একটা অতি সেনসিটিভ ফায়ার এলার্ম সবসময় শ্রেয়। কারণ আগুনের মধ্যে একটা এলার্ম না বাজার চেয়ে কয়েকবার ভুলভাল আগুনের সংকেত দেয়া অধিক নিরাপদ। এখন বিষয়টা ভালো করে ভেবে দেখেন। পুরুষের সেক্স সেল নারীর তুলনায় অতি ক্ষুদ্র ও নগণ্য। শিশু উৎপাদনে প্যারেন্টাল এফোর্ট প্রায় শতভাগই দেয় নারী। যেমন, ৯ মাস গর্ভে ধারণ করা, দরকার পড়লে ৩ বছর পর্যন্ত দুধপান করানো, আরো কয়েকবছর যত্নসহকারে বড় করা।
যদিও ম্যামালদের মধ্যে মানব পুরুষ অন্যদের তুলনায় অত্যাধিক প্যাসনেট, তাও শিশুপালন পুরোপুরিভাবেই নারীরা করে থাকে। এখানে একটা মজার বিষয় লক্ষ্য করুন। পুরুষরা বছরে ১০০ নারীর সাথে সেক্স করলে ১০০ এর বেশি সন্তানের জনক হতে পারবে, বাট একজন নারী তা করলে ১ জন সন্তানই পাবে। পুরুষের অর্গাজমের সাথে তার বংশবিস্তারের সরাসরি সম্পর্ক আছে কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে এর সম্পর্ক রহস্যময়।
আমরা বিপরীত লিঙ্গের হাসি, কণ্ঠ, দেহ ভালোবাসি। তাদের সাথে গল্পগুজব, আদর সোহাগ ও চুম্বন বিনিময়ের মাধ্যমে কোর্টশিপে নিয়োজিত হই। এই কোর্টশিপ জিনিসটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটাকে আরেক সেন্সে দেহ পাওয়ার অনুমতি পত্র বলতে পারেন। কারণ আমাদের উদ্দেশ্য কিন্তু কেবল পুত্র কন্যা জন্ম দেয়া না, বরং আমাদের সেই পুত্র কন্যা যেনো প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে প্রজননে যেতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা অতি জরুরী। তাহলে এখান থেকে আমরা দেখলাম যে, বিপরীত লিঙ্গের সাথে গল্পগুজব, হাসিঠাট্টা করার মধ্যে একরকম সুখ পাওয়া যায়। এই সুখের বৃদ্ধি করতে করতে মানুষের প্রেম হয়, সেক্স হয় এবং শেষে সন্তান জন্ম নেয়।
এখন ফায়ার এলার্মের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। পুরুষরা হচ্ছে ফায়ার এলার্ম এবং নারীরা হচ্ছে সেই দুর্লভ অগ্নিকাণ্ড। যেহেতু পুরুষরা নারীর রিপ্রডাক্টিভ এফোর্টকে তার সারভাইভাল এফোর্ট দিয়ে ( মানে নিরাপত্তা, পুষ্টিকর খাদ্য, আশ্রয়) পুষিয়ে দেয়। আর মানব প্রজাতিতেও প্রচুর কমপিটিশন। ফারার এলার্মের মতোই পুরুষ জাত সবসময় অতন্দ্র। ৩৫% পুরুষই সম্ভাব্য ধর্ষক [ ১]।
এই বিষম পার্থক্যের মুখে আমরা এটাই আশা করতে পারি যে নারীদের বেশ চতুর, সংযমী ও সুবিচারক হবে। এটা না হলে তার রিপ্রডাক্টিভ সাকসেস কমে আসবে। এখন তাহলে আমাদের বড় প্রশ্ন নারীদের অর্গাজম কেনো হয়? তাদের তো গ্যামেট নিঃসরণ বা ডিম্বস্ফোটনের সাথে এর সম্পর্ক নেই। এবং অনেক নারী সেক্স এ কখনো চরম পুলক পায় না। পার্থক্যটা হচ্ছে পুরুষদের অর্গাজম ছাড়া শিশু সৃষ্টি সম্ভব না। কিন্তু নারীর অর্গাজম না হলেও শিশু সৃষ্টি হয়। তাই আমাদের এখন ঘেটে দেখা লাগবে যে, নারীর অর্গাজমের বিবর্তনীয় দৃষ্টিতে কি কারণে উপকারী, যদি কোনো উপকার আদো থেকে থাকে।
এটা বেশ চমৎকার একটা বিষয়। আমরা কিন্তু গল্পগুজব বানাই নিজে হাসাহাসি করার জন্য না। আমরা তা করি অন্যের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। এবং তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারলে আমরা নিজেরা আনন্দবোধ করি। প্রেমিকা নিজের জন্য এত সুন্দর পোশাকে সজ্জিত হয় না। সে নবপুষ্পসাজে সজ্জিত হয় তার প্রেমিকের জন্য। এবং প্রেমিককে খুশি করতে পারার মধ্যেই তার সুখ।
সেক্সের সময়ও একথা প্রযোজ্য যে, আমরা কেবল নিজের জৈবিক উত্তেজনা কেই প্রাধান্য দেই না। বরং সঙ্গীর যৌনতার দিকেও বেশ সচেতন থাকা চাই। এই ক্ষেত্রে পুরুষদের সমস্যা হচ্ছে, সে তার সঙ্গীকে যথেষ্ট উত্তেজিত না করে থাকলে, তার নিজের ইজ্যেকুয়েশন নারীর অর্গাজমের আগে হবে।
সঙ্গীকে সুখ দিয়ে নিজে সুখ পাওয়ার বিষয়টা বেশ বোধগম্য ও ভালো ব্যাখ্যা মনে হলেও বিবর্তনের দৃষ্টিতে এই ব্যাখ্যা বেশিক্ষণ টিকে না। কারণ অনেক নারীরা সেক্স জীবনে এতটাই নিষ্ক্রিয় যে, তারা জানেই না অর্গাজম বলতে কিছু আছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, নারীদের অর্গাজম না হলেও শিশু সৃষ্টি সম্ভব, মানে সুখ না পেয়েও সুখ দেয়া সম্ভব, যা পুরুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না। এই হাইপোথিসিস ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো।
নামটা শুনে বেশ মজার লাগলেও এই হাইপোথিসিস ভাবার বিষয়। এটা প্রস্তাব করেছেন ফিশার, ১৯৩০। এটার সাথে আমাদের মিঃ রাইট ম্যান হাইপোথিসিস এর মিল আছে। সেটা হচ্ছে সেক্সুয়ার সিলেকশনে যেহেতু নারীরা সঙ্গী নির্বাচন করে আর পুরুষরা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করার জন্য নিজেদের মধ্যে কমপিটিশনে থাকে, সেক্ষেত্রে, এটা ধরা যেতেই পারে যে, নারীদের অর্গাজম সরাসরি রিপ্রডাক্টশনে উপকার না দিলেও, তা হয়তো ভালো সঙ্গী নির্বাচনে সাহায্য করে।
বেশ কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, বেশি ম্যাসকুলিন, সিমেট্রিক ও প্যাসনেট পুরুষের সাথে নারীরা সঙ্গমে বেশি সুখ পায়, ঘন ঘন চরম পুলকে পৌঁছাতে পারে। এবং সুদর্শন পুরুষের পুত্রও সুদর্শন হবে / সেক্সি হবে এটা বলা যেতেই পারে। সেক্ষেত্রে দেখা যায় ওভার অল রিপ্রডাক্টিভ বেনিফিট অনেক বেশি। সিমেট্রি জিনিসটা আসলেই দুর্দান্ত একটা বিষয়।
তবে এই হাইপোথিসিসও বেশিক্ষণ টিকে না। একটি কারণ হচ্ছে, নারীদের ঝুঁকির বিষয়। যদি এরকম হতো যে, পুরুষের সেক্স পোটেনশিয়াল তার সাথে সেক্স করার আগে বোঝা যাবে, তাহলে এই হাইপোথেসিস বেশ খাটতো। প্রেগন্যান্ট হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে " সঠিক সঙ্গী " নির্বাচনের বিষয়টা রসিকতা পর্যায়ে পড়ে, কনসিডারিং দ্য ফেক্ট দেট, ক্যাজুয়াল সেক্সে পুরুষের কোনো লোকশান নেই, কিন্তু নারীর কপালে অনেক দুঃখ।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে, পরিসংখ্যান আমাদের বলে বিবাহিত নারীরা অবিবাহিত প্রেমিকার চেয়ে যৌনজীবনে বেশি সুখি। এর কারণ চরম পুলক একটা সাধনার বিষয়। ক্লাসিক কিনসের গবেষণা ও অতি সদ্য করা গবেষণাগুলো একই কথা বলে। সিমেট্রি জিনিসটা গুরুত্বপূর্ণ বটে তবে সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অর্গাজমের ভুমিকা মানানসই না। হাইপোথিসিস ভেঙে গেলো।
প্রেমিক যদি তার সঙ্গীর সাথে সেক্স করার পর লক্ষ্য করে যে, তার সঙ্গী অতৃপ্ত তাহলে দেখা যাবে সে বেশ বিচলিত হয়ে থাকবে, নিজেকে অক্ষম মনে করবে। এবং তা পুষিয়ে দেয়ার জন্য দ্বিতীয় রাউন্ড বা প্রয়োজন পড়লে তৃতীয় চতুর্থ রাউন্ড পর্যন্ত সেক্স চালিয়ে যাবে। সেই সেন্সে দেখতে গেলে অর্গাজমকে নারী কর্তৃক প্রয়োগ করা একরকম শাসন রূপে কল্পনা করা যায়।
যেহেতু নারীরা প্যরেন্টাল এফোর্ট বেশি দেয় তাই সকল পুরুষের কাছেই নারী অতি গুরুত্বপূর্ণ। আর সেক্সুয়াল সিলেকশনে নারীদের প্রভাব বেশি দেখে পুরুষরা নারীদের নিয়ন্ত্রণ ও পিতৃত্ব নিশ্চিত করার জন্য বিচলিত থাকে। আদর, সোহাগ, উপহার এবংকি সন্দেহের মাধ্যমে নারীকে বশে রাখতে চায়।
অর্গাজমের সাথে এর সম্পর্ক তাহলে খুব সহজেই দেখা যাচ্ছে। সেটা হচ্ছে পুরুষকে একাগ্রভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, তার থেকে বিশ্বস্ততা, আদর সোহাগ পাওয়ার একটা পন্থা। তবে এই হাইপোথিসিসও টিকে না কারণ বিছানার সুখের সাথে একজন নারীর সন্তানের বেশি সাফল্য ঠিক মানায় না।
হ্যা। অভিভাবকদের মধ্যে প্রীতি থাকলে অবশ্যই তা সন্তানের জন্য কল্যাণ। তবে এই হাইপোথিসিস এর উইক পয়েন্ট হচ্ছে, সামাজিকতার দোহাই দেয়া, যেটা বেশ কনফিউজিং কারণ মানুষ নিজেই তো একটি সামাজিক ও আলট্রুইস্টিক প্রাণী। অর্গাজমের সাথে এর সম্পর্ক স্থাপন করার মধ্যে একরকম শূন্যতা আছে।
এরকম আরো অনেক হাইপোথিসিস আছে। কিন্তু এগুলোর একটিও স্বয়ংসম্পূর্ণ না। এরমধ্যে কনট্রভারশিলায় একটা গবেষণা আবার এটা বলে যে, অর্গাজম হয়তো কোনোভাবে স্পার্মের যাত্রা ও ফার্টিলাইজেশন সহজ করে দেয়। তবে এটারও তেমন ভিত্তি নেই। এত আলোচনা শেষে এটাই বলতে আসছি যে, নারীদের অর্গাজম আসলেই এক বড় রহস্য।
অনেকে বলে যে, নারীরা যদি সুখ না পায় তাহলে তো সেক্স করবে না। হ্যা কথা ঠিক। সেক্ষেত্রে আমাদের বড় প্রশ্ন, বিবর্তনের হাত ধরে তা কি করে আসলো? অর্গাজম জিনিসটা না থাকলেও তো হতো তাহলে, কারণ নারীদের যৌনসুখ কেবল অর্গাজমে না। ক্লিটোরিস সহ আরো নানান টিসু নারীকে চরম সুখ দেয়া। ইনফেক্ট অনেক নারীরা অর্গাজম ছাড়াই যৌনজীবনে সুখী।
এই লিংকে যেয়ে বিষয়টা ব্যাপারে আরো জানতে পারেন। সাথে অসংখ্য রেফারেন্স দেয়া আছে এতে।
https:// www.ncbi.nlm.nih .gov/pmc/ articles/ PMC5087694/
অর্গাজম সম্পর্কে আরেকটু জানতে আপনি এই লেখাটা পড়তে পারেন। রেফারেন্স দেয়া আছো সব।
https:// www.facebook.com /groups/ bcb.science/ permalink/ 3460794804004164 /
১) [ ডেভিড বাসস এর " The Evolution of desire " বইয়ের Rape অধ্যায়ে আলোচিত দুটো জিজ্ঞেসবাদ ও পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে, ২৭- ৩৫% পুরুষ হয়তো সুযোগ পেলে ধর্ষণ করবে। পুরুষের যদি কোনোরকম ঝুঁকি না থাকে তাদের ধর্ষণ করতে আপত্তি নেই। যদিও তারা নিশ্চিতভাবে ধর্ষণ করার ইচ্ছা মুখ ফুটে স্বীকার করেনি, তবে ইঙ্গিত বলে যে সুযোগ পেলে অনেক পুরুষই ধর্ষণ করবে।
৩৫% পুরুষের মধ্যে ধর্ষণের প্রবণতা থাকার ইতিবৃত্ত এই লিংক থেকে পড়ে নিতে পারেন। বিষয়গুলো বেশ জটিল পর্যায়ে নেমে আসে।
https:// spssi.onlinelibr ary.wiley.com/ doi/abs/10.1111/ j.1540-4560.1981 .tb01075.x
ধন্যবাদ।
যদিও ম্যামালদের মধ্যে মানব পুরুষ অন্যদের তুলনায় অত্যাধিক প্যাসনেট, তাও শিশুপালন পুরোপুরিভাবেই নারীরা করে থাকে। এখানে একটা মজার বিষয় লক্ষ্য করুন। পুরুষরা বছরে ১০০ নারীর সাথে সেক্স করলে ১০০ এর বেশি সন্তানের জনক হতে পারবে, বাট একজন নারী তা করলে ১ জন সন্তানই পাবে। পুরুষের অর্গাজমের সাথে তার বংশবিস্তারের সরাসরি সম্পর্ক আছে কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে এর সম্পর্ক রহস্যময়।
আমরা বিপরীত লিঙ্গের হাসি, কণ্ঠ, দেহ ভালোবাসি। তাদের সাথে গল্পগুজব, আদর সোহাগ ও চুম্বন বিনিময়ের মাধ্যমে কোর্টশিপে নিয়োজিত হই। এই কোর্টশিপ জিনিসটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটাকে আরেক সেন্সে দেহ পাওয়ার অনুমতি পত্র বলতে পারেন। কারণ আমাদের উদ্দেশ্য কিন্তু কেবল পুত্র কন্যা জন্ম দেয়া না, বরং আমাদের সেই পুত্র কন্যা যেনো প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে প্রজননে যেতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা অতি জরুরী। তাহলে এখান থেকে আমরা দেখলাম যে, বিপরীত লিঙ্গের সাথে গল্পগুজব, হাসিঠাট্টা করার মধ্যে একরকম সুখ পাওয়া যায়। এই সুখের বৃদ্ধি করতে করতে মানুষের প্রেম হয়, সেক্স হয় এবং শেষে সন্তান জন্ম নেয়।
এখন ফায়ার এলার্মের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। পুরুষরা হচ্ছে ফায়ার এলার্ম এবং নারীরা হচ্ছে সেই দুর্লভ অগ্নিকাণ্ড। যেহেতু পুরুষরা নারীর রিপ্রডাক্টিভ এফোর্টকে তার সারভাইভাল এফোর্ট দিয়ে ( মানে নিরাপত্তা, পুষ্টিকর খাদ্য, আশ্রয়) পুষিয়ে দেয়। আর মানব প্রজাতিতেও প্রচুর কমপিটিশন। ফারার এলার্মের মতোই পুরুষ জাত সবসময় অতন্দ্র। ৩৫% পুরুষই সম্ভাব্য ধর্ষক [ ১]।
এই বিষম পার্থক্যের মুখে আমরা এটাই আশা করতে পারি যে নারীদের বেশ চতুর, সংযমী ও সুবিচারক হবে। এটা না হলে তার রিপ্রডাক্টিভ সাকসেস কমে আসবে। এখন তাহলে আমাদের বড় প্রশ্ন নারীদের অর্গাজম কেনো হয়? তাদের তো গ্যামেট নিঃসরণ বা ডিম্বস্ফোটনের সাথে এর সম্পর্ক নেই। এবং অনেক নারী সেক্স এ কখনো চরম পুলক পায় না। পার্থক্যটা হচ্ছে পুরুষদের অর্গাজম ছাড়া শিশু সৃষ্টি সম্ভব না। কিন্তু নারীর অর্গাজম না হলেও শিশু সৃষ্টি হয়। তাই আমাদের এখন ঘেটে দেখা লাগবে যে, নারীর অর্গাজমের বিবর্তনীয় দৃষ্টিতে কি কারণে উপকারী, যদি কোনো উপকার আদো থেকে থাকে।
১) প্রাইমারি রিইনফোর্সসারঃ-
এটা বেশ চমৎকার একটা বিষয়। আমরা কিন্তু গল্পগুজব বানাই নিজে হাসাহাসি করার জন্য না। আমরা তা করি অন্যের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। এবং তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারলে আমরা নিজেরা আনন্দবোধ করি। প্রেমিকা নিজের জন্য এত সুন্দর পোশাকে সজ্জিত হয় না। সে নবপুষ্পসাজে সজ্জিত হয় তার প্রেমিকের জন্য। এবং প্রেমিককে খুশি করতে পারার মধ্যেই তার সুখ।
সেক্সের সময়ও একথা প্রযোজ্য যে, আমরা কেবল নিজের জৈবিক উত্তেজনা কেই প্রাধান্য দেই না। বরং সঙ্গীর যৌনতার দিকেও বেশ সচেতন থাকা চাই। এই ক্ষেত্রে পুরুষদের সমস্যা হচ্ছে, সে তার সঙ্গীকে যথেষ্ট উত্তেজিত না করে থাকলে, তার নিজের ইজ্যেকুয়েশন নারীর অর্গাজমের আগে হবে।
সঙ্গীকে সুখ দিয়ে নিজে সুখ পাওয়ার বিষয়টা বেশ বোধগম্য ও ভালো ব্যাখ্যা মনে হলেও বিবর্তনের দৃষ্টিতে এই ব্যাখ্যা বেশিক্ষণ টিকে না। কারণ অনেক নারীরা সেক্স জীবনে এতটাই নিষ্ক্রিয় যে, তারা জানেই না অর্গাজম বলতে কিছু আছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, নারীদের অর্গাজম না হলেও শিশু সৃষ্টি সম্ভব, মানে সুখ না পেয়েও সুখ দেয়া সম্ভব, যা পুরুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না। এই হাইপোথিসিস ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো।
২) সেক্সি সান হাইপোথিসিসঃ-
নামটা শুনে বেশ মজার লাগলেও এই হাইপোথিসিস ভাবার বিষয়। এটা প্রস্তাব করেছেন ফিশার, ১৯৩০। এটার সাথে আমাদের মিঃ রাইট ম্যান হাইপোথিসিস এর মিল আছে। সেটা হচ্ছে সেক্সুয়ার সিলেকশনে যেহেতু নারীরা সঙ্গী নির্বাচন করে আর পুরুষরা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করার জন্য নিজেদের মধ্যে কমপিটিশনে থাকে, সেক্ষেত্রে, এটা ধরা যেতেই পারে যে, নারীদের অর্গাজম সরাসরি রিপ্রডাক্টশনে উপকার না দিলেও, তা হয়তো ভালো সঙ্গী নির্বাচনে সাহায্য করে।
বেশ কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, বেশি ম্যাসকুলিন, সিমেট্রিক ও প্যাসনেট পুরুষের সাথে নারীরা সঙ্গমে বেশি সুখ পায়, ঘন ঘন চরম পুলকে পৌঁছাতে পারে। এবং সুদর্শন পুরুষের পুত্রও সুদর্শন হবে / সেক্সি হবে এটা বলা যেতেই পারে। সেক্ষেত্রে দেখা যায় ওভার অল রিপ্রডাক্টিভ বেনিফিট অনেক বেশি। সিমেট্রি জিনিসটা আসলেই দুর্দান্ত একটা বিষয়।
তবে এই হাইপোথিসিসও বেশিক্ষণ টিকে না। একটি কারণ হচ্ছে, নারীদের ঝুঁকির বিষয়। যদি এরকম হতো যে, পুরুষের সেক্স পোটেনশিয়াল তার সাথে সেক্স করার আগে বোঝা যাবে, তাহলে এই হাইপোথেসিস বেশ খাটতো। প্রেগন্যান্ট হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে " সঠিক সঙ্গী " নির্বাচনের বিষয়টা রসিকতা পর্যায়ে পড়ে, কনসিডারিং দ্য ফেক্ট দেট, ক্যাজুয়াল সেক্সে পুরুষের কোনো লোকশান নেই, কিন্তু নারীর কপালে অনেক দুঃখ।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে, পরিসংখ্যান আমাদের বলে বিবাহিত নারীরা অবিবাহিত প্রেমিকার চেয়ে যৌনজীবনে বেশি সুখি। এর কারণ চরম পুলক একটা সাধনার বিষয়। ক্লাসিক কিনসের গবেষণা ও অতি সদ্য করা গবেষণাগুলো একই কথা বলে। সিমেট্রি জিনিসটা গুরুত্বপূর্ণ বটে তবে সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অর্গাজমের ভুমিকা মানানসই না। হাইপোথিসিস ভেঙে গেলো।
৩) পেয়ার এন্ড সোশিয়াল বন্ডিংঃ-
প্রেমিক যদি তার সঙ্গীর সাথে সেক্স করার পর লক্ষ্য করে যে, তার সঙ্গী অতৃপ্ত তাহলে দেখা যাবে সে বেশ বিচলিত হয়ে থাকবে, নিজেকে অক্ষম মনে করবে। এবং তা পুষিয়ে দেয়ার জন্য দ্বিতীয় রাউন্ড বা প্রয়োজন পড়লে তৃতীয় চতুর্থ রাউন্ড পর্যন্ত সেক্স চালিয়ে যাবে। সেই সেন্সে দেখতে গেলে অর্গাজমকে নারী কর্তৃক প্রয়োগ করা একরকম শাসন রূপে কল্পনা করা যায়।
যেহেতু নারীরা প্যরেন্টাল এফোর্ট বেশি দেয় তাই সকল পুরুষের কাছেই নারী অতি গুরুত্বপূর্ণ। আর সেক্সুয়াল সিলেকশনে নারীদের প্রভাব বেশি দেখে পুরুষরা নারীদের নিয়ন্ত্রণ ও পিতৃত্ব নিশ্চিত করার জন্য বিচলিত থাকে। আদর, সোহাগ, উপহার এবংকি সন্দেহের মাধ্যমে নারীকে বশে রাখতে চায়।
অর্গাজমের সাথে এর সম্পর্ক তাহলে খুব সহজেই দেখা যাচ্ছে। সেটা হচ্ছে পুরুষকে একাগ্রভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, তার থেকে বিশ্বস্ততা, আদর সোহাগ পাওয়ার একটা পন্থা। তবে এই হাইপোথিসিসও টিকে না কারণ বিছানার সুখের সাথে একজন নারীর সন্তানের বেশি সাফল্য ঠিক মানায় না।
হ্যা। অভিভাবকদের মধ্যে প্রীতি থাকলে অবশ্যই তা সন্তানের জন্য কল্যাণ। তবে এই হাইপোথিসিস এর উইক পয়েন্ট হচ্ছে, সামাজিকতার দোহাই দেয়া, যেটা বেশ কনফিউজিং কারণ মানুষ নিজেই তো একটি সামাজিক ও আলট্রুইস্টিক প্রাণী। অর্গাজমের সাথে এর সম্পর্ক স্থাপন করার মধ্যে একরকম শূন্যতা আছে।
এরকম আরো অনেক হাইপোথিসিস আছে। কিন্তু এগুলোর একটিও স্বয়ংসম্পূর্ণ না। এরমধ্যে কনট্রভারশিলায় একটা গবেষণা আবার এটা বলে যে, অর্গাজম হয়তো কোনোভাবে স্পার্মের যাত্রা ও ফার্টিলাইজেশন সহজ করে দেয়। তবে এটারও তেমন ভিত্তি নেই। এত আলোচনা শেষে এটাই বলতে আসছি যে, নারীদের অর্গাজম আসলেই এক বড় রহস্য।
অনেকে বলে যে, নারীরা যদি সুখ না পায় তাহলে তো সেক্স করবে না। হ্যা কথা ঠিক। সেক্ষেত্রে আমাদের বড় প্রশ্ন, বিবর্তনের হাত ধরে তা কি করে আসলো? অর্গাজম জিনিসটা না থাকলেও তো হতো তাহলে, কারণ নারীদের যৌনসুখ কেবল অর্গাজমে না। ক্লিটোরিস সহ আরো নানান টিসু নারীকে চরম সুখ দেয়া। ইনফেক্ট অনেক নারীরা অর্গাজম ছাড়াই যৌনজীবনে সুখী।
এই লিংকে যেয়ে বিষয়টা ব্যাপারে আরো জানতে পারেন। সাথে অসংখ্য রেফারেন্স দেয়া আছে এতে।
https://
অর্গাজম সম্পর্কে আরেকটু জানতে আপনি এই লেখাটা পড়তে পারেন। রেফারেন্স দেয়া আছো সব।
https://
১) [ ডেভিড বাসস এর " The Evolution of desire " বইয়ের Rape অধ্যায়ে আলোচিত দুটো জিজ্ঞেসবাদ ও পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে, ২৭- ৩৫% পুরুষ হয়তো সুযোগ পেলে ধর্ষণ করবে। পুরুষের যদি কোনোরকম ঝুঁকি না থাকে তাদের ধর্ষণ করতে আপত্তি নেই। যদিও তারা নিশ্চিতভাবে ধর্ষণ করার ইচ্ছা মুখ ফুটে স্বীকার করেনি, তবে ইঙ্গিত বলে যে সুযোগ পেলে অনেক পুরুষই ধর্ষণ করবে।
৩৫% পুরুষের মধ্যে ধর্ষণের প্রবণতা থাকার ইতিবৃত্ত এই লিংক থেকে পড়ে নিতে পারেন। বিষয়গুলো বেশ জটিল পর্যায়ে নেমে আসে।
https://
ধন্যবাদ।
Writer: Md Ariful islam