আইপি অ্যাড্রেস: ওয়েব-জগতের ঠিকানা

আইপি এড্রেস


আপনি কোথায় থাকেন? হয়তো অমুক গ্রাম, তমুক জেলা। এটা হচ্ছে আপনার ঠিকানা। এই ঠিকানায় গেলে আপনাকে পাওয়া যাবে। সেরকম ইন্টারনেটের জগতেও আপনার একটা ঠিকানা রয়েছে। সেটা হল আইপি অ্যাড্রেস (IP address)।

এর পুরো নাম ইন্টারনেট প্রটোকল অ্যাড্রেস (Internet Protocol address)। ইন্টারনেটে সংযুক্ত প্রতিটি ডিভাইসে একটি সংখ্যা নিযুক্ত করা হয়, একেই আইপি অ্যাড্রেস বলে। যেমন:- 172.16.254.1 – এটি একটি আইপি অ্যাড্রেসের উদাহরণ। আইপি অ্যাড্রেসের মাধ্যমে কোনো ডিভাইসকে অন্যান্য ডিভাইস থেকে আলাদা করা যায় এবং সেই ডিভাইসের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়।

সারা পৃথিবীতে আইপি অ্যাড্রেস নিয়ন্ত্রণ করে International Assigned Numbers Authority (IANA)। এছাড়া আঞ্চলিক রেজিস্ট্রির জন্য রয়েছে পাঁচটি regional Internet registries (RIRs)। তার মধ্যে আমাদের এশিয়া মহাদেশের জন্য আছে Asia-Pacific Network Information Centre (APNIC)। নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটরেরা (network administrator) কোনো ডিভাইসকে নির্দিষ্ট কোনো আইপি অ্যাড্রেসে নিযুক্ত করার কাজটি করে থাকে।

ইন্টারনেট প্রটোকলের ভার্শনগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র ভার্শন ৪ (IPv4) এবং ভার্শন ৬ (IPv6) জনপ্রিয়। আমরা সচরাচর IPv4 ব্যবহার করে থাকি, যেটা কিনা মান্ধাতার আমলের (১৯৮৩)। এতে ৩২-বিটের অ্যাড্রেস ব্যবহৃত হয়। আর IPv6 চালু হয় ১৯৯৫ সালে। এতে ১২৮-বিটের অ্যাড্রেস ব্যবহার করা যায়। এছাড়া IPv5-ও বেরিয়েছিল, যেটা ইন্টারনেট স্ট্রিম প্রটোকল (Internet Stream Protocol) নামে পরিচিত। কিন্তু সেটা তেমন জনপ্রিয় হয়নি। এছাড়াও ভার্শন ১ থেকে ভার্শন ৯ পর্যন্ত রয়েছে, কিন্তু কোনোটাই জনপ্রিয় নয়।

IPv4-এ ৩২-বিটের অ্যাড্রেস ব্যবহৃত হয়, ফলে মোট ২^৩২ = ৪,২৯,৪৯,৬৭,২৯৬টি অ্যাড্রেস থাকা সম্ভব। পুরো অ্যাড্রেসকে চার ভাগে ভাগ করে প্রকাশ করা হয়। প্রতিটি ভাগে ৮ বিট করে থাকে, যাকে অক্টেট (octet) বলা হয়। ভাগগুলোকে ‘.’ দ্বারা আলাদা করা হয়। সুতরাং পুরো অ্যাড্রেসকে n.n.n.n হিসেবে প্রকাশ করা হয়, যেখানে n হল 0 থেকে 255-এর মধ্যে একটি সংখ্যা। কোনো ভাগের প্রথমে 0 থাকলে সাধারণত সেগুলো বাদ দেওয়া হয়।

IPv6-এ ১২৮-বিটের অ্যাড্রেস ব্যবহার হওয়ায়, মোট ২^১২৮ ≈ ৩.৪০৩ × ১০^৩৮ টি অ্যাড্রেস থাকা সম্ভব। এই সংখ্যক অ্যাড্রেস দিয়ে নিকট ভবিষ্যতের চাহিদা পূরণ করার আশা করা যাচ্ছে। এই ভার্শনের অ্যাড্রেসগুলো হেক্সাডেসিমাল সংখ্যাপদ্ধতি দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যেমন:- 2001:db8:0:1234:0:567:8:1। এছাড়া উভয় ভার্শনেই কিছু সংখ্যক অ্যাড্রেস প্রাইভেট নেটওয়ার্কের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। বর্তমানের আধুনিক ডেস্কটপগুলোতে IPv6 সাপোর্ট করে।

কোনো ডিভাইসে আইপি অ্যাড্রেস নিযুক্ত করার ক্ষেত্রে দুই ধরনের আইপি অ্যাড্রেস রয়েছে। যথা – ⅰ) স্ট্যাটিক আইপি অ্যাড্রেস (static IP address) ও ⅱ) ডায়নামিক আইপি অ্যাড্রেস (dynamic IP address)।

কোনো ডিভাইসে যদি একবারই আইপি অ্যাড্রেস নিযুক্ত করা হয় এবং সেটা যদি পরবর্তীতে আর পরিবর্তন না হয়, তাহলে সেই ধরনের অ্যাড্রেসকে স্ট্যাটিক আইপি অ্যাড্রেস বলে। আর যদি কোনো ডিভাইসে প্রতিবার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করার সময় নতুন নতুন আইপি অ্যাড্রেস নিযুক্ত করা হয়, তাহলে সে ধরনের অ্যাড্রেসকে ডায়নামিক আইপি অ্যাড্রেস বলা হয়।

এক ধরনের বিশেষ সফটওয়্যার রয়েছে, যাকে বলা হয় ফায়ারওয়াল সফটওয়্যার (firewall software)। এই সফটওয়্যার দ্বারা নির্দিষ্ট কিছু আইপি অ্যাড্রেসকে ব্লক করে রাখা যায়। এছাড়া আইপি অ্যাড্রেসের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ভৌগোলিক অবস্থানও নির্ণয় করা যায়।

পরিশেষে বলি, বর্তমান যুগ ইন্টারনেটের যুগ। আর এই ইন্টারনেটের পেছনে আইপি অ্যাড্রেসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্যসূত্র:-
১. https://tools.ietf.org/html/rfc760
২. https://www.apnic.net/
৩. https://tools.ietf.org/html/rfc791
৪. https://tools.ietf.org/html/rfc8200
৫. https://www.socallinuxexpo.org/sites/default/files/presentations/Why%20IP%20Versions%20and%20Why%20do%20I%20care.pdf
৬. https://tools.ietf.org/html/rfc4193
৭. https://archive.org/details/htmlgeolocation00iiia_202

Writer: Anindita Ghosh

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form