ১.৪-৩ সৌরভর হলে:
যেহেতু পূর্বে বলা হয়েছে কেন্দ্র অতি দ্রুত সংকুচিত হয় এবং এর ঘনত্ব প্রচুর বেড়ে যায় ।হোয়াইট ডর্ফ এর ক্ষেত্রে দেখেছি ইলেকট্রনের কক্ষপথ শুধুমাত্র ছোট হয়ে আসে ,নিউক্লিয়াসে পতিত হয় না। কিন্তু এবার আকর্ষণ এর মাত্রা এতটাই হয় যে কেন্দ্রে অবস্থিত অনু সমূহের ইলেকট্রনের কক্ষপথ গুলো নিউক্লিয়াসে পতিত হয় এবং নিউক্লিয়াসের প্রোটন এর সাথে যুক্ত হয়ে নিউট্রন তৈরি হয় এবং নিউট্রিনো নিঃসৃত হয়(ইলেকট্রন ক্যাপচার)। তখন এই তারাটি একটি নিউট্রনের ভান্ডার হিসেবে কাজ করে এবং এটাকে তখন নিউট্রন ষ্টার বলা হয়।এটা হতে নিউট্রিনো এবং রেডিওএকটিভ ওয়েভ নিঃসৃত হয়। নিউট্রন স্টার এর ব্যাস প্রায় 30 কিলোমিটার হয় মাত্র, কিন্তু এর ঘনত্ব অত্যাধিক, গ্রভিটেশনাল ফিল্ড ও অনেক শক্তিশালী। আমাদের সূর্যের জায়গায় যদি একটি নিউট্রন স্টার স্থাপন করা হয় তাহলে সৌরজগৎ এ বেশ হেরফের ঘটে যাবে।
খ) সৌরভর ৩ এর বেশি হলে:
সৌরভর তিনের বেশি অর্থ আরো বেশি গ্র্যাভিটেশনাল অ্যাট্রাকশন ,আরো বেশি সংকোচন এবং আণবিক স্তরে ও সংকোচন। পূর্বে শুধুমাত্র ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসে পতিত হয়ে নিউট্রন গঠন করেছিল এবং প্রচুর ঘনত্বের একটি বলয় তৈরি করেছিল কিন্তু এবার সে আকর্ষণ আরো বেশি ,তাই বলয়টা এমন একটা স্টেটে চলে যাবে, যে অসীম ঘনত্ব ও গ্রাভিটির অধিকারী হবে এবং আয়তন নগণ্য হবে যার ফলে তৈরি হবে ব্লক হোল। এর গ্র্যাভিটেশনাল ফিল এতই স্ট্রং যে এনার্জি বা পার্টিকেল এই ফিল্ড হতে বের হয়ে যেতে পারে না।
এস্ট্রোনমি ফ্যাক্টস :
সূর্য কি রং এর,তা কি জানেন? আমরা সূর্য কে লাল-কমলা-হলুদ দেখলেও সেটা আসলে সাদা।মঙ্গলে সূর্যের রং নীল।
এক চামচ নিউট্রন স্টার এর ভর পৃথিবীর সকল মানুষের ভরের সমান।
নক্ষত্রের আকার যত বড় হয়,লাইফস্প্যান তত কম হয়
শনি গ্রহের ঘনত্ব পানির চেয়ে কম (৬৮৭Kg/m³) অর্থাৎ,শনি পানিতে ভাসবে।
মহাবিশ্বের মোট বস্তুর ৯৫% হল ডার্ক ম্যাটার+ডার্ক এনার্জি। মানে এর কোনো হদিস নেই ।
নিউট্রন স্টার সেকেন্ডে ৫০০ বার ঘোরে,,যা এখন পর্যন্ত পাওয়া সর্বোচ্চ।
Writer: Md Miraj Parvez
এক চামচ নিউট্রন স্টার এর ভর পৃথিবীর সকল মানুষের ভরের সমান।
নক্ষত্রের আকার যত বড় হয়,লাইফস্প্যান তত কম হয়
শনি গ্রহের ঘনত্ব পানির চেয়ে কম (৬৮৭Kg/m³) অর্থাৎ,শনি পানিতে ভাসবে।
মহাবিশ্বের মোট বস্তুর ৯৫% হল ডার্ক ম্যাটার+ডার্ক এনার্জি। মানে এর কোনো হদিস নেই ।
নিউট্রন স্টার সেকেন্ডে ৫০০ বার ঘোরে,,যা এখন পর্যন্ত পাওয়া সর্বোচ্চ।
Writer: Md Miraj Parvez
Tags:
Astronomy