বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত হচ্ছে π.পাইয়ের মান যে তিন আর চারের মাঝামাঝি হবে তা সহজেই বোঝা যায়। কিভাবে?
আমরা যদি একক বৃত্তের ( ব্যাসার্ধ 1 একক) মাঝে সুষম ষড়ভুজ আঁকি তাহলে কেন্দ্র থেকে (চিত্র ১) এর ন্যায় 6 টি সমবাহু ত্রিভুজ উৎপন্ন হবে।ষড়ভুজ এর পরিসীমা হবে 6*1=6একক।
আবার বৃত্তের পরিসীমা 2πr=2π*1>ষড়ভুজ এর পরিসীমা।তাহলে, π >3
আবার যদি বৃত্তের বাইরে (চিত্র ২) এর ন্যায় বর্গ আঁকি
তাহলে
বৃত্তের পরিসীমা < বর্গের পরিসীমা
বা,2π<8
বা,π<4
অর্থাৎ π, 3 থেকে বড় কিন্তু 4 থেকে ছোট।
কিন্তু মহান গণিতবিদ আর্কিমিডিস আরেকটু নিঁখুত মান চাইলেন।তিনি হেক্সাগনের ( ষড়ভুজ) বদলে একক বৃত্তের ভেতরে ডেকাগন (১২ ভুজ) আর বাইরের বর্গের বদলেও ডেকাগন ব্যাবহার করলেন।
(চিত্র ২.১)তাতে মান আসল,
π>6.212/2 বা,π>3.1326
π<6.431/2 বা,π♥.1597
এবার তিনি আরও অধিক বাহুবিশিষ্ট বহুভুজ ব্যাবহার করলেন, মান আরও নিঁখুত হলো। যত বেশি
বাহুবিশিষ্ট বহুভুজ ব্যবহার করা হবে মান ততই নিখুঁত হবে।আর্কিমিডিস শেষ পর্যন্ত 96 ভুজ ব্যবহার করে মান পেয়েছিলেন,
π>3.1408
π♥.1429
এরপর অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলো। একই পদ্ধতি ব্যবহার করে মান বের করা চলতে থাকল।যত বেশি বাহু ততই নিখুঁত মান।
ষোড়শ শতকের Francei's viete নামের ভদ্রলোক এর মান বের করতে 3,93,216বাহু বিশিষ্ট বহুভুজ ব্যবহার করেন।
Ludolph Van Ceulen তো আরও এক ধাপ উপরে। তিনি প্রায় ২৫ বছর ব্যায় করে 2^62 বাহু বিশিষ্ট বহুভুজ ব্যবহার করে মান নির্নয় করেন।সংখ্যাটা কতটা বড় ধারনা দেই।4,611,686,018,427,387,904 বাহু বিশিষ্ট বহুভুজ।
এত্তো বড় বহুভুজ ব্যবহার করার পরও তিনি দশমিকের পরে কতো ঘর পর্যন্ত মান বের করতে পেরেছিলেন জানেন?
মাত্র ৩৫ ঘর!!!
তার কবরে নাকি এই ৩৫ ঘর মান লেখা আছে।
এর থেকে বেশি বাহুর বহুভুজ নিয়ে আর কেউ কাজ করেনি। কাজ করার দরকাই পড়েনি।কারন গল্পে আসছে নতুন নায়ক।
সাল ১৬৬৬: অপেক্ষার পালা শেষ। আগমন ঘটেছে আমাদের ম্যাজিশিয়নের।তিনি তখন প্লেগের মহামারীর কারনে বাড়িতে বসে পলিনোমিয়াল নিয়ে কাজ করছিলেন।
আমরা জানি,
(1+x)^2= 1+2 x+x^2
(1+x)^3=1+3x+3x^2+x^3
এই দুইটা তো আমরা জানি।কিন্তু যদি পাওয়ার 4 বা তার বেশি হয় তাহলে কি করব।
সেক্ষেত্রে আমরা দুইটা উপায়ে করতে পারি
1. প্যাস্কেলের ত্রিভুজ।যদি আমরা উপরের সমীকরণ থেকে xগুলো বাদ দেই।তাহলে প্যাস্কেলের ত্রিভুজ (চিত্র ৩)পাব।যেমন
1
1 1
1 2 1
1 3 3 1
1 4 6 4 1
...... …......…….......
........
এর প্যাটার্ন টা হচ্ছে উপরের পাশাপাশি দুটো পদের
যোগফল নিচের টার সমান।লক্ষ্য করি উপরের সমীকরণ গুলোতে x বাদ দিলে কিন্তু 1 2 1 এর পর 1 3 3 1 এভাবে আসে।তার মানে পরেরটার জন্য
1 4 6 4 1 এভাবে আসত।
পদ্ধতি 2ঃ বাইনোমিয়াল থিওরেম ব্যবহার করে।
(1+x)^n= 1+nx+ nC2 x^2+nC3x^3+.......+x^ন
nCr=n!/(r!*(n-r)!)
n!= n*(n-1)(n-2)(n-3).....3*2*1
এতোদিন পর্যন্ত বাইনোমিয়াল থিওরেম ছিলো n শুধুমাত্র ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার জন্য। কিন্তু তিনি ভাবলেন নেগেটিভ হলে কেমন হয়।এর জন্য কি বাইনোমিয়াল থিওরাম কাজ করে।
তিনি ধরলেন n=-1বাইনোমিয়াল থিওরেমে বসানোর পর
(1+x)^-1=1-x+x^2-x^3+x^4-x^5+x^6.......-এরকম আসল।
কিন্তু এই মান সঠিক তিনি কিভাবে বুঝলেন।সিম্পল উভয় পাশে যদি (1+x) দ্বারা গুন করলে ডানপাশে আর বাম পাশের মান 1 হয় তাহলে কাজ করে।(চিত্র৪)
কারন (1+x)(1+x)^-1=1.
উভয় পাশে গুন করার পর মান সমান পাওয়া গেল।
(চিত্র৫) এ নেগেটিভ এর জন্য প্যাস্কেল ত্রিভুজ কেমন হবে দেখানো হয়েছে।
অর্থাৎ বাইনোমিয়াল থিওরেম নেগেটিভ এর জন্য কাজ করে।একটা অসীম সিরিজ পাওয়া যায়।
n পজিটিভের জন্য অসীম সিরিজ পাওয়া যায় না কারন একটা সময় n(n-1)(n-2)........(n-n+1)(n-n)
চলে আসে ফলে পুরোটাই ০ হয়।
এখানেই তিনি থেমে থাকলেন না এরপর ভগ্নাংশ দিয়ে চেষ্টা করেও দেখলেন থিওরেম কাজ করে।
প্যাসকেল ত্রিভুজ (চিত্র ৬/চিত্র ৭) এর মতো হয়।
যার মানে বর্গমূল, ঘনমূল বের করা এখন আগের থেকে অনেক সহজ।
১৬৬৬ সাল,প্লেগের মহামারী দেখে নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছেন কে আমাদের ম্যাজিশিয়ান।
হ্যাঁ স্যার আইজ্যাক নিউটন।আর তিনি ইতিমধ্যেই ক্যালকুলাস আবিষ্কার করে ফেলেছেন।
আমরা জানি, একক বৃত্তের সমীকরণ
x^2+y^2=1
বা, y= (x^2-1)^0.5
(চিত্র৮,৯,১০)
যেহেতু বাইনোমিয়াল ভগ্নাংশ এর জন্যও কাজ করে তাহলে আমরা (x^2-1)^0.5 এর জন্য একটা অসীম সিরিজ পাব।
তাহলে আমরা যদি 0 লোয়ার লিমিট
আর 1 আপার লিমিটে ইণ্টিগ্রেশন (y dx) করি(চিত্র১১)
তাহলে π/4এর জন্য একটা রাশি পাব।যেটা সমাধান করে 4 দ্বারা গুন করলেই π এর মান পাওয়া যাবে।
নিউটন কাজটা আরও নিখুঁত করতে চাইলেন।
তাই তিনি আপার লিমিট এক এর বদলে ০.৫ ধরলেন।(চিত্র ১২),(চিত্র ১৩)
এবার আরো নিখুত মান পাওয়া যাবে। এখন দশমিকের পর পাচ ঘর মান পাওয়ার জন্য সিরিজের
পাচ ঘর পর্যন্ত ইন্টিগ্রেশন ই যথেষ্ট। ২^৬২ ঘরের বহুভূজের বদলে সিরিজের মাত্র 50 ঘর পর্যন্ত ইন্টিগ্রেশন এর মান ই যথেষ্ট। যে কাজ করতে ২৫ বছর লেগেছিলো তা করতে ১ দিন ই যথেষ্ট ।
ব্যাপারটা এরকম আপনি বছরের পর বছর ধরে একটি কাজ করলেন আর একজন জাদুকর এসে আপনাকে মিনিটের মধ্যে হারিয়ে দিল।এখন পর্যন্ত পাইয়ের মান প্রায় দশমিকের পর ৩১ট্রিলিয়ন ঘর বের করা হয়েছে।যদিও নাসা তাদের ক্যাল্কুলেশনে মাত্র দশমিকের পর ১৫ ঘর মান ব্যাবহার করে।
source:
1.https://en.m.wikipedia.org/wiki/Pi
2.https://www.jpl.nasa.gov/edu/news/2016/3/16/how-many-decimals-of-pi-do-we-really-need/
3 মুল আইডিয়াঃhttps://youtu.be/gMlf1ELvRzc
Writer: Sourav Shome