VoIP কী এবং কেন?

VolP


Voice over Internet Protocol (VoIP) এমন একটা প্রযুক্তি যা অডিয়ো বা ভিডিয়ো কলকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে প্রেরণে করে প্রচলিত ফোন লাইনের পরিবর্তে। ইন্টারনেট এই প্রযুক্তির জন্য আবশ্যক নয়। তবে ইন্টারনেট যে প্রটোকলে কাজ করে, VoIP ঠিক একই প্রটোকলে কাজ করা (প্রটোকল হলো বিশেষ কিছু নিয়ম/বিধান যা যোগাযোগে শৃঙ্খলা বজায় রাখে)। Voice over Internet Protocol মানে কল সেই একই পথে যাবে, ইন্টারনেট যে প্রটোকল ব্যবহার করে সেটা ব্যবহার করে।
VoIP এমন একটি প্রযুক্তি যা পৃথিবীর ফোন সিস্টেমকে সম্পুর্ণ নতুনভাবেভাবে দেখার ক্ষমতা রাখে। সার্ভিস প্রভাইডাররা এই প্রযুক্তি ইউজারকে দিয়ে থাকে এবং প্রতিনিয়ত মানুষের কাছে জনপ্রিয় পাচ্ছে। FCC সংস্থা এই প্রযুক্তির খুটিনাটি তদাকরি করে থাকে। VoIP এর ব্যাপারে মজার বিষয় হলো, এখানে শুধু এক ভাবে বরং তিনটি ভিন্ন পরিষেবা দিয়ে থাকে। এগুলো হলো-

ATA:
সবচেয়ে সাধারণ ও প্রচলিত প্রযুক্তি হলো একটি ডিভাইস ব্যবহার করা যাকে ATA বলা হয়। ATA একটি সাধারণ ফোনকে কম্পিউটার বা ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে VoIP ব্যবহারে সাহায্য করে। ATA এখানে এনালগ টু ডিজিটাল কনভার্টার। এটি ফোন থেকে এনালগ সিগন্যাল গ্রহন করে এবং ডিজিটাল ডেটাতে রুপান্তর করে, যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়। তবে কিছু ATA প্রভাইডার এক্সট্রা সফটওয়্যার হোস্ট কম্পিউটারে রাখে, তবে এর সেটআপ অনেক সহজ।
IP Phone:
এই বিশেষ ফোনগুলো দেখতে সাধারণ ফোনের মতোই। তবে এতে ফোন কানেক্টরের বদলে ইথারনেট কানেকটর ব্যবহার করা হয়। IP ফোন রাউটারের সাথে সরাসরি সংযুক্ত থাকে এবং প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার IP কল গ্রহণের জন্য থাকে। আর wifi phone এ যদি সাবস্ক্রাইব করা থাকে তবে যে-কোনো হটস্পট থেকে VoIP এর সুবিধা পাওয়া সম্ভব।
Computer to computer:
এটি VoIP ব্যবহার করার সবচেয়ে সহজ মাধ্যম। এর মাধ্যমে বড়ো দূরত্বের কলে অর্থ প্রদানের দরকার হয় না। প্রভাইডাররা ফ্রী বা খুব কম খরচে এই প্রযুক্তি প্রদান করে থাকে। এর জন্য দরকার মাইক্রোফোন, স্পিকার, সাউন্ড কার্ড এবং স্ট্যাবল ইন্টারনেট কানেকশন।

VoIP এর ফ্রী সফটওয়্যার অনলাইনে পাওয়া যায়, যেগুলো ৩-৫ মিনিটে সেট-আপ করা সম্ভব। বিপরীতের মানুষটির যদি একই সফটওয়্যার থাকে তবে VoIP এর সুবিধা উপভোগ করা সম্ভব।
VoIP প্রভাইডাররা কল সংযুক্ত করার থেকেও বেশি কিছু করে থাকে। তারা VoIP ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক স্টিমলাইন করে। তারা হাজারো ফোন কল এক সাথে একটি সার্কিট সুইচ ও আইপি গেটওয়েতে রাউটিং করে, যার জন্য দূরবর্তী কলে স্পিড কম লাগে। আর বিপরীত পাশে কল গ্রহণ করলে, সার্কিট সুইচের মাধ্যমে তেমন পরিবর্তন ছাড়াই বার্তা ফিরে আসে।
যদিও সময়ের সাথে প্রযুক্তির পরিবর্তন হচ্ছে। বর্তমানের সার্কিট সুইচ নেটওয়ার্ক পুরোপুরি প্যাকেট সুইচ নেটওয়ার্ক দ্বারা ধীরে ধীরে প্রতিস্থাপন হচ্ছে। আইপি টেলিফোন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী। বাণিজ্যিকভাবে যতই VoIP এর ব্যবহার বাড়ছে, বাসা বাড়িতে এর জনপ্রিতা ততই বাড়ছে। তবে সুইচের দাম এবং কিছু সমস্যার জন্য VoIP ঘরে ব্যবহারের বড়ো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।

VoIP সার্কিট সুইচিং:
টেলিফোন সিস্টেমে কল সংযোগের জন্য নির্ভরযোগ্য কিন্তু কিছুটা অকার্যকর পদ্ধতি দিয়ে কল সংযোগ দেওয়া হয়, যাকে সার্কিট সুইচিং বলে।
সার্কিট সুইচিং এর মৌলিক ধারণা টেলিফোন নেটওয়ার্কে শতাধিক বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে। যখন দুই জন কোনো কলে থাকে, কলের সময়ে সংযোগ বজায় রাখা দরকার হয়। কারণ উভয় দিকের দুই পয়েন্টের সংযোগ করা হচ্ছে, এবং এই সংযোগকে সার্কিট বলা হয়। এটা Public Switched Telephone Network (PSTN) এর ভিত্তি।
যদি ফোনে দশ মিনিটের জন্য কথা বলা হয়, তবে এই সময়ে সার্কিট দুই ফোনের জন্য অবিচ্ছিন্ন থাকে। ৬০ এর দশকে আমেরিকার সব জায়গায় কপারের তারের সংযোগ ছিল। নিউইর্য়ক থেকে লস অ্যাঞ্জেলস ফোন করতে, দুই জায়গার সুইচ সেই তারের মাধ্যমে সংযোগ দেওয়া হত। সেই তার কথা বলার জন্য শুধু সেই ব্যক্তির জন্য নির্ধারিত ছিল। অর্থাৎ ৩০০০ মাইল দৈর্ঘ্যের তার দশ মিনিটের কেনা যেত। যদিও এখন এনালগ পদ্ধতির প্রচলন নেই, তবে সার্কিট সুইচিং সংযোগ এভাবে কাজ করে।
আর বর্তমানে ফাইবার অপটিক্সের মাধ্যমে ডেটা প্রেরণ করা হয়। প্রতি পাশে 64 kbps এর সংযোগ ফিক্সড থাকে, অর্থাৎ মোট ট্রান্সমিশন রেট 128 kbps। অর্থাৎ দশ মিনিটে মাত্র 9600 KB ট্রান্সমিশন হয়, যা অনেক বেশি সাশ্রয়ী এনালগের তুলনায়।
VoIP প্যাকেট সুইচিং:
একটি প্যাকেট সুইচ ফোন নেটওয়ার্ক সার্কিট সুইচিং এর বিকল্প। এটা কাজ করে কিছু এভাবে-
যখন কেউ ফোনের এক পাশে কথা বলে, তার বিপরীত পাশের মানুষ সেটা শুনে। মানে এখানে অর্ধেক সংযোগ ঐ সময় ব্যবহার হচ্ছে। তাই সহজভাবে বললে ফাইলের অর্ধেক হয়ে যাচ্ছে, বা মাত্র 4700 KB ব্যবহার হচ্ছে। আবার কথা না বলার (নিশ্চুপ থাকা) সময়েও বাদ দেওয়া হয়, এতে ফাইলের আকারও ছোটো হচ্ছে। দুই পাশ থেকে নিরবিচ্ছিন্ন ডেটা পাঠানোর চেয়ে, শুধু শব্দের অংশের প্যাকেট প্রেরণ করা হয়।
ডেটা নেটওয়ার্ক সার্কিট সুইচিং ব্যবহার করে না। ইন্টারনেট কানেকশন স্লো হবে যদি ওয়েব পেজের থাকার সময় অবিচ্ছিন্ন সংযোগ দরকার হয়। এর বদলে ডেটা নেটওয়ার্ক প্রয়োজন মতো ডেটা গ্রহণ ও প্রেরণ করে। একটি নির্দিষ্ট লাইনে অসংখ্য ডেটা না পাঠিয়ে, ডেটা প্যাকেট হাজার ধরণের পথ দিয়ে বিশৃঙ্খলভাবে চলাচল করে এবং তার গন্তব্যে যেয়ে পৌঁছায়।
সার্কিট সুইচিং এ সবসময় সংযোগের দরকার হলেও প্যাকেট সুইচিং সংক্ষিপ্ত পথ খুঁজে। কোনো ডেটাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাবে ভাগ করে প্রেরণ করাকে প্যাকেট বলা হয়। ডেটা এই প্যাকেট আকারে প্রেরণ করা হয়, কখনও ৬৪০০০ বা ৩২০০০ বার সেকেন্ডে যেন কখনও ডেটা লস হলেও শুনতে সমস্যা না হয়।
প্যাকেট সুইচিং খুবই কার্যকরী পদ্ধতি। এটা প্যাকেটকে স্বল্প সময় এবং কম দূরত্বের পথ ব্যবহারে সহায়তা করে। দুইটি কম্পিউটারের মধ্যে সংযোগে সহায়তা করে।

উপকারিতাঃ
VoIP এর অনেক গ্রাহক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছে সাশ্রয়ী মাধ্যম যা ৬০% পর্যন্ত ফোন বিল সেভ করে।
কলের কোয়ালিটি সাধারণ কলের চেয়ে ভালো। শব্দের সমস্যা অনেক কম হয়।
আবার অনেক ক্ষেত্রে প্রভাইডাররা প্রিমিয়াম সুবিধা দিয়ে থাকে, যেমন, কল রেকর্ড, অ্যাটেন্ডেন্স সহ ইত্যাদি।
যে-কোনো জায়গা থেকে ফোন সার্ভিস ব্যবহার করা যায়। আবার বাড়িতেও অতিরিক্ত সেট-আপের প্রয়োজন হয় না।
পৃথিবীর যে-কোনো স্থানে খুবই কম রেটে কল করা যায়।

খারাপ দিকঃ
এর জন্য উচ্ছ গতির স্ট্যাবল ইন্টারনেট সংযোগ দরকার।
ইমারজেন্সী নম্বরে কল করা যায় না বা কোনো জায়গায় কল করা গেলেও লোকেশন অটোমেটিক কেউ পাবে না।
VoIP ডিজিটাল সিগনাল এ কাজ করাই পুরোনো ফোনগুলো অকার্যকর এক্ষেত্রে।
প্যাকেট গ্রহণে স্ট্যাবল কানেকশন না হলে, অনেক সময় কথায় বাঁধা আসার সম্ভাবনা থাকে।

সোর্স:

Writer: Rownok Shahriar

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form