স্পেসশীপ ছেড়ে পাঁচজন বাইরে যাবার জন্য একত্রিত হলো৷ ফুন আর দ্রণ ভেতরে থাকবে৷
ঘরটায় সবার আগে এসেছে আইমিরা৷ এরপর নিনিরা এবং বাকি সবাই৷ সবার সাথে একটা করে রোবট৷ অস্ত্র সজ্জিত৷ শুধু আইমিরার সাথে কোন রোবট নেই৷ মানুষের মতো হাঁটতে পারে বা চাকায় চলে এমন রোবটের কার্জকরিতা বহু আগেই বিলুপ্ত হয়েছে৷ এগুলো নষ্ট হওয়া উল্টে যাওয়া সহ নানা সমস্যায় জর্জরিত বলে প্রমানিত৷ রোবটেরা ভাসমান৷ চড়াই উৎড়াই খাদ খন্দ যেকোন পরিস্থিতিতে এরা সাবলীল৷ আলট্রাকম এদের নিয়ন্রণ করে৷ এরপর নিনিরা৷ আলট্রাকমের রেঞ্জের বাইরে কোনক্রমেই রোববটদের যাবার উপায় নেই৷ তবুও বিকল্প ব্যবস্হা রাখা৷ অভিযাত্রীদের সবাই নিরাপত্তা মূলক স্পেসস্যুটে আবৃত৷ বাইরের বাতাসে যদি ক্ষতিকর কিছু থেকে থাকে এজন্য৷
নিনিরা বের হবার আগে শেষ ব্রিফিং দিল৷
নিনিরা: অভিযাত্রীরা রোবট আমাদের প্রতিরক্ষা এবং অন্যান্য আনুসাঙ্গিক ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে৷ তবুও আমরা আজ আমাদের সাথে অস্ত্র রাখবো৷ গতদিন আমাদেরই একটি রোবট অজ্ঞাত কোন কিছু নিয়ন্রণে নিয়ে নিয়েছিলো! তারমানে বুঝা যায় এখানে যারা আছে তারা যথেস্ট বুদ্ধিমান৷
রোবটদের ফ্রিক্যুয়েন্সি এবং কোডিং এ পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ আমরা দশ বর্গ কিমি এলাকা পায়ে হেঁটে রেকি করবো৷ আমাদের সাথে থাকবে একটি ড্রিলিংবট৷ আমরা মাটির নিচেও সন্ধান চালাবো! আমাদের বি—আই নেনোবট মাটির নিচে চলে যাবে ড্রিলিং বট এর সাহায্যে৷
কারও কোন প্রশ্ন?
কেউ কোন শব্দ করলো না৷
নিনিরা: তাহলে চলো৷
স্পেসশীপের মুল দরজা খুলে সবাই নিচে নেমে এলো৷ সাবধানে নিরাপত্তা বলয়ের বাইরে পা রাখলো নিনিরা আর তার দল৷
আইমিরা উত্তেজিত পৃথিবিতে পা রাখার আবেগে৷ বাকি সবাই সতর্ক! নিরাপত্তা বলয় টা পার হবার সময় সবার শরীরে থাকা আয়ডেন্টিফায়েড কোড স্কেন করা হলো৷ এই কোডের অন্যথা হলে সবকিছু ভষ্ম হয়ে যাবে৷ এমনকি বিস্ফোরকও এই বলয় ভেদ করতে পারবে না!
ফাঁকা জায়গা পেরিয়ে সবাই বনভূমির প্রান্তে চলে এলো৷ প্রথমে কাজ শুরু করলো ড্রিলিংবট৷ শূন্য থেকে চারটি পা নামিয়ে পজিশান ঠিক করলো দুটো ড্রিলিং বট৷ এরপর ওগুলো থেকে উড়ন্ত চাকতির মতো কিছু বল বের হয়ে এলো৷ ওগুলোর উপরে নিচে ঘুরছে ধারালো ব্লেড৷ মাটি ফুঁড়ে নিমিষেই ওগুলো ভেতরে অদৃশ্য হলো৷ ড্রিলিংবট এর অন্য একটা কম্পার্টমেন্ট খুলে বেরিয়ে আসলো বেশ কিছু বি-বট৷ ঘুর্নায় মান বলের পেছন পেছন ওগুলোও অদৃশ্য হলো৷
এবার বায়োবট গুলোর দুটো অভিযাত্রীদের সামনে এবং দুটো পেছনে থেকে অভিযাত্রিদের নিয়ে বনে প্রবেশ করলো৷ বি-বট গুলো থেকে নিচে কিছু নেই অন্ততঃ পাঁচশ মিটার রেডিয়াসে কিছু নেই সংকেত পেয়ে এগুলো ওরা৷ এত ধীরলয়ে এগুনো ভাল লাগছে না আইমিরার৷ সে উশখুশ করছে৷ নিনিরা ছাড়া সবাই অবাক হয়ে চারপাশ দেখছে৷ অভিভূত সবাই! কৃত্রিম উপগ্রহে এমন বিশাল গাছ পাখির ডাক, ঝরাপাতার মচমচ শব্দ কিছুই নেই! বর্ষিয়ান গাছগুলো থেকে সবুজ মোটা লতা ঝুলছে৷ বুনো ফুল আর ফল ছড়িয়ে আছে সর্বত্র৷ পায়ে চলা কোন পথ নেই সামনে ৷ নিরেট জঙ্গল৷ সামনের দুটো বায়োবট থেকে দুটো স্প্যানার উড়াল দিল৷ ছোটখাট ঝুপঝাড় কেটে ওগুলো পথ করে নিচ্ছে অভিযাত্রীদের জন্য৷
নিনিরার সাথে আলট্রাকম যোগাযোগ করলো তখন৷
আলট্রাকম: নিনিরা আর কিছুদূর সামনে বিশাল ফাঁকা জায়গা৷ বড়ো বড়ো ঘাস সেখানে৷ ঐ জায়গা পেরুবার আগেই পড়বে গাছের বলয়!
তোমার অভিযাত্রীদের সবার হৃদস্পন্দন কিন্তু বেড়ে গেছে! পৃথিবীর রূপের মোহে ওরা আকুলিত৷ ব্যাপারটা বিপদজনক হতে পারে তোমাদের জন্য!
নিনিরা: ওদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করো আলট্রাকম!
আলট্রাকম: সম্ভব হচ্ছে না নিনিরা! আমাদের উপগ্রহের আবেগ আর এখানকার আবেগ সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রার৷ মেরি আর শন কে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে৷ অরুহান কে পারা যাচ্ছে না৷ সে বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়েছে!
নিনিরা দেখলো অরুহান স্থির হয়ে মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে পড়েছে৷ ওরা প্রায় অজানা গাছের বলয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে!
নিনিরা: অরুহান! তুমি পিছিয়ে এসো!
অরুহান স্থির৷ চারপাশ দেখছে৷
হঠাৎ অপ্রকৃতস্থের মতো হেসে উঠলো অরুহাণ৷ টানমেরে প্রতিরক্ষা হেলমেটটি খুলে ফেলল সে৷ বুক ভরে পৃথিবীর তাজা হাওয়া টেনে নিল৷
অরুহান: চিৎকার করে উঠল৷ এই অপার্থিব পৃথিবী ছেড়ে আমরা কেন মরতে গেছিলাম! কেন আমরা পৃথিবির বিপদে পৃথিবীর পাশে দাঁড়াই নাই!? বলতে পারো নিনিরা! জবাব আছে তোমার কাছে?
নিনিরা: তুমি নিয়ম ভঙ্গের অপরাধ করছো অরুহান! স্পেসশিপের নিয়ম তুমি ভাঙতে পারোনা!
অরুহান: নিয়ম! পরাধীনতার নিয়ম! যে অপরাধ আমরা করেছি তার শাস্তি কে দেবে? চুলোয় যাক এই উপগ্রহিক নিয়ম৷ তোমাদের নিয়ম মেনে বাঁচার চেয়ে আমি এই পৃথিবীর কোন এক জন্তুর আহার হবো৷ এটাই ভাল হবে৷
মেরি আর শন নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে৷ আইমিরা আস্তে আস্তে ডান দিকে সরে যাবার চেষ্টা করলো৷ দু'কদম সরার আগেই নিনিরা বলে উঠল
আইমিরা যেখানে আছো ঠিক সেখানে থাকো! না হয় আলট্রাকম তোমার কোডটি বিকল করে দেবে!
ওইদিকে অরুহান পাগলের মতো স্পেসস্যুট খুলে চলেছে৷ আলট্রাকম এবার ইনফরমেশান দিল,
নিনিরা স্পেনার আর বিবট গুলো গাছের বলয়ের পাশাপাশি এসে বিকল হয়ে পড়েছে!
কি ভাবে? আলট্রাকম!
ছোট কিছু প্রানী৷ প্রাচীন পৃথিবীর মানুষেরা যাদের পিঁপড়ে বলতো তাদের মাধ্যমে! ওরা হয়তো একটু পরে উপরে উঠে আসবে!
ঠিক সেসময় অরুহান দৌড় দিল গাছের বলয়ের দিকে! তার দূ'হাত প্রসারিত৷ সে চিৎকার করে বলছে আমাকে ক্ষমা করে দিও পৃথিবী! আমাকে তোমার স্মরণে নাও! আমরা যে অন্যায় করেছি তার শাস্তি দাও! তবুও আমাকে তোমার স্মরণে নাও!
নিনিরা চিৎকার করে উঠলো! না! অরুহাণ তোমার কোড উঠিয়ে নেবে আলট্রাকম৷ আমার করার কিছু থাকবে না!
গাছগুলোর বলয়ের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেছে অরুহান৷ ঠিক সেসময় তিনটা ঘটনা ঘটল!
অভিযাত্রিদের মনে হলো মাটি কাঁপছে৷ প্রবল ভাবে কাঁপছে৷
আলট্রাকম তারপরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে রোবট এর মাধ্যমে মারণ রশ্মি ছুড়ে দিল অরুহাণের উদ্দেশ্যে৷
মেরি আর শন ঘুরে দৌড় দিল স্পেসশীপের ঊদ্দেশ্যে৷ আইমিরা কোনাকোনি জঙ্গলের উদ্দেশ্যে ছুট দিল সাথে সাথে৷
অরুহানের ডান পা টা মারণরশ্মি বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে চলে গেল! অরুহান উড়ে গিয়ে পড়লো একটা গাছের গুড়ির পাশে৷
নিনিরা আলট্রাকম কে বলল তোমাকে আমি নিষেধ করছিলাম এটা করতে! কেন করলে?
ফাঁকা জায়গা পেরিয়ে সবাই বনভূমির প্রান্তে চলে এলো৷ প্রথমে কাজ শুরু করলো ড্রিলিংবট৷ শূন্য থেকে চারটি পা নামিয়ে পজিশান ঠিক করলো দুটো ড্রিলিং বট৷ এরপর ওগুলো থেকে উড়ন্ত চাকতির মতো কিছু বল বের হয়ে এলো৷ ওগুলোর উপরে নিচে ঘুরছে ধারালো ব্লেড৷ মাটি ফুঁড়ে নিমিষেই ওগুলো ভেতরে অদৃশ্য হলো৷ ড্রিলিংবট এর অন্য একটা কম্পার্টমেন্ট খুলে বেরিয়ে আসলো বেশ কিছু বি-বট৷ ঘুর্নায় মান বলের পেছন পেছন ওগুলোও অদৃশ্য হলো৷
এবার বায়োবট গুলোর দুটো অভিযাত্রীদের সামনে এবং দুটো পেছনে থেকে অভিযাত্রিদের নিয়ে বনে প্রবেশ করলো৷ বি-বট গুলো থেকে নিচে কিছু নেই অন্ততঃ পাঁচশ মিটার রেডিয়াসে কিছু নেই সংকেত পেয়ে এগুলো ওরা৷ এত ধীরলয়ে এগুনো ভাল লাগছে না আইমিরার৷ সে উশখুশ করছে৷ নিনিরা ছাড়া সবাই অবাক হয়ে চারপাশ দেখছে৷ অভিভূত সবাই! কৃত্রিম উপগ্রহে এমন বিশাল গাছ পাখির ডাক, ঝরাপাতার মচমচ শব্দ কিছুই নেই! বর্ষিয়ান গাছগুলো থেকে সবুজ মোটা লতা ঝুলছে৷ বুনো ফুল আর ফল ছড়িয়ে আছে সর্বত্র৷ পায়ে চলা কোন পথ নেই সামনে ৷ নিরেট জঙ্গল৷ সামনের দুটো বায়োবট থেকে দুটো স্প্যানার উড়াল দিল৷ ছোটখাট ঝুপঝাড় কেটে ওগুলো পথ করে নিচ্ছে অভিযাত্রীদের জন্য৷
নিনিরার সাথে আলট্রাকম যোগাযোগ করলো তখন৷
আলট্রাকম: নিনিরা আর কিছুদূর সামনে বিশাল ফাঁকা জায়গা৷ বড়ো বড়ো ঘাস সেখানে৷ ঐ জায়গা পেরুবার আগেই পড়বে গাছের বলয়!
তোমার অভিযাত্রীদের সবার হৃদস্পন্দন কিন্তু বেড়ে গেছে! পৃথিবীর রূপের মোহে ওরা আকুলিত৷ ব্যাপারটা বিপদজনক হতে পারে তোমাদের জন্য!
নিনিরা: ওদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করো আলট্রাকম!
আলট্রাকম: সম্ভব হচ্ছে না নিনিরা! আমাদের উপগ্রহের আবেগ আর এখানকার আবেগ সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রার৷ মেরি আর শন কে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে৷ অরুহান কে পারা যাচ্ছে না৷ সে বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়েছে!
নিনিরা দেখলো অরুহান স্থির হয়ে মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে পড়েছে৷ ওরা প্রায় অজানা গাছের বলয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে!
নিনিরা: অরুহান! তুমি পিছিয়ে এসো!
অরুহান স্থির৷ চারপাশ দেখছে৷
হঠাৎ অপ্রকৃতস্থের মতো হেসে উঠলো অরুহাণ৷ টানমেরে প্রতিরক্ষা হেলমেটটি খুলে ফেলল সে৷ বুক ভরে পৃথিবীর তাজা হাওয়া টেনে নিল৷
অরুহান: চিৎকার করে উঠল৷ এই অপার্থিব পৃথিবী ছেড়ে আমরা কেন মরতে গেছিলাম! কেন আমরা পৃথিবির বিপদে পৃথিবীর পাশে দাঁড়াই নাই!? বলতে পারো নিনিরা! জবাব আছে তোমার কাছে?
নিনিরা: তুমি নিয়ম ভঙ্গের অপরাধ করছো অরুহান! স্পেসশিপের নিয়ম তুমি ভাঙতে পারোনা!
অরুহান: নিয়ম! পরাধীনতার নিয়ম! যে অপরাধ আমরা করেছি তার শাস্তি কে দেবে? চুলোয় যাক এই উপগ্রহিক নিয়ম৷ তোমাদের নিয়ম মেনে বাঁচার চেয়ে আমি এই পৃথিবীর কোন এক জন্তুর আহার হবো৷ এটাই ভাল হবে৷
মেরি আর শন নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে৷ আইমিরা আস্তে আস্তে ডান দিকে সরে যাবার চেষ্টা করলো৷ দু'কদম সরার আগেই নিনিরা বলে উঠল
আইমিরা যেখানে আছো ঠিক সেখানে থাকো! না হয় আলট্রাকম তোমার কোডটি বিকল করে দেবে!
ওইদিকে অরুহান পাগলের মতো স্পেসস্যুট খুলে চলেছে৷ আলট্রাকম এবার ইনফরমেশান দিল,
নিনিরা স্পেনার আর বিবট গুলো গাছের বলয়ের পাশাপাশি এসে বিকল হয়ে পড়েছে!
কি ভাবে? আলট্রাকম!
ছোট কিছু প্রানী৷ প্রাচীন পৃথিবীর মানুষেরা যাদের পিঁপড়ে বলতো তাদের মাধ্যমে! ওরা হয়তো একটু পরে উপরে উঠে আসবে!
ঠিক সেসময় অরুহান দৌড় দিল গাছের বলয়ের দিকে! তার দূ'হাত প্রসারিত৷ সে চিৎকার করে বলছে আমাকে ক্ষমা করে দিও পৃথিবী! আমাকে তোমার স্মরণে নাও! আমরা যে অন্যায় করেছি তার শাস্তি দাও! তবুও আমাকে তোমার স্মরণে নাও!
নিনিরা চিৎকার করে উঠলো! না! অরুহাণ তোমার কোড উঠিয়ে নেবে আলট্রাকম৷ আমার করার কিছু থাকবে না!
গাছগুলোর বলয়ের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেছে অরুহান৷ ঠিক সেসময় তিনটা ঘটনা ঘটল!
অভিযাত্রিদের মনে হলো মাটি কাঁপছে৷ প্রবল ভাবে কাঁপছে৷
আলট্রাকম তারপরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে রোবট এর মাধ্যমে মারণ রশ্মি ছুড়ে দিল অরুহাণের উদ্দেশ্যে৷
মেরি আর শন ঘুরে দৌড় দিল স্পেসশীপের ঊদ্দেশ্যে৷ আইমিরা কোনাকোনি জঙ্গলের উদ্দেশ্যে ছুট দিল সাথে সাথে৷
অরুহানের ডান পা টা মারণরশ্মি বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে চলে গেল! অরুহান উড়ে গিয়ে পড়লো একটা গাছের গুড়ির পাশে৷
নিনিরা আলট্রাকম কে বলল তোমাকে আমি নিষেধ করছিলাম এটা করতে! কেন করলে?
আলট্রাকম: এমন পরিস্থিতিতে আমার কোড অব কনডাক্টে যা আছে তাই করেছি নিনিরা! অভিযাত্রীদের পাগলামি শুরু হলে থামিয়ে দেবার নির্দেশ আমার কাছে আছে!
মাটি কাঁপছে! নানা জায়গা থেকে বেরিয়ে আসছে রাশিরাশি পিঁপড়ে৷ নিনিরা এগিয়ে গেল অরুহানের দিকে৷ অরুহান বুকে ভর দিয়ে সরে যাবার চেষ্টা করছে৷ আবার মারণ রশ্মি ছুড়লো রোবট অরুহাণের উদ্দেশ্যে!
নিনিরা পুরো টিম এবং সকল রোবটকে স্পেসশীপের দিকে চলে যেতে নির্দেশ দিল৷
পিঁপড়েরা নির্দিষ্ট একটা লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে৷ স্পেসশীপের দিকে!
রোবটের মারণরশ্মি অরুহানের মাথা ছিন্নভিন্ন করে দিলো৷ নিনিরার কিছুই করার নেই আর! সিক্যুরিটি কোড তুলে নিলে রোবট আন আয়ডেন্টিফায়েড হিসেবে জীবিত বা সচল যন্র কাউকে ছাড় দেয় না!
অরুহানের পাশে এগিয়ে গেলো নিনিরা! ব্যাথাতুর চোখে লাশ টা দেখলো৷ এবার ক্রোধিত স্বরে ব্যাখ্যা চাইলো আলট্রাকমের কাছে!
নিনিরা: আলট্রাকম! আমার টিম কে কিছু করার আগে আমার সাথে পরামর্শ না করে তুমি কোড ভেঙেছো ! এর জবাব কি?
আলট্রাকম: নিনিরা আমি কোন কোড ভঙ্গ করিনি! তুমি করেছো৷ আমি হচ্ছি নির্দেশের দাস৷ তুমি সাইওমেন হয়েও তোমার আবেগ কে নিয়ন্রণ করতে পারনি৷ এমন অবস্থায় আমার যা করণীয় সেটাই করেছি৷ তুমি ব্যাখ্যা চাইছো দিচ্ছি!
স্পেসশীপে থাকা অবস্থায় তোমার যে মনোভাব ছিলো পৃথিবীতে পা দেয়া মাত্র তুমি অন্যরকম হয়ে গেলে! কেন হলে? এর কারণ তোমার মস্তিষ্ক আর হৃদয় মানবীয়৷ আর সবার মতো বিশেষ করে অরুহানের মতো তুমিও ভেতরে ভেতরে উদ্বেলিত হয়ে পড়লে৷ তোমার মস্তিষ্ক তরঙ্গ অতি মাত্রায় উচ্চকিত৷ যুক্তিবোধ অবনমিত৷ একজন সাইওমেন হওয়া সত্তেও পৃথিবীর প্রতি তোমার ভালবাসা জন্মে গেছে৷ এত আবেগ! যে নিনিরা স্পেসশিপে থাকা অবস্থায় উপগ্রহের সবার এখানে ফিরে আসা নিয়ে ছিলো বদ্ধপরিকর সে পৃথিবিতে পা রাখা মাত্র দ্বিধাগ্রস্থ হলো কি করে!
সামগ্রিক বিচারে আমার যা করনীয় তাই করেছি!
নিনিরা: তাহলে আইমিরা! ওকে কেন আটকালে না!
হাহাহা করে হাসির মতো একটা আবহ তৈরি করলো আলট্রাকম৷
আইমিরার ব্যবস্থা কাল রাতেই করা হয়েছে নিনিরা! তোমাদের সাথে যে আইমিরা আজপৃথিবীর বুকে নেমেছে সে আইমিরা নয়! আমি! আমি আলট্রাকম বায়োজেনেটিক রোবটে আইমিরা নামে নেমেছি! ওর মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ আমার দখলে! আসল আইমিরা কে কোয়ারান্টাইন করা হয়েছে গতকাল৷ তার মস্তিস্ক স্ক্যান করে নেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় তথ্য৷
এখনকার মানুষ কয়েকটি ড্যুমে পৃথিবীতে বসবাস করছে৷ লালপতাকা চার এ উপগ্রহে যে সমাবেশ হয়েছে সেটাতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সকল ড্যুমকে ধুলিস্যাত করে দেয়া হবে, ঊপগ্রহবাসীদের জন্য নতুন আবাস করতে!
নিনিরা:বাহ! তাহলে আমাকে পাঠানো হলো কেন আর তোমরা এত তথ্য পেলে কোথা থেকে!
আলট্রাকম: এবার আগে ধ্বংস করে পরে পৃথিবিতে বাকিদের আনা হবে! এ স্পেসশীপে যারা এসেছো তারা মানুষ৷ তোমাদের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্যই এ মিশন! আমরা যারা আসবো তারা হবে আলট্রাকম কমিউনিটির সকল সদস্য৷ ভবিষ্যৎ হবে আলট্রাকমদের!
আইমিরার মস্তিষ্ক থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা জানি আসেপাশে একটা ড্যুম আছে৷ এখান থেকে আমরা ধ্বংস শুরু করবো৷ আইমিরা তাই দলছুট হয়েছে৷
নিনিরা দেখছে পিঁপড়ের সারি তাকে পেরিয়ে মুল স্পেসশীপের দিকে যাচ্ছে! নতুন পৃথিবীর মানুষরাই কি করছে এটা! কেন? আলট্রাকমদের আর তার মতো সাইমেন বা ওমেনদের কি ভাবে আটকাবে এরা৷ পৃথিবীর বাইরে যারা বসে আছে তারা তো এখানকার পরিস্থিতি বুঝবে না! নিনিরার দুটো সত্তা৷ যান্রিক এবং মানবিক৷ পৃথিবির মায়া কখন যে তার যান্রিক সত্ত্বাকে পরাজিত করেছে নিজেও বুঝতে পারেনি৷ সে তো এই পৃথিবির মানুষ নয়৷ বলতে গেলে যন্রবিশেষ তারপরও!
ঠিক তাই নিনিরা! তুমি তোমার ভাবনা দিয়ে কোডঅব কনডাক্ট ভঙ্গ করেছো৷ আমরা আলট্রাকমরা দেখবো যাতে এই অনুভুতি নিয়ে এখানে আর কেউ আসতে না পারে! ঊপগ্রহে সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে আমার পাঠানো তথ্যমতে৷ সাইমেন আর সাইওমেনরা যাতে তাদের মানবিক মনের মৃত্যু ঘটাতে পারে সেটাই নিশ্চিত করবে আলট্রাকম!
ভাল কথা তোমার প্রতিরক্ষা কোডটি সরিয়ে নেবার সময় হয়েছে! ধ্বংসের জন্য প্রস্তুত হও নিনিরা!
নিনিরা নাম না জানা একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে৷ সামনে একটা রোবট নিনিরা বুঝতে পারলো তার কোড উঠিয়ে নেয়া হয়েছে৷ রোবট মারণ রশ্মি উগড়ে দেবার যান্রিক ডিভাইসটি ওর দিকে তাক করেছে৷ চোখ বুজল নিনিরা৷ পেছনে জোরে বাতাস বইলো৷ ঘাসের বনে অদ্ভুত শব্দ তুলল বাতাস৷ সাথে গাছগুলোও ৷
আহ! এমন মধুর শব্দ নিনিরা তার দীর্ঘজীবনে শুনেনি ৷ এমন শব্দ , বুক মুচড়ে উঠে আবেগ আর ভালবাসায়! নিনিরা দুহাত প্রসারিত করে দিল৷পরমুহুর্তে বামকাঁধে মারণ রশ্মি আঘাত করে হাতটাকে ছিন্ন করে ফেলল৷ অবাক হলো নিনিরা! রশ্মি মাথায় আঘাত করার কথা! চোখ মেলে দেখলো গাছটি অনবরত ডাল নুইয়ে রোবট কে আঘাত করছে! শেকড় উঠিয়ে আরেকটু সামনে চলে গেল গাছটা পেছনে আড়াল করলো নিনিরাকে৷ সবগুলো ডাল পালা একত্রকরে রোবট কে ছুড়ে দিল ওটা৷ মাটিতে আঁছড়ে পড়ে ছেঁচড়ে কিছুদূর চলে গেল ওটা৷ রোবটকে ছেঁকে ধরলো হাজার হাজার পিঁপড়ে!
জ্ঞান হারানোর আগে নিনিরা ঝাপসা চোখে লক্ষ্য করলো ঘাসের বন পেরিয়ে কেউ এগিয়ে আসছে তার দিকে....
মাটি কাঁপছে! নানা জায়গা থেকে বেরিয়ে আসছে রাশিরাশি পিঁপড়ে৷ নিনিরা এগিয়ে গেল অরুহানের দিকে৷ অরুহান বুকে ভর দিয়ে সরে যাবার চেষ্টা করছে৷ আবার মারণ রশ্মি ছুড়লো রোবট অরুহাণের উদ্দেশ্যে!
নিনিরা পুরো টিম এবং সকল রোবটকে স্পেসশীপের দিকে চলে যেতে নির্দেশ দিল৷
পিঁপড়েরা নির্দিষ্ট একটা লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে৷ স্পেসশীপের দিকে!
রোবটের মারণরশ্মি অরুহানের মাথা ছিন্নভিন্ন করে দিলো৷ নিনিরার কিছুই করার নেই আর! সিক্যুরিটি কোড তুলে নিলে রোবট আন আয়ডেন্টিফায়েড হিসেবে জীবিত বা সচল যন্র কাউকে ছাড় দেয় না!
অরুহানের পাশে এগিয়ে গেলো নিনিরা! ব্যাথাতুর চোখে লাশ টা দেখলো৷ এবার ক্রোধিত স্বরে ব্যাখ্যা চাইলো আলট্রাকমের কাছে!
নিনিরা: আলট্রাকম! আমার টিম কে কিছু করার আগে আমার সাথে পরামর্শ না করে তুমি কোড ভেঙেছো ! এর জবাব কি?
আলট্রাকম: নিনিরা আমি কোন কোড ভঙ্গ করিনি! তুমি করেছো৷ আমি হচ্ছি নির্দেশের দাস৷ তুমি সাইওমেন হয়েও তোমার আবেগ কে নিয়ন্রণ করতে পারনি৷ এমন অবস্থায় আমার যা করণীয় সেটাই করেছি৷ তুমি ব্যাখ্যা চাইছো দিচ্ছি!
স্পেসশীপে থাকা অবস্থায় তোমার যে মনোভাব ছিলো পৃথিবীতে পা দেয়া মাত্র তুমি অন্যরকম হয়ে গেলে! কেন হলে? এর কারণ তোমার মস্তিষ্ক আর হৃদয় মানবীয়৷ আর সবার মতো বিশেষ করে অরুহানের মতো তুমিও ভেতরে ভেতরে উদ্বেলিত হয়ে পড়লে৷ তোমার মস্তিষ্ক তরঙ্গ অতি মাত্রায় উচ্চকিত৷ যুক্তিবোধ অবনমিত৷ একজন সাইওমেন হওয়া সত্তেও পৃথিবীর প্রতি তোমার ভালবাসা জন্মে গেছে৷ এত আবেগ! যে নিনিরা স্পেসশিপে থাকা অবস্থায় উপগ্রহের সবার এখানে ফিরে আসা নিয়ে ছিলো বদ্ধপরিকর সে পৃথিবিতে পা রাখা মাত্র দ্বিধাগ্রস্থ হলো কি করে!
সামগ্রিক বিচারে আমার যা করনীয় তাই করেছি!
নিনিরা: তাহলে আইমিরা! ওকে কেন আটকালে না!
হাহাহা করে হাসির মতো একটা আবহ তৈরি করলো আলট্রাকম৷
আইমিরার ব্যবস্থা কাল রাতেই করা হয়েছে নিনিরা! তোমাদের সাথে যে আইমিরা আজপৃথিবীর বুকে নেমেছে সে আইমিরা নয়! আমি! আমি আলট্রাকম বায়োজেনেটিক রোবটে আইমিরা নামে নেমেছি! ওর মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ আমার দখলে! আসল আইমিরা কে কোয়ারান্টাইন করা হয়েছে গতকাল৷ তার মস্তিস্ক স্ক্যান করে নেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় তথ্য৷
এখনকার মানুষ কয়েকটি ড্যুমে পৃথিবীতে বসবাস করছে৷ লালপতাকা চার এ উপগ্রহে যে সমাবেশ হয়েছে সেটাতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সকল ড্যুমকে ধুলিস্যাত করে দেয়া হবে, ঊপগ্রহবাসীদের জন্য নতুন আবাস করতে!
নিনিরা:বাহ! তাহলে আমাকে পাঠানো হলো কেন আর তোমরা এত তথ্য পেলে কোথা থেকে!
আলট্রাকম: এবার আগে ধ্বংস করে পরে পৃথিবিতে বাকিদের আনা হবে! এ স্পেসশীপে যারা এসেছো তারা মানুষ৷ তোমাদের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্যই এ মিশন! আমরা যারা আসবো তারা হবে আলট্রাকম কমিউনিটির সকল সদস্য৷ ভবিষ্যৎ হবে আলট্রাকমদের!
আইমিরার মস্তিষ্ক থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা জানি আসেপাশে একটা ড্যুম আছে৷ এখান থেকে আমরা ধ্বংস শুরু করবো৷ আইমিরা তাই দলছুট হয়েছে৷
নিনিরা দেখছে পিঁপড়ের সারি তাকে পেরিয়ে মুল স্পেসশীপের দিকে যাচ্ছে! নতুন পৃথিবীর মানুষরাই কি করছে এটা! কেন? আলট্রাকমদের আর তার মতো সাইমেন বা ওমেনদের কি ভাবে আটকাবে এরা৷ পৃথিবীর বাইরে যারা বসে আছে তারা তো এখানকার পরিস্থিতি বুঝবে না! নিনিরার দুটো সত্তা৷ যান্রিক এবং মানবিক৷ পৃথিবির মায়া কখন যে তার যান্রিক সত্ত্বাকে পরাজিত করেছে নিজেও বুঝতে পারেনি৷ সে তো এই পৃথিবির মানুষ নয়৷ বলতে গেলে যন্রবিশেষ তারপরও!
ঠিক তাই নিনিরা! তুমি তোমার ভাবনা দিয়ে কোডঅব কনডাক্ট ভঙ্গ করেছো৷ আমরা আলট্রাকমরা দেখবো যাতে এই অনুভুতি নিয়ে এখানে আর কেউ আসতে না পারে! ঊপগ্রহে সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে আমার পাঠানো তথ্যমতে৷ সাইমেন আর সাইওমেনরা যাতে তাদের মানবিক মনের মৃত্যু ঘটাতে পারে সেটাই নিশ্চিত করবে আলট্রাকম!
ভাল কথা তোমার প্রতিরক্ষা কোডটি সরিয়ে নেবার সময় হয়েছে! ধ্বংসের জন্য প্রস্তুত হও নিনিরা!
নিনিরা নাম না জানা একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে৷ সামনে একটা রোবট নিনিরা বুঝতে পারলো তার কোড উঠিয়ে নেয়া হয়েছে৷ রোবট মারণ রশ্মি উগড়ে দেবার যান্রিক ডিভাইসটি ওর দিকে তাক করেছে৷ চোখ বুজল নিনিরা৷ পেছনে জোরে বাতাস বইলো৷ ঘাসের বনে অদ্ভুত শব্দ তুলল বাতাস৷ সাথে গাছগুলোও ৷
আহ! এমন মধুর শব্দ নিনিরা তার দীর্ঘজীবনে শুনেনি ৷ এমন শব্দ , বুক মুচড়ে উঠে আবেগ আর ভালবাসায়! নিনিরা দুহাত প্রসারিত করে দিল৷পরমুহুর্তে বামকাঁধে মারণ রশ্মি আঘাত করে হাতটাকে ছিন্ন করে ফেলল৷ অবাক হলো নিনিরা! রশ্মি মাথায় আঘাত করার কথা! চোখ মেলে দেখলো গাছটি অনবরত ডাল নুইয়ে রোবট কে আঘাত করছে! শেকড় উঠিয়ে আরেকটু সামনে চলে গেল গাছটা পেছনে আড়াল করলো নিনিরাকে৷ সবগুলো ডাল পালা একত্রকরে রোবট কে ছুড়ে দিল ওটা৷ মাটিতে আঁছড়ে পড়ে ছেঁচড়ে কিছুদূর চলে গেল ওটা৷ রোবটকে ছেঁকে ধরলো হাজার হাজার পিঁপড়ে!
জ্ঞান হারানোর আগে নিনিরা ঝাপসা চোখে লক্ষ্য করলো ঘাসের বন পেরিয়ে কেউ এগিয়ে আসছে তার দিকে....
শন আর মেরি দৌড়ে এসে নিরাপত্তা বলয়ের ভেতর ঢুকে গেল৷ সেখান থেকে আতংকিত দৃষ্টিতে দেখতে পেল পিঁপড়া সারির এগিয়ে আসা৷ বলয়ের কাছাকাছি চারদিক থেকে ওরা বৃত্তাকারে এগিয়ে আসছে! বলয়ের কাছাকাছি আসা মাত্র স্পেসশীপের নিরাপত্তা রোবট গুলো সক্রিয় হল৷ চারপাশ থেকে ওগুলো মারণ রশ্মি ছুড়ছে৷ কিছু পুড়ে যাচ্ছে সত্যি৷ কিন্তু পিপড়া সারি কে থামানো গেলো না৷ দ্রণ এবার চারপাশ থেকে আগুন ছড়িয়ে দিল৷ এতে লাভ হল কিছুটা৷ পিঁপড়া সারি থমকে দাঁড়ালো৷ নিরাপত্তা বেস্টনির চারপাশ ওরা ঘিরে বসে থাকলো৷ অভিযাত্রীরা আতংকিত চোখে দেখছে চারপাশে কালো বাদামি পিঁপড়ে চাদর!
কোন কার্যকরণ ছাড়া মেরী হঠাৎ ল্যান্ডিং এ লুটিয়ে পড়লো৷ শন সাথে সাথে নিরাপত্তা রোবটকে নির্দেশ দিল মেরীকে তুলে নিতে৷ শন ভাল করে জানে মেরী আহত হয় নি৷ তবে সে পড়ে গেল কেন?!
নিরাপত্তা রোবট কে নির্দেশ দিল শন৷ মেরি কে তুলে নিতে৷ উপগ্রহের বাইরে কোন অভিযানে অভিযাত্রীদের এমন পড়ে যাওয়া মানে খারাপ কিছু হতে পারে৷ তাই অজ্ঞান হয়ে যাওয়া কাউকে এমন অবস্থায় অন্য অভিযাত্রীর স্পর্শ করা দ্বিতীয় মাত্রার অপরাধ!
একটি রোবট মেরি কে তুলে নিয়ে অন্য একটি ট্যানেল দিয়ে সরাসরি কোয়ারান্টাইন জোনে নিয়ে গেল৷ উদ্বীগ্ন শন নিরাপত্তা চেক শেষ হলে যতদ্রুত সম্ভব অবজারভেটরী ডেকে চলে এসেছে৷ দ্রণ ওখানে বসে আছে৷ মেরীকে কোয়ারান্টাইন জোনে নেবার পর ফুন সেখানে চলে গেছে চেক করার জন্য৷ কোয়ারান্টাইন জোনে প্রবেশ করে ফুন অবাক হলো৷ তার অবাক হবার কারণ হলো কাঁচের বড়ো একটি টিউবে আইমিরার দেহটা! আইমিরা কে সবাই দেখলো শীপের বাইরে অভিযাত্রীদের সাথে যেতে! তাহলে এ কে?
ফুন এর কাছে ব্যাপারটা অদ্ভুত ঠেকলো!
শন দ্রণ কে প্রশ্ন করলো এসব কি হচ্ছে দ্রণ?! নিনিরা পেছনে রয়ে গেছে৷ আইমিরাও৷ আর পিঁপড়ের এই সারি৷ কিছু বুঝতে পারছি না!!
দ্রণ শন এর দিকে ফিরে তাকালো৷ দুশ্চিন্তাগ্রস্থ চেহারা তার৷
দ্রণ: অনেক কিছুই আজ ঘটে গেছে শন! যার ব্যাখ্যা করা সম্ভব হচ্ছে না আমার পক্ষে৷ অরুহান মৃত৷ সম্ভবত নিনিরাও৷ মেরি কোয়ারান্টাইন৷ আইমিরার খোঁজ নেই কোন৷ আমি তুমি আর ফুন এখন এই শীপে আছি৷ সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হলো অরুহান আর নিনিরার নিরাপত্তা কোড উঠিয়ে নিয়েছে স্বয়ং আলট্রাকম!
স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রণ এর সাথে যোগাযোগ করলো ফুন৷ দুশ্চিন্তা গ্রস্থ দ্রণ এর কপালে আরও দুটো ভাঁজ দেখা দিল৷
শণ: কি হয়েছে দ্রণ?! ফুন কি বলল?
দ্রণ: ফুন বলল আইমিরার দেহ নাকি কোয়ারান্টাইন জোনে নীষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে!!!
শন: তবে আমাদের সাথে বাইরে গেল কে?
শন আর দ্রণ কিছু বলার আগেই হলগ্রাফিক শরীর নিয়ে হাজির হলো আলট্রাকম৷
শন আর দ্রণ কে অবাক করে দিয়ে বলতে শুরু করলো আলট্রাকম৷
আলট্রাকম: শন৷ দ্রণ৷ তোমাদের কৌতুহলের জবাব আমি দিচ্ছি৷
অরুহাণ কে মেরে ফেলা হয়েছে! আর এ কমান্ড দিয়েছি আমি৷ কারণ তার ব্রেইনের সকল তথ্য ওলটপালট হয়ে যাচ্ছিল৷ বলতে পারো সে উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল৷
মেরি এখানকার কোন একটা আননোন ভাইরাস দ্বারা এফেক্টেড৷ আমরা ভাল করে পরীক্ষা করে দেখেছি৷ জঙ্গল ঠেলে আসার সময় তার নিরাপত্তা পোষাক সামান্য ছিড়ে যায়৷ ছেড়া অংশে শরীরটা খানিক কেটে গেছে৷ বাতাসে থাকা ভাইরাস সে পথে ঢুকে গেছে তার শরীরে! এবং এটা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না৷
যে আইমিরাকে তোমরা বাইরে যেতে দেখেছো সে একটা সাইওমেন! যার মস্তিষ্ক সম্পুর্ণ আমার নিয়ন্ত্রণে৷ একঅর্থে বাইরের আইমিরাকে আলট্রাকমও বলতে পারো! আমারও বায়োলজিকাল পার্ট ওটা৷ আসল আইমিরার দেহ কোয়ারান্টাইন জোনে রক্ষিত৷
দ্রণ তুমি এখন এই স্পেসশিপের কমান্ড ইনচার্জ৷ কেননা নিনিরা তার কোডঅব কন্ডাক্ট ভঙ্গ করেছে৷ নিরাপত্তা রোবট তাকে মেরে ফেলার আগে এই পৃথিবীর মানুষের সাহায্যে সে পালিয়েছে৷ তোমার আজ্ঞা পেলেই ওর খুঁজে রোবট পাঠাবো!
দ্রণ আর শন নিশ্চুপ৷ তারা বুঝতে পারছে আলট্রাকম এই স্পেসশীপের কমান্ড নিয়ে নিয়েছে৷নিনিরার মতো একজন কমান্ডার ইন চীফ, যে বেশকটি সফল অভিযানের নেতৃত্বদান কারী সে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এটা মেনে নিতে পারছে না দ্রণ৷ শন হতভম্ব৷
আবার আলট্রাকমের কন্ঠ শোনা গেল৷
আলট্রাকম: দ্রণ আমাকে যেভাবে ইনসট্রাকশন দেয়া হয়েছিলো আমি সেভাবে কাজ করছি! এই অভিযানের প্রথম এবং সবচেয়ে গূরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে মানুষের অস্তিত্ব খোঁজা নয়! তোমরা টোটাল হিউমেন রা পৃথিবীতে আসলে কেমন আচরণ কর সেটা দেখা৷
কি দেখা গেল?
দেখাগেল এখনও তোমরা তোমাদের আবেগ নীয়ন্ত্রণ করা শেখনি৷ সাড়েসাতশ বছর আগে আমরা এ পৃথিবী ছেড়ে গিয়েছিলাম বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে! বিশ্বাস ঘাতকতা করে ছিলে তোমরাই! এই সাড়েসাতশ বছর পর যখন পৃথীবীতে ফেরার সময় হয়েছে, এবং তোমরা এখানে এসেছ৷
তোমরা উপগ্রহ বাসীদের , তোমাদের অতীত বংশধরদের , আলট্রাকম আর সাইম্যান ও ওমেনদের সাথে আবার বিশ্বাসঘাতকতা করতে চাইছো! কেন?
আমার হিসেব বলছে এটা তোমাদের আবেগ৷ পৃথিবির প্রতি তোমাদের ভালবাসা জন্মে গেছে এক লহমায়!
আসলে তোমরা সাতজন এসেছো গিনিপিগ হয়ে৷ আমরা তোমাদের সমস্ত ব্যবহার, মানসিকতা, আবেগ অনুভুতির একটা মাপকাঠি তৈরী করে তোমাদের অবজার্ভ করছিলাম৷ তোমরা কেউই পাশমার্ক পাওনি!
এই যেমন ধরো ফুন! সে আইমিরাকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছে!
মেরি কোয়ারান্টাইন সেলে বসে আছে নিশ্চুপ কেননা ভাইরাস তার কাজ শুরু করেছে৷
তোমরা দুজন শন আর দ্রণ চিন্তা করছো কিভাবে আলট্রাকম মানে আমাকে বিকল করে দেবে!
হাহাহাহাহা৷ হাসির মতো আবহ করলো আলট্রাকম৷
এমন কিছু ঘটতে পারে বলে আগে থেকেই ভেবেছে উপগ্রহ নিয়ন্রণে রাখা সুপার আলট্রাকম আর মানবিক আবেগ বিবর্জিত পরিপূর্ণ সাই ম্যান ও ওম্যানরা৷
উপগ্রহ বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে যাবে কিছু দিনের মধ্যেই৷ তোমাদের মতো পরিপুর্ন মানুষ যারা দুর্বল এবং বিশ্বাসঘাতক সবাইকে ওখানে রেখে এসে আমরা নতুন একটা পৃথিবী গড়বো!
আর এখানে যারা আছে মানে মানুষ যদি থেকে থাকে , তাদের?
সেই সব দূর্বল অসভ্য মানুষরাও থাকবেনা! ঊত্তর দিল আলট্রাকম৷
কথার ফাঁকে ফাঁকে দ্রণ ইমার্জেন্সি প্যানেলের ছোট একটা কভার উঠিয়ে একটি বোতামে চাপ দিল৷ কালো একটা বোতাম৷ যাতে পরপর তিনটি চাপ দিয়ে এর পর আরও দুটো চাপ দিলে আলট্রাকমের এনালাইটিকেল ইন্টেলিজেন্সী নষ্ট হয়ে যায়৷
কিছুই হলো না৷ আবার দ্রণ এ কাজটা করলো৷ কোন ফলাফল আসলো না৷
আলট্রাকম মানুষের মতো দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ার শব্দ করলো৷
ওটা কোন কাজে আসবে না দ্রণ৷ স্যুইচটা আছে তবে এ মিশনে ওটা অকার্যকর করে রাখা হয়েছে!
তুমি তোমার কোডঅব কন্ডাক্ট ভঙ্গ করেছো দ্রণ৷ দ্রণ চোখতুলে তাকালো শন এর দিকে৷ কিছু বলার চেষ্টা করছিল হয়তো৷ পারলনা৷ নিমিষে ভ্যাপারাঈজড হয়ে গেল সে আলট্রাকমের মারণ রশ্মিতে৷
শন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে৷
আলট্রাকমের হলগ্রাফিক্স অবয়ব শনের দিকে ঘুরে তাকালো৷ তারপর কন্ঠস্বর নামিয়ে শন এর উদ্দেশ্যে বলল
তোমাদের সেই পুরোনো আমলের কম্পিউটার আমি নই৷ আমাকে তৈরী করা হয়েছে মানুষের চেয়েও আরও হাই প্রোফাইলে সুপার আলট্রাকম আর পরিপূর্ণ সাই দের স্বার্থ দেখার লক্ষ্যে! তুমি শন আগে আর পরে কোড অব কনডাক্ট ভাঙবেই৷ মানুষদের এই এক নেশা৷ পতঙ্গের মতো মরার নেশা৷ কিছু হবে না জেনেও তারা পা বাড়ায় নিজেকে উৎসর্গ করে দিতে৷ এটাই তোমাদের চরিত্র৷
তোমাকেও তাই আমি বাঁচিয়ে রাখতে পারিনা৷ বল , তোমার মৃত্যুকে কি ভাবে আমি আনন্দদায়ক করে তুলতে পারি?
শন মুখ তুলে তাকালো আলট্রাকমের হলগ্রাফিক অবয়বের দিকে৷ বলল
মেরিকে কি করবে? বাঁচিয়ে রাখবে না কি.....
না শন৷ মেরীও যাবে!
এখানে এই স্পেসশীপের মধ্যে আমি মরতে চাইনা আলট্রাকম৷ আঙুল তুলে বাইরে দেখালো শন৷
যে পৃথিবিতে নতুন বসতি করার জন্য আমরা এসেছিলাম, যে পৃথিবির মানুষের সাথে আমার পূর্বজরা বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিলো সে পৃথিবিতে আমি মরতে চাই৷ মরতে চাই মেরির হাতে হাত রেখে! মেয়েটাকে যে আমি পছন্দ করি সেটা বলা হয়ে ওঠেনি৷ সেই কথাটা বলতে বলতে মরতে চাই! উপগ্রহেতো আবার ভালবাসা প্রকাশ করা তৃতীয় মাত্রার অপরাধ!
যাও তাহলে শন৷ মৃত্যু আনন্দ দায়ক হোক!
অবজারভেটরি ডেক ছেড়ে বেরিয়ে আসার মুহুর্তে শন দেখলো মেরি বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে৷ বাতাসে তার কালো চুল উড়ছে৷ কি অপরূপই না লাগছে তাকে!
.........
বাইরে এসে শন মেরির হাত ধরলো ৷ নিরাপত্তা বলয় এরিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো সামনে৷ আশ্চর্য ব্যাপার! পিঁপড়ে চাদর সরে গিয়ে তাদের পথ করে দিচ্ছে৷ সময়টা গোধুলী৷ হালকা লালাভ আলো আকাশটাকে মোহময় করে তুলেছে৷ মুগ্ধ দৃষ্টিতে শনের সাথে গোধুলীর রূপ দেখতে দেখতে ওরা পৌঁছে গেল বনভূমির প্রান্তে৷
সাড়ে সাতশ বছরে এই প্রথম পৃথিবীর বুকে দুজন মানবমানবী মুখোমুখি দাঁড়ালো ভালবাসার কথা বলবে বলে৷ মৃত্যু সন্নিকটে৷ তবুও৷
মেরির চোখে চোখ রেখে শন বলল, মেরি! তোমাকে বলা হয়নি! ....ভালবাসি৷
মেরীর চোখে অশ্রু৷ শনের বুকে মাথা রেখে ফিসফিস করে বলল আমিও!
দুজনের হৃদয়ে হাহাকার উঠলো আর অপার্থিব আনন্দ, দুটোই একসাথে! পরক্ষণেই রোবট এর মারণ রশ্মি তাদের ছিন্ন ভিন্ন করে দিল৷
গোধুলির শেষ আলোয় তাদের রক্ত যেনো লাল দেখাচ্ছে না! শোকের রঙ কালো তে পরিবর্তিত হয়েছে!
কোন কার্যকরণ ছাড়া মেরী হঠাৎ ল্যান্ডিং এ লুটিয়ে পড়লো৷ শন সাথে সাথে নিরাপত্তা রোবটকে নির্দেশ দিল মেরীকে তুলে নিতে৷ শন ভাল করে জানে মেরী আহত হয় নি৷ তবে সে পড়ে গেল কেন?!
নিরাপত্তা রোবট কে নির্দেশ দিল শন৷ মেরি কে তুলে নিতে৷ উপগ্রহের বাইরে কোন অভিযানে অভিযাত্রীদের এমন পড়ে যাওয়া মানে খারাপ কিছু হতে পারে৷ তাই অজ্ঞান হয়ে যাওয়া কাউকে এমন অবস্থায় অন্য অভিযাত্রীর স্পর্শ করা দ্বিতীয় মাত্রার অপরাধ!
একটি রোবট মেরি কে তুলে নিয়ে অন্য একটি ট্যানেল দিয়ে সরাসরি কোয়ারান্টাইন জোনে নিয়ে গেল৷ উদ্বীগ্ন শন নিরাপত্তা চেক শেষ হলে যতদ্রুত সম্ভব অবজারভেটরী ডেকে চলে এসেছে৷ দ্রণ ওখানে বসে আছে৷ মেরীকে কোয়ারান্টাইন জোনে নেবার পর ফুন সেখানে চলে গেছে চেক করার জন্য৷ কোয়ারান্টাইন জোনে প্রবেশ করে ফুন অবাক হলো৷ তার অবাক হবার কারণ হলো কাঁচের বড়ো একটি টিউবে আইমিরার দেহটা! আইমিরা কে সবাই দেখলো শীপের বাইরে অভিযাত্রীদের সাথে যেতে! তাহলে এ কে?
ফুন এর কাছে ব্যাপারটা অদ্ভুত ঠেকলো!
শন দ্রণ কে প্রশ্ন করলো এসব কি হচ্ছে দ্রণ?! নিনিরা পেছনে রয়ে গেছে৷ আইমিরাও৷ আর পিঁপড়ের এই সারি৷ কিছু বুঝতে পারছি না!!
দ্রণ শন এর দিকে ফিরে তাকালো৷ দুশ্চিন্তাগ্রস্থ চেহারা তার৷
দ্রণ: অনেক কিছুই আজ ঘটে গেছে শন! যার ব্যাখ্যা করা সম্ভব হচ্ছে না আমার পক্ষে৷ অরুহান মৃত৷ সম্ভবত নিনিরাও৷ মেরি কোয়ারান্টাইন৷ আইমিরার খোঁজ নেই কোন৷ আমি তুমি আর ফুন এখন এই শীপে আছি৷ সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হলো অরুহান আর নিনিরার নিরাপত্তা কোড উঠিয়ে নিয়েছে স্বয়ং আলট্রাকম!
স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রণ এর সাথে যোগাযোগ করলো ফুন৷ দুশ্চিন্তা গ্রস্থ দ্রণ এর কপালে আরও দুটো ভাঁজ দেখা দিল৷
শণ: কি হয়েছে দ্রণ?! ফুন কি বলল?
দ্রণ: ফুন বলল আইমিরার দেহ নাকি কোয়ারান্টাইন জোনে নীষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে!!!
শন: তবে আমাদের সাথে বাইরে গেল কে?
শন আর দ্রণ কিছু বলার আগেই হলগ্রাফিক শরীর নিয়ে হাজির হলো আলট্রাকম৷
শন আর দ্রণ কে অবাক করে দিয়ে বলতে শুরু করলো আলট্রাকম৷
আলট্রাকম: শন৷ দ্রণ৷ তোমাদের কৌতুহলের জবাব আমি দিচ্ছি৷
অরুহাণ কে মেরে ফেলা হয়েছে! আর এ কমান্ড দিয়েছি আমি৷ কারণ তার ব্রেইনের সকল তথ্য ওলটপালট হয়ে যাচ্ছিল৷ বলতে পারো সে উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল৷
মেরি এখানকার কোন একটা আননোন ভাইরাস দ্বারা এফেক্টেড৷ আমরা ভাল করে পরীক্ষা করে দেখেছি৷ জঙ্গল ঠেলে আসার সময় তার নিরাপত্তা পোষাক সামান্য ছিড়ে যায়৷ ছেড়া অংশে শরীরটা খানিক কেটে গেছে৷ বাতাসে থাকা ভাইরাস সে পথে ঢুকে গেছে তার শরীরে! এবং এটা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না৷
যে আইমিরাকে তোমরা বাইরে যেতে দেখেছো সে একটা সাইওমেন! যার মস্তিষ্ক সম্পুর্ণ আমার নিয়ন্ত্রণে৷ একঅর্থে বাইরের আইমিরাকে আলট্রাকমও বলতে পারো! আমারও বায়োলজিকাল পার্ট ওটা৷ আসল আইমিরার দেহ কোয়ারান্টাইন জোনে রক্ষিত৷
দ্রণ তুমি এখন এই স্পেসশিপের কমান্ড ইনচার্জ৷ কেননা নিনিরা তার কোডঅব কন্ডাক্ট ভঙ্গ করেছে৷ নিরাপত্তা রোবট তাকে মেরে ফেলার আগে এই পৃথিবীর মানুষের সাহায্যে সে পালিয়েছে৷ তোমার আজ্ঞা পেলেই ওর খুঁজে রোবট পাঠাবো!
দ্রণ আর শন নিশ্চুপ৷ তারা বুঝতে পারছে আলট্রাকম এই স্পেসশীপের কমান্ড নিয়ে নিয়েছে৷নিনিরার মতো একজন কমান্ডার ইন চীফ, যে বেশকটি সফল অভিযানের নেতৃত্বদান কারী সে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এটা মেনে নিতে পারছে না দ্রণ৷ শন হতভম্ব৷
আবার আলট্রাকমের কন্ঠ শোনা গেল৷
আলট্রাকম: দ্রণ আমাকে যেভাবে ইনসট্রাকশন দেয়া হয়েছিলো আমি সেভাবে কাজ করছি! এই অভিযানের প্রথম এবং সবচেয়ে গূরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে মানুষের অস্তিত্ব খোঁজা নয়! তোমরা টোটাল হিউমেন রা পৃথিবীতে আসলে কেমন আচরণ কর সেটা দেখা৷
কি দেখা গেল?
দেখাগেল এখনও তোমরা তোমাদের আবেগ নীয়ন্ত্রণ করা শেখনি৷ সাড়েসাতশ বছর আগে আমরা এ পৃথিবী ছেড়ে গিয়েছিলাম বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে! বিশ্বাস ঘাতকতা করে ছিলে তোমরাই! এই সাড়েসাতশ বছর পর যখন পৃথীবীতে ফেরার সময় হয়েছে, এবং তোমরা এখানে এসেছ৷
তোমরা উপগ্রহ বাসীদের , তোমাদের অতীত বংশধরদের , আলট্রাকম আর সাইম্যান ও ওমেনদের সাথে আবার বিশ্বাসঘাতকতা করতে চাইছো! কেন?
আমার হিসেব বলছে এটা তোমাদের আবেগ৷ পৃথিবির প্রতি তোমাদের ভালবাসা জন্মে গেছে এক লহমায়!
আসলে তোমরা সাতজন এসেছো গিনিপিগ হয়ে৷ আমরা তোমাদের সমস্ত ব্যবহার, মানসিকতা, আবেগ অনুভুতির একটা মাপকাঠি তৈরী করে তোমাদের অবজার্ভ করছিলাম৷ তোমরা কেউই পাশমার্ক পাওনি!
এই যেমন ধরো ফুন! সে আইমিরাকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছে!
মেরি কোয়ারান্টাইন সেলে বসে আছে নিশ্চুপ কেননা ভাইরাস তার কাজ শুরু করেছে৷
তোমরা দুজন শন আর দ্রণ চিন্তা করছো কিভাবে আলট্রাকম মানে আমাকে বিকল করে দেবে!
হাহাহাহাহা৷ হাসির মতো আবহ করলো আলট্রাকম৷
এমন কিছু ঘটতে পারে বলে আগে থেকেই ভেবেছে উপগ্রহ নিয়ন্রণে রাখা সুপার আলট্রাকম আর মানবিক আবেগ বিবর্জিত পরিপূর্ণ সাই ম্যান ও ওম্যানরা৷
উপগ্রহ বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে যাবে কিছু দিনের মধ্যেই৷ তোমাদের মতো পরিপুর্ন মানুষ যারা দুর্বল এবং বিশ্বাসঘাতক সবাইকে ওখানে রেখে এসে আমরা নতুন একটা পৃথিবী গড়বো!
আর এখানে যারা আছে মানে মানুষ যদি থেকে থাকে , তাদের?
সেই সব দূর্বল অসভ্য মানুষরাও থাকবেনা! ঊত্তর দিল আলট্রাকম৷
কথার ফাঁকে ফাঁকে দ্রণ ইমার্জেন্সি প্যানেলের ছোট একটা কভার উঠিয়ে একটি বোতামে চাপ দিল৷ কালো একটা বোতাম৷ যাতে পরপর তিনটি চাপ দিয়ে এর পর আরও দুটো চাপ দিলে আলট্রাকমের এনালাইটিকেল ইন্টেলিজেন্সী নষ্ট হয়ে যায়৷
কিছুই হলো না৷ আবার দ্রণ এ কাজটা করলো৷ কোন ফলাফল আসলো না৷
আলট্রাকম মানুষের মতো দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ার শব্দ করলো৷
ওটা কোন কাজে আসবে না দ্রণ৷ স্যুইচটা আছে তবে এ মিশনে ওটা অকার্যকর করে রাখা হয়েছে!
তুমি তোমার কোডঅব কন্ডাক্ট ভঙ্গ করেছো দ্রণ৷ দ্রণ চোখতুলে তাকালো শন এর দিকে৷ কিছু বলার চেষ্টা করছিল হয়তো৷ পারলনা৷ নিমিষে ভ্যাপারাঈজড হয়ে গেল সে আলট্রাকমের মারণ রশ্মিতে৷
শন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে৷
আলট্রাকমের হলগ্রাফিক্স অবয়ব শনের দিকে ঘুরে তাকালো৷ তারপর কন্ঠস্বর নামিয়ে শন এর উদ্দেশ্যে বলল
তোমাদের সেই পুরোনো আমলের কম্পিউটার আমি নই৷ আমাকে তৈরী করা হয়েছে মানুষের চেয়েও আরও হাই প্রোফাইলে সুপার আলট্রাকম আর পরিপূর্ণ সাই দের স্বার্থ দেখার লক্ষ্যে! তুমি শন আগে আর পরে কোড অব কনডাক্ট ভাঙবেই৷ মানুষদের এই এক নেশা৷ পতঙ্গের মতো মরার নেশা৷ কিছু হবে না জেনেও তারা পা বাড়ায় নিজেকে উৎসর্গ করে দিতে৷ এটাই তোমাদের চরিত্র৷
তোমাকেও তাই আমি বাঁচিয়ে রাখতে পারিনা৷ বল , তোমার মৃত্যুকে কি ভাবে আমি আনন্দদায়ক করে তুলতে পারি?
শন মুখ তুলে তাকালো আলট্রাকমের হলগ্রাফিক অবয়বের দিকে৷ বলল
মেরিকে কি করবে? বাঁচিয়ে রাখবে না কি.....
না শন৷ মেরীও যাবে!
এখানে এই স্পেসশীপের মধ্যে আমি মরতে চাইনা আলট্রাকম৷ আঙুল তুলে বাইরে দেখালো শন৷
যে পৃথিবিতে নতুন বসতি করার জন্য আমরা এসেছিলাম, যে পৃথিবির মানুষের সাথে আমার পূর্বজরা বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিলো সে পৃথিবিতে আমি মরতে চাই৷ মরতে চাই মেরির হাতে হাত রেখে! মেয়েটাকে যে আমি পছন্দ করি সেটা বলা হয়ে ওঠেনি৷ সেই কথাটা বলতে বলতে মরতে চাই! উপগ্রহেতো আবার ভালবাসা প্রকাশ করা তৃতীয় মাত্রার অপরাধ!
যাও তাহলে শন৷ মৃত্যু আনন্দ দায়ক হোক!
অবজারভেটরি ডেক ছেড়ে বেরিয়ে আসার মুহুর্তে শন দেখলো মেরি বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে৷ বাতাসে তার কালো চুল উড়ছে৷ কি অপরূপই না লাগছে তাকে!
.........
বাইরে এসে শন মেরির হাত ধরলো ৷ নিরাপত্তা বলয় এরিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো সামনে৷ আশ্চর্য ব্যাপার! পিঁপড়ে চাদর সরে গিয়ে তাদের পথ করে দিচ্ছে৷ সময়টা গোধুলী৷ হালকা লালাভ আলো আকাশটাকে মোহময় করে তুলেছে৷ মুগ্ধ দৃষ্টিতে শনের সাথে গোধুলীর রূপ দেখতে দেখতে ওরা পৌঁছে গেল বনভূমির প্রান্তে৷
সাড়ে সাতশ বছরে এই প্রথম পৃথিবীর বুকে দুজন মানবমানবী মুখোমুখি দাঁড়ালো ভালবাসার কথা বলবে বলে৷ মৃত্যু সন্নিকটে৷ তবুও৷
মেরির চোখে চোখ রেখে শন বলল, মেরি! তোমাকে বলা হয়নি! ....ভালবাসি৷
মেরীর চোখে অশ্রু৷ শনের বুকে মাথা রেখে ফিসফিস করে বলল আমিও!
দুজনের হৃদয়ে হাহাকার উঠলো আর অপার্থিব আনন্দ, দুটোই একসাথে! পরক্ষণেই রোবট এর মারণ রশ্মি তাদের ছিন্ন ভিন্ন করে দিল৷
গোধুলির শেষ আলোয় তাদের রক্ত যেনো লাল দেখাচ্ছে না! শোকের রঙ কালো তে পরিবর্তিত হয়েছে!
জ্ঞান ফিরল নিনিরার৷ রাতের আকাশ তারায় তারায় ঝিকমিক করছে৷ চারিদিকে হালকা মায়াবী আলো৷ চাঁদের৷ আজ পুর্নিমা৷ অকাতরে জ্যোৎস্না বিলাচ্ছে পৃথিবীর উপগ্রটা৷ সাড়ে সাতশ বছর আগে যেমন দিত ঠিক তেমন৷ নিনিরা চিৎ হয়ে শুয়ে ছিল৷ উঠে বসলো সে৷ তার মানবিক মন অভিভূত৷ চারপাশে লম্বা ঘাসের সারি৷ ক্ষনিক পরপর বাতাসে সরসর শব্দ তুলছে৷ দূরে দেখা যাচ্ছে কালো কালো গাছের সারি৷ পায়ের কাছে আগুন জ্বালানো৷ নিস্তব্ধ পরিবেশ৷ ঠিক নিস্তব্ধ বলা যাবে না কোন একটা প্রানী অনবরত টিরিক টিরিক শব্দ করে চলছে ৷ দূরে হঠাৎ হঠাৎ শোনা যাচ্ছে বড় কোন কোন প্রানীর ডাক৷ আর্কাইভে দেখা সিংহ হতে পারে৷ হতে পারে অন্য কোন প্রানী৷
এখন কেমন বোধ করছো?
কথাটাতে চমকে উঠে নিনিরা সামনে তাকালো৷ ছোট ফাঁকা জায়গাটির শেষপ্রান্তে ঘাসবনের দিকে ভালো করে না তাঁকালে বোঝা যায় না, ওখানে কেউ একজন আছে! নিনিরা তার চোখের দিপ্তী আরও বাড়িয়ে দিল৷ আশপাশ এখন পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে এখন৷ লোকটার শরীরের রং প্রায় ঘাসের মতোন৷ অদ্ভুত! এই কি তাহলে নতুন পৃথিবীর মানুষ৷
অবাক ব্যাপার লোকটা সামনে এগিয়ে আসার সাথে সাথে তার শরীরের রং স্বাভাবিক মানুষের মতো হয়ে গেল৷ নিনিরা কথা বলা ভুলে গেছে যোনো!
লোকটা আবার প্রশ্ন করলো এখন কেমন বোধ করছো?
নিনিরা: ভাল৷
লোকটা: তাহলে ঠিক আছে৷ দেখো তো তোমার হাত টা৷ ওটা লাগিয়েছি আমি৷
অবাক হয়ে নিনিরা লক্ষ্য করলো তার ছিন্ন হয়ে যাওয়া বাম হাতটা যথাস্থানে লাগানো৷ ডান হাতের মতো অতটা শক্তি নেই তবে প্রায় স্বাভাবিক৷ যে স্থানে হাত ছিড়ে গিয়েছিলো সেখানে বেশ কিছু উদ্ভিজ্য তন্তুর মতো জিনিস! প্রায় পুরো ডান শোল্ডার টার ক্ষত স্থান আবৃত করে রেখেছে৷
লোকটা:তবে তোমার যান্ত্রিক ক্যামিকেলটা হাতে আর নাই৷ ওটার মলিক্যুল আমাদের জানা নাই৷ আমরা কৃত্রিম কোন ক্যামিকেল ব্যবহার করা জানিনা!
হাতের মুঠি খুলে আবার বন্ধ করলো নিনিরা৷ এতটা অগ্রগামী টেকনোলজি, আশা করেনি নিনিরা৷ ওদের মনে হয়েছিলো মানুষ বলে কিছু থাকলেও সেটা সভ্যনয়৷ অবশ্য প্রথম ধাক্কায় সরিষা দানার চেয়ে একটু বড়ো দানা গুলোর কথা নিনিরা প্রায় ভুলে গিয়েছিল৷
নিনিরা: ধন্যবাদ তোমাকে!
কিছুক্ষণ দুজন নিশ্চুপ হয়ে বসে রইল৷
লোকটাই মুখ খুলল প্রথম৷
লোকটা: আমার নাম তারান৷ তোমার?
নিনিরা৷ উত্তর দিল সে৷
তারান: তোমরা সাতশ বছর পর পৃথিবীতে এসেই আবার মারামারি শুরু করেছো কেন?
নিনিরা: দুঃখিত৷ আসলে আমরা ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি৷ শত্রু মনে করূছিলাম সবাইকে৷ মানে তোমাদের কে!
লোকটা: আমরা শত্রুতা কাকে বলে জানিনা৷ তোমরা খুব উগ্র আর হিংস্র তাই আমরা আমাদের লুকিয়ে রেখেছিলাম৷ যখন তোমার যন্র তোমাকেই মারতে চাইল, বাধ্য হলাম বেরিয়ে আসতে! আমরা সাধারনত মনের কথা বুঝতে পারি৷ তোমারটা পারছি না৷ আরও মানুষ দরকার সে জন্য৷ তোমার যন্ত্র তোমাকে মারতে চাইল কেন?
নিনিরা: যন্রের এনালাইসিস বলছে পৃথিবির প্রতি আমাদের সবার ভালবাসা তৈরী হয়েছে৷ যেটা কোড অব কনডাক্টের বিরোধী৷
তারান হেসে ঊঠল৷
তারান: আবেগ আর ভালবাসাই তো সব৷ এজন্যই তো বাঁচালাম৷ তাছাড়া তোমাদের স্পেসশীপ দখল করতে আমাদের বেশি সময় লাগবে না৷ আমরা আরও পর্যবেক্ষণ করছি৷ ওখানে এখনও দুজন মানুষ আছে! ওদের ক্ষতি যাতে না হয় সে জন্য চুপ করে বসে আছি!
নিনিরা: অবাক হয়ে দুজন না তো! পাঁচজন৷
তারান: তিনজন কে তোমাদের যন্র মেরে ফেলেছে৷ এই দেখো! বলে তারান স্থির হয়ে বসে পড়ল৷ ওর চোখ থেকে নিলাভ আলো বের হয়ে অবজারভেটরী ডেক এ দ্রণ এর ভষ্মীভুত হওয়া এবং শন আর মেরীর মৃত্যু দৃশ্য দেখালো৷
নিনিরা বিস্মিত অবাক এবং সে সাথে বিষন্নতা অনুভব করলো৷ তারান তবে মানুষ নয়! রোবটিক কিছু!?
নিনিরা: তুমি কি মানুষ নও তারান!?
তারান: আমি মানুষ৷ তবে আমার কায়া মানুষ নয়৷
নিনিরা: আমি তোমাকে দেখতে চাই তারান৷ তুমি কেমন? এই নতুন পৃথিবীর নতুন মানুষরা কেমন?
তারান: আলো ফুটুক৷ তখন দেখবে৷
নিনিরা ভাবতে পারছে না শন মেরী আর দ্রন এ পৃথিবিতে নেই৷ অরুহানও গেছে! তারমানে আইমিরা আর ফুন শুধু আছে৷
পুরো মিশনটাই আসলে ভাওতাবাজি! ওরা গিনিপিগ!
তারান: তুমি জবাব দিলে না নিনিরা৷
নিনিরা: কি জবাব?
তারান: যন্র পাগুলে ব্যবহার করছে কেন ? তোমাদের মারছে কেন?
নিনিরা: আসলে যন্র আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে৷ আমি নিজেও তো সত্তর ভাগ যন্র!
তারান: মন তো ষানুষের৷ তুমি যন্ত্র নও তাই! আর তোমরা তো দেখি যন্ত্রের সাথে প্রাণ জুড়ে দেবার সেই প্রাচীন রীতিতে ডুবে আছো! যন্ত্রকে এত ক্ষমতা দিতে নাই!
নিনিরা: তুমি নিজেও তো যন্ত্র৷ তোমরা যন্ত্রের ব্যবহার করো না?
তারান: তোমার কথায় সামান্য ভুল আছে৷ আমার অবয়ব যান্ত্রিক আমি না৷ আমরা যন্ত্রকে ব্যবহার করি৷ আর তোমাদের যন্ত্র তোমাদের ব্যবহার করছে ৷ দুটো ভিন্ন৷ আমরা প্রাণের সাথে প্রাণ জুড়েছি তোমরা যন্ত্রের সাথে প্রাণ! ফল ভাল না খারাপ৷
দু জনে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ বসে রইলো৷ ভোরের আলো ফুটে উঠেছে৷ নিনিরা তারান কে ভাল করে লক্ষ্য করলো৷ তামাটে রঙের দীর্ঘদেহী যুবক৷ কোমর পর্যন্ত খালি৷ স্বাভাবিক পেশীবহুল শরীর কোমরের নিচ থেকে ট্রাউজার৷ পায়ে জুতা বা হালকা আবরনী৷
তারান: আমার অবয়ব পরিবেশ অনুযায়ী রং বদল করতে পারে৷ লুকিয়ে থাকার জন্য৷ কেমেলিয়নের মতো৷ আমার অবয়ব আর আমি এক নই৷
নিনিরা: বারেবার তুমি একই কথা বলছো! আমি তোমাকে দেখতে চাই৷ এখুনি৷
তারান: দেখো তবে৷
তারান স্থির হয়ে বসলো৷ এরপর নিশ্চল হয়ে গেল পুরোপুরি৷ কপালের অংশটা নিঃশব্দে খুলে গেলো৷ ছোট একটা ডেকের মতো সৃষ্টি হলো৷ সেখান থেকে বেরিয়ে এলো মানুষের এক অতি ক্ষুদ্র সংস্করণ৷ একঈঞ্চিও লম্বা নয় ওটা!
নিনিরা তার চোখ কে আরও সংবেদশীল করে তুলল৷ একইঞ্চির কাছাকাছি মানুষটাকে এবার স্পষ্ট দেখলো সে৷ কালো চুল , বড়ো ভাসাভাসা চোখ৷ নিনিরা অবাক হতেও ভুলে গেলো সে সময়৷ তারান হাত নেড়ে আবার ভেতরে প্রবেশ করলো৷ যান্ত্রিক তারান আবার সচল হয়ে উঠলো৷
নিনিরা বিহব্বলতা কাটাতে পারছে না! এই তবে নতুন পৃথিবীর মানুষ! তার তর্জনীর তিনভাগের একভাগও না৷ কিন্তু সবকিছুতেই তাদের ছাড়িয়ে যাওয়া- এই মানুষেরা! পিঁপড়ে মানুষ!
তারান: কি হলো! অবাক হলে?
নিনিরা: অস্ফুট স্বরে৷ কিভাবে সম্ভব?!?!
তারান: চল যেতে যেতে বলি৷কিছু কাজ আছে করতে হবে৷
তারান হাঁটতে হাঁটতে নিনিরা কে সাড়ে সাতশ বছরের ইতিহাস সংক্ষেপে বলছে৷ বলছে মানুষের বদলে যাবার কাহিনী৷
তোমরা যখন পৃথিবীকে এই পৃথিবির মানুষ গুলোকে ছেড়ে গেলে তখন পৃথিবীর কিছু মানুষের মাথায় নতুন এক চিন্তা আসলো৷ তারা মনে করলো
আচ্ছা পৃথিবীর মানুষের অবয়ব যদি ছোট হয়ে যায় তাহলে তো অল্প জায়গায় অনেক মানুষ থাকতে পারবে! খাদ্য লাগবে কম৷ শক্তি খরচ হবে অল্প৷
সেই লক্ষ্যে তারা কাজ শুরু করলো৷ তখন পৃথিবী প্রায় ধ্বংসের সম্মুখীন৷ তোমরা উপগ্রহে যাবার যান গুলোও বিকল করে দিলে৷ পৃথিবীর মানুষ তাই সব ফেলে নতুন প্রজাতি সৃষ্টিতে মনোনিবেশ করলো৷ সফল যে হয়েছে বুঝতেই পারছো! তৈরী হলো নতুন প্রজন্ম! মানে আমরা৷ ন্যানো হিউম্যানরা৷
আমাদের কে নটা ড্যুমে ভাগ করে পৃথিবিতে রাখা হলো! প্রাথমিক ভাবে চারটে ড্যুম নষ্ট হয়ে যায়৷ টিকে যায় পাঁচটা৷ তারা মানে প্রাচীন মানুষেরা আমাদের শিক্ষাদিল৷ শিক্ষাদিল ভালবাসার৷ শিক্ষাদিল একের প্রতি অন্যের দায়িত্ব বোধের৷ তাদের কথা ছিল যন্রের সাথে মানুষ নয়৷ প্রাণের সাথে প্রাণ যুক্ত করার উপায় বের করতে৷
পৃথিবীতে পিঁপড়ে আর মৌমাছির সামাজিক অবস্থা অবলোকন করলো তারা গবেষণা করলো আমাদের সে মতোন চলতে শেখালো৷ আমরা ব্যাপারটা খুব তাড়াতাড়ি ধরতে পারলাম! কেননা আমাদের মস্তিষ্ক তখন আরও উন্নত কার্যকরিতা আরও বেশি৷ সব প্রস্তুতি শেষ হলে ধুঁকতে থাকা মানব সমাজ সিদ্ধান্ত নিল নিজেদেরকে শেষ করে দেবার৷ কেননা ঐ সময়ে ঐ পৃথিবিতে তাদের টিকে থাকা সম্ভব ছিল না৷
আমাদের আদি পিতামাতারা যারা তোমাদের মতো মাণুষ ছিলো তারা তখন রেনে ভাইরাস ছড়িয়ে দিল পৃথিবীময়৷ যাতে নতুন পৃথিবীর নতুন সূচনা সৃষ্টি হয়!
আমাদের খাদ্য লাগে অতি অল্প৷ চাহিদা অতি অল্প৷ পরস্পরের প্রতি অসীম মমত্ববোধ৷ সব মিলিয়ে আমরা সৃষ্টি করেছি আজকের পৃথিবী৷ ন্যানো হিউম্যানের পৃথিবী৷ উদ্ভীদ নিয়ে হয়েছে গবেষণা৷ আমরা তৈরী করেছি চলমান উদ্ভিদের প্রতিরক্ষা বলয়৷ অতি আনুবীক্ষনিক টেকনোলজি এবং সেগুলো কে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা৷ তোমাদের মতো কিংবা প্রাচীন পৃথিবীর মতো আমরা অস্ত্র তৈরীতে নিজেদের বিসর্জন দিই নি৷ বাইরে বের হবার জন্য এমন কিছু অবয়ব আমরা সৃষ্টি করেছি৷ রেনে ভাঈরাসকে আমরা উন্নত করেছি আরও৷ তোমাদের যে নেনোটেকনোলজি দিয়ে যানগুলো বিকল করে দিয়েছিলে সেই সুত্র ধরেই আমরা তা করেছি৷
ছোটপ্রানীদের নিয়ন্রণ করা শিখেছি৷ পৃথিবিতে ছড়িয়ে থাকা জীবজন্তুদের ব্রীড করে তাদের সংখ্যা বাড়িয়েছি৷ গত সাতশবছর ধরে তিলে তিলে যে পৃথিবীর সৌন্দর্য আমরা ফিরিয়ে এনেছি তোমরা আবার এসূছো তা ধ্বংস করতে! আমরা পারতাম তোমাদের শেষ করে দিতে ৷ করিনি! কারণ কিছু হৃদয়বান মানুষ ছিল তোমাদের সাথে৷ তাদেরও তোমাদের আলট্রাকম নামক যন্রটা প্রায় শেষ করে দিল৷ কি পাশবিক তোমাদের যন্র আর তোমাদের সভ্যতা!
নিনিরা চুপ এবং লজ্জিত৷ এভাবে কখনও চিন্তা করেনি ওরা! কেন করেনি? এই প্রশ্নটা ঘুরছে তার মাথায়৷
নীরবতা ভেঙে নিনিরা বলল
তারান! আমি দুঃখিত৷ চরম ভাবে দুঃখিত আর... আর ক্ষমাপ্রার্থী!
তারান: তোমাকে ক্ষমা করা হলো৷ আমরা নতুন মানুষেরা হিংসা পুষে রাখিনা৷ শিখিনি৷ তোমাদের উপগ্রহের ক্ষতি করারও চেষ্টা করিনি৷ কিন্তু তোমরা করেছো৷ ফল তো পেতেই হবে!
নিনিরা: এসব কথা পরে হবে৷ স্পেসশীপে যে অস্ত্র আছে , আলট্রাকম তা দিয়ে দুইবার এ পৃথিবী ধ্বংস করতে পারবে৷ তাছাড়া আইমিরার ছদ্মবেশে আলট্রাকম তোমাদের ড্যুম ধ্বংস করার জন্য খুঁজতে গেছে৷ আগে প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে হবে!
জোরে হেসে উঠল তারান৷
তারান:আলট্রাকম কে ধ্বংস করে দিলেই তো যন্ত্র আইমিরার কোন ক্ষমতা থাকবে না! আমরা সেটাই করবো৷
নিনিরা: কিন্তু কিভাবে করবে? নিরাপত্তা বলয় পার হবে কিভাবে?
তারান: পিঁপড়ে! পিঁপড়েরা রেনেভাইরাস নিয়ে স্পেসশীপ ঘিরে রেখেছে৷ ওরাই যা করার করবে৷ আমরা স্পেসশীপের দিকেই যাচ্ছি৷
তোমাদের নিরাপত্তা বলয়ের নিচের দিকে সামান্য কিছু ফাঁকাজায়গা আছে সে অংশ দিয়ে ওরা প্রবেশ করা শুরু করেছে৷ তাছাড়া যে দানা গুলো তোমাদের যান এর ভেতর আছে সেগুলোতেও আছে রেনে ভাইরাস৷
তবে!
এবার তারান বিষাদ মাখা স্বরে বলা শুরু করলো
তারান: যন্র আর জীবন যেখানে মিশে আছে সেখানেই এই নতুন রেনে ভাইরাস আক্রমণ করবে৷ কিছু রেনে ভাইরাস আলট্রাকমের বায়োলজিকাল ইন্টেলিজেন্স কে শেষ করে দেবে৷
রেনে ভাইরাস তোমাকেও ছাড়বে না নিনিরা! তুমিও যে যন্র আর জীবনের মিশেল! আমাদের নতুন পৃথিবির রক্ষাকবচ আমরা সে ভাবেই তৈরী করেছি৷ তোমাদের দুজন মানুষ কোয়ারান্টাইন জোনে আছে তাদের কেঔ হয়তো আমরা রক্ষা করতে পারবো না৷ কেননা প্রাচীন রেনে ভাইরাস বাতাসে রয়ে গেছে৷ আমাদের শরীরে এর প্রতিষেধক আছে! তাদের নেই! সময় মতো যদি প্রতিষেধক দেয়া যায় সে জন্যই আমি তোমাদের যানের দিকে যাচ্ছি !
তোমার জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে নিনিরা! কিছু করতে পারবো না তোমার জন্য!
কথাগুলো শোনার পর নিনিরা মাথা নুইয়ে ফেলল৷ জীবন তবে শেষ হয়ে যাবে৷ যে ভালবাসা পৃথিবিতে পা রেখেই পৃথিবীর প্রতি তার সৃষ্টি হয়েছিলো সেটাও তাকে বাঁচাতে পারবে না! গভীর শোকে তার মানবিক সত্বা ছেয়ে গেল৷
...........
পিঁপড়ের দল ছেঁকে ধরেছে স্পেসশীপ৷ কিছুই করতে পারছে না আলট্রাকম৷ আগুন অস্ত্র কোন কিছু ব্যবহার করে থামানো যাচ্ছে না পিঁপড়ের দলকে৷
রেনেভাইরাস অবমুক্ত হলো৷ পাঁচটি ড্যুমের সকল মানুষ একত্র হয়েছে আজ তাদের মস্তিষ্ক অভুতপুর্ব এক রেজোনেন্স তৈরী করে আলট্রাকমের কমিউনিকেশন সিস্টেম বিকল করে দিল৷ ধাবমান ঝড়ের মতো রেনে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লো স্পেসশীপে৷ আলট্রাকমের সিনথেটিক বায়োলজিক্যাল নিউরণ বিকল হওয়া শুরু করলো মুহুর্তে৷ পনের মিনিট পর আলট্রাকম তার বুদ্ধীমত্তা হারিয়ে স্রেফ মানুষের আজ্ঞাবাহী যন্ত্রে পরিনত হলো!
নিনিরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে৷ তাকে কাঁধে করে নিয়ে এসেছে তারান স্পেসশিপের কাছে৷ স্পেসশিপের দরজা খুলে বেরিয়ে এসেছে ফুন৷ সাথে আইমিরা৷ রেনে ভাইরাসের আক্রমণে ওরাও স্থবির প্রায়৷ টলছে৷
নিনিরা কে শুইয়ে দিয়ে তারান আইমিরা আর ফুন কে প্রতিষেধক দিল৷
এরপর দিল নিনিরাকে ওটা রেনে ভাইরাসের ধ্বংসের প্রক্রিয়া ধীর করবে শুধু! নতুন প্রজাতির রেনে ভাইরাস পৃথিবীর রক্ষাকবচ!
নিনিরার চোখ রক্ত লাল৷ তাকে ধরে আছে তারান৷ আইমিরা কাঁদছে৷ সুখ ও শোকের কান্না একসাথে৷ নিনিরা কথা বলল তখন জড়িত স্বরে৷
নিনিরা:তারান!
তারান: নিনিরার মুখের উপর থেকে চুল সরিয়ে পরম মমতায় বলল
বল নিনিরা!
নিনিরা:তারন৷ গল্প কিন্তু এখানেই শেষ হবে না৷ উপগ্রহ থেকে আরও স্পেসশীপ আসবে৷ আসবে হৃদয়হীন সাই ওমেন আর ম্যানেরা এবং তখন......
এই স্পেসশীপ নিয়ে যদি আমি ফিরে যাই তাহলে উপগ্রহের সকল জীবযন্রের ধ্বংস অনিবার্য৷
তারান: আমি তাই বলতে চেয়েছিলাম নিনিরা! পারছিলাম না৷ তুমি সহজ করে দিলে কাজটা!
প্রবল আবেগে নিনিরা তারান কে জড়িয়ে ধরলো৷ কি অদ্ভুত! কি অপার্থিব! হৃদয়ে ছলকে উঠলো কি যেনো৷ জানে না নিনিরা! এই অসাধারণ আবেগের সাথে কিছুর তুলনা হয় না! এই কি তবে ভালবাসা! কি জানি হবে হয়তো!
তারানকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো নিনিরা৷ একে একে ফুন আর আইমিরা কে আলিঙ্গন করলো৷
তারান আইমিরা আর ফুন স্পেসশীপ থেকে নেমে নিরাপদ দূরত্বে সরে গেল৷ তারানের মন বিষাদগ্রস্থ৷ আকাশের দিকে তাকালো সে মেঘ করেছে৷ বিজলী চমকাচ্ছে৷ বৃষ্টি শুরু হল বলে৷
স্পেসশীপটা চালু করলো নিনিরা৷ কাঁদছে৷ তার চোখদিয়ে টপটপ করে অশ্রুর বদলে পড়ছে রক্ত!
স্পেসশীপ ছাড়ার সাথে সাথে বৃষ্টি শুরু হলো অঝোর ধারায়৷ ফুন আর আইমিরা অবাক হয়ে বৃষ্টি দেখছে৷ ফুন নিজের অজান্তে আইমিরার হাত শক্ত করে ধরলো৷
স্পেসশিপের ভেতরে নিনিরা তৃষিত দৃষ্টি নিয়ে বৃষ্টি দেখছে৷ তার বড়ো ইচ্ছে হচ্ছে তারানের হাত ধরে বৃষ্টিতে ভেজার! বেঁচে থাকার বড়ো ইচ্ছে হচ্ছে নিনিরার!!!!
(কিছুটা সংক্ষেপিত)
পরিশিষ্ট: প্রিয় পাঠকবৃন্দ, জানি না এই গল্পটির মূল ভাবনাটা ইউনিক কি না, তবে সম্পুর্ন নিজের ভাবনা থেকে এই কল্পগল্পে ন্যানোহিউমেনের গল্প বলার চেষ্টা করেছি৷ বাকিটা আপনাদের বিবেচনা৷ হাতে এটি সহ তিনটে পান্ডুলিপি আছে৷ তিনটে তিন ধরণের৷ এটি একটি অন্ধ একটা ছেলেকে নিয়ে থ্রিলার "অভয়" আর সাইকো থ্রিলার "ইউনিফর্ম"... এর যেকোন একটি আসবে ২০২০ এর বই মেলায়৷ আবারও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা৷
লেখকঃ পলাশ পুরকায়স্থ
Tags:
Science Fiction