তাহারেই পড়ে মনে-সুফিয়া কামাল



🔴লেখক পরিচিতিঃ

নাম- সুফিয়া কামাল
জীবনকাল- (২০ জুন, ১৯১১– ২০ নভেম্বর, ১৯৯৯)
জন্মস্থান- বরিশাল
মৃত্যুস্থান- ঢাকা
পিতা- সৈয়দ আবদুল বারী
মাতা- সাবেরা বেগম
স্বামী- সৈয়দ নেহাল হোসেন (মৃত্যুঃ ১৯৩২)
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ- সাঁঝের মায়া, মায়া কাজল, কেয়ার কাঁটা, উদাত্ত পৃথিবী।
প্রাপ্ত পুরস্কার- বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, নাসির উদ্দীন স্বর্ণপদকসহ বিভিন্ন পদকে ভূষিত হন।

🔴গুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রশ্নঃ

🔹ধরায় কি আসার বার্তা দেয়া হয়েছে?– ফাগুন।
🔹কহিল সে ____ আঁখি তুলি– স্নিগ্ধ।
🔹দক্ষিণ দুয়ার খোলা বলতে– দক্ষিণা বাতাসের প্রবাহকে বুঝিয়েছেন।
🔹বসন্তের আগমণ বোঝাতে কোন কোন লক্ষণ ব্যবহার করেছেন কবি?– বাতাবি নেবুর ফুল ও আমের মুকুল ফোটা।
🔹কবিভক্ত কবিকে বন্দনা গান রচনা করে বসন্তকে বরণ করে নেয়ার আকুতি জানিয়েছেন।
🔹বসন্ত কি লাভ করার কথা জিজ্ঞেস করেন কবি?– পুষ্পারতি।
🔹কবি কিভাবে বসন্তকে ব্যথা দিচ্ছেন বলে কবিভক্ত অভিযোগ করেছেন?– বসন্তকে উপেক্ষা করে।
🔹কবি প্রিয়জন হারানোর বেদনায় উদাস এবং অন্যমনস্ক।

🔴গুরুত্বপূর্ণ অনুধাবন মূলক লাইনঃ

📖"বাতাবি নেবুর ফুল ফুটেছে কি? ফুটেছে কি আমের মুকুল?"– পৃথিবীর বুকে বসন্তের আগমণের ব্যাপারে কবি যে উদাসীন ও অঅন্যমনস্ক তা কবির এই জিজ্ঞাসা দ্বারা প্রমাণিত।
📖" বসন্ত- বন্দনা তব কণ্ঠে শুনি– এ মোর মিনতি।"– প্রকৃতিতে বসন্তের আগমণ ঘটলেও কবি সেদিকে উদাসীন। তাও কবির প্ররি কবিভক্তের আবদার তিনি যেন আজই বসন্ত গীতি রচনা করেন।
📖"রহেনি, সে ভুলেনি তো, এসেছে তা ফাগুনে স্মরিয়া।"– প্রতিবারের মতো কবি বসন্তকে বরণ করে নেয়ার জন্য বন্দনা- গীতি রচনা না করলেও বসন্ত অপেক্ষা করে নি। ঠিক সময়েই চলে এসেছে, তাই কবির অনুযোগ তার সাহিত্য রচনা করলেও কি না করলেও কি বসন্ত ঠিকই প্রকৃতির বুকে চলে আসবে।
📖"কুহেলি উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী– গিয়াছে চলিয়া ধীর পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে"– শীত ঋতু প্রকৃতিতে রিক্ততার ছাপ আনে, গাছ- পালা পাতা ও পুষ্পশূন্য হয়। কবির ব্যক্তিজীবনেও এমন রিক্ততার ছাপ দিয়ে প্রিয়জন চলে গেছেন না ফেরার দেশে তাই তো প্রকৃতিতে বসন্ত ঋতু আসলেও কবি তার প্রতি উদাসীন।
📖" রিক্ত হস্তে! তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোনো মতে।"– শীত ঋতুতে প্রিয়জন হারানোয় যে রিক্ততা কবি জীবনে নেমে আসে তা যেন কোনো ভাবেই কবি ভুলতে পারছেন না।

🔴 শব্দার্থঃ

অলখ- অলক্ষক। দৃষ্টি অগোচরে।
পাথার- সমুদ্র।
পুষ্পারতি- ফুলেল বন্দনা বা নিবেদন।
মাশবী- বাসন্তী লতা বা তার ফুল।
অর্ঘ্য বিরচন- অঞ্জলি বা উপহার রচনা।
কুহেলি- কুয়াশা।
উত্তরী- চাদর। উত্তরীয়।

🔴 ছন্দ ও সংকলনঃ

'তাহারেই পড়ে মনে' কবিতাটি অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত এবং সর্ব প্রথম ১৯৩৫ সালে 'মাসিক মোহাম্মদী' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

🔴 মুলভাবঃ

প্রকৃতি সব সময় মানব মনকে অফুরন্ত আনন্দ দেয়। বসন্তের অপরূপ সৌন্দর্যে বিমোহিত হয় না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু মানুষের মন যদি শোকাচ্ছন্ন বা বেদনা- ভরাতুর থাকে তাহলে বসন্তের সৌন্দর্য মানুষের মনে প্রভাব ফেলতে পারে না। সকল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তার কাছে তুচ্ছ মনে হয়। প্রকৃতি ও মানবমনের এই সম্পর্কই কবিতার গুরুত্বপূর্ণ দিক। প্রিয়জন হারানোর বেদনায় শোকাচ্ছন্ন কবিমনে যে বসন্ত রেখাপাত করতে পারে নি তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
কবিতাটির আরেকটি লক্ষ্যণীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর নাটকীয়তা। গঠনরীতির দিক থেকে এটি সংলাপনির্ভর রচনা।
সবার জন্য শুভকামনা। 🖤


মোহাম্মদ আতিকুর রহমান

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম