আ পারফেক্ট মার্ডার

কলিং বেলের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় আলিফের । বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করে দেখে সময় তিনটা বেজে পাঁচ মিনিট । নিজেকে প্রশ্ন করে, এতো রাতে কে আসতে পারে?
মাঝরাতে কেউ দরজায় কড়া নাড়লে বুঝতে হবে বিপদ। যতো গভীর রাতে কেউ আসবে ততই বড় বিপদ। উঠতে চেয়েও আলিফ কী একটা মনে করে শুয়ে রইলো । আরো কয়েকবার কলিং বেলের শব্দ শুনতে পেলো সে, তারপর খট করে দরজা খোলার শব্দ। সম্ভবত কাজের লোকেদের কেউ দরজা খুলে দিয়েছে ।
অজানা আশংকা আলিফের মনে চেপে বসেছে ৷ আলিফ জানে তার বাবা একজন সৎ এবং নিষ্ঠাবান পুলিশ অফিসার । এজন্য আলিফের খুব ভয় হয় । সৎ লোকের শত্রু বেশি থাকে । আলিফের মা কিছু বছর আগে এক কার এক্সিডেন্টে মারা যায়, আলিফের সন্দেহ তার বাবার শত্রুরাই এই কাজ করেছে । তখন তদন্তের ফলাফল ছিলো শূন্য । আলিফ দমে যায়নি, এখনো সে খুঁজে চলেছে তার মায়ের এক্সিডেন্টের কারণ ।
হঠাৎ এক চিৎকারের শব্দে আলিফের বুক কেঁপে ওঠে। নিচতলা থেকে শব্দটা আসছে ,কণ্ঠটা অনেকটা তার বাবার মতো লাগছে । বিছানা থেকে এক লাফে নেমে দৌড়ে বাবার রুমে যায় । কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে । বাবার রক্তাক্ত দেহ দেখে ডুকরে কেঁদে ওঠে আলিফ । বড়ো নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে কাজের লোকটিকে। সামাদ ভাই,বলে আলিফ ছুটে যায় নিথর হয়ে পড়ে থাকা সামাদের কাছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে পুরো ঘর। সামাদের ঘাড়ে হাত রেখে নিশ্চিত হয় আলিফ। আর বেঁচে নেই সামাদ। বাবা জামিল সাহেব এখনো ছটফট করছেন। গুলি খেয়েছেন তিনিও। বাঁচাতে হবে তাকে। তার আহত দেহটাকে কাঁধে নিয়ে ছুটে বেরিয়ে আসে আলিফ। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে চলে হাসপাতালে।
জামিল সাহেবের অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে। অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার আগে হঠাৎই বেঁকে বসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গোলাগুলির কেস, তাও মাঝরাতে। পুলিশ না আসা পর্যন্ত তারা কিছু করতে পারবেন না।
ইনি এসি জামিল আহসান। নিজেই একজন পুলিশ অফিসার, বলতে বলতে আলিফ হাত ঢোকায় নিজের ট্রাউজারের পকেটে। আইডিকার্ডটা পেয়ে যায়। রাতে কেন জানি ঢুকিয়ে রেখেছিল ট্রাউজারের পকেটে।
আইডি কার্ড কর্তৃপক্ষের সামনে ধরে বলে ও, আমি আলিফ আহসান, ইন্সপেক্টর, পিবিআই।
পরের ঘটনাগুলো দ্রুতই ঘটে যায়। জামিল সাহেবের অপারেশন শেষ হয়, আইসিইউতে স্থান হয় তার। আবেগ থেকে দায়িত্বে ফিরে আসে আলিফ।
ছুটে যায় বাড়িতে। থানা আর নিজের ব্রাঞ্চকে ফোন করে। আলিফের গাড়ির পেছন পেছনই বাড়িতে ঢুকে থানার পিক আপ আর পিবিআইয়ের গাড়ি।
ফরেনসিক ইউনিট কাজ শুরু করে, আলামত গুলো ঠিক মতো ওঠিয়ে নেয়। আলিফের সিনিয়র অফিসার কথা বলে ওর সাথে। আরিফ খুনি সম্বন্ধে কোনো ধারণা দিতে পারে না। জামিল আহসানের প্রাণসংশয়ের আশংকায় দ্রুত হাসপাতালে ফোর্স মোতায়েন করা হয়। ঘটনার আকস্মিকতায় আলিফ ভুলে যায় বাড়িতে থাকা অন্য কাজের লোকটির কথা। পুরো ঘর তন্ন তন্ন করেও খোঁজে পায় না হাবুর মাকে। যেন বাতাসে মিলিয়ে গেছেন মহিলা। ঘটনা জট পাকাতে শুরু করে। উর্ধ্বতনের কাছ থেকে তদন্তের অনুমতি নিয়ে নেয় আলিফ নিজেই। ওর পূর্বের সফলতা বাধ্য করে তাদের অনুমতি দানে।
ঘর থেকেই তদন্ত শুরু করে আলিফ। ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী তো সে নিজেই। চার চারটি কেস একসাথে জট পাকিয়ে আছে ওর হাতে। নিজের মায়ের এক্সিডেন্ট যেটা ওর কাছে খুন বলেই সাব্যস্ত হয়ে আছে এখনো। পুলিশে ঢোকার কোনো ইচ্ছে ওর ছিল না। শুধুমাত্র মায়ের মৃত্যু রহস্য উন্মোচনই ওর একমাত্র লক্ষ্য। মায়ের কেসের সাথে এখন যোগ হলো সামাদ ভাইয়ের মৃত্যু রহস্য,বাবার হত্যাচেষ্টা আর হাবুর মায়ের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া। কোনো কিছু শুরুর আগেই ওর মনে হতে লাগলো এই সবগুলো ঘটনা একে অপরের সাথে জড়িয়ে আছে।
সকাল সাড়ে সাতটা। এলাকার লোকজন নিজ নিজ বাসায় ফিরে গেছে। দুজন কনস্টেবল ছাড়া আর কেউ নেই বাসায়। বাসা থেকে বের হয়ে বাগানে গিয়ে দাঁড়ায় আলিফ। বাগানটা ওর সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। টগর গাছটার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় ও। অফ সিজন বলে মাত্র তিন চারটে ফুলই ফুটে আছে পুরো গাছ জুড়ে। গাছের তলায় পড়ে আছে একটা ফুল। কুড়িয়ে নিতে যায় ও। ফুলটা তুলে নিতে গিয়ে গাছের তলাটা ওর কেমন যেন অস্বাভাবিক মনে হয়। একটা জায়গায় ঘাস গুলো একটু উঁচু হয়ে আছে। ঘাস গুলো ধরে টান দেয় ও। ঘাস গুলো ওর হাতে উঠে আসে একটা মাটির তালসহ। আর সেখানে পড়ে থাকতে দেখে একটা চাবি। আলিফ কুড়িয়ে নেয় সেটা। বুঝতে পারে না চাবিটা এখানে কে রেখেছে। বাসার ভেতরে ঢুকে যায় ও। প্রতিটি ঘরের প্রতিটি তালা চেক করে। চাবিটা কোথাও ফিট করে না। মাথাটা জ্যাম হয়ে আসে ওর।
রান্নাঘরে ঢুকে আলিফ, চা করার জন্য। রান্নাঘরে ওর কখনো বলতে গেলে ঢোকা হয়নি। মা ছিলেন,তার মৃত্যুর পর ছোট ফুপি সামলেছেন সবটা। এরপর এসেছিলো দুজন কাজের লোক। ওদের দুজনের বিদেয়ের পর এসেছিল সামাদ ভাই এরপর হাবুর মা। সামাদ ভাইয়ের কথা মনে হতেই ওর হঠাৎই মনে পড়লো সেদিনের কথা।
এক কাপ চা দেওয়ার জন্য বলতে এসেছিলো আলিফ। আর তখনই ও দেখেছিলো মশলার তাকের ভেতরে উপুড় হয়ে কি যেন করছিলো সামাদ । আলিফের গলা শুনে চমকে উঠে সামাদ। আলিফ জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয় যে মশলা পড়ে গেছে তাকের ভেতর। সেটাই পরিষ্কার করছে ও। আলিফ আর কথা বাড়ায় না, চলে আসে নিজের কাজে।
সেই ঘটনার কথা মনে হতেই আলিফ মশলার তাকটা খুঁজে বের করে। সবগুলো বয়াম বের করে নেয়। তাকের ভেতর হাতরে আরেকটা ছোট দরজার মতো পায়। মোবাইলের আলো জ্বেলে ও দেখতে পায় সেখানে তালা লাগানো। চাবিটা ঢুকিয়ে দেয় সেখানে। বার দুয়েক মোচড় দিতেই খুলে যায় তালা। অবাক হয় আলিফ। গোপন সেই কুঠুরি থেকে বের করে আনে কয়েকটা ফাইল। ফাইল গুলো খুলে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় আলিফ।
অফিসে ঢুকতেই অফিস পিয়ন শেখর বলে যায় আলিফকে, এডিসি স্যার,আপনাকে সালাম দিয়েছেন।
আলিফ সরাসরি চলে যায় এডিসি সামাদ সাহেবের রুমে। ও হাতে ধরে আছে দুটো ফাইল।
আসসালামু আলাইকুম,স্যার।
ওয়ালাইকুম সালাম, এসো আলিফ, সামাদ সাহেব রুমে ঢোকার অনুমতি দিলেন আলিফকে।
আলিফই বলতে শুরু করে, স্যার, বেশ কিছু নতুন তথ্য খুঁজে পেয়েছি। সামাদ ভাই,যিনি আমাদের বাসায় কাজ করতেন তিনি ছিলেন আসলে একজন পুলিশ অফিসার। আমার মায়ের কেসের তদন্ত করছিলেন তিনি। মায়ের হত্যা রহস্য উন্মোচনের একদম দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছিলেন। ওনার ফ্যামিলিকে ওনার মৃত্যুর কথা জানানো উচিত।
আলিফের কথা একরকম না শুনেই সামাদ সাহেব নিজের ফোনটা বের করে বলতে লাগলেন,আমার ছেলে শাহরিয়ার। শাহরিয়ার সামাদ।
ফোনটা এগিয়ে দিলেন আলিফের দিকে। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হয় ও। ও একবার তাকায় স্ক্রিনের দিকে আরেকবার টেবিলে রাখা নেমপ্লেটের দিকে, যেখানে লেখা, মোঃ আবদুস সামাদ, এডিসি,পিবিআই।
সামাদ ভাই আপনার ছেলে? উত্তেজিত কণ্ঠ শোনা যায় আলিফের।
এডিসি সামাদ চেয়ার ছেড়ে উঠে যান। জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ান। তার দৃষ্টি চলে যায় চত্বরে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা দেবদারু গাছটার দিকে। বলতে শুরু করেন,
তখন আমি ক্রাইম ব্রাঞ্চে। আপাত দৃষ্টিতে একটা খুবই স্বাভাবিক এক্সিডেন্টে মারা গেলেন একজন পুলিশ অফিসারের স্ত্রী। যেহেতু অফিসারটি সৎ, মিডিয়াতে কিছুদিন লেখালেখি হলো যে এটা হত্যাকান্ড। পুলিশ তার স্বাভাবিক ইনভেস্টিগেশন করলো। তারা স্বভাবতই রিপোর্ট দিলো এটা একটা ক্লিয়ার কাট এক্সিডেন্ট। মিডিয়া এরপরও কিছুদিন হইচই করলো। নতুন গল্প সামনে এলো,মিডিয়া এই গল্প ভুলে গেলো। কিন্তু শুধুমাত্র একটি সংস্থা জানতো এটা আসলে মার্ডার। সেই মহিলা আসলে সাধারণ কেউ ছিলেন না।

এডিসি সামাদ চেয়ার ছেড়ে উঠে যান। জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ান। তার দৃষ্টি চলে যায় চত্বরে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা দেবদারু গাছটার দিকে।
বলতে শুরু করেন, তখন আমি ক্রাইম ব্রাঞ্চে। আপাত দৃষ্টিতে একটা খুবই স্বাভাবিক এক্সিডেন্টে মারা গেলেন একজন পুলিশ অফিসারের স্ত্রী। যেহেতু অফিসারটি সৎ, মিডিয়াতে কিছুদিন লেখালেখি হলো যে এটা হত্যাকান্ড। পুলিশ তার স্বাভাবিক ইনভেস্টিগেশন করলো। তারা স্বভাবতই রিপোর্ট দিলো এটা একটা ক্লিয়ার কাট এক্সিডেন্ট। মিডিয়া এরপরও কিছুদিন হইচই করলো। নতুন গল্প সামনে এলো,মিডিয়া এই গল্প ভুলে গেলো। কিন্তু শুধুমাত্র একটি সংস্থা জানতো এটা আসলে মার্ডার। সেই মহিলা আসলে সাধারণ কেউ ছিলেন না।
তিনি নিজেও একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন, যাকে সবাই জানতো একজন পদত্যাগী মহিলা পুলিশ হিসেবে। তিনি তোমার মা ফারহানা ইয়ামিন। আমাদের একটি সিক্রেট ইউনিটের একজন অফিসার ছিলেন ইয়ামিন। ইউনিটের কৌশলের কারণেই তোমার জন্মের কিছুদিন পর তোমার মা প্রকাশ্যে চাকরি ছেড়ে দেন তোমার দেখাশোনার অজুহাতে। তাকে আসলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আন্ডার কভারে। এই ব্যাপারটি তোমার বাবাও জানতেন না। মৃত্যুর আগে ইয়ামিন একজন গড মাদারের বিরুদ্ধে কাজ করছিলেন। সমস্ত তথ্য প্রমাণ গুছিয়ে এনেছিলেন। আর তখনই তিনি খুন হোন। আদতে এটি এক্সিডেন্ট বলে চালিয়ে দিয়ে ইনভেস্টিগেশন বন্ধ ছিল কিন্তু গোপনে ক্রাইম ব্রাঞ্চের উপর এর দায়িত্ব এসে পড়ে। ক্রাইম ব্রাঞ্চের তখন নতুন সদস্য শাহরিয়ার। যার সাথে অপরাধীদের তখনও পরিচয় ঘটেনি। তাকেই নিযুক্ত করা হয় আন্ডার কভারে এই কেসের তদন্তের জন্য। সেও রহস্য সমাধানের দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিলো। কিন্তু নিয়তি তাকে থামিয়ে দিয়েছে। এখন তোমাকেই এই রহস্য সুড়ঙ্গের আলোর মুখ খুঁজে বের করতে হবে।
আলিফ একমনে শুনে যাচ্ছিলো এডিসি সামাদের কথাগুলো।
যাই হোক, আমাকে এখন মর্গে যেতে হবে। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। ওর মা আবার ছেলের অপেক্ষায় আছে। বেস্ট অভ লাক মাই বয়,কথাগুলো বেরিয়ে গেলেন এডিসি সামাদ।
আলিফ চেয়ে রইলো একজন দায়িত্ববান অফিসারের চলে যাওয়ার পথের দিকে। যার আবেগ তার দায়িত্বের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারেনি।
নিজের রুমে ফিরে আসতে আসতে আলিফের ছোটবেলার ছোটবেলার কিছু ঘটনা মনে পড়ে যায়। ওর মা যখন ওকে স্কুল থেকে আনতে যেতো,তখন ছুটির পর প্রায়ই বিভিন্ন সব জায়গায় যেতো ওকে নিয়ে। বিচিত্র লোকের সাথে দেখা করতো। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না নতুন জায়গায় যেতো ও মায়ের সাথে। ওর ভীষণ ভালোই লাগতো এই ঘোরাঘুরি। ওর স্পষ্ট মনে আছে, মা একদিন প্রায় সারাদিন ওকে নিয়ে পুরো শহর চষে বেড়িয়েছিল আর একটা লোককে খুঁজছিলো। রাতে কথায় কথায় বাবাকে ও বলেছিল ও কথা। মা তখন বাবাকে বলেছিলো ওই লোকটা নাকি আচারওয়ালা। এনার আচার খেতে দারুণ। আলিফ আচার খেতে ভালোবাসে বলে ওই লোকের কাছে আচারের রেসিপি জানতে গিয়েছিলেন। আলিফ মায়ের কথার প্রতিবাদ জানাতে গেলে বাবাই ওকে থামিয়ে দেন। ওনি ভেবে নেন বাচ্চারদের তিলকে তাল বানানোর স্বভাবের চর্চাই করছে আলিফ। এই সূক্ষ্ম বিষয়গুলোর মানে আলিফ এখন বুঝতে পারছে।
আলিফ নিজ রুমে ফিরে আসে। কিছুক্ষণ পর রুমে আসে ওর সহযোগী মোস্তাফি।
স্যার, আমরা আপনার বাসায় যে পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে, তাতে কেবল একটাই অপরিচিত পায়ের ছাপ। সেদিন রাতে বৃষ্টি হওয়ায় ছাপগুলো বেশ স্পষ্ট হয়েছিলো,বললো মোস্তাফি।
আচ্ছা বোঝলাম। কিন্তু আমি কোনো গুলির আওয়াজ শুনিনি। খুনি নিশ্চয়ই সাইলেন্সার ব্যবহার করেছিলো, নিজেই নিজেকে উত্তর দিলো আলিফ।
কিন্তু স্যার একটা খটকা কিন্তু থেকেই গেলো। একজন খুনি দুজন মানুষকে একই সময়ে মারার জন্য কি দুটো আলাদা বন্দুক ব্যবহার করবে, নিশ্চয়ই না!
মানে? মোস্তাফির কথার প্রতি উত্তর করলো আলিফ।
স্যার, ফরেনসিক রিপোর্ট অনুযায়ী আপনার বাড়ির কাজের লোকটিকে মারা হয়েছে পয়েন্ট থ্রি থ্রি ক্যালিবারের বন্দুক দিয়ে আর জামিল স্যারের গায়ে লাগা গুলি নাইন এম এম বন্দুকের। একজন মার্ডারার আপনার বাড়িতে থাকা লোকজনদেরই কেউ, বললেন মোস্তাফি।
বাড়িতে বাবা আর সামাদ ভাই বাদে বাকি থাকে আমি আর হাবুর মা। এখন আমি যদি খুন না করে থাকি তবে প্রাইম সাসপেক্ট এই হাবুর মা। আমাদের হাবুর মাকে খুঁজে বের করতে হবে। হাবুর মায়ের ফোন ট্রেক করতে বলেছিলাম। কাজ হয়েছে? মোস্তাফির কাছে জানতে চাইলো আলিফ।
না স্যার,হাবুর মায়ের ফোন ট্র্যাক করা যায়নি। ওনার ফোনের শেষ লোকেশন ছিল আপনার বাড়ি,প্রায় ৪টা নাগাদ।
মানে আমি বাবাকে নিয়ে বের হয়ে যাবার পর হাবুর মা লাপাত্তা হয়েছে,বললো আলিফ।
আচ্ছা মোস্তাফি এক কাজ করুন, হাবুর মায়ের সিমটা যে নামে রেজিস্ট্রেশন করা সেটা বের করুন,নির্দেশ দেয় ও।
ওকে,স্যার,বলে মোস্তাফি বের হয়ে যায় আলিফের রুম থেকে।
আলিফ হাসপাতাল থেকে ঘুরে আসে। জামিল সাহেবের এখনো জ্ঞান ফেরেনি। আইসিইউতেই আছেন এখনো। মোস্তাফির ফোনে বেরিয়ে যায় ও। হাবুর মায়ের সিমটি যে নামে রেজিস্ট্রেশন করা,সেই ব্যক্তির ঠিকানার উদ্দেশ্যে চলেছে টিম।
মাঝরাস্তায় হঠাৎই আলিফ গাড়ি পার্ক করে নেয়। পিবিআইয়ের গাড়িও পেছন পেছন থেমে যায়। মোস্তাফি ও অন্যরা ছুটে আসে।
বাবার জ্ঞান ফিরেছে, আমাকে এখুনি যেতে হবে,উত্তেজিত কণ্ঠে বলে আলিফ।
স্যার, আপনি এখুনি চলে যান। এদিকটা আমরা সামলে নেবো,নিশ্চয়তা দেয় মোস্তাফি।
আলিফ ইউটার্ন নিয়ে নেয়। দ্রুত ছুটে চলে হাসপাতালে।
বাবার কেবিনে ঢুকে আলিফ। ডাক্তার বলে দেন যাতে কিছুতেই উত্তেজিত না হোন। বাবাকে চোখ মেলে চাইতে দেখে,বাবার হাতটি চেপে ধরে ঢুকরে কেঁদে উঠে ও। মাকে হারিয়ে বাবাই যে ওর একমাত্র সম্বল।
দ্রুতই নিজেকে সামলে নেয় আলিফ। আবেগ থেকে দায়িত্বে ফিরে আসে ও। জানতে চায় ঠিক কি ঘটেছিল তখন। জামিল সাহেব শতচেষ্টা করেও মুখ দিয়ে আওয়াজ বের করতে পারলেন না। অবশেষে হাতের আঙুল দিয়ে বেডে ঠক ঠক আওয়াজ করতে লাগলেন। আলিফ ঘটনা বুঝতে পেরেই মোবাইলের রেকর্ডার অন করে নেয়। বাবার সাংকেতিক কথাগুলো রেকর্ড করে নেয়।
সংকেত দেওয়া শেষ করে হঠাৎই উত্তেজিত হয়ে উঠেন তিনি। আলিফকে বলতে চাইলেন কিছু নিজ মুখে। পালস বেড়ে যেতে লাগলো। ডাক্তারদের ছোটাছুটি শুরু হয়ে গেল। সমস্ত চেষ্টাকে মিথ্যে প্রমাণ করে মিনিট পনেরোর মধ্যে ওপারে পাড়ি জমালেন তিনি।
আলিফের পৃথিবীটা যেন এক নিমিষে শূন্য হয়ে ওঠলো। ওর গগণ বিদারী চিৎকার চারপাশটাকে ভারী করে তুললো।
আজকের সকালটা একদমই অন্যরকম একটা সকাল। এই সকালের সূর্য আলিফকে জানান দিচ্ছে ও নিজেও এখন থেকে এই সূর্যের মতোই একা। আলিফের মন খারাপের সঙ্গী বাগানটাতেই দাঁড়িয়ে আছে ও। মনে মনে ও আরেকবার শপথ নেয়, মা বাবার খুনিকে ও কিছুতেই ছাড়বে না।
কিছুক্ষণ পরই মোস্তাফি আসে সদলবলে। আলিফকে জানায় হাবুর মায়ের সিমটা ভুয়া রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে কেনা। যে লোকের নামে এই সিম, সেই লোকের নামে আরো ৭টা সিম চালু আছে। যেগুলো ওরা সিম কোম্পানি থেকে তথ্য নিয়ে জানতে পারে। আসলে এসবই সিমের দোকানদারের কারসাজি। যেখানে যেকোনো একটা আঙুলের ছাপেই সিম কেনা যায়,সেখানে তারা সাধারণ মানুষকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে দশ আঙুলের ছাপ নিয়ে নেয়। মানুষটি জানতেও পারে না বাস্তবে তার নামে আসলে কতটি সিম রেজিস্ট্রেশন করা আছে। তাছাড়া ওই লোকটি হাবুর মা নামে কাউকে চেনেন না। এমনকি তার ছবি দেখেও তিনি চিনতে পারেনি।
একটা বুদ্ধি খেলে যায় আলিফের মাথায়....


একটা বুদ্ধি খেলে যায় আলিফের মাথায়। হাবুর মায়ের আঙুলের ছাপ এ বাড়িতে নিশ্চিত আছে। আর সেটা উঠিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজের সাথে মেলালে অবশ্যই আসল মানুষটিকে খুঁজে পাওয়া যাবে।
ওরা হাবুর মার ঘর সার্চ করে, সমস্ত ছাপ উঠিয়ে নিতে থাকা। একটা পানের বাটা দেখিয়ে আলিফ জানায় এটা হাবুর মায়ের। এখানে কেবল হাবুর মায়ের হাতের ছাপই পাওয়ার কথা।
পানের বাটাটা হাতে নিয়ে অবাক হয় সার্চ পার্টির একজন। ওটার ঢাকনা খুলতেই বের হয়ে আসে কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতি। ওদের বুঝতে বাকি থাকে না একটা কমপ্লিট অডিও ভিভাইস। সাথে একটা পোকার মতো ছোট্ট যন্ত্র। আলিফ সারা বাড়ি তল্লাশির আদেশ দেয়।
প্রতিটা ঘর থেকে পাওয়া যায় একটা করে বাগ। আলিফ বুঝতে পারে এই হাবুর মা গভীর জলের মাছ। তবে গভীর জলের মাছেরাও মাঝে মাঝে কিছু বোকার মতো ভুল করে বসে। যেমনটা হাবুর মা করেছে এই সাউন্ড সিস্টেমটা ফেলে রেখে গিয়ে। নিজের বিরুদ্ধে প্রমাণ ছেড়ে গেছে অজান্তেই। হাবুর মায়ের হাতের ছাপ ওঠিয়ে নেওয়া হয়।
আলিফ এডিসি আবদুস সামাদের কাছ থেকে জানতে পারে শাহরিয়ার তার সাথে ফোনে কথা বলেছিলো আলিফের মায়ের কেসটা সম্পর্কে। আলিফ অনুমান করে শাহরিয়ারের কথা এই বাগের মাধ্যমেই শুনে নিয়েছিল হাবুর মা। আর সুযোগ বুঝে সরিয়ে দিয়েছে শাহরিয়ারকে।
হাবুর মায়ের ফিঙ্গারপ্রিন্ট তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ন্যাশনাল ডেটাবেজ সেন্টারে। সেখান থেকে এনআইডির সার্ভারে সার্চ করে চমকে ওঠে পুরো টিম। ইনিই তবে হাবুর মা!
আলিফ আর পিবিআইয়ের গাড়ি দুটো এসে থামে "তনয়া" নামক স্বনামধন্য এনজিওটির সামনে। পিছিয়ে পড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মেয়েদের জন্য একটি আস্থার নাম। যেখানে মেয়েরা খুঁজে পায় নিজ পায়ে দাঁড়ানোর ভিত।
ভেতরে ঢুকে ওরা জানতে পারে যাকে ওরা খুঁজছে সে এখন আছে একটা প্রত্যন্ত গ্রামে। যেখানে আছে "তনয়া"র একটা ওয়ার্কশপ। আজ সেখানকার একটি বিশেষ অনুষ্ঠান। আজ ওয়ার্কশপের শ্রেষ্ঠ সফল মানুষটিকে পুরস্কৃত করা হবে। ওরা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখে "তনয়া"র কাছে। সেই ব্যক্তির ফোন নাম্বারটি চেয়ে নিয়ে সাথে সাথেই ট্র‍্যাকিংয়ে পাঠিয়ে নিজেরাও রওনা হয় ওয়ার্কশপের উদ্দেশ্যে।
ওয়ার্কশপে পৌঁছে ওরা দেখতে পায় ওদের অপরাধী পালায়নি। বরং দীপ্ত কন্ঠে নারী জাগরণের জ্বালাময়ী ভাষণে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হচ্ছে আকাশ বাতাস।
ওরা অপেক্ষা করে অনুষ্ঠান শেষের। সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ সে চড়ে বসে নিজের গাড়িতে। কিছুদূর যেতেই তার পথরোধ করে পিবিআইয়ের গাড়ি। তার গাড়ির পেছনে এসে থামে আলিফের গাড়ি। নেমে আসে আলিফ। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে সেই ব্যক্তিও নেমে আসে গাড়ি থেকে।
কি হাবুর মা, এতো উত্তেজিত হচ্ছো কেন! আলিফের কণ্ঠ শুনে চমকে উঠে পেছনে তাকায় সে।
আমতা আমতা করে বলে ওঠে, কে হাবুর মা? আমি জাকিয়া মাহজাবীন, সিইও,তনয়া।
মুচকি হেসে বলে আলিফ, ওই একই হলো। আমার কাছে হাবুর মাও যা জাকিয়া মাহজাবীনও তা। এবার চলুন নিজের শ্বশুরবাড়িতে। আপনার বরপক্ষ গাড়ি সাজিয়ে বসে আছে।
কি যা তা বলছেন! মুখ সামলে কথা বলুন। কি অপরাধে আমাকে গ্রেফতার করতে এসেছেন? উত্তেজিত হয়ে উঠেন জাকিয়া মাহজাবীন।
আলিফদের ব্লেজার দেখে তিনি সহজেই বুঝে যান এরা পিবিআই।
অভিযোগটা খুবই সামান্য। একজন বিশ্বস্ত কাজের লোক কিংবা একজন আন্ডার কভার পুলিশ অফিসারকে হত্যা করাটা হয়তো আপনার জন্য খুবই স্বাভাবিক,ঠান্ডা গলায় বলে আলিফ।
আমি কাউকে খুন করিনি। আর যদি করেও থাকি, আপনাদের কাছে কি প্রমাণ আছে? প্রমাণ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা যায় কি! নিজের ধূর্ততার পরিচয় দিলেন জাকিয়া।
বেশ, খুনের অপরাধের না হয় কোনো শক্ত প্রমাণ নেই আমাদের হাতে। তবে চিন্তা করবেন না শ্বশুরবাড়ির যত্নআত্তিতে আপনি নিজেই সুড়সুড় করে সমস্তটা বলে দেবেন। আর বাকি থাকলো গ্রেফতারের কথা। একজন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সিইউ যদি একজন পুলিশ অফিসারের বাড়িতে কাজের লোক সেজে থাকে, তবে প্রতারণা আর জালিয়াতির অভিযোগে তো গ্রেফতার করাই যেতে পারে। যাইহোক, অনেক কথা বলে ফেলেছি। একজন অপরাধীর সাথে এতো কথা বলা একদমই ঠিক নয়। গাইজ, এরেস্ট হার, নির্দেশ দিয়ে নিজের গাড়িতে চেপে বসে আলিফ।
পিবিআই ফোর্স গ্রেফতার করে জাকিয়া মাহজাবীনকে। জাকিয়ার গাড়ির ড্রাইভার বসে থাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে।
জাকিয়ার মতো ধূর্ত মানুষের মুখ থেকে কথা বের করা যে সঠিক কাজ নয় সেটা অল্পতেই বুঝে যায় সবাই। এরসাথে যোগ হয় মিডিয়ার প্রেসার সেইসাথে উপর মহল থেকেও আলিফদের ওপর আসতে থাকে প্রেসার। ওরা বোঝে যায়, যা করতে হবে, তা অতিদ্রুত করতে হবে। এর সেটআপ করা লোকের অভাব নেই।
এতদিন ধরে "তনয়া" বিরুদ্ধে ভেসে আসা অভিযোগগুলো নিয়ে নড়েচড়ে বসে পিবিআই। আইটি সেকশন কার্যকর ভূমিকা নিতে শুরু করে। দ্রুত সুনির্দিষ্ট অভিযোগ গঠন করে তারা। জাকিয়ার অফিস আর বাসায় তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করে পয়েন্ট থ্রি থ্রি ক্যালিবারের দুটো বন্দুক। ফরেনসিক টেস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়, এই দুটো বন্দুকের একটি দিয়েই জাকিয়া খুন করেছে শাহরিয়ারকে। সমস্ত তথ্য প্রমাণ আর পিবিআইয়ের যত্নআত্তিতে বাধ্য হয়ে মুখ খুলে জাকিয়া মাহজাবীন।
"তনয়া"র মাধ্যমে নারীদের লোক দেখানো সাবলম্বীকরণের আড়ালে চলতো মানব পাচার। "তনয়া" সেসব মেয়েদের টার্গেট করতো যারা পরিবার থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন বা যাদের বড় উঠা পরিবার ছাড়া। মোটামুটি শিক্ষিত মেয়েরাই থাকতো তাদের টার্গেটে। এরপর এদের "তনয়া"র বিভিন্ন ব্রাঞ্চে চাকরি দেওয়ার কথা বলতো। এজন্য এদের দেশের বাইরে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার কথা জানাতো মেয়েদের। এসব মেয়েরা একাকীত্ব আর অর্থকষ্টে জর্জরিত থাকায় উন্নত জীবন আর অর্থের স্বপ্নে বিভোর হয়ে পা দিতো এদের জালে। গোয়েন্দাদের কাছে "তনয়া"র ব্যাপারে তথ্য আসতে থাকে।
আর তখন আন্ডার কভার অফিসার ফারহানা ইয়ামিনকে নিযুক্ত করা হয় "তনয়া"র মুখোশ উন্মোচনের জন্য। ইয়ামিন প্রায় সমস্ত তথ্য প্রমাণ জোগাড় করে ফেলেন। কেবল চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়াটা বাকি ছিল। কিন্তু প্রশাসনের প্রায় সব জায়গায় এদের লোক আছে। যারা কিছু টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয় নিজেদের সততা আর দায়িত্বকে। সেখান থেকেই ওরা জানতে পারে ইয়ামিনের পদক্ষেপ সম্পর্কে। লোক লাগানো হয় ইয়ামিনের পেছনে। একজন সাধারণ গৃহিনীর পেছনে থাকা একজন পুলিশ অফিসারকে মারতে তাদের খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। পুরো হত্যাকান্ডকে এক্সিডেন্ট বলে চালিয়ে দেয় ওরা। এখানেও ভূমিকা রাখে ওদের কেনা গোলামেরা। ইয়ামিনের কাছে থাকা সমস্ত তথ্য প্রমাণও ধ্বংস করে ফেলে এরা। ওরা ভেবেছিল ওদের পথের কাঁটা সরে গেছে। কিন্তু ওদের ভুল প্রমাণিত করে দৃশ্যকল্পে হাজির হয় শাহরিয়ার। "তনয়া"র স্নেহধন্য গোলামেরা এবারও শাহরিয়ায়ের অনুসন্ধানের কথা জানিয়ে দেয়। ইয়ামিনের মৃত্যু রহস্য উন্মোচন মানে "তনয়া"র সমস্ত খেল খতম হয়ে যাওয়া। এবার আর জাকিয়া অন্য কারো উপর ভরসা করতে পারে না। নিজেই নেমে পড়ে মিশনে। হাবুর মায়ের ছদ্মবেশে ঢুকে পড়ে আলিফদের বাড়িতে। পুরো বাড়িতে বাগ স্থাপন করে নেয়। শাহরিয়ার যখন একদিন তার সিনিয়র অফিসার ও বাবা এডিসি আবদুস সামাদকে জানায় সে তার কেসের সমাধানের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে তখনই জাকিয়া সিদ্ধান্ত নেয় শাহরিয়ারকে সরিয়ে দেওয়ার। একটা ফুল প্রোভ প্ল্যান দাঁড় করায় সে।
সেদিন রাতে শাহরিয়ারকে মারাই মূল উদ্দেশ্য ছিল জাকিয়াদের। আর শাহরিয়ারের মৃত্যুটা ভুলবশত প্রমাণ করতেই মারা হয় জামিল আহসানকে। জামিল আহসান যেহেতু সৎ পুলিশ অফিসার ছিলেন,তার শত্রুর সংখ্যা নেহাতই কম ছিল না। আর সেটারই ফায়দা লুটতে চেয়েছিল ওরা। দুটো মার্ডারের পর সবাই ভাববে জামিল আহসানের শত্রুরাই ওনাকে খুন করেছে আর সাক্ষ্যপ্রমাণ না রাখতেই মারা পড়েছে বেচারা কাজের লোক সামাদ বা পুলিশ অফিসার শাহরিয়ার সামাদ। সেদিন রাতে যখন শাহরিয়ার দরজা খুলে দেয় তখন খুনি কিছু না বলেই সরাসরি ঢুকে যায় জামিল আহসানের রুমে। জাকিয়া আগেই বাসার প্রত্যেকটা রুমের অবস্থান জানিয়ে রেখেছিলো ওই দ্বিতীয় খুনিকে।
অপরিচিত লোকটি কোনো কথা না বলে দ্রুত রুমে ঢুকে যাওয়ায় শাহরিয়ারও ওর পিছু পিছু যায়। দ্বিতীয় খুনি জামিল আহসানকে কোনো কথা ছাড়া গুলি করার সাথে সাথে জাকিয়াও পেছন থেকে শাহরিয়ারকে গুলি করে দেয়। গুলিটা কপাল ফুটো হয়ে বের হয়ে যায় ওর। কোনো আর্তনাদের ন্যূনতম সময়টুকুও পায় না ও। জামিল সাহেবের আর্তনাদে আলিফ ছুটে আসতে থাকায়, জামিল সাহেবের মৃত্যু সম্পূর্ণ নিশ্চিত না করেই পালায় দ্বিতীয় খুনি আর জাকিয়া চলে যায় নিজের রুমে। আলিফ জামিল সাহেবকে নিয়ে বেরিয়ে গেলে পুরো শাহরিয়ারের পুরো রুমে খুঁজেও কিছু না পেয়ে বেরিয়ে যায় জাকিয়া। আর সেসময় নিজের অডিও সিস্টেমটা ভুল করে ফেলে যায় ও।
পিবিআই কনফারেন্স রুমে চলছে প্রেস ব্রিফিং। ব্রিফিংয়ে বরাবরের মতোই লিড করছেন মোস্তাফি মিনহাজ। পিবিআইয়ের মিডিয়া সেকশন সামলানোর দায়িত্ব এই অফিসারের। সাংবাদিকদের নানান জিজ্ঞাসায় উঠে আসছে "তনয়া" এনজিওটির অপকর্ম আর জাকিয়া মাহজাবীন নামক মিষ্টি হাসিমুখের মহিলার মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে বিভৎস রূপের। উন্মোচিত হয় বছর চারেক আগে এক্সিডেন্টে মারা যাওয়া পুলিশ পত্নীর মৃত্যুর আসল রহস্য। একজন অতি সাধারণ গৃহিনীর আড়ালে থাকা দুর্ধর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা ফারহানা ইয়ামিনের কথা জানতে পারে সবাই। সেইসাথে উঠে আসে শাহরিয়ার সামাদের কথা। যিনি নিজের দায়িত্ব পালনে উৎসর্গ করেছেন নিজের জীবন। তবে আলিফ কিংবা এডিসি সামাদের কথা সামনে আসে না। দায়িত্বের সামনে আবেগ অত্যন্ত ক্ষুদ্র বিষয়। আবেগগুলো নিজস্ব। নিজস্ব আবেগ নিজের মাঝেই ধরে রাখা শ্রেয়।
বিকেলবেলার সূর্য ঢলে পড়েছে পশ্চিম আকাশে। আলিফ দাঁড়িয়ে আছে ওর প্রিয় টগর গাছটার পাশে। ফুলের কড়া গন্ধ নাকে আসছে। আলিফ একটা জিনিস বুঝতে পারে, পার্ফেক্ট ক্রাইম বলে পৃথিবীতে কোনো শব্দ নেই। কোনো না কোনো ভুল অপরাধী ঠিকই করে যাবে। নয়তো পৃথিবীতে তাবৎ অপরাধীরা থাকতো অধরা।
জাকিয়ার ভাড়া করা খুনির একটা ভুলই তদন্তের মোড় জাকিয়ার দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিলো। জাকিয়া বার বার বলার পরে সে পয়েন্ট থ্রি থ্রি ক্যালিবারের বদলে নাইন এম এম নিয়ে এসেছিল। আর জাকিয়ার রেখে যাওয়া সাউন্ড সিস্টেমই ওকে খুঁজে বের করেছে।

Writer: Umma Muslima Jouty

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম