(এক)
সভ্যতার পুনঃজাগরণের উদ্দেশ্যে! তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শেষ হয়েছে নাকি হয় নি? প্রশ্নটা একেবারেই অবান্তর৷ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কোন দেশের সাথে দেশের বা জাতির সাথে জাতির হয়নি! হয়েছে প্রকৃতির সাথে মানুষের৷
বাসযোগ্য ভূমির তিনভাগ তলিয়ে গেছে সাগরে! বাকি দু-ভাগে জন সংকুলান হচ্ছে না৷ বিভিন্ন শতাব্দীর বা হাজার বছর আগের রোগ বালাই আবার ফিরে এসেছে, মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে অবশিষ্ট মানব সভ্যতার উপর!
হানাহানি রাহাজানি তো আছেই, সাথে বিরুপ প্রকৃতির বিরোধিতা৷ মানব সভ্যতার এমন ক্রান্তি লগ্নে অবশিষ্ট মানব জাতির উনষাট জন প্রতিনিধি এক হয়েছেন আজ৷ নেশনসলীগ এর সভায়! একটা উপায় বের করতেই হবে৷ মানুষকে পৃথিবীর বুকে টিকিয়ে রাখার জন্যই করতে হবে৷
কিছু মানুষের তাতে অবশ্য পরোয়া নেই! চাঁদ আর পৃথিবীর মাঝে স্থাপন করা হয়েছে কৃত্রিম এক উপগ্রহ৷ যেটা অনায়াসেই স্পেসশীপের সময় সংকোচন ডাইভ দেবার ক্ষমতা রাখে৷ সেটাকে গড়ে তোলা হয়েছে পৃথিবীর মতো করেই৷ সেটা অবশ্য গোলাকার কিছু নয়৷ অনেকটা ক্যাপসূলের মতো লম্বা আর ওটাকে ঘিরে শনির বলয়ের মতো অনেক গুলো বলয়৷ অনবরত স্পীন করছে সাতশ সাতাত্তর টা বলয়!
ওখানে রোগ বালাই কিছুই নেই৷ ছয়টা ঋতু আছে৷ সঠিক সময়ে বৃষ্টি হয়, রোদ ঝলমল করে, আলোছায়া খেলা করে এক কথায় স্বর্গ! সেই স্বর্গের মুষ্ঠিমেয় মানুষেরা পৃথিবীর এমন দুর্যোগে কোন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি৷ বরংচ সব কমিউন্যিকেশান ডিসকানেকটেড করে বসে আছে৷ ওখানে যাবার যান গুলো বিকল করে দেয়া হয়েছে রাশিরাশি নেনোবট পাঠিয়ে৷ তাছাড়া এত মানুষ সেই কৃত্রিম পৃথিবীতে ঠাঁই নিতে পারবে না৷ সম্ভব নয়৷
নেশানসলীগ এর উনষাট জন এসেছেন উনষাটটা সেক্টর থেকে৷ প্রকৃতির মহা বিপর্যয়ের পর দেশ কান্ট্রি সার্বভৌমত্ব এসবের সংজ্ঞা পালটে গেছে একেবারে! বছরের পর বছর যুগের পর যুগ ধরে মানুষ বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷ এখন তার শেষ সীমা৷
অতি গোপন একটা প্রোজেক্ট নিয়ে আজ সবাই বসেছেন৷ বসেছেন সেক্টর নাইন এর নিস্তব্ধ ডোম এ৷ নাম দেয়া হয়েছে সাইলেন্ট মুভমেন্ট প্রোজেক্ট৷ এ নিস্তব্ধ জায়গায় কোন তরঙ্গ আসতে পারে না৷ কোন টেকনলজিক্যাল ডিভাইস এলাও করা হয় না৷ বিশেষ স্যুট পড়ে ঢুকতে হয় নিস্তব্ধ ডোমে৷ মুখে থাকে অক্সিজেন মাস্ক৷ বিভক্ত হয়ে যাওয়া উপগ্রহিক মানুষদের সাথে একটা ঠান্ডা রেশারেশিই এর মূল কারণ৷ কৃত্রিম উপগ্রহের প্রায় নিখুঁত জেনেটিক কোড সম্পন্ন মাণুষের সাথে এই কোল্ড ওয়ার অন্য কাহিনী৷ সেটা মুল উপপাদ্য নয়৷
বর্তমান পৃথিবীর সভ্যতা টিকিয়ে রাখাই আজকের মুল বিষয়! সেক্টর থারটিন এর প্রধান হাত তুলে সাংকেতিক ভাষায় সভা শুরু করার অনুরোধ করলেন৷ গোটা আলোচনা হয়েছে সাংকেতিক ভাষায়৷ পাঠকের বুঝার সুবিধার্থে সংলাপ ব্যবহার করা হবে৷
সেক্টর ১৩: সভা শুরু হোক!
সকল সেক্টরের প্রধান রা সম্মতি দিলেন
সেক্টর ৯: আমরা যে কাজ টি শুরু করেছিলাম সেটা সফল হয়েছে৷ মানুষের বেঁচে থাকার একটা উপায় আমরা বের করেছি সবাই মিলে৷
সেক্টর ৫৫: আসলেই তাই মাননীয় সেক্টর ১৩| তবে এর জন্য অনেক ত্যাগ এর প্রয়োজন পড়বে
সেক্টর ৪৫: যেমন?
সেক্টর ১২: আমরা মানুষের শরীরে কিছু আমুল পরিবর্তন আনবো৷ সেটা হলে আমাদের এখনকার মানুষের সাথে তখনকার মানুষের অনেক অমিল থাকবে৷ তবে শরীর হবে আরও সহনশীল৷রোগবালাই মহামারী আক্রমণ করবে না৷ অল্প জায়গায় অধিক মানুষ থাকতে পারবে৷
সেক্টর ৯: এমন কোন কিছু কি করা হয়েছে? মানে গবেষণা?
সেক্টর ২৯ : পরীক্ষামূলক ভাবে আমরা দুটো ডুম তৈরী করেছি! সাফল্য প্রায় শতভাগ!
সকল সেক্টরের প্রতিনিধি রা আনন্দ প্রকাশ করলেন৷
সেক্টর ৩১: তাহলে চলুন! দেখা যাক !
.............
দু বছর পর,
সেক্টর প্রধান রা রেন ভাইরাস বাতাসে অবমুক্ত করলেন৷ টিকে থাকা মানুষরা তাদের শেষ শারিরীক প্রতিরোধ ক্ষমতা আগামী চব্বিশ ঘন্টার মাঝে হারিয়ে ফেলবেন৷ নীরব মৃত্যু তাদের কে নিরবে স্পর্শ করবে ৷ পৃথিবীতে আসবে আগামীর মানুষ!
যে মনুষ্য সমাজে সন্তান আসে না, বংশধর আসে না, প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে, যে পৃথিবীর মাটি পানি বাতাস অবক্ষয়ের অতলে পৌঁচেছে সেই পৃথিবী জঞ্জাল মুক্ত করার সবচেয়ে সহজ ঊপায় এসব মানুষকে শেষ করে দিয়ে নতুন প্রজন্ম তৈরী করা৷ রেন ভাইরাস শুধু মনুষ্য ক্রোমোজোম দেখেই আক্রমণ করে! এগুলো তৈরী করা হয়েছেও সেভাবে৷
নতুন প্রজন্মের মানুষদের জন্য আলাদা নয়টা ডুম তৈরী করে তাদের সেখানে প্রতিস্হাপন করার কাজও শেষ৷ এই মৃত প্রায় সভ্যতার মানুষ গুলোর মরে যাওয়া ছাড়া আর উপায় নেই! ধুকে মরার চেয়ে সবাই তাই ইচ্ছামরণের পথই বেছে নিলো....
রেন ভাইরাস একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক বংশ বৃদ্ধির সীমাবদ্ধতায় কোড করা৷ তাছাড়া ভবিষ্যত মানুষদের রেন ভাইরাস আক্রমণ করতে পারবে না! তাদের প্রথম ব্যাচ থেকে বংশ পরস্পরায় রেন ভাইরাসের প্রতিরোধ শক্তি নিয়েই জন্মগ্রহণ করবে.....
..........
পরবর্তী পনরদিনে ক্ষয়িষ্ণু পৃথিবীতে আর একটা মানুষও বেঁচে থাকলো না! সবাই ঘুমিয়ে গেলো যেনো! সবাই নিঃশেষ হয়ে গেলো! চিরতরে৷
পরবর্তী সাতশ বছর পৃথিবী এভাবেই পড়ে রইল৷ নিজেকে নিজে আস্তে আস্তে দোষণ মুক্ত করলো!
পৃথিবী তে একটা স্পেসশীপ নামলো দীর্ঘ সাতশ বছর পর! দুষণ মুক্তো সবুজ পৃথিবীতে আসলো সেই মানব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি৷ যারা পৃথিবীর দুর্যোগে পৃথিবীর পাশে থাকেনি৷ পৃথিবীর মানুষকে সামান্য সহায়তা প্রদান করেনি.....
ল্যান্ড করা স্পেসশীপ থেকে দুজনের একটা টীম নেমে কিছুক্ষণ বনে বাঁদাড়ে ঘুরাঘুরি করলো৷ তাদের কাঁধ বরাবর ছোট ছোট দুটি ড্রোন এর মতো রোবট উড়ে চলেছে সর্বক্ষণ৷ চারপাশ স্ক্যান করে তথ্য পাঠাচ্ছে মূল স্পেসশীপে৷ বিপদ দেখলে ওগুলোই অস্ত্র থেকে প্রয়োজনীয় বিস্ফোরক ছুঁড়বে বা ছুঁড়বে মারণ রশ্মি৷ হাতে করে অস্ত্র বহনের দিন বহু আগেই চলে গেছে৷
অভিযাত্রী দুজন অন্য অনেক জীবজন্তুর আভাস পেলেও পেলনা কোন মানুষের আভাস! তবুও যতক্ষণ পৃথিবীর এ অংশটায় তারা ঘুরাঘুরি করলো, তাদের মনে হলো কিছু একটা লক্ষ্য করছে যেনো তাদের! অস্বস্তি ঘিরে রাখলো সবসময়! অথচ তাদের সাথে থাকা স্কাউট রোবট প্রাণের কোন অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে পারলো না৷
............
পৃথিবীর নতুন মানুষের কাছে স্পেসশীপ অবতরণের খবর কিন্তু ঠিকই পৌঁছে গেছে! কিউব মনিটরের পর্দায় পাঁচটা ড্যুমের সবাই সেটা অবলোকন করছে! সেই অন্ধকার সময়ের পৃথিবীর সকল ইতিহাস ই তারা বংশপরস্পরায় জেনে আসছে৷ (নটা ড্যুম এর মধ্যকার চারটা ড্যুম টেকেনি সে সময়)
.......উপগ্রহ থেকে আসা মানুষেরা কি চায় কেন চায় আর কি কারণে ওরা পৃথিবীতে এসেছে সেটা বুঝতে চেষ্টা করছে তারা৷
পাঁচটা ড্যুমের সবাই এখন নীরব! অপেক্ষায় আছে....!
(দুই)
সাতশ বছর পর যে স্পেসশীপ পৃথিবীতে নেমেছে তার সদস্য সংখ্যা সাতজন৷ দলনেত্রীর নাম নিনিরা৷ নিনিরা পরিপুর্ণ মানুষ নয় ৷ সে একজন সাইওমেন৷ তার মস্তিষ্ক একজন মানবীর৷ শরীরের সমস্ত হাঁড় পাতলা এলয়ের তৈরী৷ মস্তিষ্কের পাশাপাশি রয়েছে ন্যানো প্রসেসর৷ যার মাধ্যমে তার মগজে জটিল হিসেব আলট্রা কমের পাশাপাশি হিসেব করতে পারে৷ সুপার কম্পিউটারের যুগ বহুআগে গত৷ শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সুরক্ষা লিকুইড মেটালে আবৃত৷ উপরে চামড়া আর টিস্যু সাধারণ মানুষের৷ তবে অন্য ব্যবস্থাও আছে৷ কোন ক্ষত সৃষ্টি হলে যাতে স্বল্প সময়ে সেটা রিকোভারী করা যায় তার ব্যবস্থা! একদিকে নিনিরা কে প্রায় অমর বলা চলে৷
সাধারণত কোন অভিযানে এসব আধা মানুষ আধা আধুনিক যন্রের সমন্বয়ে গঠিত সাইমেন বা সাইওমেন কে দলনেতা করা হয়৷ কেননা যুক্তিগ্রাহ্যতা তাদের মানবিক অনুভূতিকে প্রভাবিত করতে পারে৷ অভিযানের সফলতা যেটাতে অনেকাংশে নির্ভরশীল৷
আলট্রাকমের বিচারে যে সব অভিযানে স্পেসশীপ সদস্যের আবেগ কাজ করতে পারে বেশী পরিমানে, সেসব ক্ষেত্রে সাইওমেনই দলনেত্রী হিসেবে প্রথম পছন্দ৷
সমীক্ষায় দেখা গেছে একটা অভিযানের ক্ষেত্রে মেয়েরাই সফল আর আবেগ বিবর্জিত সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারে পুরুষের চেয়ে আগে৷ আর বিপদজনক বা অজানা অভিযানের বিপদ থেকে মেয়ে দলপতির সিন্ধান্তই অভিযাত্রীদের রক্ষা করে এনেছে সফলতার সাথে৷
প্রায় পরিত্যাক্ত পৃথিবীতে এই অভিযানে আসার একটা বিশেষ লক্ষ্য আছে উপগ্রহ বাসী মানুষের৷ যদিও অনেক নিয়ন্রণে ছিল উপগ্রহটা তারপরও সেটা বসবাসের অযোগ্য হতে চলেছে৷ আগামী পঞ্চাশ কিংবা আশি বছরে ওটা পরিপূর্ণ ভাবে বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে৷
যে পৃথিবী আর পৃথিবীর মানুষকে তারা বিপদের সময় হেলায় পরিত্যাগ করেছিলো, সেই পৃথীবীতেই তারা আবার আশ্রয় নিতে ফিরে আসার পায়তারা করছে৷ এই স্পেসশীপ তাই রেকি করতে এসেছে পৃথিবীটা! পরীপূর্ণ গবেষণা শেষ হলে তারা আবার উপগ্রহে ফিরে যাবে ফাইনাল রিপোর্ট নিয়ে৷ তারপর সবাই ফিরে আসবে৷ এই পৃথিবীতেই৷
সবচেয়ে বড় কথা তাদের অতীত বংশধরেরা হঠাৎই অনুভব করতে পেরেছিলো এখানে পৃথিবীতে মানুষেরা হঠাৎ যেনো গায়েব হয়ে গেছে৷ তখন তারা কৃত্রিম উপগ্রহে অপার শান্তির রাজ্যে নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলো৷ তখনও বুঝতে পারেনি কৃত্রিম প্রকৃতি আর পৃথিবীর পরিবেশ একজিনিস নয়৷ যখন বুঝতে পারলো তখন আবার তারা জনমানবহীন পৃথিবিতেই নতুন ঠিকানা খুঁজে নিতে চাইল৷
সাতশ বছরে এখানকার জীবনধারা নতুন মানুষ প্রজাতি সম্পর্কে তাদের কোন ধারণাই নেই৷ স্কাউটিং করতে যাওয়া মানুষ দুজন আজকের রেকিতে কিছুই যখন পেলো না, তখন নিনিরার অস্বস্তি টা বাড়ল বই কমল না! পৃথিবীর মানুষগুলো হঠাৎ কই হারিয়ে গেলো৷
মেরী আর শন প্রাথমিক রেকি করে স্পেসশীপে ফিরেছে৷ ফেরার পথে তারা লক্ষ্য করেনি সরিষা দানার চেয়ে একটু বড়ো দানাদার কিছু তাদের পোষাক এবং জুতায় লেগে স্পেসশীপের ভেতরে প্রবেশ করেছে৷ অগুলো যে জায়গা গুলোয় লেগেছে সেখানকার রঙের সাথে একেবারে মিশেগেছে যেনো! এমনকি বায়ুশূন্য কক্ষে স্পেসস্যুট পরিষ্কার করার পরও কিছু দানা স্পেসশীপের ভেতরে প্রবেশ করে ছড়িয়ে গেলো৷ কেউ বুঝতে পারলো না প্রথমে৷
নিনিরা , মেরী আর শন কে বিশ্রাম নিতে বলে ডেকে এসে বসলো৷ তার সাথে আছে ফুন ৷ ফুন হচ্ছে জীববিদ্যা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ৷ ল্যাবে এখন কাজ করছে অরুহান৷ উদ্ভিদ বিদ্যার বিশেষজ্ঞ৷ ওয়েপন বিভাগে আছে দ্রণ৷
স্পেসশীপের সপ্তম এবং শেষ সদস্য হচ্ছে তেইশ বছর বয়েসী আইমিরা৷ সুন্দরী এক যুবতী৷ উপগ্রহের সাধারণ সদস্য৷ জেনেটিক কোড মেইনটেন করে তৈরী করা রূপবতী রমনী৷ সে লিটারেচার পছন্দ করে৷ কৃত্রিম হৃদের পাশে ফলসউডের আগুনের পাশে বসে রাতের তারার দিকে তাকিয়ে থাকতে পছন্দ করে৷ ভালবাসার মানুষ খুঁজে বেড়ায় আর সাতশবছর আগে ছেড়ে আসা পৃথীবির জন্য যাদের মন কাঁদে তেমন একজন হচ্ছে আইমিরা!
কৃত্রিম উপগ্রহের জীবন যতটা ভাবা হয়েছিলো ততটা নিরবিচ্ছিন্ন সুখের হয়নি অনেকের কাছেই৷ প্রথম দু শতাব্দী ভালই কেটেছিলো৷ এরপর বেশকিছু মানুষ বিষন্ন হয়ে পড়ে হঠাৎ করে৷ আর যাই হোক হাজার হাজার বছরের পৃথিবীর মায়া, পৃথিবীর ক্রোমজোম বাহী মানুষেরা কয়েকশ বছরে কিভাবে ত্যাগ করবে!
প্রায় অমর কৃত্রিম উপগ্রহ বাসীদের অনেকেই আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলো তখন৷ উপায় অন্ত না পেয়ে পৃথিবী সম্পর্কিত সমস্ত সাহিত্য আর চিন্তাভাবনা রহিত করা হয় আইন দিয়ে৷ পাসকোড দিয়ে সংরক্ষিত করা হয় যাবতীয় অতীত তথ্য৷ চতুর্থ ধারার অপরাধ হিসেবে গন্য করা হয় পৃথিবী সম্পর্কিত সকল স্মৃতিচারণ এবং জ্ঞান৷ আইমিরা তেমন অপরাধে অপরাধী৷ কতৃপক্ষ সেটা জানতে পেরে তার কারাবাসের ব্যবস্থা করেছিলো৷
ঠিক তখনই এই অভিযানের তোড়জোড় শুরু করা হয়৷ প্রতি অভিযানে যেহেতু একজন সাধারণ নাগরিককে রাখা হয়, সেহেতু নিনিরা প্রোফাইল ঘেটে আইমিরাকে চায়৷
কতৃপক্ষ যখন তাকে এটা জানায়, সানন্দে রাজী হয়ে যায় সে! সাতশ বছরে যারা পৃথিবীর মায়া কাটাতে পারেনি তাদের একজন হিসেবে পঞ্চম জেনারেশানের আইমিরা তাই পৃথিবীর বুকে পা রাখার জন্য অস্থির৷ অবশ্য নিনিরা প্রথম ক্ষেত্রে তাকে সে সুবিধা দেয় নি৷
শন আর মেরীর তথ্য গুলো নিয়ে যখন নিনিরা আর ফুন বিশ্লেষণ করছিলো তখন আলট্রাকম কথা বলার অনুমতি চাইল৷
আলট্রা কম: নিনিরা ! আমি কিছু ব্যাপারে তোমার এবং তোমাদের সকল সদস্যের সাথে আলোচনা করতে চাই৷ তবে আইমিরা কে এ সভায় প্রয়োজন নেই৷
দ্রণ: কেন? ও তো আমাদের দলেরই একজন!
আলট্রাকম: আইমিরা সদস্য৷ ঠিক৷ তবে সে আমাদের কোডঅব কনডাক্টে চতুর্থ ধারার অপরাধী এবং সিভিলিয়ান! অনুচ্ছেদ তের রুল নাইনে স্পেসশীপে থাকা সিভিলিয়ানদের উপস্থিতি রদ করা হয়েছে দ্রন!
নিনিরা: ঠিক আছে৷ সবাই কে আসতে বল৷
...........
আইমিরা ছাড়া সবাই ডেকে হাজির হলো
আলট্রাকম: আজ মেরি এবং শন পৃথিবীর এ অংশটায় বনভূমিতে রেকি করতে গিয়েছিলো৷ সাথে ছিল দুটো স্কাউট বট৷ তাদের প্রতিরক্ষা এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য৷ বাতাস মাটি পানি কোথাও তেমন কোন প্রতিবন্ধকতা তারা খুঁজে পায়নি৷ আছে কিছু নতুন উদ্ভিদ আর প্রানীকূলেও কিছুটা পরিবর্তন প্রাথমিক ভাবে নজরে পড়েছে৷ তবে আমাদের পর্যবেক্ষণে কোন মানুষ বা তেমন কিছু দৃষ্টিগোচর হয়নি৷
তবে!? মেরি এবং শন জানিয়েছে তাদের কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছিল৷ তাদের মনে হচ্ছিল কেউ বা কারা যেনো তাদের প্রতি লক্ষ্য রেখেছে সবসময়৷ মানুষের এসব অনুভূতি আগে কম্পিউটার আমলে নিত না৷ দু একটি ক্ষেত্রে অভিযানে আমরা প্রমাণ পেয়েছি যে এসব অনুভূতির অবমূল্যায়ন আমাদের স্পেসশীপ ধ্বংস বা প্রাণহানি বা ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন করেছিল৷ আমরা তাই এসবের গুরুত্ব দেয়া শিখেছি৷ যদিও বর্তমান অভিযানে এর সম্ভাবনা ০.৩ শতাংশেরও কম! কেননা মানুষ বলতে আমরা কিছুই এখানে ট্রেস করতে পারিনি৷
কিন্তু!!! মেরী আর শন এর স্পেসস্যুট পরীক্ষা করে আমরা কিছু অদ্ভুত ছোট ছোট দানার খোঁজ পেয়েছি!
প্রাচীন পৃথিবীতে একধরণের শস্য হত৷ যাকে বলা হত সরিষা৷ সেই ফসলের দানার চেয়ে কিছুটা বড় রংপরিবর্তনশীল একধরণের দানা৷ আপাত দৃষ্টিতে দানা গুলো কোন উদ্ভিজ্য বীজ মনে হলেও আসলে সেগুলো একধরণের অতি আনুবীক্ষনিক ডিভাইস ! বীজ এর খোলসের ভেতরে অতি ক্ষুদ্র হাই রেজুল্যুশনের ক্যামেরা আর ট্রান্সমিটার বসানো৷ বীজ গুলো আমাদের প্রতিরক্ষা রোবটের দৃষ্টিগোচর এবং সংস্পর্শে আসামাত্র নষ্টহয়ে যাচ্ছে৷ জীবন্ত একটা বীজকে স্ক্যান করে প্রায় হাজার গুণ বড় করে আমরা ক্যামেরার অস্তীত্ব পাই৷ আরও বড় করে পাই ট্রান্সমিটারের দেখা৷ এগুলো বলতে গেলে সেই প্রাচীন পৃথিবীর টেকনোলজি৷ কিন্তু বীজের মোড়কে এগুলোকে ছড়িয়ে দেয়া একেবারেই নতুন!
অরুহাণ: বিস্মিত হয়ে! তারমানে তুমি বলতে চাইছো আমাদের স্পেসশীপের ভেতর সম্পর্কে কেউ বা কোন কিছু ওয়াকিবহাল!
আলট্রাকম: শুধু তাই না৷ আমাদের ভেতরে বীজগুলো কতটা ছড়িয়েছে সেটা সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেই! যে পরিমান ভেতরে ঢুকেছে সেটা হিসেব করলে ডেক সহ কোন জায়গায় কি আছে কেউ বা কোন কিছু সম্পর্কে বিস্তারিত ওরা জানে৷ হয়তো এই মুহুর্তে আমাদের সকল কথাও তারা শুনছে!
আসলে প্রাথমিক নীরিক্ষণে হোমোসেপিয়েন্স এর প্রমাণ না পেয়ে সম্ভবত আমরা আমাদের সিক্যুরিটিতে একটু ঢিল দিয়ে ফেলেছি৷ আমি প্রতিরক্ষা রোবটদের নির্দেশ দিয়েছি তন্ন তন্ন করে খুঁজে বীজ গুলো নষ্ট করতে৷
এই বলে আলট্রাকম থামলো!
সবার মন আপাততঃ দুশ্চিন্তা গ্রস্থ৷ ছাপ পড়েছে চেহারায়৷
দলপতি নিনিরা: যখন এর অস্তিত্ব পেলে তখনই ফ্রিক্যুয়েন্সি জ্যাম করে দিতে!
আলট্রাকম: বাইরে আমাদের একটা স্কাউটশিপ আছে৷ যেটাতে আমরা যোগাযোগ রাখছি একটা নির্দিষ্ট কোডিং এর মাধ্যমে৷ একই কোডিং এ আমাদের ভেতরের তথ্য চলে যাচ্ছে! তাই জ্যাম করলে স্কাউটশীপটা ক্রাশ করবে.... আর এটা আমরা জানতে পেরেছি সামান্য পূর্বে!
নিনিরা কালবিলম্ব না করে আলট্রা কম কে নির্দেশ দিল সিগনাল জ্যাম করে স্কাঊটশীপটা অকেজো করে দিতে৷ তাই করলো আলট্রাকম৷
অবাক ব্যাপার স্কাউটশীপটা বনভূমির দিক থেকে উড়ে আসলো ডেকের বড়ো উইন্ডোর দিকে৷ওটা এখন স্পেসশিপটাকেই যেনো পর্যবেক্ষণ করছে!
স্কাউটশীপটার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে ওটা শাটডাউন হয়ে পড়ার কথা৷ প্রতিরক্ষা রোবট এটাকে এখন আনআয়ডেন্টিফায়েড অবজেক্ট ধরে মুহুর্তে রশ্মি বিক্ষেপণ করে ধ্বংস করে দিল৷
এ সভাতে অনুপস্থিত আইমিরা ছোট্ট একটা অবজার্ভেশান ডেকে বসে বাইরের পৃথিবীটা অধীর আগ্রহে দেখছিলো৷ ঘোলাটে চাঁদের আলোয় অনতিদূরে থাকা বনভূমির ছায়া ছায়া কালো গাছেরা তাকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করছে যেনো৷ হঠাৎ আলোর চমকানিতে চমকিত হয়ে ডানে তাকালো সে৷ জ্বলন্ত ছোট স্কাউটশীপটা আগুনের ফুলঝুড়ি ছুটিয়ে বিধ্বস্ত হচ্ছে৷
ঠিক সেই মুহুর্তে তার কানের মাঝে ফিসফিস করে কেউ যেনো বলল
" তোমার পৃথিবীতে তোমাকে স্বাগতম আইমিরা! "
কন্ঠটাতে ছিলো আদর মায়া আর অফুরাণ ভালবাসা৷ আইমিরার কোন মা বা বাবা নেই৷ যদি থাকতো তাহলে ঠিক এমণ করেই তারা হয়তো তাকে সম্বোধন করতো!
আইমিরার দু'চোখ বেয়ে অশ্রু নামলো পরম মমতায় একই সাথে পৃথিবী ত্যাগ করে চলে যাবার হাহাকারে!
সাধারণত কোন অভিযানে এসব আধা মানুষ আধা আধুনিক যন্রের সমন্বয়ে গঠিত সাইমেন বা সাইওমেন কে দলনেতা করা হয়৷ কেননা যুক্তিগ্রাহ্যতা
আলট্রাকমের বিচারে যে সব অভিযানে স্পেসশীপ সদস্যের আবেগ কাজ করতে পারে বেশী পরিমানে, সেসব ক্ষেত্রে সাইওমেনই দলনেত্রী হিসেবে প্রথম পছন্দ৷
সমীক্ষায় দেখা গেছে একটা অভিযানের ক্ষেত্রে মেয়েরাই সফল আর আবেগ বিবর্জিত সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারে পুরুষের চেয়ে আগে৷ আর বিপদজনক বা অজানা অভিযানের বিপদ থেকে মেয়ে দলপতির সিন্ধান্তই অভিযাত্রীদের রক্ষা করে এনেছে সফলতার সাথে৷
প্রায় পরিত্যাক্ত পৃথিবীতে এই অভিযানে আসার একটা বিশেষ লক্ষ্য আছে উপগ্রহ বাসী মানুষের৷ যদিও অনেক নিয়ন্রণে ছিল উপগ্রহটা তারপরও সেটা বসবাসের অযোগ্য হতে চলেছে৷ আগামী পঞ্চাশ কিংবা আশি বছরে ওটা পরিপূর্ণ ভাবে বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে৷
যে পৃথিবী আর পৃথিবীর মানুষকে তারা বিপদের সময় হেলায় পরিত্যাগ করেছিলো, সেই পৃথীবীতেই তারা আবার আশ্রয় নিতে ফিরে আসার পায়তারা করছে৷ এই স্পেসশীপ তাই রেকি করতে এসেছে পৃথিবীটা! পরীপূর্ণ গবেষণা শেষ হলে তারা আবার উপগ্রহে ফিরে যাবে ফাইনাল রিপোর্ট নিয়ে৷ তারপর সবাই ফিরে আসবে৷ এই পৃথিবীতেই৷
সবচেয়ে বড় কথা তাদের অতীত বংশধরেরা হঠাৎই অনুভব করতে পেরেছিলো এখানে পৃথিবীতে মানুষেরা হঠাৎ যেনো গায়েব হয়ে গেছে৷ তখন তারা কৃত্রিম উপগ্রহে অপার শান্তির রাজ্যে নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলো৷ তখনও বুঝতে পারেনি কৃত্রিম প্রকৃতি আর পৃথিবীর পরিবেশ একজিনিস নয়৷ যখন বুঝতে পারলো তখন আবার তারা জনমানবহীন পৃথিবিতেই নতুন ঠিকানা খুঁজে নিতে চাইল৷
সাতশ বছরে এখানকার জীবনধারা নতুন মানুষ প্রজাতি সম্পর্কে তাদের কোন ধারণাই নেই৷ স্কাউটিং করতে যাওয়া মানুষ দুজন আজকের রেকিতে কিছুই যখন পেলো না, তখন নিনিরার অস্বস্তি টা বাড়ল বই কমল না! পৃথিবীর মানুষগুলো হঠাৎ কই হারিয়ে গেলো৷
মেরী আর শন প্রাথমিক রেকি করে স্পেসশীপে ফিরেছে৷ ফেরার পথে তারা লক্ষ্য করেনি সরিষা দানার চেয়ে একটু বড়ো দানাদার কিছু তাদের পোষাক এবং জুতায় লেগে স্পেসশীপের ভেতরে প্রবেশ করেছে৷ অগুলো যে জায়গা গুলোয় লেগেছে সেখানকার রঙের সাথে একেবারে মিশেগেছে যেনো! এমনকি বায়ুশূন্য কক্ষে স্পেসস্যুট পরিষ্কার করার পরও কিছু দানা স্পেসশীপের ভেতরে প্রবেশ করে ছড়িয়ে গেলো৷ কেউ বুঝতে পারলো না প্রথমে৷
নিনিরা , মেরী আর শন কে বিশ্রাম নিতে বলে ডেকে এসে বসলো৷ তার সাথে আছে ফুন ৷ ফুন হচ্ছে জীববিদ্যা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ৷ ল্যাবে এখন কাজ করছে অরুহান৷ উদ্ভিদ বিদ্যার বিশেষজ্ঞ৷ ওয়েপন বিভাগে আছে দ্রণ৷
স্পেসশীপের সপ্তম এবং শেষ সদস্য হচ্ছে তেইশ বছর বয়েসী আইমিরা৷ সুন্দরী এক যুবতী৷ উপগ্রহের সাধারণ সদস্য৷ জেনেটিক কোড মেইনটেন করে তৈরী করা রূপবতী রমনী৷ সে লিটারেচার পছন্দ করে৷ কৃত্রিম হৃদের পাশে ফলসউডের আগুনের পাশে বসে রাতের তারার দিকে তাকিয়ে থাকতে পছন্দ করে৷ ভালবাসার মানুষ খুঁজে বেড়ায় আর সাতশবছর আগে ছেড়ে আসা পৃথীবির জন্য যাদের মন কাঁদে তেমন একজন হচ্ছে আইমিরা!
কৃত্রিম উপগ্রহের জীবন যতটা ভাবা হয়েছিলো ততটা নিরবিচ্ছিন্ন সুখের হয়নি অনেকের কাছেই৷ প্রথম দু শতাব্দী ভালই কেটেছিলো৷ এরপর বেশকিছু মানুষ বিষন্ন হয়ে পড়ে হঠাৎ করে৷ আর যাই হোক হাজার হাজার বছরের পৃথিবীর মায়া, পৃথিবীর ক্রোমজোম বাহী মানুষেরা কয়েকশ বছরে কিভাবে ত্যাগ করবে!
প্রায় অমর কৃত্রিম উপগ্রহ বাসীদের অনেকেই আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলো তখন৷ উপায় অন্ত না পেয়ে পৃথিবী সম্পর্কিত সমস্ত সাহিত্য আর চিন্তাভাবনা রহিত করা হয় আইন দিয়ে৷ পাসকোড দিয়ে সংরক্ষিত করা হয় যাবতীয় অতীত তথ্য৷ চতুর্থ ধারার অপরাধ হিসেবে গন্য করা হয় পৃথিবী সম্পর্কিত সকল স্মৃতিচারণ এবং জ্ঞান৷ আইমিরা তেমন অপরাধে অপরাধী৷ কতৃপক্ষ সেটা জানতে পেরে তার কারাবাসের ব্যবস্থা করেছিলো৷
ঠিক তখনই এই অভিযানের তোড়জোড় শুরু করা হয়৷ প্রতি অভিযানে যেহেতু একজন সাধারণ নাগরিককে রাখা হয়, সেহেতু নিনিরা প্রোফাইল ঘেটে আইমিরাকে চায়৷
কতৃপক্ষ যখন তাকে এটা জানায়, সানন্দে রাজী হয়ে যায় সে! সাতশ বছরে যারা পৃথিবীর মায়া কাটাতে পারেনি তাদের একজন হিসেবে পঞ্চম জেনারেশানের আইমিরা তাই পৃথিবীর বুকে পা রাখার জন্য অস্থির৷ অবশ্য নিনিরা প্রথম ক্ষেত্রে তাকে সে সুবিধা দেয় নি৷
শন আর মেরীর তথ্য গুলো নিয়ে যখন নিনিরা আর ফুন বিশ্লেষণ করছিলো তখন আলট্রাকম কথা বলার অনুমতি চাইল৷
আলট্রা কম: নিনিরা ! আমি কিছু ব্যাপারে তোমার এবং তোমাদের সকল সদস্যের সাথে আলোচনা করতে চাই৷ তবে আইমিরা কে এ সভায় প্রয়োজন নেই৷
দ্রণ: কেন? ও তো আমাদের দলেরই একজন!
আলট্রাকম: আইমিরা সদস্য৷ ঠিক৷ তবে সে আমাদের কোডঅব কনডাক্টে চতুর্থ ধারার অপরাধী এবং সিভিলিয়ান! অনুচ্ছেদ তের রুল নাইনে স্পেসশীপে থাকা সিভিলিয়ানদের উপস্থিতি রদ করা হয়েছে দ্রন!
নিনিরা: ঠিক আছে৷ সবাই কে আসতে বল৷
...........
আইমিরা ছাড়া সবাই ডেকে হাজির হলো
আলট্রাকম: আজ মেরি এবং শন পৃথিবীর এ অংশটায় বনভূমিতে রেকি করতে গিয়েছিলো৷ সাথে ছিল দুটো স্কাউট বট৷ তাদের প্রতিরক্ষা এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য৷ বাতাস মাটি পানি কোথাও তেমন কোন প্রতিবন্ধকতা তারা খুঁজে পায়নি৷ আছে কিছু নতুন উদ্ভিদ আর প্রানীকূলেও কিছুটা পরিবর্তন প্রাথমিক ভাবে নজরে পড়েছে৷ তবে আমাদের পর্যবেক্ষণে কোন মানুষ বা তেমন কিছু দৃষ্টিগোচর হয়নি৷
তবে!? মেরি এবং শন জানিয়েছে তাদের কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছিল৷ তাদের মনে হচ্ছিল কেউ বা কারা যেনো তাদের প্রতি লক্ষ্য রেখেছে সবসময়৷ মানুষের এসব অনুভূতি আগে কম্পিউটার আমলে নিত না৷ দু একটি ক্ষেত্রে অভিযানে আমরা প্রমাণ পেয়েছি যে এসব অনুভূতির অবমূল্যায়ন আমাদের স্পেসশীপ ধ্বংস বা প্রাণহানি বা ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন করেছিল৷ আমরা তাই এসবের গুরুত্ব দেয়া শিখেছি৷ যদিও বর্তমান অভিযানে এর সম্ভাবনা ০.৩ শতাংশেরও কম! কেননা মানুষ বলতে আমরা কিছুই এখানে ট্রেস করতে পারিনি৷
কিন্তু!!! মেরী আর শন এর স্পেসস্যুট পরীক্ষা করে আমরা কিছু অদ্ভুত ছোট ছোট দানার খোঁজ পেয়েছি!
প্রাচীন পৃথিবীতে একধরণের শস্য হত৷ যাকে বলা হত সরিষা৷ সেই ফসলের দানার চেয়ে কিছুটা বড় রংপরিবর্তনশীল একধরণের দানা৷ আপাত দৃষ্টিতে দানা গুলো কোন উদ্ভিজ্য বীজ মনে হলেও আসলে সেগুলো একধরণের অতি আনুবীক্ষনিক ডিভাইস ! বীজ এর খোলসের ভেতরে অতি ক্ষুদ্র হাই রেজুল্যুশনের ক্যামেরা আর ট্রান্সমিটার বসানো৷ বীজ গুলো আমাদের প্রতিরক্ষা রোবটের দৃষ্টিগোচর এবং সংস্পর্শে আসামাত্র নষ্টহয়ে যাচ্ছে৷ জীবন্ত একটা বীজকে স্ক্যান করে প্রায় হাজার গুণ বড় করে আমরা ক্যামেরার অস্তীত্ব পাই৷ আরও বড় করে পাই ট্রান্সমিটারের দেখা৷ এগুলো বলতে গেলে সেই প্রাচীন পৃথিবীর টেকনোলজি৷ কিন্তু বীজের মোড়কে এগুলোকে ছড়িয়ে দেয়া একেবারেই নতুন!
অরুহাণ: বিস্মিত হয়ে! তারমানে তুমি বলতে চাইছো আমাদের স্পেসশীপের ভেতর সম্পর্কে কেউ বা কোন কিছু ওয়াকিবহাল!
আলট্রাকম: শুধু তাই না৷ আমাদের ভেতরে বীজগুলো কতটা ছড়িয়েছে সেটা সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেই! যে পরিমান ভেতরে ঢুকেছে সেটা হিসেব করলে ডেক সহ কোন জায়গায় কি আছে কেউ বা কোন কিছু সম্পর্কে বিস্তারিত ওরা জানে৷ হয়তো এই মুহুর্তে আমাদের সকল কথাও তারা শুনছে!
আসলে প্রাথমিক নীরিক্ষণে হোমোসেপিয়েন্স এর প্রমাণ না পেয়ে সম্ভবত আমরা আমাদের সিক্যুরিটিতে একটু ঢিল দিয়ে ফেলেছি৷ আমি প্রতিরক্ষা রোবটদের নির্দেশ দিয়েছি তন্ন তন্ন করে খুঁজে বীজ গুলো নষ্ট করতে৷
এই বলে আলট্রাকম থামলো!
সবার মন আপাততঃ দুশ্চিন্তা গ্রস্থ৷ ছাপ পড়েছে চেহারায়৷
দলপতি নিনিরা: যখন এর অস্তিত্ব পেলে তখনই ফ্রিক্যুয়েন্সি জ্যাম করে দিতে!
আলট্রাকম: বাইরে আমাদের একটা স্কাউটশিপ আছে৷ যেটাতে আমরা যোগাযোগ রাখছি একটা নির্দিষ্ট কোডিং এর মাধ্যমে৷ একই কোডিং এ আমাদের ভেতরের তথ্য চলে যাচ্ছে! তাই জ্যাম করলে স্কাউটশীপটা ক্রাশ করবে.... আর এটা আমরা জানতে পেরেছি সামান্য পূর্বে!
নিনিরা কালবিলম্ব না করে আলট্রা কম কে নির্দেশ দিল সিগনাল জ্যাম করে স্কাঊটশীপটা অকেজো করে দিতে৷ তাই করলো আলট্রাকম৷
অবাক ব্যাপার স্কাউটশীপটা বনভূমির দিক থেকে উড়ে আসলো ডেকের বড়ো উইন্ডোর দিকে৷ওটা এখন স্পেসশিপটাকেই যেনো পর্যবেক্ষণ করছে!
স্কাউটশীপটার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে ওটা শাটডাউন হয়ে পড়ার কথা৷ প্রতিরক্ষা রোবট এটাকে এখন আনআয়ডেন্টিফায়েড
এ সভাতে অনুপস্থিত আইমিরা ছোট্ট একটা অবজার্ভেশান ডেকে বসে বাইরের পৃথিবীটা অধীর আগ্রহে দেখছিলো৷ ঘোলাটে চাঁদের আলোয় অনতিদূরে থাকা বনভূমির ছায়া ছায়া কালো গাছেরা তাকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করছে যেনো৷ হঠাৎ আলোর চমকানিতে চমকিত হয়ে ডানে তাকালো সে৷ জ্বলন্ত ছোট স্কাউটশীপটা আগুনের ফুলঝুড়ি ছুটিয়ে বিধ্বস্ত হচ্ছে৷
ঠিক সেই মুহুর্তে তার কানের মাঝে ফিসফিস করে কেউ যেনো বলল
" তোমার পৃথিবীতে তোমাকে স্বাগতম আইমিরা! "
কন্ঠটাতে ছিলো আদর মায়া আর অফুরাণ ভালবাসা৷ আইমিরার কোন মা বা বাবা নেই৷ যদি থাকতো তাহলে ঠিক এমণ করেই তারা হয়তো তাকে সম্বোধন করতো!
আইমিরার দু'চোখ বেয়ে অশ্রু নামলো পরম মমতায় একই সাথে পৃথিবী ত্যাগ করে চলে যাবার হাহাকারে!
নিনিরা এখন ধ্যানমগ্ন৷ সপ্তাহে অন্ততঃ একবার সে নিশ্চল হয়ে যায়৷ তখন সমগ্র দায়িত্ব থাকে আলট্রাকম এর উপর৷ এটা হচ্ছে পুরো সপ্তাহে তার বিশ্রাম এর সময়৷ সপ্তাহে চারঘন্টা সে রিফিল ক্যাপস্যুলে কাটায়৷ এসময়টায় তার দেহের প্রয়োজনীয় সকল সাপোর্ট দেয়া হয়৷ শরীরের সকল কোষগুলোকে উজ্জীবিত করা হয়৷ ভেতরে বায়োলজিকাল অর্গান গুলোর পুষ্টির ব্যবস্থা করা হয়৷ নিনিরা সাধারণ মানুষের মতো খাদ্য গ্রহণ করে না৷ এমন সাই ওমেন বা ম্যান তৈরী করা সময় সাপেক্ষ আর ব্যয় বহুল৷ তবুও এটা করা হয় অভিযানের কথা চিন্তা করে৷ কৃত্রিম পৃথিবীতে তাদের সংখ্যা হাতে গোনা!
আজ পরিপূর্ণ চারঘন্টা রিফিল ক্যাপসূলে তার কাটানো হলো না৷ দুঘন্টার কিছু পরে জীবনি বর্ধক তরল দিয়ে সময়ের পূর্বেই তার ধ্যান ভাঙালো আলট্রাকম৷ যখন তার মতো সাইওমেন বা ম্যান তাদের সাপ্তাহঅন্ত বিশ্রামের সুযোগ না পায়, মানে যদি কোন বিশেষ পরিস্থিতির অবতারণা হয় তখনই জীবনি বর্ধক তরল দিয়ে তাদের ধ্যানের সময়টা কমিয়ে আনা হয়৷
নিনিরা নতুন একপ্রস্থ পোষাক পড়ে তার মস্কিষ্কে থাকা চিপের মাধ্যমে আলট্রাকমের সাথে যুক্ত হলো৷ এই যুক্ত হবার ব্যাপারটা অদ্ভুত৷ হলোগ্রাফিকাল প্রোজেকশানে সাদা আলোকিত একটা ঘরে ভার্চুয়ালি ,আলট্রাকম
মানুষের রুপ ধরে উপস্থিত হয়৷ নিনিরা একঅর্থে একজন বায়োলজিকাল আলট্রাকম৷ তাদের সাক্ষাৎ হয় কখনও বন্ধুর মতো কখনও অভিবাবকের মতো কখনও উর্দ্ধ আর অধঃস্তন অফিসারের মতো! আজ আলট্রাকম হাজির হয়েছে সাদা পোষাকে এক বৃদ্ধের বেশে৷ যা আগে কখনও নিনিরা অবলোকন করেনি৷
কথোপকথন হলো অনেকটা গোত্রপ্রধান এবং দলপতির মতো৷
আলট্রাকম: আমি অতি দুঃখিত নিনিরা! তোমাকে ধ্যান থেকে সময়ের পূর্বে জাগিয়ে তুলেছি বলে৷ তবে প্রয়োজন ছিল৷
নিনিরা: এটা নিয়ে আমি চিন্তিত নই আলট্রাকম৷ নিশ্চয়ই এমন কোন কারণ ঘটেছে৷ কি বলবে বল?
আলট্রাকম: আমাদের উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ বিশেষ ভাবে চিন্তিত! অরুহান ছোটদানা গুলোকে পর্যবেক্ষণ করেছে৷ সে দ্বিধাগ্রস্থ!
নিনিরা: তোমার কথা ঠিক বুঝলাম না !
আলট্রাকম: বুঝিয়ে বলছি৷ দানাগুলোর ঊপরে যে খোলস সেটা কোন উদ্ভিজ্য বীজ এর৷যা সম্পর্কে আমাদের কাছে কোন ধরণের তথ্য উপাত্ত নেই! প্রাচীন পৃথিবীর প্রায় সমস্ত বৃক্ষ এবং প্রায় সকল প্রজাতির উদ্ভিদের ডাটা ঘেটে আমরা এর সম্পর্কে কোন তথ্য পাইনি৷অর্থাৎ এটা নতুন একপ্রকার উদ্ভিদের ফল বা বিজের খোসা! তার ভেতরে ল্যান্স বা অন্যান্য যে জিনিসগুলো বসানো তার সাথে আমাদের আনুবিক্ষনিক টেকনোলজির কিছুটা তুলনা চলতে পারে! প্রায় সাড়ে সাতশবছর আগে পৃথিবী থেকে ঊপগ্রহে যাবার জন্য যেসব যান ছিল এবং আমরা সেগুলোকে বিকল করে দিই, টেকনলজিটা অনেকটা তেমন!
কিন্তু সেটাকে অতি আনুবীক্ষনিক প্রযুক্তির পর্যায়ে ফেলা যায়৷ এত ছোট আর এত সুক্ষ্ম কাজ আমরাও আজ পর্যন্ত করতে পারিনি!
আর আরেকটা কথা, এ দানা গুলো এটাই প্রমাণ করে পৃথিবীতে আমরা একা নই! মানুষ বা মানুষের মতো কিছু এখানে আছে৷ যারা বুদ্ধিমান এবং প্রযুক্তিগত দিক থেকে একটা রেভ্যুলুশনারী পরিবর্তন এনেছে৷ আমাদের প্রযুক্তি দিয়ে তাদের ট্রেসপর্যন্ত করা যাচ্ছে না৷ অথচ তারা আমাদের সম্পর্কে যথেস্ট তথ্য সংগ্রহ করে নিয়েছে বা নিচ্ছে এখনও৷
সবচেয়ে অবাক করা ব্যপার হচ্ছে, আমরা যন্রের সাথে প্রাণ অর্থাৎ মানুষকে জুড়ে আধুনিক হতে চাইছি আর তারা সেটা করছে উদ্ভিদের সাথে যন্রের৷হয়তো মানুষেরও!
নিনিরা: তারমানে তুমি বলতে চাইছো আমরা যেখানে দুটো সাবজেক্ট নিয়ে কাজ করছি সেখানে তারা তিনটে সাবজেক্ট নিয়ে কাজ করে সফল!
আলট্রাকম: অনেকটা তাই নিনিরা!
পৃথিবীর বিপদে আমরা যখন নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিলাম আজ থেকে প্রায় সাড়ে সাতশ বছর আগে এবং এরও আগে যখন আমরা পৃথিবীকে শোষণ করেছি আমাদের স্বার্থে সে সময় থেকেই সম্ভবত তারা এখানে নতুন চিন্তাভাবনা নিয়ে কাজ করেছে আর সফলও হয়েছে৷
আজথেকে সাড়েসাতশ বছর আগে যে বৈরী প্রকৃতি ছিল সে সময়ে যে উনষাটটি সেক্টর ছিল , যে সব জায়গায় ধুকে ধুকে ঠিকে থাকা কিছু মানুষ ছিল, তারা হঠাৎ করেই পৃথিবি থেকে গায়েব হয়ে যায়!
সেসময় আমরা সেটা আমলে নিইনি৷ মনে করেছিলাম ওটা কোন মহামারী ছিল৷ পুরোনো যুগের মহামারী! আমরা তখন বুঝতে পারিনি এই পৃথিবীর মানুষরাই এটা ঘটিয়েছিল৷
হয়তো সেসময়ই তারা নতুন কোন প্রজাতি সৃষ্টি করেছিল আর সেটার উত্তরণের জন্য নিজেদের শেষ করে দিয়েছিলো৷ তাদের উদ্দেশ্য যে চরম ভাবে সফল হয়েছে সেটা তো বুঝতেই পারছো!
সত্যি বলতে কি, আমাদের জীববিদ বিশেষজ্ঞ ফুন সে সময়ের মানুষ প্রজাতি ধ্বংসের একটা কারণ খুঁজে পেয়েছে৷ এবং সে যথেস্ট বিচলিত ব্যাপারটা নিয়ে!
নিনিরা: কারণ টা কি তুমি ধরতে পেরেছো?
আলট্রাকম: কিছুটা৷ মেরী আর শন যখন বাইরে রেকি করতে যায় , তখন প্রতিরক্ষা রোবট ফসিল জাতীয় কিছু একটা সংগ্রহ করে৷ সেটা ছিল প্রায় সাত শতাব্দী পূর্বের মানুষের একটা হাঁড়ের সামান্য অংশ৷
এনালাইসিস প্রমাণ করেছে ক্ষয়ে যাওয়া হাঁড় একটি আনআয়ডেন্টিফায়েড ভাইরাসের কারণে সে সময়ে সেই মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছে! প্রাণঘাতী ঐ ভাইরাসটিই সে সময়ের মহামারীর কারণ!
নিনিরা: তারমানে তুমী বলতে চাইছো মানুষ ইচ্ছে করেই নিজেদের শেষ করে দিয়েছে! আর নতুন কোন প্রজাতি সৃষ্টি করেছে বৈরী পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য! ওরে ব্বাস৷
কিছুক্ষণ চিন্তা করলো নিনিরা৷ আলট্রাকম নিশ্চুপ৷
নিনিরা: আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বর্তমানে কি অবস্থা আলট্রাকম? বাইরে থেকে আক্রমণের সম্ভাবনা কতটুকু? আর তোমার এব্যাপারে কোন সাজেশান আছে কি?
আলট্রাকম: আসলে ব্যাপারটা জটীল৷ আমাদেরকে আক্রমণের সম্ভাবনা দেখছি না৷ আর আক্রমণ হলে এমন দুটো পৃথিবী ধ্বংস করে দেয়া যাবে সেই পরিমাণ অস্ত্র আছে আমাদের কাছে! তবে!!!!
তবে, আনআয়ডেন্টিফায়েড ভাইরাস কে আমরা রুখতে পারবো কি না, সে ব্যাপারে যথেস্ট সন্দেহ আছে৷
পৃথিবী আর পৃথিবীর মানুষের সাথে আমরা অতীতে যে ব্যবহার করেছি সেটা যদি এরা মনে রাখে তবে কোনভাবেই তারা আমাদের কে ক্ষমা করবে না বলেই আমার বিশ্বাস৷ সেক্ষেত্রে তারা আমাদের কে এখন হয়তো পর্যবেক্ষণ করছে, তাদের হাতে আমাদের সম্পর্কে তথ্য আছে অথচ আমরা তাদের সম্পর্কে কিছুই জানিনা৷ আমাদের তৈরী থাকতে হবে নিনিরা যে কোন কিছুর জন্যই!
হঠাৎ বাস্তব অবস্থায় নিনিরা কে ফিরিয়ে আনল আলট্রাকম৷ নিনিরাও অবাক হল কিছুটা৷
হলগ্রাফিক স্ক্রীনে অবজারভেটরী রোবট এর ডেক দেখা গেল৷ যান্ত্রিক কন্ঠস্বর ভেসে আসলো
নিনিরা! একটা ব্যাপারে তোমার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি! অনুমতি চাইছি কথা বলার৷
নিনিরা : বল৷ কি বলতে চাও?
অবজারভেটরী রোবট: বনভূমিতে কিছু বৃক্ষের নড়াচড়ার আভাস পাচ্ছি আমরা! ওগুলো তাদের জায়গা পরিবর্তন করছে৷ বৃক্ষ নড়তে পারে এমন কিছু আমাদের ডাটাবেসে নেই৷ মনে হচ্ছে এরা নতুন প্রজাতির কোন উদ্ভিদ৷
তোমার পরামর্শ চাইছি!
নিনিরা: আলট্রাকম! আমাদের প্রতিরক্ষা বলয়ের কাছাকাছি কোন কিছু এলে সেটার দিকে নজর রেখো৷ বলয় অতিক্রম করলে ছাই করে দেবে সেটা যা বা যেই হোক! আমি অবজারভেটরীতে যাচ্ছি!
অবজারভেটরীতে যাবার সময় আলট্রাকম নিনিরা কে একটা তথ্য দিল৷ যেটা চিন্তায় ফেলে দিল নিনিরা কে৷
আলট্রাকম: নিনিরা আমার সিস্টেম কিছুক্ষণ আগে হ্যাক করার চেষ্টা করেছিল আইমিরা! সে প্রাচীন পৃথিবীর ইতিহাস সম্পর্কে খোঁজ করার চেষ্টা করছে! কি করবো?
আর আরেকটা কথা৷ বাইরে থেকে সম্ভবত আইমিরার সাথে যোগাযোগ করেছে কেউ! তার মস্তিষ্ক তরঙ্গে স্বাস্থ্য রোবট অন্য একটা ফ্রিক্যুয়েন্সি প্রবেশ করার প্রমাণ পেয়েছে! এটা কোন ডিজিটাল তরঙ্গ নয় , তাই আমরা একে আটকাতে পারিনি!
নিনিরা: শুধু মাত্র প্রতিরক্ষা বুহ্যের ক্ষতি না করলে সে যা করতে চাচ্ছে তা করতে দাও৷ আইমিরার সাথে যদি কেউ যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তবে সেই সুত্র ধরে আমরা এখনকার মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারবো বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবো! গাছের ব্যপারটা বুঝি আগে! মুভিং ট্রি! যাস্ট আনবিলিভেবল!
আলট্রাকম নিশ্চুপ হয়ে গেল৷ দুশ্চিন্তাগ্রস্থ নিনিরা অবজারভেটরিতে যাবার ভাসমান প্লেটে উঠল৷
দুঃসময়ে পৃথিবী ছেড়ে যাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহ বাসী মানুষের অকৃতজ্ঞতার কথা যদি এই নতুন পৃথিবীর মানুষেরা স্মরণ রাখে তবে বলতে হয় মানুষই মানুষের বড় শত্রু এখন৷ অতীত তাহলে পাল্টায়নি৷ ইতিহাস ফিরে এসেছে আবার৷ আবার শুরু হচ্ছে আরেকটি মানুষ বনাম মানুষ খেলা!
যেখানে যোগ্যরাই টিকে থাকবে৷ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যোগ্য কারা? নিনিরা রা নাকি নতুন পৃথিবীর নতুন রা!
আজ পরিপূর্ণ চারঘন্টা রিফিল ক্যাপসূলে তার কাটানো হলো না৷ দুঘন্টার কিছু পরে জীবনি বর্ধক তরল দিয়ে সময়ের পূর্বেই তার ধ্যান ভাঙালো আলট্রাকম৷ যখন তার মতো সাইওমেন বা ম্যান তাদের সাপ্তাহঅন্ত বিশ্রামের সুযোগ না পায়, মানে যদি কোন বিশেষ পরিস্থিতির অবতারণা হয় তখনই জীবনি বর্ধক তরল দিয়ে তাদের ধ্যানের সময়টা কমিয়ে আনা হয়৷
নিনিরা নতুন একপ্রস্থ পোষাক পড়ে তার মস্কিষ্কে থাকা চিপের মাধ্যমে আলট্রাকমের সাথে যুক্ত হলো৷ এই যুক্ত হবার ব্যাপারটা অদ্ভুত৷ হলোগ্রাফিকাল প্রোজেকশানে সাদা আলোকিত একটা ঘরে ভার্চুয়ালি ,আলট্রাকম
মানুষের রুপ ধরে উপস্থিত হয়৷ নিনিরা একঅর্থে একজন বায়োলজিকাল আলট্রাকম৷ তাদের সাক্ষাৎ হয় কখনও বন্ধুর মতো কখনও অভিবাবকের মতো কখনও উর্দ্ধ আর অধঃস্তন অফিসারের মতো! আজ আলট্রাকম হাজির হয়েছে সাদা পোষাকে এক বৃদ্ধের বেশে৷ যা আগে কখনও নিনিরা অবলোকন করেনি৷
কথোপকথন হলো অনেকটা গোত্রপ্রধান এবং দলপতির মতো৷
আলট্রাকম: আমি অতি দুঃখিত নিনিরা! তোমাকে ধ্যান থেকে সময়ের পূর্বে জাগিয়ে তুলেছি বলে৷ তবে প্রয়োজন ছিল৷
নিনিরা: এটা নিয়ে আমি চিন্তিত নই আলট্রাকম৷ নিশ্চয়ই এমন কোন কারণ ঘটেছে৷ কি বলবে বল?
আলট্রাকম: আমাদের উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ বিশেষ ভাবে চিন্তিত! অরুহান ছোটদানা গুলোকে পর্যবেক্ষণ করেছে৷ সে দ্বিধাগ্রস্থ!
নিনিরা: তোমার কথা ঠিক বুঝলাম না !
আলট্রাকম: বুঝিয়ে বলছি৷ দানাগুলোর ঊপরে যে খোলস সেটা কোন উদ্ভিজ্য বীজ এর৷যা সম্পর্কে আমাদের কাছে কোন ধরণের তথ্য উপাত্ত নেই! প্রাচীন পৃথিবীর প্রায় সমস্ত বৃক্ষ এবং প্রায় সকল প্রজাতির উদ্ভিদের ডাটা ঘেটে আমরা এর সম্পর্কে কোন তথ্য পাইনি৷অর্থাৎ এটা নতুন একপ্রকার উদ্ভিদের ফল বা বিজের খোসা! তার ভেতরে ল্যান্স বা অন্যান্য যে জিনিসগুলো বসানো তার সাথে আমাদের আনুবিক্ষনিক টেকনোলজির কিছুটা তুলনা চলতে পারে! প্রায় সাড়ে সাতশবছর আগে পৃথিবী থেকে ঊপগ্রহে যাবার জন্য যেসব যান ছিল এবং আমরা সেগুলোকে বিকল করে দিই, টেকনলজিটা অনেকটা তেমন!
কিন্তু সেটাকে অতি আনুবীক্ষনিক প্রযুক্তির পর্যায়ে ফেলা যায়৷ এত ছোট আর এত সুক্ষ্ম কাজ আমরাও আজ পর্যন্ত করতে পারিনি!
আর আরেকটা কথা, এ দানা গুলো এটাই প্রমাণ করে পৃথিবীতে আমরা একা নই! মানুষ বা মানুষের মতো কিছু এখানে আছে৷ যারা বুদ্ধিমান এবং প্রযুক্তিগত দিক থেকে একটা রেভ্যুলুশনারী পরিবর্তন এনেছে৷ আমাদের প্রযুক্তি দিয়ে তাদের ট্রেসপর্যন্ত করা যাচ্ছে না৷ অথচ তারা আমাদের সম্পর্কে যথেস্ট তথ্য সংগ্রহ করে নিয়েছে বা নিচ্ছে এখনও৷
সবচেয়ে অবাক করা ব্যপার হচ্ছে, আমরা যন্রের সাথে প্রাণ অর্থাৎ মানুষকে জুড়ে আধুনিক হতে চাইছি আর তারা সেটা করছে উদ্ভিদের সাথে যন্রের৷হয়তো মানুষেরও!
নিনিরা: তারমানে তুমি বলতে চাইছো আমরা যেখানে দুটো সাবজেক্ট নিয়ে কাজ করছি সেখানে তারা তিনটে সাবজেক্ট নিয়ে কাজ করে সফল!
আলট্রাকম: অনেকটা তাই নিনিরা!
পৃথিবীর বিপদে আমরা যখন নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিলাম আজ থেকে প্রায় সাড়ে সাতশ বছর আগে এবং এরও আগে যখন আমরা পৃথিবীকে শোষণ করেছি আমাদের স্বার্থে সে সময় থেকেই সম্ভবত তারা এখানে নতুন চিন্তাভাবনা নিয়ে কাজ করেছে আর সফলও হয়েছে৷
আজথেকে সাড়েসাতশ বছর আগে যে বৈরী প্রকৃতি ছিল সে সময়ে যে উনষাটটি সেক্টর ছিল , যে সব জায়গায় ধুকে ধুকে ঠিকে থাকা কিছু মানুষ ছিল, তারা হঠাৎ করেই পৃথিবি থেকে গায়েব হয়ে যায়!
সেসময় আমরা সেটা আমলে নিইনি৷ মনে করেছিলাম ওটা কোন মহামারী ছিল৷ পুরোনো যুগের মহামারী! আমরা তখন বুঝতে পারিনি এই পৃথিবীর মানুষরাই এটা ঘটিয়েছিল৷
হয়তো সেসময়ই তারা নতুন কোন প্রজাতি সৃষ্টি করেছিল আর সেটার উত্তরণের জন্য নিজেদের শেষ করে দিয়েছিলো৷ তাদের উদ্দেশ্য যে চরম ভাবে সফল হয়েছে সেটা তো বুঝতেই পারছো!
সত্যি বলতে কি, আমাদের জীববিদ বিশেষজ্ঞ ফুন সে সময়ের মানুষ প্রজাতি ধ্বংসের একটা কারণ খুঁজে পেয়েছে৷ এবং সে যথেস্ট বিচলিত ব্যাপারটা নিয়ে!
নিনিরা: কারণ টা কি তুমি ধরতে পেরেছো?
আলট্রাকম: কিছুটা৷ মেরী আর শন যখন বাইরে রেকি করতে যায় , তখন প্রতিরক্ষা রোবট ফসিল জাতীয় কিছু একটা সংগ্রহ করে৷ সেটা ছিল প্রায় সাত শতাব্দী পূর্বের মানুষের একটা হাঁড়ের সামান্য অংশ৷
এনালাইসিস প্রমাণ করেছে ক্ষয়ে যাওয়া হাঁড় একটি আনআয়ডেন্টিফায়েড
নিনিরা: তারমানে তুমী বলতে চাইছো মানুষ ইচ্ছে করেই নিজেদের শেষ করে দিয়েছে! আর নতুন কোন প্রজাতি সৃষ্টি করেছে বৈরী পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য! ওরে ব্বাস৷
কিছুক্ষণ চিন্তা করলো নিনিরা৷ আলট্রাকম নিশ্চুপ৷
নিনিরা: আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বর্তমানে কি অবস্থা আলট্রাকম? বাইরে থেকে আক্রমণের সম্ভাবনা কতটুকু? আর তোমার এব্যাপারে কোন সাজেশান আছে কি?
আলট্রাকম: আসলে ব্যাপারটা জটীল৷ আমাদেরকে আক্রমণের সম্ভাবনা দেখছি না৷ আর আক্রমণ হলে এমন দুটো পৃথিবী ধ্বংস করে দেয়া যাবে সেই পরিমাণ অস্ত্র আছে আমাদের কাছে! তবে!!!!
তবে, আনআয়ডেন্টিফায়েড
পৃথিবী আর পৃথিবীর মানুষের সাথে আমরা অতীতে যে ব্যবহার করেছি সেটা যদি এরা মনে রাখে তবে কোনভাবেই তারা আমাদের কে ক্ষমা করবে না বলেই আমার বিশ্বাস৷ সেক্ষেত্রে তারা আমাদের কে এখন হয়তো পর্যবেক্ষণ করছে, তাদের হাতে আমাদের সম্পর্কে তথ্য আছে অথচ আমরা তাদের সম্পর্কে কিছুই জানিনা৷ আমাদের তৈরী থাকতে হবে নিনিরা যে কোন কিছুর জন্যই!
হঠাৎ বাস্তব অবস্থায় নিনিরা কে ফিরিয়ে আনল আলট্রাকম৷ নিনিরাও অবাক হল কিছুটা৷
হলগ্রাফিক স্ক্রীনে অবজারভেটরী রোবট এর ডেক দেখা গেল৷ যান্ত্রিক কন্ঠস্বর ভেসে আসলো
নিনিরা! একটা ব্যাপারে তোমার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি! অনুমতি চাইছি কথা বলার৷
নিনিরা : বল৷ কি বলতে চাও?
অবজারভেটরী রোবট: বনভূমিতে কিছু বৃক্ষের নড়াচড়ার আভাস পাচ্ছি আমরা! ওগুলো তাদের জায়গা পরিবর্তন করছে৷ বৃক্ষ নড়তে পারে এমন কিছু আমাদের ডাটাবেসে নেই৷ মনে হচ্ছে এরা নতুন প্রজাতির কোন উদ্ভিদ৷
তোমার পরামর্শ চাইছি!
নিনিরা: আলট্রাকম! আমাদের প্রতিরক্ষা বলয়ের কাছাকাছি কোন কিছু এলে সেটার দিকে নজর রেখো৷ বলয় অতিক্রম করলে ছাই করে দেবে সেটা যা বা যেই হোক! আমি অবজারভেটরীতে যাচ্ছি!
অবজারভেটরীতে যাবার সময় আলট্রাকম নিনিরা কে একটা তথ্য দিল৷ যেটা চিন্তায় ফেলে দিল নিনিরা কে৷
আলট্রাকম: নিনিরা আমার সিস্টেম কিছুক্ষণ আগে হ্যাক করার চেষ্টা করেছিল আইমিরা! সে প্রাচীন পৃথিবীর ইতিহাস সম্পর্কে খোঁজ করার চেষ্টা করছে! কি করবো?
আর আরেকটা কথা৷ বাইরে থেকে সম্ভবত আইমিরার সাথে যোগাযোগ করেছে কেউ! তার মস্তিষ্ক তরঙ্গে স্বাস্থ্য রোবট অন্য একটা ফ্রিক্যুয়েন্সি প্রবেশ করার প্রমাণ পেয়েছে! এটা কোন ডিজিটাল তরঙ্গ নয় , তাই আমরা একে আটকাতে পারিনি!
নিনিরা: শুধু মাত্র প্রতিরক্ষা বুহ্যের ক্ষতি না করলে সে যা করতে চাচ্ছে তা করতে দাও৷ আইমিরার সাথে যদি কেউ যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তবে সেই সুত্র ধরে আমরা এখনকার মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারবো বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবো! গাছের ব্যপারটা বুঝি আগে! মুভিং ট্রি! যাস্ট আনবিলিভেবল!
আলট্রাকম নিশ্চুপ হয়ে গেল৷ দুশ্চিন্তাগ্রস্থ নিনিরা অবজারভেটরিতে যাবার ভাসমান প্লেটে উঠল৷
দুঃসময়ে পৃথিবী ছেড়ে যাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহ বাসী মানুষের অকৃতজ্ঞতার কথা যদি এই নতুন পৃথিবীর মানুষেরা স্মরণ রাখে তবে বলতে হয় মানুষই মানুষের বড় শত্রু এখন৷ অতীত তাহলে পাল্টায়নি৷ ইতিহাস ফিরে এসেছে আবার৷ আবার শুরু হচ্ছে আরেকটি মানুষ বনাম মানুষ খেলা!
যেখানে যোগ্যরাই টিকে থাকবে৷ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যোগ্য কারা? নিনিরা রা নাকি নতুন পৃথিবীর নতুন রা!
নিনিরা সারারাত অবজারভেটরি ডেকে কাটিয়ে দিল৷ মেরি আর শন ওর সাথে ছিল৷ পরে নিনিরা তাদের পাঠিয়ে দেয় বিশ্রাম নিতে৷ তার আগে ঠিক করে আগামীকাল ভোরের আলো ফোঁটার পর একটা টিম নিজে লীড করে বাইরে যাবে নিনিরা৷
ঠিক হলো ফুন আর দ্রণ থাকবে শীপে৷ বাকি পাঁচজন বাইরে থাকবে ৷ সম্ভব হলে রাত কাটাবে তারা৷ দেখতে চায় কেউ তাদের আক্রমণ করে কি না! কিংবা অন্য কোন বিপদ আসে কি না!
স্কাউট শীপের ল্যান্ড এনালাইসিস রিপোর্ট থেকে নিনিরা অবগত হয়েছিল মেরী আর শন এর সময় আসপাশের বনভূমির বৃক্ষগুলোর যে অবস্থান ছিল কিছু বৃক্ষ তার অবস্থান পরীবর্তন করেছে৷ এনালাইসিস করে দেখা গেলো বৃক্ষগুলো স্পেসশীপের চারপাশে একটা বলয়ের মতো সৃষ্টি করেছে যেনো! অদ্ভুত ঠেকলো নিনিরার কাছে৷ বৃক্ষগুলো আসলে কি? তারাই কি এই পৃথিবীর নতুন বাসিন্দা!
পরমুহুর্তে সম্ভাবনা টা নাকচ করে দিল৷ এটা হতে পারে না৷ আরও কিছু আছে আরও কেউ! কিন্তু কারা? যে মানুষের দেহ সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহাল সেটা নাকি অন্য কিছু! ধ্যানমগ্নের মতো বসে থেকে ভোরের অপেক্ষায় থাকলো নিনিরা৷ বনভূমি থেকে তার চোখ সরাচ্ছে না একবারের জন্যও৷ আলট্রাকম থেকে বিভিন্ন তথ্য আসছে তার চিপে৷ দুজনে মিলে সেটা এনালাসিস করে চলেছে৷
.............
আইমিরা অবশেষে কিছু তথ্য উদ্ধার করতে পারলো অবশেষে৷ সে জানল না নিনিরা আর আলট্রাকম সে সুযোগ তাকে করে দিয়েছে৷ বাকী ছ'জনের চেয়ে সে একটু আলাদা৷ বংশপরস্পরায় ছেড়ে যাওয়া পৃথিবির প্রতি যারা টান অনুভব করেছে যারা, যারা পৃথীবীর দুর্দিনে পৃথিবীর পাশে থাকার অনুরোধ করেছিল সেই তাদের একজন হলো আইমিরা৷ সেই সময়ের পৃথিবীতে সে ছিল না৷ তার জন্ম হয় ল্যাবে৷ কৃত্রিম ঊপগ্রহের আর একটা ব্যাচের মধ্যে৷ যাদের আবেগের চেয়ে লজিকেই বেশী জোর দেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু সে ছিল অন্যরকম! একটু অন্যরকম৷ তার অন্যরকম অনুভূতির কথা প্রথম টের পায় ল্যাবে কাজ করা তাদের একজন শিক্ষক৷ একদিন রাতে আইমিরা কে একটা ছবি দেখায় সেই মহিলা৷ ছবিটা পুরোনো৷ অনেক পুরোনো৷ হাস্যজ্জ্বল একটা শিশু ৷ একজন মহিলার কোলে!
আইমিরা সে সময় থেকে অস্থির বোধ করা শুরু করে৷ উপগ্রহে তখন নতুন নতুন টেকনলজি মানুষ আর যন্ত্রের মীলিত কিছু তৈরী করার গবেষনা চলছে ধুন্দুমার রূপে৷ রোবট আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এসব অতীত৷ সাইবর্গ থেকে সাইওমেন আর ম্যান তৈরী হয়েছে ৷ তারা মানুষের মতো বা তারও বেশী সংবেদশীল তবে প্রচন্ড যুক্তীবাদী৷ অবশ্য এরা সংখ্যায় কম৷ সাধারণ মানুষের কোন লক্ষ্য নেই আকাংখা নেই৷ তারা দুটো জিনিসই বুঝে৷ কাজ আর বিনোদোন৷ খুব কাছ থেকে আইমিরা আর কিছু মানুষ সে গুলো লক্ষ্য করছিলো তখন তাদের মনে হলো অতীতের ইতিহাস জানতে হবে৷ তারা শুরু করলো সেই সম্পর্কে জ্ঞান আহরণের চেষ্টা৷ অবাক হয়ে আইমিরা লক্ষ্য করলো এ সম্পর্কে কোন তথ্য ডাটাবেসে নেই৷ তখন তারা জানতো এটাই তাদের পৃথিবী৷ এখানেই সব কিছু৷ কিছু তথ্য তারা পেল৷ বুঝতে পারলো এ উপগ্রহটাই সব কিছু নয়৷ পৃথিবী নামক একটা সবুজ নীল গ্রহ তাদের আদি নিবাস৷ তারা শুধু জানতো মৃতপ্রায় গ্রহ ছেড়ে মানুষ এখানে এসেছে৷ সব মানুষ৷ পৃথিবির দুঃসময়, সুবীধাবাদী লোক, বিশ্বাসঘাতকতা, পৃথিবী থেকে আসার যান বিকল করে দেয়া এসব কিছুই জানত না আইমিরা আর , আর যারা সত্য অনুধাবনের জন্য ছটফট করছিল৷ একসময় আইমিরার গ্রুপ টা ঠিক করলো তারা আইসোলেটেড তথ্য গুলো হ্যাক করবে৷ দীর্ঘ সময় আর প্রতীক্ষার পর তারা তা করতে পারলো৷ জানতে পারলো ক্ষমতাবান কিছু মানুষের স্বার্থপরতার কথা জানতে পারলো পৃথিবীর অতীত জীবন যাপন আর শেষ ধ্বংসের কথা৷ মানুষের ঐ গ্রহ থেকে হঠাৎ বিলিন হয়ে যাবার কাহীনী!
আরও জানতে পারল দু'শতাব্দী পর আত্মহত্যা করা মানুষগুলোর কথা৷ আইমিরা রা দেখতে পেল ধীরে ধীরে কীভাবে কৃত্রিম উপগ্রহের পরিবেশ দিন দিন খারাপ হচ্ছে৷ অনুর্বর হয়ে পড়ছে খেতখামার গূলো৷ রিসোর্সের অভাব ঘটছে প্রতিনিয়ত৷ তারপরও দাম্ভিক মানুষ গুলো তাদের অহংকার আর উচ্চাশার নিশান উড়িয়েই চলেছে৷ অবশেষে উপগ্রহের সেনেটের সিদ্ধান্ত হলো সাতশবছর ধরে তিলতিল করে যে পৃথিবী নিজেকে আগের অবস্থায় নিয়ে গেছে সেই পৃথিবিতে তারা ফিরে যাবে৷ আবার বসতি গড়বে সেখানে৷দীর্ঘ সময়ে অবজারভেটরি থেকে পৃথিবীর বুকে মনুষ্যপ্রজাতির কোন উপস্থিতি না পেয়ে একটা স্কাউটশীপ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হলো৷
সে সময়ের কিছু আগে আইমিরা আর তাদের গ্রুপটা হ্যাকিং এর জন্য আলট্রাকমের হাতে ধরা পড়ে৷ অনুভূতির প্রয়োগ দেখানো সেখানে তৃতীয় মাত্রার অপরাধ আর পৃথিবী সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ চতুর্থ মাত্রার! আইমিরাদের সকল কে কোয়ারান্টাইন জোনে নির্বাসিত করা হলো৷ শুধু আইমিরাকে প্রস্তাব দেয়া হলো পৃথিবিতে আসার! কারণ অবশ্যই আছে৷ পৃথিবিতে তাকে ব্যবহার করা হবে গবেষণার গিনিপিগ হিসেবে৷ তাকে ঠেলে দেয়া হবে প্রতিটি ক্ষেত্রে সামনে৷ সেখান থেকে আহরিত জ্ঞান লাগানো হবে অভিযোজনের কাজে৷ হয়তো পরবর্তিতে কোয়ারান্টাইন জোন থেকে আরও মানুষদের নিয়ে আসা হবে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় পর্যবেক্ষণকারী গিনিপিগ হিসেবে!
যে মানুষ গুলো পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছিলো নতুন জীবনের খোঁজে, আজ বহু শতাব্দী পরও তারা তাদের স্বার্থপর মনোভাব থেকে একবীন্দুও বিচ্ছুত হয়নি ত্যাগ করতে পারেনি তাদের বিশ্বাস ঘাতক মনো ভাব৷
আইমিরা এতকিছু জানত না! সে শুধু জানে স্পেসশীপে একজন সাধারণ সদস্য থাকে আর সে হিসেবেই সে নির্বাচিত৷
পৃথিবীতে স্পেসশীপ অবতরণের পর থেকেই সে অস্থির বোধ করছিলো৷ আর যখন তার মাথার ভেতরে কেউ কথা বলে ঊঠল, সে তার আবেগ কে ধরে রাখতে পারল না৷
সে জানে মানুষ আছে ! এই পৃথিবিতেই আছে৷ তাদের উপগ্রহের মতো এরা স্বার্থপর নয়৷ শুধু বেঁচে থাকার তাগিদেই আর বিনোদনের জন্য মানুষ নয়! তারা আছে আবেগ নিয়ে অনুভূতি নিয়ে পরস্পরের প্রতি ভালবাসা আর জীবন উৎসর্গ করার ব্রত নিয়ে৷ তারা প্রকৃতই সমাজবদ্ধ জীব৷ তারা প্রকৃতই সহানুভূতিশীল! না হলে আইমিরার মন যে পৃথিবির জন্য কাঁদে সেটা তারা বুঝল কি ভাবে! কি ভাবে এত প্রতিরক্ষা এড়িয়ে তার সাথে যোগাযোগ করলো৷ হয়তো তাদের বাহ্যিক আবহ পরিবর্তিত হয়েছে, হয়তো তাদের প্রযুক্তির ধারা বদলেছে হয়তো চেনা চেহারার মানুষ তারা নয়৷ তবু মনের দিক থেকে তারা মানুষ৷ কৃত্রিম উপগ্রহের মানুষরূপী যন্র তারা নয়!
আইমিরাকে বলা হয়েছে তোমার পৃথিবিতে তোমাকে স্বাগতম৷ তারমানে এই পৃথিবির প্রতি তার ভালবাসার কথা তারা টের পেয়েছে৷ তারা বলেছে এই স্পেসশিপের ভেতর সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহাল৷ সরিষাদানার চেয়ে বড়ো দানায় তারা যে প্রযুক্তির মেলবন্ধন গাছ আর যন্রে করে ফেলেছে, গত সাতশ বছরেও উপগ্রহের মানুষ তা পারেনি! কেন পারেনি?
আইমিরার মনে হয় সৃষ্টির শুরু থেকে যে মানুষ নিজেকে ধ্বংসের দিকে প্রবাহিত করেছে উপগ্রহের সভ্যতা তারই ধারক এবং বাহক আর নতুন পৃথিবীর নতুন মানুষেরা ধ্বংসের মুখ থেকে ঊল্টো স্রোতে প্রবাহিত হওয়া , সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রেখে জীবনের প্রকৃত উপলব্ধী প্রাপ্তির দিকে ছুটছে৷
এটা এক ধরনের নতুন খেলা ৷ মানুষ বনাম মানুষ খেলা৷ ধ্বংস আর সৃষ্টির দিকে ধাবমান দুটো ধারার লক্ষ্যে পৌঁছনোর প্রতিযোগিতা!
আইমিরার মনে নিনিরার মতোই প্রশ্ন জাগে৷ তাহলে? তাহলে কারা টিকে থাকবে শেষপর্যন্ত? আমরা না ওরা?
.........
ভোর হয়ে গেছে৷ আইমিরা তার দল নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে স্পেসশিপের বাইরে পা রাখার জন্য৷ ফুন আর দ্রন কে স্পেসশীপে রেখে হেভী আর্টিলারি সজ্জিত নিনিরার দল পা রাখলো সুরক্ষা বলয়ের বাইরে৷ সাথে আছে আইমিরা৷ দলনেত্রীর নির্দেশে সবার সামনে৷
দুটো নতুন তথ্য পেয়েছে এই দলের দুজন সদস্য৷ কিন্তু কেউই সেটা দলের সাথে শেয়ার করল না:
১) অবজার্ভেটরী থেকে মানুষের মতো কিছু একটার খোঁজ পেয়েছে নিনিরা! ঠিক মানুষ কি না, সেটা বুঝতে পারেনি সে৷ ক্যামেলিয়নের মতো বর্ণ পরিবর্তন কারী দু'পেয়ে কোন একটা জীব৷ যার মাথায় বা শরীরে লোম জাতীয় কোন কিছু নেই! নিনিরা তাই চরম সতর্ক হয়ে আছে৷ চারজন অভিযাত্রীর কথা সে মোটেই চিন্তা করছে না! উপগ্রহ থেকে তার উপর নির্দেশ শুধু সে বা তার মাথার চিপটা যেনো সুরক্ষিত থাকে! তবেই আলট্রাকম সেটার তথ্য পৌঁছাতে পারবে উদ্দীষ্ট লক্ষ্যে৷
২) এটা পেয়েছে আইমিরা৷ সে সঠিক সময়ের অপেক্ষায় আছে৷ সময় হলেই সে অপর অভিযাত্রীদের বলবে
উপগ্রহবাসী মানুষ আর সাইওমেন ও ম্যানরাই পৃথিবীর মানুষদের ধ্বংসের জন্য দায়ী!
সাতশ বছরেরও বহু আগে ছক কাটা হয়েছিল মানব সম্প্রদায় ধ্বংসের! সঠিক সময়ে তারাই আবার ফিরবে এই পৃথিবিতে৷ তাদের ইচ্ছেমতোন বেঁচে থাকার আনন্দে৷ পরিত্যক্ত মানবসমাজ সম্পর্কে যাদের সামান্যতম সহানুভূতি যাদের নেই!
...............
কথাটা বুঝতে পারার পরই হাহাকার উঠলো পাঁচটি ড্যুমে৷ মস্তিষ্কের রেজোনেন্স কৃত তরঙ্গে সেটা ছড়িয়ে পড়লো ড্যুমগুলোর প্রতিটি মানুষের মাঝে৷ তবুও তারা নিশ্চুপ থাকার সিদ্ধান্ত নিল শুধু মাত্র আইমিরার কারণে! তাকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে অন্যদের ব্যবস্থা করতে হবে এটাই সবার সিন্ধান্ত৷
কেননা গত সাতশ বা সাড়েসাতশ বছর ধরে একটা শিক্ষাই তাদের বংশপরস্পরায় দেয়া হয়েছে—
যারা পৃথিবীকে ভালবাসে, যারা পৃথিবীর মঙ্গল চায়, যারা মনে প্রাণে পৃথিবিকে অনুভব করে, তাদের ক্ষতি কোনভাবেই হতে দেয়া যাবে না! নতুন মানুষরা একটা লক্ষ্য নিয়েই বড় হয় একটা লক্ষ্যেই কাজ করে আর তি হলো পৃথিবির প্রতি ভালবাসা!
লেখকঃ পলাশ পুরকায়স্থ
Tags:
Science Fiction