"We are just an advanced breed of monkeys on a minor planet of a very average star. But we can understand the Universe. That makes us something very special."
~Stephen Hawking
মহামতি হকিং এর এই উক্তিটা পরোক্ষভাবে মহাবিশ্বের সাথে জীবনের একটা সুন্দর, রহস্যময় সম্পর্ক তৈরি করে দেয়।আসলেই, মহাবিশ্বের সুবিশালতার মাঝে আমাদের অস্তিত্ব যেখানে শূণ্যের কোঠায়, সেখানে আমরা বের করে ফেলেছি মহাবিশ্বের জন্ম-মৃত্যুর রহস্য! আর মানুষের এই পিপাসু মনই তাকে প্রশ্ন করেছে তার একান্ত আপন প্রাণ নিয়ে ,"What is the origin of life ? Where does it come from?" এবং এই প্রশ্নটা যত সোজা, উত্তর ততটাই কঠিন। বিজ্ঞানীরা, গবেষকরা বহুদিন ধরে গবেষণা করছেন এই এক উত্তর খুঁজতে। বহু উত্তর বের হয়ে এসেছে, অপেক্ষা শুধু সঠিকটা বাছাই করার। আর সবচেয়ে অদ্ভুত উত্তর বোধ হয় এইটা, " প্রাণ মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে এসেছে! " জ্বি হ্যা, প্রিয় পাঠক, এই হাইপোথিসিসের নাম, "প্যান্সপারমিয়া", এস্ট্রোবায়োলজির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক গবেষণার ক্ষেত্র।
প্যান্সপারমিয়া শব্দের উৎপত্তি গ্রীক শব্দ প্যান ও স্পার্মা হতে। প্যান অর্থ "সব", স্পার্মা অর্থ "বীজ"। সবকিছুর বা প্রাণের বীজ বা মূল কোথায়, সেই প্রশ্নের এক অদ্ভুত উত্তর এই প্যান্সপারমিয়া। প্যান্সপারমিয়াতে বলা হয়, প্রাণ মহাবিশ্বে নানান জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান করছে, আর ছড়ানোর কাজটা হয়েছে স্পেস-ডাস্ট, গ্রহাণু, উল্কা, ধূমকেতুর দ্বারা। এরা প্রাণ-ধারী কোনো একটা জায়গা থেকে প্রাণকে বহন করে নিয়ে গিয়েছে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত, সেখানে গিয়ে ছড়িয়ে দিয়েছে প্রাণ, পথের মধ্যে কোনো জায়গায়ও হয়তো ছিটকে পড়েছে একটুখানি "প্রাণাংশ!" এভাবে হয়তো মহাবিশ্বের বহু স্থানে প্রাণ ছড়িয়ে আছে।প্যান্সপারমিয়া এর ধারণা যে নতুন, তা মোটেই নয়। প্যান্সপারমিয়া ধারণার প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় খ্রিষ্টপূর্ব ৫ শতকের গ্রীক দার্শনিক এনাক্যাগোরাস এর লেখনীতে। ধীরে ধীরে বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনের ফলে ধারণাটা আরো যুক্তিসম্মত হয়ে ওঠে। বিভিন্ন বিজ্ঞানীর হাত ধরে শেষে সুইডিশ কেমিস্ট স্ভান্টে এর্হেনিয়াস এর প্রচেষ্টায় এটা একটা তথ্যবহুল বৈজ্ঞানিক হাইপোথিসিসের রূপ পায়।পরবর্তীতে ফ্রেড হয়েল ও চন্দ্র উইকরামাসিংঘা (ভিক্রামাসিংঘা) প্যান্সপারমিয়া এর বিখ্যাত দুই প্রবক্তা হয়ে ওঠেন। ১৯৭৪ সালে তারা দাবি করেন যে মহাবিশ্বে এমন ধূলিকণার মেঘ থাকতে পারে যেখানে প্রচুর পরিমাণে জৈব যৌগ আছে। পরবর্তীতে উইকরামাসিংঘা নিজেই এমন মেঘ আবিষ্কার করেন ও তাদের দাবির সত্যতার প্রমাণ দেন। আর হতেই পারে যে এই জৈব যৌগগুলো একত্রে বিক্রিয়া করে কোনোভাবে প্রোটিন, ডিএনএ, আরএনএ গঠন করে ফেলল! কিন্তু মহাবিশ্বতো ইউভি লাইট, এক্স-রে প্রভৃতি ক্ষতিকারক রশ্মি দ্বারা পূর্ণ, তাহলে তারা টিকল কীভাবে? ওই ধূলিকণার মেঘ তাদেরকে আচ্ছাদিত করে রাখে বলে রশ্মিগুলো অত ভেতরে গিয়ে ক্রিয়া করতে পারে না। অনেক বিজ্ঞানীতো এই পর্যন্তও দাবি করেছেন যে মহাবিশ্বের বয়স যখন মাত্র ১০-১৭ মিলিয়ন বছর, তখনই প্রাণ গঠিত হয়ে গিয়েছিল।তাদের মতে ভিনগ্রহে প্রাণের বিষয়টা যে শুধুমাত্র বিশ্বাসযোগ্য তা নয়, বরং সুনিশ্চিত ও অনিবার্য। যদিও এর কোনো প্রমাণ আমরা আজ পর্যন্ত পাইনি।উইকরামাসিংঘা আর ফ্রেড হয়েল এইও দাবি করে বসেন যে পৃথিবীতে যেসব মহামারী হয়, সেগুলোর অধিকাংশের জীবাণু মহাকাশ থেকেই পৃথিবীতে প্রবেশ করে।কিন্তু পৃথিবীতে ঢোকার সময় যে প্রচণ্ড তাপ-চাপ উৎপন্ন হয়, অথবা মহাকাশে যে চরম পরিবেশ, সেখানে জীবটা টিকেছিল কীভাবে? উত্তর হলো- এক্সট্রিমোফিল,যারা প্রচণ্ড তাপ-চাপ বা ভয়ংকর পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে।মরক্কোতে প্রাপ্ত ব্যাসিলাস ব্যাক্টেরিয়ার এক ধরনের এন্ডোস্পোর ৪২০`C বা ৭৮৮ `F পর্যন্ত বেঁচে থাকে। ISS এর বাইরে ২০০৮-২০১৫ সালের মাঝে ৩টি সিরিজের এস্ট্রোবায়োলজিকাল এক্সপেরিমেন্ট করা হয়।বিভিন্ন জৈব যৌগ, অতিক্ষুদ্র জীব ও তাদের স্পোরকে মহাকাশের শূণ্যতায় সোলার ফ্লাক্স এর মধ্যে বিশেষ কিছু পরিবেশে ১.৫ বছরের জন্য রাখা হয়। কিছু কিছু জীব টিকে যায়, যদিও অধিকাংশই মারা যায়। তারপর টিকে যাওয়াগুলোকে আবার কৃত্রিমভাবে উল্কা বা গ্রহাণুর মাধ্যমে পৃথিবীতে আছড়ে মারা হয়, এখানেও দেখা গেল কয়েকটা জীবাণু বেঁচে গিয়েছে। এটা লিথোপ্যান্সপারমিয়া এর পক্ষে প্রমাণ বটে। লিথোপ্যান্সপারমিয়া নিয়ে পরে আলোচনা আছে, আপাতত এইটুকুই জানুন। ২০১৫ সালে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া থেকে ৪.১ বিলিয়ন বছর বয়সের পাথর থেকে জৈব উপাদানের অবশিষ্টাংশ পাওয়া যায়।যখন পৃথিবীর বয়স মাত্র ৪০০ মিলিয়ন বছির। গবেষকদের দল বলে যে পৃথিবী গঠিত হওয়ার পর যদি এত সহজে প্রাণ তৈরি হয়ে যায়, তাহলে অন্য গ্রহেও তা হওয়া সম্ভব!২০১৮ সালের এপ্রিলে একদল রাশিয়ান গবেষক ISS এর বাইরের আবরণ থেকে ডিএনএ এর অবশিষ্টাংশ খুজে পাওয়ার দাবি করেন যার সাথে আর্কটিক সমুদ্রের নির্দিষ্ট কিছু উপকূলে পাওয়া যায়, এমন ব্যাক্টেরিয়ার ডিএনএ এর মিল ছিল।হতে পারে এদের মাঝে কোনো সম্পর্ক আছে!তাহলে এই ছিল প্যান্সপারমিয়ার সাধারণ পরিচিতি আর এর পক্ষের কিঞ্চিৎ প্রমাণ। এবার এর প্রকারভেদ সম্পর্কে জানা দরকার।
প্যান্সপারমিয়া আবার কয়েক প্রকারের হতে পারে। মানে মূল থিমটা একই, যে প্রাণ মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে এসেছে, তবে কিছু বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য থাকার কারণে এর বেশ কয়েকটা ভাগ আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটা নিয়ে আলোচনা করব।
১. রেডিওপ্যান্সপারমিয়া:
১৯০৩ সালে স্ভান্তে এর্হেনিয়াস তার একটা আর্টিকেল প্রকাশ করেন,"The Distribution of Life in Space", এই হাইপোথিসিসটাই পরবর্তীতে রেডিওপ্যান্সপারমিয়া নামে পরিচিত হয়।এখানে বলা হয়, অণুবীক্ষণিক জীবেরা মহাকাশে দূর-দূরান্তে যাওয়ার জন্য গতিশীল হয় নক্ষত্রের রেডিয়েশন প্রেসার ব্যাবহার করে। খুব সহজ ভাষায় বললে, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ কোনো বস্তুর পৃষ্ঠে যে ধাক্কা দেয়, সেইটাই রেডিয়েশন প্রেসার। তিনি উল্লেখ করেন যে ১.৫ মাইক্রোমিটার এর চেয়ে ক্ষুদ্র যেকোনো কিছুই রেডিয়েশন প্রেসারের মাধ্যমে বেশ ভালো একটা বেগ অর্জন করতে পারে(প্রেসারের মানের ওপর নির্ভর করে)।তবে এটা শুধু নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়াল স্পোরের ক্ষেত্রেই সম্ভব, আকারের সীমাবদ্ধতার কারণে। এই ধারণার একজন বিখ্যাত সমালোচক হলেন কার্ল সাগান। তিনি বলেন যে মহাকাশে বিদ্যমান ক্ষতিকর রশ্মিগুলোর কারণে ওই জীব মারা যাবে।বিভিন্ন গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে জানা যায় যে উন্মুক্ত ভাবে জীবটি মহাকাশে কয়েক সেকেন্ড হয়তো বাঁচতে পারে, কিন্তু যদি কোনোভাবে রশ্মির হাত থেকে এগুলোকে রক্ষা করা যায়, তাহলে নিষ্ক্রিয়ভাবে এগুলোর টিকে যাওয়ার কথা ৬ বছর পর্যন্ত। আর রক্ষা করার জন্য এগুলোকে কমপক্ষে ১ মিটার ব্যাসের আর ভীষণ পুরু কোনো কঠিন গোলকের একদম কেন্দ্রের দিকে থাকা লাগবে। তাহলেই সেই জীব অক্ষতভাবে মহাকাশে ভ্রমণ করতে পারবে।এখন এটা কীভাবে সম্ভব? সম্ভব! ধূমকেতু, উল্কা, গ্রহাণু আছে কী করতে?
২.লিথোপ্যান্সপারমিয়া:
পাথরখণ্ডের মাধ্যমে প্রাণের এক গ্রহ থেকে আরেক গ্রহে(ইন্টার-প্লানেটারি প্যান্সপারমিয়া), এক সৌরজগত থেকে আরেক সৌরজগতে(ইন্টার-স্টেলার প্যান্সপারমিয়া), এমনকি এক গ্যালাক্সি থেকে আরেক গ্যালাক্সিতে(ইন্টার-গ্যালাক্টিক প্যান্সপারমিয়া) পর্যন্ত যাওয়ার হাইপোথিসিসের নামই হলো লিথোপ্যান্সপারমিয়া।এটা নিতান্তই অনুমানভিত্তিক।এর কোনো প্রমাণ নেই, পরীক্ষার মাধ্যমে সামান্য অনুকূল ফলাফল পাওয়া গেছে মাত্র। লিথোপ্যান্সপারমিয়া হওয়ার জন্য একটা জীবকে বেশ কতগুলো পর্যায়ে সার্ভাইভ করা লাগবে। প্লানেটারি ইজেকশন বা গ্রহের মাধ্যাকর্ষণকে কাটিয়ে মহাকাশে নির্গত হওয়ার সময় উৎপন্ন প্রচণ্ড তাপ, চাপ আর ঘাত। তারপর সার্ভাইভাল ইন ট্রানজিট বা মহাকাশে থাকার সময়টা। বেশ কিছু পরীক্ষা করা হয়েছে লো-আর্থ অরবিটে কিছু মনুষ্য-বাহিত আর এক্সট্রিমোফিল (চরম পরিবেশে টিকে যারা), এই দুই ধরনের ব্যাকটেরিয়া নিয়ে।আর সর্বশেষ এটমোস্ফিয়ারিক এন্ট্রি বা নতুন কোনো গ্রহে প্রবেশকালে উৎপন্ন প্রচণ্ড গতি,চাপ, তাপ। আবার গ্রহের পৃষ্ঠে আছড়ে পরার সময় উৎপন্ন শক। এত সীমাবদ্ধতা ও শর্তের কারণে লিথোপ্যান্সপারমিয়া প্রায় অসম্ভব।তবে ২০১৮ এর অক্টোবরে হার্ভাডের জ্যোতর্বিজ্ঞানীরা একটি এনালাইটিকাল মডেল প্রস্তাব করেন, যেখানে বলা হয় যে ধূমকেতু বা গ্রহাণুর মধ্যে সুপ্ত স্পোর কীভাবে আন্ত:গ্যালাক্টিক ভ্রমণ করতে পারে, মডেলটি বেশ নিঁখুত বটে, তবে প্রমাণিত নয়।
৩.এক্সিডেন্টাল প্যান্সপারমিয়া:
হাসার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান! ১৯৬০ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী থমাস গোল্ড বলেন যে, কোনো ভিনগ্রহীরা হয়তো তাদের গ্রহের আবর্জনা পৃথিবীতে ফেলে গিয়েছিল, আর তার সাথেই কোনোভাবে ক্ষুদ্র কোনো জীব পৃথিবীতে চলে আসে।এই অদ্ভুত হাইপোথিসিসের আরেক নাম,"কসমিক গার্বেজ", বাংলায় বললে, মহাকাশীয় বর্জ্য!আর সেখান থেকেই নাকি প্রাণের উৎপত্তি, বর্জ্য থেকে!
৪.ডাইরেক্টেড প্যান্সপারমিয়া:
এখানে বলা হয় যে কোনো উন্নত সভ্যতার ভিনগ্রহীরা ইচ্ছা করেই বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে প্রাণ পাঠিয়েছে। নোবেল বিজয়ী ফ্রান্সিস ক্রিক ও লেসলি অর্গেল এই ধারণা দেন।ডাইরেক্টেড প্যান্সপারমিয়া অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর দেয়, যেমন- ইচ্ছা করেই প্রাণকে পাঠানো হলে সেই ভিনগ্রহীরা অবশ্যই কোনো উন্নত রকেট ব্যাবহার করেছিল, ফলে রেডিয়েশন প্রেসার বা লিথোপ্যান্সপারমিয়ার দরকার হয়না। কিন্তু এই হাইপোথিসিস সবচেয়ে বড় প্রশ্নেরই উত্তর দেয় না, যেহেতু আমরা আজ পর্যন্ত ভিনগ্রহীদের সন্ধান পাইনি।আর এই কারণেই এটা মিথ্যা হওয়ার সম্ভাবনা যেমন ৫০%, সত্য হওয়ার সম্ভাবনাও ৫০%।বিভিন্ন সময়ে এলিয়েনদের পাঠানো সংকেত, মেসেজ, প্রভৃতি নিয়ে হইচই উঠলেও, আসলেই মহাবিশ্বে যে অন্য কোথাও প্রাণ আছে নাকি, তা অনিশ্চিত।Neil deGress Tyson একটা উদাহরণ দিয়েছেন এভাবে, আমি যদি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় একটা পোকা দেখি, আমি কী ওটাকে পাত্তা দেই? বা পোকাটাও কি উপলব্ধি করে যে আমি বুদ্ধিমান একটা প্রাণী? না। কারণ আমাদের কাছে পোকাটা গুরুত্বপূর্ণ না, হয়তো এলিয়েনরাও ভেবেছে আমরা নিতান্তই বোকা, তাই আমাদের সাথে যোগাযোগ করে সময় নষ্ট করার চেষ্টা করেনি।অথবা, আমরা আসলেই এলিয়েনদের উন্নত প্রযুক্তির সামনে এতটাই অনুন্নত যে তাদের খুঁজে পাওয়ার মতো বিজ্ঞান আমাদের কাছে নেই।
৫.সিউডোপ্যান্সপারমিয়া:
একে অনেকে সফট,মলিকুলার ও কোয়াজি প্যান্সপারমিয়াও বলে থাকে।কারণ, এটা পুরোপুরি প্যান্সপারমিয়া এর সাথে মেলে না।এখানে বলা হয় যে বিভিন্ন জৈব যৌগ মহাকাশেই তৈরি হয়েছিল, সোলার নেবুলার মধ্যে। কারণ সেখানে বিভিন্ন ধরনের মৌল থাকে,আর তাদের মধ্যে বিক্রিয়া হয়ে জৈব যৌগ গঠন হওয়া অসম্ভব কিছু না ।তারপর সেখানে সোলার নেবুলা ঘনীভূত হয়ে নক্ষত্র আর গ্রহ তৈরি হয়, আর জৈব উপাদানগুলো গ্রহের পৃষ্ঠে থেকে যায়, তারপর যেই গ্রহে উপযুক্ত পরিবেশ আছে, সেখানে প্রাণ গঠিত হয়! এটা অনেকটা এবায়োজেনেসিস এর মতোই, শুধু জৈব উপাদান গ্রহে তৈরি না হয়ে তৈরি হয় মহাকাশে, মূল প্রাণ যেটা, সেটা গ্রহেই গঠিত হয়। উইকরামাসিংঘার কথা আগেই বলেছি, তিনি মূলত এই মতেরই প্রবক্তা। স্টিফেন হকিং ও এর সাথে সহমত পোষণ করেছেন।বিভিন্ন গবেষণায় মহাকাশে জৈব যৌগের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, তাই সিউডোপ্যান্সপারমিয়া অনেকটাই বিশ্বাসযোগ্য, তবে সুনিশ্চিত না।২০১৯ সালের নভেম্বরে এক গবেষণায় উল্কাপিণ্ডে রাইবোজ সুগার খুঁজে পান! যা জীবনের জন্য অনন্য প্রয়োজনীয় এক উপাদান!
এতকিছুর পরেও প্যান্সপারমিয়া নিয়ে সমালোচনারও শেষ নেই। সবচেয়ে বড় যে সমালোচনা, সেটা হলো, এই হাইপোথিসিস প্রাণ কীভাবে গঠিত হলো, বা প্রাণের প্রথম রূপটা কীভাবে গঠিত হলো, তার উত্তর দেয় না, বরং প্রাণ কীভাবে পৃথিবীতে এল, সেইটার ওপর ফোকাস করে(সিউডোপ্যান্সপারমিয়া এজন্যই আলাদা)। প্রাণের গঠিত হওয়াকে এটা অন্যকিছু বা অন্যকারো ওপরে চাপিয়ে দেয়।তাছাড়া এই হাইপোথিসিসকে বাস্তবে পরীক্ষা করারও সুযোগ কম। আর বিজ্ঞান পরীক্ষণ না করে কোনো কিছু গ্রহণ করেনা। মহাকাশে প্রাণকে টিকে থাকতে হলে সুনির্দিষ্ট কিছু পরিবেশ দরকার, যা একেবারে বায়-চান্স বা কাকতালীয় ভাবে আবির্ভাব হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেইই। তাই প্যান্সপারমিয়া আমাদের সেই প্রশ্নের উত্তর এখনো সঠিকভাবে দেয় না।
আমাদেরকে গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে, ততদিন পর্যন্ত যতদিন না প্রাণের রহস্য বের হচ্ছে। হয়তো প্যান্সপারমিয়াই সঠিক,কিন্তু উপযুক্ত যুক্তি-প্রমাণ আর বিজ্ঞানের অভাবে এটা প্রমাণ করা যাচ্ছে না। তাই আমাদের তাকিয়ে থাকতে হবে ভবিষ্যতের দিকে,এই আশা করে যে, সময়ই সব বলে দেবে! শেষ করতে চাই একটা উক্তি দিয়ে,
"The Universe is under no obligation to make sense to you."
~Neil deGress Tyson
তথ্যসূত্র:
1. https://en.m.wikipedia.org/wiki/Panspermia
2. https://www.space.com/22880-life-from-
space-panspermia-possibility.html
Writer: Tahsin Ahmed Omi