বিশ্বব্যাপী প্রজননের উপযুক্ত বয়সী দম্পতিদের মধ্যে প্রায় ৪ কোটি ৮০ লক্ষ ( ১৫ %) দম্পতি অনুর্বর। এর মধ্যে ১/৩ কেসে দায় কেবল পুরুষের, ১/৩ কেসে দায় কেবল নারীর এবং বাকি ১/৩ কেসে দায় নারী-পুরুষ উভয়ের এবং অনুর্বরতার অজানা কারণসমূহ।
যদি ১ বছর ধরে, সপ্তাহে অন্তত দুবার আনপ্রটেক্টেড সেক্স করা পরও একটি দম্পতি সন্তান সৃষ্টি করতে না পারে, তাহলে তাদের ডাক্তার শরণাপন্ন হওয়া আবশ্যক। কারণ এটা খুব সম্ভব যে, তাদের মধ্যে একজন বা উভয়েই অনুর্বর।
পুরুষের অনুর্বরতার সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত দুটো জিনিসের সাথে। ১) স্পার্ম প্রডাকশন ২) স্পার্ম ডেলিভারি
প্রথমমত, স্পার্ম প্রডাকশনে যদি কোনো কারণে স্পার্মের মান, গুণ এবং পরিমাণ খুব হ্রাস পায়, তাহলে সে পুরুষের পক্ষে পিতা হওয়া সম্ভব না। পরিমাণের বিষয়ে একটা মজার কথা আছে। সেটা হচ্ছে, সেমেন/ semen আর স্পার্ম/ sperm জিনিসটা এক না।
একজন পুরুষ সাধারণ এক মৈথুন/ রতিক্রিয়ায় ২-৫ মিলিলিটার / ১ চা চামচ পরিমাণ সেমেন নিঃসরণ করে। এই সেমেনের একটা মৌলিক ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে স্পার্ম কোষ। তাই খালি চোখে বুঝার উপায় নেই যে স্পার্মের পরিমাণ কতটা কি কমেছে বা বেড়েছে।
দ্বিতীয়ত, স্পার্ম কোষে যদি মবিলিটি / গতিশীলতায় কোনো ত্রুটি থাকে তবে তা ডিম্বাণু পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। আবার কিছু ক্ষেত্রে স্পার্ম কোষের আকৃতিগত জটিলতা ( abnormal sperm morphology) থাকলে তা ডিম্বাণুকে ফার্টিলাইজ করতে পারে না।
এখন আমরা ১০ টা কারণ তালিকা করবো যে কারণে স্পার্ম প্রডাকশন ও তার ডেলিভারিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এগুলোকে রিস্ক ফ্যক্টরও বলা চলে।
১) ওবেসিটিঃ- দেহে অতিরিক্ত চর্বি ( BMI ৩০ এর উপর) থাকলে তা এন্ড্রজেন/ androgen ও টেস্টোস্টেরন/ testosterone হরমোন মেটাবলিজমে বাধা সৃষ্টি করে। যেহেতু এই দুই হরমোন প্রজনন স্বাস্থ্যে ব্যাপক অবদান রাখে, তাই এদের উৎপাদন ও কার্যক্রমে বাঁধা দেখা দিলে স্পার্মের গুণ এবংকি স্পার্মের ডিএনএ-তে তা ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে।
২) ধূমপানঃ- নিকোটিনের ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষণীয় টেস্টিকুলার মাসেলে। এছাড়াও কোকেন সেবনে স্পার্ম তার গতিশীলতা হারায়। তবে এ প্রভাবগুলো পরিবর্তনীয়/ রিভার্সিবল। এসকম টক্সিক বস্তু, নেশা থেকে কয়েকমাস বিরত থাকলে পুনরায় আগের যৌনস্বাস্থ্য ফিরে পাওয়া সম্ভব।
৩) রেডিয়েশনঃ- মোবাইল বা অন্য কোনো ডিভাইস থেকে নির্গত রেডিয়েশন কি আদো অনুর্বরতার কারণের জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী নাকি না, তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে। প্রমাণের বড্ড অভাব আমাদের এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে/ কনক্লুশনে আসতে বাঁধা দেয়। তবে কেমোথেরাপি বা অন্যান্য শক্তিশালী রেডিয়েশন অনুর্বরতা হেতু হতে পারে যদিওবা তার প্রতিরোধে বেশ কিছু পন্থা অবলম্বন করা হয়।
৪) নিউট্রিশন/
৫) স্টেরয়েডঃ- বিশেষজ্ঞ, ডাক্তার বা এক্সপার্টের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরণের স্টেরয়েড নেয়া উচিত না। টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধির জন্য নেয়া ইনজেকশনও হিতের বিপরীত স্বরূপ কাজ করতে পারে। অতিরিক্ত মাত্রায় কফি পানও অনুর্বরতার হেতু হয়ে দাঁড়াতে পারে, যদি আগে থেকেই ফার্টিলিটি সংক্রান্ত কোনো সমস্যা থেকে থাকে।
৬) হাই টেস্টিকুলার টেম্পারেচারঃ- তাপমাত্রা টেস্টিক্যালের আশেপাশে ২-৩ সেন্টিগ্রেড বেড়ে গেলেও স্পার্ম উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটে। তাই সবসময় চেষ্টা করা উচিত সে স্থান শীতল ও কমফোর্টেবল রাখা।
৭) ইনফেকশনঃ- নানানরকম যৌনরোগ ও ইনফেকশনের কারণে— যেমন গনোরিয়া— স্পার্মের গুণ হ্রাস পায়।
৮) জ্যনিটাল ইনজুরিঃ- পুরুষাঙ্গ কোনোরকম গুরুতর ইনজুরি / আঘাত অনুর্বরতার কারণ হতে পারে।
৯) ভারিকুসিলঃ- স্ক্রোটাল ( scrotal) নামক স্থানে যদি কোনো কারণে শিরা/ ভেইন ফুলে ফেপে যায় তবে ট্যস্টিকেলের তাপমাত্রা বেশ বেড়ে যায়। এর ফলে স্পার্ম উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটে।
১০) বয়সঃ- এটা সত্য যে পুরুষরা বৃদ্ধ বয়সেও সন্তানের জনক হতে পারে তবে ৩৫ এর পরে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা অনেকাংশে রুদ্ধ হয়ে যায়। ৪০ এর পর প্রতি বছর সুস্থ স্বাভাবিক সন্তানের পিতা হওয়ার সম্ভাবনা ১১% করে হ্রাস পেতে শুরু করে। ৫০ বছরের পরে পুরুষ যদি সন্তানের পিতা হওয়ার আবেগ ধারণ করে, তবে বেশ ভালো সম্ভাবনা আছে যে, সে সন্তান কোনোরকম জেনেটিক সমস্যা বা সিনড্রোম নিয়ে জন্মাবে।
এগুলো ছাড়াও কিছু মেডিকেল কন্ডিশন আছে যার দরুন একজন পুরুষ অনুর্বর হতে পারে। যেমনঃ- দেহে এমন এন্টিবডি থাকা যা স্পার্ম কোষকে আক্রমণ করে ধ্বংস করে দেয়, ট্যাস্টিকেল সম্পূর্ণভাবে স্ক্রোটামে নামে নি, একদম কম হরমোন উৎপাদন হওয়া ইত্যাদি।
এখন আমার ঘেটে দেখার বিষয় হচ্ছে, ইনফার্টিলিটির লক্ষণ/ সিম্পটম কি কি। তার আগে বলে রাখি, ইনফার্টিলি সিম্পটম নিজে নিজে পর্যবেক্ষণ করে ধরা প্রায় অসম্ভব। এজন্যই ৬ মাস থেকে ১ বছর সময় নিয়ে তারপর ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। তাও সম্ভাব্য কিছু সিম্পটম কি কি হতে পারে তা দেখা যাক।
১) সেক্সের প্রতি আকর্ষণ কমে যাওয়া।
২) স্তনের আকৃতি বৃদ্ধি পাওয়া ( gynecomastia)।
৩) দেহে লোম ও ফ্যাসিয়াল হ্যয়ার ক্রমে ক্রমে হ্রাস পাওয়া।
৪) স্পার্মের পরিমাণ বেশ কমে যাওয়া ( সেমেন যদিও প্রায় একই পরিমাণের থাকে, তবে তার মধ্যে স্পার্ম কোষ কমে যায়। তাই সেমেনের ওভারওল পরিমাণও হ্রাস পায়)।
৫) ট্যস্টিকেলে কোনোরকম ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করা।
আশার বাণী হচ্ছে এখন এর অনেক চিকিৎসা আছে এবং তা বেশ সফল। বিরল বা অজানা কেসের ক্ষেত্রে এর চিকিৎসা সম্ভব হয় না ( ২৪% এর আশেপাশে)। এছাড়া তেমন ভাবনার কিছু নেই। ভালো লাইফস্টাইল অনুসরণ করলে এরকম পরিস্থিতিতে পড়ার সম্ভাবনা কম। যদিও পুরুষদের মধ্যে ইনফার্টিলিটি মোটামুটি কমন, তবে তার অনেকগুলোই চিকিৎসার দ্বারা নিরাময় সম্ভব।
[ বত্ব, কেউ মন থেকে হাদিয়া / উপহার দিলে আমি তা সাদরে গ্রহণ করি। ধন্যবাদ। ]
_______________
https://
https://
https://
https://
https://
https://
https://
https://
Writer: Md Ariful Islam