ক্যান্সার হলে মানুষ কেন মারা যায়?
ক্যান্সার নানা ধরনের হয়। শরীরের কোনো একটা কোষ মিউটেশনের ফলে অনিয়ন্ত্রিত বিভাজন বা uncontrollable cell Division করে যার কারণে একটা টিউমার তৈরি হয়। শুরুটা এভাবেই হয়। কখনো কখনো এই টিউমারটাই মারাত্মক ক্ষতিকর হয় শরীরের জন্য, যদি সেটা মস্তিষ্কে বা হৃৎপিণ্ডে হয়৷ তখন উক্ত অঙ্গ নিজেদের কাজ ঠিক মত করতে পারে না, মানুষটা মারা যায়।
তবে, অধিকাংশ সময়ই ক্যান্সার রোগীদের যা মেরে ফেলে তা হল metastasis. এটা কী? সহজভাবে বললে, যখন একটা টিউমারে থাকা হাজারটা কোষের মাঝে একটা দুটো কোষ কোনো কারণে মূল টিউমার থেকে আলাদা হয়ে রক্ত বা lymphatic system এ মিশে গিয়ে শরীরের অন্যত্র ছড়িয়ে পরে এবং সেখানে আবার টিউমার গঠন করে। এই ধরণের টিউমারকে বলা হয় malignant tumour. যেই টিউমার গুলো ছড়ায় না সেগুলোকে বলে benign tumour. Malignant টিউমার লিভার, হাড়, ফুসফুস, মস্তিষ্ক ইত্যাদি জায়গায় ছড়াতে পারে।
সমস্যা হচ্ছে এই যে নতুন নতুন জায়গায় যেয়ে নতুন টিউমার তৈরি হচ্ছে, আমাদের শরীর এত টিউমার সাপোর্ট দেয়ার ক্ষমতা রাখে না। সাপোর্ট মানে কী? মানে হল এই যে টিউমারের বাড়তি কোষ, এগুলোও তো খাবার খাবে, অক্সিজেন নেবে, বর্জ্য তৈরি করবে। তো এই অতিরিক্ত খরচ বা মেইন্টেন্যান্স আমাদের শরীর কুলিয়ে উঠতে পারে না। তখন দেখা যায় টিউমার যেই অঙ্গে হয়েছে সেটা কার্যক্ষমতা হারাচ্ছে এবং একপর্যায়ে মারা যাচ্ছে।
ক্যান্সারের ট্রিটমেন্টে এমন ঔষধ দেয়া হয় যেগুলো দ্রুত গতিতে ডিভাইড হওয়ার কোষকেই শুধু মেরে ফেলে। এটাতে আরেকটা সমস্যা যেটা হয় সেটা হচ্ছে যে, স্বাভাবিকভাবে চুলের ফলিকল কোষ, পাকস্থলী ও ইনটেস্টাইনের কোষও দ্রুত বিভাজিত হয়। সেক্ষেত্রে এই ঔষধ বা কেমোথেরাপি প্রয়োগে ওই কোষগুলোও মারা যায়। রোগীর মাথার চুল পড়ে যায়, বমি পায়।
ভাবতে পারেন শুধু ক্যান্সার কোষকে কেন টার্গেট করে মারা হয় না ব্যাকটেরিয়ার মত? কারণ ক্যান্সার কোষকে কী দিয়ে আলাদা করে আইডেন্টিফাই করব? এটা তো নিজ শরীরেরই কোষ। এর এন্টিজেন বা আইডিকার্ড আমার শরীরের অন্য কোষদের মতই। তাই এদের আলাদা করে টার্গেট করে মারা যায় না।
টিউমারের কোষ যেয়ে যদি ফুসফুসে যায়, তাহলে ফুসফুসের স্বাভাবিক কোষের সংখ্যা কমে যাবে, ফুসফুস দিয়ে শ্বাস ঠিকমতো নিতে পারবেন না, আপনি মারা যাবেন।
টিউমার যদি হৃৎপিণ্ডে হয়, সেখানে ব্লক হতে পারে। রক্ত সঞ্চালন ঠিকমত হবে না, আপনি মারা যাবেন।
টিউমার মস্তিষ্কে হলে, সেখানেও একই সমস্যা। মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে আপনি মারা যাবেন।
লিভার বা কলিজায় হলে? লিভার শরীরের নানা কেমিকেল ব্যালেন্স রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেটা নষ্ট হয়ে যাবে। আপনি মারা যাবেন।
বোন ম্যারোতে টিউমার কোষ ছড়ালে লোহিত কণিকা কমে গেলে শরীরে অক্সিজেন পাবেন না ঠিক মত। স্বাভাবিক শ্বেত কণিকা কমে গেলে শরীরের ডিফেন্স বা প্রতিরক্ষা চুলোয় যাবে। প্লাটিলেট কমে গেলে শরীরের ভেতর কোথাও কেটে গেলে ইন্টারনাল ব্লিডিং হবে।
আপনি মারা যাবেন, আপনি মারা যাবেন, আপনি মারা যাবেন।
ক্যান্সারের কিউর পাওয়া এত কঠিন কেন জানেন? কারণ একেক ক্যান্সার বা টিউমার তৈরি হওয়ার পিছে একেক কারণ থাকে৷ নানান কোরিলেশন/কজেশন। নির্দিষ্ট একটা বা দুইটা কারণ নেই হুট করে আপনার কোষের মাঝে মিউটেশন হয়ে সেটার বিভাজন হওয়ার সিস্টেম ওলট-পালট হওয়ার।
তবে নারীদের cervical cancer এর কারণ হিসেবে HPV বা Human Papilloma Virus এর যোগসূত্র পাওয়া গেছে। খুশির কথা হল, সেই ভাইরাসের ভ্যাক্সিনও তৈরি হয়ে গেছে।
এরজন্যেই টিউমার যেখানেই হোক না কেন আপনার মারা যাওয়া আশংকা থাকে। সেটা চামড়াতে হোক আর স্তনে, malignant tumour ছড়িয়ে পড়লে যেকোনো জায়গায় টিউমার তৈরি করতে পারে, আর আপনি কোনো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে মারা যেতে পারেন।
লেখকঃ মনিফ শাহ চৌধুরী
American cancer society এখানে আরো তথ্য পাবেন।
Tags:
চিকিৎসা