তখন রাজাদের যুগ ছিল। যুদ্ধ লেগেই থাকত। সে সময় শুধু রাজারাই পরামর্শক ব্যবহার করত না মন্ত্রী এমনকি কিছু প্রজারাও পরামর্শক ব্যবহার করত। মূলত পরামর্শকরাই ছিলো ক্ষমতাধর। তারা হা বললে হা, না বললে না। কিন্তু পরামর্শক কখনো কোন যুদ্ধে যেত না শুধুই পরামর্শই দিতো এমনকি হাত-পাও ছিল না তাদের । যাই হোক রাজা অদল-বদল হতো তারা থেকেই যেত। তারা তাদের কাজ করেই যেত অপরিবর্তিত ভাবে।
জন্ম তো অনেক আগেই হয়ে গিয়েছিল তার। কিন্তু লুকিয়ে বাঁচিয়ে থাকত তাই কেউ তাকে ১৮৩৩ সালের আগে জানতে পারেনি কিন্তু সে ঠিকই সাহায্য করে যেত। তখন ১৮৩৩, ফ্রান্সের একটি চিনি ফ্যাক্টরিতে রসায়নবিদ Anselme Payen এবং Jean-Francois Persoz তাদের একজনকে দেখে নেয়। তারা পেয়ে গেল সুযোগ। তাকে তাই ধরে রেখে নামকরণের কাজ শুরু করে দেয়। এবং নিজেকে এর পিতা হিসেবে দাবিও করে। যাই হোক সবাই তা মেনে নেয়। পিতার দায়িত্ব হিসেবে তার নাম দেয় 'Diastase'. যা গ্রীক শব্দ 'διάστασις' থেকে। যার অর্থ ' a parting, a separation'! সেই থেকে পরামর্শকের দায়িত্ব পেল। তার অন্য ভাইরা ভাবল খারাপ কি। ধীরে ধীরে সবাইকে আবিষ্কার করল। ধীরে ধীরে একটা জাতির মতো হয়ে উঠল এখন জাতিরও তে একটা সাধারণ নাম দিতে হয়। কিন্তু তখন কেউ এলো না।দীর্ঘ ৪৫ বছর তার ভাই-বোনদেরও এই নামেই পরিচিত ছিল।কিন্তু কতদিন অন্যের পরিচয় নিয়ে থাকবে! এমন এগিয়ে এলেন এক কুন নামের বিজ্ঞানী এবং এই প্রোটিনের তৈরি জাতির নাম দিলেন এনজাইম। জানেনই জাতিসংঘের কথা। এ জাতিরও এক সংঘ ছিলো 'চিনি গাজন সংঘ'। এই সংঘের এক অধিবেশনে খুঁজে পায় চিনিতে তলিয়ে যাওয়া ভাই 'জাইমেজ'কে। জাইমেজ আবার খুব বিজ্ঞানপ্রিয়। যাই হোক এটা নিয়ে পরে কথা বলব। একটু মাঝে সংজ্ঞাটা জেনে নেই:
'যে প্রোটিন জীবদেহে অল্পমাত্রায় বিদ্যমান থেকে বিক্রিয়ার হারকে ত্বরান্বিত করে কিন্তু বিক্রিয়ার পর নিজেরা অপরিবর্তিত থাকে, তাই হলো এনজাইম।' আমার লেখা এই এনজাইমকে নিয়ে। ডুব দেব 'পিছনে আছি আপনি এগিয়ে যান' স্লোগানে বিশ্বাসীদের জগতে। তাদেরও আছে জন্ম, আছে মৃত্যু আর স্বভাবতই কর্ম তো আছেই।
এনজাইম মানেই প্রোটিন এবং এনজাইম ও প্রোটিন অনু জিন কর্তৃক সৃষ্ট । এই প্রোটিনে 600 অ্যামিনো এসিড একটি নির্দিষ্ট সাজ অনুযায়ী সজ্জিত। অ্যামিনো এসিডের ভিন্ন ভিন্ন সাজ পদ্ধতির জন্যই বহু বৈচিত্র্যময় এনজাইম তৈরি হয় এবং এক একটি এনজাইম এক একটি সুনির্দিষ্ট জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্য দায়ী।তাই এনজাইমের এই জগতে প্রায় সবই প্রোটিন জাতীয়। তাই বলা যায়, এনজাইমসমূহের মূল গাঠনিক উপাদান প্রোটিন গঠনকারী অ্যামিনো এসিড। যেখানে অ্যামিনো এসিড ও অনুক্রম সংখ্যা সুনির্দিষ্ট। জীবকোষে এরা থাকে কলয়েড রূপে। এদের মধ্য অল্প পরিমানে অপ্রোটিন দ্রব্য থাকবে না তা নয়। অপ্রোটিন যুক্ত এনজাইমদের আবার বলে কনজুগেটেড প্রোটিন বা যৌগিক এনজাইম বলে। কনজুগেটেড প্রোটিনের প্রোটিন অংশকে বলে অ্যাপোএনজাইম। আর অপ্রোটিন অংশকে বলে প্রোসথেটিক গ্রুপ। অর্থাৎ অ্যাপোএনজাইম আর প্রোসথেটিক গ্রুপ একত্রে মিলে হয় কনজুগেটেড এনজাইম। যেমন: NAD, FAD। সম্পূর্ণ প্রোটিন দিয়ে তৈরি হলে একে বলে সরল এনজাইম। যেমন: সুকরেজ, অক্সিডেজ
এনজাইমের নামকরণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক:
তিনটি ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে এনজাইমদের একে-অপরের ভাই-বোনদের নাম দেওয়া হয়।
১. সাবস্ট্রেট-এর ধরন অনুসারে: এনজাইম যার ওপর ক্রিয়া করে তাকে বলা হয় সাবস্টেট। এটাকে এমনভাবে তুলনা করা যায় যারা আমিষ খায় তাদের বলে আমিষভোজী আর যারা খায় না তারা নিরামিষভোজী। তেমনি যে পদার্থের ওপর এনজাইম ক্রিয়া করে তার শেষে এজ যুক্ত হয়ে এনজাইমগুলোর নামকরণ করা হয়। কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে বোঝাই:
এনজাইম যখন 'সুকরোজ' এর উপর ক্রিয়া করে সেই এনজাইমের নাম হয় 'সুকরেজ' বা যদি 'ইউরিয়া'র উপর ক্রিয়া করে তাহলে একে বলে 'ইউরিয়েজ'।
২. বিক্রিয়ার ধরন অনুসার: এনজাইমের কাজ হলো বিক্রিয়ার হারকে ত্বরান্বিত করা। এই ত্বরান্বিত বা প্রভাবিত করার উপর ভিত্তি করে এদের নাম দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে বিক্রিয়ার প্রথমাংশে এজ যোগ করে নামকরণ করা হয়। যেমন:
রিডাকশন বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে রিডাকটেজ এনজাইম, অক্সিডেশন বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে অক্সিডেজ এনজাইম
৩. আরেকটা নামকরণ করা হয় ১ ও ২ নং এর বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকলে। সাধারণ বিক্রিয়াকে নিদির্ষ্ট বোঝাতে এ জাতীয় নামকরণ করা হয়। এর এক উদাহরণ দিয়ে শেষ করি:
সাবস্ট্রেট-এর হিসেবে এনজাইমের নাম হওয়ার কথা 'হেক্সোজ' আর বিক্রিয়ার হিসেবে ধরলে হয় 'কাইনেজ' এখন কি করা যায়!! একটা এনজাইমই একেক জায়গায় একেক তাই এর সাধারণ নাম দিতে দুটি একসাথে যুক্ত করে নাম দেয়া হয় 'হেক্সোকাইনেজ'।অনেকটা এমন হেক্সোজ আর কাইনেজ থেকে ইজ শব্দটা কমন নিয়ে এটা করা হয়। পর্বটা শুধু বইয়ের কথাই হয়ে গেল এর জন্য ক্ষমা প্রার্থী। পরেরটা ভালো করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব তবুও এমন একটা পর্ব লেখতেই হতো।
Writer: Nur-a Nayeem Shanto
Tags:
Biology