"জীবন আমাকে দুটি শব্দের মধ্যে একটিকে বেঁছে নিতে বলেছিলো। হয় ভালোবাসা নয়তো ঘৃণা। আমি ভালোবাসাকেই বেঁছে নিয়েছিলাম। আর সেজন্যই আজ আমি এই অবস্থানে"।
-১৯৭৫ সালের ঘটনা। মিউজিক কম্পোজার আর কে শেখর মালায়ালাম সিনেমা পেন পাদার (১৯৭৫) মিউজিক কম্পোজিশনের কাজ করছিলেন। সিনেমার ৪টি গানের মধ্যে ৩টি গানের কাজ শেষ হওয়ার পর একটু বিরতি নিলেন তিনি। সে সময় সেখানে হাজির হলো তার ৯ বছর বয়সী ছোট্ট শিশুটি। এসেই হারমোনিয়ামে মিউজিক বাজানো আরম্ভ করলো। উপস্থিত সবাই হারমোনিয়ামে বেজে ওঠা টিউনের মেলোডিতে বিস্মিত হয়ে গেলেন। তারা শিশুটিকে একটি সম্পূর্ণ গানের টিউন বানিয়ে ফেলতে বললেন।
শিশুটি টিউন বানালো এবং সবাই সে টিউনটি এতোটাই পছন্দ করলেন যে, সেটিই মুভিতে যোগ করে দিলেন। গানটির টাইটেল রাখলেন "ভেল্লিতেন কিন্নাম পোল"। গানটি লিখেছিলেন বারানিককাভু শিবকুমার ও এতে কন্ঠ দিয়েছিলেন পি. জয়চন্দ্র। কেরালার কৈরালি-স্বরালয় অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে কিংবদন্তি মিউজিশিয়ান কে জে যেসুদাস এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। আর সে ছোট্ট ছেলেটিই হলো ৮১তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস-এ মিউজিক ডিপার্টমেন্টে ডাবল অস্কার উইনার আজকের "এ আর রহমান"।
যদিও এর হোল অর্কেস্ট্রা তার বাবা আর কে শেখর করেছিলেন। তবে মূল সুরটি এ আর রহমানেরই ছিলো। (তথ্যসূত্র-রাহমানিজম ডট কম)
-
"আমাদের প্রতেক্যের জীবনেই বিবর্তনের নিজস্ব ধারা আছে। চলার পথে আমাদের সবাইকে নানা ধরণের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয় যা প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জিং এবং অন্যদের থেকে একদম আলাদা। কিন্তু তারপরও কিছু সাধারণ মিল সবার মধ্যে থেকেই যায়। পরস্পরের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা নিয়েও আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। পরিশেষে, জীবনযাত্রায় আমরা সবাই একই গন্তব্যের দিকেই আগাই"।
উপরের উক্তিটি তারই, যার সুরের জাদুতে বিশ্বের দরবারে তিনি পরিচিত সুর সম্রাট হিসেবে। নিজের সুরের জাদুতে যে মানুষ অন্যের দুঃখ-কষ্ট-মন খারাপ এক মুহূর্তেই ভুলিয়ে দিতে পারেন, সেই মানুষটাই একটা সময়ে ছিলেন ডিপ্রেশনের শিকার। মাত্র ২৫ বছর বয়সেই নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন। তার ভাষ্যমতে, ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত আমি আত্মহত্যার কথা ভাবতাম। আমরা বেশিরভাগ মানুষই নিজেদের যথেষ্ট যোগ্য মনে করি না। বাবাকে হারানোর পর শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। সেই সময় আমার জীবনে অনেককিছু ঘটছিল। কিন্তু সেইসব ঘটনাই আমাকে সাহসী করে তোলে। মৃত্যু সবার কাছেই স্থায়ী বিষয়। সব সৃষ্টিরই যখন শেষ আছে, তখন কেন কোনও একটি বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন হবো?
১২ থেকে ২২ বছর বয়সের মধ্যে আমি গানের বিষয়ে সবকিছু শিখে নিয়েছিলাম। তাই সঙ্গীত পরিচালনা আমার কাছে সাধারণ বিষয় ছিল। তবে আমার একই কাজ করতে ভাল লাগত না। এজন্য বাবার মৃত্যুর কারণে আমি ৩৫টি সিনেমাতে কাজ করার অফার পেলেও, মাত্র দুটিতে কাজ করি। সবাই অবাক হয়ে প্রশ্ন করত, কীভাবে আমি বেঁচে থাকব? সবাই বলত সুযোগ কাজে লাগাতে। কিন্তু আমি সব অফার গ্রহণ করতে পারিনি। (তথ্যসূত্র- হিন্দুস্তান টাইমস)
চলুন তাহলে শুরু করা যাক নিজেকে প্রচণ্ড ব্যর্থ মনে করা সেই মানুষটার পরবর্তী বিশ্ব জয়ের গল্প...
╚═══► ব্যক্তিগত তথ্যসমূহ ◄═══╝
⏩পূর্ন নামঃ- আল্লাহ রাখা রহমান (পূর্ব নাম- এ. এস. দিলীপ কুমার)
⏩ডাক নামঃ- রহমান, এ. আর. রহমান, এ. আর. আর
⏩উপাধিঃ- ইসাই পুয়াল, মাদ্রাজের মোজার্ট
⏩পিতার নামঃ- আর. কে. শেখর
⏩মাতার নামঃ- কারিমা বেগম (পূর্ব নাম- কস্তুরি শেখর)
⏩জন্ম তারিখঃ- ৬ ই জানুয়ারি ১৯৬৭ সাল
⏩বয়সঃ- ৫৪ বছর
⏩জন্মস্থানঃ- মাদ্রাজ, তামিল নাড়ু, ভারত (বর্তমান চেন্নাই)
⏩বাসস্থানঃ- ফোর্থ স্ট্রিট, ড. সুব্বাইয়া নগর, কোদামবাকাম, চেন্নাই-২৪, তামিল নাড়ু, ভারত
⏩রাশি চক্রঃ- মকর
⏩ধর্মঃ- ইসলাম
⏩জাতীয়তাঃ- ভারতীয়
⏩স্কুলঃ- পদ্ম শেষাদ্রি বাল ভবন ও এম. সি. এন স্কুল, চেন্নাই
⏩কলেজঃ- মাদ্রাজ ক্রিশ্চিয়ান কলেজ, চেন্নাই
⏩শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ- বিএ (ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক্যাল মিউজিক)
⏩শখঃ- কিবোর্ড বাজানো ও মিউজিক নিয়ে চর্চা করা
⏩পেশাঃ- সুরকার, গায়ক, গীতিকার, সঙ্গীত প্রযোজক
🚺শারীরিক গঠনঃ-
⏩উচ্চতা (সেন্টিমিটারে): ১৬৫ সেন্টিমিটার
⏩(মিটারে)-১.৬৫ মিটার
⏩(ইঞ্চিতে)-৫'৫"
⏩ওজনঃ- ৭০ কেজি (প্রায়)
⏩বডি ফিগারঃ- ৩৯-৩৩-১২
⏩চোখের রঙঃ- বাদামী
⏩চুলের রঙঃ- কালো
👌পছন্দনীয় ব্যক্তি/বস্তুসমূহঃ-
⏩প্রিয় অভিনেতাঃ- রজনীকান্ত
⏩প্রিয় খাদ্যঃ- পালক পনির, রসম ভাত
⏩প্রিয় পানীয়ঃ- কফি
⏩প্রিয় পোশাকঃ- ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী পোশাক
⏩প্রিয় শিল্পীঃ- লতা মুঙ্গেশকর, কে এস চিত্রা, উদিত নারায়ণ
⏩প্রিয় গানঃ (নিজের করা)- Narumugaye (Iruvar), Ennavale Adi Ennavale (Kadhalan), Margazhi Thingal Allava (Sangamam), Kadhal Theenda (Udhaya), Veerapandi Kottayile (Thiruda Thiruda), Tere bina (Guru), Khwaja Mere Khwaja (Jodhaa Akber).
⏩প্রিয় খেলাঃ- ক্রিকেট
⏩প্রিয় গাড়ীঃ- টয়োটা ফরচুনার
╚═══► পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব ═══╝
⏩বাবাঃ- আর কে শেখর (সুরকার)।
⏩মাঃ- কারিমা বেগম।
⏩বোনঃ- এ আর রেহানা, ইশরাত কাদরি, ফাতেমা শেখর।
⏩স্ত্রীঃ- সায়রা বানু (বিবাহ- ১৯৯৫ সালের ১২ই মার্চ)।
⏩ছেলেঃ- এ আর আমিন (জন্ম- জানুয়ারি ৬, ২০০৩)।
⏩মেয়েঃ- খাদিজা রহমান (জন্ম- ২৮ জুলাই, ১৯৯৬) ও রাহিমা রহমান।
╚═══► যোগাযোগ ═══╝
ওয়েবসাইটঃ- www.arrahman.com/
ফেসবুকঃ- www.facebook.com/arrahman
টুইটারঃ- www.twitter.com/arrahman
ইনস্টাগ্রামঃ- www.instagram.com/arrahman
╚═══► প্রাথমিক জীবন ◄═══╝
১৯৬৭ সালে ৬ই জানুয়ারি চেন্নাইয়ের এক সঙ্গীতজ্ঞ হিন্দু পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন এ এস দিলীপ কুমার নামে। বাবা আর কে শেখর তখন মালয়ালম মুভিতে সুরকার রূপে কাজ করতেন। আর কে শেখরের তিন মেয়ের মধ্যে একমাত্র ছেলে ছিলেন তিনি। চার ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।
খুব ছোট বেলা থেকেই ছেলে দিলীপকে সাথে নিয়ে মুভি স্টুডিওতে যেতেন। দিলীপের বয়স যখন মাত্র চার তখন তাকে দক্ষভাবে হারমোনিয়াম বাজাতে দেখে অবাক হয়ে যান সঙ্গীত পরিচালক সুদর্শনম মাস্টার। তিনি কাপড় দিয়ে সেই হারমোনিয়ামের রিড (কিবোর্ড) ঢেকে দিলেও দিলীপ একইভাবে বাজিয়ে যান। সুদর্শনম মাস্টারের উপদেশে শেখর চার বছর বয়স থেকেই দিলীপকে মিউজিকে ট্রেইনিং দেয়ার ব্যবস্থা করেন। ধনরাজ মাস্টার হন তার টিচার। দিলীপ শেখা শুরু করেন পিয়ানো বাজানো।
-
যদিও সেই সময় বড় হয়ে দিলীপ হতে চেয়েছিলেন ইলেকট্রকিস অথবা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। এ আর রহমান তার স্মৃতিচারণে বলেন, মিউজিকের জন্য ততটা ক্রেইজি ছিলাম না যতটা ছিলাম টেকনোলজির প্রতি। ঘটনাচক্রে মিউজিক ও টেকনোলজি উভয়ের সম্মিলন হয় তার বাবা শেখরের সিনথেসাইজারের মাধ্যমে।
শেখর গিয়েছিলেন তার কাজে সিঙ্গাপুরে। ফেরার সময় তিনি এনেছিলেন একটি সিনথেসাইজার। সে সময় মিউজিক ও মুভি ওয়ার্ল্ডে সিনথেসাইজার ছিল অতি দুর্লভ একটি বাদ্যযন্ত্র। শিশু দিলীপ এই যন্ত্রে গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিনথেসাইজার নিয়ে বহু রকমের মিউজিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট করতে থাকেন। আর এভাবেই একসময় মিউজিকের প্রতি তিনি ঝুঁকে পড়েন।
╚═══► ধর্মান্তরিত ও নামকরণ ◄═══╝
মাত্র নয় বছর বয়সে ১৯৭৬ সালে বাবাকে হারানোর পর মাকে কেন্দ্র করেই বেড়ে উঠেছেন এ আর রহমান। ছোট বেলায় ধর্মে খুব একটা বিশ্বাস করতেন না এ আর রহমান।
১৯৮৮ সালে অর্থাৎ দিলীপের বয়স যখন একুশ তখন তার এক বোনের গুরুতর অসুখ হয়। কোনো চিকিৎসাতেই কাজ হচ্ছিল না। সবাই যখন হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন তখন পরিবারের এক বন্ধুর উপদেশে তারা যান শেখ আবদুল কাদের জিলানি নামে এক মুসলিম পীরের কাছে। যিনি পীর কাদরি নামে পরিচিত ছিলেন।
পিতার রোগের সময় ওই একই পীরের কাছে তার পরিবার গিয়েছিলেন। কিন্তু তখন পিতার অন্তিম সময় বলে পীর কিছু করতে পারেননি। এবার বোনের অসুখের সময় তাই আর দেরি করেননি। পীরের দোয়ায় অতি আশ্চর্যজনকভাবে দিলীপের বোন দ্রুত সেরে ওঠেন। পিতা ও বোনের অসুখের সময় সমাজের অবহেলা এবং তার বিপরীতে পীরের সদুপদেশ ও সাহায্য গভীরভাবে প্রভাবিত করে তরুণ দিলীপকে ধর্মান্তরিত হতে। এরপর তিনি ও তার পুরো পরিবার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। দিলীপ হয়ে যান এ আর রহমান। তবে তার নামকরণের পেছনেও রয়েছে আরেকটি গল্প।
দিলীপের মা জ্যোতিষবিদ্যায় বিশ্বাসী ছিলেন। ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে তিনি তার ছেলেকে নিয়ে যান এক জ্যোতিষীর কাছে এবং অনুরোধ করেন একটি শুভ মুসলমান নাম দিতে।
দিলীপকে দেখে ওই জ্যোতিষী তাৎক্ষণিকভাবে তার নাম আবদুল রহমান এবং সংক্ষেপে এ আর রহমান রাখতে উপদেশ দেন। দিলীপের মা এতে অবাক হয়ে প্রশ্ন করেন, আবদুল রহমানের সংক্ষেপিত নাম তো এ রহমান হওয়া উচিত। এ আর রহমান হবে কী করে? জ্যোতিষী উত্তর দেন, তার নাম আবদুল হলেও রহমানের আগে দুটি আদ্যক্ষর রাখলে সে বিশ্বখ্যাত হবে। তাই শুধু এ নয়, এ আর ই রাখতে হবে।
কস্তুরী ওরফে কারিমা বেগম ঠিক তাই করেন। দিলীপের নাম রাখেন এ আর রহমান। পরে ইন্ডিয়ার টপ সুরকার নওশাদ আলী যিনি পশ্চিমি সঙ্গীতে পারদর্শী ছিলেন তার সংস্পর্শে যখন এ আর রহমান আসেন তখন তিনি উপদেশ দেন আবদুলটা বদলে ফেলে বিখ্যাত তবলা বাদক আল্লা রাখার নামে এ আর রাখতে।
এভাবেই এ এস দিলীপ কুমার থেকে ওরফে আবদুল রহমান থেকে আল্লা রাখা রহমান ও এ আর রহমানের পর্যায়ক্রমিক নামান্তর ঘটে।
একটি সাক্ষাৎকারে এ আর রহমান বলেছিলেন, কিংবদন্তী অভিনেতা দিলীপ কুমারের প্রতি কোনও ভাবেই কোনও অসম্মান নেই আমার। কেবল আমার মনে হয়েছিল যে আমার সঙ্গে এই নামটা যাচ্ছে না। আমার আসল নাম দিলীপ কুমার কোনওদিনই পছন্দ ছিল না। আমার মনে হত, ওই নামটার সঙ্গে আমার ব্যক্তিত্বের কোনও মিল নেই। আমি অন্য মানুষ হতে চাইতাম। অতীতের সব বোঝা ঝেড়ে ফেলে আমি নতুন মানুষ হতে চাইতাম। এ কারণে আমি আমার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
এছাড়া আরোও বলেন, ইসলাম আমাকে শান্তি দিয়েছে। দিলীপ রূপে আমি একটা হীনম্মন্যতায় ভুগতাম। এ আর রহমান হয়ে আমার মনে হয় পুনর্জন্ম লাভ করেছি।
╚═══► উপাধি ◄═══╝
"Wolfgang Amadeus Mozart" ছিলেন পশ্চিমা সঙ্গীতের একজন বিখ্যাত ও প্রভাবশালী সুরকার। যিনি ১৭৫৬ সালের ২৭ই জানুয়ারি অস্ট্রিয়ার ভিয়েনাতে জন্মগ্রহণ করেন। প্রায় ৬০০ টির অধিক সুর করে গিয়েছিলেন মাত্র ৩৫ বছরের জীবনীতে। তন্মধ্যে অসংখ্য সুর সিম্ফোনিক, কনসার্টেন্ট, চেম্বার, গীতিনাট্যধর্মী, ও দলীয় সঙ্গীতের শীর্ষ সুর বলে বিবেচিত হয়। তিনি ধ্রুপদী সুরকারদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় প্রভাব বিস্তারকারী এবং পরবর্তী পশ্চিমা শৈল্পিক সঙ্গীতে তার প্রভাব অনস্বীকার্য। বলা হয়ে থাকে "পরবর্তী ১০০ বছরেও এমন প্রতিভা দেখা যাবে না।"
আর সেই কিংবদন্তীর নামেই তাঁকে 'মাদ্রাজের মোজার্ট' ও আরেক কিংবদন্তি "Ludwig van Beethoven" এর অনুকরণে 'বলিউডের বিথোভেন' উপাধীতে ভক্তরা তাকে ভূষিত করেন। তবে এদের সাথে নিজেকে জড়ানোটা একদমই পছন্দ করেন নাহ এ আর রহমান।
এছাড়া "ইসাই পুয়াল" যার অর্থ "সঙ্গীতের ঝড়" নামেও ডাকা হয় তাকে।
╚═══► ফিল্মি ক্যারিয়ার ◄═══╝
মাত্র ৯ বছর বয়সে বাবাকে হারানোর পর পুরো সংসারের দায়ীত্ব এসে পড়ে তার কাধে। এরপর তিন বোন ও মা কে সাথে নিয়ে নিজের জীবন সংগ্রামে শুরু হয় তার পথচলা। তখন বাবার দুটো কি-বোর্ড ভাড়া দিয়েই সংসার চলত তাদের। এরপর ১১ বছর বয়স থেকেই বিভিন্ন অর্কেস্ট্রা গ্রুপের সাথে কি-বোর্ড বাজাতে শুরু করেন তিনি। সঙ্গীতকে ভালোবেসে নয়, পেট চালানোর জন্য। মাত্র ৫০ রুপি দিয়ে শুরু করেছিলেন ক্যারিয়ার। আর এভাবেই আস্তে আস্তে তার শয়নে-স্বপনে জাগরণে বাসা বাঁধতে শুরু করে তার সপ্তসুর।
-
শুরুর দিকে তিনি ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে ডকুমেন্টারির জন্য মিউজিক কম্পোজ করতেন। ১৯৮৭ সালে তিনি ঝুঁকে পড়েন বিজ্ঞাপনের দিকে। বছর পাঁচেকের মধ্যে তিনি ৩০০টিরও বেশি জিঙ্গেল কম্পোজ করেন। তার সুর করা জিঙ্গেলগুলোর মধ্যে কয়েকটি বেশ বিখ্যাত ছিল। যেমন টাইটান ওয়াচের জিঙ্গেল।
১৯৮৯ সালে "পাঞ্চাথান রেকর্ড ইন" নামের ছোট একটি স্টুডিওর মাধ্যমে নিজস্ব সঙ্গীত জগতের সূচনা করেন তিনি। পরবর্তীতে এটি ভারতের অন্যতম সেরা সাউন্ড রেকর্ডিং স্টুডিও হিসেবে নাম করে। তর্কসাপেক্ষে এটিকে এশিয়ার অন্যতম অত্যাধুনিক স্টুডিও হিসেবেও বলা হয়ে থাকে।
অ্যাডভার্টাইজিং অ্যাওয়ার্ডের এক অনুষ্ঠানে রহমানের সাথে দেখা হয় ভারতের অন্যতম সেরা পরিচালক মনি রত্নমের। তিনি বেশ কিছু সুরের নমুনা দেখান তাকে। মনিরত্নম তখন সেই সুরগুলো এতটাই পছন্দ করেন যে সঙ্গে সঙ্গে রহমানকে তার পরবর্তী মাল্টিল্যাংগুয়াল 'Roja (1992)' সিনেমাতে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেন। যদিও তৎকালীন সাউথের সবচেয়ে সেরা মিউজিশিয়ান ইলায়ারাজা'র সাথে দ্বন্দ্ব হওয়ায় মনি রত্নম ইলায়ারাজার সাথে জুটি ভাঙ্গার ফলে এ আর রহমান সুযোগটি সহজেই পেয়ে যান। প্রথম সিনেমার এলবাম দিয়েই বাজিমাৎ। রোজা সিনেমা যতটা চলেছে তার পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিলো মিউজিকের। এই সিনেমাটি তাকে দেশজোড়া খ্যাতি, সাফল্য আর পরিচিতি এনে দেয়। পাশাপাশি প্রথম সিনেমাতেই ফিল্মফেয়ার, ন্যাশনাল এওয়ার্ডস সহ অসংখ্য এওয়ার্ডস। যা এখন পর্যন্ত ডেব্যুট্যান্ট হিসেবে এক অনন্য রেকর্ড। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কারণ বিশ্ব জয়ের গল্পটা যে এখান থেকেই শুরু।
এরপর একে একে জেন্টালম্যান, কাধালান, ইন্ডিয়ান, বোম্বের মতো দেন মাস্টারপিস এলবাম। এবং পরপর সবগুলো বছরেই জয় করে নেন ফিল্মফেয়ার এওয়ার্ডস।
-
এরপর বলিউডে ১৯৯৫ সালে পরিচালক রাম গোপাল ভর্মার হাত ধরে রঙ্গিলার মধ্য দিয়ে অভিষেক ঘটে। এই সিনেমার এলবাম এতটাই প্রভাব ফেলেছিলো যে, বলা হয়ে থাকে এই সিনেমার বক্স অফিসের সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছিলো মিউজিক। এবং বলিউডে এসেও নিজের জাত চেনাতে একদম বেশি সময় নেননি। এই সিনেমাতেও ফিল্মফেয়ারের পাশাপাশি অসংখ্য পুরস্কার জয় করেন। একই বছরে দেন কালজয়ী এলবাম "বোম্বে"। অনেকের মতে এটিই এ আর রহমানের করা সেরা কাজ। এই এলবামের থিম মিউজিকে একবার ওয়েস্টার্ন থেকে ইন্ডিয়ান মিউজিকে আবার ওয়েস্টার্ন মিউজিক থেকে ইন্ডিয়ানে অত্যন্ত সাবলীল ভাবে করেছেন। এলবামটি ১.২ কোটি কপি সারা বিশ্বে বিক্রি হয়।
বোম্বে সম্পর্কে তার বক্তব্য ছিলো এরকম যে, কোন মিউজিকই যদি এতটা লিরিক্যাল হয় তবে এতে আর আলাদা লিরিকের প্রয়োজন হয়না। আর সেটাই আমি করে দেখাতে চেয়েছিলাম। এই মিউজিক এলবামের মধ্য দিয়েই তিনি বিশ্ব দরবারে সুপরিচিতি লাভ করেন।
-
১৯৯৭ সালে এ আর রহমান ভারতের জাতীয় সঙ্গীতকে নতুনভাবে পরিবেশন করেন। এ নিয়ে তার বক্তব্য ছিলো, মানুষকে ভালো কিছু দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো। একদম খাঁটি, যা আমার মন থেকে বানানো ছিলো। "বন্দে মাতারাম" যেটি ১৫ লক্ষ কপি সারাবিশ্বে বিক্রি হয়। আর এই গানের মাধ্যমেই তিনি ভারতের "ইউথ আইকন" হয়ে উঠেন।
এরপরেই তিনি তার প্রথম ইন্ডিয়ান কনসার্টে অংশগ্রহণ করেন। যদিও এটি ছিলো তামিল গানের কনসার্ট।
এরপর ১৯৯৮ সালে দুবাইয়ে নিজের প্রথম ইন্টারন্যাশনাল কনসার্টে অংশগ্রহণ করেন। এত পরিমাণ মানুষের উপচে পড়া ভিড় জমে যায় যে পুলিশ লাঠিচার্চ করতে বাধ্য হয়। প্রায় ৪১ হাজারের বেশি দর্শককে যায়গা দেওয়ার পরেও ৫ হাজার লোককে ফেরত পাঠাতে হয় যায়গা স্বল্পতার কারণে। মাত্র দুই বছরেই একজন ইন্ডিয়ান মিউজিশিয়ানের জন্য যা ছিলো তৎকালীন সময়ে অকল্পনীয়। যা থেকেই বুঝা যেতো তার মিউজিকে মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য কি পরিমাণ যাদু ছিলো।
-
এরপর একে একে তিনি 'দিল সে' (১৯৯৮), 'তাল' (১৯৯৯), 'আলাইপায়ুথে' (২০০০), 'লাগান' (২০০১) এর মতো বিখ্যাত সব চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করে টপ চার্ট সাউন্ডট্র্যাক অ্যালবামে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করে নেন। এর মধ্যে 'লাগান' প্রথম ভারতীয় চলচ্চিত্র হিসেবে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড বা অস্কারে মনোনয়ন পায়।
"তাল" সিনেমার স্মৃতিচারণে জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী "আলকা ইয়াগনেক" বলেন, একদিন হঠাত এ আর আমাকে ফোন দিয়ে বলে আগামীকাল তোমাকে চেন্নাই আসতে হবে এই সিনেমার টাইটেল সংটা গাওয়ার জন্য।
আমাকে রাত নয়টার সময় আসতে বলেছিলো, কিন্তু রাত ১১-১২ টা বাজেও আমি কারোই কোন খোঁজ পাচ্ছিলাম নাহ। হঠাত রাত আড়াইটার সময় দেখি সে হাজির। দেখলাম ও একদম ফ্রেশ মুডে, আর আমি এদিকে প্রায় ঘুমে আচ্ছন্ন। এরপর আমাকে বললো চলো এবার শুরু করা যাক।
এরপর আমাকে দিয়ে গাওয়ানো শুরু করলো। হঠাত একটু পরপর আলাদা আলাদা স্টাইলে গাইতে বললো। এরপর ও নিজের মতো করে কিছুটা যোগ করলো। আর এভাবেই এ গানটি তৈরি হয়। পরবর্তীতে এই সিনেমার জন্য এ আর হরমান বেস্ট মিউজিক ও আলকা ইয়াগনেক এই গানের জন্য ফিল্মফেয়ার জিতে নেন।
মূলত তিনি মধ্যরাত বা ভোরবেলা কাজ করতে বেশি পছন্দ করেন। একমাত্র লতা মুঙ্গেশকর বাদে প্রায় সকলের সাথেই তিনি রাতের দিকে কাজ করেছেন।
মঞ্চ, বলিউডের চলচ্চিত্রে কাজ করার পাশাপাশি তিনি তার সুরের প্রভাব বিস্তার করা শুরু করেন হলিউডেও। সত্যিকার অর্থে পশ্চিমা জগতে রহমান ব্রেক পান "স্লামডগ মিলিয়নিয়ার" চলচ্চিত্রের 'জয় হো' গানটির মাধ্যমে। এই গানটি তাকে অস্কার অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড পর্যন্ত এনে দেয়। এছাড়াও বিভিন্ন সময় সেরা সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে গোল্ডেন গ্লোব, ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি ফর ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন আর্টস (বাফটা) প্রভৃতি আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হোন। ২০১০ সালে তিনি 'জয় হো'র জন্যই গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড পান।
-
কম্পোজিশনের পাশাপাশি তিনি একজন অসাধারণ ভোকালিস্টও। হাইপিচ, স্পিরিচুয়ালিটি তার কণ্ঠের অনন্য বৈশিষ্ট্য। এ আর রহমানের কণ্ঠের প্রথম গান মুভি বোম্বের (১৯৯৫) ‘হাম্মা হাম্মা’। তবে বন্দে মাতরাম (বন্দে মাতরাম), লুকা ছুপি (রাঙ্গ দে বাসন্তী), তেরে বিনা (গুরু), খাজা মেরে খাজা (যোধা আকবর), ও... সয়া (স্লামডগ মিলিয়নেয়ার), রেহনা তু (দিল্লি-৬) ইত্যাদি ট্র্যাকগুলোকে তার ভোকাল মাস্টার পিস বলা যেতে পারে।
তিনিই একমাত্র ইন্ডিয়ান মিউজিশিয়ান, যার অ্যালবাম বিশ্বজুড়ে ২০ কোটি কপির চেয়েও বেশি বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া আপকামিং মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ও নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী, অস্ট্রেলিয়ান অভিনেত্রী মিশেল মেগান এবং জনপ্রিয় বাংলাদেশি সঙ্গীতশিল্পী ও অভিনেতা তাহসান রহমান খান অভিনীত "নো ল্যান্ডস ম্যান" চলচ্চিত্র সুরকার হিসেবে থাকছেন। পাশাপাশি চলচ্চিত্রের প্রযোজনায় এ আর রহমানের সঙ্গে থাকছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রযোজক শ্রীহরি শাথে, স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী, নুসরাত ইমরোজ তিশা ও বাংলাদেশি অনলাইন স্ট্রিমিং সাইট বঙ্গবিডি।
╚═══►বৈবাহিক জীবন═══╝
ক্যারিয়ারের যখন তুঙ্গে অর্থাৎ নিজের আর্থিক স্বচ্ছলতা চলে আসে ঠিক তখনি এ আর রহমান বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তার মাকে নিজের পছন্দের ব্যাপারে খুলে বলেন এবং সেই অনুসারেই তার মা মেয়ে খোঁজা শুরু করেন।
তিনি তার মাকে বলেছিলেন- প্রথমত শিক্ষিত হতে হবে, এরপর সুন্দরী ও সর্বোপরি নম্র, ভদ্র হওয়া চাই।
এরপর তার মা এমন একটি মেয়ের সন্ধান পায় যার নাম ছিলো মেহের। এবং তার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যান কারিমা বেগম। কিন্তু মেহেরের বাবা মেহেরকে তখন বিয়ে না দেওয়ার প্রস্তাব দেন, কারণ তখন মেহেরের আরো একটি বড় বোন ছিলো। তাই বড় মেয়ের আগে মেহেরের পরিবার ছোট মেয়েকে বিয়ে দিবে নাহ।
এরপর মেহেরের বড় বোন সায়রা বানুকে দেখার পর তাকেই উপযুক্ত বলে রহমানের মা মনে করেন এবং বিয়ের প্রস্তাব দেন।
এরপর নিজেদের মধ্যে আলাপনের সময় সম্পর্কে রহমান বলেন- বিয়ের আগে আমাদের কথোপকথন হয়েছিল, নইলে আমরা অনেক আগেই আলাদা হয়ে যেতাম। এটি ছিল তাঁর প্রতি আমার একমাত্র চাওয়া। আমি তাকে বলেছিলাম, আমরা যদি রাতের খাবারের টেবিলে বসে থাকি এবং সে সময় যদি আমার নিজের মধ্যে কোন সুর অনুভব করি তবে অবশ্যই তখন আমাকে কাজে ফেরার জন্য বাধা প্রদান করতে পারবেনা।
অবশেষে ১৯৯৫ সালের ১২ই মার্চ ২৯ বছর বয়সে বিয়ের পিড়িতে বসেন এ আর রহমান। এবং সাইরা বানুর বয়স ছিলো তখন ২১ বছর।
পরের বছর তাদের এই ভালোবাসার প্রথম ফুল ফুটে মেয়ে খাদিজা রহমান (জন্ম- ২৮ জুলাই, ১৯৯৬)। এরপর ২য় মেয়ে রাহিমা রহমান এর জন্মের পর তাদের ঘর আলোকিত করে আসেন পুত্র এ আর আমিন (জন্ম- জানুয়ারি ৬, ২০০৩)।
বিয়ে সম্পর্কে এ আর রহমানের অভিমত, এটি আমার কাছে মজার আবার আতঙ্কেরও। পরিবারের উপর আনুগত্যটা যেনো দুভাগ হয়ে যায়। একদিকে স্ত্রী ও অন্যদিকে মা। কিন্তু সামাজিক বিভেদ তখন ছিলো। তবে সবকিছু মিলিয়ে আমার কাছে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিলো এটার মুখমুখি হওয়া।
👏এওয়ার্ডসঃ-
শুধুমাত্র এওয়ার্ডস বা প্রাপ্তি দিয়েও যদি তাকে পরিমাপ করা হয়, তাহলে তার সমকক্ষ অর্থাৎ ধারে কাছেও কোন মিউজিশিয়ান নেই ইন্ডিয়া সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাসে। যার প্রমাণ-
⏩ ২ টি অস্কার (একাডেমি) এওয়ার্ড।
⏩ ১ টি ব্রিটিশ একাডেমি অব ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন আর্টস এওয়ার্ড (বাফটা), ১ টি গোল্ডেন গ্লোব এওয়ার্ড, ৩ টি ওয়ার্ল্ডওয়াইড সাউন্ডট্রাক এওয়ার্ড, ২টি গ্র্যামি এওয়ার্ডস।
⏩ ভারতীয় সরকারের পদ্মভূষণ, পদ্মশ্রী সম্মাননা।
⏩ স্থানীয় সরকার হতে মধ্যপ্রদেশ সরকারের থেকে Lata Mangeshkar Award, উত্তর প্রদেশ থেকে Awadh Samman, তামিলনাড়ু থেকে Kalaimamani সম্মাননা পেয়েছে।
⏩ বিশ্বের অনেক দেশ থেকে ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অগণিত সম্মাননা।
⏩ ৫ টি বিশ্ববিদ্যালয় (Anna University- 2009, Aligarh University- 2009, Middlesex University- 2009 Royal Conservatoire of Scotland- 2014, Berklee College of Music- 2014) থেকে অনারারি ডক্টরেট।
⏩ ৬ টি ন্যাশনাল এওয়ার্ড (Roja-1992-Tamil, Minsara Kanavu-1996-Tamil, Lagaan-2001-Hindi, Kannathil Muthamittal-2002-Tamil, Kaatru Veliyidai-2017-Tamil, Mom-2017-Hindi)।
⏩ ৬ টি তামিলনাড়ু স্টেট এওয়ার্ডস, ১৫ টি বলিউড ফিল্মফেয়ার, ১৭ টি সাউথ ফিল্মফেয়ার ও ৫টি বিজয় এওয়ার্ডস।
সবমিলিয়ে ১৫৯টি নমিনেশন সহ ১৩৬টি এওয়ার্ডস সম্মাননা।
╚═══► এ আর রহমান সম্পর্কে জানা-অজানা আরোও কয়েকটি তথ্য ◄═══╝
✔ যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পশ্চিমা শাস্ত্রীয় সংগীত অধ্যয়ন করেছেন।
✔ ২০০২ সালের লরেন্স অলিভিয়ার থিয়েটার অ্যাওয়ার্ডের (দ্যা হিল্টন অ্যাওয়ার্ড) সেরা নিউ মিউজিক ক্যাটাগরিতে "বোম্বে ড্রিমস" এর জন্য মনোনীত হয়েছিলেন।
✔ ১৫ ই আগস্ট, ১৯৯৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে "বন্দে মাতরম" নামে একটি অ্যালবাম প্রকাশ করেন।
✔ অ্যালবামটি সারা বিশ্বে একইসাথে ২৮ টি দেশে প্রকাশিত হয়েছিল, এবং এ আর রহমান নিজেই নয়াদিল্লির একটি কনসার্টে মাননীয় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সহ সবার সামনে গেয়েছিলেন। এটি ভারতে ১২ লক্ষেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল।
✔ ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের "জন উইলিয়ামস" নামেও পরিচিত তিনি।
✔ ২০১৩ সালে এ আর রহমানের প্রতি সম্মান জানিয়ে কানাডার অন্টারিও শহরের মার্কহ্যামে তার নামান্তরে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়।
✔ তথ্যমতে, এয়ারটেলের সিগ্নেচার টিউন যেটি এ আর রহমান কম্পোজ করেছিলেন সেটি প্রায় ১৫০ মিলিয়নের অধিক ডাউনলোড করা হয়েছিলো এবং এখন পর্যন্ত এটিই সর্বোচ্চ ব্যবহার করা মোবাইল মিউজিক টিউন৷
✔ ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার থেকে ক্রিসমাস উপলক্ষে এ আর রহমানকে হোয়াইট হাউজে ডিনারের জন্য একটি ইনভাইটেশন কার্ড পাঠানো হয়।
✔ ২০১১ সালে GQ লিজেন্ড অব দ্যা ইয়ার নির্বাচিত হোন তিনি।
✔ এ আর রহমানের "ছাইয়া ছাইয়া" গানটি হলিউড সিনেমা ড্যানজেল ওয়াশিংটন অভিনীত "Inside man" সিনেমায় ব্যবহার করা হয়।
✔ নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন।
✔ ধুমপান ও মদ্যপান থেকে সবসময় নিজেকে বিরত রাখেন।
✔ এ আর রহমান এবং তার পুত্র এ আর আমিনের জন্ম তারিখ একই দিনে।
✔ একমাত্র ভারতীয় মিউজিশিয়ান যিনি ‘বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত সংগীত শিল্পীদের’ তালিকায় স্থান পেয়েছেন।
✔ তার বোন ইশরাত রহমান তামিল সিনেমা 'Mettukudi" ও "Pokkiri" তে কণ্ঠ দিয়েছিলেন।
✔ একমাত্র এশিয়ান যিনি একই বছরে দুইটি অস্কার পান।
✔ অস্কার বিজয়ী গান "জয় হো" প্রথমে সালমান খান অভিনীত-যুবরাজের জন্য রচিত হয়েছিল।
✔ ২০০৬ সালে তিনি তার নিজের মিউজিক কোম্পানি "কে এম মিউজিক" চালু করেন।
✔ ২০০৭ সালে "Limca Book of Records" এ সংগীতে অবদানের জন্য সেরা ভারতীয় হিসেবে নিজের নাম লেখান।
✔ ২০০৯ সালে প্রকাশিত এমাজনের "The 100 Greatest World Music Albums of All Time" এ তার কম্পোজ করা "লাগান" সিনেমার এলবামটি ৪৫ তম স্থান লাভ করেন।
✔ ২০০৫ সালে বিখ্যাত ফিল্ম ক্রিটিক "Richard Corliss" তার তৈরী করা ১০টি ডেব্যুট্যান্ট এলবামের মধ্যে তার কম্পোজ করা "রোজা" এলবামটি রাখেন।
✔ ২০০৯ সালে টাইম ম্যাগাজিন তাকে বিশ্বের সর্বাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় যুক্ত করে।
✔ ২০০৯ সালে লন্ডনের ওয়ার্ল্ড মিউজিক ম্যাগাজিন তাকে “ভবিষ্যৎ পৃথিবীর মিউজিক আইকন“ দের মধ্যে একজন বলে অভিহিত করে।
✔ ২০০২ সালে বিবিসি তাদের এক জরিপের প্রতিবেদনে জানায়, সর্বকালের সেরা জনপ্রিয় গানগুলো বাছাইয়ের জন্য ১৫৩ টি দেশের মোট ৭০০০ গান বাছাই করা হয়। যেখানে সেরা ১০ এর মধ্যে ৯তম পজিশনে ছিলো তার কম্পোজ করা "ছাইয়া ছাইয়া" গানটি।
✔ তার কম্পোজ করা "মা তুঝে সালাম" গানটি ২৬৫ টি ভাষায় গেয়ে গ্রিনিজ বুকে নাম লেখান।
✔ কানাডার সরকার থেকে কানাডিয়ান সিটিজেনশীপ তাকে প্রদান করা হয়। তবে তিনি নম্রভাবেই সেটি নাকোচ করে দেন।
✔ ৫৭তম ফিল্মফেয়ারে ২০১১ সালে ২৫০০তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কারটি এ আর রহমান পেয়েছিলেন৷ যেটি ছিলো পিসি জুয়েলার্সের ডিজাইন করা হিরক খচিত একটি ট্রফি।
✔ হলিউডের Mick Jagger, Dave Stewart ও Joss Stone এর সাথে মিলে "Superheavy" নামের একটি গান করেন।
✔ জনপ্রিয় পপ তারকা "মাইকেল জ্যাকসন" এর মৃত্যুর দুইমাস পূর্বে এ আর রহমান দেখা করেন।
✔ ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা ফুটবলার "পেলে" এর বায়োপিকে তিনি মিউজিক দেন।
✔ ২০০০ সালে এ আর রহমানেরই জিঙ্গেলে একটি ফরাসি বিজ্ঞাপনে দেখা গিয়েছিল জিনেদিন জিদানকেও।
এছাড়া বিভিন্ন সেলিব্রেটিদের মতামত নিম্নে দেওয়া হলোঃ-
জাভেদ আখতার- "রহমান এমন এক ব্যক্তি যে সবকিছু পালটে দিয়েছে। ও ইন্ডিয়ান মিউজিক লিসেনার ও মিউজিক মেকারদের এক নতুন দিশা দেখিয়েছে। পাশাপাশি সাউন্ড, অর্কাস্ট্রেশন ও গানের গঠনেও নতুনত্ব এনে দিয়েছে। ও ইন্ডিয়ান মিউজকের আসল বুনিয়াদটাকেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে"।
শেখর কাপুর- "সন্দেহ আছে পৃথীবিতে এমন কোন মিউজিশিয়ান আছে যে ওর থেকে বেশি জানে। পৃথীবির যেকোনো প্রান্তে এমন কেও আছে যে ওর চেয়ে মিউজিক টেকনোলজি সম্পর্কে বেশি জানে"।
রণবীর সিং- "আমি খুব ছোটবেলা থেকেই তার মিউজিকের অনেক বড় ফ্যান। সেই 'রোজা' সিনেমার এলবাম থেকেই প্রতিটা এলবাম শুনে আসতেছি। তাকে পরিমাপ করার মতো এরকম কোন বিশেষণ আমার জানা নেই। অবশ্যই একজন জীবন্ত কিংবদন্তি"।
সেলেনা গোমেজ- "আমি তাকে খুব পছন্দ করি। বিশ্বব্যাপীই সে এখন জনপ্রিয়। তার সাথে একসঙ্গে কাজ করতে চাই অথবা তার কোন একটি কাজের অংশ হিসেবে থাকতে চাই। তবে সবচেয়ে ভালো হতো যদি কোন বলিউড সিনেমার গানে তার সাথে কাজ করতে পারতাম"।
আসলে ওনার সম্পর্কে সকলের অভিমত প্রায় একই রকম। কারণ এই মানুষটা হলিউডকে বাধ্য করেছেন বলিউড বা ইন্ডিয়ান মিউজিক সম্পর্কে নাক সিঁটকানো মনোভাব ছাড়তে।
╚═══► পরিশেষে কিছু কথা ◄═══╝
ঝোক ছিলো কম্পিউটারের প্রতি। সেখান থেকে কঠিন এক বাস্তবতায় নিজের জীবনের উত্থান পতন দেখলেন। একসময় চেয়েছিলেন নিজেকে শেষ করে দিতে। এরপর যখন ঘুরে দাঁড়ালেন, পুরো বিশ্বকে জয় করে ফেললেন। তাঁর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাঁর কাজ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবসময় চাই নতুন কিছু করতে। এজন্যই নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করার চেষ্টা করি। নতুন কিছু বানানোর চেষ্টা করি। তবে এইসব কিছুর জন্য কাজের বাইরেও নিজেকে কিছুটা সময় দেওয়া দরকার। যেমন আমি ঘুরতে যাই। পরিবারের সঙ্গে-সন্তানের সঙ্গে সময় কাটাই। এটাই আমার কাজ করার উৎসাহ বাড়িয়ে দেয়।
তার মতে, আপনি যখন কোন কাজ সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার সাথে করবেন, অবশ্যই তা ফলপ্রসূ হবে। প্যাশনের জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করে শেষ পর্যন্ত তারাই সাফল্যের দেখা পায়। সফল হতে হলে নম্র হও, খ্যাতি কিংবা অর্থবিত্তের মোহকে মাথায় চড়তে দিও না।
ব্যক্তিগত ভাবে আমরা যারা লেইট নাইন্টিজের তাদের বেশিরভাগের বুঝ হওয়ার আগেই যেই মিউজিকটার সাথে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিলাম তা শাহরুখ খাঁনের "দিল সে" সিনেমার "ছাইয়া ছাইয়া" গানটি। এজন্যই নিজের অজান্তেই শৈশবের অনেকটা জুড়ে এই মানুষটি জড়িয়ে। আর বুঝ হওয়ার পর থেকে বলতে গেলে তার মিউজিকেই আসক্ত।
সেই ভালোলাগা ও ভালোবাসা থেকেই তার জন্য এটুকু লেখা। তাছাড়া তার পুরো লাইফটাই একটা অনুপ্রেরণা। এক জীবন্ত কিংবদন্তি।
Writer: Sujan Das