১৪ই নভেম্বর, ৩০শে কার্তিক, কালীপূজা।
ভারতে এটা দিওয়ালি/ দীপাবলী নামে পরিচিত । বাংলাদেশের চেয়ে ওখানে কালীপূজোয় জাকজমক হয় অনেক বেশি । সাকিব আল হাসান কাল ভারতের একটা মন্দিরে কালীপূজা উদ্বোধন করতেও গিয়েছিলেন।
মিথ অনুযায়ী দেবি কালীর সাথে রক্ত এবং ভায়োলেন্স জড়িত। মেয়ে হয়েও তিনি যুদ্ধ করেন, ছেলেদের চেয়েও যুদ্ধে বেশি সাফল্য পান। তার শত্রুদেরকে (অসুর,অপদেবতা এবং অন্যান্য) প্রচন্ড শক্তি দিয়ে তিনি ধ্বংস করেন। এজন্য অনেকে শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য পাওয়ার জন্য কালীর কাছে প্রার্থণা করেন।
আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে ,কাজী নজরুল ইসলাম তার ''আনন্দময়ীর আগমনে'' কবিতায় দেবী কালীর কাছে প্রার্থণা করেন, তিনি যেন স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে নেমে আসেন এবং অত্যাচারী ব্রিটিশদের হাত থেকে ভারতের মানুষকে মুক্তি দেন।
কবিতার লাইনগুলো ছিল এইরকম--
আর কতকাল থাকবি বেটী মাটির ঢেলার মূর্তি আড়াল?
স্বর্গ যে আজ জয় করেছে অত্যাচারী শক্তি চাঁড়াল।
দেব–শিশুদের মারছে চাবুক, বীর যুবকদের দিচ্ছে ফাঁসি,
ভূ-ভারত আজ কসাইখানা, আসবি কখন সর্বনাশী?
মাদীগুলোর আদি দোষ ঐ অহিংসা বোল নাকি-নাকি
খাঁড়ায় কেটে কর মা বিনাশ নপুংসকের প্রেমের ফাঁকি।
ঢাল তরবার, আন মা সমর, অমর হবার মন্ত্র শেখা,
মাদীগুলোয় কর মা পুরুষ, রক্ত দে মা রক্ত দেখা।
তুই একা আয় পাগলী বেটী তাথৈ তাথৈ নৃত্য করে
রক্ত-তৃষার 'ময়-ভুখা-হু'র কাঁদন-কেতন কণ্বে ধরে।-
অনেক পাঁঠা-মোষ খেয়েছিস, রাক্ষসী তোর যায়নি ক্ষুধা,
আয় পাষাণী এবার নিবি আপন ছেলের রক্ত-সুধা।
দুর্বলেরে বলি দিয়ে ভীরুর এ হীন শক্তি-পূজা
দূর করে দে, বল মা, ছেলের রক্ত মাগে দশভুজা।..
'ময় ভুখা হুঁ মায়ি' বলে আয় এবার আনন্দময়ী
কৈলাশ হতে গিরি-রাণীর মা দুলালী কন্যা অয়ি! [১]
এ কবিতা ছাপা হওয়ার পরে ১৯২৩ সালে, নজরুলকে জেলখানায় ঢুকায় ব্রিটিশ সরকার।
শেষমেষ ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভ করেছিল, মানুষের আন্দোলনের ফলে । কোন দেব -দেবীর অলৌকিক হস্তক্ষেপে কাজ হয়নাই।
( বলাবাহুল্য, নজরুল ছিলেন একজন বড় কালীভক্ত। সাহিত্যের একটি বিশেষ ধারা আছে, শ্যামাসঙ্গীত। এই শ্যামাসংগীতে দেবী কালী বা শ্যামা এর বন্দনা করা হয়। শ্যামাসংগীতের অল টাইম বেস্ট গীতিকার হচ্ছেন কাজী নজরুল ইসলাম, প্রায় ৬০০ শ্যামা সংগীত লিখেছেন তিনি। সেকেন্ড বেস্ট হচ্ছেন রামপ্রসাদ সেন, প্রায় ৩০০ শ্যামাসংগীত লিখেছিলেন তিনি)
কালীপূজার কর্মকান্ডের মধ্যে অধিকাংশ জায়গায় আলোকসজ্জা ,আতশবাজি পোড়ানো এবং পূজা,অর্চনার মধ্যেই এই পূজা সীমাবদ্ধ থাকে। পূজার উপকরন হিসেবে রক্তজবা এবং পাঠাবলি দেওয়া বেশ পপুলার।
তবে কিছু কিছু কুসংস্কারাচ্ছন্ ন গ্রুপের মধ্যে কালীপূজার সময় আরো ভয়াবহ কর্মকান্ডের কথা শোনা যায়। অতীতের বিভিন্ন সময়ে কালী পূজার সময়ে , বা পূজার সিজন ছাড়াও মাকালীর উদ্দেশ্যে বলি (human sacrifice) এর ঘটনা ঘটেছিল । নজরুলের কবিতাটায় দেখুন, আপন ছেলের রক্ত স্যাক্রিফাইস করার কথা বলা হচ্ছে সেখানে। রক্ত দিলেই দেবী আরো পাওয়ারফুল হবে--এমনটাই ছিল কালী ভক্তদের বিশ্বাস।
ভারতবর্ষে ঠগী (Thugee) নামের একটা ভয়াবহ সম্প্রদায় ছিল। এরা ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে পথিক সেজে দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় ঘুরে বেড়াত। একাকী কোনো পথিককে পেলে ,তাকে খুন করে ফেলত মাঠের মাঝেই। কমবয়সী কাউকে আটক করতে পারলে, তাকে জ্যান্ত অবস্থায় কালী মন্দিরে নিয়ে গিয়ে দেবী মূর্তির সামনে বলি দিত।
ঠগীদের সরদার বেহরামকে ইংরেজ সরকার এ্যারেস্ট করতে পেরেছিল। ১৭৯০-১৮৩০ সালের মধ্যে এই বেহরাম কমপক্ষে ৯৩১ টা খুন করে। তাকে আদালতে বিচারক জিজ্ঞেস করেন, তুমি কেন এদেরকে খুন করলে? বেহরাম উত্তর দেয়, মা কালি আমাকে নির্দেশ দিত, তাই মানুষ হত্যা করতাম। [ ২,৩]
ঠগী বাদেও অনেক ডাকাত দল কালী মন্দিরে নিয়মিত নরবলি দিত এবং পূজা করত। বংকিমচন্দ্রের কপালকুন্ডলা উপন্যাসেও একজন তান্ত্রিক সাধকের নরবলির গল্প আছে।
বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন প্রাচীন মন্দির এবং স্থাপনাতে দেবী কালীর প্রতি নরবলি দেওয়ার অনেক আলামত পাওয়া যায়। সিলেটের ‘জৈন্তেশ্বরী বাড়ি’ মধ্যে ‘নরবলির পাটাতন’ নামে একটা স্ট্রাকচার আছে। সেখানে অতীতে নরবলি দেওয়া হত বলে অনেক আলামত পাওয়া যায়। [৪]
সাম্প্রতিককালেও ,অনেকের মধ্যে লুকিয়ে চুরিয়ে নরবলি দেওয়ার প্রাকটিস আছে। কোথাও তারা ব্যক্তিগতভাবে এটা চর্চা করে। কোথাও দলবদ্ধভাবে প্রাকটিস করে। ধরা পড়ার পরে কোথাও কোথাও তাদের আরাধ্য দেবী বা রিচুয়ালের নাম পাওয়া যায়, আবার কোথাও কোথাও তাদের পূজনীয় দেবতা বা দেবীর নাম পাওয়া যায় না ।
এরকম কয়েকটা সাম্প্রতিক ঘটনা বলি।
১। ৮ই এপ্রিল, ২০১৭। ভারতের পশ্চিমবংগের পুরুলিয়া গ্রামের নারায়ন মাহাতো তার মা কে খুন করেন । দেবী কালীর মূর্তির সামনে নিজের মা, ফুলু মাহাতো, কে ডেকে এনে দেবীকে প্রণাম করতে বলেন। ফুলু মাহাতো মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে দেবীকে প্রণাম করার সময় নারায়ন মাহাতো ধারালো অস্ত্র দিয়ে মায়ের মাথাটা শরীরে থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।
পুলিশ তাকে এ্যারেস্ট করলে সে বলেছিল, নরবলি দিলে মা কালী খুশি হবে, তন্ত্র সাধনায় আরো সাফল্য আসবে, তাই আমি এই কাজ করেছিলাম। [৫]
২। ভারতের বিহারের বেগুসরাই এলাকার তান্ত্রিক সাধক সুরেন্দ্র প্রসাদ সিংহ নিজের ছেলেকে বলি দেওয়ার পারমিশন চেয়ে আবেদন করেছিল প্রশাসনের কাছে। ২০১৯ এর ঘটনা এটা।
এপ্লিকেশনে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘নরবলি কোনও অপরাধ নয়। এই নরবলির জন্য অন্য কারও ক্ষতি করতে চাই না। নিজের ছেলেকেই বলি দিয়ে আমার সাধনা সম্পূর্ণ করতে চাই। আমার আরাধ্যা দেবীকে সন্তুষ্ট করতে আর তন্ত্র সাধনায় সুফল পেতে নরবলি দেওয়ার খুবই প্রয়োজন । [৬]
৩। আগস্ট ২০১৭। পশ্চিমবংগের বীরভূমের সদাইপুর গ্রামে অভিজিৎ আর সাবিত্রী বাগদি বসবাস করত। সাবিত্রী নিয়মিত তন্ত্র সাধনা করত। নিজেকে 'ডাকিনী' বলে পরিচয় দিত।
এক অমাবশ্যার রাতে অভিজিৎকে স্নান করিয়ে আনে সাবিত্রী। তারপর উঠোনে ত্রিশূল পুতে শুরু হয় তন্ত্র সাধনা। একটা সময়ে স্বামীকে শুইয়ে তাঁর বুকে চেপে বসে সাবিত্রী। এরপর স্বামীর ঠোঁট কামড়ে রক্তাক্ত করে সেখান থেকে রক্ত চুষে খেতে শুরু করে। অসুস্থ হয়ে পড়েন অভিজিৎ। ক্রমশই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে তাঁর। শেষমেশ তাঁকে বর্ধমান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু বাচানো যায়নি অভিজিৎকে। [৭]
৪। অক্টোবর ১৮, ২০১৭। চুঁচুড়া দেবীপুরের বাসিন্দা জ্যোতিষ ও তন্ত্রসাধক স্বপন অধিকারী চন্দননগর এলাকার এক নাবালককে নিয়ে এসে আটকে রাখে। এলাকাবাসী ঘটনা টের পেয়ে তান্ত্রিকের বাড়ি ভাঙচুর করে, মারধোর করে। পরে চুঁচুড়া থানার পুলিশ গিয়ে তান্ত্রিক সহ মোট পাঁচ জনকে জিঞ্জাসাবাদের জন্য আটক করে। তান্ত্রিকের বাড়ি থেকে বেশ কিছু হাড়গোরসহ তন্ত্রসাধনার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। কালীপুজোর আগের দিনে এই ঘটনা ঘটে । [৮]
৫। ডিসেম্বর, ২০১৮ । ভারতের ঝাড়খণ্ডের রাঁচির রাঙামাটি গ্রাম এর ফলেন্দ্র লোহার তন্ত্রসাধনার সঙ্গে যুক্ত ছিল। সে তান্ত্রিক হিসেবে আরও শক্তিশালী হতে চেয়েছিল। তাই শাশুড়ি, সাকুরা দেবীর মুণ্ডচ্ছেদ করে প্রথমে বলি দেয়। তার পর শাশুড়ির রক্তপান করে।[৯]
৬। ২০২০ এর ২৯শে মে উড়িশ্যার কটকের নরসিংহপুরে মন্দিরের পুরোহিত সংসারি ওঝা তারই মন্দিরের এক ভক্তকে বলি দিয়ে তার মাথা কেটে নিয়ে দেবীর সামনে পূজা করলেন সারারাত। তার দাবি , এইভাবে পূজা করলেই বিশ্ব থেকে করোনা দূর হয়ে যাবে । [১০]
৭। বাংলাদেশে নিকট অতীতে কোনো নরবলির ঘটনা শোনা যায়নি। তবে মৃতদেহ থেকে মাথা কেটে নিয়ে যাওয়া এবং তা দিয়ে পূজা করার কয়েকটা ঘটনা শোনা যাচ্ছে ।
গত বছর ঢাকার পোস্তগোলা শ্মশানে একই রকম ঘটনা ঘটেছিল।
শ্মশানে অধিকাংশ ডেডবডি পুড়িয়ে ফেলা হয়। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে, কিছু ডেডবডি ধর্মীয় বিধান মেনে মাটি চাপা দেওয়া হয়। ২০১৯ এর ৫ ই ফেব্রুয়ারি একটা বাচ্চাকে এইভাবে পোস্তগোলা শ্মশানে মাটি চাপা দেওয়া হয়। গভীর রাতে শ্মশানের ভিতর কিছু অস্বাভাবিক এক্টিভিটিজ দেখে ভিতরে পুলিশ ঢোকে।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ৫ টা কিশোর ছেলে কবর থেকে বাচ্চাটার ডেডবডি তুলে এনেছে, শরীর থেকে তার মাথা কেটে আলাদা করে ফেলেছে, মাথায় লাল রং মাখিয়ে, প্রদীপ জ্বালিয়ে কোনো এক ধরনের পূজা করছে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, এইভাবে "তান্ত্রিক সাধনা" করলে বিশেষ ক্ষমতা পাওয়া যায় বলে শুনেছিল তারা। তাই তারা শ্মশানে এসে এই কাজ করছিল। [১১]
৮। গত ৩১ অক্টোবর ঈশ্বরদীর সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের ফজিলা খাতুন (৮৫) নামের ওই বৃদ্ধা মারা যান। সেদিনই তাঁকে দাফন করা হয়। এর ১২ দিনের মাথায় বুধবার রাতের কোনো একসময় দুর্বৃত্তরা কবর থেকেই তাঁর মৃতদেহ তুলে মাথা কেটে নিয়ে যায়। সকালে কবরস্থান কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও মৃতদেহটি পুনরায় দাফনের ব্যবস্থা করে। তার স্বামীর নাম আবুল হোসেন প্রামানিক এবং ছেলে মহসিন প্রামানিক।
ঈশ্বরদী নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডট কম এর রিপোর্ট এ বলেছে -- "স্থানীয়দের ধারনা, জাদু টোনার কাজে ব্যবহারের জন্য লাশের মাথা কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। [১২]
----------
প্রচুর কুসংস্কার গিজগিজ করছে আমাদের আশাপাশে ,এই ২০২০ সালেও।
আইন করে সতীদাহ প্রথা বন্ধ করা গেছে। আইনের শাসন শক্তিশালী হওয়ার কারনে এখন আর হুটপাট করে কেউ কাউকে খুন করতে সাহস করেনা। ফাক ফোকর দিয়ে কেউ বলি দিলেও, তারা ধরা পড়লে আইনানুযায়ী শাস্তি হচ্ছে।
তারপরেও, শাস্তির ভয়ের চেয়েও কারো কুসংস্কারে বিশ্বাসটা বেশি শক্তিশালী হলে, তার মাধ্যমে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
বারবার বলি, নিজে সচেতন হোন। আপনার আশেপাশের লোককেও সচেতন করুন।
এসব তন্ত্র সাধনা করে কোনো ফল পাওয়া যায় কি না মতার কোনো প্রমাণ না থাকলেও, প্রচুর লোক এসকল ক্ষমতায় বিশ্বাস করেন ।
আপনি নিজে হয়তো শিক্ষিত লোক, কাউকে বলি দিতে যাবেন না, কিন্তু আপনার আশেপাশের কোনো কুসংস্কারাচ্ছন্ ন ভক্ত তার সাধনার জন্য আপনার কল্লাটাকে পছন্দ করে ফেলে !!! কিংবা আপনার কবর থেকে, আপনার ডেডবডি বের করে,কল্লা কেটে নিয়ে যদি কেউ তন্ত্র সাধনা করা শুরু করে, সেটা নিশ্চয়ই আপনার প্রত্যাশিত কিছু নয় ।
বারবার বলি,আবারো বলছি ,নিজে একা সচেতন হলে হবে না । আপনার আশেপাশের লোককেও সচেতন করুন।
-----------
রেফারেন্সেস-
[১] https:// banglarkobita.co m/poem/famous/ 858
[২] https:// en.wikipedia.org /wiki/Thuggee
[৩] https:// bn.quora.com/ ভারতীয়-সমাজে-নরব লি-প্রথার?fbcli d=IwAR1ofp-hlV_ enZ1W_zqw8F0J9q a_mHDDjxkrY1Rqx m2xPEmt4fyC_ZdG xXI
[৪] http:// www.sylhetview24 .net/news/ details/opinion/ 153823?fbclid=Iw AR17sye8kCClvuR _FwjWbrmBd24unM 47FKcqxT0xUnG0V eV8ZiOVV7hmJxc
[৫] https:// www.aajkaal.in/ news/state/ 33501?fbclid=IwA R2O2ek10aIaIJIf VikCqo0eUjKbZCV S-2hPbaTpM8jV23 7cT_Yn37dqx6g
[৬] https:// www.anandabazar. com/national/ a-tantric-from-b ihar-seeks-perm ission-from-dis trict-administr ation-for-human -sacrifice-dgtl -1.944311?fbcli d=IwAR2WtK6BlWU H4RfpiX3XJeAaKy OREVygt-3DJpHI4 zSQt1eD4GMswJe6 2os
[৭] https:// bengali.oneindia .com/news/ west-bengal/ wife-sucks-blood -her-husband-ac hieve-fulfillme nt-witchcraft-0 21097.html
[৮] https:// bengali.news18.c om/amp/news/ news/ chuchura-tantric -arrested-for-k idnapping-15403 5.html
[৯] https:// zeenews.india.co m/bengali/ nation/ a-man-killed-his -mother-in-law- and-drank-her-b lood_238449.htm l
[১০] http:// satkhiraprotidin .net/ করোনার-প্রকোপ-কম াতে-নরবল/
[১১] https:// www.bbc.com/ bengali/ news-47142328
[১২]https:// www.ishwardinews 24.net/ ঈশ্বরদীতে-লাশের- মাথা-চুর/ ?fbclid=IwAR03of PR6b4A1lYn5hzfL QDn9nSPoPqr1yu9 oxx8U3dHRokVK59 hQXocidc
ভারতে এটা দিওয়ালি/
মিথ অনুযায়ী দেবি কালীর সাথে রক্ত এবং ভায়োলেন্স জড়িত। মেয়ে হয়েও তিনি যুদ্ধ করেন, ছেলেদের চেয়েও যুদ্ধে বেশি সাফল্য পান। তার শত্রুদেরকে (অসুর,অপদেবতা এবং অন্যান্য) প্রচন্ড শক্তি দিয়ে তিনি ধ্বংস করেন। এজন্য অনেকে শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য পাওয়ার জন্য কালীর কাছে প্রার্থণা করেন।
আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে ,কাজী নজরুল ইসলাম তার ''আনন্দময়ীর আগমনে'' কবিতায় দেবী কালীর কাছে প্রার্থণা করেন, তিনি যেন স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে নেমে আসেন এবং অত্যাচারী ব্রিটিশদের হাত থেকে ভারতের মানুষকে মুক্তি দেন।
কবিতার লাইনগুলো ছিল এইরকম--
আর কতকাল থাকবি বেটী মাটির ঢেলার মূর্তি আড়াল?
স্বর্গ যে আজ জয় করেছে অত্যাচারী শক্তি চাঁড়াল।
দেব–শিশুদের মারছে চাবুক, বীর যুবকদের দিচ্ছে ফাঁসি,
ভূ-ভারত আজ কসাইখানা, আসবি কখন সর্বনাশী?
মাদীগুলোর আদি দোষ ঐ অহিংসা বোল নাকি-নাকি
খাঁড়ায় কেটে কর মা বিনাশ নপুংসকের প্রেমের ফাঁকি।
ঢাল তরবার, আন মা সমর, অমর হবার মন্ত্র শেখা,
মাদীগুলোয় কর মা পুরুষ, রক্ত দে মা রক্ত দেখা।
তুই একা আয় পাগলী বেটী তাথৈ তাথৈ নৃত্য করে
রক্ত-তৃষার 'ময়-ভুখা-হু'র কাঁদন-কেতন কণ্বে ধরে।-
অনেক পাঁঠা-মোষ খেয়েছিস, রাক্ষসী তোর যায়নি ক্ষুধা,
আয় পাষাণী এবার নিবি আপন ছেলের রক্ত-সুধা।
দুর্বলেরে বলি দিয়ে ভীরুর এ হীন শক্তি-পূজা
দূর করে দে, বল মা, ছেলের রক্ত মাগে দশভুজা।..
'ময় ভুখা হুঁ মায়ি' বলে আয় এবার আনন্দময়ী
কৈলাশ হতে গিরি-রাণীর মা দুলালী কন্যা অয়ি! [১]
এ কবিতা ছাপা হওয়ার পরে ১৯২৩ সালে, নজরুলকে জেলখানায় ঢুকায় ব্রিটিশ সরকার।
শেষমেষ ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভ করেছিল, মানুষের আন্দোলনের ফলে । কোন দেব -দেবীর অলৌকিক হস্তক্ষেপে কাজ হয়নাই।
( বলাবাহুল্য, নজরুল ছিলেন একজন বড় কালীভক্ত। সাহিত্যের একটি বিশেষ ধারা আছে, শ্যামাসঙ্গীত। এই শ্যামাসংগীতে দেবী কালী বা শ্যামা এর বন্দনা করা হয়। শ্যামাসংগীতের অল টাইম বেস্ট গীতিকার হচ্ছেন কাজী নজরুল ইসলাম, প্রায় ৬০০ শ্যামা সংগীত লিখেছেন তিনি। সেকেন্ড বেস্ট হচ্ছেন রামপ্রসাদ সেন, প্রায় ৩০০ শ্যামাসংগীত লিখেছিলেন তিনি)
কালীপূজার কর্মকান্ডের মধ্যে অধিকাংশ জায়গায় আলোকসজ্জা ,আতশবাজি পোড়ানো এবং পূজা,অর্চনার মধ্যেই এই পূজা সীমাবদ্ধ থাকে। পূজার উপকরন হিসেবে রক্তজবা এবং পাঠাবলি দেওয়া বেশ পপুলার।
তবে কিছু কিছু কুসংস্কারাচ্ছন্
ভারতবর্ষে ঠগী (Thugee) নামের একটা ভয়াবহ সম্প্রদায় ছিল। এরা ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে পথিক সেজে দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় ঘুরে বেড়াত। একাকী কোনো পথিককে পেলে ,তাকে খুন করে ফেলত মাঠের মাঝেই। কমবয়সী কাউকে আটক করতে পারলে, তাকে জ্যান্ত অবস্থায় কালী মন্দিরে নিয়ে গিয়ে দেবী মূর্তির সামনে বলি দিত।
ঠগীদের সরদার বেহরামকে ইংরেজ সরকার এ্যারেস্ট করতে পেরেছিল। ১৭৯০-১৮৩০ সালের মধ্যে এই বেহরাম কমপক্ষে ৯৩১ টা খুন করে। তাকে আদালতে বিচারক জিজ্ঞেস করেন, তুমি কেন এদেরকে খুন করলে? বেহরাম উত্তর দেয়, মা কালি আমাকে নির্দেশ দিত, তাই মানুষ হত্যা করতাম। [ ২,৩]
ঠগী বাদেও অনেক ডাকাত দল কালী মন্দিরে নিয়মিত নরবলি দিত এবং পূজা করত। বংকিমচন্দ্রের কপালকুন্ডলা উপন্যাসেও একজন তান্ত্রিক সাধকের নরবলির গল্প আছে।
বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন প্রাচীন মন্দির এবং স্থাপনাতে দেবী কালীর প্রতি নরবলি দেওয়ার অনেক আলামত পাওয়া যায়। সিলেটের ‘জৈন্তেশ্বরী বাড়ি’ মধ্যে ‘নরবলির পাটাতন’ নামে একটা স্ট্রাকচার আছে। সেখানে অতীতে নরবলি দেওয়া হত বলে অনেক আলামত পাওয়া যায়। [৪]
সাম্প্রতিককালেও
এরকম কয়েকটা সাম্প্রতিক ঘটনা বলি।
১। ৮ই এপ্রিল, ২০১৭। ভারতের পশ্চিমবংগের পুরুলিয়া গ্রামের নারায়ন মাহাতো তার মা কে খুন করেন । দেবী কালীর মূর্তির সামনে নিজের মা, ফুলু মাহাতো, কে ডেকে এনে দেবীকে প্রণাম করতে বলেন। ফুলু মাহাতো মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে দেবীকে প্রণাম করার সময় নারায়ন মাহাতো ধারালো অস্ত্র দিয়ে মায়ের মাথাটা শরীরে থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।
পুলিশ তাকে এ্যারেস্ট করলে সে বলেছিল, নরবলি দিলে মা কালী খুশি হবে, তন্ত্র সাধনায় আরো সাফল্য আসবে, তাই আমি এই কাজ করেছিলাম। [৫]
২। ভারতের বিহারের বেগুসরাই এলাকার তান্ত্রিক সাধক সুরেন্দ্র প্রসাদ সিংহ নিজের ছেলেকে বলি দেওয়ার পারমিশন চেয়ে আবেদন করেছিল প্রশাসনের কাছে। ২০১৯ এর ঘটনা এটা।
এপ্লিকেশনে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘নরবলি কোনও অপরাধ নয়। এই নরবলির জন্য অন্য কারও ক্ষতি করতে চাই না। নিজের ছেলেকেই বলি দিয়ে আমার সাধনা সম্পূর্ণ করতে চাই। আমার আরাধ্যা দেবীকে সন্তুষ্ট করতে আর তন্ত্র সাধনায় সুফল পেতে নরবলি দেওয়ার খুবই প্রয়োজন । [৬]
৩। আগস্ট ২০১৭। পশ্চিমবংগের বীরভূমের সদাইপুর গ্রামে অভিজিৎ আর সাবিত্রী বাগদি বসবাস করত। সাবিত্রী নিয়মিত তন্ত্র সাধনা করত। নিজেকে 'ডাকিনী' বলে পরিচয় দিত।
এক অমাবশ্যার রাতে অভিজিৎকে স্নান করিয়ে আনে সাবিত্রী। তারপর উঠোনে ত্রিশূল পুতে শুরু হয় তন্ত্র সাধনা। একটা সময়ে স্বামীকে শুইয়ে তাঁর বুকে চেপে বসে সাবিত্রী। এরপর স্বামীর ঠোঁট কামড়ে রক্তাক্ত করে সেখান থেকে রক্ত চুষে খেতে শুরু করে। অসুস্থ হয়ে পড়েন অভিজিৎ। ক্রমশই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে তাঁর। শেষমেশ তাঁকে বর্ধমান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু বাচানো যায়নি অভিজিৎকে। [৭]
৪। অক্টোবর ১৮, ২০১৭। চুঁচুড়া দেবীপুরের বাসিন্দা জ্যোতিষ ও তন্ত্রসাধক স্বপন অধিকারী চন্দননগর এলাকার এক নাবালককে নিয়ে এসে আটকে রাখে। এলাকাবাসী ঘটনা টের পেয়ে তান্ত্রিকের বাড়ি ভাঙচুর করে, মারধোর করে। পরে চুঁচুড়া থানার পুলিশ গিয়ে তান্ত্রিক সহ মোট পাঁচ জনকে জিঞ্জাসাবাদের জন্য আটক করে। তান্ত্রিকের বাড়ি থেকে বেশ কিছু হাড়গোরসহ তন্ত্রসাধনার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। কালীপুজোর আগের দিনে এই ঘটনা ঘটে । [৮]
৫। ডিসেম্বর, ২০১৮ । ভারতের ঝাড়খণ্ডের রাঁচির রাঙামাটি গ্রাম এর ফলেন্দ্র লোহার তন্ত্রসাধনার সঙ্গে যুক্ত ছিল। সে তান্ত্রিক হিসেবে আরও শক্তিশালী হতে চেয়েছিল। তাই শাশুড়ি, সাকুরা দেবীর মুণ্ডচ্ছেদ করে প্রথমে বলি দেয়। তার পর শাশুড়ির রক্তপান করে।[৯]
৬। ২০২০ এর ২৯শে মে উড়িশ্যার কটকের নরসিংহপুরে মন্দিরের পুরোহিত সংসারি ওঝা তারই মন্দিরের এক ভক্তকে বলি দিয়ে তার মাথা কেটে নিয়ে দেবীর সামনে পূজা করলেন সারারাত। তার দাবি , এইভাবে পূজা করলেই বিশ্ব থেকে করোনা দূর হয়ে যাবে । [১০]
৭। বাংলাদেশে নিকট অতীতে কোনো নরবলির ঘটনা শোনা যায়নি। তবে মৃতদেহ থেকে মাথা কেটে নিয়ে যাওয়া এবং তা দিয়ে পূজা করার কয়েকটা ঘটনা শোনা যাচ্ছে ।
গত বছর ঢাকার পোস্তগোলা শ্মশানে একই রকম ঘটনা ঘটেছিল।
শ্মশানে অধিকাংশ ডেডবডি পুড়িয়ে ফেলা হয়। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে, কিছু ডেডবডি ধর্মীয় বিধান মেনে মাটি চাপা দেওয়া হয়। ২০১৯ এর ৫ ই ফেব্রুয়ারি একটা বাচ্চাকে এইভাবে পোস্তগোলা শ্মশানে মাটি চাপা দেওয়া হয়। গভীর রাতে শ্মশানের ভিতর কিছু অস্বাভাবিক এক্টিভিটিজ দেখে ভিতরে পুলিশ ঢোকে।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ৫ টা কিশোর ছেলে কবর থেকে বাচ্চাটার ডেডবডি তুলে এনেছে, শরীর থেকে তার মাথা কেটে আলাদা করে ফেলেছে, মাথায় লাল রং মাখিয়ে, প্রদীপ জ্বালিয়ে কোনো এক ধরনের পূজা করছে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, এইভাবে "তান্ত্রিক সাধনা" করলে বিশেষ ক্ষমতা পাওয়া যায় বলে শুনেছিল তারা। তাই তারা শ্মশানে এসে এই কাজ করছিল। [১১]
৮। গত ৩১ অক্টোবর ঈশ্বরদীর সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের ফজিলা খাতুন (৮৫) নামের ওই বৃদ্ধা মারা যান। সেদিনই তাঁকে দাফন করা হয়। এর ১২ দিনের মাথায় বুধবার রাতের কোনো একসময় দুর্বৃত্তরা কবর থেকেই তাঁর মৃতদেহ তুলে মাথা কেটে নিয়ে যায়। সকালে কবরস্থান কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও মৃতদেহটি পুনরায় দাফনের ব্যবস্থা করে। তার স্বামীর নাম আবুল হোসেন প্রামানিক এবং ছেলে মহসিন প্রামানিক।
ঈশ্বরদী নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডট কম এর রিপোর্ট এ বলেছে -- "স্থানীয়দের ধারনা, জাদু টোনার কাজে ব্যবহারের জন্য লাশের মাথা কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। [১২]
----------
প্রচুর কুসংস্কার গিজগিজ করছে আমাদের আশাপাশে ,এই ২০২০ সালেও।
আইন করে সতীদাহ প্রথা বন্ধ করা গেছে। আইনের শাসন শক্তিশালী হওয়ার কারনে এখন আর হুটপাট করে কেউ কাউকে খুন করতে সাহস করেনা। ফাক ফোকর দিয়ে কেউ বলি দিলেও, তারা ধরা পড়লে আইনানুযায়ী শাস্তি হচ্ছে।
তারপরেও, শাস্তির ভয়ের চেয়েও কারো কুসংস্কারে বিশ্বাসটা বেশি শক্তিশালী হলে, তার মাধ্যমে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
বারবার বলি, নিজে সচেতন হোন। আপনার আশেপাশের লোককেও সচেতন করুন।
এসব তন্ত্র সাধনা করে কোনো ফল পাওয়া যায় কি না মতার কোনো প্রমাণ না থাকলেও, প্রচুর লোক এসকল ক্ষমতায় বিশ্বাস করেন ।
আপনি নিজে হয়তো শিক্ষিত লোক, কাউকে বলি দিতে যাবেন না, কিন্তু আপনার আশেপাশের কোনো কুসংস্কারাচ্ছন্
বারবার বলি,আবারো বলছি ,নিজে একা সচেতন হলে হবে না । আপনার আশেপাশের লোককেও সচেতন করুন।
-----------
রেফারেন্সেস-
[১] https://
[২] https://
[৩] https://
[৪] http://
[৫] https://
[৬] https://
[৭] https://
[৮] https://
[৯] https://
[১০] http://
[১১] https://
[১২]https://
Writer: Jahirul Islam