১. অজু করে পবিত্র অবস্থায় ঘুমানোঃ
প্রত্যেক মুসলমানকে সব সময় অজু অবস্থায়ই ঘুমাতে চেষ্টা করা উচিত। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারা ইবনে আযেব রা.-কে বলেছিলেন: যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন নামাযের অজুরর মতও অজু করবে। [মুসলিম : ৪৮৮৪]
যে ব্যক্তি পবিত্রাবস্থায় (অজু অবস্থায় ) ঘুমায় তার সাথে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকে। অতঃপর সে ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথেই আল্লাহ্র সমীপে ফেরেশতাটি প্রার্থনায় বলে থাকে, হে আল্লাহ্! তোমার অমুক বান্দাকে ক্ষমা করে দাও, কেননা সে পবিত্রাবস্থায় ঘুমিয়েছিল।’ (সহীহ ইবন হিব্বান ৩/৩২৮-৩২৯, সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব ১/৩১৭)
মুয়ায বিন জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণীত, রাসুল (সঃ) বলেছেনঃ পবিত্রাবস্থায় জিকর করতে করতে ঘুমানো ব্যক্তি রাতে জাগ্রত হয়ে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের জন্য আল্লাহ্র কাছে যা চাইবে আল্লাহ তাকে তা দান করবেন’। (আবু দাউদ, সহীহ হাদীস নঃ ৫০৩২)
২. ঘরের দরজা আল্লাহর নামে বন্ধ করা।
হজরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন সন্ধ্যা হয়, তখন তোমাদের সন্তানদের ঘরে আটকে রাখ। কেননা এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে। তবে রাতের কিছু অংশ অতিক্রম করলে তখন তাদের ছেড়ে দিতে পার। আর ঘরের দরজা বন্ধ করবে। কেননা, শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। আর তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাদের মশকের মুখ বন্ধ করবে এবং আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাদের পাত্রগুলোকে ঢেকে রাখবে, কমপক্ষে পাত্রগুলোর উপর কোনো বস্তু আড়াআড়ি করে রেখো। আর (শয্যায় যাওয়ার সময়) তোমরা তোমাদের প্রদীপগুলো নিভিয়ে দেবে।(বুখারীঃ ৫৬২৩)
৩. সুরা মুলক পড়াঃ
রাসুল (সা.) বলেছেন, কোরআনের মধ্যে ৩০ আয়াতবিশিষ্ট একটি সুরা আছে, যেটি কারো পক্ষে সুপারিশ করলে তাকে মাফ করে দেওয়া হয়। সুরাটি হলো তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক (সুরা মুলক)। (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯১) রাসুল (সা.) এই সুরা না পড়ে কখনো ঘুমাতে যেতেন না। (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯২)
৪. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়াঃ
কোনো ব্যক্তি ঘুমানোর আগে এ দুই আয়াত পড়লে তা তাদের গোটা রাতের নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট হবে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করে, তবে এটিই তার জন্য যথেষ্ট। (বুখারি, হাদিস : ৫০৪০)
৫. আয়াতুল কুরসি পড়াঃ
রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি যখন শয্যা গ্রহণ করবে, তখন আয়াতুল কুরসি পড়বে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ২৩১১)
৬. সূরা এখলাস, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পড়াঃ
আয়েশা রা. বর্ণনা করেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন প্রতি রাত্রিতে নিজ বিছানায় যেতেন দুই হাতের কবজি পর্যন্ত একত্রিত করতেন অতঃপর তারমাঝে ফু দিতেন এবং সূরা এখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়তেন । অতঃপর দুই হাত যথা সম্ভব সমস্ত শরীরে মলে দিতেন। মাথা ,চেহারা এবং শরীরের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। এরূপ পরপর তিনবার করতেন। [তিরমিজি : ৩৩২৪]
৭. শোয়ার সময় তাকবীর ও তাসবীহ পাঠ করাঃ
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ফাতিমা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে একটি চাকর চাইলে, তিনি বললেন, “আমি কি তোমাদের দু’জনকে এমন জিনিস বলে দেবো না, যা তোমাদের চাকরের চেয়ে উত্তম? তোমরা যখন বিছানায় শুতে যাবে, তখন ৩৪ বার আল্লাহু আকবর, ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ এবং ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ পড়বে। এটা তোমাদের চাকরের চেয়েও উত্তম।” (বুখারী ৬৩১৮, মুসলিম ৬৯১৫)
৮. ভালোভাবে বিছানা ঝেড়ে নেওয়া। (বুখারীঃ ৬৩২০)
৯. আলো/বাতি বন্ধ করে ঘুমানোঃ
হজরত সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন, ‘তিনি (আবদুল্লাহ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘শোয়ার (ঘুমের) সময় তোমরা তোমাদের ঘরে আগুন জ্বালিয়ে রেখ না।’ (বুখারীঃ ৫৬২৩) (নাসাঈ)
১০. সবসময় ডান কাত হয়ে শয়ন করার চেষ্টা করা। (বুখারীঃ ৬৩১৫)
১১. বিনা কারণে (অসুস্থ্য ব্যতিত) উপুড় হয়ে শয়ন না করা। (তিরমিযীঃ ২৭৬৮)
১২. শয়নের সময় দু’আ পাঠ করাঃ
ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺑِﺎﺳْﻤِﻚَ ﺃَﻣُﻮﺕُ ﻭَﺃَﺣْﻴَﺎ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার নামেই মরি, আপনার নামেই জীবিত হই ‘
(বুখারীঃ ৬৩১৪)
১৩. সাধারণত সতর খোলা অবস্থায় না শোয়া (পুরুষের নাভি থেকে টাখনু পর্যন্ত এবং নারীদের সমস্ত শরীর বস্ত্র দ্বারা আবৃত করা)। (তিরমিযীঃ ২৭৬৯)
১৪. নাপাক অবস্থায় ঘুমাতে হলে শরীরের নাপাক স্থান ধুয়ে অযু করে নেয়া। (বুখারীঃ ২৮৮)
১৫. রাতে দেরি করে না ঘুমানোঃ
রাসুল (সা.) এশার নামাজের পর গল্পগুজব ও গভীর রাত পর্যন্ত সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর তাগিদ দিতেন। (মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস : ৪৮৭৯)
১৬. খোলা আকাশের নিচে না ঘুমানোঃ
অনুরূপ ছাদেও ঘুমানো যাবে না। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি বেষ্টনীবিহীন ছাদে রাতে ঘুমাল, (কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে) তার সম্পর্কে (আল্লাহর) কোনো জিম্মাদারি নেই।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৪১)
১৭. একাকী ঘরে না ঘুমানোঃ
কোনো ঘরে একা ঘুমানোর ব্যাপারে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) কোনো ঘরে একাকী রাত যাপন ও একাকী সফর করতে নিষেধ করেছেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৫৬৫০)
১৮. রাত্রে ঘুম ভেঙ্গে গেলে তার দু’আ ও ফজিলতঃ
উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাত্রে নিদ্রা ভঙ্গ হলে বলে, (লা-ইলাহা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া সুবহানাল্লা-হ আল্লাহু আকবার ওয়ালা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ।)
অর্থাৎ, আল্লাহ্ ছাড়া সত্যিকার কোন উপাস্য নেই। তিনি এক ও একক। তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব ও সমস্ত প্রশংসা তাঁরই। তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাশীল। আল্লাহ্রই সমস্ত প্রশংসা। তিনি পূত-পবিত্র ও মহান। তাঁর সাহায্য ব্যতীত কারো ভাল কাজ করার ও মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকার শক্তি নেই। তারপর সে যদি আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, “হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করে দাও, অথবা অন্য দুয়া করে, তাহলে তার দু’আ কবুল হয়।” (বুখারী ১১৫৪)
১৯. দুঃস্বপ্ন দেখলে পার্শ্ব পরিবর্তন করে শোয়াঃ
হজরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘তোমাদের কেউ যখন এমন স্বপ্ন দেখে, যা সে পছন্দ করে না, তখন সে যেন তার বামপাশে তিনবার থু থু ফেলে এবং শয়তানের (অনিষ্টতা) থেকে আল্লাহর কাছে তিনবার আশ্রয় প্রার্থনা করে। আর যে পাশে ঘুমানো ছিল তা থেকে যেন বিপরীত দিকে ফিরে ঘুমায়।’ ( (মুসলিমঃ ৫৯০১)
২০. ঘুমের খারাপ কিছু দেখার পর করণীয়ঃ
হজরত আবু কাতাদাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, সুন্দর স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর দুঃস্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে। অতএব তোমাদের কেউ যখন এমন কোনো ব্যাপারে স্বপ্নে দেখে, যা সে পছন্দ করে না, তখন সে যেন তার বাম পাশে তিন বার থু থু ফেলে এবং (আউজুবিল্লাহ বা সুরা ফালাক্ব ও সুরা নাস পড়ে) স্বপ্নের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চায়। কারণ (এভাবে করলে) তাতে তার কোনো ক্ষতি হতে পারে না।’ (মুসলিম)
২১. তাহাজ্জুদ সালাত পড়ার নিয়তে ঘুমানোঃ
হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করার নিয়তে বিছানায় আসে (ঘুম যায়) কিন্তু দু’চোখে ঘুম প্রবল হয়। আর ভোর পর্যন্ত সে ঘুমিয়ে থাকে, তার জন্য তার নিয়ত অনুসারে সওয়াব লেখা হবে। আর আল্লাহ তাআলঅর পক্ষ থেকে ঘুম তার জন্য সদকা স্বরূপ হয়ে যাবে।’ (নাসাঈ)
সংকলকঃ সৈয়দ নুর হাছান (মারুফ)
Tags:
Islam