“বিজ্ঞানমিডিয়া জুড়ে অবাধে হাইপোথিসিসের ছড়াছড়ি, জনমন বিভ্রান্ত, কি হবে এর প্রতিকার!”
(সংবাদ প্রতিবেদন)
“গত কয়েকদিন আগের কথা। 'A’ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে একটা লেখার উপর। তার পছন্দের মাল্টিভার্স থিওরি, যেটাকে সে এতদিন বাস্তব বলে মেনে এসেছিল, সেটা নাকি একটা হাইপোথিসিস মাত্র। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনের তাগিদে পড়তে শুরু করল কতিপয় থিসিস নামধারী হাইপোথিসিস নিয়ে। তাকে জিজ্ঞাসা করলে বলল এরকম নাকি অনেকেই আছেন যারা হাইপোথিসিসকে থিসিস নামে চালিয়ে দেন। সে আরও বলল, উনারা কখনই স্পষ্ট করেন না যে সেটা হাইপোথিসিস কিনা। বরং এমনভাবে বলেন যেন তা সত্যি সত্যিই প্রমাণিত থিসিস।
এমন পরিস্থিতি শুধু 'A’ একা নয়। একইরকম পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন, আরও অনেকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দ্রুত হাইপোথিসিস আর থিসিসের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে না দেখিয়ে দিতে পারলে হয়ে যেতে পারে বড়ো বিপদ। ”
—দৈনিক মনের আলো;) (২৩ নভেম্বর,২০২০)
উপরের সংবাদটি সত্য।এমন করে HT(হাইপোথিসিস) কে থিসিস নামে বিশ্বাস করে কতদিন চলে? কতদিন এগুলোকে হাইপোথিসিস বলে বলে আরেকজনকে বুঝাতে হবে? এখন আবার বলেন না ”হাইপোথিসিস তো একপ্রকার থিসিসই“!
চলুন আগে পরিষ্কার হওয়া যাক HT কি এবং কাজ সম্পর্কে।
হাইপোথিসিস বা HT হলো অনুকল্প মাত্র। একটা সুত্রের গাণিতিক দিক থেকে ধারণা পাওয়া জিনিস। যেমন ব্লাকহোলের কথাই ধরা যাক। ব্লাকহোল প্রথমে জি.আর এক সমীকরণ থেকে এসেছিল। কিন্তু সমীকরণে পাওয়ার অনেক পরে বাস্তব অস্বিত্ব পাওয়া গিয়েছিল। বাস্তব অস্বিত্ব পাওয়ার আগে ব্লাকহোল ছিল HT আর পাওয়ার পর হলো থিসিস। এমনভাবে অনেক কিছুই গণিত দিয়ে সমীকরণ সমাধান করে পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু সেগুলো বাস্তবে নাও থাকতে পারে। সেগুলো হলো HT বা হাইপোথিসিস। তবে সব HT যে ভবিষ্যতে থিসিস হবে —এমন গ্যারান্টি দেওয়া যায় না। থিসিসের প্রচুর প্রমাণ লাগে। না হলে থিসিস তার যোগ্যতা হারাবে। বিজ্ঞানীদের কাছে থিসিস খুবই খুবই খুবই.... খুবই দামি। হাইপোথিসিস কোনোদিনও এর ধার ধরে না। তবে অতটা অবহেলিতও বলা যাবে না।
বিষয়ের ভিত্তিতে হাইপোথিসিস অনেকগুলো আছে। নিচে সেইসব হাইপোথিসিস গুলোকে তাদের সাব্জেক্ট অনুযায়ী ভাগ ভাগ করে দেখানো হলো। সেই সাথে সাব্জেক্টের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ও দেওয়া হলো।
(১) পার্টিকেল ফিজিক্সঃ
বাসে বাসে এক্সিডেন্ট হলে কি দেখতে পাবেন? ভাঙাচুরা কাঁচ তাই তো? গুরুতর এক্সিডেন্টে বড়জোর বাসের ভাঙা টুকরাই পাবেন। কিন্তু যদি পার্টিকেল ফিজিসিস্টকে বলেন, উনি কিন্তু ট্রাকের মাথাও খুজে পাবেন! কিভাবে? E^2 = p^2c^4 + m^2c^2 থেকে। এই হচ্ছে পার্টিকেল ফিজিক্সের কাজ। কণাদের মাঝে গুঁতাগুঁতি করে নতুন কণা বের করা বা তাদের উপাদান নির্ণয় করা। প্রোটন প্রোটন গুঁতাগুঁতি করে শুধু যে কোয়ার্ক বের হবে, তা না, নিউট্রিনোর মতো কণাও বেরিয়ে আসবে। তাছাড়া আরেকটা কাজ আছে। বাইরে তৈরি হওয়া কণা শনাক্ত করা। পার্টিকেল ফিজিক্স শুধু চায় সবকিছুর মাঝে কণা খুজে পেতে। ভরের জন্য কণা, স্ট্রং ফোর্সের জন্য কণা, ইলেক্ট্রো-উইকের
এর HT গুলো হলোঃ
• গ্র্যাভিটনঃ
মনে আছে, পার্টিকেল ফিজিসিস্টরা সব মৌলিক বলের জন্য কণার প্রস্তাব করেন? হ্যা, গ্র্যাভিটির জন্যও ওই একই প্রস্তাব করা হয়েছে। কণাটির নাম গ্র্যাভিটন। অন্যান্য বলবাহী কণার অস্বিত্ব আবিষ্কার হলেও ১৯৩০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বেচারাকে ধরা যায়নি। এর কারণ কি? কারণ হলো এর অস্বিত্ব আছে কি নাই, তাও আমাদের জানা নেই। এই গ্র্যাভিটিকে ব্যাখ্যা করতে কোনো কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরিই নেই। প্রত্যেক বলের ফিল্ড নিয়ে কাজ করে এই কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরি। আসলে এর মূল কারণটা হলো, গ্যাভিটি বিশাল এরিয়া নিয়ে কাজ করে। একে ব্যাখ্যা করার জন্য জি.আর লাগে। ধারণা করা হচ্ছে যে জি.আর ও কিউ.এম সমন্বিত করে যে তত্ত্ব পাওয়া যাবে, সেটাই কেবল কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটিটা ব্যাখ্যা করতে পারবে। পারবে গ্র্যাভিটনকে ধরার ফাঁদ বানাতে। আজও এটা হাইপোথিসিস হয়েই আছে। সবচেয়ে বড়ো কথা হলো একে ধরা মুশকিল হবে। গ্র্যাভিটি খুবই দুর্বল। ছোট কারো সাথে মিথস্ক্রিয়া করতে খুব একটা চায় না বললেই চলে। বৃদ্ধ বল আরকি!
• টকিয়নঃ
আলোর কম বেগে চলাচল করে এমন কণাগুলোকে বলা হয় Bradyons (ব্রেডয়ন্স)
। আর আলোর বেগে চলাচলকারী কণাদের বলা হয় Luxons (লাক্সন্স)। বাস্তবে ব্রেডয়ন আর লাক্সনের অস্বিত্ব আছে। আমাদের চারপাশের বস্তুগুলো ব্রেডয়ন। আলো, কতিপয় মৌলিক বলবাহী কণা লাক্সন। সেই পথ ধরেই আলোর বেশি বেগে চলা কণাগুলোকে নাম দেওয়া হয় Tachyon (টকিয়ন)। টকিয়নের প্রস্তাব করা হয় ১৯৬৭ সালে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো টকিয়ন পাওয়া যায়নি। অধিকাংশ বিজ্ঞানীরা টকিয়নের অস্বিত্ব অস্বীকার করেন। আপেক্ষিক তত্ত্ব, যেটা প্রমাণিত একটা থিসিস, প্রকৃতি যেটা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে, সেটাকে ভুল বলে এই সামান্য হাইপোথিসিসটি! কত্ত বড়ো সাহস! টকিয়নের অস্বিত্ব আদৌ সম্ভব না। টকিয়েন আপেক্ষিক ভর জানতে চাইলে আসবে কাল্পনিক ভর। বেচারার সময়টাতেও কাল্পনিক সংখ্যা বসে থাকে। তাই যদি হয়, তবে আমাদের স্পেস-টাইমে সে থাকতে পারবেনা। আমাদের সময় কাল্পনিক না। টকিয়নের অস্বিত্ব যে নেই এটা বলার অপেক্ষা রাখিনা। তবে হ্যাঁ, স্রেফ হাইপো হয়ে থাকতে দোষ কোথায়?
(২) কোয়ান্টাম মেকানিক্সঃ
এনিয়ে আর কি বলা যায়! খুব খুব ছোট জগতের কাজ দেখাশুনা করে। শুধুই সম্ভাবনা দেখে দেখে কণার জীবনযাত্রা ব্যাখ্যা করে। কণারা কতবেগে বাড়ি ফিরতে পারে, কত সময় লাগতে পারে, কত বাজার করে আনতে পারে, কতটুকু বুদ্ধি নিয়ে চলে —এসব ব্যাখ্যা করাই এর কাজ। কণাদের বুদ্ধি আসলে বিজ্ঞানীদেরকে অবাকই করে দেয় বটে! চালাক-চতুর কণাদের যোগাযোগব্যবস্থা
এর HT গুলো হলোঃ
• সিমিউলেটেড ইউনিভার্সঃ
অসম্ভব চালাক কণারা খুবই সুবিধাবাদী। ওদের ডিটেক্ট করার আগ পর্যন্ত কোন অবস্থায় থাকে, কণা নিজেও জানে না। এমনকি যেন ডিটেক্ট করার পর কণা ঠিক করে যে সে কোথায় কোন অবস্থায় থাকবে! আমরা সাধারণ জীবনে একটা কিছু ডিটেক্ট করি চোখ দিয়ে। সেই হিসেবে আমি আপনি লেখাটা পড়ছি, পড়া শুরুর আগে যেন লেখা গুলো লোড নিল! গেমের মতো আসেপাশের দুনিয়া লোড হয়ে ধরা দিচ্ছে আমাদের চোখে। এই ব্যাপারটাকে বুঝাতে বলা হয় সিমিউলেটেড ইউনিভার্স। এখানে একটা সম্ভাবনা আছে যে আমরা সিমিউলেটেড ইউনিভার্সে বসবাস করি। কোনো অতিউন্নত কিছু হয়ত আমাদের স্রেফ কম্পিউটার প্রোগ্রাম হিসেবে সাজিয়ে রেখেছে। হয়ত অনেকগুলো সিমিউলেটেড ইউনিভার্স আছে, যেগুলো একটা রিয়েল ইউনিভার্স দিয়ে প্রোগ্রাম করা। যদি আমাদের ইউনিভার্স সিমুলেশনই হয় তাহলে এমন তত্ত্ব অবশ্যই থাকার কথা যেটা দিয়ে কণার ভবিষ্যৎ বলে দেওয়া যায়। আর প্রত্যেক কণার উপর পাহারা বসিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ জেনে আমাদের ভবিষ্যৎ জেনে ফেলা যায়। কিন্তু সেই তত্ত্ব হয়ত আমাদের কল্পনাশক্তি আর বুদ্ধির জন্য অনুপযুক্তও হতে পারে। সবমিলিয়ে সিমিউলেটেড ইউনিভার্স —এটাও কিন্তু হাইপোথিসিস।
• প্যারালাল ইউনিভার্সঃ
আমাদের মহাবিশ্ব কি আসলেই একা? মানে আর কোনো মহাবিশ্ব কি নেই? এতই অসম্ভব তাদের অস্তিত্ব থাকা? কোয়ান্টাম মেকানিক্সে একটা হাইপোথিসিস আছে। সেটা হলো আমরা যখন একটা কণাকে পরিক্ষা করি বা ডিটেক্ট করতে যাই, তখন যতগুলো সম্ভব সকল পসিবিলিটির ইউনিভার্স থেকে একটাকে বেছে নেই। সেটাই হয় আমাদের পরিক্ষার ফলাফল। অদ্ভুত এই হাইপোথিসিসের নাম প্যারালাল ইউনিভার্স। আপনার আচরণ, গতিবিধি যা আছে, সবগুলোর সব সম্ভাব্য কম্বিনেশন নিয়ে প্রচুর ইউনিভার্স থাকতে পারে। এই ভিত্তিতেই ধারণা করা হয় প্যারালাল ইউনিভার্সের। এর অস্বিত্ব না থাকাই উচিত বলে আমি মনে করি। কিন্তু সবচেয়ে ভালো কথা হলো, এটাও একটা হাইপোথিসিস। এর ফোটা পরিমাণেরও বাস্তব সত্যতা পাওয়া যায়নি আজ পর্যন্ত।
(৩) জেনারেল রিলিটিভিটিঃ
মূলত মহাকর্ষের উপর এর কাজ। স্পেস-টাইম, তারাদের ক্ষমতা, কত শক্তিশালী, আলোর কান টেনে বাঁকা করে দেওয়া এসব নিয়েই কাজ। বিশাল বিশাল জিনিসের গুণ-দোষ দেখে সমীকরণ দিয়ে। সমীকরণ নিয়ে ঘাটাঘাটি করে অদ্ভুদ জিনিসের অস্বিত্ব বের করে চমকিয়ে দেওয়াই তার কাজ।
এর HT গুলো হলোঃ
• ওয়ার্মহোলঃ
ব্লাকহোলের পর জেনারেল রিলিটিভিটির গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ওয়ার্মহোল। এর ধারণা খুব সোজা। এটি হলো দুইটি দুরবর্তী স্থানের মধ্যে শর্টকাট রাস্তা বা ব্রিজ। এই ব্রিজের প্রস্তাব দেন আইন্সটাইন ও রোজেন। তাই একে আইন্সটাইন-রোজেন
• ডার্ক ম্যাটার —আনকম্প্লিট থিসিসঃ
ডার্ক ম্যাটার আর ডার্ক এনার্জি নিয়ে বিস্তারিত লিখতে গেলে এরকম অন্তত ৫ টা আর্টিকেল লিখতে হবে। তাই যতটা সংক্ষেপে সম্ভব তাই লিখছি।
আমাদের মহাবিশ্বের যেকোনো বিশাল এরিয়ার ভর মাপতে হলে সবচেয়ে ভালো কাজে দেয় গ্র্যাভিটেশনাল
• ডার্ক এনার্জি —আনকম্প্লিট থিসিসঃ
আমাদের মহাবিশ্বের গ্যালাক্সিগুলো গুচ্ছিত হয়ে তাদের ভর কেন্দ্রের চারপাশে ঘুরতে থাকে। এই গ্যালাক্সি গুচ্ছকে বলে গ্যালাক্সি ক্ল্যাস্টার। এই ক্ল্যাস্টারগুলো
(৪) কসমোলজিঃ
জীব বিজ্ঞানে যেমন ভ্রুণ বিকাশ, বিবর্তন নিয়ে কথা হয়, এখানেও হয় মহাবিশ্বের বিবর্তন, জন্ম নিয়ে কথা হয়। অনেকগুলো হাইপোথিসিস একেক করে মহাবিশ্বের জন্ম নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেয়।
এর HT গুলো হলোঃ
• বিগব্যাঙ সিঙ্গুলারিটিঃ
সিঙ্গুলারিটি কি? এটা এমন একটা অবস্থা যেখানে আমাদের জানা ফিজিক্সের নিয়ম ভেঙ্গে পড়ে। বিগব্যাঙের আগমুহূর্ততে ইউনিভার্সের সব এনার্জি একবিন্দুতে অবস্থান করছিল বলে অনুমান করা হয়। এই বিন্দুর ঘনত্ব অসীম। অসীম ঘনত্বের এই বিন্দুকে বলা হয় সিঙ্গুলারিটি।
অসীম ব্যাপারটাকে পদার্থবিজ্ঞান কিছুতেই মেনে নিতে পারেনা। বিশাল ভরের বা শক্তির কাজ হয় জি.আর তে।কিন্তু ক্ষুদ্র জগৎ নিয়ে কাজ হয় কিউ.এম তে। এদুটো থিসিসের বিরোধ লাগে এখানে এসে। তাই আমাদের জানা পদার্থবিজ্ঞান এখানে পঙ্গু। বলতে গেলে সিঙ্গুলারিটি যে সত্যিই আছে, তার কোনো প্রমাণ নেই। আমরা ইউনিভার্সের একটা নির্দিষ্ট অতীত পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করতে পারি। বিগব্যাঙের কিছুকাল পর প্রথম যখন আলো মুক্ত হয়ে ইউনিভার্সে ছড়িয়ে পরল, তার আগের কোনো ঘটনা আমরা ঠিক বলতে পারিনা। সেই আলোটাকে এখন দেখি কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে। আমরা এগের ঘটনা শুধু অনুমান করতে পারি। হ্যাঁ, যেদিন কিউ.এম ও জি.আর সমন্বিত হবে, সেদিন আমরা ঠিকই সত্যিটা ধরতে পারব। তার আগে সব কিছু হাইপোথিসিস হয়েই থাকবে। সিঙ্গুলারিটির অনেক সমস্যাও আছে। শক্তির সংরক্ষণ করে সিঙ্গুলারিটিকে টিকিয়ে রাখা যায় না। বিগব্যাঙের সিঙ্গুলারিটি একটা হাইপোথিসিস মাত্র।
• শক্তির উদ্ভব শুন্য থেকেঃ
সিঙ্গুলারিটি সমস্যার সমাধানের জন্য শুন্য থেকে শক্তির উদ্ভভ বিষয়টা চমৎকার সমাধান। এটা বুঝতে হলে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন বুঝতে হবে।
আমরা আসলে যেটাকে শুন্যস্থান বলছি বা মহাকাশ বলছি, সেটা কিন্তু আসলে শুন্য নয়। শুন্য থেকে শক্তি নিয়ে কণা তৈরিও হতে পারে। যেমন ধরুন, ০=০, তাহলে লিখতে পারি, ১–১= ০ । এখানে কি হলো একটু দেখুন। ০ কে আমরা +১ আর –১ এ ভেঙ্গে দিয়েছি। তাহলে কি বোঝা যাচ্ছে? শুন্য থেকে শক্তি পেতে হলে কণা (+১ এর জায়গায়) আর প্রতিকণা (–১ এর জায়গায়) তৈরি হতে হবে। শেষে কিন্তু দুইয়ে মিলে শুন্যই থাকবে। এই ব্যাপারটাকে বলা হয় কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন।এইয
ধারণা করা হয় ইউনিভার্সের জন্মের সময় এই কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনই শক্তির জন্ম দিয়েছিল। কণা দিয়ে তৈরি হয়েছে আমাদের ইউনিভার্স। আর প্রতিকণার কি হলো, সেটা নিয়েও হাইপোথিসিস আছে। মজার ব্যাপারটা এখানেই —হাইপোথিসিসের মধ্যেও হাইপোথিসিস! যাইহোক এই শুন্য-শক্তির ধারণা কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে বটে তবে এর কিন্তু কোনো প্রমাণ নেই। কোনো প্রমাণ নেই যে ইউনিভার্স আসলেই শুন্য থেকে এসেছে। এটাও কেবল একটা হাইপোথিসিসই।
• ইনফ্লেশানঃ
বিগব্যাঙের মুহুর্তে ইউনিভার্স খুবই দ্রুত প্রসারিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। যাকে বলে ইনফ্লেশান হাইপোথিসিস। আসলে এইরকম অনুমান যে ঠেলায় পরেই করতে হয়েছে, তা বোঝাই যাচ্ছে। এমনি এমনি কি করে এত দ্রুত বড়ো হতে হবে? আসলে এই ইনফ্লেশান হাইপোথিসিস এসেছে দুটো মারাত্মক সমস্যা থেকে। একটা হলো আমাদের ইউনিভার্সের শক্তির এভারেজ ডেনসিটি তার ক্রিটিক্যাল ডেনসিটি থেকে সামান্য একটু বেশি। এই পরিস্থিতিতে মহাবিশ্বের জ্যামিতিক আকৃতি হবে প্রায় সমতল। ক্রিটিক্যাল ডেনসিটি হলো ঐ ডেনসিটি, যেটার কম ডেনসিটি থাকলে ইউনিভার্স সংকুচিত হওয়া শুরু করবে। কিন্তু আমাদের ইউনিভার্সের এভারেজ ডেনসিটি এর থেকে বেশি।
আমাদের ইউনিভার্সের এইযে সমতল প্রায় আকৃতি, এর নাম দেওয়া হয়েছে ফ্ল্যাটনেস প্রব্লেম।
আর দ্বিতীয় সমস্যা হলো, আমাদের মহাবিশ্বের সব দিকের তাপমাত্রা প্রায় একইরকম। এর নাম হরাইজন প্রব্লেম। এই দুইটি সমস্যার সমাধানে মাঠে নামে ইনফ্লেশন। এই হাইপোথিসিসে বলা হয়ে থাকে যে ইউনিভার্স মাত্র ১০^–৩৬ সেকেন্ডে বিন্দুর আয়তন থেকে একটা বলের আকৃতির সমান হয়েছিল। এরপর স্বাভাবিক ভাবেই বড়ো হতে থাকে। ডার্ক এনার্জির কারণে এখনো প্রসারণ চলনান। ইনফ্লেশান হাইপোথিসিসকে অনেকেই সত্যিকার থিসিস মনে করে থাকেন। কিন্তু আসলে ইনফ্লেশান হয়েছিল কি হয়নি —এর কিচ্ছুটি জানা সম্ভব হয়নি।
(৫) তথাকথিত থিওরিঃ
দুইজন লোক দুইটা কাজ দুইরকম পদ্ধতিতে করে আসছিল। এখন দেখা গেল যে এমন একটা কাজ এসেছে, যেখানে দুই পদ্ধতিই সমন্বিতভাবে লাগবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, পদ্ধতিদুটোর কিভাবে সমন্বয় করা যায়, তা কেউ জানেনা। অনেকে চেষ্টা করেছেন, কিছুটা সফল হলেও বাস্তবে খাটবে কিনা সন্দেহ। কিউ.এম ও জি.আর এমনিই দুটো তত্ত্ব। এক জায়গায় এসে দুটোরই সমন্বিত সাহায্য লাগে।একটু আগে এদুটো নিয়ে বলেছি।
এর HT গুলো হলোঃ
• স্ট্রিং থিওরির মাল্টিডাইমেনশনঃ
স্ট্রিং থিওরির সবচেয়ে বড় ঝামেলা হলো এর সত্যতা আনার জন্য অনেকগুলো ডাইমেনশন লাগে। আমরা থ্রি ডাইমেশনে বসবাস করি। এই হাইপোথিসিস বলে যে আমাদের আড়ালেও অন্তত ১০টা ডাইমেনশন আছে। যেগুলো নাকি খুবই ক্ষুদ্র স্থানের মাঝে কুঁকড়ানো আছে। ঠিক যে ডিমের মতো করে কুঁকড়ানো আছে, তাও কিন্তু না। কিভাবে বা কেন কুঁকড়ানো আছে তাও জানা যায় না। এটাও বলে যে আমরা এই মাল্টি ডাইমেনশনের অস্তিত্ব শুধু কাগজ কলমেই পাব, বাস্তব এক্সপেরিমেন্ট পসিবল না। তো একটা কথা বলাই যেতে পারে, সবচেয়ে অসহায় হাইপোথিসিস হলো এই মাল্টি ডাইমেনশন হাইপোথিসিস। বেচারার অস্তিত্ব প্রমাণের উপায় নেই —সেটা আগেও বলে দেওয়া হয়েছে। যদিও পরোক্ষভাবে অস্তিত্ব প্রমাণ করা যেতে পারে। তবে যদি সেটা সত্যিই থেকে থাকে তবেই কেবল প্রমাণ করা সম্ভব হবে।
• স্বয়ং স্ট্রিং থিওরিঃ
আসলে স্ট্রিং থিওরিকে কেন থিওরি বলে, সেটাই বুঝতে পারি না। এর নেই কোনো প্রমাণ, শুধু দু’একটা ছোটখাটো পরিক্ষা –অত:পর সমীকরণ –তারপর সেই সমীকরণকে ভিত্তি ধরে নিয়ে সমীকরণের উপর সমীকরণ সাজিয়ে স্ট্রিং হাইপোথিসিস সাজানো হয়েছে। এই হাইপোথিসিস বলে, প্রত্যেক কণাই স্ট্রিং দিয়ে তৈরি। সুতার মতো স্ট্রিং কেঁপে কেঁপে কণার জন্ম দেয়। ঠিক করে দেয় বৈশিষ্ট্য। খোলা স্ট্রিং বন্ধ স্ট্রিং হ্যান ত্যান ! স্ট্রিং হাইপোথিসিস প্রথম দিকে থিওরি হতেই চলেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, প্রমাণ করার জন্য প্রযুক্তির অভাবে নাকি সেটা হাইপোথিসিসের মধ্যে চলে যায়। এই হাইপোথিসিস একটা মহৎ কাজের উদ্দেশ্য নিয়ে জন্মেছিল। অনেকটুকু গাণিতিক সাফল্য নিয়ে আজও এই হাইপোথিসিস কিউ.এম ও জি.আর এর মাঝে সম্পর্ক তৈরিতে কাজ করছে। সালাম জানাই তোমাকে স্ট্রিং হাইপোথিসিস!
• থিওরি অব এভরিথিংঃ
ধারণা করা হয়, এমন কোনো তত্ত্ব থাকতে পারে যেটা দিয়ে আমাদের ইউনিভার্সের প্রত্যেক ঘটনা পাই টু পাই হিসেব করে মিলিয়ে দেওয়া যাবে। আমরা জানতে পারব পরে কি হতে চলেছে। এই থিওরির কথা বলতে গিয়ে বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং তার বিখ্যাত 'A Brief History Of Time’ বইয়ে শেষ লাইনে লিখেছেন, '....We will be able to know the mind of GOD’। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা এই থিওরি আবিষ্কার করতে পারব কিনা, তার নিশ্চয়তা নেই। হতে পারে বিবর্তনের মাধ্যমে বহুকাল পরে মানুষ হয়ত সুপার ইন্টিলিজেন্ট হয়ে তারপর এই তত্ত্ব আবিষ্কার করতে পারবে। কেউ কেউ বলেন, স্ট্রিং থিওরিই আসলে কথিত এই থিওরি অব এভরিথিং!
• মাল্টিভার্সঃ
মাল্টিভার্সের অনেক প্রকারভেদ আছে বলে অনুমান করা হয়। স্ট্রিং থিওরি মাল্টিভার্স বলতে তার ওই মাল্টি ডাইমেনশনাল ইউনিভার্সের কথা বলে, কসমোলজিতে বিগব্যাঙের পর ইনফ্লেশনের চলমান থাকার জন্য উদ্ভব হওয়া অনেকগুলো ইউনিভার্সকে মাল্টিভার্স বলে। আবার প্যারালাল ইউনিভার্স নিজেই একপ্রকার মাল্টিভার্স....
তো এই ছিল হাইপোথিসিস।
এখন থেকে সাবধান থাকা উচিত যেন হাইপোথিসিসকে থিসিসের সাথে গুলিয়ে না ফেলা হয়!
(শেষ)
Writer: Ashraful Islam Mahi