শৌচাগারবৃত্তান্ত (পর্ব ২)


১।
বাঘের দুধ আর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা- এই দুয়ের পার্থক্য কী? দ্বিতীয়টা টাকা থাকলেই মেলে না।
আফ্রিকার কিছু জায়গায় মানুষের পাকা বসতবাড়ি, স্মার্টফোন, টিভি, মায় গাড়ি পর্যন্ত আছে। নেই শুধু বাথরুম।
এর কারণ আপনি যদি আজকে আইফোনের সর্বশেষ মডেলটা কিনতে চান, আপনার দরকার শুধু দু'টো জিনিস- পয়সা আর সদিচ্ছা। আপনার টাকা দিতে আপত্তি না থাকলে স্টিভ জবসের দলবলেরও আইফোন দিতে আপত্তি নেই। এটি একটি সহজ চুক্তি। অন্যদিকে পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য শুধু কমোড বা বাথরুম কেনার টাকা থাকলেই হবে না। কমোডের পদার্থের একটা যাওয়ার রাস্তা থাকতে হবে। সেই রাস্তাটা হল মাটির নিচে হাজারটা পাইপের একটা জটিল অন্তর্জাল। এরকম একটা পাইপ সিস্টেম আপনার-আমার-হাজারজনের বর্জ্য বহন করে পরিশোধন করে নদী বা সমুদ্রে ফেলতে পারলে তবেই পয়ঃনিষ্কাশন হাসিল হবে। একটা মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করার হ্যাপা এর চেয়ে অনেক কম, যে কারণে পৃথিবীর অনেক জায়গায় আইফোনের সহজলভ্যতা পয়ঃনিষ্কাশনের চেয়ে বেশি।
অবশ্য এর চেয়ে সহজ আরেকটা রাস্তা আছে, যদিও সেটা শহুরে মানুষের চেনা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার চেয়ে একটু ভিন্ন। এই ব্যবস্থায় বর্জ্যকে দূরে কোথাও নেওয়ার দরকার নেই- মাটির নিচেই একটা গর্তের মধ্যে জমিয়ে রাখা হয়। এর জন্য কমোডের নিচে একটা বিশাল গর্ত খুঁড়ে রাখতে হবে। পরিবারের সবার বর্জ্য দিনকে দিন সেখানে জমা হতে থাকবে। সেই বর্জ্য জমতে জমতে সার হয়ে গেলে তারপর সেটা তুলে মাঠে ময়দানে বা পানিতে ফেলে দেওয়া যাবে।
একদিক থেকে দেখলে এটা আমাদের পরিচিত পয়ঃনিষ্কাশনের মত নয়, কারণ এখানে বর্জ্যটা ঠিক দূরে যাচ্ছে না, ব্যবহারকারীর কমোডের নিচেই জমা হচ্ছে। কিন্তু পয়ঃনিষ্কাশনের যে মূল লক্ষ্য- বর্জ্য যেখানে-সেখানে ছড়িয়ে না রেখে নিরাপদ এক জায়গায় জড় করা- সেটা কিন্তু এখানে হাসিল হয়ে যাচ্ছে। এটাকেই বলে 'পিট ল্যাট্রিন'। পিট বলতে কমোডের নিচের বিশাল গর্তটাকে বোঝানো হয়। বাংলাদেশের গাঁয়েগঞ্জে তো বটেই, এমনকী ঢাকারও অনেক জায়গাতেও এই ব্যবস্থা ব্যাপকহারে প্রচলিত। এই জিনিস বানানো মানে গর্ত খোঁড়ার পয়সাটুকুই।
আমার মতে জনস্বাস্থ্য গবেষণার সবচেয়ে মজার এবং একই সাথে সবচেয়ে হতাশাব্যঞ্জক দিক হচ্ছে এর প্রায় প্রত্যেকটা প্রযুক্তিরই কোন না কোন একটা বুমেরাং দিক থাকে। নতুন কোন আবিষ্কারের জন্য একদিক থেকে সমাজের উন্নতি হয়, একই সাথে অন্যদিক থেকে আরেকটা ঝামেলা দেখা যায়। নলকূপ খুঁড়ে আমাদের পানিবাহিত রোগের সমস্যা অনেকখানি দূর হয়েছিল, কিন্তু অন্যদিক থেকে আর্সেনিক সমস্যা শুরু হল। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে সংক্রামক রোগব্যাধি অনেকদূর পর্যন্ত ঠেকানো গেল, কিন্তু আবার অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এসে নতুন ঝামেলা বাঁধিয়ে দিল। এমনকি যেসব সমাধানে আমরা মনে করি একদম কোন ধরণের কিন্তু নেই- যেমন শিশুদেরকে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা- ইদানিং শোনা যাচ্ছে সেটারও খারাপ দিক থাকতে পারে। ছোটবেলায় যদি শিশুদের দেহ অন্তত কয়েকটা বিশেষ রোগজীবাণুর সাথে মোলাকাত করে, তাহলে আখেরে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল হয়। কাজেই অতিরিক্ত পরিচ্ছন্নতাও হয়ত সবসময় ভাল নয়।
বাস্তব জীবনে আসলে খুব কম ক্ষেত্রেই আমাদের সমস্যাগুলোকে সুন্দর বাক্সবন্দী করে ফেলা যায়।
পিট ল্যাট্রিন ব্যবস্থাও এর ব্যাতিক্রম নয়। যদিও এর মাধ্যমেই বাংলাদেশসহ পৃথিবীর আরও অনেক দেশে পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যার সমাধান হয়েছে বা হচ্ছে, কিন্তু এই প্রযুক্তির কিছু দিক প্রশ্নবিদ্ধও হয়েছে। এর কয়েকটা দিক বোঝা সহজ। যেহেতু ল্যাট্রিনের নিচের গর্তটা ময়লা জমে ভরাট হতে থাকে, কাজেই সময় সময় ময়লাগুলো ফেলে গর্তটা খালি করে দেওয়ার প্রয়োজন হয়। বুঝতেই পারছেন এই প্রক্রিয়া ভীষণ নোংরা, এবং নিরাপদে ব্যাপারটা করা না হলে এটা রোগব্যাধি ছড়ানোর কারণ হতে পারে। উপমহাদেশের কিছু সমাজে এই কাজের ভিত্তিতে শ্রেণীবিদ্বেষও চলে, বর্জ্য পরিষ্কারকদের অস্পৃশ্য ভাবা হয়। বর্ষাকালে একটু যদি বৃষ্টিবাদলা বেশি হয়- তখন মাটির নিচ থেকে এই বর্জ্য বের হয়ে এসে উঠান ভরিয়ে দেয়, দেখে মনে হয় নরকের খানিক অংশ উঠে এসেছে। অনেক অতি বুদ্ধিমান পরিবার নিচের গর্তের কিছু অংশ কেটে একটা নালা বানিয়ে দেন। সেই নালার শেষ মাথা থাকে পুকুর বা নদীতে। এর মানে কার্যত নদীর মধ্যেই মলত্যাগ করা হচ্ছে।
এই সমস্যাগুলো গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু মোটের ওপর সমাধানযোগ্য। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো এসেছে এমন দিক থেকে, যার কথা আমরা আগে ভাবতেই পারিনি।

২।
পৃথিবীর উপরিভাগের সত্তর ভাগ পানি হলেও সে পানি মুখে দেবার জো নেই।
ব্যতিক্রম ভূগর্ভস্থ পানি। এই পানি কাদামাটির ছাঁকনি দিয়ে হাজার বছর ধরে ফিল্টার হয়ে মাটির গভীরে জমা হয়। সেখানে কোন রোগজীবাণু ঢোকার রাস্তা নেই। একটু গভীর থেকে পানিটা তোলা সম্ভব হলে আর্সেনিকেরও সেরকম ভয় থাকে না। মানুষের নিরাপদ ব্যবহারের জন্যই যেন কোটি কোটি লিটার বিশুদ্ধ পানি মাটির নিচে প্যাকেট করে রাখা- শুধু স্ট্র বসিয়ে তুলে নেওয়ার অপেক্ষায়। ভূগর্ভস্থ পানি জিনিসটা তাই অনেক ক্ষেত্রে সোনার চেয়েও দামি।
এই মহামূল্যবান পানি নিয়ে ভয় শুধু একটাই- কোন কারণে যদি মাটির নিচে থাকা অবস্থায় এটা দূষিত হয়ে যায়। মাটির নিচে পানি পরিশোধনের কোন ব্যবস্থা নেই।
ভারতে যখন দেশময় পিট ল্যাট্রিন ছড়িয়ে দেওয়ার কথা চলছে, একদল বিজ্ঞানী এই চিন্তা করেই ব্যাপারটাতে বাদ সাধলেন। তারা বললেন- পিট ল্যাট্রিন ব্যবস্থায় মাটির নিচে বর্জ্য জমা হয়। এই বর্জ্য রোগজীবাণুতে গিজগিজ করে। কাজেই সেখান থেকে রোগজীবাণু কাদামাটির ফাঁক গলে ভূগর্ভস্থ পানির মধ্যে গিয়ে পৌঁছবে- এটা অসম্ভব নয়। পিট ল্যাট্রিন ব্যবস্থা মানেই তাই ভূগর্ভস্থ পানিকে বিপন্ন করা। এর সমাধান হিসেবে তারা বললেন, পিট ল্যাট্রিন বসাতে হলে নলকূপ থেকে একটা নিরাপদ দূরত্বে বসাতে হবে। সেই নিরাপদ দূরত্বটা কারো মতে ত্রিশ ফুট, কারো মতে পঞ্চাশ ফুট।
অনেকে ভাবতে পারেন- তাহলে এটা এমন কোন বড় সমস্যা নয়। নলকূপ আর ল্যাট্রিন একটু জায়গা রেখে বসালেই হল। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এটা বেশ বড় সমস্যা।
নিচের ছবিটাতে দেখতে পাচ্ছেন রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের একটা ক্যাম্পের মানচিত্র। একদল নিবেদিতপ্রাণ গবেষক ও মাঠকর্মী মিলে এসব ক্যাম্পের নলকূপ ও ল্যাট্রিনগুলোর ম্যাপ বানিয়েছেন। ম্যাপের প্রত্যেকটা লাল বৃত্তের মানে হল নলকূপ থেকে অনিরাপদ দূরত্বে বানানো ল্যাট্রিন। এত এত মানুষ হঠাৎ করে এক জায়গায় এসে পড়লে এলাকার ব্যবস্থাপনায় এদিক ওদিক হবেই। এখানে সেটাই হয়েছে- গজফিতে দিয়ে মেপে ল্যাট্রিন বসানো হয়নি, প্রয়োজনমাফিক যেখানে যত দরকার ইতস্তত গর্ত খুঁড়ে ফেলা হয়েছে।
এর পরিণতি জানতে হলে আরেক টুকরো বিজ্ঞানের দিকে তাকাতে হবে।
আইসিডিডিআর,বির একদল গবেষক এই ল্যাট্রিন থেকে ভূগর্ভস্থ পানি দূষণের দুশ্চিন্তাটা আরেকটু খতিয়ে দেখতে চেয়েছিলেন। এই গবেষণার একজন গুরুত্বপূর্ণ কনসালটেন্ট ছিলেন পিটার র্যাভেন্সক্রফট বলে এক ভদ্রলোক। এই র্যাভেন্সক্রফটই আশির দশকে প্রথম আমাদের নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের হদিস পেয়েছিলেন।
গবেষণার প্রক্রিয়া ছিল এরকম। প্রথমে পিট ল্যাট্রিন ব্যবহারে অভ্যস্ত একটা বসতবাড়িতে গিয়ে তাদের জন্য নতুন আরেকটা পিট ল্যাট্রিন গড়ে দেওয়া হল। তারপর তাদের বলা হল- আপনাদের পুরোনো ল্যাট্রিনটাতে তালাচাবি দিয়ে দিন। আজ থেকে পরিবারের সবাই শুধু নতুন ল্যাট্রিন ব্যবহার করবেন। এরকম একটা আনকোরা নতুন ল্যাট্রিন পেয়ে পরিবারের মানুষ খুশিই হন। তারা সেদিন থেকেই এখানে মলত্যাগ করতে লেগে যান, আর বর্জ্য গর্তের ভেতর জমা হতে থাকে।
এবার গবেষকদের কাজ হল এই গর্তে জমা হতে থাকা রোগজীবাণু আশেপাশের পানিকে কতটা দূষিত করছে সেটা তলিয়ে দেখা। এর জন্য তারা ল্যাট্রিনের গর্তের চারদিকে একরাশ নলকূপের নল বসিয়ে দেন। নলগুলো বসানো হয় ল্যাট্রিন থেকে বিভিন্ন দূরত্বে ও গভীরতায়, যাতে মেপে দেখা যায় গর্তের রোগজীবাণু কোনদিকে কীভাবে যাত্রা করছে। ল্যাট্রিন খোলার পর থেকেই প্রত্যেক মাসে একবার এই নলগুলো থেকে পানি তুলে পরীক্ষা করে দেখা হল কোথায় জীবাণুর পরিমাণ কীরকম। পানির দূষণ 'মনিটর' করার জন্য নলগুলো বসানো বলে এদের নাম 'মনিটরিং ওয়েল'।
এভাবে টানা কয়েক বছর ল্যাট্রিনের চারদিকে ভূগর্ভস্থ পানিতে দূষণের পরিমাণ হিসেব করতে করতে মোটামুটি বিজ্ঞানীরা জীবাণুর গতিপথ সম্পর্কে একটা ধারণা করে ফেললেন।
এই গবেষণার মূল ফলাফলটা এরকম।
ল্যাট্রিনের দু-পাঁচ মিটারের মধ্যে নলকূপ বসালে পানিতে কিছু দূষণ হতে পারে বৈকি। কিন্তু দশ মিটারের মত দূরত্বে অতটা ভয় থাকে না। কিন্তু তার চেয়েও আশ্চর্য বিষয়- গবেষকেরা দূষণের হার নিয়ে কিছু জটিল হিসেবনিকেশ করে দেখিয়েছেন, ল্যাট্রিন থেকে ভূগর্ভস্থ পানি দূষণের কারণে রোগব্যাধি বাঁধানোর সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে নিতান্তই কম।
এর কারণ পানির আসল দূষণটা মাটির নিচে হয় না, হয় মাটির ওপরে, গৃহস্থালী পরিবেশে। আপনি যখন মাটির নিচ থেকে পানি তুলছেন, সেখানে হয়ত পিট ল্যাট্রিনের রোগজীবাণু কদাচিৎ এক আধটা পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু যখন আপনি নলকূপ নিয়মিত পরিষ্কার করছেন না, ভেতরের পাইপগুলো স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা করে রাখছেন, কলসভরা পানি খোলা অবস্থায় বাসায় ঘন্টার পর ঘন্টা রেখে দিচ্ছেন, সেই পানিতে বাচ্চার হাত বা কুকুরের মুখ পড়ল কিনা অত নজর রাখছেন না- এগুলোর ফলে পানির দূষণে সম্ভাবনা কয়েকগুণ বেশি বেড়ে যাচ্ছে। গবেষকদের গাণিতিক মডেল অনুযায়ী, পিট ল্যাট্রিনের কারণে মোটামুটি পাঁচ মিটারের বেশি দূরবর্তী একটা নলকূপের পানি দূষিত হবার সম্ভাবনা মোটে পাঁচ শতাংশ। কিন্তু পানি বা নলকূপের অব্যবস্থাপনাজনিত দূষণের সম্ভাবনা চল্লিশ থেকে ষাট শতাংশ।
অনেক সময় প্রযুক্তির কারণে হিতে বিপরীত হয় বটে। কিন্তু মাঝেমধ্যে আমরা বোধহয় ভাল জিনিসের পাঁচ শতাংশ ক্ষতি নিয়ে অতিরিক্ত উতলা হয়ে পড়ি।

৩।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর কমসে কম এক তৃতীয়াংশ বসতবাড়িতে রাখা পানি বিপজ্জনক মাত্রায় দূষিত।
এই গবেষণাটাও হয়েছে আইসিডিডিআর,বি থেকে। গবেষকরা শরণার্থী শিবিরে প্রায় তের হাজার পানির নমুনা পরীক্ষা করে এই মত দিয়েছেন।
কিন্তু তারা যখন এই বাড়িগুলোর নলকূপ থেকে সরাসরি পানি পরীক্ষা করতে গেলেন- দেখা গেল অধিকাংশ নলকূপের পানিই নিরাপদ। একই বসতবাড়ি, নলকূপের পানি নিরাপদ, কিন্তু সেই নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করে বাসার কলসে রাখার পর সেটা হয়ে যাচ্ছে দূষিত। মানে ঝামেলাটা বাঁধাচ্ছে মানুষ। এই গবেষণাও একই সুর গাইছে- পানি দূষণের মূল সমস্যাটা হল অপরিচ্ছন্নতা আর গেরস্থালী খামখেয়ালী, মাটির নিচের কোন দস্যু নয়। তাও যে ক'টা ক্ষেত্রে নলকূপ থেকে সরাসরি সংগ্রহ করা পানিতে দূষণ দেখা গেছে, গবেষকেরা দেখেছেন- নলকূপের ভেতরটা পুড়িয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিলেই সেই পানি আবার নিরাপদ হয়ে যায়।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পিট ল্যাট্রিন আর নলকূপের দূরত্বের এত মারাত্মক অব্যবস্থাপনার পরেও তাহলে দেখা যাচ্ছে, ভূগর্ভস্থ পানিতে আদতে বলার মত সেরকম দূষণ নেই।
খামোখা ল্যাট্রিনের ভয়ে বিজ্ঞানীদের এতগুলো সময় বোধহয় নষ্ট হল। পানি দূষণ সমস্যার প্রধান হোতা হল মানুষ ও তার অভ্যাস। রোহিঙ্গা শিবিরের অপরিসীম কষ্টের মধ্যে এই অভ্যাসগুলোই সমস্যা আরো অনেক বাড়িয়ে দিচ্ছে।
শৌচাগার এখানে কোন কথা নয়। পৃথিবীময় তার ক্রমবৃদ্ধি হোক।
------------------------------------------
দ্বিতীয় পর্বের পরিশিষ্ট ও তথ্যসূত্র
বিল গেটস তার ফাউন্ডেশান থেকে কিছুদিন আগে একটা প্রতিযোগিতার ডাক দিয়েছিলেন- Re-Invent the Toilet Challenge, যার উদ্দেশ্য ছিল সাশ্রয়ী পরিবেশবান্ধব টয়লেট আবিষ্কার। এই প্রতিযোগিতাগুলো মোটামুটি স্কুল-কলেজের বিজ্ঞান মেলার মত। পার্থক্য একটাই- বিজয়ী দল কয়েক মিলিওন ডলার অনুদান পায়।
এই প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়েছিলেন ভার্জিনিয়া গার্ডিনার ও তার দলবল। তাদের টয়লেটের নকশার সাথে পিট ল্যাট্রিন ব্যবস্থার মিল আছে। মূল পার্থক্য দু'টো। এক, আমাদের নিত্যদিনের ব্যবহার্য কমোডের নিচে কিছু পানি সবসময় জমে থাকে, এবং পয়ঃনিষ্কাশনের প্রক্রিয়াটাতেও (মানে ফ্লাশ করলে) পানির খরচ হয়। গার্ডিনারের টয়লেটে এসব অপচয় নেই। দুই, প্রত্যেকটা টয়লেটের সাথে একটা ডাইজেস্টার যুক্ত থাকে, যার মাধ্যমে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। ইউটিউবে Loowatt লিখে সার্চ দিলেই জিনিসটার ভিডিও পেয়ে যাবেন।
যে গবেষণাপত্রদু'টোর কথা বললাম-
Ravenscroft P, Mahmud ZH, Islam MS, Hossain AK, Zahid A, Saha GC, Ali AZ, Islam K, Cairncross S, Clemens JD, Islam MS. The public health significance of latrines discharging to groundwater used for drinking. Water research. 2017 Nov 1;124:192-201.
Mahmud ZH, Islam MS, Imran KM, Hakim SA, Worth M, Ahmed A, Hossan S, Haider M, Islam MR, Hossain F, Johnston D. Occurrence of Escherichia coli and faecal coliforms in drinking water at source and household point-of-use in Rohingya camps, Bangladesh. Gut pathogens. 2019 Dec;11(1):1-1.
সবশেষে, বিশেষ করে এখনকার বিশ্বের প্রেক্ষিতে পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যা, বিভিন্ন সমাধান, সমাধানের পিঠে সমস্যা, পয়ঃনিষ্কাশনের ভবিষ্যত- ইত্যাদি সম্পর্কে চমৎকার একটা প্রবন্ধ মোজাইক সায়েন্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

Mosaic Science এর প্রবন্ধ- https://mosaicscience.com/story/poo-toilet-waste-energy-madagascar-loowatt-future/

Writer: Hassan uz Zaman Shamol   

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম