রাসায়নিক বন্ধন

আজকে রসায়ণের ছোট্ট একটি বিষয় নিয়ে লিখব। কিন্তু আমি যে ছোট্ট বললাম এটি এখানে বলা ভুল হবে। কারণ, রসায়ণ এই ছোট্ট বিষয়টির ওপরই প্রতিষ্ঠিত। এই বিষয়টি না থাকলে রসায়ণ বলতে থাকত শুধু ১১৮ পরামাণু। কোনো প্রকার বস্তুর অস্তিত থাকত না। যারা গভীর ভাবনার মানুষ তারা হয়ত এতক্ষণে বুঝে গেছেন আমি কি নিয়ে লিখতে চলেছি।
হ্যাঁ, আমি রাসায়নিক বন্ধন নিয়ে লিখতে যাচ্ছি আজকে।

রাসায়নিক বন্ধন 


যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি পরামাণু আরেকটি পরামাণু সাথে যুক্ত হয় বা হয়ে থাকে তাকে বলা হয় রাসায়নিক বন্ধন।


তিন প্রকার রাসায়নিক বন্ধন সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলোঃ
১| আয়নিক বন্ধন।
২| সমযোজী বন্ধন।
৩| ধাতব বন্ধন।
১| আয়নিক বন্ধন।

একটি ধাতু একটি অধাতুর সাথে যুক্ত হয়ে যে বন্ধন গঠন করে তাকে বলা হয় আয়নিক বন্ধন। এখানে সাধারণত একটি ধাতব পরমাণু ইলেকট্রন দেয় আর একটি অধাতব পরামণু ইলেকট্রন নেয়।
হাতেম আলির টাকা অনেক। কিন্তু তার লোভ বেশি। তাই সে এখন আরও টাকা আয় করার জন্য পিঁয়াজ ব্যবসা করতে চায়। কিন্তু তার পিঁয়াজ ব্যবসার কোনো অভিজ্ঞতা নাই। তাই সে একা একা ব্যবসা করতে পারছে না৷
অন্যদিকে বাতেন আলি পিঁয়াজ ব্যবসায় অনেক পটু। সে চমির আলির সাথে থেকে থেকে পিঁয়াজ ব্যবসায় বেশ পটু হয়েছে। তাই সে এখন নিজে নিজেই একটা পিঁয়াজ ব্যবসা করতে চাচ্ছে। কিন্তু টাকার অভাবে সে ব্যবসা করতে পারছে না। তখন হাতেম আলি বাতেন আলিকে বলল, আমি তোমাকে ব্যবসার জন্য টাকা দিব আর তুমি তোমার অভিজ্ঞতা আমাকে শেয়ার করবে। বাতেন আলি বলল, ভাগ হবে কীভাবে?
হাতেম বলল, কেন দুজনে সমান সমান ভাগ নিব। এভাবে তারা দুজনে মিলে একটি সম্পর্কে গঠন করল ও একত্রিত হয়ে গেল৷
ঠিক একইভাবেই একটি ধাতু একটি অধাতুর সাথে যুক্ত হয়ে আয়নিক বন্ধন গঠন করে।
২| সমযোজী বন্ধন।
একটি অধাতু আরেকটি অধাতুর সাথে যুক্ত হয়ে যে বন্ধন গঠন করে তাকে বলা হয় সমযোজী বন্ধন।
পিনু আলি হলো হাতেম আলির ছোট ভাই। তারও অনেক টাকা। বলে না যে, গোষ্টির একজনের একটা সমস্যা থাকলে সকলেরই ঐ সমস্যা একটু আদটু থাকে। ঠিক সেই রকমি পিুন আলিরও অভিজ্ঞতা কম। তাই সেও নিজে নিজে পিঁয়াজ ব্যবসা করতে পারছে না। তাহলে এখন উপায় কি? সে দেখল তার চাচাতো ভাই ভানু আলির অভিজ্ঞতা নাই কিন্তু টাকা আছে। কিন্তু সে পিনুর থেকে বয়সে ছোট। তাতে কি হয়েছে। পিনু আলি ভানু আলিকে গিয়ে বলল, আমার সাথে ব্যবসা করতে হবে। ভানু আলি বলল, আমার ত পিঁয়াজ ব্যবসার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। পিনু আলি বলল, তাতে কি হয়েছে? আমাদের ত টাকা আছে। আর দুজনে একসাথে ব্যবসা করলে একসময় ঠিকই দুজনে এই ব্যবসার অভিজ্ঞতা পেয়ে যাবো। ভানুর কিছু বলার নেই। কারণ পিনু হলো তার বড়।
তাই তারা দুজনে সিয়ারের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করে দিল। এতে তারা একটি ঘনিষ্ঠ পরিবারে আবদ্ধ হয়ে গেল।
ঠিক এইকভাবে দুটি সমজাতীয় অধাতব পরমাণু একত্রে একটি সমযোজী বন্ধন গঠন করে।

৩| ধাতব বন্ধন।
এটাও সমযোজী বন্ধনের গঠনের মতই। শুধু এখানে অধাতবের স্থানে হবে ধাতব।
তাহলে বলা যায়, দুটি ধাতব পরমাণু একত্রে যে বন্ধন গঠন করে তাকে ধাতব বন্ধন বলা হয়।
ত এখন বন্ধন সম্পর্কে মনে হয় একটু আদটু ধারণা হলো।

তাহলে এবার আরও একটু অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে ধারণা দেওয়া যাক।

যোজ্যতা ইলেক্ট্রন কি?
সংজ্ঞা মতে, কোনো মৌলের শেষের প্রধান শক্তিস্তরে মোট যতগুলো ইলেকট্রন থাকে সেগুলোকে একত্রে বলা হয় ঐ মৌলের যোজ্যতা ইলেকট্রন।
সোডিয়ামের যোজ্যতা ইলেকট্রন হলো 1
কারণ সোডিয়ামের শেষের প্রধান শক্তিস্তরে রয়েছে মাত্র একটি ইলেকট্রন। তাই সোডিয়ামের যোজ্যতা ইলেকট্রন হবে 1
বাতেন আলির এখন অনেক টাকা। তাই সে তিনটা ফ্ল্যাটের একটি বাড়ি বানিয়েছে। সে ঐ বাড়িটি সকলকে ভাড়া দেয়। প্রথম ফ্ল্যাটে আছে ১৮ টি ঘর। ২য় ফ্ল্যাটে আছে আটটি৷ আর ৩য় ফ্ল্যাটে আছে মাত্র ২ টা ঘর। বাতেন এখন ভাড়া দিচ্ছে ঘরগুলো। সে চায় প্রথমে তৃতীয় তালা পূর্ণ হবে তারপর নিচের দিকে আসবে। তাই সে ওপর থেকে ভাড়া দিতে থাকল। একসময় সে ভাড়া দিয়ে ৩য় ও ২য় তালা পূর্ণ করে ১ম তলায় এসে মাত্র একজনকে ভাড়া দিল৷ তাহলে ঐ ব্যক্তিটি থাকবে ১ম তলার মাত্র একটি ঘরে। আরেকজন বাতেনের কাছে ঘর ভাড়া নিতে আসলে সে ভাবছে তার শেষের ফ্ল্যাটে (এখানে শেষের ফ্ল্যাট বলতে ১ম তলাকে বুঝানে হয়েছে) আছে মাত্র একজন ঐ একজনই হলো তার ফ্ল্যাটের যোজ্যতা মানুষ।
আর পরমাণুর ক্ষেত্রে হবে যোজ্যতা ইলেকট্রন। যদি শেষের ফ্ল্যাটে তিনটা ইলেকট্রন থাকত তাহলে আমরা বলতাম যোজ্যতা ইলেকট্রন আছে তিনটা।
যোজ্যতা ইলেকট্রন ক্লিয়ার হয়েছে?

যোজনী কি?
একই কথা শুধু শেষের শক্তিস্তরের বিজোড় ইলেকট্রন অর্থাৎ ঐ মৌলটিকে নিষ্কিয় মৌলে পরিণত হতে হলে যে কয়টি ইলেকট্রন লাগবে তাকে বলা হয় ঐ মৌলের যোজনী।
যোজনী দিয়ে বুঝা যায় মৌলটির আর কতগুলো ইলেকট্রন হলে সে নিষ্ক্রিয় মৌলে পরিণত হবে। যেমন Cl এর যোজনী হলো 1

ক্যাটায়ন কি?
একটি পরমাণু ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক চার্জে চার্জিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ক্যাটায়ন। এক কথায় ইলেকট্রন অন্যকে ধার দেওয়া।

অ্যানায়ন কি?
এখানেও একই কথা। শুধু ক্যাটয়নের বিপরীত হবে। মানে অ কোনো পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক চার্জে চার্জিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় অ্যানায়ন। এক কথায় কারো কাছ থেকে ইলেকট্রন ধার নেওয়া।

পরমাণুর ধনাত্মক চার্জিত হয় কিভাবে?
আমরা জানি পরমাণুর নিউক্লিয়াসে ধনাত্মক চার্জি প্রোটন থাকে আর সমপরিমাণ ঋণাত্মক চার্জিত ইলেকট্রন থাকে নিউক্লিয়াসের বাইরে। যদি একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে তাহলে ত ঐ পরমাণু একটি ঋণাত্মক অধান ত্যাগ করল, এতে তখন ঐ পরমাণুর প্রোটনের সংখ্যা বেশি হবে মানে ধনাত্মক চার্জ বেশি থাকে। তখন ঐ পরমাণুর ঐ অবস্থাকে বলা হয় ধনাত্মক চার্জে চার্জিত হয়েছে।

পরমাণুর ঋণাত্মক চার্জিত হয় কিভাবে?
কোনো পরমাণু একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করলে মানে একটি ঋণাত্মক চার্জ গ্রহণ করলে তার পরমাণুতে তখন প্রোটনের তুলনায় বা ধনাত্মক চার্জের তুলনা ইলেকট্রন বা ঋণাত্মক চার্জিত অধান বেশি থাকে। তখন ঐ পরমাণুর ঐ অবস্থাকে বলা হয় ঋণাত্মক চার্জিত হয়েছে।
থাক আর এগিব না।

Asraful Islam
সদস্য, ব্যাঙের ছাতার বিজ্ঞান    

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম