সূচনাপর্বঃ
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল পৃথিবীর অন্যতম রহস্যময় কুখ্যাত জায়গার মাঝে এটি অন্যতম।
Barmuda Triangle is nothing but a famous Pseudoscience :
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের মত বিষয়গুলো Pseudoscience এর অন্তর্গত। যার মাঝে আসলে কোন Science নাই কিন্তু মনে করা হয় আছে তাই হচ্ছে Pseudoscience। আজও কেন মানুষ এই অপবিজ্ঞানের পিছনে ঘুরে বেড়ায় তা বড় প্রশ্ন। উত্তর হতে পারে, মানুষ স্বভাবতই রহস্য পছন্দ করে, রোমাঞ্চ খুঁজে বেড়ায়। তাই সামান্য কিছু কাকতালীয়তা আর অনেকখানি কল্পণা মিলে শয়তানের ত্রিভুজ তৈরি হয়, আকাশে পিরিচ উড়ে বেড়ায়।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল আজ কল্পবিজ্ঞান ছাড়া আর কোন জায়গাতেই খাপ খায় না।
অপবিজ্ঞান গুলো স্থায়ীত্ব পায় কারণ এদের ঘিরে অনেক কাকতালীয় ঘটনা ঘটে। তাই উল্টো যুক্তি দেওয়া যায়, “যেহেতু শুধু অপবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেই এত কাকতালীয় ঘটtrtrনা ঘটে তারমানে সত্যি সত্যি কিছু আছে”। এই যুক্তি ভেঙেই আমরা শুরু করব, “আসলে এত কাকতালীয় ঘটনা ঘটে দেখেই এরা অপবিজ্ঞান হয়ে উঠেছে, নাহলে হতে পারত না”।
কোথায়?
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা (Florida), পুয়ের্তো রিকো (Puerto Rico) এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপ বারমুডা (Bermuda) এই তিনটি স্থানের মধ্যবর্তী কাল্পনিক ত্রিভুজাকার এলাকা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল (Bermuda Triangle) নামে পরিচিত।
বহু জাহাজ ও বিমান এই অঞ্চলে অলৌকিক ভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার কারণে অনেকেই একে শয়তানের ত্রিভুজ (Devils Triangle) নামেও ডাকে।
(ত্রিভুজের বিস্তৃতি)
বিভিন্ন লেখকের বর্ণনায় বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের বিস্তৃতিতে ভিন্নতা রয়েছে। এই ত্রিভূজের উপর দিয়ে মেক্সিকো উপসাগর থেকে উষ্ণ সমুদ্র স্রোত বয়ে গেছে। এই তীব্র গতির স্রোতই মূলত অধিকাংশ অন্তর্ধানের কারণ। এখানকার আবহাওয়া এমন যে হঠাৎ করে ঝড় ওঠে আবার থেমে যায়, গ্রীষ্মে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। বিংশ শতাব্দীতে টেলিযোগাযোগ, রাডার ও স্যাটেলাইট প্রযুক্তি পৌঁছানোর আগে এমন অঞ্চলে জাহাজডুবি খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা। এই অঞ্চল বিশ্বের ভারী বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলকারী পথগুলোর অন্যতম। জাহাজগুলো আমেরিকা, ইউরোপ ও
ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে যাতায়াত করে।
এছাড়া এটি হল প্রচুর প্রমোদতরীর বিচরণ ক্ষেত্র। এ অঞ্চলের আকাশপথে বিভিন্ন রুটে বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত বিমান চলাচল করে। ত্রিভূজের বিস্তৃতির বর্ননায় বিভিন্ন লেখক বিভিন্ন মত দিয়েছেন। কেউ মনে করেন এর আকার ট্রাপিজয়েডের মত, যা ছড়িয়ে আছে ফ্লোরিডা, বাহামা এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ এবং ইশোর পূর্বদিকের আটলান্টিক অঞ্চল জুড়ে, আবার কেউ কেউ এগুলোর সাথে মেক্সিকো উপসাগরকেও যুক্ত করেন। তবে লিখিত বর্ণনায় যে সাধারণ অঞ্চলের ছবি ফুটে ওঠে তাতে রয়েছে ফ্লোরিডার আটলান্টিক উপকূল, পুয়ের্তো রিকো, মধ্য আটলান্টিকে বারমুডার দ্বীপপুঞ্জ এবং বাহামা ও ফ্লোরিডা স্ট্রেইটস এর দক্ষিণ সীমানা যেখান ঘটেছে অধিকাংশ দূর্ঘটনা।
ত্রিভূজ গল্পের ইতিহাস:
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল বিষয়ে যারা লিখেছেন তাদের মতে ক্রিস্টোফার কলম্বাস সর্বপ্রথম এই ত্রিভুজ বিষয়ে অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা লিখেন। তিনি লিখেছিলেন যে তার জাহাজের নাবিকেরা এ অঞ্চলের দিগন্তে আলোর নাচানাচি, আকাশে ধোঁয়া দেখেছেন। এছাড়া তিনি এখানে কম্পাসের উল্টাপাল্টা দিক নির্দেশনার কথাও বর্ণনা করেছেন। তিনি ১১ই অক্টোবর, ১৪৯২তে তার লগ বুকে লিখেন –triangle means the residence of devil
আলো:
বর্তমানে বিশেষজ্ঞরা প্রকৃত লগবুক পরীক্ষা করে যে মত দিয়েছেন তার সারমর্ম হল – নাবিকেরা যে আলো দেখেছেন তা হল স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ব্যবহৃত নৌকায় রান্নার কাজে ব্যবহৃত আগুন, আর কম্পাসে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল নক্ষত্রের অবস্থান পরিবর্তনের কারণে।১৯৫০ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর ই. ভি. ডব্লিউ. জোন্স( E.V.W. Jones) সর্বপ্রথম এ ত্রিভুজ নিয়ে খবরের কাগজে লিখেন।
এর দু বছর পর ফেইট (Fate)ম্যাগাজিনে জর্জ এক্স. স্যান্ড( George X. Sand) “সী মিস্ট্রি এট আওয়ার ব্যাক ডোর” ("Sea Mystery At Our Back Door") শিরোনামে একটি ছোট প্রবন্ধ লিখেন। এ প্রবন্ধে তিনি ফ্লাইট নাইনটিন( ইউ এস নেভী-র পাঁচটি ‘টি বি এম অ্যাভেঞ্জার’ বিমানের একটি দল, যা প্রশিক্ষণ মিশনে গিয়ে নিখোঁজ হয়) এর নিরুদ্দেশের কাহিনী বর্ণনা করেন এবং তিনিই প্রথম এই অপরিচিত ত্রিভূজাকার অঞ্চলের কথা সবার সামনে তুলে ধরেন।
১৯৬২ সালের এপ্রিল মাসে ফ্লাইট নাইনটিন নিয়ে আমেরিকান লিজান (American Legion) ম্যাগাজিনে লিখা হয়। বলা হয়ে থাকে এই ফ্লাইটের দলপতি কে নাকি বলতে শোনা গিয়েছে- We don't know where we are, the water is green, no white। এর অর্থ হল "আমরা কোথায় আছি জানি না, সবুজ বর্ণের জল, কোথাও সাদা কিছু নেই"। এতেই প্রথম ফ্লাইট নাইনটিনকে কোন অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার সাথে যুক্ত করা হয়। এরপর ভিনসেন্ট গডিস (Vincent Gaddis) “প্রাণঘাতী বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল”( The Deadly Bermuda Triangle) নামে আর এক কাহিনী ফাঁদেন ১৯৬৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এর উপর ভিত্তি করেই তিনি আরও বিস্তর বর্ণনা সহকারে লিখেন "ইনভিজিবল হরাইজন" (Invisible Horizons) মানে “অদৃশ্য দিগন্ত” নামের বই। আরও অনেক লেখকই নিজ নিজ মনের মাধুরী মিশিয়ে এ বিষয়ে বই লিখেন, তারা হলেন জন ওয়ালেস স্পেন্সার, তিনি লিখেন "লিম্বো অফ দ্যা লস্ট" (Limbo of the Lost, 1969, repr. 1973), মানে “বিস্মৃত অন্তর্ধান” ; চার্লস বার্লিটজ (Charles Berlitz) লিখেন “দি বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল”(The Bermuda Triangle, 1974),; রিচার্ড উইনার লিখেন "দ্যা ডেভিল'স ট্রায়াঙ্গেল" “শয়তানের ত্রিভূজ” (The Devil's Triangle, 1974) নামের বই,, এছাড়া আরও অনেকেই লিখেছেন। এরা সবাই ঘুরেফিরে একই অতিপ্রাকৃতিক ঘটনাই বিভিন্ন স্বাদে উপস্থাপন করেছেন।
কিছু কাহিনী+প্রারম্ভিকা
১।
‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ নামটা প্রথম দেন ভিনসেন্ট এইচ গ্যাডিস, সেই ১৯৬৪ সালে। তিনি উত্তর আটলান্টিক সাগরের এক নামহীন জায়গায় অদ্ভুত সব হারিয়ে যাবার ঘটনা থেকে এ জায়গার নাম দেন বারমুডা ত্রিভুজ। জায়গাটার ক্ষেত্রফল লেখকভেদে প্রায় ১,৩০০,৩০০ থেকে ৩,৯০০,০০০ বর্গ কিলোমিটার। তবে এর আগে ১৯৫০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দ্য মায়ামি হেরাল্ড পত্রিকায় এ অঞ্চলে জাহাজের উধাও হওয়া নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল।
২।
সত্তরের দশকে খুব বিখ্যাত হয়ে যায় এ জায়গার নাম এবং এর ঘটনাগুলো। তখন থেকেই পাইলট আর জাহাজ চালকেরা নানা কাহিনী বলতে থাকেন এ জায়গা নিয়ে। পরে দেখা যায় বেশিরভাগই আসলে নাম কামাবার জন্য বানোয়াট কাহিনী। এ এলাকাটা আসলে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের মায়ামি, পুয়ের্তো রিকো ও বারমুডা দ্বীপপুঞ্জ- এ তিন স্থলবিন্দুর সংযোগে গঠিত এক জলজ এলাকা
৩।
ক)পঞ্চদশ শতকে যখন ক্রিস্টোফার কলম্বাস ইউরোপ থেকে আমেরিকা যান, তখন তার জার্নালে এ ব্যাপারে লিখেছিলেন। বর্তমান ফ্লোরিডা ও পুয়ের্তো রিকোর এ এলাকা যখন পার হচ্ছিলেন, তখন তার কম্পাসের কাটা ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছিল। সেখানে তিনি নাকি এক অদ্ভুত আলো দেখেছিলেন।
খ)
১৮৭২ সালের ৫ ডিসেম্বর মারি সেলেস্ত নামের এক মালবাহী জাহাজ নিউ ইয়র্ক বন্দর থেকে যাত্রা করে। কিন্তু যেখানে মালামাল পৌঁছাবার কথা, সেখানে কোনোদিনই পৌঁছায়নি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর জাহাজখানা ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গেল বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এলাকায়। কিন্তু ১১ জন কর্মীর কেউ ছিল না জাহাজে। ব্যক্তিগত জিনিসপাতি, খাবারদাবার, দামি মালামাল, লাইফবোট সবই অক্ষত সে জাহাজে, শুধু মানুষগুলো উধাও। আরো অবাক ব্যাপার, প্লেটে খাবার ছিল, সেগুলোতে পচন ধরে গিয়েছিল যখন উদ্ধারকারীরা পৌঁছায়। কী এমন হয়েছিল যে খাবারের মাঝ থেকে উঠে যেতে হবে?
গ)
১৮৮১ সালে এলেন অস্টিন নামের একটি জাহাজ সমুদ্রে এক পরিত্যক্ত ভাসমান জাহাজ দেখতে পায়। জাহাজের ক্রুরা পরিকল্পনা করলো পরিত্যক্ত জাহাজের জিনিসপাতি নিয়ে নেবে। এমন ভাবনা থেকে কয়েকজন নেমে পড়লো জাহাজটিতে। তারা ভাবছিল সেই জাহাজটিকে চালিয়ে নিউ ইয়র্কে নিয়ে যাবে। দুটো জাহাজ রওনা হলো একসাথেই। কিন্তু এলেন অস্টিন খুব শীঘ্রই নামহীন জাহাজটির খেই হারিয়ে ফেলল।
পরে যখন আবার খুঁজে পেলো, তখন দেখা গেল, জাহাজটি পরিত্যক্ত, তাদের নিজেদের ক্রুরাও উধাও! তখন এলেন অস্টিন থেকে বার্তা পাঠানো হলো, উদ্ধারকারী জাহাজ পাঠাতে। যখন উদ্ধারকারী জাহাজ এসে পৌঁছাল, সে জায়গা অর্থাৎ বারমুডা ট্রায়াঙ্গল থেকে এলেন অস্টিন ও নামহীন জাহাজ দুটোই উধাও। কোনোদিন তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। কথিত আছে, অনেক জাহাজ নাকি এ দুটো জাহাজকে একসাথে ঘুরতে দেখেছে সমুদ্রে, তারা চেষ্টারত ছিল অন্য জাহাজদের পথভ্রষ্ট করতে
ঘ)
১৯১৮ সালে একইভাবে কোনো চিহ্ন না রেখেই হারিয়ে যায় ইউএসএস সাইক্লপস, ব্রাজিলগামী সে জাহাজটি মার্কিন সরকার কর্তৃক ব্রিটিশদের সাহায্য করতে দেয়া হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে, ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে। মার্চের ৪ তারিখে সেটিকে শেষবার দেখা যায় বারবাডোজের তীরে। ৩০৬ জন ক্রুও এর সাথে উধাও। ১৯৪১ সালেও ইউএসএস প্রোটিয়াস ও ইউএসএস নিরিয়াস একইভাবে নেই হয়ে যায়।
ঙ)
এবার আসা যাক প্লেনের কথায়। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে হারিয়ে যাওয়া সবচেয়ে আলোচিত হলো ফ্লাইট নাইনটিন। ১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরের গোড়ার দিকে মার্কিন নেভির পাঁচ সেরা অ্যাভেঞ্জার বম্বার একটি রুটিন মিশনে বের হয়। লেফটেন্যান্ট চার্লস টেইলর নিয়মিত কথা বলছিলেন রেডিওতে বেজের সাথে। কিন্তু হঠাৎ বাক্যের অর্ধেকেই সব চুপ হয়ে যায়। এমন না যে, ঝিরঝিরে বা অস্পষ্ট হয়ে গেল- একদম নেই হয়ে গেল। আর কোনোদিন সেই পাঁচ বিমানের দেখা মেলেনি। সেগুলোকে উদ্ধার করতে পাঠানো বিমানগুলোও ফেরেনি কোনোদিন। আর জায়গাটি বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। তদন্তে লেখা হয়েছিল ‘অজ্ঞাত কারণে’ তারা উধাও।
চ)
১৯৬৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। ৬০০ ফুটের দানবীয় মেরিন সালফার কুইন জাহাজ তার শেষ যাত্রায় রওনা দিল। ভেতরে ছিল ১৫ হাজার টন গলিত সালফার আর ৩৯ জন ক্রু। ফেব্রুয়ারির চার তারিখ পর্যন্ত জাহাজের অবস্থান জানতো সবাই, বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে। এরপর হঠাৎ অফ হয়ে গেলো রেডিও ট্রান্সমিশন। অফ হয়ে যাবার আগে কমান্ডার বলছিলেন, আবহাওয়া কত সুন্দর, কত চমৎকারভাবে নেভিগেশন চলছে।
ছ)বলতে থাকলে এরকম আরো অনেকগুলোই বলা যাবে, কিন্তু সবগুলো কাহিনীর সত্যতা আসলে নেই।
ঘটনাসমূহের তালিকা মোটামুটি উইকিপিডিয়া তে লিপিবদ্ধ করা আছে।
তবে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্য ভেদ করার চেষ্টা করেছেন অনেকেই, কেউ কেউ দিয়েছেন আজব সব থিওরি। যেমন, কেউ বলেছেন এখানে শয়তানের আস্তানা, শয়তান টেনে নিয়ে যায় এসব জাহাজ আর বিমান। কেউ বলেন, এখানে আসলে এলিয়েনদের বেজক্যাম্প আছে; এজন্যই এখানে অদ্ভুত আলো দেখা যায়। এখানে ঢুকলে কম্পাস কখনো কখনো অদ্ভুত আচরণ কেন করে- সেটার পেছনে যুক্তি দেয়া হয়েছে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের। কোনো থিওরি অনুযায়ী, দাজ্জালের দ্বীপ আসলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলেই। কেউ বা আবার বলেছেন এখানেই আসলে হারানো আটলান্টিস শহর আছে, পানির তলদেশে।
জ)
আরেক অদ্ভুত এক তত্ত্ব হলো এখানে নাকি সময় সুড়ঙ্গ (Time Tunnel) আছে। যেমন, ১৯৭০ সালের ৪ ডিসেম্বর অ্যান্ড্রোস আইল্যান্ড বাহামাস থেকে দক্ষিণ ফ্লোরিডার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন পাইলট ব্রুস গার্নোন। তিনি বলেন বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এলাকায় উড়ে যাবার সময় তিন মিনিটের জন্য তিনি নাকি ছিলেন ‘ইলেকট্রনিক ফগ’ নামের অদ্ভুত এক ধূসর কুয়াশায়। তিনি যখন পাম বিচে অবতরণ করলেন তখন দেখলেন প্লেনের সবার ঘড়িতে দুপুর তিনটা আটচল্লিশ বাজে। অর্থাৎ মাত্র ৪৭ মিনিটে তিনি আড়াইশ মাইল পাড়ি দিয়ে এসেছেন। কিন্তু প্রতিদিন তার এ ফ্লাইটে ৭৫ মিনিট লাগে অন্তত। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের কুয়াশায় তিনি তিন মিনিটে হারিয়েছেন ২৮ মিনিট! সেবা প্রকাশনীর বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে প্রকাশিত বহু আগের বইটিতে এ ঘটনা এবং আধখাওয়া খাবারওয়ালা ভাসমান জনশূন্য জাহাজের ঘটনা বেশ গুরুত্ব দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছিল।
ব্যাখ্যা পর্বঃ
১।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চেষ্টা করেছে এ রহস্যের সমাধানের। ২০১৬ সালের ৪ মার্চ প্রকাশিত তাদের আর্টিকেল অনুযায়ী, ৭৫টির মতো বিমান আর প্রায় ৩০০-এর মতো জাহাজ হারিয়ে গেছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে। অনেক বিজ্ঞানীই বিশ্বাস করেন, আসলে মানবঘটিত ভুল, বৈরী আবহাওয়া আর দুর্ভাগ্যের কারণেই দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে। কিন্তু আসলে স্বভাবতই এ তত্ত্বগুলো সব ঘটনার ব্যাখ্যা দেয় না। এ ব্যাপারে মার্কিন কোস্ট গার্ডকে জিজ্ঞেস করলে তাদের অফিসিয়াল বিবৃতি ছিল, “আমাদের অভিজ্ঞতা বলে যে, প্রকৃতি আর মানবস্বভাবের অননুমানযোগ্যতা (unpredictability) বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীকেও হার মানায় বহু বার।” ইউএস কোস্ট গার্ড বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের ব্যাপারে বরাবরই অবিশ্বাসী। এমন ঘটনাও আছে, যেখানে বর্ণনা করা হয়েছিল, জাহাজডুবির পর কোনো দেহ পাওয়া যায়নি, কিন্তু সত্যি কথা বলতে,
সেখানে আসলে কোস্ট গার্ডরা মৃতদেহের যথেষ্ট ছবি তুলে এনেছিল।
২।
গবেষক আর্নেস্ট ট্যাভেস ও ব্যারি সিংগার বলেছেন যে, বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের ওপর ভিত্তি করে প্রচুর ব্যবসা চালানো হয়েছে, এবং হচ্ছে। এটা নিয়ে মিডিয়ায় প্রচুর অর্থ উপার্জন করা হয়। সুতরাং একে মিথ্যে প্রমাণ করা আসলে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিকর। এজন্য বরং গুজবগুলো আরো ফুলে ফেঁপে উঠছে।
বিজ্ঞানীরা যুক্তি দেখান যে, এ অঞ্চল নিয়ে বেশি মাতামাতির কারণে, অন্য অঞ্চলের দুর্ঘটনাগুলোকে মানবমন বেশি গুরুত্ব দেয় না। এর মানে এই না যে, বারমুডা ট্রায়াঙ্গল ছাড়া অন্য জায়গায় এত বেশি দুর্ঘটনা হয় না; এ অঞ্চলটা আসলে সমুদ্রের অন্য অঞ্চলের মতোই, এটাই বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ মত। আর, অনেক সময়ই কাহিনীগুলো পরে রঙ চং যোগ করে বলা হয়। সত্যি বলতে, বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের পাড় ঘেঁষে প্রতিদিন অনেক জাহাজ, প্রমোদতরী আর ফ্লাইট যায় আমেরিকা, ইউরোপ আর ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। বেশি বেশি চলাচলার কারণেই এ এলাকার দুর্ঘটনা পরিমাণ হয় বেশি। এর সাথে কোনো ট্রায়াঙ্গলের সম্পর্ক নেই।
৩।
তবে কি বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে কোনো রহস্য নেই?
আছে।
কয়েকটি ঘটনার যে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা আজও পাওয়া যায়নি তা সত্য। কিন্তু সেগুলোতে যে আসলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের কোনো প্রভাব আছে তারও প্রমাণ নেই।
তবে একটি মজার থিওরি দিয়েছিলেন কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির স্যাটেলাইট মিটিওরলজিস্ট ড. স্টিভ মিলার। ২০১৬ সালের অক্টোবরে তিনি নাসার স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে সায়েন্স চ্যানেলের What on Earth প্রোগ্রামকে জানান, বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এলাকা জুড়ে জায়গায় জায়গায় ষড়ভুজ মেঘ দেখা যায়। এখানে এমনকি ঘণ্টায় ১৭০ মাইল গতি পর্যন্ত বায়ু বয়ে যায়। এই এয়ার-পকেটগুলোই নাকি জাহাজ বা প্লেন দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। কোনো কোনো মেঘ ২০ থেকে ৫৫ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। তবে তিনি জানান, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হলে আরো গবেষণা করা লাগবে।
৪।
তবে বহুদিন পর্যন্ত জনপ্রিয় একটি তত্ত্ব ছিল মিথেন হাইড্রেড গ্যাস থিওরি। একটি মহাদেশের সীমারেখা থেকে পানির নিচে যতটুকু ভূমি বিস্তৃত হয় সোজা কথায় তাকে কন্টিনেন্টাল শেলফ বলে। সেখানে মিথেন হাইড্রেট প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল উপস্থিতি দেখা যায়। অস্ট্রেলিয়াতে পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, এরকম জায়গা থেকে সৃষ্ট বাবল বা বুদবুদ পানির ঘনত্ব কমিয়ে বড় জাহাজকেও ডুবিয়ে দিতে পারে। নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে সৃষ্ট এ বুদবুদের কারণে জাহাজডুবি হয়ে থাকতে পারে, যেহেতু মহাদেশের সীমারেখার সাথেই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। এক্ষেত্রে বিনা পূর্বাভাসেই দ্রুত জাহাজডুবি হতে পারে।
কিন্তু প্লেন দুর্ঘটনার ব্যাখ্যা এ থিওরি দিতে পারে না।
৫।
তাছাড়া এ থিওরি মাঠে মারা পড়ে, যখন একবিংশ শতকেই U.S. Geological Survey (USGS) থেকে জানানো হয়, গত পনেরো হাজার বছরে এ এলাকায় কোনো মিথেন হাইড্রেট গ্যাস নির্গত হয়নি। USGS থেকে ভূতত্ত্ববিদ বিল ডিলিয়নের ভাষ্যে আরো জানানো হয়, বারমুডা ট্রায়াঙ্গল আসলে একটি রূপকথা।
বিস্তারিত >
(রঙের উপর রঙ)
আগেই বলেছি
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে লেখা কমসম হয়নি। রিপিট করছি-
এই এলাকার অদ্ভূত স্বভাবের উপর প্রথম লেখাটা সম্ভবত প্রকাশিত হয় ১৯৫০ সালে এডওয়ার্ড ভ্যান উইঙ্কল জোনস এর লেখনীতে। ফেইট ম্যাগাজিনে জর্জ স্যান্ড এর “Sea mystery at our back door” প্রবন্ধেই প্রথম ত্রিভুজ ধারনাটা নিয়ে আসা হয়, সাথে যুক্ত করা হয় এই এলাকার সাথে অতিপ্রাকৃতের সম্পর্ক। ১৯৬৪ সালে ভিনসেন্ট গ্যাডিস “The Deadly Bermuda Triangle” এ উল্লেখ করেন ফ্লাইট ১৯ এর নিরুদ্দেশ কিছুই নয়, বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে ঘটে যাওয়া আজব ঘটনাগুলোর কোন একটা প্যাটার্নের অংশ। পরের বছরই লেখক এ নিয়ে একটা বই লিখে ফেলেন “The Invisible Horizon”। পরে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে আরও বই লিখা হয়েছে। জন ওয়ালেস স্পেনসারের Limbo of the Lost, চার্লস বার্লিটজের The Bermuda Triangle, রিচার্ড ওয়াইনারের The Devil’s Triangle এগুলোর মাঝে অন্যতম। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে যতটুকু রহস্য আর ইতিহাস আছে তার সামান্য বর্ণনা দেওয়া হল।
আমরা দেখব রহস্য আসলে কতটা রহস্য।
Bermuda Triangle Mystery: Solved
(কুশচ ( Kusche) এর ব্যাখ্যা):
লরেন্স ডেভিড কুসচ হলেন “অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি”-র রিসার্চ লাইব্রেরিয়ান এবং “ দ্যা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল মিস্ট্রি: সলভড (১৯৭৫)” এর লেখক। তার গবেষণায় তিনি চার্লস বার্লিটজ (Charles Berlitz) এর বর্ণনার সাথে প্রত্যক্ষ্যদর্শীদের বর্ণনার অসংগতি তুলে ধরেন। যেমন- যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকার পরেও বার্লিটজ (Charles Berlitz) বিখ্যাত ইয়টসম্যান ডোনাল্ড ক্রোহার্সট(Donald Crowhurt) এর অন্তর্ধানকে বর্ণনা করেছেন রহস্য হিসেবে। আরও একটি উদাহরণ হল- আটলান্টিকের এক বন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়ার তিন দিন পরে একটি আকরিকবাহী জাহাজের নিখোঁজ হবার কথা বার্লিটজ বর্ণনা করেছেন, আবার অন্য এক স্থানে একই জাহাজের কথা বর্ণনা করে বলেছেন সেটি নাকি প্রশান্ত মহাসাগরের একটি বন্দর থেকে ছাড়ার পর নিখোঁজ হয়েছিল। এছাড়াও কুসচ দেখান যে বর্ণিত দূর্ঘটনার একটি বড় অংশই ঘটেছে কথিত ত্রিভূজের সীমানার বাইরে। কুসচ এর গবেষণা ছিল খু্বই সাধারন। তিনি শুধু লেখকদের বর্ণনায় বিভিন্ন দূর্ঘটনার তারিখ, সময় ইত্যাদি অনুযায়ী সে সময়ের খবরের কাগজ থেকে আবহাওয়ার খবর আর গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো সংগ্রহ করেছেন যা গল্পে লেখকরা বলেননি।
তিনি অসংখ্য তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলোকে এক কর নিয়ে আসেন, তারপর এই অংশের যে নাম সেই নামে একটা বই লিখেন। কুশ্যের বই থেকে আমরা নিচের সিদ্ধান্তগুলোতে আসতে পারি:
কুশচ –এর গবেষণায় যা পাওয়া যায় তা হল-
১।এলাকাটা খুব ব্যস্ত একটা অঞ্চল। অনেক আগে থেকেই এদিক দিয়ে প্রচুর পরিমাণ জাহাজের আনাগোনা চলত, পরেও চলেছে, এখনও চলছে। দুর্ঘটনা ঘটবেই। বাংলাদেশে যে পরিমাণ দুর্ঘটনা ঘটে প্রতিদিন তা একটা বড় প্রমাণ। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, দেখা গেছে সমুদ্রের অন্যান্য এলাকায় যে পরিমাণ দুর্ঘটনা ঘটে তার তুলনায় বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের ভেতর ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার সংখ্যা এক বিন্দু অস্বাভাবিক নয়।
২।
ওদিকে যে পরিমাণ ঝড় হয় তার তুলনায় দুর্ঘটনা আর নিখোঁজ সংখ্যা মোটেও অসামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
এমন অনেক দূর্ঘটনার কথা বলা আছে যে গুলো আসলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে ঘটেইনি। ঘটেছে এর বাইরের এলাকায়।
৩।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের সর্বনাশ করেছেন যে লেখকরা, তারা অনেকসময় অনেক নিরুদ্দেশের বর্ণনা করতে গিয়ে ঝড়ের কথা “ভূলেই” গেছেন, যেগুলো আসলে হয়েছিল প্রমাণ পাওয়া যায়।
৪।
একটা নৌকা হারিয়ে গেলে রিপোর্ট আসবেই, কিন্তু সেগুলোর ফিরে আসার ঘটনাকে হিসেবেই নেওয়া হয়নি।
৫।
লেখকরা এমন অনেক ঘটনার কথা বলেছেন যেগুলো আসলে ঘটেইনি। সহজ ভাষায়, কুশ্যে দেখিয়ে দিয়েছেন বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যময়তার জন্য এর রহস্যময়তা দায়ী নয় বরঞ্চ দোষটা ফেলতে হবে রহস্যময়তা সৃষ্টিকারী লেখকদের ঘাড়ে।
প্রসঙ্গত, অতিরঞ্জনের একটা উদাহরণ দেয়া যায়। কথা বলছিলাম ফ্লাইট নাইনটিন নিয়ে। এটি সত্য যে, তদন্তে কারণ হিসেবে লেখা হয়েছিল ‘অজ্ঞাত’। কিন্তু এর আগে আসলে পাইলটের ত্রুটি লেখা ছিল, কিন্তু মৃতদের স্বজনদের চাপে সেটা পরিবর্তন করা হয়। হারিয়ে যাবার আগে পাইলট বলছিলেন, কম্পাস কাজ করছে না, তিনি কোথায় আছেন বুঝতে পারছেন না, হয়তো ফ্লোরিডার দিকে।
জিপিএসহীন যুগে পাইলটদের নিজস্ব অবস্থান বোঝার উপায় ছিল যাত্রাশুরুর বিন্দু ও কতক্ষণ কত বেগে চালিয়েছেন সেটা বুঝে- তাই একবার পথ হারালে সমুদ্রের উপর অবস্থান বোঝা বড্ড কঠিন ছিল। আর জ্বালানি শেষ দিকে থাকলে তো কথাই নেই। এটাই আসলে ফ্লাইট নাইনটিনের উধাও হবার পেছনে মূল রিপোর্ট ছিল। সার্চ পার্টি কোনোদিন ফিরে আসেনি এটা আংশিক সত্য। আসলে, সার্চ পার্টির দুটো মার্টিন মেরিনার প্লেনের একটি প্লেন ফিরে আসেনি।
কারণ, যাবার পথে উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মাঝেই তেলের ট্যাংকে বিস্ফোরণ হয়েছিল সেটির, এবং সেখানেই তার ইতি। বাজে আবহাওয়ার কারণে এর ধ্বংসাবশেষ ফিরিয়ে আনা হয়নি, তবে পাওয়া গিয়েছিল। সম্ভবত, ২২ জন ক্রুর একজন ভুলবশত সিগারেট ধরিয়ে ফেলেছিলেন, ভুলে গিয়েছিলেন এরকম পরিবেশে কেবিনে বিশেষ গ্যাস থাকে- সেখান থেকেই বিস্ফোরণ।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে সত্যিই কি অন্য কিছু ঘটে?উত্তর সামনে আসছে,,,
অন্যদের প্রতিক্রিয়া:
মেরিন বীমা কোম্পানী “লয়েড'স অব লন্ডন”(Lloyd's of London) দেখেছে যে , এই ত্রিভূজে অন্য সমুদ্রের চেয়ে উল্লেখ্য করবার মত ভয়ংকর কিছু নেই। তাই তারা এই অঞ্চল দিয়ে গমনকারী কোন জাহাজের উপর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাশুল আদায় করে না। যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড লেখকদের বর্ণনার উপর ব্যাপক অনুসন্ধানের পর অনুমোদন করেছে এই অঞ্চলে অস্বাভাবিক কিছু নেই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- ১৯৭২ সালে ভি.এ. ফগ (V.A. Fogg) নামের একটি ট্যাঙ্কার মেক্সিকো উপসাগরে বিষ্ফোরণেরর পর ডুবে যায়। কোস্ট গার্ডরা সে বিধ্বস্ত ট্যাঙ্কারের ছবি তোলেন এবং বেশ কিছু মৃত দেহও উদ্ধার করেন। কিন্তু কতিপয় লেখক বলেছেন ঐ ট্যাঙ্কারের সব আরোহী অদৃশ্য হয়ে গেছে, শুধুমাত্র এর ক্যাপ্টেনকে তার কেবিনের টেবিলে হাতে কফির মগ ধরা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। টিভি সিরিয়াল NOVA / Horizon এর “ দ্যা কেস অব দ্যা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল (১৯৭৬-০৬-২৭)” পর্বে বলা হয়েছিল , যে সব দূর্ঘটনার কথা বলা হয় সেগুলো ভিত্তিহীন।"
সংশয়বাদী গবেষকগণ, যেমন আর্নেস্ট ট্যাভস ( Ernest Taves) এবং ব্যারি সিংগার( Barry Singer), দেখিয়েছেন যে , মিথ্যে রহস্য তৈরি করা বেশ লাভজনক। কারণ তখন ঐ মিথ্যে রহস্যের উপর ভিত্তি করে বই লিখে বা টিভিতে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে প্রচুর অর্থ কামানো যায়।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল টি কিছু স্থলভাগের উপর দিয়েও গিয়েছে যেমন পোর্তো রিকো ( Puerto Rico), বাহামা এমন কি বারমুডা নিজেই। কিন্তু এসব জায়গায় কোন স্থলযানের নিখোঁজ হবার খবর জানা যায়নি। এছাড়া এই ত্রিভূজের মধ্যে অবস্থিত ফ্রীপোর্ট শহরে বড়সড় জাহাজ কারখানা রয়েছে আর রয়েছে একটি বিমান বন্দর, যা কোন গোলযোগ ছাড়াই বছরে ৫০,০০০ টি বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
প্রাকৃতিক ঘটনার মাধ্যমে ব্যাখ্যা:
জাহাজ ডুবে যাওয়া:
কন্টিনেন্টালসেলভে(continental shelve) জমে থাকা বিপুল পরিমাণ মিথেন হাইড্রেট অনেক জাহাজ ডোবার কারণ বলে দেখা গেছে। অস্ট্রেলিয়ায় পরীক্ষাগারের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাতাসের বুদবুদ পানির ঘনত্ব কমিয়ে দেয়। তাই সাগরে যখন পর্যায়ক্রমিক মিথেন উদগীরন হয়, তখন পানির প্লবতা(কোন কিছুকে ভাসিয়ে রাখার ক্ষমতা) কমে । যদি এমন ঘটনা ঐ এলাকায় ঘটে থাকে তবে সতর্ক হবার আগেই কোন জাহাজ দ্রুত ডুবে যেতে পারে।
১৯৮১ সালে “ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে” একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে, যাতে বর্ণিত আছে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ উপকূলের বিপরীতে ব্ল্যাক রিজ(Blake Ridge) এলাকায় মিথেন হাইড্রেট রয়েছে।
আবার ইউএসজিএস(ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে) এর ওয়েব পৃষ্ঠা থেকে জানা যায়, গত ১৫০০ বছরের মধ্যে ঐ এলাকায় তেমন হাইড্রেট গ্যাসের উদগীরন ঘটেনি।
কম্পাসের ভুল দিক নির্দেশনা:
কম্পাসের পাঠ নিয়ে বিভ্রান্তি অনেকাংশে এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের কাহিনীর সাথে জড়িত।
ভূচৌম্বক নিয়ে একটু গবেষণা করলেই একটা কথা পাওয়া যাবে যা হচ্ছে চৌম্বক বিচ্যুতি বা Magnetic Declination। পৃথিবীর সব স্থানেই বিচ্যুতি আছে কিছু না কিছু একটা। পৃথিবীর চৌম্বক মেরু আর ভৌগলিক মেরু সব জায়গায় এক হয় না। এর ফলে আলাদা আলাদা স্থানে কম্পাসের কাটা সরাসরি ভৌগলিক উত্তর দিক বা দক্ষিণ দিক না দেখিয়ে অন্য একটা দিক দেখায়। বিচ্যুতি খুব স্বাভাবিক ঘটনা এবং অনেক অনেক জায়গায় বিচ্যুতি বড় সমস্যা সৃষ্টি করে ফেলে। নাবিকেরা সাধারণত বিচ্যুতি সম্পর্কে খুব ভাল জানে। কিন্তু সাধারণ মানুষ যেহেতু বিষয়টা জানেনা তাই বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের ভেতর কম্পাসের আজব আচরণকে অলৌকিক মনে করে ফেলে। বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। শুধু বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নয়, অনেক জায়গায় কম্পাস উন্মাদ হয়ে যায় তাতে সন্দেহ নেই।
কম্পাস থেকে চুম্বক মেরুর দূরত্বের উপর ভিত্তি করে এর দিক নির্দেশনায় বিচ্যূতি আসে। উদাহরন হিসেবে বলা যায়- যুক্তরাষ্ট্রে শুধুমাত্র উইসকনসিন(Wisconsin) থেকে মেক্সিকোর উপসাগর(Gulf of Mexico) পর্যন্ত সরলরেখা বরাবর চৌম্বক উত্তর মেরু সঠিক ভাবে ভৌগোলিক উত্তর মেরু নির্দেশ করে। এই সাধারণ তথ্য যে কোন দক্ষ পথপ্রদর্শকের জানা থাকার কথা। কিন্তু সমস্যা হল সাধারণ মানুষকে নিয়ে, যারা এ বিষয়ে কিছুই জানে না। ঐ ত্রিভুজ এলাকা জুড়ে কম্পাসের এমন বিচ্যূতি তাদের কাছে রহস্যময় মনে হয়। কিন্তু এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।
হারিকেন :
হারিকেন(Hurricane) হল শক্তিশালী ঝড়। ঐতিহাসিক ভাবেই জানা যায়- আটলান্টিক মহাসাগরে বিষুব রেখার কাছাকাছি অঞ্চলে শক্তিশালী হারিকেনের কারণে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানী ঘটেছে, আর ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকার। রেকর্ড অনুসারে ১৫২০ সালে স্প্যানিশ নৌবহর “ফ্রান্সিসকো দ্য বোবাডিলা” (Francisco de Bobadilla) এমনি একটি বিধ্বংসী হারিকেনের কবলে পড়ে ডুবে যায়।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের কাহিনীর সাথে জড়িত অনেক ঘটনার জন্য এধরনের হারিকেনই দায়ী।
গলফ স্ট্রিম:
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে যে পরিমাণ দূর্ঘটনা ঘটে তার পরিমাণ তুলনামূলক ভাবে কিছুই নয় আগেই বলেছি। এখন দূর্ঘটনার পিছনে আরও কি কি কারণ আছে সেগুলো আমরা দেখব। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে ধ্বংস হওয়া জাহাজ পাওয়া যায় না কেন? বড় কারন হচ্ছে গাল্ফ প্রবাহ(Gulf Stream)।
গলফ স্ট্রিম হল মেক্সিকো উপসাগর থেকে স্ট্রেইটস অব ফ্লোরিডা(Straits of Florida) হয়ে উত্তর আটলান্টিকের দিকে প্রবাহিত উষ্ঞ সমুদ্রস্রোত। একে বলা যায় মহা সমুদ্রের মাঝে এক নদী। নদীর স্রোতের মত গলফ স্ট্রিম ভাসমান বস্তু কে স্রোতের দিকে ভাসিয়ে নিতে পারে।
সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে বয়ে যাওয়া এই অত্যন্ত শক্তিশালী উষ্ণপ্রবাহ উত্তর দিকে বয়ে চলেছে।
পানিতে ডুবে যাওয়া জাহাজ বা নৌকা গাল্ফ প্রবাহে পড়ে পানির টানে অনেক দূর চলে যায়, যে কারণে এদের খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে তা আর বলতে হবে না।
যেমনি ঘটেছিল ১৯৬৭ সালের ২২ ডিসেম্বর “ উইচক্রাফট” নামের একটি প্রমোদতরীতে। মিয়ামি তীর হতে এক মাইল দূরে এর ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিলে তার নাবিকরা তাদের অবস্থান কোস্ট গার্ডকে জানায়। কিন্তু কোস্ট গার্ডরা তাদেরকে ঐ নির্দিষ্ট স্থানে পায়নি।
Rogue wave(বাংলা কি হবে? বদমাশ ঢেউ!) আরেকটা কারণ। এই ঢেউগুলো একাকী ঢেউ। অনেকগুলো সাধারণ ঢেউয়ের মাঝে হঠাৎ করে দেখা যায় খুব বড় আর শক্তিশালী একটা ঢেউকে যারা এতই ভয়ানক যে এদের আঘাতে জাহাজ ভেঙে যায়। বিজ্ঞানীরা এদের সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন মাত্র ১৯৯৫ সালে। তারমানে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের বিপুল সংখ্যক জাহাজ ধ্বংস হওয়ার পিছনে বদমাশ ঢেউগুলোকে দায়ী করাই যায়। সমুদ্রের নিচে জমে থাকা মিথেন হাইড্রেটকে অনেকে দায়ী করেন। হঠাৎ করে নির্গত হয়ে বড় বড় জাহাজকে এরা ডুবিয়ে দিতে পারে এক নিমেষে। যদিও বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে বড় পরিমাণ গ্যাস নির্গমনের কোন খবর পাওয়া যায়নি।
মানবিক ভুল:
মানব ঘটিত দূর্ঘটনা:
অনেক জাহাজ এবং বিমান নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার তদন্তে দেখা গিয়েছে এর অধিকাংশই চালকের ভুলের কারণে দূর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। মানুষের ভুল খুবই স্বাভাবিক ঘটনা, আর এমনি ভুলের কারণে দূর্ঘটনা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলেও ঘটেতে পারে। যেমন কোস্ট গার্ড ১৯৭২ সালে ভি.এ. ফগ( V.A. Fogg)-এর নিখোঁজ হবার কারণ হিসেবে বেনজিন এর পরিত্যাক্ত অংশ অপসারনের জন্য দক্ষ শ্রমিকের অভাবকে দায়ী করেছে। সম্ভবত ব্যবসায়ী হার্ভি কোনভার( Harvey Conover) এর ইয়ট টি তার অসাবধানতার কারণেই নিখোঁজ হয়। অনেক নিখোঁজের ঘটনারই উপসংহারে পৌঁছানো যায়নি, কারণ অনুসন্ধানের জন্য তাদের কোন ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
(জলদস্যু+
ইচ্ছাকৃত ভাবে যে সব ধ্বংস সাধিত হয়েছে):
যুদ্ধের সময় অনেক জাহাজ শত্রু পক্ষের অতর্কিত আক্রমণে ডুবে গিয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হয়। এ কারণেও জাহাজ নিখোঁজ হতে পারে। তবে বিশ্বযুদ্ধের সময় বেশ কিছু জাহাজ, যাদের মনে করা হয় এমনি কারণে ডুবেছে, তাদের উপর অনুসন্ধান করা হয়। তবে শত্রু পক্ষের নথিপত্র, নির্দেশনার লগ বই ইত্যাদি পরীক্ষা করে তেমন কিছু প্রমাণ করা যায়নি। যেমন- মনে করা হয় ১৯১৮ সালে ইউ এস এস সাইক্লপস( USS Cyclops) এবং ২য় বিশ্বযুদ্ধে এর সিস্টার শিপ প্রোটিয়াস(Proteu) এবং নিরিয়াস( Nereus) কে জার্মান ডুবোজাহাজ ডুবিয়ে দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে জার্মান রেকর্ড থেকে তার সত্যতা প্রমাণ করা যায়নি।
আবার ধারণা করা হয় জলদস্যুদের আক্রমণে অনেক জাহাজ নিখোঁজ হয়ে থাকতে পারে। সে সময়ে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমাংশে এবং ভারত মহাসাগরে মালবাহী জাহাজ চুরি খুব সাধারণ ঘটনা ছিল। মাদক চোরাচালানকারীরা সুবিধা মত জাহাজ, নৌকা, ইয়ট ইত্যাদি চুরি করত মাদক চোরাচালানের জন্য। ১৫৬০ থেকে ১৭৬০ পর্যন্ত ক্যারিবিয়ান অঞ্চল ছিল জলদস্যুদের আখড়া। কুখ্যাত জলদস্যু এডওয়ার্ড টিচ( Edward Teach (Blackbeard)) এবং জেন ল্যাফিট্টি(Jean Lafitte) ছিল ঐ অঞ্চলের বিভীষিকা। তবে শোনা যায় জেন ল্যাফিট্টি(Jean Lafitte)-ই নাকি বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের শিকার হয়েছিল।
আর এক ধরনের দস্যুতার কথা শোনা যায়, যা পরিচলিত হত স্থল থেকে। এধরনের দস্যুরা সমুদ্র ধারে রাতে আলো জ্বালিয়ে জাহাজের নাবিকদের বিভ্রান্ত করত। নাবিকরা ঐ আলোকে বাতি ঘরের আলো মনে করে সেদিকে অগ্রসর হত। তখন জাহাজগুলি ডুবো পাহাড়ের সাথে সংঘর্ষে ডুবে যেত। আর তারপরে ডোবা জাহাজের মালপত্র তীরের দিকে ভেসে এলে দস্যুরা তা সংগ্রহ করত। হয়তো ডুবন্ত জাহাজে কোন নাবিক বেঁচে থাকলে দস্যুরা তাদেরকেও হত্যা করত।
আলোচিত আরো ঘটনাসমূহের ব্যাখ্যা:
ফ্লাইট নাইনটিন(Flight 19)
ফ্লাইট ১৯:
ফ্লাইট ১৯ বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের নিখোঁজ কাহিনীগুলোর অন্যতম।
পাঁচটি যুদ্ধবিমান কেন অদৃশ্য হয়ে গেল?
ফ্লাইট ১৯, ৫টি টিভিএম আভেঞ্জার টর্পেডো বোমারু বিমানের একটি, যেটি প্রশিক্ষণ চলাকালে ১৯৪৫ সালের ৫ ডিসেম্বর আটলান্টিক মহাসাগরে নিখোঁজ হয়। বিমানবাহিনীর ফ্লাইট পরিকল্পনা ছিল ফোর্ট লডারদেল থেকে ১৪৫ মাইল পূর্বে এবং ৭৩ মাইল উত্তরে গিয়ে, ১৪০ মাইল ফিরে এসে প্রশিক্ষণ শেষ করা। বিমানটি আর ফিরে আসেনি। নেভি তদন্তকারীরা নেভিগেশন ভুলের কারণে বিমানের জ্বালানীশূন্যতাকে বিমান নিখোঁজের কারণ বলে চিহ্নিত করে।
বিমানটি অনুসন্ধান এবং উদ্ধারের জন্য পাঠানো বিমানের মধ্যে একটি বিমান পিবিএম ম্যারিনার ১৩ জন ক্রুসহ নিখোঁজ হয়।
বহরটির কোন দূর্ঘটনায় পড়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে সবাই জানত। কারণ বিমান বহরটির পাইলটদের মাঝে একজন মাত্র ছিলেন অভিজ্ঞ, বাকিরা সবাই শিক্ষানবীস। অভিজ্ঞ লেফট্যানেন্ট চার্লস টেলরের কুখ্যাতি আগে থেকেই ছিল পথ হারিয়ে ফেলার, এমন ঘটনা আগেও কয়েকবার ঘটিয়েছেন। অবশ্য আমাদেরও বুঝতে হবে তখন উন্নতমানের যন্ত্রপাতি ছিল না, পাইলটকে নির্ভর করত হত গতি, দিক আর স্মৃতিশক্তির উপর। বিমান বহর থেকে খুব দুর্বল কিছু সিগন্যালে টেলর জানান যে তিনি দিক নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে গেছেন। ভূলটা যে তিনিই করেছিলেন তা পরে সহজে বুঝা গিয়েছে। এমনকি টেলরের ছাত্ররা পর্যন্ত ধারণা করতে পেরেছিলেন তার ভূলটা কি হয়েছে। স্থলভূমি থেকে অনেক দূরে সরে যাওয়ায় জ্বালানী শেষ হয়ে সম্ভবত বিমানগুলো পানিতে পড়ে যায়। ওই বিশেষ অ্যাভেঞ্জারগুলো তাদের ওজনের জন্য বিখ্যাত ছিল, তারমানে পানিতে পড়ার সাথে সাথে বিমানগুলো তলিয়ে যায়। ফ্লাইট ১৯ এর খোঁজে যাওয়া দলটিও নিখোঁজ হয়ে যায় এ ধারণাও ঠিক নয়। আসলে বিমানটির খোঁজে দুটো মার্টিন ম্যারিনার গিয়েছিল যাদের একটা ঠিকই ফিরে আসে। আরেকটাও উধায় হয়ে যায় নি। সেই সময় আরেকটা জাহাজ দূরে একটা বিস্ফোরণ দেখতে পায়, যা ছিল সম্ভবত দ্বিতীয় মার্টিন ম্যারিনার বিমানটির। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, ওই বিমানগুলো “উড়ন্ত বোমা” নামেই পরিচিত ছিল কারণ অনেক রেকর্ডআছে এদের আকাশে থাকতেই বিস্ফোরিত হয়ে যাওয়ার। কিন্তু প্রতিটা ঘটনার এত সুন্দর ব্যাখ্যা থাকার পরও কেন নেভির রিপোর্টে বলা হল “অজানা কারণে নিরুদ্দেশ” হয়েছে বিমানবহরটি? এই ঘটনাও খুব সাধারণ আর তা হচ্ছে টেলরের মা। দূর্ঘটনার বর্ণনা করতে গেলেই টেলরের উপর দোষ ফেলতে হয়, কিন্তু তার মা এর প্রতিবাদ করেন। শুধু শুধু মহিলার অনূভূতিতে আঘাত না দিয়ে নেভি তাই এভাবেই রিপোর্টটা সাজায়।
ইউএসএস সাইক্লপস( USS Cyclops) :
যুক্তরাষ্ট্রের নৌ- ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক (যুদ্ধ ছাড়া) ক্ষতি হচ্ছে ইউ এস এস সাইক্লপস নিখোঁজ হয়ে যাওয়া। অতিরিক্ত ম্যাঙ্গানিজ আকরিক ভর্তি বিমানটি ১৯১৮ সালের ৪ মার্চ বার্বাডোস দ্বীপ থেকে উড্ডয়নের পর একটি ইঞ্জিন বিকল হয় এবং ৩০৯ জন ক্রুসহ নিখোঁজ হয়। যদিও কোন শক্ত প্রমাণ নেই তবুও অনেক কাহিনি শোনা যায়। কারো মতে ঝড় দায়ী, কারো মত ডুবে গেছে আবার কেউ এই ক্ষতির জন্য শত্রুপক্ষকে দায়ী করে।
উপরন্তু, সাইক্লপস-এর মত আর দুইটি ছোট জাহাজ প্রোটিউস এবং নেরেউস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে নিখোঁজ হয়। সাইক্লপসের মত এই জাহাজদুটিতেও অতিরিক্ত আকরিকে ভর্তি ছিল। তিনটি ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত মালামাল ধারণে অক্ষমতার (ডিজাইনগত) কারণেই জাহাজডুবি হয় বলেই ব্যাপক ধারণা করা হয়।
ডগলাস ডিসি ৩(Douglas DC-3) :
২৮ ডিসেম্বর ১৯৪৮ সালে একটি ডগলাস ডিসি - ৩, ফ্লাইট নাম্বার NC16002, সান জুয়ান, পুয়ের্তো রিকো থেকে মিয়ামি যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়। বিমান থাকা ৩২ জনসহ বিমানটির কোন হদিস পাওয়া যায়নি। সিভিল এরোনটিক্স বোর্ড তদন্ত নথিপত্র থেকে বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার সম্ভাব্য একটি কারণ পাওয়া যায়, সেটি হল - বিমানের ব্যাটারি ঠিকমত চার্জ না করে পাইলট সান জুয়ান থেকে রওনা দেয়। কিন্তু এটা সত্যি কিনা তা জানা যায়নি।
এখনও রহস্য?
যখন উন্নতমানের টেকনোলজি বের হয়ে গেল নেভিগেশনের জন্য, স্যাটেলাইট বসানো হল, তখন যেন বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে আর কোন রহস্য রইল না। শয়তানের ত্রিভুজ আর কোন রহস্যের জন্ম দিতে পারল না, একেবারেই চুপ মেরে গেছে। অনেক গবেষণা করেও ওই অঞ্চলে অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া যায় নি। এটা কি কোন খেলা? আজ হাজার হাজার জলযান আর আকাশযান ওই অঞ্চলদিয়ে কোন রকমের ব্যাঘাত ছাড়াই চলাচল করে। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের আসলে কোন রহস্য ছিলই না, অস্বাভাবিক কিছুই ছিল না। থাকলে হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যেত না।
শেষ কথা:
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে শয়তানের ত্রিভুজ বানিয়েছে মানুষ। সাধারণ ঘটনাগুলোকে সাজিয়ে পরিবর্তন করে রহস্যগল্প বানিয়ে তুলেছে। সেই রহস্যগল্পের রহস্য অনেক আগেই ভেদ হয়ে গিয়েছে।
বাড়তি উত্তেজনার জন্য কল্পণা করে নিতে পারেন যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে আসলেও কিছু একটা আছে
ভিনগ্রহের প্রাণী, হারিয়ে যাওয়া আটলান্টিস, ফ্লাইং সসার যা খুশি। তাতে আনন্দ পেলে ক্ষতি নেই মোটেও, শুধু মনে রাখতে হবে যে হ্যারি পটার পড়ে যে আনন্দ আমরা পাই তার সাথে এই আনন্দের খুব একটা পার্থক্য নেই।
ধন্যবাদ।।
১। https://en.m.wikipedia.org/wiki/
Bermuda_Triangle
2।
https://bn.m.wikipedia.org/wiki/
বারমুডা_ট্রায়াঙ্গেল
3। https://roar.media/bangla/main/myth/
bermuda-triangle-mystery/
4।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/
List_of_Bermuda_Triangle_incidents
5। https://www.amazon.com/Bermuda-Triangle-Mystery-Solved/dp/0879759712 (কুশচ্যের বই আমাজন লিংক)
6।
https://www.google.com/amp/s/
www.sciencealert.com/what-s-the-real-science-behind-the-bermuda-triangle-mystery/amp
7।
https://www.google.com/amp/s/
www.independent.co.uk/news/science/bermuda-triangle-mystery-solved-latest-theories-dr-karl-kruszelnicki-debunked-unexplained-a
7861731.html%3famp
8।
https://www.google.com/amp/s/metro.co.uk/
2018/08/02/mystery-bermuda-triangle-solved-terrifying-new-rogue-wave-theory-revealed-77
88570/amp/
9।
https://www.google.com/amp/s/
www.thesun.co.uk/news/6906519/bermuda-triangle-rogue-waves-university-of-southampton/amp/
10।
https://www.google.com/amp/s/
www.mirror.co.uk/science/bermuda-triangle-mystery-solved-expert-13020078.amp
Writer: Abu Rayhan
Tags:
রহস্য