সেটিকে একটি মাইলফলক বলতেই হয় যখন মানুষ কৃত্রিম এনজাইম তৈরি করে ফেলে। মানুষের স্বভাবই তো হলো কৌতুহল। কৌতুহলী হয়েই কৃত্রিম প্রাণ দিতে চায়। সে অনুসারে কৃত্রিম এনজাইম তৈরি করতে চাইবে এটা অনুমেয়ই ছিল। একে তো এটি অনেক কিছুর প্রশ্নোত্তর দিবে। তারপর এটি অনেক সাহায্যকারী এবং খুবই জটিল কাজগুলোর একটা। তাই এটি ছিল একটা মাইলফলক যখন বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম এনজাইম তৈরি করে। এনজাইম নিঃসন্দেহে এটি খুবই জটিল কাঠামো। তাই, প্রকৃতির জটিল কাজ বোঝার জন্য এটি হতে চলছিল মূল্যবান একটি মডেল। এই আণবিক যন্ত্র - যাদের ছাড়া জীবনের অস্তিত্ব নেই কারণ শরীরের মধ্যে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া শুরু করার জন্য দায়ী। প্রাকৃতিক নির্বাচনের লক্ষ লক্ষ বছর এই ধরনের এনজাইমের কার্যকলাপকে সুসংহত করেছে, রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া লক্ষ লক্ষ বার দ্রুত সঞ্চালিত হচ্ছে। কৃত্রিম এনজাইম তৈরির জন্য, প্রাকৃতিক এনজাইমগুলির গঠন, তাদের কর্মের পদ্ধতি এবং উন্নত প্রোটিন প্রকৌশল কৌশলগুলির একটি ব্যাপক বোঝার প্রয়োজন। ২০১৪ সালে সিনথেটিক বায়োলজি ফিল্ডের গবেষকগণ একটি অসাধারণ বিষয় আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন। প্রথমবারের মত তারা প্রকৃতিতে না থাকা কৃত্রিম জেনেটিক মেটারিয়াল থেকে এনজাইম প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর এই গবেষণাটি কেবল পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব সম্পর্কিত ধারণাই প্রদান করে নি, সেই সাথে বাইরের গ্রহে এলিয়েনদের খোঁজা সম্পর্কেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও সামনে তুলে এনেছিল।
গবেষণাটির মূল ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল আরও দুই বছর আগে যখন যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীগণ ডিএনএ এর একটি কৃত্রিম সংস্করণ তৈরি করে দেখান। এই ডিএনএ অণুটি হল সেই অণু যা পৃথবীর সকল জীবিত কিছুর জেনেটিক তথ্য বহন করে, আর এর সবচেয়ে নিকটসম্পর্কীয় ভাইটি হচ্ছে আরএনএ। এই সিন্থেটিক জেনেটিক মেটারিয়ালটি তৈরি করা হয়েছিল সেইসব বিল্ডিং ব্লক বা উপাদানগুলো দিয়ে যেগুলো ডিএনএ ও আরএনএ-তেই পাওয়া যায়। কিন্তু গবেষকগণ এই উপাদানগুলোকে জুড়ে দিয়েছিলেন ভিন্ন অণু দিয়ে। আর এর ফলেই প্রস্তুত হয়েছিল কৃত্রিম জেনেটিক মেটারিয়াল। বিজ্ঞানীগণ এর নাম দিয়েছিলেন এক্সএনএ (XNA – জেনো নিউক্লিইক এসিড)। এটাও ডিএনএ এর মতই জেনেটিক ইনফরমেশন সংরক্ষণ করতে সক্ষম। যদিও এটা বিজ্ঞানমহলে মনে করা হয় যে, কেবল ডিএনএ, আরএনএ এবং প্রোটিনই এনজাইম প্রস্তুত করতে পারে, গবেষকগণ দেখিয়ে দিলেন এই এক্সএনএ-গুলো দিয়েও এনজাইম তৈরি করা সম্ভব। এই তৈরি এনজাইমগুলোর নাম দেয়া হয়েছে “এক্সএনএজাইমস” (XNAzymes)। এই এনজাইম প্রাকৃতিক এনজাইমগুলোর মতই আরএনএ এর বিটগুলোকে কাটতে ও জোড়া লাগাতে সক্ষম। এনজাইম একটি জৈব অনুঘটক যা অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলির একটি স্ট্রিং(ইন্টারনেটে পাইছি কি জিনিস জানি না) থেকে তৈরি, যা নির্দিষ্ট ত্রিমাত্রিক প্রোটিন কাঠামোর মধ্যে ভাঁজ করে। বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য ছিল একটি নির্দিষ্ট রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্য একটি এনজাইম তৈরি করা যার মাধ্যমে একটি প্রোটন (একটি ইতিবাচকভাবে চার্জকৃত হাইড্রোজেন পরমাণু) কার্বন থেকে সরানো হয়। অসংখ্য প্রক্রিয়াগুলির জন্য এটি একটি প্রতিক্রিয়া এবং রেট-নির্ধারণ পদক্ষেপ যা কোন এনজাইম বর্তমানে বিদ্যমান নয়, তবে যা প্রতিক্রিয়া গতিতে সাহায্য করতে উপকারী হবে।
প্রথমেই গবেষণা দলের প্রয়োজন এনজাইম্যাটিক মেশিনের সক্রিয় হৃদয় সক্রিয় সাইট - যেখানে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া সংঘটিত হয়। দ্বিতীয়ত এনজাইমের আকার-চেহারা তৈরি করা, অর্থাৎ, প্রোটিনের গঠনকে তৈরি করে এমন ২০০ টি অ্যামাইনো অ্যাসিডের ক্রম নির্ধারণ করতে। ২০০ এর স্ট্রিংগুলিতে ২০ টি ভিন্ন ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিডের ব্যবস্থা করার অসীম সংখ্যক উপায় রয়েছে ঠিকই কিন্তু এটি মোটেও কোনো সহজ কাজ ছিল না। তবে বাস্তবিকই অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলির ক্রম নির্ধারণের জন্য কেবলমাত্র সীমিত সংখ্যক সম্ভাবনা উপলব্ধ রয়েছে। এনজাইম তার নির্দিষ্ট কার্যকলাপ নির্ধারণ করে। লক্ষ লক্ষ অনুক্রম সম্ভাবনার স্ক্যান করার জন্য নতুন কম্পিউটেশনাল পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন, যা প্রায় ৬০ কম্পিউটেশনাল ডিজাইনকৃত এনজাইমগুলি চিহ্নিত করেছিল যা উদ্দেশ্যমূলক ক্রিয়াকলাপ চালানোর সম্ভাবনা ছিল। এই ৬০ ক্রম পরীক্ষিত, পরবর্তী 'বৃত্তাকার' আট উন্নত জৈবিক কার্যকলাপ দেখিয়েছেন। এই আটটি অবশিষ্টগুলির মধ্যে তিনটি ক্রম 'চূড়ান্ত পর্যায়ে' পৌঁছায় যা সর্বাধিক সক্রিয় বলে প্রমাণিত হয়। সোর্স অনুসারে, উইজম্যান ইনস্টিটিউটের স্ট্রাকচারাল জীববিজ্ঞান বিভাগের অর্লি ডাইম এবং শীরা আলবেক চূড়ান্ত প্রতিযোগীদের মধ্যে একটির গঠনকে সমাধান করেছিলেন এবং নিশ্চিত করেছিলেন যে তৈরি এনজাইম ভবিষ্যদ্বাণীমূলক নকশাটির প্রায় অনুরূপ। নতুন এনজাইমের দক্ষতা লক্ষ লক্ষ বছর ধরে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন এনজাইমের সাথে এর তুলনা করতে পারেন। এখানেই মানবজাতি প্রকৃতির প্রতিযোগিতা হারানোর প্রান্তে ছিল। তাদের পদ্ধতিটি র্যান্ডম মিউটেশনগুলির পুনরাবৃত্ত রাউন্ডের উপর ভিত্তি করে মিউট্যান্ট এনজাইমগুলি স্ক্যান করার পরে দক্ষতার মধ্যে সর্বাধিক উন্নতি দেখানোর জন্য অনুসরণ করে। এই এনজাইম তারপর মিউটেশন এবং স্ক্রীনিং আরও বৃত্তাকার ছিল। ফলাফলগুলি দেখায় যে কম্পিউটারে পরিকল্পিত টেমপ্লেটটির দক্ষতার তুলনায় এনজাইমের দক্ষতা ২০০ গুণে উন্নত করার জন্য পরীক্ষার টিউবে মাত্র সাতটি বৃত্তাকার বিবর্তন দেখা দেয়, যার ফলে প্রতিক্রিয়া হারে মিলিয়ন গুণ বৃদ্ধি ঘটে। একটি এনজাইম অনুপস্থিতিতে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে এনজাইম এর সক্রিয় সাইটে আশেপাশের এলাকায় যে পরিবর্তন ঘটেছে তার ক্ষুদ্র কাঠামোগত। এর ফলে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া হার বেড়েছে। অতএব, এই রূপান্তরগুলি মূল নকশাগুলির অভাবের আলোকে আলোড়ন সৃষ্টি করে, কম্পিউটেশনাল ডিজাইনের ত্রুটিগুলি সংশোধন করতে পারে বলে মনে হয়। অন্যান্য পরিবর্তনগুলি এনজাইমগুলির নমনীয়তা বাড়িয়েছে, যা সক্রিয় সাইট থেকে সাবস্ট্রিট মুক্তির গতি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেছে।প্রাকৃতিক এনজাইমগুলির উত্তেজনাপূর্ণ ক্রিয়াকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করা একটি কঠিন কাজ, তবে কৃত্রিম নকশা এবং আণবিক সংশ্লেষের সংশ্লেষে সিন্থেটিক এনজাইম তৈরিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।
মানুষ অনেক ধররনের কাজ করেন। এর বেশির ভাগ কাজেই ব্যবহার করেন হাত। হাত দিয়ে কোনো পদার্থের রূপ বদলে দিতে পারে। যেমন: কুমোর। আবার হাতের আকার-আকৃতিও পরিবর্তন করতে পারে। কীভাবে? ধরো তুমি মোবাইল ধরেছো এখন তোমার হাত এক ধরনের আকার আবার যখন এক হাত দিয়ে কাজ করে তখন আরেক। আবার ধরো মেসি তোমার সামনে প্যালান্টি শুট করছে। ক্রস বার ঘেষে গোলে ঢুকছে কিন্তু তুমি পাঞ্চ দিয়ে গোল থেকে বাঁচিয়েছো। এক্ষেত্রে তোমার হাতের আকার আবার পাল্টে গেছে। মেসির মিস এখানে বড় ব্যাপার না। আমরা এনজাইমের কথায় যাই। আমাদের হাতের মতো এনজাইমেরও আছে সক্রিয় স্থান। পলিপেপটাইড চেইনের ফলডিং এর মাধ্যমে এই অ্যাক্টিভ সাইট সৃষ্টি করে। এনজাইমের এই সক্রিয় অংশের সাথে সাবস্ট্রেট যুক্ত হয়। এটাকে তালা-চাবির মতো সুনিদির্ষ্ট নয়। তাই, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এনজাইমের অ্যাক্টিভ সাইটে সাবস্ট্রেট সঠিকভাবে ফিট হয় না। এখন কি হবে? মনে করেন সেই হাতের উদাহরণের কথা। বুঝলেন তো। হ্যাঁ, পুরো এনজাইমের আকার পরিবর্তন হয় এবং অ্যাক্টিভ সাইটে ফিট কর নেয়। একে বলে 'Inducd fit'। এটির জন্য বিক্রিয়াটি সূচারুরূপে সম্পন্ন হতো না। এবার এনজাইম-সাবস্ট্রেট যৌগ গঠন করে ফেলল। এরপর? এরপর এই যৌগ ভেঙ্গে যায় এবং নতুন যৌগ গঠন করে এবং এনজাইম আগের অবস্থায় ফেরত আসে। যে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্পন্ন করতে কিছুটা অতিরিক্ত শক্তি লাগে । একে বলে কার্যকারী শক্তি। এনজাইম-সাবস্ট্রেট এর কার্যকারী শক্তি কম। তাই কম শক্তিসম্পন্ন সাবস্ট্রেট যৌগ গঠন করায় বিক্রিয়ার হার বেড়ে যায়। কেউ কাউকে উপকার করবে আর তাতে কোনো বাধা আসবে না তো আজকাল ভাবাই পাপ। তেমনি এনজাইমকে উপকারে বাধা দিতে আসে কিছু পদার্থ আসে। এদের বলা হয় ইনহিবিটর। এই ইনহিবিটর এনজাইমকে মিথ্যা প্রেমের অভিনয় করে এনজাইমের সক্রিয় অংশের সাথে বাধন তৈরি করে। অ্যাক্টিভ সাইট নষ্ট করে। হিরোইন কেদেঁ ফেলে এবং অন্য কাউকে খুঁজে।
এখন কথা হলো আর এনজাইম কার্যকারিতা কখনো নষ্ট হয় কিনা! হলে কীভাবে? এটি বৃদ্ধিরও বা উপায় কী?
প্রথমত এরা তাপপ্রবন। 35-40 ডিগ্রি অধিক সক্রিয়। বেশি তাপে নষ্ট হয়ে যায়। pH 6-9 সবচেয়ে ক্রিয়াশীল। অতি ক্ষার বা এসিডে নষ্ট হয়। পানির অভাবে নষ্ট হয়। অতিবেগুনি রশ্নিতেও নষ্ট হয়। এনজাইম ও সাবস্ট্রেটের ঘনত্বের উপরও নির্ভর করে। আরও অনেক কিছু আছে।
Writer: Nur-a Nayeem Shanto
Tags:
Biology